গাড়িতে আমার পেছনের সিটে বসা ব্যক্তিটি ফোনে বলছে— আমি ‘অমুক’ স্থানে আছি। হয়তো মোবাইলের বিপরীত পাশের ব্যক্তিটি জানতে চেয়েছিলেন সে কোথায় আছে এই মুহূর্তে। হুটহাট জবাবও পেয়ে গিয়েছিলেন।
কিন্তু অবাক করা বিষয় হলো, তিনি যে জায়গায় আছেন বলে ফোনে জানিয়েছিলেন, সে জায়গায় পৌছুতে এখনো তিনার প্রায় ১ ঘন্টার পথ বাকী ছিল! প্রতিদিন, প্রতিনিয়ত আমাদের মধ্যে এসব বিষয় ঘটছে। বিশেষ করে যারা গাড়ি চালান তাদের মধ্যে এর প্রকোপ বেশি লক্ষ্য করা যায়। যদিও সবাই এক না।
আমরাও বলি। এক বন্ধু কল করে জিজ্ঞেস করলো, আমি কোথায়? বলে দিলাম, এই তো আর ৫ মিনিট! অথচ আমি এখনো বাসা থেকে বেরই হই নি! বেচারাকে অপেক্ষা করালাম ৫ মিনিট বলে আধা ঘণ্টা। সমস্যার সমাধান হয়ে যেত, যদি অপেক্ষা করা ব্যক্তিটার জায়গায় আমরা নিজেকে চিন্তা করতাম। যদি জানতাম মিথ্যা বলার জন্য আখিরাতে আমার কি পরিণাম অপেক্ষা করছে তাহলে হয়তো আরো একটু বেশি সতর্ক থাকতাম।
রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মজা করেও কখনো মিথ্যা বলতেন না। আমাদের মূল সমস্যা হলো— আমরা এসব বিষয়কে খুবই সাধারণভাবে নেই। এগুলোকে গুণাহ মনেই করি না। আফসোস আমাদের জন্য! যেটাকে আমরা আজ গুনাহই মনে করছি না, সেটাই হয়তো আমার লাঞ্চনার কারণ হয়ে দাঁড়াবে!
মদীনা মুনিব, প্রিয় আক্বা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আলমে বারযখ এর একটি আযাব দেখলেন। এক লোক কবরে বসে আছে, তার পাশে একজন দাঁড়িয়ে। দাঁড়িয়ে থাকা ব্যক্তিটি হাতল বিশিষ্ট লোহার রড দিয়ে বসে থাকা ব্যক্তির ঠোঁট যুগলের এক পার্শ্ব ধরে গ্রীবা পর্যন্ত ছিড়ে ফেলছে। তদ্রূপ বিপরীত দিক থেকেও ছিড়ে ফেলা হচ্ছে। সামান্য সময়ের মধ্যে ঠোঁটদ্বয় আগের মতো সুস্থ হয়ে যাচ্ছে এবং পুনঃ পুনঃ এই শাস্তি আরোপ করা হচ্ছে। রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আল্লাহ তায়ালার বারগাহে এই শাস্তির কারণ জানতে চাইলেন। উত্তর আসল— এ হল মিথ্যাবাদী লোক, তাকে কিয়ামত পর্যন্ত এই শাস্তি দেয়া হবে। [১]
ওয়াল্লাহি! এই শাস্তি সহ্য করার ক্ষমতা আমাদের নেই। তাই আমরা যেন কোনো গুণাহকে ছোট মনে না করি। আজ আমাদের কাছে যা সামান্য, তাই হতে পারে অদূর ভবিষ্যতে বিশাল কারণ— যন্ত্রণার। আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে গুণাহ থেকে হেফাজত করুন।
Reference:
[১] সার সংক্ষেপ: বুখারী শরীফ, হাদীস নং- ১৩৮৬, ১ম খন্ড, ৪৬৭ পৃষ্ঠা। দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বৈরুত হতে প্রকাশিত।
‘সত্যের নূরে কেটে যাক- মিথ্যার অন্ধকার’
~স্বাধীন আহমেদ