হযরত মাওলা আলী (রাদি আল্লাহু আনহু )’র জীবনী ও উপদেশাবলী

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

হযরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু)’র পবিত্র মাজার শরীফ, নাজাফ, ইরাক।

হযরত মাওলা আলী (রাদি আল্লাহু আনহু )’র জন্মঃ-  ১৩ই রজব ৬০০ খৃষ্টাব্দ। শাহাদাত ১৭ই রমজান,শুক্রবার, ৪০ হিযরী / ৬৬১ খৃষ্টাব্দ ।

হযরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু)হচ্ছেন বালকদের মধ্যে প্রথম ইসলাম গ্রহনকারী, নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) চাচাত ভাই, পোষ্য ও জামাতা । ইমাম হাসান(রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) ও ইমাম হোসাইন (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) এর পিতা। ডাক নাম আবু তুরাব ও আবুল হাসান । তাঁর পিতার নাম আবু তালিব এবং মায়ের নাম ফাতিমা বিনতে আসাদ।

নবীজির সঙ্গে তাঁর বয়সের পার্থক্য ছিল ৩০ বছর । তাঁর উপাধি ছিল হায়দার, মুরতাজা আল ওয়াসী ও আসাদুল্লাহ। তিনি ছিলেন ইসলামের চতুর্থ খলীফা, তরীকা সমুহের ইমাম, মহানবীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম)জিসম মোবারকের গোসল দান করার সৌভাগ্য অর্জনকারী, প্রতিটি যুদ্ধে মুসলমানদের পতাকা বহনকারী, অমিত বিক্রম যোদ্ধা এবং দুনিয়াতে থেকেই জান্নাতের সুখবর প্রাপ্ত মহা সৌভাগ্যবান দশজন সাহাবীর(রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুম)একজন। তিনি বহুসংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। কুরআনের ব্যাখ্যাদানকারী হিসেবে তাঁর সুনাম ছিল। তিনি ৪ বছর নয় মাস কাল মুসলিম জাহানের খলীফা ছিলেন। তিনিই সর্বপ্রথম পুলিশ বিভাগের প্রবর্তন করেছিলেন। 

কুখ্যাত খারেজী গুপ্তঘাতক আবদুর রহমান ইবনে মুলজাম পবিত্র রমজান মাসে কুফার মসজিদে নামাজরত অবস্থায় তাঁকে ছুরিকাঘাতে আহত করে। অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ফলে কয়েকদিন পর তিনি মহান প্রভুর ডাকে সাড়া দিয়ে চিরতরে জান্নাতবাসী হন। এভাবে নবীজীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ওফাতের ৩০ বছর পর চল্লিশ হিজরীতে ৬৩ বছর বয়সে ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহু)শহীদ হন ।পরিসমাপ্তি ঘটে খোলাফায়ে রাশিদিনের শাসনের গৌরবময় অধ্যায়ের। বর্তমান ইরাকের কুফা নগরীর অদুরে নাজাফ আশরাফ নামক স্থানে তাঁর পবিত্র দেহ সমাহিত করা হয়।

হজরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) হলেন প্রথম ব্যক্তি যিনি পবিত্র কাবাঘরে জন্মগ্রহণ করেন এবং শাহাদাত বরণ করেন মসজিদে। নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হযরত আলীর মর্য্যাদা সম্পর্কে যত কথা বলেছেন আর কোন সাহাবীর ব্যাপারে তা দেখা যায় না। 

তৎকালীন কোরায়েশ গোত্রে যে ১৭ জন শিক্ষিত ব্যক্তি ছিলেন তাঁদের মধ্যে হযরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) ছিলেন শীর্ষ স্থানীয়। তাঁর সম্পর্কে নবীজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, “একমাত্র মুমিনরা ছাড়া কেউ তোমাকে ভালবাসবে না এবং একমাত্র মুনাফিকরা ছাড়া কেউ তোমাকে হিংসা করবে না ।

যে আলীর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বন্ধু সে আমার ও বন্ধু বটে। আমি হচ্ছি জ্ঞানের শহর। আর আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) হচ্ছেন সে শহরের প্রবেশ দ্বার”। হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) মর্যাদা সম্পর্কে বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা অনেক। 

হযরত মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন,“যে ব্যক্তি নুহের (আলাইহিস সালাম) লক্ষ্যের দৃঢ়তা, আদমের (আলাইহিস সালাম) জ্ঞানের গভীরতা, ইব্রাহিমের (আলাইহিস সালাম) সহিষ্ণুতা,মুসার (আলাইহিস সালাম) বুদ্ধিমত্তা ও ঈসার (আলাইহিস সালাম) আত্মসংযম দেখতে চায় সে যেন আলীর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) প্রতি লক্ষ্য করে। সাহাবায়ে কিরামগণের(রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহুম)মধ্যে বেলায়েতের বৈশিষ্টের ক্ষেত্রে বিভিন্নতা থাকলেও সকলেই ছিলেন হজরত রাসুলুল্লাহ্(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) হতে কামালিয়াত প্রাপ্ত ।তাঁদের সকলেই বেলায়েতের আকারে নবুয়তে মুহাম্মদীর (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) ধারক ও বাহক ছিলেন। হজরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) নবুয়ত ও বেলায়েত উভয় দিক হতে হজরত ঈসার (আলাইহিস সালাম) সাথে সামঞ্জস্য রাখতেন। হজরত ঈসার (আলাইহিস সালাম) সাথে নিসবত অর্থাৎ সম্পর্কযুক্ত হওয়ার কারনে তিনি বেলায়েতের দিক দিয়ে হজরত ঈসার (আলাইহিস সালাম) ধারক বলে বিবেচিত। হজরত ঈসা (আলাইহিস সালাম) রুহুল্লাহ এবং কালিমাতুল্লাহ উপাধিতে বিভূষিত।এ কারনে তাঁর জীবনে নবুয়তের তুলনায় বেলায়েতের প্রাবল্য ছিল অধিক। তাই হজরত ঈসার (আলাইহিস সালাম) সাথে নিসবত থাকার কারনেই হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) জীবনেও বেলায়েতের প্রভাব ছিল অধিক। বস্তুতঃ ইলমে মারিফাত বা আধ্যাত্মিক শাস্ত্রে হজরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) ছিলেন পথের দিশারী বা আলোক তবর্তিকা স্বরূপ। 

একদা কথা প্রসঙ্গে তিনি হযরত ওমর ফারুক (রাদি আল্লাহু তায়ালা আন)কে বলেন, “আল্লাহর তত্ত্বজ্ঞান আমাকে যা দান করা হয়েছে,তা যদি লোক সমাজে প্রকাশ করতে যাই, তবে শরীয়ত আমাকে হত্যা করার হুকুম দেবে”। এ সকল কারনে যে কোন সিলসিলা বা তরীকাপন্থীগন হজরত আলীকেই (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) মারিফাত শাস্ত্রের জনক বা আদিপুরুষ রূপে স্বীকার করে থাকেন। এ প্রসঙ্গে হজরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেছেন,“ইলমে বাতেন আল্লাহ্তায়ালার রহস্যসমুহের মধ্যে একটি রহস্য,আল্লাহ্তায়ালার হুকুমসমুহের মধ্যে একটি হুকুম, যা তাঁর খাস বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা তার ক্বলবের মধ্যে নিক্ষেপ করেন”। 

সাহাবাগনের (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহুম) মধ্যে তাঁর তুল্য জ্ঞান অন্য কারও ছিলনা। ঐতিহাসিকগনের মতে, হজরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) ছিলেন সাহাবীগনের (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহুম) মধ্যে শীর্ষ স্থানীয় পণ্ডিত ব্যক্তি। তিনি একাধারে কুরআন,হাদীস শাস্ত্র, ফিকাহ শাস্ত্র, কালাম শাস্ত্র, আরবী ব্যাকরণ ও কাব্য, গনিত শাস্ত্র, যুদ্ধবিদ্যা, বাগ্মীতা প্রভৃতি বিষয়ে অসাধারন পান্ডিত্যের অধিকারী ছিলেন। 

হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন, “খোদার কসম ! রাসুলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) এর পর সমস্ত ইলমকে দশভাগ করে (হযরত) আলীকে (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) একাই নয়ভাগ দেয়া হয়েছে। আর বাকী এক দশমাংশ অপরাপর সকলের মধ্যে বন্টন করা হয়েছে”।

হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বিচারবুদ্ধির স্বীকৃতি দিয়ে হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেন,“ আমাদের মধ্যে সর্বোত্তম ফয়সালাকারী (হযরত) আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু)”। হযরত আলীর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বিচক্ষণতার প্রশংসা করতে গিয়ে খলীফা হযরত ওমর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) প্রায়ই বলতেন, “(হযরত) আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) না থাকলে (হযরত) ওমর (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) হালাক হয়ে যেত”। 

একদা আমীর মুয়াবিয়া হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু আনহু) পুরাতন বন্ধু যেরার ইবনে যামরার কাছে হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু আনহু) চরিত্র সম্বন্ধে জিাজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন,“অত্যন্ত দূরদর্শী, দুঃসাহসী, শক্তিশালী, ন্যায় বিচারক, প্রতিটি কথা ইলম ও হিকমতপর্ণ দুনিয়া এবং দুনিয়ার যাবতীয় নিয়ামতের প্রতি আন্তরিক ঘৃণা পোষণকারী। 

রাত্রি জাগরণে অধিক আনন্দিত,পরকালের চিন্তায় মগ্ন, ঋতু এবং যুগ পরিবর্তনে আশ্চার্যান্বিত, সাধাসিধা পোষাক পরিধানকারী,সাধারন আহার্যে অভ্যস্ত ও পরিতুষ্ট। মানবতার দিশারী, দানবীর, গরীবদের প্রতি আন্তরিক ও স্নেহপ্রবণ, ন্যায়ের সমর্থন ও অন্যায়ের ঘোরতর বিরোধিতা ছিল হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু আনহু) চরিত্রের বৈশিষ্ট্য”।

অতঃপর আমীর মুয়াবিয়া বলেন, “আল্লাহ্-র কসম ! আবুল হাসান এমনই ছিলেন”। আরবী প্রবাদে আছে যে, ‘আল ফাদলু বিমা শুহিদাত বিহিল আদায়ি’-অর্থাৎ প্রকৃত কৃতিত্ব হচ্ছে যে, চরম শত্রু কর্তৃক যখন কারও চারিত্রিক গুনাবলীর কদর বা স্বীকৃতি পাওয়া হয়। হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু আনহু) বেলায় আমরা এ সত্যের পূর্ণ প্রতিফলন দেখতে পাচ্ছি।

হযরত জুনাঈদ বাগদাদী (রাদি আল্লাহু আনহু) বলেন, “তিনি মারিফাতের মৌলিক তত্ব উদঘাটন করেন। সাধনায় কষ্ট সহিঞ্চুতার দরজা উম্মুক্ত করেন। আল্লাহ্ তাঁকে বিভিন্ন রকম জ্ঞান-বিজ্ঞান দ্বারা মারিফাতের ক্ষেত্রে পরিশোভিত করেছেন”। 

পীরানে পীর দস্তগীর হযরত সায়্যিদিনা আবদুল কাদের জিলানী (রাদি আল্লাহু আনহু) বিরচিত ‘সিররুল আসরার’ কিতাবের ২১ নং পৃষ্টায় বর্ণিত আছে, বোস্তানু শরীয়ত হজরত মাওলা আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেছেন,“ আল্লাহ্ প্রাপ্তির অতি নিকটবর্তী, সহজতর এবং উত্তম রাস্তা কোনটি তা জানাবার জন্য আমিই সর্বপ্রথম নবীয়ে কারীমের (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) দরবারে প্রার্থনা করি।আমি অধীর প্রতীক্ষায় ছিলাম, এমন সময় হযরত জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) অবতীর্ণ হয়ে হজরত রাসুলুল্লাহ্-কে (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) কালিমায়ে তাকওয়া ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ শুনালেন। হযরত জিবরাঈল (আলাইহিস সালাম) যেরূপ শুনালেন, তিনি তদ্রুপই আবৃত্তি করলেন।

অতঃপর মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) আমাকে ঐ কালেমা শিক্ষা দিলেন। আমি পুনরায় ঐ কালেমা অপরাপর সকলকে শিক্ষা দিলাম। ” 

হজরত আলীর (রাদি আল্লাহু আনহু) অসাধারণ জ্ঞান ও বাকপটুতা তাঁর চরিত্রের এক অনন্য বৈশিষ্ট্য। তাঁর বাচনভঙ্গি এতই মধুর ছিল যে, তাঁর অনুসারীরা তাঁকে “জীবন্ত কুরআন” বলে আখ্যায়িত করেছেন।তাঁর ভাষণ ও প্রশাসনিক পত্র “নাহজুল বালাগা” নামে প্রকাশিত হয়েছে। তাঁর নির্দেশানুযায়ী আরবী ব্যাকরণের মৌলিক নীতিমালাসমুহ লিখিত হয়েছিল।

এক কথায় হজরত মাওলা আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) ছিলেন মুসলমান জাতির জন্য গৌরবস্মারক স্বরূপ।বস্তুতঃ তিনি ছিলেন শরীয়তের সূক্ষদর্শী, তত্ত্বজ্ঞানে পরিপক্ক এবং নবুয়তী জ্ঞানের গভীরে অবগাহণকারী এমন এক মহা পন্ডিত ব্যক্তিত্ব, যাঁকে অনুসরণ করলে মুক্তি পাওয়া যাবে, এটা সুনিশ্চিত। সত্যিকারের ইসলাম সংরক্ষণ, প্রচার এবং তা সুসংগঠিত করার ক্ষেত্রে হযরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু)’র অবদান অতুলনীয়। হযরত আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মুস্তাফা(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) প্রতি তাঁর আনুগত্য, প্রেম এবং অপরিসীম বিশ্বাস বিশ্বের সকল মুসলমানদের নিকট অনুকরণীয়। 

হযরত আলী(রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু)’র উপদেশাবলী :-

জ্ঞানের সাগর হযরত আলী (রাদি আল্লাহু আনহু) বিভিন্ন সময়ে সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষকে যে অমুল্য উপদেশবাণী সমূহ প্রদান করেছেন, সেগুলো এতই সুচিন্তিত, জ্ঞান সমৃদ্ধ, তাৎপর্য ও মাহাত্মপূর্ণ যে তার কোন তুলনাই হয় না। 

নিচে দৃষ্টান্ত স্বরূপ হযরত আলী(রাদি আল্লাহু আনহুর গুটিকতক উপদেশ উদ্ধৃত করা হলো ।  যথা –

১। সর্বাপেক্ষা বড় ধনী সেই, যে  আশার পিছনে ঘুরে বেড়ায় না। 

২। মানুষের প্রতিটি  শ্বাস-প্রশ্বাস তাকে একটু  একটু করে মৃত্যুর দিকে এগিয়ে নিচ্ছে।

৩। মানুষের  লোভ লালসাই তার গোলামী ও কষ্টের কারণ।

৪। ক্ষমা করার যোগ্যতা শুধু তারই আছে যে, ব্যক্তি প্রতিশোধ গ্রহনে সক্ষম।

৫। দুনিয়ার যেকোন পাত্র কোন না কোন বস্তু দ্বারা পরিপূর্ণ  করা চলে। কিন্তু জ্ঞানের ক্ষেত্রে হয় এর বিপরীত। পাত্রে বিদ্যা যতই আসুক না কেন, পাত্রের আয়তন ততই বৃদ্ধি পায়।

৬। দারিদ্রের  শোভা নির্মলতা রক্ষা করা এবং প্রাচুর্য্যের শোভা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করা ।

৭। বন্ধুর কাছে তোমার খুব বেশী গোপন বিষয় ব্যক্ত করো না। কেননা সে এখন তোমার বন্ধু। কিন্তু পরে শক্র ও হতে পারে।

৮। শক্রর সাথে অতি জঘন্য ব্যবহার করবে না । যেহেতু সে এখন শক্র বটে কিন্তু পরে মিত্রও হতে পারে। তখন তোমাকে লজ্জিত হতে হবে।

৯। আমি যা বলছি তা কুরআনের কাছে জিজ্ঞাসা কর, আমি ঠিক বলছি কিনা ?

১০। মিতব্যয়ী হওয়ার অর্থই হচ্ছে অর্ধেক খাবারের জোগাড় করা।

১১। ক্ষমতাপ্রাপ্ত রাজপুরুষের অত্যাচার ও বিচারাসনে বসে বিচারকদের অবিচারের মত মন্দ কর্ম আর নাই। 

১২। দুই ব্যক্তি আমার কোমর ভেঙ্গেছে -১) ওই আলেম যে নিজেকে ধ্বংস করে এবং ২)  ওই মুর্খ অর্থাৎ দ্বীনের এলেমহীন ব্যক্তি, যে সংসারত্যাগী যাহেদ হয়। 

   মুর্খ ব্যক্তি তার বৈরাগ্য দ্বারা লোকদিগকে প্রবঞ্চনা করে এবং ওই আলেম তার গুনাহ দ্বারা লোকদিগকে ও তার নিজেকে ধ্বংশ করে। 

১৩। হযরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেছেন,“আল্লাহ্ পাক নিজেই তাঁর আত্মপরিচয় আমাকে দান করেছেন। 

   আল্লাহ্ এমন এক মহা সত্তা যার কোন তুলনাই হয়না। কোন আকারের আদলে তাঁকে কল্পনাও করা যায় না। কোন সৃষ্টির দ্বারা তাঁকে অবধারণ করা যায় না। তিনি কোন কিছুর অনুরূপ নন এবং কোন কিছু থেকে সৃষ্টও নন। তাঁর সত্তা এমন নয় যে, অন্য কোন বস্তুর সাহায্যে তাঁর পরিচয় দান করা যেতে পারে। সর্বাপেক্ষা জ্ঞানী তিনি, যিনি আল্লাহর পবিত্র সত্তা সম্পর্কে জ্ঞান রাখেন ”।  

১৪। হযরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) বলেছেন,“দশ হাযার নিষ্ঠাবান শিষ্য নিয়ে আমি মারিফাতের পথে, একত্ববাদের সমুদ্রে ডুব দিয়েছিলাম।

সে সমুদ্র থেকে উথিত হয়ে আমি ঈমানের এক সর্যে রূপান্তরিতরিত হয়ে গেলাম। ব্যস, এতটুকুই! যে  বুঝে নিতে পারল, সে বুঝে নিক। এর বেশী আর ব্যাখ্যা করা চলেনা।তাতে পথভ্রষ্টতার আশংকা আছে”।  

১৫। হযরত আলী (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) প্রায়ই বলতেন, “কুরআন নির্বাক আর আমি সবাক” অর্থাৎ তিনি নিজেই যেন পবিত্র কুরআনের সবাক সংস্করণ ।

১৬। সৎ এবং অসৎ উভয় প্রকার লোকই অন্যের জন্য শিক্ষণীয় বিষয় রেখে যায়। সৎলোক তার চরিত্র মাধুর্যের এবং অসৎলোক তার মন্দ পরিনতির নজির সৃষ্টি করে। 

১৭। কোন ব্যক্তি হযরত আলীকে(রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) জিজ্ঞাসা করলেন, আপনি কী আল্লাহ্তায়ালাকে দেখেছেন ? এ প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, “আমি এমন কিছুর ইবাদাত করিনা, যা আমি দেখিনি।

   আল্লাহকে মানুষ স্বচক্ষে দেখেনি সত্য, কিন্তু মানুষের অন্তকরণ ঈমানের আলোকে তাঁকে দেখার মত উপলদ্ধি হাসিল করে নেয়”। একই কথার প্রতিধ্বনি করে আমাদের নূর নবীজী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছেন, 

  “তুমি আল্লাহ্-র ইবাদাত এমনভাবে কর, যেন তুমি তাঁকে দেখছ। আর যদি তাতে অক্ষম হও, তবে তুমি মনে কর যে, আল্লাহ্ তোমাকে দেখছেন”।

১৮। আমি মহা প্রতাপশালীর নিয়ন্ত্রণে রাজী আছি। আমার ভাগে ইলম বা জ্ঞান এবং আমার বিপক্ষের ভাগে ধন ও ঐর্শ্বয্য পড়েছে। 

১৯। দুনিয়ার সব সম্পদ খরচ করলে কমে যায়, জ্ঞানই একমাত্র সম্পদ যা বিতরণ করলে উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পায়। 

২০। সম্পদশালী ব্যক্তির থাকে বহু সংখ্যক শত্রু। অপর দিকে জ্ঞানী ব্যক্তির থাকে বহু মিত্র।        

হযরত আলী’র (রাদি আল্লাহু তায়ালা আনহু) (তাওবা) মুনাজাত :

উচ্চারণঃ 

“ইলাহী তুব্তু মিন্ কুল্লিল্ মাআছী, বিইখ্লার্ছি রাজাআল্ লিল্ খালাছী,

আগিছ্নী ইয়া গিয়াছাল্ মুস্তাগীছীন্, বি-ফাদ্লিকা ইয়াওমা ইউখাযু বিন্নাওয়াছী”।। 

বঙ্গানুবাদঃ

“হে আমার মাবুদ ! আমি সকল পাপ থেকে নিষঠার সাথে আমার পরিত্রাণের  উদ্দেশ্যে তাওবা করলাম।

হে সাহায্য প্রার্থনাকারীদের সাহায্যকারী ! আমাকে সাহায্য কর,তোমারই করূণায়, যে দিন গুনাহের কারণে মাথার অগ্রভাগের চুল সমুহ পাকড়াও করা হবে”।   

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment