শহীদের পরিচয়-
” আভিধানিক অর্থ-
১.সাক্ষীগন
২.উপস্হিতি
৩.প্রত্যক্ষদর্শী
৪.Martyr
“পারিভাষিক অর্থ”
★ যে ব্যক্তি আল্লাহর পথে দ্বীন কায়েমের
জন্য জিবন দিয়েছেন তাকে শহীদ বলা হয়।
★ হাদীসের আলোকে শহীদ-
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন,
‘যে মুসলমান আল্লাহর কালেমাকে সমুন্নত করার
লক্ষ্যে লড়াই করবে, কেবলমাত্র সেই-ই
আল্লাহর পথে লড়াই করল’শহীদ বলা হয়। তাকে
শহীদ এজন্য বলা হয় যে, সে জান্নাতে
উপস্থিত হয়ে যায়।
“শহীদদের মর্যাদা”
★ শহীদেরা কখনো মরেনা, তারা মরেও অমর।
শহীদের মর্যাদায় আল্লাহ বলেন – ﻭَﻟَﺎ ﺗَﻘُﻮﻟُﻮﺍ
ﻟِﻤَﻦْ ﻳُﻘْﺘَﻞُ ﻓِﻲ ﺳَﺒِﻴﻞِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺃَﻣْﻮَﺍﺕٌ ۚ ﺑَﻞْ ﺃَﺣْﻴَﺎﺀٌ ﻭَﻟَٰﻜِﻦْ ﻟَﺎ
ﺗَﺸْﻌُﺮُﻭﻥَ [ ٢ :١٥٤ অর্থাৎ আর যারা আল্লাহর রাস্তায়
নিহত হয়,তাদের মৃত বলো না বরং তারা
জীবিত,কিন্তু তোমরা তা বুঝ না। (সুরা বাক্বারা :১৫৩)
★ শহীদেরা দুনিয়ায় বার বার এসে জিহাদ করে
শহীদ হতে চাইবে-
শহীদের মর্যাদা এত বেশি যা রাসুলের হাদিসে
প্রমাণ পাওয়া যায়-হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা
করেন, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
বলেছেন, কোনো ব্যক্তি জান্নাতে প্রবেশ
করার পর আর দুনিয়ায় ফিরে যেতে চাইবে না। যদি
সে দুনিয়ার তামাম জিনিস পেয়ে যায়, তবুও না।
অবশ্য শহীদের কথা আলাদা। সে চাইবে যে,
তাকে দুনিয়ায় ফিরিয়ে আনা হোক এবং দশবার তাকে
আল্লাহর পথে হত্যা করা হোক। এই কারণে যে,
সে তার ইজ্জত ও সম্ভ্রম দেখতে পাবে। অন্য
রেওয়ায়েতে এসেছে- সে এটা চাইবে এ
কারণে যে, এভাবে সে শাহাদাতের ফজিলত
দেখতে পাবে। (বুখারি ও মুসলিম)
★ শহীদের বৈশিষ্ট্য রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া
সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তাআলার দরবারে
শহীদের জন্য রয়েছে ৬টি বৈশিষ্ট্য-
ক. প্রথম রক্ত বের হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই
তাকে ক্ষমা করে দেয়া হয় এবং শহীদ ব্যক্তি
জান্নাতে তার স্থান দেখে নেয়;
খ. কবরের আজাব থেকে তাকে দূরে রাখা হয়;
গ. বড় ভীতি অর্থাৎ, কিয়ামাতের কঠিন অবস্থা
থেকে নিরাপদ থাকবে।
ঘ. তাঁকে ঈমানের একজোড়া অলংকার পরানো
হবে।ঙ. হুরদের সঙ্গে বিবাহ দেয়া হবে।
চ. নিকট আত্মীয়দের থেকে ৭০ জন
ব্যক্তিকে সুপারিশ করতে পারবে।
★ শহীদগন পুরস্কার পেয়ে হয় আনন্দিত:
মহান আল্লাহর ঘোষণা হলো:
(ফারিহীনা বিমা আতাহুমুল্লাহু মিন ফাদলিহি অ-
ইয়াছতাবশিরুনা বিল্লাযিনা লাম ইয়ালহাকু বিহিম মিন খলফিহিম
আল্লা- খওফুন ‘আলাইহিম অলাহুম ইয়াহযানুন।
ইয়াছতাবশিরুনা বিনি‘য়মাতিমি¥নাল্লাহি অফাদলিন,
অআন্নাল্লাহা লাইউদিউ আজ্রল মু’মিনীন) অর্থাৎ:
“আল্লাহ নিজ অনুগ্রহে তাদেরকে যা দিয়েছেন
তাতে তারা (শহীদগণ) আনন্দিত এবং তাদের
পিছনে যারা এখনও তাদের সাথে মিলিত হয়নি,
তাদের জন্য আনন্দ প্রকাশ করে এজন্য যে,
তাদের কোনো ভয় নেই এবং তারা দুঃখিত হবে
না, আল্লাহর নিয়ামত ও অনুগ্রহের জন্য তারা আনন্দ
প্রকাশ করে এবং তা এ কারণে যে, আল্লাহ্
মু‘মিনদের শ্রমফল বিনষ্ট করেন না” (সূরা-৩ আল-
ইমরান:১৭০-১৭১)। মু‘মিনগণ মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি
বিধানের জন্য নিজ নিজ জীবন বিসর্জন দিয়ে
শহীদ হওয়ার কারণে আল্লাহর নিকট থেকে
এমন মহান পুরস্কার ও নেয়ামত পাবেন যে,
সীমাহীন আনন্দে তারা আত্মহারা হয়ে যাবেন,
দুনিয়ায় যারা আল্লাহর বিধান বাস্তবায়নে ব্যস্ত
রয়েছেন, তারাও শীগ্রই শহীদ হয়ে তাদের
সাথে মিলিত হলে তারাও অনুরূপ পুরস্কার ও
নিয়ামতের অধিকারী হওয়ার সুসংবাদেও শহীদগণ
আনন্দিত, যার কারণে তারা দুনিয়ার জীবনের সকল
দুঃখ-কষ্ট ভুলে যাবেন।
★ শহীদগণ শাহাদাতের অকল্পনীয় মর্যাদা ও
সম্মানজনক পুরস্কার দেখে পুনরায় শহীদ হওয়ার
জন্য দুনিয়ায় ফিরে আসার আকাক্সক্ষা প্রকাশ
করবে:
“হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন: একমাত্র শহীদ ছাড়া
এমন কোনো ব্যক্তি মৃত্যুর পরে দুনিয়ায় ফিরে
আসতে আনন্দ পাবে না, সে আল্লাহর নিকট এমন
কল্যাণপ্রাপ্ত হয়েছে যা দুনিয়া ও তার সমস্ত
সম্পদের সমান। কেননা সে বাস্তবে শাহাদতের
মর্যাদা দেখতে পাবে, সুতরাং সে পুনরায় দুনিয়ায়
ফিরে এসে আর একবার আল্লাহর পথে প্রাণ
দিতে আনন্দ অনুভব করবে” (সহীহ আল-
বুখারী, কিতাবুল জিহাদ-১/৩৯২)।
অন্য এক হাদীসে বর্ণিত হয়েছে:
“হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন,
আমি রাসূলুল্লাহ (সা)-কে বলতে শুনেছি: সেই
সত্তার শপথ যাঁর মুঠির মধ্যে আমার প্রাণ , আমার
নিকট অত্যন্ত পছন্দনীয় হচ্ছে, আমি আল্লাহর
পথে শহীদ হয়ে যাই, অতপর জীবন লাভ করি
এবং পুনরায় শহীদ হই তারপর আবার জীবন লাভ করি
এবং পুনরায় শহীদ হই, তারপর আবার জীবন লাভ করি
এবং পুনরায় শহীদ হই” (সহীহ আল-বুখারী,
কিতাবুল জিহাদ-১/৩৯২)।
★ শহীদের লাশের উপর ফিরেশতারা ছায়া দান
করেন :
“হযরত জাবের (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন:
উহুদের দিন যুদ্ধ শেষে আমার আব্বার লাশ
রাসূলুল্লাহর সামনে এনে রাখা হলো, তার লাশ বিকৃত
(নাক কাটা ও চক্ষু উপড়ানো) করা হয়েছিলো,
আমি তার চেহারা উন্মুক্ত করে দেখতে
গেলে লোকেরা আমাকে নিষেধ করলো।
ইতোমধ্যে কোনো ক্রন্দনকারিনীর
ক্রন্দন-ধ্বনী ভেসে আসলো। বলা হলো,
অমরের কন্যা বা ভগ্নি ক্রন্দন করছে, রসূলুল্লাহ
(সা) বললেন: ক্রন্দন করছো কেন? অথবা
ক্রন্দন করো না, এখনও ফিরেশতারা তাকে ডানা
দ্বারা ছায়াদান করছে” (সহীহ আল-বুখারী, কিতাবুল
জিহাদ-১/৩৯৫)।
★ মানুষের পাওনা ঋণ ছাড়া শহীদের সকল গুনাহ
ক্ষমা করে দেয়া হয়:
“হযরত আমর ইবনুল আস (রা) থেকে বর্ণিত,
রাসূলুল্লাহ্ (সা) বলেছেন: শহীদের ঋণ ছাড়া তার
সকল গুনাহ শাহাদত প্রাপ্তির কারণে ক্ষমা হয়ে
যায়” (সহীহ মুসলিম, কিতাবুল ইমারত-২/১৩৫)। অর্থাৎ:
আল্লাহর পথে শহীদ ব্যক্তি নিজের জীবন
উৎসর্গ করার কারণে মহান আল্লাহর অধিকারের
সাথে জড়িত সকল গুনাহ তিনি ক্ষমা করে দেন।
কিন্তু ঋণ যেহেতু মানুষের অধিকার, তা পাওনাদার
থেকে ক্ষমা না পাওয়া পর্যন্ত আল্লাহ্ও তা ক্ষমা
করেন না।
★ শহীদগণের মৃত্যুকষ্ট সামান্য চিমটি কাটার
চেয়ে বেশি হয় না:
“হযরত আবু হুরাইরা (রা) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ্
(সা) বলেছেন: শহীদ ব্যক্তির নিহত হওয়ার কষ্ট
হলো, তোমাদের মধ্যে কেউ সামান্য একটু
চিমটি কাটার মতো স্পর্শ অনুভব করে
মাত্র” (জামে’ আততিরমিযী, আবওয়াবুল ফাদায়িলিল
জিহাদ ১/২৯৬)। অর্থাৎ: মানুষ নিহত হওয়ার সময়
সাধারণত মারণাস্ত্রের আঘাতে যে ধরনের
অসহ্য যন্ত্রণা ভোগ করে থাকে তা ভয়াবহ
কষ্টদায়ক হয়ে থাকে, কিন্তু আল্লাহর পথে
শহীদ ব্যক্তি বোমার আঘাতে, গুলি লেগে,
পানিতে ডুবে, আগুনে পুড়ে অথবা অন্য
কোনোভাবে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগের সময়
সামান্য একটু চিমটি কাটার চেয়ে বেশি কষ্ট অনুভব
করে না। এটা শহীদের জন্য মহান আল্লাহ্র
বিশেষ মর্যাদা ও রহমত।
★ শহীদের জন্য মহান আল্লাহর নিকট রয়েছে
আরো বিশেষ কিছু মর্যাদা:
“ ঈমানের দাবি পূরণের অঙ্গীকার আদায়ে
মু’মিনদেরকে কঠিন পরীক্ষার মধ্য দিয়ে
এগিয়ে যেতে হয়, কখনো কখনো বিপদের
পাহাড় তাদের মাথায় ভেঙে পড়ে, তাদেরকে
চরম ত্যাগ স্বীকার করতে হয়, এমনকি
প্রয়োজনে তাদেরকে নিজ নিজ জীবন
কুরবানী করতে হয়। মহান আল্লাহর সাথে কৃত
ওয়াদা পূরণের প্রমাণ পেশ করতে হয়। এমনি
শাহাদত বরণ করেই তারা লাভ করেন আল্লাহর সাহায্য
ও অনুগ্রহ। এ ধরনের ত্যাগ স্বীকার মেনে
নেয়া ও এ পথে ধৈর্য ধারণ করা যে কত জরুরি,
মহান আল্লাহর ঘোষণায় তা এভাবেই স্পষ্ট
হয়েছে:
“তোমরা কি একথা মনে করে নিয়েছ যে,
তোমরা জান্নাতে এমনিই প্রবেশ করে যাবে?
অথচ তোমাদের পূর্বে যারা ঈমান এনেছিলো
তারা যে অবস্থার মধ্য দিয়ে এগিয়ে গিয়েছিল
এখনো তোমরা সে অবস্থার সম্মুখীন হওনি।
তারা কাঠিন্য ও বিপদের মুখোমুখি হয়েছিল এবং
তাদেরকে নাড়িয়ে দেয়া হয়েছিল, এমনকি রাসূল
ও তাঁর সংগী-সাথিরা চিৎকার করে উঠেছিল আল্লাহর
সাহায্য কখন আসবে! Ñশোনো, আল্লাহর সাহায্য
নিকটেই আছে” (সূরা-২ আল-বাকারাহ:২১৪)।
অন্যত্র মহান আল্লাহর ঘোষণা এসেছে এভাবে:
“লোকেরা কি একথা মনে করে নিয়েছে যে,
‘আমরা ঈমান এনেছি’ একথা বললেই তাদেরকে
ছেড়ে দেয়া হবে এবং তাদেরকে আর
পরীক্ষা করা হবে না? অথচ এদের আগে যারা
অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবাইকে আমি
পরীক্ষা করেছি। আল্লাহকে অবশ্যই দেখতে
হবে (ঈমানের দাবিতে) কে সত্যবাদী এবং কে
মিথ্যাবাদী” (সূরা-২৯ আলআনকাবুত:২-৩)।
সুতরাং আল্লাহভীরু মু’মিনগণ মাত্রই আল্লাহর পথে
চলতে গিয়ে তাদের উপর আপতিত বিপদ
আপদের পাহাড় দেখে তাদের ঈমান নড়ে যাবার
পরিবর্তে আরো বেশি বেড়ে যায় এবং
আল্লাহর হুকুম পালন করা থেকে দূরে পালিয়ে
যাবার পরিবর্তে তারা আরো বেশি প্রত্যয় ও
নিশ্চিন্ততা সহকারে নিজেদের সব কিছু মহান
আল্লাহর হাতে সোপর্দ করে তাঁরই নির্দেশিত
পথে জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত এগিয়ে
যায় দুর্বার গতিতে। আল্লাহ তাঁর মনোনিত
বান্দাহদেরকে তাঁরই পথে দুর্বার বেগে এগিয়ে