মোস্তফা জানে রাহমাত পে লাখো সালাম

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

কৃতঃ মাহদি গালিব

সালাম জানিয়েছেন চুল মোবারকে। সেই চুল কালো, সে কালো কেমন কালো, তাতেও সালাম। হাঁটলে চুল দোলে। সেই দোদুল্যমান চুল দেখতে কেমন, সেটাতেও সালাম। চুল বাঁকা না সোজা, তাতেও সালাম।

কপাল মোবারকে একটা রগ ছিল। ক্রোধান্বিত হলে ফুলে উঠত। নবীজান হাশেমি বংশের ছিলেন। রগটি ছিল হাশেমি বংশের প্রতিক। সে রগ কীভাবে ফুল, কতটা ফুলত, কতক্ষণ ফুলত— তাতেও সালাম।

কপাল কতটা চ্যাপ্টা— সালাম। ভ্রুজোড়া কেমন, জোড়া না আলাদা, দেখতে বাঁকা তরবারি— সালাম। চোখ মোবারক, সে চোখ যে দিকে তাকায়, সেদিকেই প্রাণ ফিরে পায় সব, সে চোখের তাকানোর ভঙ্গিতে সালাম। আঁখি পল্লব যেন বেহেশতের ছায়াদানকারী পর্দা— তাতেও সালাম। যে চোখের মণিতে জমা জগতের যাবতীয় কষ্টের জন্য মমতা— তাতেও সালাম।

নাক মোবারক লম্বা, কেমন লম্বা— সালাম। গাল মোবারক কেমন লাবণ্যময়, রক্তিম, চৌম্বকীয়— সালাম। ঝর্ণার দুপাশের গাছ কালচে সবুজ হয়। ঝর্ণার অবিরত পুষ্টিতে পরিপুষ্ট হয়। মদিনা-মুনিবের চেহারা তো রহমতের ঝর্ণা৷ সেই ঝর্ণার অনাবিল রহমতে ঋদ্ধ কালচে হচ্ছে— মোছ মোবারক, দাড়ি মোবারক, সালাম সালাম। চিবুক মোবারক লামের মতো। কোরআনের গুপ্ত রহস্যের মতো। সালাম সালাম।

ঠোঁট মোবারক! হায় হায়! সে ঠোঁট মুচকি হাসলে মরা ফুলগাছেও কলি পায় প্রাণ— লক্ষ সালাম। দাঁত তো নক্ষত্রের চেয়ে উজ্জ্বল। কন্ঠের কথা কাওসার থেকে তৃপ্তিদায়ক। বাচনভঙ্গির সাবলিলতা কালজয়ী কবিতা পাঠ। লক্ষ সালাম। লক্ষ সালাম।

এভাবে প্রত্যেক অঙ্গে শুধু না, অঙ্গমোবারকের আনুষঙ্গিক বর্ণনা পাগল করে দেয়। খোদার কসম! পুরো কাসিদার ব্যাখা দিলে ৫০০ পাতার বই হবে। ফেসবুকে সম্ভব না। কাব্যানুবাদ করেছি কয়েক বছর আগে। ছোট ছিলাম। ভুলে ভরা। ওটা করতেই জান যায় যায় অবস্থা।

কাসিদায়ে সালাম ১৭১ পঙক্তি। ৩৪২ লাইন। দুই লাইনে এক পঙক্তি। প্রথম পঙক্তি থেকে ১১০ পঙক্তি পর্যন্ত রাসুল-অতল সাল্লালাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামের— জাত/সত্তা মোবারক, তাঁর সু-উচ্চ সম্মানের বর্ণনা, বাহ্যিক আয়ুর বিভিন্ন পর্ব, দেহ মোবারকের বিভিন্ন বিষয়ে সালাম জানিয়েছেন ইমাম আলা হযরত আহমাদ রেযা খান।

১১০ অবধি ওভাবে সালাম। পরে পর্যাক্রমে আহলে বাইত, দশ সাহাবি, মক্কার সাহবি, বদর ওহুদের সাহাবি ও সিলসিলার অন্যান্য শ্রদ্ধেয় বুজর্গদের সালাম জানিয়েছেন।

১১১-১৩০ অবধি বিশ পঙক্তি শুধুই আহলে বাইতের জন্য। এসব ব্যাখ্যা করলে ১০০ পৃষ্ঠার বই হবে। এখানে আম্মাজান ফাতিমার বিষয়ে ৩টি পঙক্তি আছে। পঙক্তি তিনটি—

উস বাতুলে জিগার পারায়ে মুস্তাফা

হজলা আরায়ে ইফফত পে লাখোঁ সালাম

/

রাসুল-অতুল দ. এঁর কলিজা মোবারক হচ্ছেন মা ফাতিমা। আমরা পবিত্র জামা পরি। আর মা ফাতিমার জামা পবিত্র— এমন না শুধু, বরং তিনি পবিত্রতাকে জামা বানিয়ে পরিধান করেন।

জিস কা আঁচল না দেখা মাহও মেহর নে

উস রেদায়ে নযাহত পে লাখোঁ সালাম

/

তিনি এতোটাই সাধ্বী যে, আকাশ চাঁদ সূর্যও তাঁর চুল দেখতে পায়নি— এমন না শুধু, যে আঁচল দিয়ে তিনি মাথা মোবারক ঢেকেছেন, ওটাও আকাশ চাঁদ সূর্য দেখতে পায়নি।

সাইয়্যেদা তাইয়্যেবা জাহেরা তাহেরা

জানে আহমাদ কী রাহাত পে লাখোঁ সালাম

/

এখানে গুগলি আছে। সরল অনুবাদ বলে— মা ফাতিমা নারীগণের সর্দার, পবিত্রতায় পরাকাষ্ঠা, নবীকন্যা, চির সতেজ ফুল। এবং তিনি নবী মুস্তাফার জীবনের প্রশান্তি।

খেয়াল করুন। মুস্তাফা জানে রহমত মানে— নবী মুস্তাফা সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হচ্ছে রহমের প্রাণ। তাঁকে ছাড়া রহমত অসম্ভব। তিনি রহমতেরও রহমত।

অন্যদিকে মা ফাতিমা হচ্ছেন সে রহমতের প্রাণের প্রশান্তি। মা ফাতিমাকে দেখলে নবীজানের জানে শান্তি আসে। ওহ আল্লাহ! হায় আল্লাহ! হক আল্লাহ!

যারা বলেন রেযাখানিরা আহলে বাইতে এড়ায়, শোনেন, জুলুম বন্ধ করেন প্লিজ। আবার যারা বলে আমরা শিয়া প্রভাবিত তাদের জন্য বলার আছে এটাই— ব্যা ব্যা ব্ল্যাকশিপ হ্যাভ ইউ অ্যানি উল?

৩য় রমজান মা ফাতিমা চোখের আড়াল হয়েছেন। অনেকে এখানে ঐতিহাসিক সত্যতা খোঁজে। খুঁজুক। খুঁজতে খুঁজতে মরুক। আল্লাহ হেদায়ে করুক। তাঁকে ভালোবাসতে বিশেষ দিন লাগে না। প্রতিটি মুহূর্ত তাঁর।

আল্লাহর ওয়াস্তে ভয় করুন। বলা হবে— হে হাশরবাসীগণ, চোখ নামাও সমীহে, ফাতিমা বিনতে মুহাম্মাদ আসছেন।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment