আজানের বর্ণনা
✍ কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) ➡ মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]
❏ মাসয়ালা: (৫৬)
আজানের আগে পরে দরূদ শরীফ ও সালাত সালাম পাঠ করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহাসান। বর্তমান ফিত্না ফ্যাসাদের যুগে দরূদ শরীফ এটি একটি মাপকাঠি। কেননা, এটি বিশুদ্ধ আক্বীদাপন্থী লোকদের মসজিদ কিনা। অর্থাৎ আজানের আগে পরে দরূদ শরীফ পাঠ করলে বুঝা যাবে এটি বিশুদ্ধ আক্বীদার মসজিদ।
এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আমি অধমের লিখিত:
الصلواة على النبى الامين قبل الاقامة والتاذين
নামক কিতাব যা আজানের আগে দরূদ পড়া জায়েয নামে প্রসিদ্ধ। বর্তমানে এটি মাজ্মুয়ায়ে রাসায়েল নামক কিতাবের মধ্যে বিদ্যমান। উক্ত কিতাবটি পাঠ করার অনুরোধ রইল।
উলেখ্য যে আজানের আগে-পরে দরূদ শরীফ পাঠ করা নজদী হুকুমতের পূর্বে পবিত্র হারামাইন শরীফেও প্রচলন ছিল।
كما بسطه فى كشف الارتياب
❏ মাসয়ালা: (৫৭)
মসজিদের অভ্যন্তরে আজান দেওয়া মাকরূহ।
➥ [দুররে মোখতার]
❏ মাসয়ালা: (৫৮)
যদি আজানের জন্য মুয়াজ্জিন নির্দিষ্ট থাকে আর তার অনুমতিক্রমে কোন ব্যক্তি আজান দিয়ে থাকলে এক্ষেত্রে উক্ত ব্যক্তি একামত দিতে হবে এমন কোন আবশ্যকতা নাই। যে ব্যক্তি আজান দিয়েছে সে যদি উপস্থিত না থাকে অন্য যে কেউ একামত দিতে পারবে। আর যদি মুয়াজ্জিন উপস্থিত থাকে তবে এক্ষেত্রে তার অনুমতিক্রমে যে কেউ একামত দিতে পারবে। আর মুয়াজ্জিনের অনুমতি ব্যতিরেকে অন্য কেউ আজান দেওয়াতে মুয়াজ্জিন যদি অসন্তুষ্টি কিংবা মনে কষ্ট পায় তবে এক্ষেত্রে মাকরূহ হবে, এমনটি না হলে অসুবিধা হবে না। (২৪)
➥ [আলমগীরি, বরকাত]
❏ মাসয়ালা: (৫৯)
আজানের মধ্যে রাগিনী তথা সঙ্গীতের সূর ভঙ্গী, সূর বৈচিত্র যা বাক্যকে পরিবর্তন করে দেয় অর্থাৎ অক্ষরে হরকত, সুকনাতের ক্ষেত্রে কম বেশী হয়ে যায়। যেমন হরফ কিংবা مدّ اول (প্রথম মদ্দ) ও مدّ اخر (দ্বিতীয় মদ্দ) হতে বাড়িয়ে বলা এ সমস্ত কিছু করা এবং শ্রবণ করা উভয়ই হালাল নয়। যেমনটি কোরআন শরীফ তেলাওয়াতের ক্ষেত্রে হালাল নয়।
➠দুররে মোখতারে আছে;
(ولا لحن فيه) اى التغنى بغير كلماته فإنه لا يحل فعله وسماعه لا تغنى بالقرآن –
➠অনুরূপ রদ্দে মোখতারে বর্ণিত রয়েছে:
قوله (بغير كلماته) اى بزياده حركة وحرف اومد او غيرها فى الاوائل والاخر (فتوى سعديه صفه ২৪)
❏ মাসয়ালা: (৬০)
জারজ সন্তানের আজান জায়েজ এবং জারজ সন্তান হওয়ায় তার আজান মাকরূহ হবে না।
➥ [ফতোয়ায়ে আলমগীরি, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-২৮]
ويجوز اذان العبد والقروى واهل المفازة وولد الزناء الى ان قالوا من غير كراهة .
❏ মাসয়ালা: (৬১)
নামাজের আজান ব্যতীত অন্যান্য আজানের জবাব দেওয়া কেমন? বলা যায়- আজান শ্রবণ সম্পর্কীয় হাদীস যাতে আজান শ্রবণ পূর্বক জবাব দেওয়ার বর্ণনা রয়েছে। উক্ত হাদীসটি আ’ম তথা সর্ব সাধারণ যা কার্য্যত: বাহ্যিকভাবে সে সমস্ত আজানের জবাব দেওয়ার কথাও প্রমাণিত রয়েছে যে সমস্ত আজান নামাজ ব্যতীত অন্যান্য ক্ষেত্রে দেওয়া হয়ে থাকে। যেমন- নবজাত শিশুর জন্মের পর আজান, ইত্যাদি।
➥ [ফতোয়ায়ে শামী, ১ম খখন্ড, পৃষ্ঠা-৩৬৯]
بقى هل يجيب اذان غير الصلاة كالأذان للمولود لم اراه لائمتنا والظاهر نعم ولذا يلنتت فى حيعلته كما وهو طاهر الحديث ويظهر لى اجابة الكل بالقول لتعدد السبب وهو السماء.
এটি সর্ব সাধারণের ক্ষেত্রে দলিল।
والطاهر وجوبها باللسان لظاهر الامر فى حديث اذا سمعتم المؤذن فقولوا مثل ما يقول الخ.
➠বাহরুর রায়েক্ব ইত্যাদি গ্রন্থে রয়েছে:
সাধারণত: আল্লাহর জিকিরের সৌন্দয্যের বর্ণনা কোরআন-হাদীস দ্বারা প্রমাণিত। প্রতিটি কর্মের সুনির্দিষ্টতা শরীয়ত দ্বারা ছাবেত হওয়া আবশ্যক নয়। তবে পায়খানায় বসে মুখ দ্বারা আল্লাহকে স্মরণ করা নিষেধ, কেননা এই সুনির্দিষ্ট কর্মের অপরিণাম সম্পর্কে শরীয়ত দ্বারা প্রমাণিত।
➥ [ফতোয়ায়ে নুরীয়া, ১ম খন্ড, পৃষ্ঠা-১৮৩]
❏ মাসয়ালা: (৬২)
আযান বুদ্ধিমান বালেগ ব্যক্তিরা দিবেন, পাগল অবুঝ শিশু দ্বারা আযান দেওয়া বৈধ নয়। তেমনি মহিলাদের আযান দেওয়া মাকরূহে তাহরিমী। তাই কোন মহিলা বা পাগল বা বেহুঁশ ও অবুঝ শিশু আযান দিলে তা পুনরায় বলতে হয়।
➥ [ইসলামী কানুন]
❏ মাসয়ালা: (৬৩)
টেপ রেকর্ডের আযানের জবাব দেওয়ার হুকুম:
যখন সে আযান শরয়ী নয় তখন তার জবাব কিসের; বরং তা সুন্নাতের বিপরীত। তা বিদ‘আত হওয়াতে কারো সন্দেহ নেই। আযানের জবাব শরয়ী হলে দিতে হয়।
❏ মাসয়ালা: (৬৪)
সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা ঐ কাজকে বলা হয়, যা নবীর সামনে সাহাবারা করেছেন তিনি নিশ্চুপ ছিলেন বা খুশি প্রকাশ করলেন এবং নিষেধ করেননি তাই সুন্নাতে মুস্তাহাব্বা। যেমন, হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) থেকে প্রমাণিত, আযানে পবিত্র নাম শুনে দরূদ শরীফ পড়ে বৃদ্ধাঙ্গুলি চুমু খাওয়া সুন্নাত। তা অস্বীকারকারী মুহাব্বাত বঞ্চিত।
(এ ব্যাপারে বিস্তারিত জানার জন্য আমার লিখিত “তাকবীলুল ইব্হামাইন” নামক পুস্তিকাটি পাঠ করার অনুরোধরইল।)
❏ মাসয়ালা: (৬৫)
আযান শেষ হওয়ার পরে মুয়াজ্জিন ও শ্রোতা দরূদ শরীফ পড়বে অত:পর দু‘আ করবে।
اللَّهُمَّ رَبَّ هَذِهِ الدَّعْوَةِ التَّامَّةِ وَالصَّلَاةِ الْقَائِمَةِ. آتِ سيدنا مُحَمَّدًا الْوَسِيلَةَ وَالْفَضِيلَةَ، والدرجة الرفيعة وَابْعَثْهُ نامَقَامَا محْمُودَا الَّذِي وَعَدْتَهُ و ارزقنا شفاعته و اجعلنا فى شفاعتيه يوم القيامة إنك لا تخلف الميعاد.
➥ [সগীরি, কবীরি, শামী, বাহারে শরীয়ত, খ, ৩ পৃ:৩৭, রাহে নাজাত, রুহুল ঈমান ও ইসলাম, পৃ:৩৪]
❏ মাসয়ালা: (৬৬)
আযানের দু‘আতে হাত উঠার কি হুকুম?
আযানের দুআতে হাত উঠানো সুন্নাত।
❏ মাসয়ালা: (৬৭)
খুতবার আযানের জবাব মুক্তাদীকে দেওয়া বৈধ নয়।
➥ [বাহারে শরীযয়, দুররে মুখতার, ফতোয়ায়ে সিরাজিয়া]
❏ মাসয়ালা: (৬৮)
ইকামতের জবাব দেওয়া মুস্তাহাব। তার জবাবের পদ্ধতিও আযানের মত। পার্থক্য হল, قد قامت الصلاة এর জবাবে أقامها الله وأدامها বলবে।
➥ [বাহারে শরীয়ত, আলমগিরী]
❏ মাসয়ালা: (৬৯)
নামাযের আযান ব্যতীত অন্য আযানেরও জবাব দিতে হয়। যেমন বাচ্চা জন্ম হওয়ার পরের আযান।
➥ [শামী, বাহারে শরীয়ত]
❏ মাসয়ালা: (৭০)
যদি কয়েকটি আযান শুনা হয় তখন সকলের জবাব দেওয়া উত্তম হবে, তবে প্রথম আযানের জবাব দেওয়া সুন্নাত হবে।
➥ [শামী, বাহারে শরীয়ত]
❏ মাসয়ালা: (৭১)
মুয়াজ্জিন কিরকম হওয়া চায়? যেহেতু আযানের উপর নামায রোযার ভিত্তি। তাই মুয়ায্যিন এমন হওয়া চায় যে নামাযের সময় নিয়ে অবগত, বুদ্ধিমান, সতর্কবান মুত্তাকী হয়। সাথে সাথে সে আযানের আদব সুন্নাত নিয়ে অবগত। ফাসেকও ফাজের হবে না। তাই যে দাড়ি রাখেনা ও বিভিন্ন প্রকাশ্য পাপে লিপ্ত তার আযান মাকরূহ। হাদিসে এসেছে, তোমাদের মাঝে তোমাদের উত্তম ব্যক্তি আযান দিবে।