আনাস বিন নাদর رضي الله عنه
-আ.ন.ম সিরাজুম মুনির
আল্লাহর এমন অনেক বান্দা আছে যারা তাঁর নামে কসম করলে, তিনি নিজেই তাঁদের কসম পূরণ করে দেন। তাঁদেরই একজন আনাস ইবন নাদর।
নাম- আনাস, পিতা- নাদর ইবন দাম দাম। রাসুলল্লাহ ﷺ এর খাদেম প্রখ্যাত সাহাবী আনাস ইবন মালিক رضي الله عنه এর সম্মানিত চাচা। আনাস ইবনে মালিক বলেন- আমার চাচা আনাসের নামে আমার নাম রাখা হয়েছে। রাসুলুল্লাহ ﷺ এর সম্মানিত দাদা আবদুল মুত্তলিবের মা সালমা বিনতু আমর ছিলেন আনাসের বংশের বনু নাজ্জারের মেয়ে, সম্পর্কে তিনি আনাস ইবন নাদরের ফুফু। আনাস ইবন নাদর ছিলেন তাঁর বংশের নেতা। মহিলা সাহাবী হযরত রুবাইয়্যা বিনতু নাদর ছিলেন তাঁর আপন বোন। তাঁর মাও ছিলেন একজন মহিলা সাহাবি। তাঁর জন্মসন সম্পর্কে বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায় না।
আনাম ইবন নাদর رضي الله عنه ৩য় আকাবায় ইসলাম গ্রহণ করেন। আনাস ইবন মালিক رضي الله عنه বলেনঃ কোন অজ্ঞাত কারণে আমার চাচা আনাস ইবন নাদর বদর যুদ্ধে যোগদান করতে পারেননি। যুদ্ধ শেষে রাসুলুল্লাহ ﷺ মদিনায় ফিরে এলে তিনি তাঁর সামনে হাজির হয়ে অনুতাপের সুরে বললেন: ইয়া রাসুলুল্লাহ, কাফিরদের বিরুদ্ধে পরিচালিত আপনার প্রথম যুদ্ধে আমি অনুপস্থিত থেকেছি। আল্লাহর কসম, আগামীতে আল্লাহ যদি আমাকে তাদরে সাথে যুদ্ধ করার তাওফিক দান করেন, তাহলে আমি কি করি তা অবশ্যই আল্লাহ দেখবেন।
উহুদ যুদ্ধ সংঘটিত হয় হিজরী তৃতীয় সনে। এ যুদ্ধের এক পর্যায়ে মুসলিম বাহিনী যখন বিচ্ছিন্ন হয়ে ময়দান ত্যাগ করেছিল তখন তিনি আপন মনে বলে উঠলেনঃ ইয়া আল্লাহ, এই মুসলসানরা যা করছে তার জন্য আমি আপনার নিকট মাগফিরাত কামনা করছি। আর এই কাফিররা যা করেছে তার সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। এই বলে তিনি সামনের দিকে এগিয়ে গেলেন। পথে সাদ رضي الله عنه এর সাথে দেখা হলে তিনি বলেন- জান্নাত তো ঐখানে উহুদে। আল্লাহর কসম, আমি উহুদ থেকে জান্নাতের খুশবু পাচ্ছি। একথা বলতে বলতে বলেতে আনাস বিন নাদর رضي الله عنه উহুদের ময়দানের দিকে ছুটে যান এবং অসীম সাহসিকতার সথে যুদ্ধ করে শহাদাত বরণ করেন। সাদ رضي الله عنه বলেন- সেদিন তিনি যা করলেন, আমি তা করতে পারিনি। বালাজুরী বলেনঃ সুফাইয়ান ইবন উয়াইফ তাঁকে হত্যা করেন।
উহুদ যুদ্ধে আনাস বিন নাদর رضي الله عنه এর ভূমিকা বর্ণনা প্রসঙ্গে ইবন ইসাহক বলেন- উমর ইবন্র খাত্তাব ও তালহা ইবনে উবাউদুল্লাহ মুহাজির আনসারদের সাথে হাত গুটিয়ে বসে আছেন। আনাস رضي الله عنه সেখানে উপস্থিত হয়ে বললেন: আপনারা এভাবে বসে কেন? তারা বলেন: রাসুলুল্লাহ ﷺ শাহাদাত হয়েছেন।
আনাস বললেন: তিনি যদি শাহাদাত হয়েই থাকেন, আপনারা বেঁচে থেকে কী করবেন? উঠুন, রাসুলুল্লাহ ﷺ যে পথে জীবন দিয়েছেন আপনারাও সে পথে জীবন দিন। একথা বলে তিনি শত্রু বাহিনীর ওপর ঝাপিয়ে পড়েন এবং শাহদাত বরণ করেন।
আনাস ইবন মলিক رضي الله عنه বলেন: তীর, বর্শা ও তরবারির আঘাতে আনাস ইবন নাদর رضي الله عنه এত সারা দেহ ঝাঁঝরা হয়ে গিয়েছিল। গণনায় দেখা যায়, তাঁর দেহে ৭০, মতান্তরে ৮০ এর অধিক আঘাত করা হয়েছে। কাফিররা অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিচ্ছিন্ন করে তাঁর লাশ বিকৃত করে ফেলেছিল। তাঁর বোন রুবইয়্যা বিনতু নাদর ছাড়া আর কেউ লাশ সনাক্ত করতে পারেনি। তিনিও তা করতে সক্ষম হন তাঁর হাতের আঙ্গুল দেখে। আনাস ইবন নাদরের رضي الله عنه ঈমান যে কত মজবুত ছিল তা তাঁর শাহাদাতের ঘটনা থেকে বুঝা যায়। উহুদ যুদ্ধ সম্পর্কে কুরআনের যে সকল আয়াত নাযিল হযেছে তাতে তাঁর মহান ব্যক্তিবর্গের প্রশংশা করা হয়েছে। আনাস ইবন মলিক رضي الله عنه বলেনঃ সূরা আহযাবের ২৩ নম্বর আয়াতে (مِنَ الۡمُؤۡمِنِیۡنَ رِجَالٌ صَدَقُوۡا مَا عَاہَدُوا اللّٰہَ عَلَیۡہِ ۚ فَمِنۡہُمۡ مَّنۡ قَضٰی نَحۡبَہٗ وَ مِنۡہُمۡ مَّنۡ یَّنۡتَظِرُ ۫ۖ وَ مَا بَدَّلُوۡا تَبۡدِیۡلًا) মুমিনদের মধ্যে কতক আল্লাহর সাথে কৃত ওয়াদ পূর্ণ করেছে। ‘তাদের কেউ কেউ শাহাদাত বরণ করেছে ও কেউ কেউ প্রতীক্ষা করছে’, আমার চাচা আনাস উবন নাদর رضي الله عنه এর শানে নাযিল হয়েছে।
সহীহ বুখারীতে আনাস ইবন মলিক رضي الله عنه থেকে বর্ণিত হয়েছে।, রুবাইয়্যা বিনতু নাদর একবার এক আনসারী মহিলার মুখে চপেটাঘাত করে বসেন। তাতে তার একটি দাঁত ভেঙ্গে যায়। রুবাইয়্যার পক্ষে থেকে তাদের কাছে ক্ষমা চাওয় হয়; কিন্তু তারা ক্ষমা করতে অস্বীকার করে। তাদেরকে দিয়াত বা ক্ষতিপূরুন দানের প্রস্তাব দেওয়া হয়। তারা তাও প্রত্যাখ্যান করে। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন: আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী এখন কিসাস অপরিহর্য। একথা শুনে আনাস ইবন নাদর বলে উঠলেন- ইয়া রাসূলুল্লাহ, রুবাইয়্যার দাঁত ভাঙ্গা হবে? যিনি আপনাকে সত্যসহকারে পাঠিয়েছেন সেই সত্তার নামে শপথ, না না কখনোই দাঁত ভাঙ্গা হবে না।
এরপর আকাম্মিকভাবে বাদী পক্ষ দিয়াত গ্রহণে সম্মত হয়ে যায়। তখন রাসুলুল্লাহ ﷺ বলেন- আল্লাহর এমন অনেক বান্দা আছে যারা তাঁর নামে কসম করলে, তিনি নিজেই তাদের কসম পূরণ করে দেন। তাদেরই একজন হলো আনাস ইবন নাদর।