বিজ্ঞানের সাথে ধর্মের পার্থক্যটা এই যে, ধর্ম স্থিতাবস্থাকে রক্ষা করতে চায়। মানুষের কাছে তার দাবী প্রশ্নহীন আনুগত্য। ধর্ম মানুষকে প্রশ্ন করতে, সত্যের অনুসন্ধান করতে বাঁধা দেয়।’
কথাগুলো লিখা আছে, ড. নিশীত কুমার পাল এর ‘বিজ্ঞান বিচিন্তা’ বইয়ে। আর একজন মুসলিম হিসেবে কথাগুলো আমি একদমই নিতে পারলাম না। আমার ধর্মীয় উপলব্ধি থেকে সম্পূর্ণ দ্বিমত পোষণ করি।
আল্লাহ তায়ালা সূরা ফাতির এর ২৮ নং আয়াতে বলেন-
اِنَّمَا یَخۡشَی اللّٰهَ مِنۡ عِبَادِهِ الۡعُلَمٰٓؤُا ؕ اِنَّ اللّٰهَ عَزِیۡزٌ غَفُوۡرٌ ﴿۲۸﴾
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: আল্লাহকে তাঁর বান্দদের মধ্যে তারাই ভয় করে, যারা জ্ঞানসম্পন্ন।
তার মানে এটা হতেই পারে না যে, কেউ আল্লাহও তাঁর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আনুগত্য করবে– আর সে অবোধ/মূর্খ হবে। বরং যারাই প্রকৃত মুত্তাকী তারা অবশ্যই জ্ঞানসম্পন্ন হবে। তারপর আল্লাহ তায়ালা সূরা আম্বিয়ার ৭ নং আয়াতে বলেন-
فَاسْأَلُوا أَهْلَ الذِّكْرِ إِنْ كُنْتُمْ لَا تَعْلَمُونَ
কানযুল ঈমান থেকে অনুবাদ: হে লোকেরা! জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস করো যদি তোমাদের জ্ঞান না থাকে।
এটা স্পষ্ট যে একজন ইসলাম ধর্মের অনুসারীকে জ্ঞান অর্জনের প্রতি অনেক বেশি জোর দেয়া হয়েছে। তাকে অজানা প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করার প্রতি উৎসাহ প্রদান করা হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা সূরা আশ-শূরার ৩৩ নং আয়াতে ইরশাদ করছেন-
اِنۡ یَّشَاۡ یُسۡکِنِ الرِّیۡحَ فَیَظۡلَلۡنَ رَوَاکِدَ عَلٰی ظَهۡرِهٖ ؕ اِنَّ فِیۡ ذٰلِکَ لَاٰیٰتٍ لِّکُلِّ صَبَّارٍ شَکُوۡرٍ
‘তিনি যদি চান বাতাসকে থামিয়ে দিতে পারেন। ফলে জাহাজগুলো সমুদ্রপৃষ্ঠে গতিহীন হয়ে পড়বে। নিশ্চয় এতে পরম ধৈর্যশীল ও কৃতজ্ঞ ব্যক্তির জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে।’
আল্লাহ তায়ালার অসংখ্য নিদর্শন আমাদের চারিপাশে ছড়িয়ে আছে। এবং জ্ঞানীরাই এসব নিয়ে চিন্তা-গবেষনা করে। আর যারা এসব নিয়ে গবেষণা করে, তারাই আল্লাহ তায়ালার পরিচয় পেতে থাকে। সুতরাং কোথাও এ কথা বলার কোনো অবকাশ নেই যে– ধর্ম মানুষকে প্রশ্ন করতে, গবেষণা করতে বাধা প্রদান করে। বরং ইসলাম তো জ্ঞানীদেরকে প্রত্যেকটা বিষয় নিয়ে গবেষণা করার প্রতি উদ্বুদ্ধ করেছে। অসংখ্য হাদীসে মোবারাকায়ও ইলম অর্জনের প্রতি মুসলমানদেরকে জোর দেয়া হয়েছে।
সায়্যিদুনা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিআল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন- ‘হযরত সায়্যিদুনা সুলায়মান আলাইহিস সালামকে বাছাই করার সুযোগ দেয়া হলো যে, তিনি ইলম, সম্পদ ও সাম্রাজ্য থেকে কোনটা বাছাই করবেন। তিনি ইলমকেই বাছাই করে নিলেন। এবং এর বরকতে আল্লাহ তায়ালা তাকে বাকী নিয়ামতগুলোও দান করে দিলেন।’ -তারিখে ইবনে আসাকির, সুলায়মান ইবনে দাউদ, ২২/২৭৫
তার মানে বুঝাই যাচ্ছে, পূর্বেকার যুগ থেকেই মুসলমানরা ইলমের অনুরাগী ছিল। যার দ্বারা তাঁরা সম্মান, ক্ষমতা লাভ করেছেন পৃথিবীতে। ইসলাম মানুষকে প্রতিটা সেকেন্ডে গাইড করে। মানুষকে মানুষ বানায়। আমি নিঃসন্দেহে বিজ্ঞানের বিরুদ্ধে নই। তবে সব সমাধান আপনি বিজ্ঞানে পাবেন না। সব প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞান জানে না। জনৈক ব্যক্তি একটা মেয়েকে ধর্ষণ করেছে। এখন তার শাস্তি কি হবে তা বিজ্ঞান দিয়ে প্রমাণ করুন! পারবেন? না হয়তো। কারণ বিজ্ঞান সীমাবদ্ধ।
আর বিজ্ঞানে মুসলিম বিজ্ঞানীদের অবদান নতুন করে বলার অপেক্ষা রাখে না। সুতরাং এটা স্পষ্ট বিজ্ঞান নিয়ে গবেষণা করতে, ইসলাম কখনো অন্তরায় নয় বরং সাহায্যকারী। আমি যদি শুধু ইমাম আলা হযরত রাহিমাহুল্লাহর বিজ্ঞান গবেষণার কথা বলি, তাও বলে শেষ করা সম্ভব নয়। তাঁকে নিয়ে পড়তে বসলে আপনি ক্ষনে ক্ষণে থমকে যাবেন। তাঁর গবেষণাগুলো আপনাকে বিস্মিত করবে।
সুতরাং ধর্ম কখনো আমাদেরকে প্রশ্ন করতে বাঁধা দেয় না। আপনি নামাজ নিয়ে প্রশ্ন করতে চান? জানতে চান নামাজ এর শারীরিক উপকারীতা কি? তবে জানুন।
পাকিস্তানি ডাক্তার মাজেদ যামান ওসমানী ইউরোপে ফিজিওথেরাপিতে উচ্চ ডিগ্রির জন্য গেলেন। সেখানে তাকে ব্যায়াম সম্পর্কে যা কিছু শেখানো হলো সেই পাঠ ছিল পুরোপুরি নামাজের মতো। তিনি অবাক হয়ে বললেন, এ পর্যন্ত শুধু ধর্মীয় দায়িত্ব হিসেবে আমি নামাজ আদায় করেছি, কিন্তু এখানে দেখতে পাচ্ছি বিস্ময়কর ব্যাপার। নামাজের মতো ব্যায়ামের মাধ্যমে বড় বড় রোগ ভালো হয় যাচ্ছে। ডাক্তার সাহেব লিখে দিলেন, এ ব্যায়াম অনুশীলন মাধ্যমে যেসব রোগ আরোগ্য হতে পারে তা হলো-
মস্তিষ্কের রোগ বা মেন্টাল ডিজিজ, স্নায়বিক রোগ, মানসিক রোগ, অস্থিরতা ও অবসাদজনিত রোগ, হৃদরোগ, আর্থাইটিস, ইউরিক এসিড থেকে সৃষ্ট রোগ, পাকস্থলীর ক্যান্সার, ডায়াবেটিস এবং প্রতিক্রিয়া সৃষ্ট অন্যান্য রোগ, চোখ এবং গলার রোগ। বিখ্যাত একজন আমেরিকান ডাক্তার তার এক সাক্ষাৎকারে নামাজ এবং ইসলাম সম্পর্কে তার জীবনের অভিজ্ঞতার কথা প্রকাশ করেছেন।
তিনি বলেন, নামাজ হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ও ভারসাম্যপূর্ণ ব্যায়াম। এতে শারীরিক ও পাশবিক ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার প্রশ্ন দেখা দেয় না। যিনি নামাজের এ ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন তিনি সম্ভবত আধুনিক যুগের যান্ত্রিক এবং মনস্তাত্ত্বিক অবস্থা বিবেচনা করেই এ পদ্ধতির বিন্যাস ঘটিয়েছেন। নামাজে হাত তোলা, হাত বাঁধা, নিচের দিকে চোখ রাখা, আবার হাত ছেড়ে দেয়া, ঝুঁকে যাওয়া, মন মস্তিষ্ককে কেন্দ্রীভূত রাখা, অধিক রক্ত সঞ্চালনের সুযোগ দেয়া, কিছুক্ষণ বিরতি দিয়ে হাঁটু ভেঙে বসা, এসব কিছুই হচ্ছে একটি পরিপূর্ণ ব্যায়ামের পদ্ধতি।
গুগল করলে নামাজের অংসখ্য হেল্থ বেনিফিট সম্পর্কে আপনি জানতে পারবেন। তদ্রূপ ইসলামের আরো যেকোনো বিষয় অথবা রাসূলে আরাবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর সুন্নাহ নিয়ে গবেষণা করলে নিঃসন্দেহে সেটার দুনিয়াবি ফায়দাও আপনি দেখতে পারবেন। কোনো জিনিস আপনার জ্ঞান দ্বারা বুঝে না আসলে, সেটা অপ্রয়োজনীয় হয়ে যায় না। স্বর্ণ পরিমাপক দিয়ে আপনি হাতির ওজন মাপতে পারবেন না। তার মানে এই না যে হাতির ওজন নেই। তদ্রূপ আপনার জ্ঞানও সীমিত। আপনার জ্ঞান দ্বারা বুঝে না আসলে কোনো জিনিস রহিত হয়ে যায় না।
Islam values claim “knowledge of reality based not on reason alone, but also on revelation and inspiration”.
Muslim scholars have developed a spectrum of viewpoints on science within the context of Islam. The Quran and Islam allows for much interpretation when it comes to science. Scientists of medieval Muslim civilization contributed to the new discoveries of science
ভুল-ত্রুটি সংশোধনযোগ্য।
Swadhin Ahmed Attari