কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) ➡ মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]
❏ মাসয়ালা: (২১০)
জানাযার নামাজে কমপক্ষে তিন কাতার করা উত্তম। হাদিস শরীফের মধ্যে রয়েছে- যার নামাজ তিন কাতারে আদায় করা হয়, তার যাবতীয় গুনাহ মাফ হয়ে যাবে।
❏ মাসয়ালা: (২১১)
যার জানাজার নামাজে কেবলমাত্র সাতজন লোক হয়, তাহলে তিন কাতার কিভাবে করবে?
এ ক্ষেত্রে একজন ইমাম হবে, অতঃপর তিনজন প্রথম কাতারে, দু’জন দ্বিতীয় কাতারে আর একজন তৃতীয় কাতারে দাঁড়াবে।
❏ মাসয়ালা: (২১২)
জানাযার মধ্যে পিছনের কাতার অন্যান্য কাতার হতে ফজিলতময়।
➥ [দুররে মোখতার]
❏ মাসয়ালা: (২১৩)
যদি জানাযার নামাজের জন্য প্রস্তুত হয়ে যায়, এমতাবস্থায় অজু ও গোসল করে জানাযায় শরীক হতে গেলে ততক্ষণে নামাজ শেষ হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে, তাহলে এ ক্ষেত্রে তখন তায়াম্মুম করে জানাযার নামাজে শরীক হয়ে যাবে।
❏ মাসয়ালা: (২১৪)
যদি পায়ে জুতা থাকে আর উক্ত জুতা পাক-পবিত্র হয়, কোন প্রকার নাপাকী না লাগে সেক্ষেত্রে জুতা খোলার প্রয়োজন নাই। আর যদি নাপাকী লাগে তাহলে জুতা খোলে আলাদা রেখে দিবে, তারপর নামাযের জন্য নিয়্যত করবে।
❏ মাসয়ালা: (২১৫)
জানাযার নামাজ ফরজে কেফায়া। জানাযার নামাজের মূল হচ্ছে দোয়া। চার তাকবীরের সাথে ইমামের ইকতেদা করে নিয়্যত করবে যে- আমি ইকতেদা করছি এই ইমামের অথবা অন্তরে এভাবে নিয়্যত করবে যে-
➠ইমামে যে নিয়্যত করেছে, আমিও অনুরূপ ইমামের পিছনে একই নিয়্যত করছি আল্লাহু আকবর (আলমগীরি)। আল্লাহু আকবর বলে উভয় হাত কান পর্যন্ত উত্তোলন করে হাত বাঁধবে, অতঃপর নিম্নস্বরে ছানা পাঠ করবে। ছানা হচ্ছে:
سُبْحَانَكَ اللَّهُمَّ وَبِحَمْدِكَ وَتَبَارَكَ اسْمُكَ وَتَعَالَى جَدُّكَ وَجَلَّ ثَنَاءُكَ وَلَا إلَهَ غَيْرُكَ.
অতঃপর দ্বিতীয় তাকবীর হাত উঠানো ব্যতীত আল্লাহু আকবর বলে চুপে চুপে নিম্নের দরূদে ইব্রাহীমি দু’টি পাঠ করবে।
1) اَللهم صَلِّ عَلٰى سَيِّدِنَا مُحَمَّدِ وَّعَلٰى آلِ سَيِّدِنَا مُحَمَّد كَمَا صَلَّيْتَ عَلٰى سَيِّدِنَا اِبْرَاهِيْمَ وَعلٰى آلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌمَجِيْدٌ .
2) اَللهم بَارِكْ عَلٰى مُحَمَّدِ وَّعَلٰى آلِ مُحَمَّدِ كَمَا بَارَكْتَ عَلٰى اِبْرَاهِيْمَ وَعَلٰى آلِ اِبْرَاهِيْمَ اِنَّكَ حَمِيْدٌ مَجِيْدٌ . .
এরপর তৃতীয় তাকবীর হাত উত্তোলন ব্যতীত আল্লাহু আকবর বলে নিম্নস্বরে বালেগ-বালেগা, মহিলা-পুরুষ উভয়ের ক্ষেত্রে এই দোয়াটি পাঠ করবে:
اَللهم اغْفِرْ لِحَيِّنَا وَمَيِّتِنَا وَشَاهِدِنَا وَغَائِبِنَا وَصَغِيرِنَا وَكَبِيرِنَا وَذَكَرِنَا وَأُنْثَانَا- اللَّهُمَّ مَنْ أَحْيَيْتَهُ مِنَّا فَأَحْيِهِ عَلٰى الْإِسْلَامِ وَمَنْ تَوَفَّيْتَهُ مِنَّا فَتَوَفَّهُ عَلٰى الْإِيمَانِ .
পাঠ শেষে তাকবীর বলে উভয় দিকে সালাম ফেরাবে।
❏ মাসয়ালা: (২১৬)
আর যদি নাবালেগ ছেলে-মেয়ে হয় তবে সেক্ষেত্রে উপরোক্ত দোয়ার স্থলে-
اَللهم اجْعَلْهُ لَنَا فَرَطًا وَاجْعَلْهُ لَنَا أَجْرًا وَذُخْرًا وَاجْعَلْهُ لَنَا شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا .
আর মেয়ের ক্ষেত্রে اَجْعَلْهُ এর স্থলে اَجْعَلْهَا আর شَافِعًا وَّمُشَفَّعًا এর স্থলে شَافِعَةً وَّمُشَفَّعَةً পাঠ করবে। চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে।
❏ মাসয়ালা: (২১৭)
যে সমস্ত লোকের ছানা ও দরূদে ইব্রাহীম জানা না থাকে, কিংবা মুখস্থ করতে কষ্ট হয় তাদের ক্ষেত্রে ছানার মধ্যে اَلْحَمْدُلِلهِ حَمْدًا كَثِيْرًا طَيِّبًا مُبَارَكًا আর দরূদের স্থলে اَللهم اغْفِرْ لِلْمُؤْمِنِيْنَ وَالْمُؤْمِنَاتِ এবং নাবালেগ ছেলের ক্ষেত্রে اَللهم اعذهُ مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ এবং নাবালেগ মেয়ের ক্ষেত্রে اَللهم اعذهَا مِنْ عَذَابِ الْقَبْرِ পাঠ করে নেয়াই যথেষ্ট। চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফিরাবে।
❏ মাসয়ালা: (২১৮)
যদি এমন কোন দুর্ভাগা ও বদকিসমতের লোক হয়; যার নিকট জানাযার নামাজের ছোট-বড় কোন দোয়াই জানা নাই আর নামাজের পাবন্দী না হওয়ার কারণে ছানা ও দরূদে ইব্রাহীমিও তার জানা নাই। এ ক্ষেত্রে আপরাগ পক্ষে অন্তরে নামাজের নিয়ত করে চার তাকবীর এভাবে বলা আবশ্যক অর্থাৎ প্রথম তাকবীরে উভয় হাত কানের লতি পর্যন্ত উঠিয়ে আল্লাহু আকবর বলে নামাজের ন্যায় নাভির উপরে হাত বাঁধবে, অতঃপর বাকী তিন তাকবীরে হাত উঠা ব্যতীত কেবল মুখে আল্লাহু আকবর বলবে এবং চতুর্থ তাকবীর বলে সালাম ফেরাবে। উলেখ্য যে, ছোট-বড় কোন দোয়া না জানা (অজানা) ব্যক্তিদের বেলায় চারটি তাকবীরই নামাজের স্থলাভিষিক্ত।
❏ মাসয়ালা: (২১৯)
জানাযার নামাজে ইমাম মুক্তাদী উভয়ের ক্ষেত্রে তাকবীর ও দোয়া পাঠ করা আবশ্যক। কেবল পার্থক্য হচ্ছে এতটুকু যে, ইমাম জোর আওয়াজে তাকবীর বলবে আর মুক্তাদী আস্তে (নিম্ন স্বরে) বলবে।
❏ মাসয়ালা: (২২০)
যে মুক্তাদী ছানা, দরূদ ও দোয়া পাঠ করতে পারে না সে কেবল তাকবীর বলে নেওয়া চাই।
❏ মাসয়ালা: (২২১)
দোয়া চুপে চুপে করা সুন্নাত। لان السنة فى الادعية الخفية আর رفع الصوت দ্বারা উদ্দেশ্য এটিও হতে পারে-
منه كان عليه اهل الجاهلية من الافراط من مدح الميت عند جنارته حتى كانوا يذكرون ماهو سببه المحال –
অর্থাৎ জাহেলীয়াতের যুগে লোকগণ মৃতের তারীফ জানাজার নামাজের সময় অতিরঞ্জিত ভাবে বর্ণনা করত যা মৃতের মধ্যে থাকাটা একেবারেই অসম্ভব। যেমনটি আমাদের বর্তমান সময়ে কোন কোন এলাকায় দেখা যায় ও শুনা যায় যে এমনভাবে অতিরঞ্জিত ও বাড়িয়ে মৃতের তারিফ প্রশংসা করা হয়ে থাকে যা কিনা ধ্যান ধারণার বাইরে, উক্ত গুণ মৃতের মধ্যে থাকাটা কোন অবস্থায়ই সম্ভবপর নয়। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন এদের থেকে হেফাজত রাখুন। আমিন।