কৃতঃ আল্লামা আজিজুল হক আল কাদেরী (رحمة الله) ➡ মুনিয়াতুল মুছলেমীন [১ম খন্ড]
❏ মাসয়ালা: (৩২০)
যখন কোন হুকুম তথা বিধি নিষেধের ক্ষেত্রে বেদআত ও সুন্নাত হওয়ার ব্যাপারে মতানৈক্য ও সন্দিহান হলে সেক্ষেত্রে সুন্নাতকে পরিহার করতে হবে।
ردالمحتار مكروهات الصلوة میں ہے ، اذا تردد الحكم بين سنة وبدعة كان ترك السنة راجحًا على فعل البدعة –
(ফতোয়ায়ে রেজভীয়া ৬ষ্ঠ খন্ড ৫২৮ পৃষ্ঠা)
❏ মাসয়ালা: (৩২১)
আলিমগণ কোরআন মজীদের অনুবাদ তাফসীর বিহীন ও ব্যাখ্যা বিহীন হাদিসের অনুবাদ বর্ণনা করা অপছন্দ করেছেন।
➥ [নুযহাতুলকারী, খন্ড: ১ পৃ:৪৩৭]
❏ মাসয়ালা: (৩২২)
১. দাওয়াত পড়া, আমলিয়াত করা দৃঢ়তার সাথে যা দ্বারা জিন্নাতদেরকে কাবু করা হয়।
২. এমন দাওয়াত পড়া ও আমলিয়াত করা যা দ্বারা ফেরেশতাদেরকে কাবুতে আনা হয়। এরকম দাওয়াতের আমলকারী এক প্রকার পাগল, সে সকল প্রাণীর গোস্ত, মাছ, ডিম, দুধ, পেয়াজ, রসুন ইত্যাদি আহার করে না। সে অনেক সতর্কতা অবলম্বন করে সে যদি কোন কারণে নাপাক হয়ে যায় তখন তাকে হঠাৎ গোসল করতে হয়। তা কিছু ফেরেশতাকে কাবুতে আনার জন্য পড়া হয়। এভাবে জিন ও ফেরেশতাদেরকে কাবু করা প্রকৃত বুযুর্গানে দীনের নিকট তা কূফর, নাপাক ও হারাম।
সকল অলীগণ, শহীদগণ, গাওছ কুতুব ও আবদালের রুহ থেকে ফয়েয ও বরকত হাসিল করা তাদের আত্মার সাথে সাক্ষাত করা তাদের সাথে সফর করা এসকল আত্মাকে নিজের তত্ত্ববধানে আনা এসকল অবস্থা আল্লাহর সত্ত্বায় অধিক মনোনিবেশের মাধ্যমে হয় এবং মুহাম্মদের সত্ত্বায় মানেনিবেশ তা পরিপূর্ণ হয় তা দ্বারা দয়া ও ক্ষমতা অর্জিত হয়।
কবর যিয়ারত ও আত্মা খুলে যাওয়া চশমার মত। সে ব্যক্তি পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত দেশকে নিজের আয়ত্বে নিয়ে আসে এবং সকল মানুষ তার অনুসারী হয়ে যায়। এ ধরনের লোকের সকল অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ আল্লাহর সত্ত্বায় নিমজ্জিত হয়ে যায়। তা দ্বারা আলোকিত অন্তর সৃষ্টি হয়। নবী ও অলীদের আত্মার সাথে, শ্বাস-প্রশ্বাসের সাথে অন্তরে অন্তরে মাংসপেশীতে একাত্মতা হয়ে যায়। যখন এ ধরনের আমল শুরু হয়, নবী ও সকল অলীদের আত্মা তার চতুর্দিকে বেষ্ট করে থাকে সে মাঝখানে অবস্থান করে, যে ব্যক্তি এ ধরনের দাওয়াতে আমল করতে চায় তা বৈধ। বেকুফদেরকে তো তা নসীব হবে না। এ দাওয়াতে আমল দ্বারা স্থায়ী দম, পরিপূর্ণ অন্তর ও নি:শেষিত অন্তর অর্জিত হয় এবং কোরআনের ত্রিশ অক্ষরের জ্ঞান দ্বারা হাজার হাজার জ্ঞান অর্জন হয়। প্রত্যেক অক্ষর দ্বারা ক্ষমতার হিকমাত অর্জিত হয়।
➥ [আকলে বেদার:৭৬]
উলেখ থাকে যে, আলিমগণ কিতাব পড়ে কোনো প্রশ্নের উত্তর দেন; কিন্তু সাহেবে দাওয়াত হাদিসের নস অন্তরে উপস্থিত হওয়ার মাধ্যমে উত্তর দেন। যা আল্লাহ ও তাঁর রাসুল দ্বারা অর্জিত হয় তার শরীরের পোশাক আলো হয়, তার অন্তরে স্থায়ী আল্লাহর যিকিরের অবস্থা অর্জিত হয়।
➥ [আকলে বেদার:৩৮]
এ রাস্তায় মানুষের কু-প্রবৃত্তি ও দুনিয়াবী লালসা প্রতিবন্ধক হয়।
❏ মাসয়ালা: (৩২৩)
মানুষের কু-প্রবৃত্তির মূল হল, অন্তর বা কলিজা। যা মানুষের বাম পাশে অবস্থিত। তা নষ্ট হওয়া অর্থ তার কু-প্রবৃত্তি শক্তি বেড়ে যাওয়া এবং পাপে নিমজ্জিত হওয়া; কেননা সেখান থেকেই রক্ত তৈরি হয় তা থেকে পুরো শরীরে সাফলাই হয়, মানুষের শক্তি খানা-পিনা থেকে সৃষ্টি হয় এবং মানুষের কামভাবের সে রক্ত থেকে সৃষ্টি হয়। তাই শরীরে রক্ত থাকলে সেই শক্তি বাড়তে থাকে।
➥ [হক্কানী, খ, ৭, পৃ:৩০৮, সূরায়ে মুরসালাত]
❏ মাসয়ালা: (৩২৪)
কোন ব্যক্তির ব্যাপারে সাধারণ পরিপূর্ণতা বিশ্বাস রাখা যাবে না; কেননা সকল মানুষের কোনো না কোন অপরিপূর্ণতা থাকে। নিশ্চুপ হওয়া শুধুমাত্র নবীদের বৈশিষ্ট্য। তাই সারকথা হল, নবী ছাড়া সকল মানুষের দোষ থাকতে পারে; তাই কোন পাপ কোন ঘটনাকে পাওয়া বেলায়েতের বিপরীত নয়।
➠হযরত জুনাইদ বাগদাদী (رحمة الله) থেকে জিজ্ঞেস করা হল কোন আল্লাহর অলী কি যিনা করতে পারে? তিনি কিছুক্ষণ নিশ্চুপ রইলেন অত:পর তিনি মাথা উঠালেন তখন তিনি বললেন, আল্লাহর সকল কাজে তাকদীরে ফায়সালাকৃত। তাই যদি তার তাকদীরে আযল থেকে লিখা থাকে যে তার থেকে সে পাপ বের হবে তখন তা অবশ্যই হবে তবে সে তাওবার মাধ্যমে পবিত্র হয়ে যায়।
➥ [মারাজুল বাহরাইন, আব্দুল মুহাদ্দিস দেহলভী, পৃ:১৬০]
❏ মাসয়ালা: (৩২৫)
তাওবা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ বস্তু বান্দাহর জন্য। কেননা; বান্দাহর ধ্বংস পাপে নয়; বরং তাওবা ছেড়ে দেওয়ার মধ্যে রয়েছে। তাই হযরত আদম (عليه السلام) ও শয়তানের ঘটনা দ্বারা স্পষ্ট হয়ে যায়।
❏ মাসয়ালা: (৩২৬)
শেখ ইবনে আতা সেকান্দরী কিতাবুল হিকামে বলেন, কোন আরিফ কি আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাথে সম্পর্ক রাখতে পারে? উত্তরে বলেন, কোন সম্পর্ক রাখে না কেননা; আল্লাহ ব্যতীত অন্য কারো সাথে সম্পর্ক রাখা বেলায়তের বিপরীত। যদি অন্য দিকে দৃষ্টি দেওয়া হয় তখন সে ব্যক্তি আরেফ হিসাবে থাকবে না।
➥ [মারাজূল বাহরাইন, পৃ:১৬১]
❏ মাসয়ালা: (৩২৭)
القاعدة: إن الثابت بالدلالة مثل الثابت بالنص أو أقوى منه
যা দালালত দ্বারা প্রমাণিত তা নসের মত বা তার চেয়েও শক্তিশালী। ।
➥ [কিতাবুত তাহকীক শরহে হুসামী, পৃ:১২৫]
❏ মাসয়ালা: (৩২৮)
সুন্নাত দু’প্রকার একটি হল, সুন্নাতুল হুদা তা বর্জন করা মাকরূহ। অপরটি যায়েদাহ তা বর্জন কর মাকরূহ হিসাবে গণ্য হবে না। যেমন রাসূলের চরিত্র দাঁড়ানোতে, বসায় ও পোশাক পরিচ্ছেদে।
➥ [হুসামী, ১০৬]
❏ মাসয়ালা: (৩২৯)
ইহুদীরা ঘুষ নিয়ে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরুদ্ধে আদেশ দিত। নবী (ﷺ) ইরশাদ করেন, মহান আল্লাহ লা’নত করেছেন যারা আদেশ প্রদানে ঘুষের লেনদেন করে।
➥ [তিরমিযী]
➠ফতওয়ায়ে আলমগিরীতে রয়েছে, ফুকহায়ে কেরাম ঘোষ দেওয়া বৈধ মনে করেছেন ঐ মযলুমের জন্য যে ঘোষ দেওয়া ব্যতীত তার হক উসূল করতে পারছে না।
➥ [মওয়াহেব, পারা:৬, মায়েদাহ:১১৬]
❏ মাসয়ালা: (৩৩০)
কারো থেকে কোরআন মজীদ নেওয়ার জন্য দাঁড়ানো সুন্নাত।
➥ [তিরয়াক নাফে, পৃ:১৮]
❏ মাসয়ালা: (৩৩১)
মায়ের উঁচু বংশ নিয়ে কি ছেলেকে উঁচু বংশের বলা হবে?
জবাব: পিতা যদি উচুঁ বংশের না হয় তখন মায়ের দিক দেখে তাকে উচুঁ বংশের বলা হবে না। (ফতওয়া যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম)
মাজমাউল ফতোওয়াতে তার বিপরীত মত এভাবে এসেছে যে, যদি মায়ের বংশ উঁচু হয় আর পিতার বংশ উঁচু না হয় তখন ছেলেকেও উচুঁ বংশের বলা হবে।
➥ [জামে সগীর, মাবসুত]
❏ মাসয়ালা: (৩৩২)
নবী (ﷺ) এর দরবারে হযরত জিব্রাইল (عليه السلام) কতবার তাশরীফ আনলেন?
প্রসিদ্ধ মতে তিনি চব্বিশ হাজার বার উপস্থিত হয়েছেন।
➥ [ফতওয়ায়ে যাইনুদ্দীন ইবনে নুজাইম মিসরী পৃ:১৮৩]
❏ মাসয়ালা: (৩৩৩)
হযরত আদম (عليه السلام) কে কেন মাটি থেকে সৃষ্টি করেছেন?
আদম (عليه السلام)-এর পূর্বে মাটি ব্যতীত অন্য কোনো বস্তু ছিল না; তাই আদম (عليه السلام) কে মাটি দিয়ে সৃষ্টি করেছেন।
➥ [ফতওয়ায়ে ইবনে নুজাইম]
❏ মাসয়ালা: (৩৩৪)
সূর্য “করসে” চাকতিতে বেশ-কম হয় না, কিন্তু চাঁদ ‘করসে’ বেশকম হয় কেন?
সূর্য প্রতিরাতে আরশের নিচে সিজদার অনুমিত মিলে আর চাঁদকে শুধুমাত্র চৌদ্দ তারিখে সিজদা করার জন্য অনুমতি মিলে। তাই সে জন্য চাঁদ প্রতিরাতে খুশিতে বাড়তে থাকে যাতে সে সিজদার অনুমতি পায় অত:পর সে সরু হতে থাক।
➥ [ফতওয়ায়ে ইবনে নুজাইম]
❏ মাসয়ালা: (৩৩৫)
সূর্য যখন ডুবে যায় তখন কোথায় অদৃশ্য হয়?
সূর্য একজাতি থেকে অস্ত গেলে অন্য জাতির জন্য তার উদয় হয়।
➥ [ফতওয়ায়ে ইবনে নুজাইম]
❏ মাসয়ালা: (৩৩৬)
ওয়াযের মাহফিলে সম্বোধনের খেতাবের সাথে কেন দরূদ শরীফ পড়া হয়? অথচ রাসূল (ﷺ) ওয়াযের মাহফিলে হাযির হয় না; তাই গায়েবের সীগাহ (শব্দ) দিয়ে সম্বোধন করা উচিত ছিল? তার জবাব হল তা সত্য; কিন্তু যারা আশেক তাদের নিকট নিকবর্তী ও দূরবর্তী একসমান। ➠বলা হয়:
در راه عشق قرب و بعد نيست،
অর্থাৎ, আশেকদের নিকট নিকবর্তী ও দূরবর্তী একসমান।
➠কবি বলেন,
خيالك فى عينى و ذكرك فى فمى: و مثواك فى قلبى فأين تغيب
অর্থ: আপনার চিত্র আমার চোখে ও আপনার আলোচনা আমার মুখে: আপনার ঠিকানা আমার অন্তরে তাই কোথাই তা বিলুপ্ত হবে।
হযরত ইমাম আব্দুর রউফ ইবনে মুনাবী (رحمة الله) বলতেন, নবী (ﷺ) প্রতি বৈঠক যেখানে তার প্রতি দরূদ পাঠ করা হয় হাযির হন। তাই তোমরা তার প্রতি অধিকহারে দরূদ পাঠ কর এবং বৈঠককে দরূদ শরীফ দ্বারা সৌন্দর্য কর।
➥ [মুওলাদুল মুনাবী:পৃ:১০]
❏ মাসয়ালা: (৩৩৭)
তাওহীদের মজলিসে অন্য কারো আলোচনা করা তাওহীদে খালেছের বিপরীত।
হ্যাঁ তাওহীদের আলোচনা ও দাবীর সাথে সাথে দলীলও দেওয়া জরুরী। কেননা; সাধরাণ নীতি মোতাবেক দলীল বিহীন দাবী পেশ করা বাতিল। তাই তাওহীদের দলীল হিসাবে কোরআনের দলীল পেশ করতে হয়।
➠মহান আল্লাহ বলেন, لقدجاءكم برهان من ربكم
অর্থাৎ, তোমাদের নিকট তার পক্ষ থেকে দলীল এসেছে।
এখানে দলীল বলতে মুহাম্মদ (ﷺ)। অন্য দলীলে কোন না কোন সন্দেহ থাকতে পারে তবে এটি এমন একটি দলীল যেখানে কোন ধরণের সন্দেহ থাকতে পারেনা। তাই মুহাম্মদ (ﷺ) তাওহীদের দলীল এবং দলীলের দাবীর জন্য সবসময় প্রয়োজন যেহেতু তাওহীদের মজলিসে দলীল না থাকা দাবী বাতিল হওয়ার সম্ভাবনা থাকে তাই তাওহীদের সাথে দলীলের আলোচনা জরুরী বিষয়। দলীল না থাকলে দাবী গ্রহণযোগ্য হবে না। তাই অন্যান্য দল তথা ইহুদী ও খ্রিষ্টানের তাওহীদের দলীল না থাকাতে তাদের বিশ্বাস ভ্রান্ত।