আল্লাহর নবি ইবরাহিমের (আ.) ছেলে ইসহাকও (আ.) নবি ছিলেন। ইসহাকের (আ.) ছেলে ইয়াকুবও (আ.) নবি ছিলেন। তার আরেক নাম ছিল ইসরাইল। তার বংশধররা বনি ইসরাইল বা ইসরাইলের সন্তান নামে পরিচিত। পরবর্তীতে নবি মুসার (আ.) অনুসারি হিসেবে তারা ইহুদি নামে পরিচিত হয়েছে।
কোরআনের অন্তত ৩টি আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে, বনি ইসরাইল বা ইহুদিরা আল্লাহর প্রেরিত নবিদের অন্যায়ভাবে হত্যা করেছিল। ইহুদিদের ওপর আল্লাহর ক্রোধ ও লানতের অন্যতম কারণ এটি। সুরা আলে ইমরানে আল্লাহ বলেছেন,
ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الذِّلَّۃُ اَیۡنَ مَا ثُقِفُوۡۤا اِلَّا بِحَبۡلٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ حَبۡلٍ مِّنَ النَّاسِ وَ بَآءُوۡ بِغَضَبٍ مِّنَ اللّٰهِ وَ ضُرِبَتۡ عَلَیۡهِمُ الۡمَسۡکَنَۃُ ذٰلِکَ بِاَنَّهُمۡ کَانُوۡا یَکۡفُرُوۡنَ بِاٰیٰتِ اللّٰهِ وَ یَقۡتُلُوۡنَ الۡاَنۡۢبِیَآءَ بِغَیۡرِ حَقٍّ ؕ ذٰلِکَ بِمَا عَصَوۡا وَّ کَانُوۡا یَعۡتَدُوۡنَ
আল্লাহর অনুকম্পা ও মানুষের আশ্রয় ছাড়া যেখানেই তারা অবস্থান করুক, সেখানেই তারা হয়েছে লাঞ্ছিত, তারা আল্লাহর ক্রোধে পরিবেষ্টিত এবং তাদের ওপর চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে দারিদ্রের কশাঘাত। এটা এজন্য যে, তারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহ প্রত্যাখ্যান করতো এবং নবিদের অন্যায়ভাবে হত্যা করতো, এটা এজন্য যে, তারা অবাধ্যতা ও সীমালঙ্ঘন করতো। (সুরা আলে ইমরান: ১১২)
বনি ইসরাইলের পাপাচারীদের হাতে নিহত নবিদের সংখ্যা যে একেবারে কম ছিলো না, তা বোঝা যায় এ আয়াত থেকে,
وَ لَقَدۡ اٰتَیۡنَا مُوۡسَی الۡکِتٰبَ وَ قَفَّیۡنَا مِنۡۢ بَعۡدِهٖ بِالرُّسُلِ وَ اٰتَیۡنَا عِیۡسَی ابۡنَ مَرۡیَمَ الۡبَیِّنٰتِ وَ اَیَّدۡنٰهُ بِرُوۡحِ الۡقُدُسِ اَفَکُلَّمَا جَآءَکُمۡ رَسُوۡلٌۢ بِمَا لَا تَهۡوٰۤی اَنۡفُسُکُمُ اسۡتَکۡبَرۡتُمۡ فَفَرِیۡقًا کَذَّبۡتُمۡ ۫ وَ فَرِیۡقًا تَقۡتُلُوۡنَ
আমি মুসাকে কিতাব দিয়েছি এবং তার পরে ক্রমান্বয়ে রাসুলদের প্রেরণ করেছি, মারইয়াম পুত্র ঈসাকে সুস্পষ্ট প্রমাণ দিয়েছি এবং জিবরাঈলের মাধ্যমে তাকে শক্তিশালী করেছি। যখনই কোন রাসুল এমন কিছু এনেছে যা তোমাদের পছন্দ নয়, তখনই তোমরা অহংকার করেছ এবং একদল নবিকে তোমরা অস্বীকার করেছ, একদল নবিকে হত্যা করেছ। (সুরা বাকারা: ৮৭)
অনেকে বলেছেন, বিভিন্ন সময় ইহুদিরা আল্লাহর কয়েকশ নবিকে হত্যা করেছে। তবে তাদের হাতে নিহত নবি কারা ছিলেন সে সম্পর্কে কোরআন বা হাদিসে স্পষ্ট কোনো তথ্য নেই। প্রখ্যাত মুফাসসির আল্লামা কাজি নাসিরুদ্দিন বায়যাবি (রহ.) তার তাফসিরগ্রন্থে লিখেছেন, ইহুদিদের হাতে হত্যাকাণ্ডের শিকার উল্লেখযোগ্য তিন জন নবি হলেন, আশইয়া (আ.), জাকারিয়া (আ.) এবং তার ছেলে ইয়াহিয়া (আ.)।
প্রখ্যাত তাবেঈ উরওয়া ইবনে জুবাইর (রা.) বলেছেন, আল্লাহর নবি ইয়াহিয়াকে (আ.) হত্যা করা হয়েছিল এক ব্যভিচারী নারীর প্ররোচনায়। (মুসান্নাফে ইবনে আবি শাইবা) ইবনে কাসির (রহ.) আল-বিদায়া ওয়ান-নিহায়া কিতাবে লিখেছেন, দামেশকের এক বাদশাহ তার একজন মাহরাম আত্মীয়াকে বিয়ে করতে চাচ্ছিলেন। ইয়াহিয়া (আ.) এ বিয়ে করতে নিষেধ করেছিলেন। পরে ওই নারীর প্ররোচনায় বাদশাহ ইয়াহিয়াকে (আ.) হত্যা করেন।