আল্লাহ তা’আলা পবিত্র কোরআন শরীফে বলেন,
আর এক নিদর্শন এই যে,তিনি তোমাদের জন্যে তোমাদের মধ্য থেকে তোমাদের সঙ্গিনীদের সৃষ্টি করেছেন । যাতে তোমরা তাদের কাছে শান্তি পাও । এবং তিনি তোমাদের মধ্যে পারস্পারিক সম্প্রীতি ও দোয়া সৃষ্টি করেছেন ।,
(সূরা রোম ২১)
হযরত ইবন আব্বাস রাদিয়াল্লাহু ‘আনহুমা থেকে বর্ণিত, নবী (সাঃ) বলেছেন, “তোমাদের মধ্যে সে ব্যক্তিই সর্বোত্তম যে তার স্ত্রীর নিকট উত্তম, আর আমি তোমাদের মধ্যে আমার স্ত্রীদের নিকট সর্বোত্তম ব্যক্তি”। [ইবন মাযাহ: হাদীস নং ১৯৭৭, তিরমিযী: হাদীস নং ৩৮৯৫।]
পবিত্র কুরআনের আয়াত ও হাদিস
কে সামনে রেখে যে তথ্য পেলাম তা হল, আল্লাহতালা স্ত্রীদের সৃষ্টি করেছেন যাতে তাদের স্বামীরা তাদের কাছে গিয়ে শান্তি পায় এবং দুজনের মধ্যে আল্লাহ তাআলা ভালোবাসা সৃষ্টি করে দিয়েছেন,
ফলে একজন স্বামী তখনই একজন উত্তম ব্যক্তি হতে পারবে না যতক্ষণ না তার স্ত্রীর কাছে উত্তম হবে ।
আর স্ত্রীর কাছে উত্তম ব্যক্তি হতে হলে স্ত্রীকে যথেষ্ট ভালবাসতে হবে।
কিন্তু দুঃখের বিষয় হল, বিয়ের কয়েক বছর পর থেকেই অসংখ্য মানুষ স্ত্রীদের অবহেলা করতে শুরু করে এবং অনেক আবার কথাই কথাই গালি দিয়ে থাকে ।
স্ত্রীকে গালি দিলে দিলে কি ক্ষতি হয় তা সংক্ষেপে এবার জানার চেষ্টা করব ।
(১) সংসারে অভাব-অনটন নেমে আসে ।
স্ত্রীকে হোক বা অন্য কাউকে হোক গালি দেওয়া কাবিরা গুনা । নিয়মিত কাবিরাহ গুনাহ করলে বিভিন্ন বিপদের সম্মুখীন হতে হয় এমনকি সংসারে অভাব অনটন নেমে আসে । এছাড়া স্ত্রীকে গালি দিলে দুজনের মধ্যেকার ভালোবাসার সম্পর্ক দুর্বল হয়ে যায় । যে সংসারে স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক দুর্বল হয় বা খারাপ হয়ে যায়। সে সংসারে অভাব-অনটন, অশান্তি ছড়িয়ে পড়ে সুখ শান্তি খুব কমই পাওয়া যায় ।
(২) অন্তর মরে যায় ।
গালি দেওয়া একজন মুমিনের বৈশিষ্ট্য নয়, গালি দেওয়ার শয়তান ও তার সহচরদের বৈশিষ্ট্য ।
হাসি-কৌতুক ও ঠাট্টাচ্ছলেও অন্যকে গালি দেয়া ইসলামের দৃষ্টিতে অশোভনীয় ।
মুমিন কখনো দোষারোপকারী, অভিশাপদাতা, অশ্লীলভাষী ও গালিগালাজকারী হয় না। ছোটখাটো গালি দিতে দিতে মানুষ বড় ধরনের গালি দেওয়াতে অভ্যস্ত হয়ে যায় । গালি দেওয়ার ফলে মানুষের অন্তরে পর্দা পড়ে যাই, ময়লা জমে যায়, গালি দেওয়ার মতো কবীরা গুনাহের কাজ না ছাড়লে আস্তে আস্তে অন্তর মরে যায়। অন্তর মরে গেলে খারাপ কে ভালো মনে হয় আর ভালো কে খারাপ মনে হয় । একটু চিন্তা করুন এমন কত মানুষ আছে যারা খুব বেশি পরিমাণে কথায় কথায় গালি দিয়ে থাকে । তাদের অন্তর কি জীবিত আছে । নেই তাই সময় থাকতে অন্তরের মরীচিকা দূর করতে ।
(৩) স্ত্রীর কাছে খারাপ হয়ে যায় ।
ভিডিওর শুরুতে হাদিস বেশ করেছিলাম, যে ব্যাক্তি স্ত্রীর কাছে উত্তম সে প্রকৃতপক্ষে উত্তম ব্যক্তি । পক্ষান্তরে স্ত্রীর কাছে খারাপ সে প্রকৃতপক্ষে খারাপ ব্যক্তি । এবার ভাবুন যদি কেউ নিয়মিত কথায় কথায় স্ত্রীকে গালি দিয়ে থাকে তাহলে কি করে সে স্ত্রীর কাছে ভালো বলে বিবেচিত হবে?
বিয়ের পর থেকে স্ত্রী স্বামীকে অনেক সম্মান দেয়, কিন্তু স্বামীর দুর্ব্যবহারের কথা, কুকর্মের কথা, গোপন কথা, যখন বুঝে ফেলে তখন মনে মনে ভাবে আমার স্বামীটাকে যা ভেবেছিলাম তা নয় । যার ফলে একটু বিতর্ক হলেই অনেকেস্ত্রী এমন আছে যে স্বামীর মুখের সামনে সবকিছু বলে দেয় । স্বামী সহ্য করতে না পেরে গালি দিতে শুরু করে এবং কাবিরা গুনা সঞ্চয় করতে থাকে । অতীতের গোপন কথা,অতীতে ঘটে যাওয়া অপমানজনক কিছু কথা থাকলে কখনোই তা স্ত্রীর সামনে প্রকাশ করবেন না ।
স্ত্রীকে যে সমস্ত কথা কখনোই বলা যাবে না, বললে বিপদে পড়তে হবে, মান-সম্মান নষ্ট হবে ।
এ সম্পর্কে সেপারেট একটি ভিডিও আমাদের চ্যানেলে আছে ডেসক্রিপশন লিংক দেওয়া আছে চাইলে দেখতে পারেন ।
(৪) দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পায় ।
স্ত্রীকে গালি দিলে দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পায় ।
আজে বাজে বেশি বকাবকি ও গালাগালি করার ফলে আত্মীয়-স্বজন পাড়া-প্রতিবেশি ও শ্বশুর-শাশুড়ির কাছে খারাপ হয়ে যায় । কারো কাছে আগের মত সম্মান পায় না,ওজন নষ্ট হয়ে যায় এবং মানুষের কাছে অবহেলার পাত্রে পরিণত হয় । পাশাপাশি গুনাহের কাজ করার জন্য খিটখিটে ভাবের আত্মপ্রকাশ ঘটে এবং দুশ্চিন্তা বৃদ্ধি পায় ।
এছাড়া, ব্যবসা-বাণিজ্যে উন্নতি কমে যায়, মনের সুখ শান্তি নষ্ট হয়, বিভিন্ন বিপদ গ্রাস করে, আর পরকালে কাবির আপনার জন্য রয়েছে জাহান্নামের শাস্তি ।
নিজের স্ত্রী হোক বা অন্য কেউ হোক কাউকে গালি দেওয়া যাবে না, অসংখ্য মানুষ অন্য কোথাও গালি দিতে না পারলেও স্ত্রীকে খুব ভালোই গালি দিতে পারে । এই বাজে অভ্যাস বর্জন করতে হবে ।
স্বামী হোক অথবা স্ত্রী বিতরকের সময় বা ছোটখাটো ঝামেলার সময় কেউ যেন কখনোই কাউকে গালি যেন না দেয় । স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ছোটখাটো বিতর্ক বা ঝামেলা হয়ে থাকে এটা সকলেরই হয় । এর জন্য গালাগালি ও মারপিট করা ভালো লক্ষণ নয় । এতে দিনের-পর-দিন অভ্যাস খারাপ হয়ে যায় ।
আশা করি বিষয়টি পরিষ্কার বুঝতে পেরেছেন ।