ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিত দোয়া! কেন?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ফরয নামাযের পর হাত তুলে সম্মিলিত দোয়া! কেন? প্রিয়নবী কি করেছেন কখনো? প্রিয়নবী করেননি তো তোমরা কর কিভাবে? এজন্যেই তো তোমরা বিদআতী! এই তো তব কথা? তবে বন্ধু, ইক্করা’ বিসমি রব্বিকাল্লাযি খালাক(পড় তব প্রভুর নামে, যিনি তোমায় সৃষ্টি করেছেন)।

এক.

“প্রিয়নবী করেননি তো তোমরা কর কিভাবে”? এই তো কথা! তবে বন্ধু, দেখাও তো একবার। জাস্ট একবার। প্রিয়নবী কোথায় একে নাজায়েয করেছেন? “প্রিয়নবী নাজায়েয করেননি তো তোমরা নাজায়েয কর কিভাবে?” এইসূত্রে ভাই, তোমরাও তো বিদআতী!

প্রিয়নবী যে ফতোয়া দেননি, তা দেয়া যদি জায়েয হয়ে থাকে, তবে প্রিয়নবী যা করেননি, সাধারণত তা করা কেন জায়েয হবে না?

প্রিয়নবী যা নাজায়েয করেননি, তা নাজায়েয করা যদি বৈধ হয়, তবে প্রিয়নবী যা করেননি, তা করা কেন বৈধ হবে না? কেন? কেন?

(জাস্ট সুনির্দিষ্ট বিষয়ে বাড়তি-কমতি না হলেই হল। নিষিদ্ধের স্পষ্ট দলীল না থাকলেই হল।)

দুই.

এই হাদীসটা দেখ তো!

হযরত আবু উমামাহ রা. হতে বর্ণিত,

প্রিয়নবীকে প্রশ্ন করা হল, “কোন দোয়া সর্বাধিক শ্রবণ করা হয়?” প্রিয়নবী ইরশাদ করলেন, “শেষরাতের দোয়া ও ফরয সালাতের পরের দোয়া।”(সুনান তিরমিযী:৩৪৯৯)(1)

হ্যাঁ, হ্যাঁ। দোয়া। ফরয সালাতের পরের দোয়া। তবু বুঝি অস্বীকার করবে?

এখন হয়তো বলবে- কেবল দোয়ার কথাই তো বলা হয়েছে! সম্মিলিতভাবের কথা তো স্পষ্ট নয়!

হ্যাঁ, সম্মিলিতভাবের কথা স্পষ্ট নয়! কিন্তু, দেখ ভাই, এখানে একা একার কথাও কি স্পষ্ট? তাও তো নয়। এখন একা একার দোয়া বৈধ হলে সম্মিলিতেরটা বৈধ হবে না কেন? কেন? কেন? দলীল কই? বরং সম্মিলিত দোয়ারই তো অধিক মর্তবা!

দোয়া থাকলে, দোয়ার উত্তম পদ্ধতি তথা সম্মিলিত দোয়া কেন থাকতে পারবে না? কে একে নিষিদ্ধ করলো?

তিন.

প্রিয়নবী কি আসলেই করেননি? এই হাদীসটি দেখ তো ভাই, বুঝো কিনা!

“বিশিষ্ট সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবন যুবাইর রা. এক ব্যক্তিকে নামায শেষ হবার আগেই দু’হাত তুলে দোয়া করতে দেখে বললেন, নিশ্চয় আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নামায সমাপ্তির পূর্বে হাত তুলে দোয়া করতেন না।”

(মাযমাউয যাওয়াইদ লিল হাইসামী:১৭৩৪৫)(2)

একটু নিরপেক্ষভাবে মাথা খাটাও ভাই। হাদীসটি থেকে কি বুঝা যাচ্ছে না যে, প্রিয়নবী নামায শেষ করে হাত তুলে দোয়া করতেন? নিশ্চয়ই তো বুঝা যাচ্ছে!

তুমি না বুঝলে দোয়া কোরো না, ভাই! অসুবিধা নেই। (যেহেতু এটি আবশ্যক বিষয় নয়।)

আর আমরা বুঝছি বলেই তো করছি! তোমাদের অসুবিধা কী? না বুঝলে চুপ থাকো! বর্জনীয় বিদআতের বুলি ঝেড়ে ভাই, ফিতনা করো না প্লিজ। লাকুম দ্বীনুকুম ওয়ালিয়া দ্বীন।

এখন ভাবো, প্রিয়নবী দোয়া করবেন আর সাহাবীরা হাত গুটিয়ে বসে থাকবেন? নিশ্চয়ই না। বরং এক্ষেত্রে প্রিয়নবীকে অনুসরণই করেছেন তারা!

আর প্রিয়নবীও দোয়ায় সবাইকে শামিল করেই করেছেন। যেহেতু তিনি ছিলেন ইমাম, আর এ ব্যাপারে ইরশাদ করেছেন, “কেউ কোনো দলের ইমামতি করে এমন করবে না যে, দোয়াতে অন্যদেরকে(মুসুল্লিদেরকে) বাদ দিয়ে কেবল নিজেকেই খাস করে। এমন করলে সে তাদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করলো।”

(সুনান তিরমিযী:৩৫৭)(3)

অর্থাৎ- ইমাম একা একা নয় বরং মুসুল্লিদেরকেও শামিল করে সম্মিলিত দোয়া করবে।

চার.

প্রিয়নবী তাসবীহ পড়তেন, দোয়া করতেন না। এই তো তোমার কথা? এবার তবে আমাদের কথা শুনো ভাই। “কী আশ্চর্য! হাদীসে যেখানে সরাসরি দোয়া শব্দ এসেছে, সেখানে তুমি করছো অস্বীকার! তবে তুমি হাদীস মানছো কই! হ্যাঁ, সুবহানাল্লাহ, আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহু আকবারের হাদীস থাকায় সেগুলো যদি জায়েয হযে থাকে, তবে দোয়ার কথাও তো হাদীসে আছে! দোয়া জায়েয হবে না কেন!”

ও আচ্ছা, এখন বলছো, দোয়াই তাসবীহ! তবে ভাই, এই হাদীসটি দেখ তো! “প্রিয়নবী শুনলেন এক ব্যক্তি নামাযের পর হামদ, সানা ও দরুদ পড়লো। প্রিয়নবী তাকে বললেন, দোয়া কর, কবুল করা হবে। প্রার্থনা কর, প্রদান করা হবে।”(সুনানু নাসাঈ:১২৮৪)(4)

অর্থাৎ নামাযের পর তাসবীহর যেমন আছে, আলাদা দোয়াও আছে। তবে তাসবীহ মানছো, দোয়া মানবে না কেন? কেন? কী দোষ দোয়ার!

আর দোয়া মানলেও দোয়ার উত্তম পদ্ধতি (সম্মিলিত) মানবে না কেন?

পাঁচ.

হযরত সালমান ফারসি রা. হতে বর্ণিত, আল্লাহর রসূল সল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন, “একদল লোক নিজেদের হাত উঠিয়ে আল্লাহর নিকট কিছু চাইলে তিনি অবশ্যই তা কবুল করে নেন।”

(মাযমাউয যাওয়াইদ লিল হাইসামী:১৭৩৪১)(5)

অর্থাৎ সম্মিলিত দোয়া একটি আলাদা সুন্নাহ। কিন্তু এর জন্য কি নির্দিষ্ট সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে? নিশ্চয়ই হয়নি। বরং সময়-সুযোগ হলে যেকোনো ক্ষণেই এটি করা যায়। তাই না? তবে ফরয সালাতের পরের সময়টা কী দোষ করলো?

যেমন-

সকালে যদি দরুদ পড়, দরুদের পর কুরআন পড়, কুরআনের পর আল্লাহ নামের যিকর কর- এ যদি তোমার নিত্যকার নিয়ম/অভ্যাস হয়, তবু কে তোমায় নিষেধ করবে? নিশ্চয় কেউই না। কারণ এক ইবাদতের পর সুযোগ হলে, ইচ্ছে হলে আরেক ইবাদত করাই যায়। দরুদের পর ইচ্ছে করলে কুরআন পাঠ, এরপর আল্লাহ নামের যিকর করাই যায়। এতে নিষিদ্ধতার কিছু নেই। ভাইরে, ঠিক তেমনি, সব বর্ণনা বাদ দিলেও, ফরয নামাযের পর তাসবীহ পাঠান্তে স্বতন্ত্র ইবাদত হিসেবে সম্মিলিত দোয়া করাই যায়। এতে নিষিদ্ধতার কিছু নেই।

কারণ প্রিয়নবী সম্মিলিত দোয়ার জন্য যে সময়কে নিষিদ্ধ করেননি, যা নিষিদ্ধ হবার অন্য কোনো গ্রহণযোগ্য দলীলও নেই, তাকে তুমি-আমি নিষিদ্ধ করার কে?

(আজ এই পর্যন্ত। বাকীটা আরেকদিন।)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment