উত্তর: কদমবুসি করা ‘সুন্নাতে সাহাবা’। যা পবিত্র হাদিস থেকে প্রমাণিত। সম্মানিত ব্যক্তি; যেমন: মা-বাবা দাদা-দাদী, নেককার-বুযুর্গ ইত্যাদিদেরকে কদমবুসি করা সুন্নাত যা সওয়াবের কাজ। সাহাবায়ে কিরামের বরকতময় যুগ থেকে এই আমলের প্রচলন। নিচে কদমবুসি সম্পর্কে হাদিস ও ইমামগনের অভিমত দেওয়া হল:
কদমবুসি সম্পর্কে ৬টি হাদিস শরীফ:
﴾১﴿ হযরত যারেঈ ইবনে আমির ইবনে কায়স رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ উনার দাদা হতে বর্ননা করেন, তিনি ছিলেন আব্দুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দলের অন্তর্ভুক্ত ছিলেন। তিনি বলেন, “ আমরা যখন মদিনা মনোওয়ারায় আগমন করলাম তখন আমাদের বাহন হতে তাড়াতাড়ি নেমে পড়লাম এবং রসূলে করীম ﷺ এর হস্ত ও পা মোবারক চুম্বন করলাম। ”
[ইমাম বুখারী: তারিখুল কবীর: ৪/৪৪৭ পৃষ্ঠা, হা/১৪৯৩]
[সুনানে আবু দাউদ: ৪/৩৫৭ পৃষ্ঠা, হাদিস: ৫২২৫]
﴾২﴿ হযরত ছাফওয়ান বিন আ’সল আল মুরাদি رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বর্ণনা করেন, “ নিশ্চয়ই ইয়াহুদীদের একটি দল হুজুর পাক (ﷺ)-এর হাত ও পা মোবারক চুম্বন করে। ”
[ইবনে মাযাহ: ২/১২২ পৃষ্ঠা, হাদিস: ৩৭০৫]
[সুনানে তিরমিযী: ৫/৭২ পৃষ্ঠা, হাদিস/২৭৩৩]
[সুনানে নাসায়ী: ৭/১১১ পৃষ্ঠা, হাদিস/৪০৭৮]
﴾৩﴿ হযরত সুহাইব رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেন:
“আমি হযরত আলী رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ কে (ওনার চাচা) হযরত আব্বাস رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ এর হাত এবং পা চুম্বন করতে দেখেছি। ”
[জামে তিরমিযী: হাদিস/২৭৩৩]
[সুনানে ইবনে মাজাহ: হাদিস/৩৭৯৫]
[আদাবুল মুফরাদ: হাদিস/৯৮৭]
﴾৪﴿ ওয়াযি ইবনে আমির رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেন, “ আমি একদা রাসূলে করীম ﷺ এর খেদমতে গিয়ে হাজির হলাম। আমাকে বলা হল, ইনিই হচ্ছেন আল্লাহ্র রাসূল! আমরা তখন তাঁর হস্তদ্বয় ও পদদ্বয় ধরে চুম্বন করলাম। ”
[তিরমিযী শরীফ: হাদিস/২৭৩৩]
[সুনানে ইবনে মাজাহ: হাদিস/৩৭০৫]”
[আদাবুল মুফরাদ: হাদিস/৯৮৭]
﴾৫﴿ হযরত বুরাইদা رَضِیَ اللّٰہُ تَعَالٰی عَنْہُ হতে বর্ণিত: “ এক বেদুঈন হুজুর এ পাক ﷺ কাছে মুজিযা দেখতে চাইল। … (সংক্ষেপে)… (মুজিযা দেখানোর পর) বেদুঈন বললো: “ আমাকে অনুমতি দিন আমি আপনাকে সিজদা করবো ” তিনি ইরশাদ করলেন, “ যদি কাউকে সাজদাহ করার হুকুম দিতাম তাহলে স্ত্রীকে আদেশ দিতাম সে যেন তার স্বামীকে সাজদাহ করে। ” বেদুঈন লোকটি আরজ করলো “ হুযুর তাহলে আমাকে আপনার হস্ত ও পদদ্বয় মোবারক চুম্বন করার অনুমতি দিন। ” তিনি [নবীজী (ﷺ)] তাকে অনুমতি প্রদান করলেন। ”
[মুসনাদুল বাযযার: ৩/৪৯ পৃষ্ঠা, হাদিস: ৪৪৫০]
[আল-মুস্তাদরাক: কিতাবুল বিরর ওয়াস সিলাতি, হাদিস: ৭৩২৬
[ইমাম শায়বানী, যাখিরাতুল হুফফাজ, ২/১১৯৪ পৃষ্ঠা, হাদিস: ২৫৪৮]
﴾৬﴿ হযরত ছাফওয়ান বিন আচ্ছাল رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বর্ণনা করেছেন, জনৈক ইয়াহুদী তার সঙ্গীকে বলল, আমাকে এ নবীর নিকট নিয়ে চল। তদুত্তরে সাথী তাকে বলল, তুমি তাঁকে নবী বলবে না কারণ, সে যদি শুনে তুমি তাঁকে নবী বলছ তাহলে তাঁর চার চোখ হয়ে যাবে অর্থাৎ তিনি খুশী হয়ে যাবেন। অতঃপর তারা হুযূর আকরাম ﷺ-এর নিকট আসল ও ৯টি নিদর্শন সম্পর্কে জিজ্ঞেস করল।… (রাসুল ﷺ তাদেরকে ৯টি নিদর্শন বলার পর) সাফওয়ান رَضِیَ اللّٰہُ عَنْہُ বলেন: অতঃপর তারা উভয়ে হুজুর পাক ﷺ এর হাত ও কদম মুবারক চুম্বন করল এবং বলল, আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, নিশ্চয়ই আপনি আল্লাহর নবী।”
[কিতাবুল আদাব: ৫/৫৫ পৃষ্ঠা, হাদিস: ২৭৩৩]
[সুনানে আবি দাউদ: হাদিস: ৫২২৫]
[ইবনে মাযাহ: ৪/১৪২ পৃষ্ঠা, হাদিস: ৩৭০৫]
কদমবুসি সম্পর্কে ইমামগনের ৬টি বর্ণনা:
﴾১﴿ ইমাম মুসলিম رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ ইমাম বুখারী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ এর নিকট কদমবুসির অনুমতি প্রার্থনা:
আহমদ বিন হামদান আল কাসার رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেছেন যে, তিনি ইমাম মুসলিম رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ কে ইমাম বুখারী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ এর দরবারে আসতে দেখেন এবং তিনি তাঁর কপালে চুম্বন করেন, “তখন তিনি তাঁর কদমে চুম্বন করার অনুমতি প্রার্থনা করলেন” তখন তিনি বলেছিলেন: “হে মহান ওস্তাদের ওস্তাদ! হে চিরাচরিত (ইমামগণের) শিক্ষক! হাদিসের দুর্বলতা সম্পর্কে শ্রেষ্ঠ জ্ঞানী। ”
[আল বিদায়াহ ওয়ান নিহায়াহ: ১১/৩৩ পৃষ্ঠা] [তারিখে বাগদাদ: ১৩/১০২ পৃষ্ঠা]
[ইমাম যাহাবী: সিয়ারু নুবালা, ১/৩৩৪৩ পৃষ্ঠা]
﴾২﴿ শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন:
“ পরহেজগার আলেম এর কদমবুসি জায়েয এবং কেউ কেউ বলেন তা মুস্তাহাব। যদি আলেম ও ন্যায়-পরায়ন বাদশাহর হাত ইলম, ইনসাফ ও দ্বীনের সম্মানার্থে বুচা বা চুমু দেয়, তাতে কোন দোষ নেই। তবে দুনিয়াবী স্বার্থ সিদ্ধীর উদ্দেশ্যে চুম্বন করা মাকরূহ। হাদীস শরীফে সাহাবায়ে কেরাম কর্তৃক রাসূলে পাক ﷺ কদমবুচি করার বর্ণনা এসেছে। ”
[আশিয়াতুল লময়াত: ৪/৩৩ পৃষ্ঠা]
[মুযাহিরুল হক্ব: ৪/৬০ পৃষ্ঠা]
﴾৩﴿ বিখ্যাত ফকিহ, ইমাম ইবনে আবেদীন শামী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ আল্লামা আইনী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ হতে বর্ণনা করেন, আল্লামা আইনী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন:
“ দীর্ঘ আলোচনার পরে হাত চুম্বন, কদমবুচি, মাথা বুচি, ও ইত্যাদির বৈধতা প্রমানিত হলো। যেভাবে বর্ণিত হাদীস হতে কপালে, দুই চোখের মাঝে, দু’ঠোটের উপরে চুমু দেয়ার বৈধতা প্রমাণিত হল, তবে এ সকল ক্ষেত্রে চুম্বন তখন জায়েয যখন সম্মান ও বরকত হাসিল উদ্দেশ্য হয়। ”
[রদ্দুল মুখতার: ৬/৩৮০ পৃষ্ঠা]
﴾৪﴿ আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন:
“ হাদিস শরীফ দ্বারা হাতবুচি ও কদমবুচির বৈধতা ও অনুমোদন প্রমাণিত। তবে ইমাম মালেক ও ইমাম আবহারী এগুলিকে মাকরুহ বলেছেন যদি বড়ত্ব আহমিকা প্রকাশের উদ্দেশ্য হয়। কিন্তু যদি আল্লাহ তা’য়ালার নৈকট্যবান বান্দা বা জ্ঞানগত সম্মান ও মর্যাদার কারনে হয় তাহলে উহা নি:সন্দেহে জায়েয। ”
[ফতহুল বারী শরহে বুখারী: ১১তম খন্ড, ৫৭ পৃষ্ঠা]
﴾৫﴿ “ ফাত্ওয়ায়ে শামী ”তে হাকিমের একটি হাদীস উদ্ধৃত করেছে, যার শেষাংশে বর্ণিত আছে:
“ হুযূর ﷺ সেই ব্যক্তিকে অনুমতি দিয়েছেন। তাই সে তাঁর মস্তক ও পা মুবারক চুমু দিলেন। অতঃপর হুযূর (ﷺ) ইরশাদ ফরমান যদি আমি কাউকে সিজ্দার হুকুম দিতাম, তাহলে স্ত্রীকে হুকুম দিতাম স্বামীকে সিজ্দা করতে।
﴾৬﴿ মোল্লা আলী ক্বারী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন:
“ চুমু দেয়া মাকরুহ হবেনা যখন তা কোন পরহেজগারিতা, ইলম বা জ্ঞান ও বয়োযষ্ঠের কারনে হবে। ইমাম নববী رَحۡمَۃُ اللّٰہ ِعَلَیہِ বলেন: “ হাত চুম্বন, যদি ব্যক্তির জ্ঞানগত মার্যাদা, খোদা ভীরুতা ও ধামির্কতা ইত্যাদি কারনে হয় তাহলে মাকরুহ তো হবে না; বরং মুস্তাহাব বা উত্তম আমল হিসেবে বিবেচিত হবে। ”
[মিরকাতুল মাফাতিহ: ৯ম খন্ড, ৭৬ পৃষ্ঠা]