শহীদের মর্যাদা ও শ্রেণী ভাগ-১

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

আল্লাহ পথে যারা শহীদ হয়, তাদের মৃত বলো না। কোরআনের এ ঘোষণা সকল প্রকারের শহীদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। কেননা, প্রকৃত শহীদের যে বিশেষ মর্যাদার কথা কোরআন ও হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, সে মর্যাদা সকল শহীদ লাভ না করলেও তাদেরও কিছু আলাদা পরিচয় রয়েছে। তাই শহীদ বা শাহাদতকে নানা শ্রেণীতে ভাগ করা হয়েছে বলে হাদীস হতে জানা যায়, যার বর্ণনা নিম্নরূপ : হজরত আবু হোরায়রা (রা.) বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, তোমরা কোন শ্রেণীর লোককে শহীদ মনে করো? উপস্থিত লোকেরা আরজ করল, যারা আল্লাহর রাস্তায় মৃত্যুবরণ করেছে। হুজুর (সা.) বললেন, এভাবে তো আমার উম্মতের শহীদদের সংখ্যা কমে যাবে। লোকেরা বলল, তাহলে শহীদ কে? হুজুর (সা.) বললেন : যে ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মারা গিয়েছে, সে শহীদ। যে ব্যক্তি তাউন-অবা অর্থাৎ মহামারিতে মারা গিয়েছে, ধৈর্যধারণ করেছে, সে শহীদ। যে পেটের পীড়ায় মারা গিয়েছে, সে শহীদ। যে পানিতে ডুবে মারা গিয়েছে, সে শহীদ। (মুসলিম)।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) হতে আরো বর্ণিত, হুজুর (সা.) বলেছেন, যে গৃহ চাপা পড়ে মরেছে, সেও শহীদ। (মুসলিম)। হজরত জাবের (রা.) বর্ণনা করেন, হুজুর (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি ‘জাতুল জাম্ব (বা নিমোনিয়া)’ রোগে মারা গিয়েছে, সে শহীদ। অগ্নিদগ্ধ হয়ে মৃত ব্যক্তিও শহীদ এবং প্রসবকালে যে নারী মৃত্যুবরণ করেছে, সেও শহীদ। (আবু দাউদ)। হজরত সুলায়মান ইবনে ইয়াসার (রা.) অথবা খালেদ ইবনে সুলায়মান হতে বর্ণিত, হুজুর (সা.) বলেছেন : যে ব্যক্তি পেটেরপীড়া বা ডায়রিয়ায় মারা যায়, তার কবর আজাব হয় না (তিরমিজি)। অর্থাৎ অর্থাৎ ডায়রিয়া রোগে মৃত্যুবরণ করা।

বিভিন্ন হাদীস হতে শহীদের আরো নানা শ্রেণীর কথা জানা যায়। মোমেনদের ওপর বালা-মুসিবত তাদের গুনাহ মাফের কারণ হয়ে থাকে। এতদসংক্রান্ত কয়েকটি হাদীস নিম্নে বর্ণিত হলো :
হজরত মোসয়েব ইবনে সাদ (রা.) তার পিতা হতে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: সবচেয়ে বেশি বালা-মুসিবত নাজেল হয়েছে নবীগণের ওপর, অতঃপর তাদের ওপর যারা মর্যাদায় নবীদের নিচে পড়ে। অনুরূপভাবে স্তরে স্তরে যাদের মর্যাদা কম, সে অনুযায়ী বালা-মুসিবতও কম। মানুষ তাদের দ্বীনি আমল অনুযায়ী বিপদে পতিত হয়। দ্বীনদারিতে যত মজবুত হবে, বালা-বিপদও বেশি হবে, দ্বীনদারিতে হাল্কা হলে বিপদাপদও হাল্কা হবে। বালা-মুসিবত বান্দার ওপর পতিত হয় এবং সে দুনিয়া হতে চলে যায় পাপমুক্তভাবে, পাকসাফ হয়ে তার ওপর কোন পাপ থাকে না (তিরমিজি)। অর্থাৎ বিপদাপদ বেশি আসলেও তা হয় তাদের পক্ষে আখেরাতে উপকারী ও কল্যাণকর।

হজরত আবু সাইদ খুদরী (রা.) বলেন, নবী (সা.) বলেছেন : কোন ব্যক্তির জন্য আল্লাহ তা’আলা কোন বিশেষ মর্যাদা ধার্য করেছেন, কিন্তু সে নেক আমল দ্বারা তা লাভ করতে পারে না। তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে বিভিন্ন বিপদাপদে পতিত করেন এবং সে বিপদ দ্বারা ঐ মর্যাদা দান করেন। (ইবনে হিব্বান)। অর্থাৎ বান্দার নেক আমল বেশি নেই; কিন্তু বিভিন্ন বিপদাপদে ধৈর্য্য ধারণ করায় তাকে ঐ মর্যাদা দান করা হয়।

হজরত আবু হোরায়রা (রা.) এবং হজরত আবু সাইদ খোদরী (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন: কোনো মোমেনের ওপর যখন কোন বিপদাপদ আপতিত হয় অথবা তার দুঃখ-কষ্ট পায়, এমনকি তাকে কোন কাঁটাবিদ্ধ করে তখন আল্লাহ তা’আলা সে কষ্ট দ্বারা তার পাপগুলো ক্ষমা করে দেন। (বোখারি-মুসলিম)।

হজরত আয়েশা (রা.) কর্তৃক বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : যখন কোন বান্দার গুনাহ বেশি হয়ে যায় এবং তার এমন কোন আমল থাকে না, যা দ্বারা সেগুলোর কাফ্ফারা হতে পারে। তখন আল্লাহ তার ওপর নানা বালা-মুসিবত নাজেল করেন এবং সেগুলো তার কাফ্ফারা হয়ে যায়। (আহমদ)।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment