দাইয়ুস জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না। তাই এইসব ব্যাপারে সকলের কঠোরভাবে সাবধান হওয়া জরুরী।
إِنَّ الَّذِينَ يُحِبُّونَ أَن تَشِيعَ الْفَاحِشَةُ فِي الَّذِينَ آمَنُوا لَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ وَاللَّهُ يَعْلَمُ وَأَنتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
‘যারা পছন্দ করে যে, ঈমানদারদের মধ্যে অশ্লীলতা প্রসার লাভ করুক, তাদের জন্যে ইহাকাল ও পরকালে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। আল্লাহ জানেন, তোমরা জান না।’
(সূরা নুর, আয়াতঃ ১৯)
প্রিয় নবী হযরত মুহম্মদ (সা.) বলেছেন, তিন ব্যক্তির জন্যে আল্লাহ তাআলা জান্নাত হারাম করেছেন- নেশাদার দ্রব্যে আসক্ত ব্যক্তি, পিতা-মাতার অবাধ্য সন্তান, এবং দাইয়ুস। (মুসনাদে আহমাদ, হাদিস নং ৫৮৩৯)
দাইয়ুস কাকে বলা হয়?
দাইয়ুস সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘ঐ ব্যক্তিকে দাইয়ুস বলা হয় যে তার পরিবারের অশ্লীলতা ও কুকর্মকে মেনে নেয়।’ (মুসনাদ আহমদ, নাসাঈ)
অর্থাৎ যে ব্যক্তি তার স্ত্রী-কন্যা সহ পরিবারের অধিনস্ত অন্য সদস্যদের বেপর্দা চলাফেরা ও অশ্লীল কাজকর্ম বা ব্যভিচারকে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করে অথবা কোনোরূপ বাধা না দিয়ে মৌনতা অবলম্বন করে।
ইমাম যাহাবী (রহ.) বলেছেন, ‘দাইয়ূস’ সে ব্যক্তি, যে তার স্ত্রীর ফাহেশা কাজ সম্পর্কে অবগত। কিন্তু তার প্রতি ভালোবাসার কারণে এ ব্যাপারে সে উদাসীন থাকে। অথবা তার উপর তার স্ত্রীর বৃহৎ ঋণ বা মোহরানার ভয়ে কিংবা ছোট ছেলেমেয়েদের কারণে সে স্ত্রীকে কিছুই বলে না এবং যার আত্ম-সম্মানবোধ বলতে কিছুই নেই’। (যাহাবী, কিতাবুল কাবায়ের- ১/৫০)
হাদিসটির ব্যাখ্যা বিস্তারিত। তবে এখানে মুল বিষয় হল ফাহেশা বা অশ্লীলতা।
যে তার নিজ পরিবারে ইসলামী অনুশাসন মেনে চলতে শিথিলতা প্রদর্শন করে, স্ত্রী-কন্যাদেরকে পর্দার আদেশ করে না, পর্দাপালনে উৎসাহিতও করে না, ঘরে নিষিদ্ধ গান-বাদ্য দিব্যি চলে, এর কোনো প্রতিবাদ করে না; এ রকম সকল শরীয়াহ বিরোধী অশ্লীলতাকে মেনে নেয় – সে ব্যক্তি দাইয়ুস
।
এ ব্যক্তি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ‘দাইয়ুস কখনোই জান্নাতে প্রবেশ করবে না।’ (নাসায়ীঃ ২৫৬২, মিশকাতঃ ৩৬৫৫)
রাসূলুল্লাহ (সা.) আরো বলেছেন, ‘জেনে রাখো, তোমাদের প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং নিজ নিজ অধীনস্থের বিষয়ে তোমাদের প্রত্যেকেই জিজ্ঞাসিত হবে।
অতঃপর দেশের শাসক জনগণের উপর দায়িত্বশীল। সে তার দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। পুরুষ তার পরিবারের উপর দায়িত্বশীল। অতএব, সে তার দায়িত্বশীলতার বিষয়ে জিজ্ঞাসিত হবে। স্ত্রী তার স্বামীগৃহের উপর দায়িত্বশীলা। কাজেই সে তার দায়িত্বশীলতা বিষয়ে জিজ্ঞাসিতা হবে। দাস তার প্রভুর সম্পদের দায়িত্বশীল। সেও এ ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে। তোমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং প্রত্যেকেই নিজ নিজ অধীনস্থের দায়িত্বশীলতার ব্যাপারে জিজ্ঞাসিত হবে।’ (বুখারী : ৮৯৩; মুসলিম: ১৮২৯)
মহান আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তাআলা বলেছেন,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا قُوا أَنفُسَكُمْ وَأَهْلِيكُمْ نَارًا وَقُودُهَا النَّاسُ وَالْحِجَارَةُ عَلَيْهَا مَلَائِكَةٌ غِلَاظٌ شِدَادٌ لَا يَعْصُونَ اللَّهَ مَا أَمَرَهُمْ وَيَفْعَلُونَ مَا يُؤْمَرُونَ
হে বিশ্বাসী বান্দাগন, তোমরা নিজেদেরকে এবং তোমাদের পরিবার-পরিজনকে সেই আগুণ থেকে রক্ষা কর, যার ইন্ধন হবে মানুষ ও পাথর, যাতে নিয়োজিত আছে পাষাণ হৃদয় ও কঠোরস্বভাবের ফেরেশতাগণ। তারা আল্লাহ তাআলা যা আদেশ করেন, তা অমান্য করে না এবং তারা তা-ই করে যা করতে তাদের আদেশ করা হয়।”
(সূরা তাহরিম-৬)
দাইয়ুস ও এর পরিণতি সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ (সা.) এর হাদিসের ভাষ্য তো স্পষ্ট। এবং আল্লাহর রাসূল বলেও দিলেন আমরা প্রত্যেকেই দায়িত্বশীল এবং অধীনস্থদের সম্পর্কে আমরা অবশ্যই জিজ্ঞাসিত হবো।
উপরন্তু আল্লাহ তাআলা আদেশও করেছেন বান্দা যেন নিজেদেরকে এবং পরিবার-পরিজনদেরকে জাহান্নামের আগুণ থেকে বাঁচায়।
তাই সাধারণভাবে সমস্ত অধীনস্থদেরকে এবং বিশেষভাবে পরিবার-পরিজনদেরকে যাবতীয় বেহায়াপনা, অশ্লীলতা-অন্যায়-পাপাচার এবং বে-পর্দা চলাফেরা করা থেকে বিরত রাখা এবং তাদেরকে জাহান্নাম থেকে বাঁচানো আমাদের উপর ফরয।
এখন নিজেকে প্রশ্ন করা উচিৎ, আমি আমার উপর অর্পিত দায়িত্ব কতটুকু নিষ্ঠার সাথে পালন করছি? অথবা আদৌ পালন করছি কি? বা এই দায়িত্বের অনুভূতিটুকুও কি আমার মাঝে আছে?
তাহলে কি আমি দাইয়ুসদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাচ্ছি?
আমি কি প্রস্তুত সেই জাহান্নামের জন্য যার ইন্ধন হবে মানুষ এবং পাথর?