নামাযের পর যিকির করাকে দেওবন্দী এবং আহলে হাদিসরা কঠোর হস্তে দমন করে আর যিকরকারীদের বেদ’আতী বলে বেড়ায়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের অনুসারীরা নামাযারে পর যিকির করাকে বৈধ বলে। কেননা সারকারে দোজাহা, ফখরে বনী আদম হুযুর পুর নূর (ﷺ) এবং সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه) নামাযের পর যিকির করতেন। তাদের যিকরের আওয়াজ এত বড় হতো যে, অনেক দূর থেকে শুনা যেত, যেমন হাদিসে পাকে এসেছে-
রঈসুল মুফাস্সিরীন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه):
হযরত সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন,
أَنَّ رَفْعَ الصَّوْتِ، بِالذِّكْرِ حِينَ يَنْصَرِفُ النَّاسُ مِنَ المَكْتُوبَةِ كَانَ عَلَى عَهْدِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ
-‘‘রাসূল পাক (ﷺ)’র যামানা হতেই ফরয নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকর করা হত।’’ ১৮৪
- ১৮৪. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১৬৮ পৃ. হা/৮৪১, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/১৭০৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৪৩৩ পৃ. হা/৩৪৭৮, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৪১০ পৃ. হা/৫৮৩, ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ২/২৪৪ পৃ. হা/৩২২৫
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله):
আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
وَفِيهِ دَلِيلٌ عَلَى جَوَازِ الْجَهْرِ بِالذِّكْرِ عَقِبَ الصَّلَاةِ
-‘‘এই হাদিস শরীফটি নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকির করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে দলিল।’’ (ইবনে হাজার, ফতহুল বারী, ২য় খ- ৩২৫ পৃ.)
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (رحمة الله):
আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী হানাফী (رحمة الله) সহীহ বুখারী শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ ‘উমদাতুল কারীর’ মধ্যে এই হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন,
اسْتدلَّ بِهِ بعض السّلف على اسْتِحْبَاب رفع الصَّوْت بِالتَّكْبِيرِ وَالذكر عقيب الْمَكْتُوبَة
-“এই হাদীস শরীফ অনুযায়ী পূর্ববর্তীদের অনেকে ফরয নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকর করাকে মুসতাহাব বলেছেন।’’ (আইনী, উমদাতুল কারী, ৬ষ্ঠ খ- ১২৬ পৃ.)
দেওবন্দীদের অন্যতম পথপদর্শক আশরাফ আলী থানবী তার ফতোয়ার কিতাবে এই হাদিস খানা এনে বলেন,
ان سے مشروعيت جہر واضح ولاتح ہے
-‘‘উচ্চস্বরে যিকর করা বৈধ হওয়ার ব্যাপারে এই হাদিসটি উৎকৃষ্ট দলিল।’’ ১৮৫
- ১৮৫. আশরাফ আলী থানবী, ইমদাদুল ফাতওয়া, ৪র্থ খণ্ড, ৪৩-৪৪ পৃ:
হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন,
وَقَالَ ابْنُ عَبَّاسٍ: كُنْتُ أَعْلَمُ إِذَا انْصَرَفُوا بِذَلِكَ إِذَا سَمِعْتُهُ
-‘‘মুসল্লিরা যখন শেষ করতেন, তাদের যিকরের আওয়াজ আসা নিজ কানে শুনতাম।’’ ১৮৬
- ১৮৬. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১৬৮ পৃ. হা/৮৪১, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/১৭০৭, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ৫/৪৩৩ পৃ. হা/৩৪৭৮, ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৪১০ পৃ. হা/৫৮৩, ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, ২/২৪৪ পৃ. হা/৩২২৫
মওলবী সানাউল্লাহ সাহেব অমৃতসরি তার ‘আখবারে আহলে হাদীসে” এই হাদিস শরীফ খানা উল্লেখ করেন। (১২ জানুয়ারী ১৯৩৮ ইং)
সায়্যিদুল মুফাস্সিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক (ﷺ)’র যুগে নামাযের পর যিকির করা হত এবং তা আমি নিজের কানে শুনতাম। কিন্তু আজকাল দেওবন্দীরা একে বিদআত বলে চিৎকার করে। বুঝা গেল তাদের মসলক কুরআন-সুন্নাহ অনুযায়ী নয়। বরং তাদের মসলক নিজের খামখেয়ালী এবং উদ্ভাবিত পন্থার নাম। এরূপ ভ্রান্ত মাযহাব হতে আল্লাহ আমাদের হেফাজত করুন। আমিন!
সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) অপর একটি বর্ণনা রয়েছে, যদ্বারা বুঝা যায় কত উচ্চস্বরে যিকির করতেন। তিনি বলেন-
عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ رَضِيَ اللهُ عَنْهُمَا، قَالَ: كُنْتُ أَعْرِفُ انْقِضَاءَ صَلاَةِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالتَّكْبِيرِ
‘আমি রাসূল (ﷺ)’র নামায শেষ করার তাকবীরটি চিনতাম।’’ ১৮৭
- ১৮৭. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১৬৮ পৃ. হা/৮৪২, ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত শরীফ (ভারতীয় ৮৮ পৃ.) ১/৩০৩ পৃ. হা/৯৫৯, পরিচ্ছেদ: بَاب الذّكر بعد الصَّلَاة
শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এই হাদিস শরীফের ব্যাখ্যায় বলেন,
گفته اند كہ مراد بتكبير ايخبا است چناں كہ در صححين از ابن عباس امده است كه رفع صوت بذكر وقت انصراف مراد از نماز فرض در فرفان آنحضرت صلى الله عليه وسلم معهود بور گفت ابن عباس سے شناختم من انقضاء الصلوة رابدا آورده است. بخارى اس حديث راپس معلوم شدك مراد بتكبير مطلق ذكر است
-‘‘আলেমগণ বলেন, এই হাদিসে তাকবীর দ্বারা যিকর উদ্দেশ্য। যেমন বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ)’র যুগে নামাযের পরে উচ্চস্বরে যিকর করা হত। হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) উচ্চস্বরে যিকর দ্বারাই আমি নামাযের শেষ অবস্থা বুঝতাম। এরপর ইমাম বুখারী (رحمة الله) এই হাদীস বর্ণনা করেছেন। সুতরাং বুঝা গেল এখানে তাকবীর দ্বারা যিকর উদ্দেশ্য।’’ (শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী, আশিয়াতুল লুম‘আত, ১/৪১৮ পৃ. ফার্সী)
আল্লামা নববী (رحمة الله):
আল্লামা নববী (رحمة الله) মুসলিম শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থে এমটিই রয়েছে যে,
هَذَا دَلِيلٌ لِمَا قَالَهُ بَعْضُ السَّلَفِ أَنَّهُ يُسْتَحَبُّ رَفْعُ الصَّوْتِ بِالتَّكْبِيرِ وَالذِّكْرِ عَقِبَ الْمَكْتُوبَةِ
-‘‘এই হাদিসটি কতিপয় পূর্ববর্তীদের দলিল যে, ফরয নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকর করা মুস্তাহাব।’’ ১৮৮
- ১৮৮. ইমাম নববী, শরহে মুসলিম ৫/৮৪ পৃ:, ইমাম সুয়ূতি, শরহে সুনানে ইবনে মাযাহ, ৩/৬৪ পৃ., উবাইদুল্লাহ মোবারকপুরী, মের‘আত শরহে মিশকাত, ৩/৩১৫ পৃ.
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সায়্যিদুল মুফাসসিরিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) নিজেই বলেন, রাসূল (ﷺ)’র উচ্চস্বরে তাকবির শুনে আমি ঘরে বলেই বুঝতাম যে, নামায শেষ হয়েছে। অর্থাৎ রাসূল (ﷺ) উচ্চস্বরে যিকর করতেন। কিন্তু পরিতাপের বিষয়! আজকাল দেওবন্দী এবং আহলে হাদিসরা উচ্চস্বরে যিকর করা নিয়ে ঝগড়া-বিবাদে লিপ্ত। মসজিদে মসজিদে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করছে। মসলকে আহলে হক তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উপর ফতোয়া চাপিয়ে দিচ্ছে। এরপরেও তাদের মুখবন্ধ হচ্ছে না। মৌলবী থেকে শুরু করে মুকতাদী পর্যন্ত সবাই এই বিশৃঙ্খলায় জড়িত। সবারই সে একি কথা যুগ যুগ ধরে রাসূল (ﷺ)’র সময় হতে যে যিকর প্রচলিত আছে, আমি তা বন্ধ করব। (নাউযুবিল্লাহ)
এখন একজন সাহাবী (رضي الله عنه)’র একটি সাক্ষ্য দেয়া হবে যাতে দেওবন্দীদের দলিলের উপর প্রভাব পড়ে এবং তারা ফিতনা থেকে দিরে আছে। সম্মানিত এই সাহাবীর নাম হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه)। সায়্যিদুনা আবদুল্লাহ ইবনু যুবাইর (رضي الله عنه) বর্ণনা করেন যে,
كَانَ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ إِذَا سَلَّمَ مِنْ صَلَاتِهِ يَقُولُ بِصَوْتِهِ الْأَعْلَى
‘রাসূল (ﷺ) যখন নামাযের সালাম ফিরাতেন তখন তিনি উচ্চ কণ্ঠে এই দো‘আ পড়তেন।’
لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَحْدَهُ لَا شَرِيكَ لَهُ لَهُ الْمُلْكُ وَلَهُ الْحَمْدُ وَهُوَ عَلَى كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ لَا حَوْلَ وَلَا قُوَّةَ إِلَّا بِاللَّه لَا إِلَه إِلَّا الله وَلَا نَعْبُدُ إِلَّا إِيَّاهُ لَهُ النِّعْمَةُ وَلَهُ الْفَضْلُ وَلَهُ الثَّنَاءُ الْحَسَنُ لَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدّين وَلَو كره الْكَافِرُونَ
লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারীকালাহু লাহুল মুলক ওয়া লাহুল হামদ ওয়াহুয়া আলা কুল্লি শাইইন ক্বাদীর। লা হাওলা ওয়ালা-কুওয়াতা ইল্লা বিল্লাহি লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়ালা-না‘বুদু ইল্লা ইয়্যাহু লাহুন নি‘মাত ওয়া লাহুল ফাদলু ওয়া লাহুল সানাউল হাসানু লা-ইলাহা ইল্লাহু মুখলিসীনা লাহুদ্দীনা ওয়া লাও কারিহাল কা-ফিরুন।’’ ১৮৯
- ১৮৯. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৪১৫ পৃ. হা/৫৯৪, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৩০৪ পৃ. হা/৯৬৩, সুনানে আবি দাউদ, ২/৮২ পৃ. হা/১৫০৬
শায়খুল মুহাদ্দিসিন আল্লামা আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله) এ হাদিসের ব্যাখ্যায় বলেন-
اس حديث صريح است درجهر بذكر كہ آنحضرت بآواز بلند خواند
-‘‘এই হাদিসটি স্পষ্ট যে, রাসূল (ﷺ) উচ্চস্বরে যিকির করা পছন্দ করতেন।’’ ১৯০
- ১৯০. শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশ‘আতুল লুমআত, ফার্সী, ১ম খন্ড, পৃ. ৪১৯
আল্লামা সায়্যিদ আহমদ তাহাবী (رحمة الله) এই হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন,
ويستفاد من الحديث الأخير جواز رفع الصوت بالذكر والتكبير عقب المكتوبات بل من السلف من قال باستحبابه
-‘‘হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه)’র বর্ণিত হাদিসের শেষ অংশ দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, ফরয নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকির করা জায়েয। বরং পূর্ববর্তীদের অনেকে এটাকে মুস্তাহাব বলেছেন।’’ ১৯১
- ১৯১. আল্লামা তাহতাভী, হাশিয়ায়ে তাহতাভী আ‘লা মারাকিল ফালাহ, ৩১২ পৃ.
ইমামুল মুহাদ্দেসীন ইমাম বুখারী (رحمة الله) ইমাম মুসলিম (رحمة الله) এবং অন্যান্য বিখ্যাত মুহাদ্দিসগণ-
بَابُ الذِّكْرِ بَعْدَ الصَّلاَةِ
-‘‘তথা নামাযের পর যিকির করা নামে স্বতন্ত্র অধ্যায় লিপিবদ্ধে করে অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে এসব বর্ণনা গুলো এনেছেন। ১৯২
- ১৯২. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১৬৮ পৃ., ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, পরিচ্ছেদ নং-২৩, ১/৪১০ পৃ., ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৩/২২৭ পৃ., ইমাম খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৩০৩ পৃ.
নামাযের পর যিকর যদি বিদআত হতো তবে বড় বড় মুহাদ্দিসগন কখনোই এরূপ স্বতন্ত্র বাব কায়েম করতেন না। এসব মূর্খ দেওবন্দীদের বিবেকে এমন আবরন লেগেছে যে, এত বড় বড় মুহাদ্দিসিনে কেরামের বর্ণনা এবং হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) ও হযরত আবদুল্লাহ ইবনে জুবাইর (رضي الله عنه)’র সাক্ষ্য তাদের উপর কোন প্রভাবই করছে না। সুতরাং প্রমাণিত হল বরকত মন্ডিত এই পদ্ধতিটি বেরলভী তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের উদ্ভাবন নয়, বরং এটা রাসূলে আকরম (ﷺ)’র উদ্ভাবিত পন্থা।
আল্লামা সায়্যিদ আহমদ তাহতাবী (رحمة الله) ফাতওয়ায়ে বায্যাযিয়ার হাওলা দিয়ে বলেন,
قال في الفتاوى لا يمنع من الجهز بالذكر في المساجد احترازا عن الدخول تحت قوله تعالى: {وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ} [البقرة: ১১৪] كذا في البزازية
-“মসজিদে বড় আওয়াজে যিকর কারীকে বাঁধা দানকারী জালিম। মূল ইবারত হল যে, ফাতওয়ায়ে বায্যাযিয়ায় আছে, মসজিদে উচ্চস্বরে যিকির থেকে যেন বাঁধা দেয়া না হয়, কেননা যদি বাঁধা দেয়া হয় তবে তা পবিত্র কুরআনের নিম্নোক্ত আয়াত وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنْ مَنَعَ مَسَاجِدَ اللَّهِ أَنْ يُذْكَرَ فِيهَا اسْمُهُ এর হুকুমে হবে।” ১৯৩
- ১৯৩. আল্লামা তাহতাভী, হাশিয়ায়ে তাহতাভী আ‘লা মারাকিল ফালাহ, ৩১৮ পৃ.
আল্লামা ইবনে আবেদীন শামী (رحمة الله) দুররূল মুখতারের ব্যাখ্যাগ্রন্থ রদ্দুল মুহতারে লিখেন-
وَفِي حَاشِيَةِ الْحَمَوِيِّ عَنْ الْإِمَامِ الشَّعْرَانِيِّ: أَجْمَعَ الْعُلَمَاءُ سَلَفًا وَخَلَفًا عَلَى اسْتِحْبَابِ ذِكْرِ الْجَمَاعَةِ فِي الْمَسَاجِدِ وَغَيْرِهَا
-‘‘আল্লামা হামাভী (رحمة الله) তার হাশীয়ায় ইমাম শা‘রানী (رحمة الله)-এর অভিমত উল্লেখ করেছেন, তিনি বলেন, মসজিদে উচ্চস্বরে যিকির করার ব্যাপারে পূর্ববর্তী এবং পরবর্তীদের ঐকমত্যের বিষয়টি এভাবে বলেছেন যে, পূর্ববতী এবং পরবর্তী মসজিদে উচুস্বরে যিকির করা মুস্তাহাব বলেছেন। চাই যিকির মসজিদে হোক অথবা বাইরে হোক।’’ ১৯৪
- ১৯৪.
ক. ইমাম ইবনে আবেদীন শামী, ফাতওয়ায়ে শামী, ১/৬৬০ পৃ.
খ. আল্লামা তাহতাভী, হাশিয়ায়ে তাহতাভী আ‘লা মারাকিল ফালাহ, ৩১৮ পৃ.
দেওবন্দী ও আহলে হাদিস পন্থিদের নিকট পৃথিবীতে আল্লাহর দলীল এবং নবী রাসূল (ﷺ) গণের উত্তরাধিকারী’ হিসেবে খ্যাত আল্লামা শায়খ আবদুল আজিজ মুহাদ্দিস দেহলভী (رحمة الله)ও উচ্চস্বরে যিকির করা অস্বীকার কারীদের অজ্ঞ হিসেবে আখ্যায়িত করে বলেন-
ديگرحقيقت ذكر جہر وحق آنست كہ انكار آں سفاہت واضح است در تلاوت قرآن جہر صريح است
-‘‘প্রকৃত কথা হল যে, উচ্চ যিকর অস্বীকার করা মূর্খতা বৈধ আর কিছুই নয়। কেননা কুরআন তেলাওয়াতেও স্পষ্টত উচুঁ আওয়াজ হয়।’’ ১৯৫
- ১৯৫. শাহ আবদুল আযিয মুহাদ্দিসে দেহলভী, ফাতওয়ায়ে আযিযি, ফার্সী ১ম খণ্ড ১৭ পৃ.
শায়খুল মুহাদ্দিসিন আবদুল হক মুহাদ্দেস দেহলভী (رحمة الله) মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যাগ্রন্থ আশিয়াতুল লুমআত এর মধ্যে স্পষ্ট ভাষায় বলেন:
بد انك جہر بذكر مطلقا بعد از نماز مشروع است دار دشده است درو سے احاديث
-‘‘জেনে রেখ যে, নামাযান্তে উচ্চস্বরে যিকর করা বৈধ। এর সমর্থনে হাদিসে পাক রয়েছে।’’ ১৯৬
- ১৯৬. শায়খ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, আশিয়াতুল লুমআত ফার্সী ১ম খণ্ড ৪১৮ পৃ.
মক্কা শরীফের বরণ্য মুফতী এবং ইমাম হিসেবে খ্যাত আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন-
وأوراد الصُّوفِيَّة الَّتِي يقرؤونها بعد الصَّلَوَات على حسب عاداتهم فِي سلوكهم لَهَا أصل أصيل.
-‘‘নামাযান্তে সুফিয়ায়ে কেরামগণ নিজ নিজ পন্থানুসারে যে যিকর করতেন এর মযবুত দলিল বিদ্যমান।’’ ১৯৭
- ১৯৭. ইবনে হাজার মক্কী, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ৫৫ পৃ.
বিজ্ঞ পাঠক! উল্লেখিত বর্ণনা এবং সহীহ হাদিস দ্বারা এখন আর কারো সন্দেহ থাকার কথা নয় যে, দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়, বরং আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত হল যারা নামাযান্তে উঁচুস্বরে যিকর করেন। এখন আপনারাই গভীর চিন্তা করুন যে, কেবল সুন্নি তথা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের মসজিদ হল যেগুলোকে বেরলভী বলা হচ্ছে। সুতরাং এ সত্যটি প্রতিভাত হল যে, দেওবন্দীরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত নয়। কবি বলেন-
عذاب وعتاب وحساب وكتاب!
ما ابد اهل سنت پہ لاكوں سلام!
‘‘শাস্তি-অপমান নিকাশ কর্মজ্ঞান
সমাপ্তি আদি আহলে সুন্নায় লাখো সালাম।’’
দেওবন্দীরা বলে বেড়ায় যে, নামাযান্তে উঁচুস্বরে যিকর করলে নামাযে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হয়। আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত তাদেরকে বলে তোমাদের তথাকথিত এ আক্বিদার ওপর পাঞ্জাবী নিন্মোক্ত উদাহরণটি যথাযথ। যেমন রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন-
وَصَلُّوا كَمَا رَأَيْتُمُونِي أُصَلِّي
-‘‘আমাকে যেরূপ নামায পড়তে দেখ যে তোমরা সেভাবে নামায পড়।’’ ১৯৮
- ১৯৮. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ১/১২৮ পৃ. হা/৬৩১, পরিচ্ছেদ: بَابُ الأَذَانِ لِلْمُسَافِرِ، إِذَا كَانُوا جَمَاعَةً
কোন সাহাবীই এ আপত্তি করেন নি যে, হে রাসূল! আপনি এবং সাহাবায়ে কেরামগণ মিলে উচুঁ আওয়াজে যিকির করার ফলে আমাদের নামাজে সমস্যা হয়। আমাদের অবশিষ্ট নামাযে খুশু খুদু ঠিক থাকে না। কোন সাহাবীই এরূপ কখনো বলেন নি। পুরোদুনিয়ার কোন দেওবন্দী ওহাবী এরূপ একটি দুর্বল রেওয়েত ও পেশ করতে পারবে না।
আইয়ামে তাশরিকের তাকবীর:
৯-১৩ জিলহজ্জ আসর পর্যন্ত প্রত্যেক ফরয নামাযের পর আইয়্যামে তাশরীফের তাকবীর পড়া হয়। দেওবন্দী হোক আর আহলে সুন্নাত ওয়াল জাম‘আত বেরলভী হোক সকলেই উচুঁ আওয়াজে তাকবীর পড়ে। ইমাম মুক্তাদি সকলে মিলে বড় আওয়াজে পড়ে থাকেন। এসময়ই তো অনেকের নামাযের রাক‘আত বাকী থাকে এবং তারা তা আদায় করে। এ সময় কি দেওবন্দীদের নামায বিনষ্ট হওয়ার খবর থাকে না? তাকবীর পড়া ওয়াজিব। বুঝা গেল যে, নামাযান্তে উচুঁ আওয়াজে যিকর করা যদি নিষিদ্ধ হতো, এর মধ্যে যদি কোন দোষ থাকতো এবং এর দ্বারা নামাযের ক্ষতি হতো তবে স্বয়ং সরকারে মুস্তাফা (ﷺ) আইয়ামে তাশরীকে তাকবীর করার হুকুম দিতেন না এবং ফরয নামাযের পর উচ্চস্বরে যিকরও করতে না। সুতরাং বুঝা গেল দেওবন্দী ওহাবীদের কথা “নামাযের ক্ষতি হয়” একথা দ্বারা রাসূলে আকরাম (ﷺ)’র আমল মুবারকের উপর স্পষ্টত দুশমনি করার নামন্তর এবং রাসূল (ﷺ) মুবারক আমলকে অপছন্দ করার শামিল। এটা কোন মুসলমানের অভ্যাস হতে পারে না। এটা বরং রাসূল (ﷺ)’র দুশমনদের অভ্যাস। হতভাগ্য দেওবন্দীরা কেবল আপত্তিই করে থাকে। অভাগা এই দেওবন্দীদের শরীয়তের কোন মাসআলা বুঝার ক্ষমতা নেই। হতভাগ্য এসব দেওবন্দীদের এক উদাহরণই যথেষ্ট ‘নাচতে জানে না তো উঠান বাঁকা’ নিজেরাই নামায পড়তে জানে না আর বলে বেড়ায় যিকির দ্বারা নামাযের ক্ষতি হয়। বিশুদ্ধ পন্থায় নামায পড়লে তো আর নামাযের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে না।