লজ্জাশীলতার অবক্ষয়!

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

পুরো চ্যাট লিস্ট জুড়ে আছে অসংখ্য না-মাহরাম। বন্ধু, কাজিন কিংবা রিলেশনশিপ ইত্যাদি পরিচয়ে। তাদের সাথে নিয়মিত কথা হয়। গ্রুপে আড্ডা হয়। রাত-বিরেতে জেগে আড্ডা। চলে গার্লফ্রেন্ড-বয়ফ্রেন্ড নিয়ে একে অপরের সহযোগীতা, পরামর্শ! চলে অশ্লীল পর্যায়ের কথাও! এক কথায় সবার সাথে কমিউনিকেশনটা খুব ভালো। কতই না আনন্দ! জীবনটাকে কতই না উপভোগ্য মনে হয়! নিজেকে কত স্মার্ট মনে হয়! আধুনিক যুগের আধুনিক মানুষ ভেবে কতই না গর্বিত হয় —আমার অনেক ভাই ও বোন।

আবার দিনশেষে যত ডিপ্রেশন আছে, সব তাদের কাছেই এসে জমা হয়। স্যাড পোস্ট আর স্যাড সং —এ সয়লাব থাকে এদের ফেসবুক টাইমলাইনটি।

আমি কথা বলছি না-মাহরাম নিয়ে। অর্থাৎ যার সাথে আপনার বিবাহ বৈধ। আমি নারী-পুরুষ উভয়ের কথা বলছি। অপজিট জেন্ডার এর সাথে এসব আড্ডা যাদের কাছে খুবই সিম্পল একটা বিষয় মনে হয়।

বিশেষ করে মেয়েরা যেটাকে বন্ধুত্ব নাম দেয়। তারা খুব সহজে ছেলেটাকে বিশ্বাস করে ফেলে। খুব কাছের বন্ধু মনে হয়। কিন্তু সে জানে না— ওই ছেলেটাও তাকে নিয়ে ফ্যান্টাসি তে ভুগে। কল্পনার জগতে তাকে নিয়ে দেখে কত অশ্লীল স্বপ্ন। বিদেশের একটা ইউনিভার্সিটিতে একটা জরিপ করা হয়েছিল। সেখানে যখন মেয়েদেরকে জিজ্ঞেস করা হলো— তাদের ছেলে বন্ধু থাকতে পারে কি না? তারা বলল— হ্যা।

কিন্তু যখন ছেলেদেরকে জিজ্ঞেস করা হলো তাদের মেয়ে বন্ধু থাকতে পারে কি না? তারা খুবই অদ্ভুত এক উত্তর দিল। তারা বলল— না! মেয়েদের সাথে সম্পর্কটা শুধু বন্ধুত্ব পর্যন্ত থাকে না। ধীরে-ধীরে এটাকে আরও এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার কল্পনা থাকে তাদের মধ্যে। আশা করি বুঝতে পেরেছেন। আমি আমার সেই বোনকে কথাগুলো বলছি, যে ছেলেদের সাথে ‘জাস্ট ফ্রেন্ড’ সম্পর্কটাকে খুবই ইজিলি নেন।

আরেকটা জিনিস দেখে আমি খুব অবাক হই। এক সময় এমন হতো কেউ কোনো হারাম রিলেশনশিপে থাকলে এটাকে সর্বাত্মক গোপন রাখার চেষ্টা করত। প্রকাশ করতে চরম লজ্জা হতো। ছোট ভাই ও বোন যদি কোনো সম্পর্কে জড়িয়ে গেছে জানত, তখন বড় ভাই ও বোনের মেজাজ চরে যেত। তার অবস্থা হতো তখন সূচনীয়। তাই ছোট ভাই ও বোনেরা এবং এসব বিষয় নিয়ে ভয় পেত, যদি তার বড় ভাই বা বোন জানতে পারে তো অবস্থা ভালে ঠেকবে না।

কিন্তু এখনকার চিত্র পুরোটাই ওল্টো। আমি দেখেছি বড় বোন বা ভাইয়ের সাথে ছোট ভাই বা বোনের রিলেশনশিপ এর কথা সরাসরি আলোচনা করতে। বড়রা বাঁধা দিবে তো দূরে থাক, বরং তার বিপরীতটাই করছে। তাকে সেদিকে আরো উৎসাহ দিচ্ছে। এটা তাদের ব্যক্তি স্বাধীনতা বলে চালিয়ে দিচ্ছে। আপনাকে মনে রাখতে হবে প্রিয় ভাই ও বোন, একজন মুসলমান কখনো স্বাধীন নয়। সে আল্লাহ ও রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর হুকুমের কাছে বাধ্য।

এগুলো আসলে কিসের অবক্ষয়? এগুলো আসলে লজ্জাশীলতার অবক্ষয়। আমার রাসূল বলেছেন— ‘তোমার লজ্জা না থাকলে, তুমি যা ইচ্ছে করতে পারো।’ মুসলমানের কাছ থেকে তার লজ্জাশীলতা ছিনিয়ে নিচ্ছে ওয়েস্টার্ন কালচার।

তারা জানে মুসলমানদের কাছ থেকে লজ্জা ছিনিয়ে নিতে পারলেই তাদের ঈমানকে দূর্বল করে দেয়া যাবে। যার দরুন তারা সরে আসবে আল্লাহর কাছ থেকে।

রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন— লজ্জা ও ঈমান একে অপরের সাথে সম্পৃক্ত। যদি একটি হারিয়ে যায় তবে অপরটিও ছিনিয়ে নেয়া হয়। যে যুবকদের হযরত উসমান রাদিআল্লাহু আনহুর মতো লজ্জা রাখার কথা ছিল তারা আজ বেহায়া হয়ে গেছে। যে যুবতীদের আইডল থাকার কথা ছিল সায়্যিদা আয়শা রাদিআল্লাহু আনহা, সেই যুবতীরা আজ নির্লজ্জ হয়ে গেছে। তাই তাদের কাছে এই বিষয়গুলো এখন খুব সিম্পল মনে হয়। এরা আজ নিজেদেরকে বিকিয়ে দিচ্ছে পণ্য হিসেবে।

যে যেভাবে চাচ্ছে সেটাকে ব্যবহার করছে। তারা টেরও পাচ্ছে না। এক সাহাবী তাঁর ভাইকে অধিক লজ্জা থেকে নিষেধ করায় রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছিলেন— তাকে ছেড়ে দাও। নিশ্চয়ই লজ্জা ঈমানেরই অংশ। তিনি আরেক হাদিসে বলেন— লজ্জা শুধু কল্যাণই বয়ে আনে।

আর আজ কেউ লজ্জা করলে, লজ্জার কারণে না-মাহরামদের সাথে কথা না বললে, না মিশলে তাকে নিয়ে তখন হাসি-ঠাট্টা করা হয়। তাকে মূর্খ, জাহেল, ক্ষেত ইত্যাদি উপাধি দেয়া হয়। তথাকথিত এই আধুনিকতা থেকে তাকে বিছিন্ন করে দেয়া হয়। তাকে পিছিয়ে পরা মানুষ হিসেবে গণ্য করা হয়। অথচ পৃথিবীর সবচেয়ে সত্যবাদী মানুষটা বলে গেছেন— লজ্জা শুধু কল্যাণই নিয়ে আসে।

মনে রাখবেন, অপজিট জেন্ডারের দুজন মানুষের মধ্যে ভালোবাসার সম্পর্ক সৃষ্টির সর্বোত্তম পদ্ধতি হচ্ছে বিয়ে। যখন মুসলমান লজ্জা দিয়ে নিজেকে সজ্জিত করতে পারবে তখনই সে মূলত সম্মানিত হবে। সে তখনই হবে প্রকৃত স্মার্ট। যখন রবের রহমতের ছায়াতলে বান্দা চলে আসবে তখনই তার জীবন থেকে ডিপ্রেশন নামক রোগটা দূরে সরে যাবে। সে অর্জন করবে চিরস্থায়ী প্রশান্তি।

~স্বাধীন আহমেদ

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment