রাহমাতুল্লিল আলামীন যাচ্ছেন মদীনার গলি দিয়ে। পথে দেখলেন— একটা বাড়ি তৈরী করা হচ্ছে। জিজ্ঞেস করলেন— ‘কার বাড়ি এটা?’ ‘ইয়া রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! অমুক আনসারী সাহাবীর বাড়ি এটি’ —উত্তর দিলেন কেউ একজন।
তারপর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলে গেলেন। যিনি উত্তর দিয়েছিলেন, তিনি ইতিমধ্যে হুযুরের চেহারা মোবারকে কিছুটা অসন্তুষ্টির ছাপ লক্ষ্য করেছিলেন। তিনি বাড়ির মালিক সেই আনসারী সাহাবীকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করেন। বললেন— ‘সম্ভববত তোমার বাড়িটি হুযুরের পছন্দ হয় নি।’ একথা শুনার সাথে সাথে তিনি একটি কোদাল দিয়ে সেই বাড়িটি ভেঙে ফেলেন।
কিছুদিন পর হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একই রাস্তা দিয়ে যাওয়ার পথে বাড়িটি আর দেখতে পেলেন না! ভাঙ্গা অবস্থায় ছিল। বললেন— বাড়ির মালিককে ডেকে পাঠাও। সেই আনসারী সাহাবী আসলেন। হুযুর জিজ্ঞেস করলেন— এখানে তোমার বাড়ি তৈরী হচ্ছিল। এখন এই ভাঙা অবস্থায় কেন? আনসারী সাহাবী উত্তর দিলেন— শুনেছিলাম আপনার পছন্দ হয় নি! আল্লাহু আকবার।
এই ভালোবাসার গভীরতা আপনাকে আমি বলে বুঝাতে অক্ষম। উপলব্ধি করুন, কতটা ভালোবাসা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের প্রতি হলে মানুষ এমনটা করে। তাঁরা তো নিজের চাহিদাকে পরিত্যাগ করেছিলেন। হুযুরের পছন্দকেই নিজের পছন্দ বানিয়েছেন। এজন্যই আজও হুযুরের সাহাবী পরিচয়ে তাঁরা পৃথিবীতে সমাদৃত। আজও পৃথিবীর কোণায় কোণায় তাঁদের স্মরণ করা হয়। হুযুরের প্রতি ভালোবাসা তাদেরকে কাবিলে যিকর বানিয়ে দিয়েছে।
আর হুযুরের প্রতি আমাদের ভালোবাসা শুধু মুখে উচ্চারিত একছত্র শব্দগুচ্ছ পর্যন্তই সীমাবদ্ধ। কাজে-কর্মে বাস্তবায়ন নেই বললেও ভুল হবে না। আমরা তো আল্লাহ ও রাসূলের জন্য নিজের নফসের চাহিদা, শখ কুরবানি করতে নারাজ। তাই তো আমাদের এই অধঃপতন। ভালোবাসা তো এটাই— প্রেমাষ্পদের চাহিদাই আমার চাহিদা হয়ে যাবে। তবেই তো ভালোবাসা পূর্ণতা পাবে।
আমরা আমাদের মধ্যে পর্যবেক্ষণ করে যদি একটু দেখি— আমাদের কোন কোন কাজ হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর অপছন্দনীয়? অধিকাংশ কাজই আমাদের মধ্যে পাওয়া যাবে, যা হুযুরের অপছন্দনীয়। তাহলে এই মৌখিক ভালোবাসার দাবী— বৃথা। দাবীকে পূর্ণতা দেয়ার চেষ্টা করতে হবে।
সাহাবায়ে কেরাম আমাদের আদর্শ। তাদেরকে অনুসরণ করতে পারলে আমরা সফলকাম হতে পারব ইনশাআল্লাহ।