খারিজিয়ত : আয়াতের অপপ্রয়োগের অভয়ারণ্যময় ফিরক্বা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

১.আনআম ১১১

২.মায়িদাহ ১০৩

৩.ইউসুফ ৬৮

৪.আনআম ৩৭

৫.আরাফ ১৩১

৬.ইউসুফ ১০৩

৭.আনআম ১১৬

৮.বাকারাহ ১০০

৯.যুখরুফ ৭৮

১০.আরাফ ১০২

১১.ইউসুফ ১০৬

১২.শু’আরা ২২৩

১৩.সাফফাত ৭১

১৪. হামিম সাজদাহ ৪

১৫.আনআম ৩৭

ইসলামের প্রথম দিককার বিদ’আতি সম্প্রদায় ছিল খারিজি সম্প্রদায়।এরা মুমিনদের মাওলা সৈয়্যদুনা আলি কাররামাল্লাহু ওয়াজহাহু কে ‘কাফির’ আখ্যা দিয়েছিল।মুমিনদের মাওলা এদের বিরুদ্ধে ‘নাহারওয়ান’ এর যুদ্ধ করেন।

ইমাম বুখারি ‘মুরতাদ এবং খোদাদ্রোহীদের ব্যাপারে অধ্যায় রচনা করে পরিচ্ছেদ এনেছেন,بَاب قَتْلِ الْخَوَارِجِ وَالْمُلْحِدِينَ بَعْدَ إِقَامَةِ الْحُجَّةِ عَلَيْهِمْ বা,’খারিজী সম্প্রদায় ও আল্লাহদ্রোহীদের অপরাধ প্রমাণিত হবার পর তাদেরকে হত্যা করা’—সম্পর্কিত বাব।উনি তা’লিক্ব পদ্ধতিতে হাদিস আনেন,

وَكَانَ ابْنُ عُمَرَ يَرَاهُمْ شِرَارَ خَلْقِ اللهِ وَقَالَ إِنَّهُمْ انْطَلَقُوا إِلَى آيَاتٍ نَزَلَتْ فِي الْكُفَّارِ فَجَعَلُوهَا عَلَى الْمُؤْمِنِينَ

 —❝হযরত আব্দুল্লাহ ইবন উমর রা. খারিজিদেরকে আল্লাহর সৃষ্টির সবচেয়ে নিকৃষ্ট হিসেবে বিবেচনা করতেন এবং তিনি বলেছেন,তারা এমন কিছু আয়াতকে মু’মিনদের ওপর প্রয়োগ করেছে যা কাফিরদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।❞

মাওলানা মরহুম আজিজুল হক শায়খুল হাদিস সাহেব উনার ‘বোখারির বাংলা তরজমা ও বিস্তারিত ব্যাখ্যা’ গ্রন্থে ৭/১৭০পৃষ্ঠায় উল্লেখ করেন,

❝খারেজী ফের্কার গর্হিত মতবাদ ও পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন অপব্যাখ্যা দৃষ্টে ইমাম বোখারী (রঃ) সহ অধিকাংশ ইমামগণ খারেজী ফের্কাকে মোরতাদ— ইসলাম ত্যাগী কাফের সাব্যস্ত করিয়াছেন।পূর্ব্বেই বলা হইয়াছে, খারেজী ফের্কা মোলহেদ শ্রেণীর একটি উপদল। মোলহেদ হইল—যাহারা কোরআন-হাদীছ বা ইসলামী কোন বিষয়ের অপব্যাখ্যার আড়ালে ইসলামের কোন সুস্পষ্ট মতবাদের পরিপন্থী মতবাদ অবলম্বন করে।❞

আর খারিজিদের বর্তমান (দুশো বছর আগের,যা বর্তমানে জেঁকে বসেছে) অবস্থা নিয়ে মুফাসসির ইমাম সাভি আল মালিকি ‘জালালাইনের টীকা’য় লিখেন—

وقيل هذه الآية نزلت في الخوارج الذين يحرّفون تأويل الكتاب والسنة ويستحلون بذلك دماء المسلمين وأموالهم كما هو مُشَاهَدٌ الآن في نَظَائِرهم وهم فرقة بأرض الحجاز يقال لهم الوهابية يحسبون أنهم على شيء ألا إنهم هم الكاذبون استحوذ عليهم الشيطان فأنساهم ذكر الله أولئك حزب الشيطان ألا إن حزب الشيطان هم الخاسرون نسأل الله الكريم أن يقطع دابره

—❝আয়াতটি খারেযীদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে যারা কোরআন এবং সুন্নাহর অপব্যাখ্যা করতো যেন তাতে সাধারণ মুসলমানদের জান মালের ক্ষতি করতে পারে।যেমনকি তাদের অনুসারীদের মধ্যে আজো দেখা যাচ্ছে।তারা হচ্ছে হেজাজের(সৌদী আরব) যমিনের একটা গোষ্ঠী,যারা ওয়াহাবী নামে পরিচিত। তাদের ধারণা যেনো তারাই সঠিক,কিন্তু তারা মিথ্যাবাদী।শয়তান এদেরকে পাকড়াও করে ফেলেছে,এবং তাই তারা আল্লাহর যিকর হতে বিরত আছে।তারাই হলো ‘হিযবুশ শায়তান’ বা শয়তানের দল। এবং শয়তানের সমস্ত দল ক্ষতিগ্রস্থ।আমরা আল্লাহর কাছে দোয়া করি,যেন আল্লাহ তাদেরকে নস্যাৎ করেন।❞

[হাশিয়াতুস সাভি আলা তাফসিরিল জালালাইন,সুরা ফাতির আয়াত-৬,১৯২৬ সালে মিশর হতে প্রকাশিত]

বর্তমানের জেঁকে বসা খারিযিপনা মিলাদ, বা’য়াত,যিয়ারাতে কুবুর,মাযহাবের তাকলিদ এবং অন্যান্য ইসলামি শরিয়ত দ্বারা সমর্থিত বিষয় সমূহে সন্দেহ তৈরী করার জন্য এসব কাজকে ‘অধিকাংশ ব্যক্তি করে’ বলে এগুলো করা যাবেনা মর্মে যুবসমাজের সামনে উপস্থাপন করছে।

আমরা জায়েজ কাজগুলোর প্রমাণে আজকে লিখবোনা বরঙ লিখবো ওদের বিভ্রান্তিকর উপস্থাপনা নিয়ে।কাফির-মুশরিকের ব্যাপারের আয়াতগুলোকে কিভাবে তারা মুসলিমদের ব্যাপারে প্রয়োগ করে সে নিয়ে।

মনগড়া তাফসির করার বিধান:

তাফসির কয়েক প্রকারের হয়ে থাকে।এরমধ্যে কুরআনের তাফসির কুরআন দিয়ে এবং কুরআনে তাফসির হাদিস দিয়ে,এদুটো বেশি মর্যাদা পায়।এরপর তাফসির হয় শব্দভিত্তিক,অলংকার ভিত্তিক,আহকাম ণির্ণয় ভিত্তিক প্রভৃতি ক্যাটাগরিতে।তাফসির যেভাবেই করা হোক না কেন,এটা যদি মনগড়া হয়,তবে তার কঠোর বিধান হাদিস শরিফে বর্ণিত আছে।

➤রইসুল মুফাসসিরীন ইবন আব্বাস রা. বলেন,

مَنْ قَالَ فِي الْقُرْآنِ بِرَأْيِهِ فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ

—যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাখ্যায় মনগড়া কিছু বলে, সে যেন জাহান্নামে নিজ ঠিকানা বানিয়ে নেয়।❞  

[ইমাম নাসায়ী,সুনানে কোবরাঃ ৫/৩০,#৮০৮৪]

➤আরো বর্ণিত আছে,হযরত জুনদুব রা. হতে বর্ণিত,

مَنْ قَالَ فِي كِتَابِ اللهِ بِرَأْيِهِ فَأَصَابَ فَقَدْ أَخْطَأَ

❝যে ব্যক্তি কুরআনের ব্যাখ্যায় মনগড়া কিছু বলে এবং তা যদিও সঠিক হয়, তবুও সে ভুল করেছে বলে সাব্যস্ত হবে।❞

[ইমাম নাসায়ী,সুনানে কোবরাঃ৫/৩১]

তিরমিযী শরীফের ‘কিতাবুত তাফসীরে’র শুরুতে আছেঃ-

وَهَكَذَا رُوِيَ عَنْ بَعْضِ أَهْلِ العِلْمِ مِنْ أَصْحَابِ النَّبِيِّ ﷺ وَغَيْرِهِمْ، أَنَّهُمْ شَدَّدُوا فِي هَذَا فِي أَنْ يُفَسَّرَ القُرْآنُ بِغَيْرِ عِلْمٍ

—কোন কোন জ্ঞানী সাহাবী ও বিজ্ঞ ব্যক্তি থেকে বর্ণিত আছে যে,কেউ যেন রিওয়ায়েতকৃত তাফসীরের জ্ঞান ছাড়া কুরআনের তাফসীর না করেন,সে জন্য সাহাবায়ে কিরাম কঠোরতা অবলম্বন করতেন।

[সুনানু তিরমিযি,কিতাবুত-তাফসীর,হাদীসঃ ২৯৫২

★মুকাদ্দিমাতু উসুলিত তাফসির লি ইবনু তায়মিয়া,১/৪৬]

এসব হাদিস ও আছার পর্যালোচনা করলে দেখা যায়,মনগড়া তাফসির করা শরীয়তে জায়েয নেই এবং একারণে নিজের মনমত আয়াত বাছাই করে যত্রতত্র প্রয়োগ করার অনুমতিও কাউকে দেয়া হয়নি। 

এখন আমরা যাবো এমন পনেরোটি আয়াতের ব্যাখ্যায় যেগুলোকে খারিযিপনার বশবর্তী মুসলিমরা উম্মতে মুহাম্মদির জন্য ওয়াজিব,সুন্নত ও মুস্তাহাব-মুস্তাহসান সাব্যস্ত হওয়া কাজকে হারাম প্রমাণ করতে ব্যবহার করছে। 

➤➤আয়াত ১:

কিন্তু তাদের অধিকাংশই মূর্খ।(আনআম ১১১)

এখানে,’هم/হুম’ বা ‘তাদের’ দ্বারা কাদের বুঝানো হয়েছে এটা স্পষ্ট হত যদি এর আগের আয়াতাংশ উল্লেখ করক হতো।এখানে আল্লাহ বলেন,

مَّا کَانُوۡا لِیُؤۡمِنُوۡۤا اِلَّاۤ اَنۡ یَّشَآءَ اللّٰه

—❝আল্লাহর ইচ্ছে না হলে তারা কখনো ঈমান আনবে না❞ [অর্থাৎ তারা কাফের থাকবে]

সুতরাং স্পষ্ট হল,’অধিকাংশ’ বুঝাতে এ আয়াতে কাফের উদ্দেশ্য!

➤➤আয়াত ২:

«অধিকাংশই নির্বোধ।(মায়িদাহ ১০৩)»

অথচ এর ঠিক একটু আগেই উল্লেখ আছে,

 وَّ لٰکِنَّ الَّذِیۡنَ کَفَرُوۡا یَفۡتَرُوۡنَ عَلَی اللّٰهِ الۡکَذِبَ ؕ اَکۡثَرُهُمۡ لَا یَعۡقِلُوۡنَ

—❝কিন্তু কাফেররা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তাদের অধিকাংশই নির্বোধ।❞

অতএব,’অধিকাংশ’ দ্বারা ‘কাফির’দেরকে বুঝানো সাব্যস্ত হল।

➤➤আয়াত ৩:

❝অধিকাংশ মানুষ প্রকৃত ব্যাপার সম্পর্কে অবগত নয়।❞(ইউসুফ ৬৮)

সালাফি স্কলার আল্লামা কাযি শাওক্বানি ‘ফতহুল ক্বদির’ এ লিখেন,

المراد بأكثر الناس المشركون

—❝(এ আয়াতাংশে) ‘অধিকাংশ’ দ্বারা মুশরিক বুঝানো উদ্দেশ্য।❞

➤➤আয়াত নং ৪:

❝অধিকাংশ লোকই অবগত নয়।❞(আনআম ৩৭)

ইমাম বাগাভি(৫১৬হি.) ‘মা’আলিমুত তানযিল’ ৩/১৬১পৃষ্ঠায় লিখেন,

{وَ قَالُوۡا} 

رؤساء قريش

—❝(এ আয়াত/বাক্যের উদ্দেশ্য যারা) তারা বলে,এখানে ‘তারা’ বলতে কুরাইশদের প্রধানগণ উদ্দেশ্য।❞

স্পষ্টই এটা কুরাইশদের মুশরিক-কাফিরদের ব্যাপারে নাযিলকৃত আয়াত।

➤➤আয়াত নং ৫:

❝অধিকাংশই জানে না।❞(আরাফ : ১৩১)

এ আয়াতের প্রেক্ষাপট ফিরআউনের মুশরিক-কাফির দলকে উপলক্ষ্য করে।এর পাশাপাশি ইমাম আলাউদ্দিন আলি বাগদাদি আল-খাযিন (৭৬৫হি.)  উনার ‘লুবাবুত তাভীল ফি মাআনিত তানযিল’ এর ২/২৩৯ পৃষ্ঠায় লিখেন,

يعني أن ما أصابهم من الله تعالى وإنما قال أكثرهم لا يعلمون لأن أكثر الخلق يضيفون الحوادث إلى الأسباب ولا يضيفونها إلى القضاء والقدر

—❝এর অর্থ হল,অকল্যাণ যা এসেছে তা আল্লাহর পক্ষ হতেই এসেছে (পরীক্ষাসূচক) এবং (ফিরআউনের মুশরিক অনুসারিরা) এ সম্পর্কে জানেনা।তারা কুলক্ষণকে কোনো কিছু ঘটা না ঘটার সাথে সম্পৃক্ত করে,একে ভাগ্যের সাথে সম্পৃক্ত করেন।❞

মুশরিকদের ব্যাপারে নাযিল হওয়া আয়াত মুসলিমদের ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা খারিজিদের লক্ষণ।

➤➤আয়াত ৬ ও ৭:

❝তুমি যতই প্রবল আগ্রহ ভরেই চাও না কেন, মানুষদের অধিকাংশই ঈমান আনবে না।❞(ইউসুফ ১০৩)

বিশ্ববিখ্যাত ‘জালালাইন’ এ উল্লেখ আছে,

{ اَکۡثَرُ النَّاسِ} 

أي: اهل مكة

— ❝এখানে ‘অধিকাংশ লোক’ বলতে মক্কার অধিবাসিদের বুঝানো হয়েছে।❞

ইমাম আবু জাফর তাবারি (৩১০ হি.) এ আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,

 وما أكثر مشركي قومك يا محمد ﷺ

 —’অধিকাংশ লোক ঈমান আনবেনা’ এর কারণ হলো আল্লাহ বলছেন যেন,হে নবি ﷺ আপনার কওমের অধিকাংশই তো মুশরিক!

[তাফসিরে তাবারি,ত্রয়োদশতম খন্ড]

ইমাম ইমাদুদ্দিন ইবন কাসির,এ আয়াতের ব্যাখ্যায় দলিল হিসেবে টানেন নিম্নোক্ত আয়াতটিকে,যার ব্যাখ্যাও একই,

وَ اِنۡ تُطِعۡ اَکۡثَرَ مَنۡ فِی الۡاَرۡضِ یُضِلُّوۡکَ عَنۡ سَبِیۡلِ اللّٰہِ ؕ

—আর যদি আপনি যমীনের অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন, তবে তারা আপনাকে আল্লাহর পথ থেকে বিচ্যুত করবে।(আনআম ১১৬)

কাযি শাওক্বানি লিখেন,

وقيل المراد بالاَکۡثَرَ: الكفار،وقيل المراد بالۡاَرۡضِ مكة،اي اكثر اهل مكة

—❝এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলা হয়েছে ‘অধিকাংশ’ দ্বারা কাফের উদ্দেশ্য।আরো বলা হয়েছে ‘যমিন’ দ্বারা মক্কা বুঝানো হয়েছে।অর্থাৎ ‘যমীনের অধিকাংশ লোক’ বলতে মক্কার অধিকাংশ অধিবাসি (কাফেরদের) বুঝানো হয়েছে।❞

ইমাম কাযি নাসিরুদ্দিন বায়যাবি(৬৯১হি.) লিখেন,

{وإن تطع أكثر من في الأرض} 

أي أكثر الناس يريد الكفار

—{আর যদি আপনি যমীনের অধিকাংশ লোকের কথামত চলেন} এর মানে হল, ‘অধিকাংশ লোক’ দ্বারা কাফিরদের বুঝানো উদ্দেশ্য!

[আনওয়ারুত তানযীল ওয়া আসরারুত তাভীল,২/১৭৯] 

ইমাম ক্বুরতুবি(৬৭১হি.),’আল জামি লি আহকামিল কুরআন’, ৯/৬ পৃষ্ঠায়ও লিখেছেন এখানে ‘অধিকাংশ লোক’ দ্বারা ‘কাফির’ উদ্দেশ্য!

অতএব বুঝা গেলো, আয়াতটা কাফির-মুশরিকদের ব্যাপারে বলা।

➤➤আয়াত ৮:

❝এটা কি নয় যে, তারা যখনই কোন অঙ্গীকার করেছে তখনই তাদের কোন এক দল তা ছুড়ে ফেলেছে?বরং তাদের অধিকাংশই ঈমান আনে না।❞(বাকারাহ ১০০)

 এর ব্যাখ্যায় ইমাম ইবন কাসির বলেন,

قلت : فالقوم ذمهم الله بنبذهم العهود التي تقدم الله إليهم في التمسك بها والقيام بحقها

 —❝আমি বলছি,আয়াতগুলোয় আল্লাহ কিতাবধারী জাতিসমূহকে (ইহুদি,নাসারা) তাদের প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের কারণে নিন্দা করছেন।

[তাফসিরে ইবনে কাসির,১/৫১৪,দারু ইবন জাওযি]

যে আয়াতের দ্বারা অধিকাংশ ইহুদি-খ্রিষ্টান ঈমান না আনার মর্ম সাব্যস্ত হয়,সেটা মুসলিমদের ব্যাপারে প্রয়োগ করে উম্মাহকে বিভ্রান্ত করা অবশ্যই ফিতনাবাজিরই লক্ষণ।

➤➤আয়াত ৯:

❝আমি তো তোমাদের কাছে সত্য নিয়ে গিয়েছিলাম, কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী।❞ (যুখরুফ ৭৮)

‘তাফসিরে জালালাইন’ এ উল্লেখ আছে—

{لَقَدۡ جِئۡنٰکُمۡ} 

أي اهل مكة 

—❝(আল্লাহ বলবেন){আমি তো তোমাদের কাছে},অর্থাৎ মক্কাবাসিদের কাছে।❞

মক্কার অধিকাংশই ছিল হক অপছন্দকারি, 

কাফির-মুশরিক।

সহস্র বছর আগের তাফসির,’মাআলিমুত তানযীল’ এর ৭/২২৩পৃষ্ঠায় ইমাম মুহিউসসুন্নাহ বাগাভি লিখেন,

{لَقَدۡ جِئۡنٰکُمۡ بِالۡحَقِّ} 

يقول أرسلنا إليكم يا معشر قريش رسولنا بالحق

 {وَلٰکِنَّ اَکۡثَرَکُمۡ لِلۡحَقِّ کٰرِہُوۡنَ}

—{আমি তো তোমাদের কাছে},হে মক্কাবাসি,{সত্য নিয়ে গিয়েছিলাম},আমার সত্য রসুল প্রেরণের মাধ্যমে,{কিন্তু তোমাদের অধিকাংশই ছিলে সত্য অপছন্দকারী}।

সুতরাং, প্রমাণিত হল এ আয়াতখানা কাফের-মুশরিকদের ব্যাপারে নাযিল হওয়া যাকে আপত্তিকারিরা সাধারণ মুসলিমের উপর প্রয়োগ করানোর অপচেষ্টা করছেন।

➤➤আয়াত ১০:

❝তাদের অধিকাংশকেই আমি প্রতিশ্রুতি পালনকারী পাইনি, বরং অধিকাংশকে ফাসিকই পেয়েছি।❞ 

(আরাফ ১০২)

এ আয়াতের ব্যাখ্যা কুরআন হতে দিবো আমরা।সরাসরি পূর্বের আয়াতে আছে,

تِلۡکَ الۡقُرٰی نَقُصُّ عَلَیۡکَ مِنۡ اَنۡۢبَآئِہَا ۚ وَ لَقَدۡ جَآءَتۡہُمۡ رُسُلُہُمۡ بِالۡبَیِّنٰتِ ۚ فَمَا کَانُوۡا لِیُؤۡمِنُوۡا بِمَا کَذَّبُوۡا مِنۡ قَبۡلُ ؕ کَذٰلِکَ یَطۡبَعُ اللّٰہُ عَلٰی قُلُوۡبِ الۡکٰفِرِیۡنَ

—❝এসব জনপদের কিছু বিবরণ আমি আপনার কাছে বর্ণনা করছি,তাদের কাছে তাদের রাসূলগণ তো স্পষ্ট প্রমাণসহ এসেছিলেন;কিন্তু পূর্বে তারা যাতে মিথ্যারোপ করেছিল,তাতে তারা ঈমান আনার ছিল না,এভাবে আল্লাহ কাফেরদের হৃদয় মোহর করে দেন।❞

আল্লামা ইবনে কাসির লিখেন—

{وما وجدنا لأكثرهم} 

أي : لأكثر الأمم الماضية

 {من عهد وإن وجدنا أكثرهم لفاسقين}

أي: ولقد وجدنا أكثرهم فاسقين خارجين عن الطاعة والامتثال.والعهد الذي أخذه عليهم هو ما جبلهم عليه وفطرهم عليه،وأخذ عليهم في الأصلاب أنه ربهم ومليكهم، وأنه لا إله إلا هو، فأقروا بذلك ، وشهدوا على أنفسهم به ، فخالفوه وتركوه وراء ظهورهم ، وعبدوا مع الله غيره بلا دليل ولا حجة

—এখানে আল্লাহ্ বলেন,{❝আর আমি তাদের অধিকাংশকে❞}— অর্থাৎ পূর্ববর্তী উম্মতদের অধিকাংশকেই {❝প্রতিশ্রুতি পালনকারী হিসেবে পাইনি❞}।এবং {❝বরং আমি তাদের অধিকাংশকে তো ফাসেক হিসেবই পেয়েছি❞}—অর্থাৎ তাদের অধিকাংশকে আমার বাধ্যতা হতে বিচ্যুত অবস্থায় এবং আমার প্রতি অনমনীয় অবস্থায় পেয়েছি।অধিকাংশ লোকই আমাকে দেয়া প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।তাদের স্বভাবই এমন এবং তাদের পিতৃপৃষ্ঠে আমি তাদের থেকে আমার রবুবিয়তের স্বীকৃতির যে ওয়াদা গ্রহণ করেছি শয়তানের চক্রান্তে তা থেকে তারা দূরে সরে গেছে।তারা আমাকে এই প্রতিশ্রুতি দিয়েছিল যে, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন মা’বূদ নাই।তারা পরস্পর এর সাক্ষী ছিল।অতঃপর তারা এটার খেলাফ কাজ করেছে এবং সেই প্রতিশ্রুতি তারা বেমালুম ভুলে গিয়েছে।তারা কোন দলীল প্রমাণ ছাড়াই আল্লাহ সাথে শরীক বানিয়ে সেগুলোর ইবাদত করেছে।  

[তাফসিরে ইবন কাসির,৩/৪০৬,দারুল কুতুব ইলমিয়াহ]

➤➤আয়াত ১১

❝অনেক মানুষ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, কিন্তু সাথে কিন্তু সাথে সাথে শিরকও করে।❞(ইউসুফ: ১০৬)

এটাও মক্কার মুশরিকদের ব্যাপারে নাযিল হওয়া আয়াত।

জালালাইনে আছে,

وما يؤمن أكثرهم بالله حيث يقرون بأنه الخالق الرازق  إلا وهم مشركون به بعبادة الأصنام ولذا كانـوا يقولون في تلبيتهم : لبيك لا شريك لك ، إلا شريكاً هو لك ، تملكه

وما ملك . يعنونها

—❝তাদের অধিকাংশই আল্লাহ বিশ্বাস করে বটে আল্লাহ তা’আলা সৃষ্টিকর্তা এবং রিজিকদাতা তা স্বীকার করে বটে কিন্তু তারা প্রতিমার উপাসনা করতো তার সাথে শরিক করে।তাই তারা তাদের হজের তালবিয়া পাঠকালে তাতে বলত ‘লাব্বাইকা লা শারিকা লাকা,ইল্লা শারিকান হুয়া লাকা’ অর্থাৎ হে আল্লাহ,আমি হাজির,তোমার কোনো শরিক নেই কেবল ঐ শরিক ব্যতীত যার মালিক তুমিই।এই বলে তারা প্রতিমাসমূহের দিকেই ইঙ্গিত করতো।❞

রইসুল মুফাসসিরীন ইবন আব্বাস রা. হতে বর্ণিত —

قَالَ كَانَ الْمُشْرِكُونَ يَقُولُونَ لَبَّيْكَ لاَ شَرِيكَ لَكَ – قَالَ – فَيَقُولُ رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم ‏ “‏ وَيْلَكُمْ قَدْ قَدْ ‏”‏ ‏.‏ فَيَقُولُونَ إِلاَّ شَرِيكًا هُوَ لَكَ تَمْلِكُهُ وَمَا مَلَكَ ‏.‏ يَقُولُونَ هَذَا وَهُمْ يَطُوفُونَ بِالْبَيْتِ

—তিনি বলেন,❝মুশরিকরা বলত,”লাব্বায়কা লা- শারীকা লাকা।রাবী বলেন,রসূলুল্লাহ ﷺ বলতেন, তোমাদের ক্ষতি হোক,ক্ষান্ত হও,ক্ষান্ত হও (সামনে আর বলে না)।তারা এর সাথে আরও বলত,“কিন্তু হে আল্লাহ!তোমার আরও একজন শারীক আছে- তুমিই যার মালিক এবং সে কিছুরই মালিক নয়।” তারা এ কথা বলত আর বায়তুল্লাহ তাওয়াফ করত।❞

[সহিহ মুসলিম,কিতাবুল হাজ্জ,باب التَّلْبِيَةِ وَصِفَتِهَا وَوَقْتِهَا ‏, হাদিস নং ১১৮৫(ইন্টারন্যাশনাল)]

আল্লামা ইবনে কাসির ইমাম হাসান বসরি رضي الله تعالى عنه হতে এই আয়াতের তাফসির নিয়েছেন,যেখানে ইমাম বলেন, ❝মুনাফিকরাও মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত। কারণ তারা লোক দেখানোর জন্য আমল করে থাকে।❞

কাযিউল কুযযাত ইমাম মাওয়ারদি (৪৫০হি.) উনার তাফসিরে ৩/৮৭পৃ.(দারুল কুতুব ইলমিয়াহ) বলেন,

এখানে উল্লিখিত শির্ক পাঁচ প্রকারে হতে পারে।

প্রথমত,যেমনটা মুশরিকরা বলে,আল্লাহর সাথে শরিক করে রিজিকদাতা,ইলাহ এবং রব সাব্যস্ত করে—এটা ইমাম মুজাহিদের বক্তব্য!

দ্বিতীয়ত,মুনাফিকরা!এরা প্রকাশ্যে ইমান আনে এবং রিয়াহ করে।আর প্রকৃতপক্ষে আল্লাহর বিধিবিধানের সাথে কুফুরি করে।—এটা ইমাম হাসান বসরির বক্তব্য!

তৃতীয়ত,ইমাম সুদ্দি কাবির বলেন

   هو أن يشبه الله تعالى بخلقه

   —তারা,যারা ইমান আনে অথচ সৃষ্টিকে আল্লাহর সাথে তাশবিহ/সাদৃশ্য দেয়।

(যেমন বর্তমানে সালাফিরা ওদের কিতাবে আল্লাহর হাত,পা,আঙ্গুল সাব্যস্ত করেছে মা’আযাল্লাহ।)

চতুর্থত,ইমাম আবু জা’ফর বলেন,আল্লাহর আনুগত্যের ব্যাপারে কাউকে শরিক করা।যেমন কেউ যদি বলে যে, ❝আল্লাহ যদি না থাকত তবে অমুক অমুককে ধ্বংস করে দিতো।❞

এবং পঞ্চমত,কেউ তো আল্লাহর উপর ইমান অবশ্যই এনে ফেললো,কিন্তু নবি ﷺ কে অস্বীকার করে বসলো।তবে তার ইমান বিশুদ্ধ হবেনা—এটা ইমাম ইবনে আমবারি এর বক্তব্য।

সুতরাং দেখা গেল এ আয়াতখানাও অধিকাংশ মুফাসসিরদের মতে কাফির-মুশরিক দের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।

➤➤আয়াত ১২:

সুরা শু’আরা আয়াত ২২৩

یُّلۡقُوۡنَ السَّمۡعَ وَ اَکۡثَرُہُمۡ کٰذِبُوۡنَ

—❝তারা কান পেতে থাকে এবং তাদের অধিকাংশই মিথ্যাবাদী।❞

এ আয়াতে যেকোনো তাফসির খুললে দেখা যাবে জ্যোতিষীদের কথা বলা হয়েছে।শয়তানরা আকাশবার্তা নিয়ে এসে তাদের কানে বলে যায়।যেমন ইমাম ইবনে কাসির এই আয়াতের ব্যাখ্যা দলিল টেনেছেন সহিহ বুখারি হতে।হযরত আয়েশা সিদ্দিকা عليها السلام বলেন,❝কয়েকজন লোক নবী ﷺ এঁর নিকট গণকদের সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করল। রাসূলুল্লাহ ﷺ বললেনঃ ওরা কিছুই না। তারা আবার বললে রাসূলুল্লাহ ﷺ তাদের বললেনঃ ওরা কিছুই না। তারা আবার বললঃ হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! তারা তো কোন সময় এমন কথা বলে দেয়, যা বাস্তবে ঘটে যায়। নাবী ﷺ বললেনঃ কথাটি জিন থেকে পাওয়া। জিনেরা তা আসমানের (ফেরেশতাদের থেকে) ছোঁ মেরে নিয়ে এসে তাদের বন্ধু গণকদের কানে তুলে দেয়, যেভাবে মুরগী তার বাচ্চাদের মুখে দানা তুলে দেয়। তারপর এ গণকরা এর সঙ্গে আরও শতাধিক মিথ্যা কথা মিলিয়ে দেয়।

[বুখারি ৬২১৩, ৭৫৬১ মুসলিম, হাদীস ২২২৮ বাগাভি,হাদীস ৩২৫৮,আব্দুর রায্যাক,হাদীস ২০৩৪৭ বায়হাক্বী : ৮/১৩৮ আহমাদ : ৬/৮৭]

আব্দুল্লাহ বিন মাসঊদ রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى كَاهِنًا أَوْ سَاحِرًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم

❝যে ব্যক্তি কোন গণক বা যাদুকরের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তখনই সে মুহাম্মাদ (সা.) এর প্রতি অবতীর্ণ বিধান তথা কুর’আন মাজীদকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ কাফির হয়ে গেলো।❞ (ত্বাবারানী,মুজামুল কাবীর খন্ড ১০ হাদীস ১০০০৫)

আরো বর্ণিত আছে,হযরত আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন: রাসূল ﷺ ইরশাদ করেন:

مَنْ أَتَى حَائِضًا، أَوْ امْرَأَةً فِيْ دُبُرِهَا، أَوْ كَاهِنًا فَصَدَّقَهُ بِمَا يَقُوْلُ، فَقَدْ كَفَرَ بِمَا أُنْزِلَ عَلَى مُحَمَّدٍ صلى الله عليه وسلم

—❝যে ব্যক্তি কোন ঋতুবতী মহিলার সাথে সহবাস করলো অথবা কোন মহিলার মলদ্বার ব্যবহার করলো অথবা কোন গণকের নিকট গেলো এবং তার কথা বিশ্বাস করলো তখনই সে মুহাম্মাদ ﷺ এর প্রতি অবতীর্ণ বিধান তথা কুর’আন মাজীদকে অস্বীকার করলো অর্থাৎ কাফির হয়ে গেলো’’।

[তিরমিযী, হাদীস ১৩৫ আবু দাউদ, হাদীস ৩৯০৪ ইবনু মাজাহ্, হাদীস ৬৪৪ ত্বাহাওয়ী/মুশকিলুল্ আ-সার, হাদীস ৬১৩০ ইবনুল্ জারূদ/মুনতাক্বা, হাদীস ১০৭ বায়হাক্বী : ৭/১৯৮ আহমাদ : ২/৪০৮, ৪৭৬]

সুতরাং গণকদের বিষয়ের আয়াত দিয়ে সাধারণ মুসলিমকে বিভ্রান্ত করে কেবল ফিতনাবাজরা এটা প্রমাণিত হল।

➤➤আয়াত নং ১৩:

এ আর্টিকেল লেখার সময় সবচেয়ে বেশি মজা পেয়েছিলাম ‘অধিকাংশ’ কে দলিল না বানাতে উনারা এ আয়াত ব্যবহার করেছেন।

وَ لَقَدۡ ضَلَّ قَبۡلَہُمۡ اَکۡثَرُ الۡاَوَّلِیۡنَ

—আর অবশ্যই তাদের আগে পূর্ববর্তীদের বেশীর ভাগ বিপথগামী হয়েছিল।(সাফফাত ৭১)

এর ব্যাখ্যায়,

ইমাম সুয়ুতি লিখেন,

من الأمم الماضية

—পূর্ববর্তী উম্মতের কথা এখানে উল্লেখ করা হয়েছে।[জালালাইন]

‘তাফসির আল-ওয়াসিত’ এ আছে,

ولقد ضل قبل هؤلاء الظالمين من قومك- أيها الرسول الكريم- أكثر الأقوام السابقين الذين أرسلنا إليهم رسلنا لهدايتهم

—হে প্রিয়তম রাসুল ﷺ! আপনার পূর্বেও আমি লোকেদের হিদায়াতের জন্য রাসুল পাঠিয়েছিলাম।কিন্তু তাদের কওমের অধিকাংশ যুলুমে নিপতিত হয়ে পপথভ্রষ্ট হয়েছে।

ইমাম ইবনে কাসির লিখেন,

يخبر تعالى عن الأمم الماضية أن أكثرهم كانوا ضالين يجعلون مع الله آلهة أخرى

—আর আল্লাহ আপনাকে ﷺ সংবাদ দিচ্ছেন পূর্ববর্তী কওমদের ব্যাপারে,যারা অধিকাংশই গোমরাহিতে নিপতিত ছিল এবং আল্লাহর পাশাপাশি অন্য ইলাহও সাব্যস্ত করেছিল।(অর্থাৎ শির্ক করেছিল)

সুতরাং প্রমাণিত হল এখানে ‘অধিকাংশ’ দ্বারা পূর্ববর্তী কওমের কাফের-মুশরেকই উদ্দেশ্য।

➤➤আয়াত ১৪:

সুরা হামিম সাজদাহ আয়াত ৪

اَکۡثَرُهُمۡ فَهُمۡ لَا یَسۡمَعُوۡنَ

—❝তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,তারা শুনে না।❞

‘তাফসির আল ওয়াসিত’ এ ইমাম ওয়াহিদী আন-নিসাপুরি(৪৬৮হি.) লিখেন

والمراد بالأكثر هنا : الكافرون

—❝অধিকাংশ দ্বারা উদ্দেশ্য হল কাফিররা।❞

ইমাম ইবন কাসির লিখেন,

أي : أكثر قريش

—অর্থাৎ,অধিকাংশ দ্বারা কুরাইশ উদ্দেশ্য।

ইমাম ত্বাবারি লিখেন,

وأعرض عنه أكثر هؤلاء القوم الذين أنـزل هذا القرآن بشيرا لهم ونذيرا, وهم قوم رسول الله صَلَّى الله عَلَيْهِ وَسَلَّم

—অধিকাংশ দ্বারা এটা বুঝানো উদ্দেশ্য যে,তারাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন যাদের মধ্যে কুরআনের ‘বাশির’ ও ‘নাযির’ প্রেরণ হয়েছেন।আর সেটা হল রাসুল ﷺ এঁর কওম/জাতি।

ইমাম ক্বুরতুবি লিখেন,

فأعرض أكثرهم يعني أهل مكة

—অধিকাংশ বলতে মক্কাবাসি উদ্দেশ্য।এরাই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছেন।

➤➤আয়াত ১৫:

আনআম আয়াত ৩৭

وَقالوا لَولا نُزِّلَ عَلَيهِ ءايَةٌ مِن رَبِّهِ ۚ قُل إِنَّ اللَّهَ قادِرٌ عَلىٰ أَن يُنَزِّلَ ءايَةً وَلٰكِنَّ أَكثَرَهُم لا يَعلَمونَ

—❝তারা বলেঃতার প্রতি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন?বলে দিনঃ আল্লাহ নিদর্শন অবতরণ করতে পূর্ন সক্ষম;কিন্তু তাদের অধিকাংশই জানে না।❞

ইমাম মুহিউসসুন্নাহ বাগাভি লিখেন,

{وقالوا}

يعني : رؤساء قريش

—❝{তারা বলে},এখানে কুরাইশদের সর্দারদের বুঝানো উদ্দেশ্য।❞(তাই ‘অধিকাংশ’ বলতে কুরাইশ বুঝানো হয়েছে)

ইমাম ইবন কাসির লিখেন,

يقول تعالى مخبرا عن المشركين أنهم كانوا يقولون : ( لولا نزل عليه آية من ربه)

—আল্লাহ ﷻ মুশরিকদের সংবাদ দিচ্ছেন এভাবে যে,তারা বলে,❝তারা বলে,তার প্রতি তার পালনকর্তার পক্ষ থেকে কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়নি কেন?❞

ইমাম ইবনে আতিয়াহ লিখেন,

 {قالوا} عائد على الكفار…..

 —আল্লাহ পুনরায় কাফিরদের প্রসঙ্গে ফিরে বলছেন…..

আল্লামা ইবনে তায়মিয়ার একসময়কার বন্ধু ইমাম ইবনে হাইয়ান আন্দালুসি ‘বাহারুল মুহিত’ এ লিখেন

قال ابن عباس نزلت في رؤساء قريش

—রইসুল মুফাসসিরীন ইবন আব্বাস রা. বলেন,এ আয়াতটি মক্কার কুরাইশদের সর্দারদের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে।

আল্লামা খাতিব শারবিনি ‘সিরাজুম মুনির’ এ লিখেন—

{ وقالوا } أي : رؤساء قريش

—❝তারা বলে,অর্থাৎ কুরাইশ নেতারা বলে।❞

সুতরাং,এ আয়াতখানাও নাযিল হলো কুফফারে মক্কাহ এবং মুশরিকদের উদ্দেশ্যে।

সুতরাং আমরা দেখলাম,এ আয়াতগুলোর কোনোটা পূর্ববর্তী নবিদের অবাধ্য উম্মত,কোনোটা কুফফারে মক্কাহ বা মুশরিকদের সতর্ক করার ব্যাপারে নাযিল হয়েছে। অথচ খারিজি মনোভাবাপন্ন আপত্তিকারিরা এসব লাগায় মুসলিমদের জন্য।

আসলেই কি অধিকাংশ যা বলে তা সঠিক হয় না?

অবশ্যই হয়!যখন কোনো মতবিরোধপূর্ণ মাস’আলা উম্মতে মুহাম্মদির যুগবিদগ্ধ আলিমদের দ্বারা সমর্থিত হয় তখন অধিকাংশের অনুসরণই প্রয়োজনীয় হয়ে পড়ে।এজন্য উম্মতে মুহাম্মাদিকে ইজমার সম্মান প্রদান করা হয়েছে।

বিশুদ্ধ হাদিস হিসেবে ইমাম হাকিম নিশাপুরি সংকলন করেন,হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. হতে বর্ণিত,

فَمَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ حَسَنًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ حَسَنٌ وَمَا رَآهُ الْمُؤْمِنُونَ قَبِيحًا فَهُوَ عِنْدَ اللَّهِ قَبِيحٌ

—❝মু’মিনরা যা ভাল মনে করেন তা আল্লাহর নিকটও ভাল,আর মু’মিনরা যা মন্দ মনে করেন তা আল্লাহর নিকটও মন্দ।❞
[ইমাম হাকেম নিশাপুরী,আল-মুস্তাদরাক,৩/৮৩ পৃঃ হাদিস: ৪৪৬৫,তিনি বলেন,হাদিসের সনদটি বিশুদ্ধ, আর তার সাথে ইমাম যাহাবী একমত পোষণ করেছেন]

ইমাম নুরুদ্দিন হায়সামী বলেন :

رَوَاهُ أَحْمَدُ وَالْبَزَّارُ وَالطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَرِجَالُهُ مُوثَقُونَ

❝উক্ত হাদিসটি ইমাম আহমদ তার ‘মুসনাদ’, ইমাম তাবরানী তার ‘মু‘জামুল কবীর’,ইমাম বায্যার তার ‘মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেছেন।এহাদিসের সবগুলো রাবী বিশ্বস্ত।❞

[মাজমাউয যাওয়াইদ,১/১৭৭-১৭৮]

উম্মতে মুহাম্মাদির জন্য এ হাদিসের নির্দেশনা, মুমিনদের অধিকাংশের ঐকমত্যের অনুমতি দেয়াকে সমর্থন করে।মুমিনদের ঐকমত্য কখনো গোমরাহি বা দালালাতের উপর হবেনা।
সুনানু ইবনে মাজাহ শরিফে উল্লেখ আছে,

أَبُو خَلَفٍ الأَعْمَى، قَالَ سَمِعْتُ أَنَسَ بْنَ مَالِكٍ، يَقُولُ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِﷺ يَقُولُ ‏إِنَّ أُمَّتِي لَنْ تَجْتَمِعَ عَلَى ضَلاَلَةٍ

— আবু খালাফ আল-আ’মা বলেন,সৈয়্যদুনা আনাস রা. বলেন,আমি আল্লাহর রাসুল ﷺ কে বলতে শুনেছি,❝আমার উম্মত কখনো গোমরাহির উপর ঐকমত্য হবেনা।❞
[সুনান ইবন মাজাহ,কিতাবুল ফিতান,বাব সাওয়াদে আযাম]

সুতরাং যে বা যারা কুরআনের আয়াতের প্রয়োগ ভুলভাবে করে,তাদের ব্যাপারে সচেতন হওয়া দরকার।

বিহুরমাতি সাইয়্যিদিল মুরসালিন খাতিমুন নাবিয়্যিন,সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া আলিহি ওয়া আসহাবিহী ওয়াসাল্লাম।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment