আমরা আমিরুল মু’মিনিন, খলীফাতুল মুসলিমিন, আহলে বাইতে রসূলিল্লাহি ছল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি অপবাদদানকারী বর্ণনার মতনগত অসাড়তা প্রমাণ করেছি। এ পর্বে দেখবো,
সনদগতভাবে এ হাদীছ শরীফের কোন গ্রহনযোগ্যতা নেইঃ
এ হাদীছের প্রথম রাবী হচ্ছেন আব্দুর রহমান সুলামী। যদিও আব্দুর রহমান সুলামী থেকে অনেক বর্ণনা ছিয়াহ ছিত্তার কিতাবে এসেছে। কিন্তু এই বর্ণনার ক্ষেত্রে আব্দুর রহমান সুলামীর বর্ণনা গ্রহন করা যায় না। কারন এ রাবী সম্পর্কে বিখ্যাত হাদীছ বিশারদ ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
ثم صار عثمانيا
সে উসমানিয়ান ছিলো। (তাহযিবুত তাহযীব ৫/১৬১)
হযরত ইবনুল আরাবী রহমতুল্লাহি আলাইহি ইমাম বুখারী রহমতুল্লাহি আলাইহির রেফারেন্সে বলেছেন,
عَبْدِ الرَّحْمَنِ السُّلَمِيَّ وَكَانَ عُثْمَانِيًّا
আব্দুর রহমান সুলামী উসমানিয়ান ছিলো। (আহকামুল কুরআন ৭/২৯৪)
উল্লেখ্য উসমানিয়ান হচ্ছে যারা হযরত উসমান যুননুরাইন আলাইহিস সালাম উনার শহীদ হওয়ার পর এক দল বের হয় যারা হযরত উসমান যুননুরাইন আলাইহিস সালামের প্রতি লোক দেখানো মুহব্বত প্রকাশ করে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রদি বিদ্বেষ করতো। এমন একজন উসমানিয়ান রাবীর আক্বীদা সম্পর্কে ইবনে হাজার আসকালানী রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
كان عثمانيا يبغض عليا
সে ছিলো উসমানিয়ান যেকিনা হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি বিদ্বেষ পোষন করতো। (তাহযীবুত তাহযীব ৫/২২৪)
আব্দুর রহমান সুলামী উসমানিয়ান ছিলো। সূতরাং উছূলে হাদীছ অনুযাী এ রাবী থেকে অন্য যেকোন বিষয়ে রেওয়ায়েত নেয়া গেলেও যখন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার শানের খিলাপ কোন বর্ণনা যদি দেখা যায় কখনোই সেটা গ্রহনযোগ্য হবে না। সর্বোপরি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সাথে আব্দুর রহমান সুলামীর সাক্ষাতই প্রমাণিত নয়। ইমাম আবু হাতিম রহমতুল্লাহি আলাইহি বলেন,
وقال ابن أبي حاتم عن ابيه ليس تثبت روايته عن علي
মূলত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম থেকে আব্দুর রহমান সুলামীর রেওয়ায়েত প্রমাণিত নয়। (তাহযিবুত তাহযীব ৫/১৬১)
ইতিপূর্বে আবু দাউদ শরীফের বর্ণনা বিশ্লেষন করতে গিয়ে বিষয়টা আমরা দেখেছি, আবু দাউদ শরীফের বর্ণনাটির মূল বর্ণনাকারী হচ্ছেন হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম। তিনি যদি উক্ত মাগরিব নামায পড়ান তাহলে তিনি বলবেন আমি ইমামতি করলাম বা আমাকে ইমামতি করতে বলা হলো ইত্যাদি। কারন তিনি হচ্ছেন মূল বর্ণনাকারী। অথচ আবু দাউদ শরীফের এ বর্ণনায় দেখা যাচ্ছে তিনি বর্ণনা করছেন, فَأَمَّهُمْ عَلِيٌّ فِي الْمَغْرِبِ যার অর্থ অতঃপর মাগরিবের নামাজে হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম তাদের ইমামতি করলেন। যা সম্পূর্ণ বেমানান। এ থেকে যেটা বোঝা যায় এ ঘটানা মূলত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সাথে সংশ্লিষ্ট নয়। বরং উনার পূর্বের যিনি রাবী বা বর্ণনাকারী তিনিই ঘটনাটি বর্ণনা করেছেন। আর পূর্বের রাবী হচ্ছে ‘আব্দুর রহমান সুলামী’। বোঝা যায় আব্দুর রহমান সুলামী উসমানিয়ান হওয়ার কারনে উদ্দেশ্যে প্রনোদিতভাবে ঘটনাটি হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার প্রতি আরোপ করেছে।
সূতরাং যেটা প্রমাণিত হলো, প্রথমত আব্দুর রহমান সুলামী উসমানিয়ান অর্থাৎ হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার বিরোধি ছিলো। দ্বিতীয়ত হযরত আলী কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু আলাইহিস সালাম উনার সাথে আব্দুর রহমান সুলামীর সাক্ষাতই হয় নাই। উনার থেকে রেওয়ায়েত প্রমানিতই নয়। সূতরাং এ রাবীর বর্ণনা কি করে এমন একটি আক্বীদার মাসায়ালার ক্ষেত্রে দলীলযোগ্য হতে পারে বিবেকের কাছে প্রশ্ন? (চলবে……)