বিদআতে হাসানাহ তথা নতুন উত্তম রীতি বা প্রথার প্রচলন নিয়ে অপব্যাখ্যার জবাবঃ
সুন্নাহ মানে তরীকা বা পন্থা বা রীতি বা প্রথা। হাসানাহ মানে উত্তম আর সাইয়্যিয়াহ মানে খারাপ বা মন্দ। যদি হাদীসে পাকে “সুন্নাতাং হাসানাহ” (سُنَّةً حَسَنَةً) শব্দটি থাকলে ধরে নেয়া হয় যে, এখানে “সুন্নাতে রসূল ﷺ” এঁর কথা বলেছে, নবীজির সুন্নাতকে জীবিত/ চালু করতে বলা হয়েছে, তাহলে ঐ হাদীসের পরের অংশে “সুন্নাতাং সাইয়্যিয়াহ” (ﺳُﻨَّﺔً ﺳَﻴِّﺌَﺔ) দ্বারা কি “মন্দ সুন্নাত” নির্দেশ করা হয়েছে??
রসূলে পাক ﷺ কি সুন্নাতে হাসানাহ তথা ভালো কাজের পাশাপাশি সুন্নাতে সাইয়্যিয়াহ তথা মন্দ কাজও করতেন- যা চালু করলে (পুনরুজ্জীবিত করলে) এর উপর আমলকারীর সমপরিমাণ গুনাহও আমাদের আমলনামায় লেখা হবে! নাউজুবিল্লাহ।
আমাদের বিরোধিতা করতে গিয়ে- বিদআতে হাসানা তথা নতুন উত্তম প্রথা/রীতির বিরোধিতা করতে গিয়ে এরা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআতের অন্যতম আকিদা- “নবীগণ (আ’লায়হিমুস সালাম) মাসুম (নিষ্পাপ) অর্থাৎ ইনাদের দ্বারা মন্দ কিংবা গুনাহের কাজ সংগঠিত হওয়া অসম্ভব”- এই আকীদা থেকে ছিটকে পড়ছে।
ছবিগুলোর দিকে একটু ভালভাবে লক্ষ করুন। সহীহ মুসলিম শরীফের ৬৬৯৩ নং হাদিসে বর্ণিত “সুন্নাতাং হাসানাহ” এর অনুবাদে এরা লিখেছে “সুন্নাত” আবার “সুন্নাতাং সাইয়্যিয়াহ” এর অনুবাদে ঠিকই লিখেছে “অশুভ নীতি”।
বস্তুত, প্রকৃতপক্ষে এখানে সুন্নাহ শব্দ দ্বারা রীতি বুঝানো হয়েছে এবং হাসানাহ দ্বারা উত্তম আর সাইয়্যিয়াহ দ্বারা মন্দ বা খারাপ বা অশুভ বুঝানো হয়েছে। এখানে, উত্তম প্রথার প্রচলনের সাওয়াব এবং মন্দ প্রথা প্রচলনের (যেটা বিদআত হিসেবে পরিচিত) গুনাহ বুঝানো হয়েছে। এটা বুঝতে এত কষ্টেরও প্রয়োজন হবে না আশা করি। উক্ত হাদিসটার পরিচ্ছেদের নামেও এই শব্দদ্বয় (সুন্নাতাং হাসানাহ ও সুন্নাতাং সাইয়্যিয়াহ) এসেছে এবং তারা সেখানে ঠিকই এর অনুবাদ যথাক্রমে “সুন্দর নীতি ও মন্দ নীতি” দ্বারা করেছে। পুরো পরিচ্ছেদের নাম-
باب مَنْ سَنَّ #سُنَّةً_حَسَنَةً أَوْ #سَيِّئَةً وَمَنْ دَعَا إِلَى هُدًى أَوْ ضَلاَلَةٍ
অনুবাদঃ যে লোক কোন সুন্দর নীতি অথবা মন্দ নীতি চালু করে এবং যে লোক সঠিক পথের দিকে ডাকে অথবা বিভ্রান্তের দিকে আহবান করে।
আমাদের এই ফিতনার যুগে কিভাবে অজ্ঞতা ছড়িয়ে পড়বে- তা উক্ত পরিচ্ছেদের পূর্বের পরিচ্ছেদের নাম দেখলেই বুঝা যায়। নাম-
باب رَفْعِ الْعِلْمِ وَقَبْضِهِ وَظُهُورِ الْجَهْلِ وَالْفِتَنِ فِي آخِرِ الزَّمَانِ
অনুবাদঃ শেষ যামানায় ইলম উঠে যাওয়া, অজ্ঞতা ও ফিতনা প্রকাশ পাওয়া প্রসঙ্গে।
এছাড়াও এই প্রসঙ্গের (উত্তম প্রথা প্রচলনের) হাদিস সিহাহ সিত্তার সূনান আত তিরমিজি, সূনান ইবনে মাজাহ, সূনান আন নাসাঈ তেও এসেছে। এছাড়াও সূনান আদ দারেমী, মুসনাদে আহমাদ ইত্যাদিতেও এসেছে। অন্যান্য জায়গায় দেখলাম তারা ঠিকই উত্তম প্রথা ও মন্দ প্রথা লিখেছে। এছাড়াও বাংলা হাদিস এপে সহীহ মুসলিমের ইসলামিক ফাউন্ডেশনের অনুবাদও রয়েছে, সেখানেও এর অনুবাদ ভালো রীতি ও কু-রীতি দ্বারা করেছে বলে দেখিয়েছে।
উল্লেখ্য যে, যখন সেটা রসূলুল্লাহ ﷺ এঁর সুন্নাহ বুঝাবে তখন শুধু “সুন্নাহ” বা “সুন্নাতা রসূলিহি” শব্দ ব্যবহৃত হতে দেখা যায়। যেমনঃ ‘কুরআন ও সুন্নাহ’ কে আঁকড়ে ধরার হাদিসে রয়েছে “কিতাবাল্লহি ওয়া সুন্নাতা রসূলিহি” (كِتَابَ اللهِ وَسُنَّةَ رَسُوْلِه)।
যদিওবা ভন্ড আহলে হাদিসদের এপ্সে “সুন্নাহ” এর অনুবাদ হয়ে গেছে “হাদিস”। জানিনা এরা সুন্নাহকে হাদিস দ্বারা পরিবর্তিত করে উটের মূত্র পান করতে চায় কিনা!! নাকি নয়টা বিয়ে করতে চায়!! (উল্লেখ্য যে, বুখারীতে এই প্রসঙ্গগুলোর হাদিস রয়েছে কিন্তু এগুলো সুন্নাহ কিংবা আমলযোগ্য নয়। দুটা উদাহরণ দিলাম মাত্র- সুন্নাহ আর হাদিসের মধ্যে পার্থক্য বুঝার জন্য)