কুরআন ও হাদিসের আলোকে যাকাতের বর্ণনা [কিতাবঃ বাহারে শরীয়ত]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

যাকাতের বর্ণনা

কোরআনের আলোকে যাকাত:

মহান আল্লাহ্ পাক ইরশাদ করেন-১

وَمِمَّا رَزَقْنَاهُمْ يُنْفِقُونَ

-‘‘(মুত্তাকী যারা) আমার দেয়া জীবিকা থেকে আমার পথে ব্যয় করে।’’ (সূরা-বাকারা, আয়াত নং-৩)

মহান রব ইরশাদ করেন-

خُذْ مِنْ أَمْوَالِهِمْ صَدَقَةً تُطَهِّرُهُمْ وَتُزَكِّيهِمْ بِهَا

-‘‘হে মাহবুব! তাদের মালামাল থেকে যাকাত গ্রহণ করূন, যা দ্বারা আপনি তাদেরকে পরিচ্ছন্ন এবং পবিত্র করবেন।’’ (সূরা আত-তাওবাহ, আয়াত নং-১০৩)

মহান আল্লাহ ইরশাদ করেন-

وَالَّذِينَ هُمْ لِلزَّكَاةِ فَاعِلُونَ

-‘‘সফলতা অর্জন করে তারাই, যারা যাকাত আদায় করে থাকে।’’ (সূরা আল-মু’মিনুন, আয়াত নং-৪)

মহান রব ইরশাদ করেন-

مَا أَنْفَقْتُمْ مِنْ شَيْءٍ فَهُوَ يُخْلِفُهُ وَهُوَ خَيْرُ الرَّازِقِينَ

-‘‘আর তোমরা যে সব বস্ত্ত আল্লাহর পথে ব্যয় করো, তিনি তার পরিবর্তে আরো অধিক দেবেন। এবং তিনি সর্বাপেক্ষা রিযিকদাতা।’’ (সূরা সাবা, আয়াত নং-৩৯) আল্লাহ ইরশাদ করেন-

مَثَلُ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنْبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِيكُلِّ سُنْبُلَةٍ مِائَةُ حَبَّةٍ وَاللهُ يُضَاعِفُ لِمَنْ يَشَاءُ وَاللهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ ۞ الَّذِينَ يُنْفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنْفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِنْدَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ  قَوْلٌ مَعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِنْ صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى وَاللهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ

-‘‘(২৬১) তাদের উপমা, যারা আপন সম্পদ আল্লাহর পথে ব্যয় করে সেই একটি শস্য বীজের মতো, যা উৎপাদন করে সাতটা শীষ। প্রত্যেকটি শীষে একশ’ করে শস্য দানা থাকে; এবং আল্লাহ তা থেকেও অধিক বৃদ্ধি করেন যার জন্য চান। আর আল্লাহ প্রাচুর্যময়, জ্ঞানময়। (২৬২) ঐসব লোক যারা স্বীয়-ধন সম্পদ হতে আল্লাহর পথে ব্যয় করে, অতঃপর ব্যয় করার পর না খোঁটা দেয়, না ক্লেশ দেয়, তাদের প্রতিদান তাদের রবের নিকট রয়েছে এবং তাদের না আছে কোন আশংকা না আছে কিছু দুঃখ। (২৬৩) ভালো কথা বলা এবং ক্ষমা প্রদর্শন করা, ঐ দান-খায়রাত অপেক্ষা শ্রেয়তর, যার পরে কষ্ট দেয়া হয়। আল্লাহ তা‘য়ালা বেপরোয়া (অভাবমুক্ত), সহনশীল।’’ (সুরা আল-বাকারাহ, আয়াত নং-২৬১-২৬৩)

আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন-

لَنْ تَنَالُوا الْبِرَّ حَتَّى تُنْفِقُوا مِمَّا تُحِبُّونَ وَمَا تُنْفِقُوا مِنْ شَيْءٍ فَإِنَّ اللهَ بِهِ عَلِيمٌ

-‘‘কস্মিনকালেও কখনো পূর্ণ পর্যন্ত পৌঁছবেনা যতক্ষণ আল্লাহর পথে আপন প্রিয়বস্ত্ত ব্যয় করবে না এবং তোমরা যা কিছু ব্যয় করো তা আল্লাহর জানা আছে।’’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত আয়াত নং-৯২)

মহান আল্লাহ আরো ইরশাদ করেন-

لَيْسَ الْبِرَّ أَنْ تُوَلُّوا وُجُوهَكُمْ قِبَلَ الْمَشْرِقِ وَالْمَغْرِبِ وَلَكِنَّ الْبِرَّ مَنْ آمَنَ بِاللهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ وَالْمَلَائِكَةِ وَالْكِتَابِ وَالنَّبِيِّينَ وَآتَى الْمَالَ عَلَى حُبِّهِ ذَوِي الْقُرْبَى وَالْيَتَامَى وَالْمَسَاكِينَ وَابْنَ السَّبِيلِ وَالسَّائِلِينَ وَفِي الرِّقَابِ وَأَقَامَ الصَّلَاةَ وَآتَى الزَّكَاةَ وَالْمُوفُونَ بِعَهْدِهِمْ إِذَا عَاهَدُوا وَالصَّابِرِينَ فِي الْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ وَحِينَ الْبَأْسِ أُولَئِكَ الَّذِينَ صَدَقُوا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُتَّقُونَ

-‘‘কোন মৌলিক পূণ্য এই নয় যে, পূর্ব কিংবা পশ্চিম দিকে মুখ করবে, হ্যাঁ, মৌলিক পূণ্য হলো এ যে, ঈমান আনবে আল্লাহর উপর, কিয়ামত দিবসের উপর ফিরিশতাদের উপর এবং সমসত্ম নবী-রাসূলগণের উপর, আল্লাহর প্রেমে আপন প্রিয় সম্পদ দান করবে আত্মীয়-স্বজন, এতিমগণ, মিসকীনগণ, মুসাফির ও সাহায্য প্রার্থীদেরকে আর গর্দানসমূহ (গোলাম ও বন্দীদের) মুক্তকরণে; এবং নামাযে কায়েম রাখবে ও যাকাত প্রদান করবে। আর আপন প্রতিশ্রম্নতি পূরণকারীরা যখন অঙ্গীকার করে এবং বিপদে, সংকটে এবং জিহাদের সময় ধৈর্যধারণকারীরা। এরাই হচ্ছে- ওই সব লোক, যারা আপন কথা সত্য প্রমাণ করেছে এবং এরাই হচ্ছে খোদাভীরূ।’’ (সূরা-বাকারা, আয়াত নং-১৭৭)

মহান রব আরো ইরশাদ করেন-

وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمُ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ هُوَ خَيْرًا لَهُمْ بَلْ هُوَ شَرٌّ لَهُمْ سَيُطَوَّقُونَ مَا بَخِلُوا بِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ

-‘‘এবং যারা কার্পণ্য করে ঐ জিনিসের মধ্যে, যা আল্লাহ তাদেরকে আপন করূণায় দান করেছেন, তারা কখনো যেন সেটাকে নিজের জন্য মঙ্গলজনক মনে না করে; বরং সেটা তাদের জন্য অকল্যাণকর। তারা যেসব সম্পদের মধ্যে কার্পণ্য করেছিলো অদূর ভবিষ্যতে, কিয়ামতের দিন সেগুলো তাদের গলায় শৃঙ্খল হবে।’’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত নং-১৮০)

মহান রব ইরশাদ করেন-

وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ وَلَا يُنْفِقُونَهَا فِي سَبِيلِ اللهِ فَبَشِّرْهُمْ بِعَذَابٍ أَلِيمٍ  يَوْمَ يُحْمَى عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ فَتُكْوَى بِهَا جِبَاهُهُمْ وَجُنُوبُهُمْ وَظُهُورُهُمْ هَذَا مَا كَنَزْتُمْ لِأَنْفُسِكُمْ فَذُوقُوا مَا كُنْتُمْ تَكْنِزُونَ

-‘‘আর যারা স্বর্ণ ও রূপা সঞ্চিত করে রাখে এবং আল্লাহর পথে তা ব্যয় করে না তাদেরকে সুসংবাদ শুনিয়ে দিন বেদনাদায়ক শাসিত্মর। (৩৫) সেদিন জাহান্নামের আগুণে তা উত্তপ্ত করা হবে এবং তাদের ললাট পার্শ্ব ও পৃষ্ঠদেশ দগ্ধ করা হবে। (সেদিন বলা হবে) এগুলো যা তোমরা নিজেদের জন্য জমা রেখেছিলে। সুতরাং এক্ষণে আস্বাদ গ্রহণ করো জমা করে রাখার।’’ (সূরা তাওবা, আয়াত নং-৩৪-৩৫) এভাবে যাকাতের বিধান সম্পর্কে অসংখ্য আয়াত বর্ণনা করা হয়েছে, যার দ্বারা যাকাতের গুরূত্ব ও তাৎপর্য সুস্পষ্টরূপে প্রমাণিত হয়। এ প্রসঙ্গে অসংখ্য হাদিসও বর্ণিত হয়েছে। নিমেণ কতিপয় হাদিসে পাক উলেস্নখ করা হল-  

হাদিসের আলোকে যাকাতের বর্ণনা

হাদিস-১-২: ইমাম বুখারী (রহঃ) সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : مَنْ آتَاهُ اللهُ مَالًا، فَلَمْ يُؤَدِّ زَكَاتَهُ مُثِّلَ لَهُ مَالُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ لَهُ زَبِيبَتَانِ يُطَوَّقُهُ يَوْمَ القِيَامَةِ، ثُمَّ يَأْخُذُ بِلِهْزِمَتَيْهِ – يَعْنِي بِشِدْقَيْهِ – ثُمَّ يَقُولُ أَنَا مَالُكَ أَنَا كَنْزُكَ، ثُمَّ تَلاَ: (لَا يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ) الآيَةَ

-‘‘হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ  করেছেন, যাকে আল্লাহ্ তা‘য়ালা সম্পদ দান করেছেন, কিন্তু সে তার যাকাত আদায় করেনি, কিয়ামতের দিন তার সম্পদকে টেকো মাথা সাপ স্বরূপ বানানো হবে, যার চক্ষুর উপর দু‘টি কালো বিন্দু থাকবে, কিয়ামতের দিন তা তার গলায় বেড়ী স্বরূপ করা হবে, অতঃপর সাপ তার মুখের দুই দিকে কামড় দিয়ে ধরবে, তারপর বলবে, আমি তোমার সম্পদ, আমি তোমার সংরক্ষিত ধন, অতঃপর হুজুর সাঃ لَا يَحْسِبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ  আয়াতটি পাঠ করলেন।’’[1]1

অনুরূপ হাদিস ইমাম তিরমিযী রহঃ, ইমাম নাসাঈ রহঃ এবং ইমাম ইবনে মাযাহ রহঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেছেন।[2]2

হাদিস-৩:

ইমাম আহমদ রহঃ সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ ؓ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: مَا مِنْ رَجُلٍ لَا يُؤَدِّي زَكَاةَ مَالِهِ إِلَّا جُعِلَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، يُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبْهَتُهُ وَظَهْرُهُ

-‘‘সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন, যে সম্পদের যাকাত আদায় করা হয়নি, কিয়ামতের দিন সে সম্পদ নেড়ে (চুলহীন) সাপ হবে, এর মালিক তার নিকট থেকে পলায়ন করবে, কিমত্মু তা তাকে আঘাত থাকবে যতক্ষণ না তার আঙ্গুলগুলো (খাদ্যরূপে) তার সাপের মুখে দিবে।’’[3] 3

হাদিস-৪-৫:

সহীহ মুসলীম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত আছে-

قَالَ رَسُولُ اللهِ : مَا مِنْ صَاحِبِ ذَهَبٍ وَلَا فِضَّةٍ، لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، صُفِّحَتْ لَهُ صَفَائِحُ مِنْ نَارٍ، فَأُحْمِيَ عَلَيْهَا فِي نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُكْوَى بِهَا جَنْبُهُ وَجَبِينُهُ وَظَهْرُهُ، كُلَّمَا بَرَدَتْ أُعِيدَتْ لَهُ، فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيلَهُ، إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ

قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَالْإِبِلُ؟ قَالَ: وَلَا صَاحِبُ إِبِلٍ لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، وَمِنْ حَقِّهَا حَلَبُهَا يَوْمَ وِرْدِهَا، إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ، بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، أَوْفَرَ مَا كَانَتْ، لَا يَفْقِدُ مِنْهَا فَصِيلًا وَاحِدًا، تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا وَتَعَضُّهُ بِأَفْوَاهِهَا، كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا، فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ

قِيلَ: يَا رَسُولَ اللهِ، فَالْبَقَرُ وَالْغَنَمُ؟ قَالَ: وَلَا صَاحِبُ بَقَرٍ، وَلَا غَنَمٍ، لَا يُؤَدِّي مِنْهَا حَقَّهَا، إِلَّا إِذَا كَانَ يَوْمُ الْقِيَامَةِ بُطِحَ لَهَا بِقَاعٍ قَرْقَرٍ، لَا يَفْقِدُ مِنْهَا شَيْئًا، لَيْسَ فِيهَا عَقْصَاءُ، وَلَا جَلْحَاءُ، وَلَا عَضْبَاءُ تَنْطَحُهُ بِقُرُونِهَا وَتَطَؤُهُ بِأَظْلَافِهَا، كُلَّمَا مَرَّ عَلَيْهِ أُولَاهَا رُدَّ عَلَيْهِ أُخْرَاهَا، فِي يَوْمٍ كَانَ مِقْدَارُهُ خَمْسِينَ أَلْفَ سَنَةٍ، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ الْعِبَادِ، فَيَرَى سَبِيلَهُ إِمَّا إِلَى الْجَنَّةِ، وَإِمَّا إِلَى النَّارِ

-‘‘হযরত আবূ হুরায়রাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি সোনা রূপার (নিসাব পরিমাণ) মালিক হবে অথচ তার হক (যাকাত) আদায় করবে না তার জন্য কিয়ামতের দিন (তা দিয়ে) আগুনের পাত বানানো হবে। এগুলোকে জাহান্নামের আগুনে এমনভাবে গরম করা হবে যেন তা আগুনেরই পাত। সে পাত দিয়ে তার পাঁজর, কপাল ও পিঠে দাগ দেয়া হবে। তারপর এ পাত পৃথক করা হবে। আবার আগুনে উত্তপ্ত করে তার শরীরে লাগানো হবে। আর লাগানোর সময়ের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। (এ অবস্থা চলবে) বান্দার (জান্নাত জাহান্নামের) ফায়সালা হওয়া পর্যন্ত।

তারপর তাকে নেয়া হবে জান্নাত অথবা জাহান্নামে। সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রাসূল ﷺ! উটের বিষয়টি (যাকাত না দেবার পরিণাম) কি? রাসূলুল্লাহ ﷺ ইরশাদ করলেন, উটের মালিক যদি এর হক (যাকাত) আদায় না করে- যেদিন উটকে পানি খাওয়ানো হবে সেদিন তাকে দুহানোও তার একটা হক- ক্বিয়ামাতের দিন ওই ব্যক্তিকে সমতল ভূমিতে উটের সামনে মুখের উপর উপুড় করে। তার সবগুলো উট গুণে গুণে (আনা হবে) মোটা তাজা একটি বাচ্চাও কম হবে না। এসব উট মালিককে নিজেদের পায়ের নীচে ফেলে পিষতে থাকবে, দাঁত দিয়ে কামড়াবে। এ উটগুলো চলে গেলে, আবার আর একদল উট আসবে। যেদিন এমন ঘটবে, সে দিনের মেয়াদ হবে পঞ্চাশ হাজার বছর। এমনকি বান্দার হিসাব-নিকাশ শেষ হয়ে যাবে। তারপর ঐ ব্যক্তি জান্নাত অথবা জাহান্নামের দিকে অগ্রসর হবে।

সাহাবীগণ আরয করলেন, হে আল্লাহর রসূল! গরূ-ছাগলের যাকাত আদায় না করলে (মালিকদের) কি অবস্থা হবে? তিনি বললেন, যে ব্যক্তি গরূ-ছাগলের মালিক হয়ে এর হক (যাকাত) আদায় করে না কিয়ামতের দিন তাকে সমতল ভূমিতে উপুড় করে ফেলা হবে। তার সব গরূ ও ছাগলকে (ওখানে আনা হবে) একটুও কম-বেশি হবে না। গরূ-ছাগলের শিং বাঁকা কিংবা ভঙ্গ হবে না। শিং ছাড়াও কোনটা হবে না। এসব গরূ ছাগল শিং দিয়ে মালিককে গুতো মারতে থাকবে, খুর দিয়ে পিষবে।[4]4

অনুরূপ হাদিস বুখারী ও মুসলিম শরীফে উট, গরূ ও ছাগলের যাকাত না দেয়ার পরিণাম সম্পর্কে হযরত আবু যার গিফারী (রাঃ) থেকেও বর্ণিত হয়েছে।[5]5

হাদিস নং-৬: ইমাম বুখারী ও মুসলিম (রহঃ) সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَؓ، قَالَ: لَمَّا تُوُفِّيَ رَسُولُ اللهِ ﷺ وَاسْتُخْلِفَ أَبُو بَكْرٍ بَعْدَهُ، وَكَفَرَ مَنْ كَفَرَ مِنَ العَرَبِ، قَالَ عُمَرُ لِأَبِي بَكْرٍ: كَيْفَ تُقَاتِلُ النَّاسَ؟ وَقَدْ قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : أُمِرْتُ أَنْ أُقَاتِلَ النَّاسَ حَتَّى يَقُولُوا: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ، فَمَنْ قَالَ: لاَ إِلَهَ إِلَّا اللهُ عَصَمَ مِنِّي مَالَهُ وَنَفْسَهُ، إِلَّا بِحَقِّهِ وَحِسَابُهُ عَلَى اللهِ ، فَقَالَ: وَاللهِ لَأُقَاتِلَنَّ مَنْ فَرَّقَ بَيْنَ الصَّلاَةِ وَالزَّكَاةِ، فَإِنَّ الزَّكَاةَ حَقُّ المَالِ، وَاللهِ لَوْ مَنَعُونِي عِقَالًا كَانُوا يُؤَدُّونَهُ إِلَى رَسُولِ اللهِ ﷺ لَقَاتَلْتُهُمْ عَلَى مَنْعِهِ، فَقَالَ عُمَرُ: فَوَاللهِ مَا هُوَ إِلَّا أَنْ رَأَيْتُ اللهَ قَدْ شَرَحَ صَدْرَ أَبِي بَكْرٍ لِلْقِتَالِ، فَعَرَفْتُ أَنَّهُ الحَقُّ

-‘‘হযরত আবূ হুরাইরাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ওফাত বরণ করলেন আর তাঁর পরে হযরত আবূ বকর (রাঃ)-কে খলিফা করা হলো এবং আরবের যারা কাফির হবার তারা কাফির হয়ে গিয়েছিল, তখন হযরত উমার (রাঃ) হযরত আবূ বকর (রাঃ)-কে বললেন, আপনি কী করে লোকদের বিরূদ্ধে যুদ্ধ করবেন, অথচ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, আমি মানুষের সঙ্গে ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলার পূর্ব পর্যন্ত যুদ্ধ করার জন্য নির্দেশপ্রাপ্ত। অতএব যে ব্যক্তি ‘লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ্’ বলল, সে তার জান ও মালকে আমার থেকে নিরাপদ করে নিল।

তবে ইসলামী বিধানের আওতায় পড়লে আলাদা। তাদের প্রকৃত হিসাব আল্লাহর কাছে হবে। হযরত আবূ বকর (রাঃ) বললেন, যারা সালাত ও যাকাতের মধ্যে পার্থক্য করে, আমি অবশ্য অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবো। কেননা, যাকাত হল মালের হক। আল্লাহর শপথ! যদি তারা রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর নিকট যা আদায় করতো, এখন তা (সেভাবে) দিতে অস্বীকার করে, তাহলেও আমি অবশ্যই তাদের সঙ্গে যুদ্ধ করবো। হযরত উমার (রাঃ) বললেন, আল্লাহর কসম! আমি দেখছিলাম যে, যুদ্ধ করার জন্য আল্লাহ্ তা‘আলা হযরত আবূ বকরের সিনা খুলে দিয়েছেন। সুতরাং আমি বুঝতে পারলাম এ সিদ্ধান্ত সঠিক।’’[6]6

হাদিস নং-৭: ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) সংকলন করেন-

عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍؓ، قَالَ: لَمَّا نَزَلَتْ هَذِهِ الْآيَةُ: {وَالَّذِينَ يَكْنِزُونَ الذَّهَبَ وَالْفِضَّةَ} [التوبة: 34]، قَالَ: كَبُرَ ذَلِكَ عَلَى الْمُسْلِمِينَ، فَقَالَ عُمَرُ ؓ: أَنَا أُفَرِّجُ عَنْكُمْ، فَانْطَلَقَ، فَقَالَ: يَا نَبِيَّ اللهِ، إِنَّهُ كَبُرَ عَلَى أَصْحَابِكَ هَذِهِ الْآيَةُ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ: إِنَّ اللهَ لَمْ يَفْرِضِ الزَّكَاةَ، إِلَّا لِيُطَيِّبَ مَا بَقِيَ مِنْ أَمْوَالِكُمْ، وَإِنَّمَا فَرَضَ الْمَوَارِيثَ لِتَكُونَ لِمَنْ بَعْدَكُمْ، فَكَبَّرَ عُمَرُؓ، ثُمَّ قَالَ لَهُ: أَلَا أُخْبِرُكَ بِخَيْرِ مَا يَكْنِزُ الْمَرْءُ؟ الْمَرْأَةُ الصَّالِحَةُ، إِذَا نَظَرَ إِلَيْهَا سَرَّتْهُ، وَإِذَا أَمَرَهَا أَطَاعَتْهُ، وَإِذَا غَابَ عَنْهَا حَفِظَتْهُ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইব‌নে আববাস (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, যখন এই আয়াত নাযিল হয়, যারা সোনা ও রূপা পুঞ্জীভুত করে …শেষ পর্যন্ত (সূরা তাওবা, আয়াত নং-৪০), রাবী বলেন, তখন মুসলমানদের নিকট তা খুবই গুরতর মনে হল। হযরত উমার (রাঃ) বলেন, আমি তোমাদের এই উদ্বেগ দূরীভূত করবো। অতঃপর তিনি গিয়ে বলেন, ইয়া নাবীআল্লাহ্‌! এই আয়াত আপনার সাহাবীদের জন্য উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। রাসূলুল্লাহ্‌ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেন, আল্লাহ্‌ তাআলা তোমাদের অবশিষ্ট ধন-সম্পদ পবিত্র করতে যাকাত ফরয করেছেন। আর তিনি মীরাছ এইজন্য ফরয করেছেন, যাতে পরিত্যক্ত মাল তোমাদের পরবর্তী বংশধরেরা পেতে পারে।

তখন হযরত উমার (রাঃ) ‘আল্লাহু আকবার’ ধ্বনি দেন। অতঃপর তিনি হযরত উমার (রাঃ)-কে বলেন, আমি কি তোমাকে লোকদের পুঞ্জীভুত মালের চেয়ে উত্তম মাল সর্ম্পকে অবহিত করবো না? তা হল পূন্যবতী নারী যখন সে (স্বামী) তার দিকে দৃষ্টিপাত করে তখন সে সন্তুষ্ট হয়। আর যখন সে (স্বামী) তাকে কিছু করার নির্দেশ দেয়, তখন সে তা পালন করে। আর যখন সে (স্বামী) তার নিকট হতে অনুপস্থিত থাকে তখন সে তার (ইজ্জত ও মালের) হেফাযত করে।’’[7]7

হাদিস-৮: ইমাম বুখারী রহঃ স্বীয় তারিখে, ইমাম শাফেয়ী রহঃ, ইমাম বায্যার রহঃ এবং ইমাম বায়হাকী রহঃ সংকলন করেন-

عَنْ عَائِشَةَ، عَنِ النَّبِيِّ ﷺ  قَالَ: مَا خَالَطَتِ الصَّدَقَةُ مَالًا إِلَّا أَهْلَكَتْهُ

-‘‘উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ)থেকে বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন, যে মালে কখনো যাকাত মিলবে না, নিশ্চয়ই তাকে ধ্বংস করে দিবে।’’[8] 8

কতিপয় ইমামগণ এ হাদীসের এ অর্থ বর্ণনা করেছেন যে, যে সম্পদে যাকাত ওয়াজিব হয়েছে, আদায় করেনি এবং সম্পদের সাথে মিলায়ে নিল, এটা হারাম, এটা হালালকেও ধ্বংস করবে। (ইমাম মুনযিরী রহঃ বলেন)-

أَن الرجل يَأْخُذ الزَّكَاة وَهُوَ غَنِي عَنْهَا فَيَضَعهَا مَعَ مَاله فتهلكه وَبِهَذَا فسره الإِمَام أَحْمد وَالله أعلم

-‘‘ইমাম আহমদ (রহঃ) এর অর্থ এরূপ বলেছেন যে, যে ধনী ব্যক্তি যাকাত গ্রহণ করল তার যাকাত তার মালকে ধ্বংস করবে, যাকাত তো দরিদ্র ব্যক্তিদের জন্য। এখানে উভয় অর্থ বিশুদ্ধ।’’[9]9

হাদিস নং-৯: ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু‘জামুল আওসাত নামক গ্রন্থে সংকলন করেন-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ بُرَيْدَة َ ؓ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : مَا مَنَعَ قَوْمٌ الزَّكَاةَ إِلَّا ابْتَلَاهُمُ اللهُ بِالسِّنِينَ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরাইদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ)ইরশাদ করেন, যে গোত্র যাকাত আদায় করবে না, আল্লাহ তা’আলা সে জাতিকে দূর্ভিক্ষ নিমজ্জিত করবেন।’’[10] 10

হাদিস-১০: ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর ‘মু‘জামুল আওসাত’ নামক কিতাবে সংকলন করেন-

قَالَ عمرؓ قَالَ رَسُول الله ﷺ مَا تلف مَال فِي بر وَلَا بَحر إِلَّا بِحَبْس الزَّكَاة

-‘‘হযরত ফারূকে আজম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, হুজুর করীম (সাঃ)ইরশাদ করেন, জলে স্থলে যে সম্পদ ধ্বংস হয় তা যাকাত আদায় না করার কারণেই ধ্বংস হয়ে থাকে।’’[11]11

হাদিস নং-১১: সহীহ বুখারী ও মুসলিম শরীফে হযরত আহনাফ বিন কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত। সৈয়্যদানা আবু যার গিফারী (রাঃ) ইরশাদ করেন,

بَشِّرِ الْكَانِزِينَ، بِكَيٍّ فِي ظُهُورِهِمْ، يَخْرُجُ مِنْ جُنُوبِهِمْ، وَبِكَيٍّ مِنْ قِبَلِ أَقْفَائِهِمْ يَخْرُجُ مِنْ جِبَاهِهِمْ

-‘‘তাদের সত্মনের উপর জাহান্নামের গরম পাথর রাখা হবে। সীনা ভেঙ্গে কাঁধ দিয়ে বের হয়ে যাবে, কাঁধের হাড়ের উপর রাখা হবে, হাড় ভেঙ্গে সীনা দিয়ে বেরিয়ে আসবে।’’[12] 12

সহীহ্ মুসলিম শরীফে এটাও রয়েছে যে, আমি নবী করীম (সাঃ)কে বলতে শুনেছি,

بَشِّرِ الْكَانِزِينَ بِرَضْفٍ يُحْمَى عَلَيْهِ فِي نَارِ جَهَنَّمَ، فَيُوضَعُ عَلَى حَلَمَةِ ثَدْيِ أَحَدِهِمْ، حَتَّى يَخْرُجَ مِنْ نُغْضِ كَتِفَيْهِ، وَيُوضَعُ عَلَى نُغْضِ كَتِفَيْهِ،

-‘‘সম্পদ কুক্ষিগতকারীদের সুসংবাদ দাও যে, একটি পাথর জাহান্নামের আগুনে উত্তপ্ত করে, তাদের কারো বুকের মাঝখানে রাখা হবে। এমনকি তার কাঁধের হাড় ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং কাঁধের হাড়ের উপর রাখা হলে তা সত্মনের বোটা ভেদ করে বেরিয়ে যাবে এবং পাথরটি (আগুনের উত্তাপের ফলে) কাঁপতে থাকবে।’’[13] 13

হাদিস নং-১২: ইমাম তাবরানী রহঃ হযরত আমিরূল মু’মিনীন আলী ইবনে আবি তালিব (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। নবী করীম (সাঃ)ইরশাদ করেন,

إِنَّ اللهَ فَرَضَ عَلَى أَغْنِيَاءِ الْمُسْلِمِينَ فِي أَمْوَالِهِمْ بِقَدْرِ الَّذِي يَسَعُ فُقَرَاءَهُمْ، وَلَنْ يُجْهَدَ الْفُقَرَاءُ إِذَا جَاعُوا وَعَرَوْا إِلَّا بِمَا يُضَيِّعُ أَغْنِيَاؤُهُمْ، أَلَا وَإِنَّ اللهَ يُحَاسِبُهُمْ حِسَابًا شَدِيدًا، وَيُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا أَلِيمًا

-‘‘মহান রব ধনীদের উপরে দরিদ্রদের জন্য তাদের মাল হতে নির্ধারিত পরিমান মাল ফরয করেছেন, দরিদ্র লোকেরা কখনো উপবাসের যাতনা ভোগে না, কিমত্মু ধনীদের হতেই তারা নির্যাতিত হয়। সাবধান! এমন ধনীদের থেকে আল্লাহ কঠোর হিসাব গ্রহণ করবেন এবং তাদেরকে যন্ত্রনাদায়ক শাসিত্ম দিবেন।’’[14] 14

হাদিস নং-১৩: ইমাম তাবরানী (রহঃ) খাদেমুর রাসূল (ﷺ), হযরত আনাস ইবনে মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন,

وَيْلٌ لِلْأَغْنِيَاءِ مِنَ الْفُقَرَاءِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، يَقُولُونَ: رَبَّنَا، ظَلَمُونَا حُقُوقَنَا الَّتِي فُرِضَتْ لَنَا عَلَيْهِمْ، فَيَقُولُ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ: وَعِزَّتِي وَجَلَالِي، لَأُدْنِيَنَّكُمْ وَلَأُبَاعِدَنَّهُمْ

-‘‘কিয়ামতের দিবসে ধনীদের জন্য দরিদ্রদের পক্ষ থেকে অনিষ্ঠতা রয়েছে। ফকীর ব্যক্তি আল্লাহর দরবারে আরজ করবে, হে আমাদের রব! তুমি তার উপর আমাদের যে হক ফরজ করেছো, সে অন্যায়ভাবে তা আমাদেরকে দেয়নি। তখন আল্লাহ বলবেন, আমার সম্মান ও মহত্বের শপথ, আমি তোমাকে আমার নৈকট্য দান করবো এবং তাকে দূরে রাখবো।’’[15] 15

হাদিস নং-১৪: ইমাম ইবনে খুজায়মা রহঃ, ইমাম ইবনে হিববান রহঃ স্বীয় ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ)ইরশাদ করেন,

وَأَمَّا أَوَّلُ ثُلَّةٍ يَدْخُلُونَ النَّارَ فَأَمِيرٌ مُسَلَّطٌ، وَذُو ثَرْوَةٍ مِنْ مَالٍ لَا يُؤَدِّي حَقَّ الله فِي مَالِهِ، وَفَقِيرٌ فَخُورٌ

-‘‘তিন ব্যক্তি প্রথমে দোযখে যাবে, এর মধ্যে একজন হচ্ছে সেই ধনী যে স্বীয় সম্পদে আল্লাহর হক (যাকাত) আদায়  করেনি। আর অপরজন হচ্ছেন অহংকারী ফকির।’’[16] 16

হাদিস নং-১৫: ইমাম আহমদ রহঃ তাঁর ‘আল-মুসনাদ’ নামক কিতাবে সংকলন করেন-

عَن عمَارَة بن حزم ؓ قَالَ قَالَ رَسُول الله ﷺ أَربع فرضهن الله فِي الْإِسْلَام فَمن جَاءَ بِثَلَاث لم يغنين عَنهُ شَيْئا حَتَّى يَأْتِي بِهن جَمِيعًا الصَّلَاة وَالزَّكَاة وَصِيَام رَمَضَان وَحج الْبَيْت

-‘‘হযরত আমারা বিন হাযম (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ)ইরশাদ করেন, আল্লাহপাক ইসলামে চারটি জিনিস ফরজ করেছেন, যে ব্যক্তি এর মধ্যে তিনটি আদায় করবে, তা তার কোন কাজেই আসবে না, যতক্ষণ না চারটি যথাযথভাবে আদায় কারা হয়, নামায, যাকাত, রমজানের রোজা, বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ।’’[17] 17

হাদিস নং- ১৬: ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু‘জামুল কবীরে সহীহ সনদে সংকলন করেন-

عَنْ عَبْدِ اللهِ  ؓ  قَالَ: أُمِرْنَا بِإِقَامِ الصَّلَاةِ وَإِيتَاءِ الزَّكَاةِ، فَمَنْ لَمْ يُزَكِّ فَلَا صَلَاةَ لَهُ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমাদেরকে আদেশ করা হয়েছে যে, যেন সালাত আদায় করি এবং যাকাত প্রদান করি, যে যাকাত প্রদান করবে না তার সালাত কবুল হবে না।’’[18]18

হাদিস নং-১৭: সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম, মুসনদে আহমদ, সুনানে তিরযিতে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, 

مَا نَقَصَتْ صَدَقَةٌ مِنْ مَالٍ، وَمَا زَادَ اللهُ عَبْدًا بِعَفْوٍ، إِلَّا عِزًّا، وَمَا تَوَاضَعَ أَحَدٌ لِلّٰهِ إِلَّا رَفَعَهُ اللهُ

-‘‘তিনি বলেন, আল্লাহর পথে সাদকা করলে সম্পদ কমে যায় না, মাফ করলে সম্মান বৃদ্ধি হয় এবং নম্রতা প্রদর্শনকারী মর্যাদা আল্লাহ বাড়িয়ে দেন।’’[19]19

হাদিস নং-১৮: সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম শরীফে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। নবী করীম ﷺ ইরশাদ করেন,

مَنْ أَنْفَقَ زَوْجَيْنِ مِنْ شَيْءٍ مِنَ الأَشْيَاءِ فِي سَبِيلِ اللهِ، دُعِيَ مِنْ أَبْوَابِ، – يَعْنِي الجَنَّةَ، – يَا عَبْدَ اللهِ هَذَا خَيْرٌ، فَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّلاَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّلاَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الجِهَادِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الجِهَادِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصَّدَقَةِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصَّدَقَةِ، وَمَنْ كَانَ مِنْ أَهْلِ الصِّيَامِ دُعِيَ مِنْ بَابِ الصِّيَامِ، وَبَابِ الرَّيَّانِ، فَقَالَ أَبُو بَكْرٍ: مَا عَلَى هَذَا الَّذِي يُدْعَى مِنْ تِلْكَ الأَبْوَابِ مِنْ ضَرُورَةٍ، وَقَالَ: هَلْ يُدْعَى مِنْهَا كُلِّهَا أَحَدٌ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: نَعَمْ، وَأَرْجُو أَنْ تَكُونَ مِنْهُمْ يَا أَبَا بَكْرٍ

-‘‘যে ব্যক্তি কোন জিনিসের জোড়া জোড়া আল্লাহর রাসত্মায় ব্যয় করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশের জন্য সকল দরজা হতে আহবান করা হবে। বলা হবে, হে আল্লাহর বান্দা! এ দরজাই উত্তম। যে ব্যক্তি সালাত সম্পাদনকারী হবে তাঁকে সালাতের দরজা দিয়ে প্রবেশের জন্য ডাকা হবে। যে ব্যক্তি জিহাদকারী হবে তাকে জিহাদের দরজা হতে ডাকা হবে। যে ব্যক্তি সাদাকাহকারী হবে, তাকে সাদকাহর দরজা দিয়ে ডাকা হবে। যে ব্যক্তি সাওম পালনকারী হবে তাকে সাওমের দরজা বাবুররাইয়ান হতে ডাকা হবে। হযরত আবূ বাকর (রাঃ) বললেন, কোন ব্যক্তিকে সকল দরজা দিয়ে ডাকা হবে এমন তো অবশ্য জরূরী নয়, তবে কি এরূপ কাউকে ডাকা হবে? নাবী ﷺ বললেন, হ্যাঁ, হবে। আমি আশা করছি তুমি তাদের অন্তর্ভূক্ত হবে, হে আবূ বাকর!।’’[20]20

হাদিস নং-১৯: ইমাম বুখারী রহঃ, ইমাম মুসলিম রহঃ, ইমাম তিরমিযী রহঃ, ইমাম নাসাঈ রহঃ, ইমাম ইবনে মাযাহ রহঃ, ইমাম খুযায়মা (রহঃ) প্রমুখ হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী (সাঃ)ইরশাদ করেন,

مَنْ تَصَدَّقَ بِعَدْلِ تَمْرَةٍ مِنْ كَسْبٍ طَيِّبٍ، وَلاَ يَقْبَلُ اللهُ إِلَّا الطَّيِّبَ، وَإِنَّ اللهَ يَتَقَبَّلُهَا بِيَمِينِهِ، ثُمَّ يُرَبِّيهَا لِصَاحِبِهِ، كَمَا يُرَبِّي أَحَدُكُمْ فَلُوَّهُ، حَتَّى تَكُونَ مِثْلَ الجَبَلِ

-‘‘যে ব্যক্তি হালাল রোজগার হতে একটি খেজুর পরিমান দান করবে (আল্লাহ তা কবুল করবেন) এবং আল্লাহ তা‘য়ালা কেবল পবিত্র মাল কবুল করেন আর আল্লাহ তায়ালা তা নিজের (কুদরতী) ডান হাত দিয়ে তা কবুল করেন। অতঃপর আল্লাহ কল্যাণার্থে লালন পালন করেন, যেভাবে তোমাদের কেউ নিজের ঘোড়ার বাচ্চা (যত্ন সহকারে) লালন পালন করে থাকে, অবশেষে সেই সাদকাহ পাহাড় বরাবর হয়ে যায়।’’[21]21

হাদিস নং ২০-২১: ইমাম নাসাঈ, ইবনে মাযাহ, ইবনে খোজায়মা ও ইবনে হিববান ‘আস-সহীহ’ গ্রন্থে ইমাম হাকেম (রহঃ) তার মুসত্মাদরাকে সহীহ সূত্রে হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) ও হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে,

خَطَبَنَا رَسُولُ اللهِ ﷺ يَوْمًا، فَقَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ ثَلَاثَ مَرَّاتٍ، ثُمَّ أَكَبَّ، فَأَكَبَّ كُلُّ رَجُلٍ مِنَّا يَبْكِي لَا نَدْرِي عَلَى مَاذَا حَلَفَ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ فِي وَجْهِهِ الْبُشْرَى، فَكَانَتْ أَحَبَّ إِلَيْنَا مِنْ حُمْرِ النَّعَمِ، ثُمَّ قَالَ: مَا مِنْ عَبْدٍ يُصَلِّي الصَّلَوَاتِ الْخَمْسَ، وَيَصُومُ رَمَضَانَ، وَيُخْرِجُ الزَّكَاةَ، وَيَجْتَنِبُ الْكَبَائِرَ السَّبْعَ، إِلَّا فُتِّحَتْ لَهُ أَبْوَابُ الْجَنَّةِ، فَقِيلَ لَهُ: ادْخُلْ بِسَلَامٍ

-‘‘একদিন রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাদেরকে সম্বোধন করে তিনবার বললেন, ঐ সত্তার শপথ যাঁর হাতে আমার প্রাণ। তিনবার বলার পর তিনি উপুড় হয়ে পড়ে গেলেন। আমাদের প্রত্যেকেই উপুড় হয়ে পড়ে গিয়ে ক্রন্দন করতে লাগলো। আমরা বুঝতেই পারলাম না যে, তিনি কোন কথার উপর শপথ করলেন। অতঃপর তিনি স্বীয় মসত্মক উত্তোলন করলেন। তাঁর চেহারাতে তখন আনন্দের বিচ্ছুরণ পরিলক্ষিত হচ্ছিল, যা আমাদের কাছে সব রকমের নিয়ামত অপেক্ষা অধিক প্রিয় ছিল। অতঃপর তিনি বললেন, যে বান্দা দৈনিক পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করে, রমযান মাসে সাওম পালন করে, যাকাত প্রদান করে এবং সাতটি কবিরা গুনাহ পরিত্যাগ করে থাকে, অবশ্যই তার জন্য জান্নাতের দরজাসমূহ খুলে দেওয়া হবে এবং তাকে বলা হবে যে, তুমি প্রশান্ত চিত্তে জান্নাতে প্রবেশ করো।’’[22]22

হাদিস নং-২২: ইমাম আহমদ (রহঃ) ‘সহীহ’ সূত্রে হযরত আনাস (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ)ইরশাদ করেন,

تُخْرِجُ الزَّكَاةَ مِنْ مَالِكَ فَإِنَّهَا طُهْرَةٌ تُطَهِّرُكَ، وَتَصِلُ أَقْرِبَاءَكَ، وَتَعْرِفُ حَقَّ الْمِسْكِينِ، وَالْجَارِ، وَالسَّائِلِ

-‘‘স্বীয় সম্পদের যাকাত আদায় কর। যাকাত সম্পদ রক্ষাকারী পবিত্রকারী, তোমাকেও পবিত্র করবে। নিকটাত্মীয়দের সাথে সাদাচরণ কর, মিসকীন, প্রতিবেশী ও ভিক্ষুকের হক আদায় করো।’’[23] 23

হাদিস-নং ২৩: ইমাম তাবরানী রহঃ তাঁর মু‘জামুল আওসাত এবং মু‘জামুল কাবীর নামক কিতাবে হযরত আবু দারদা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন,

الزَّكَاةُ قَنْطَرَةُ الْإِسْلَامِ

-‘‘রাসূলুল্লাহ (সাঃ)ইরশাদ করেন, যাকাত ইসলামের সেতু।’’24[24]

হাদিস নং-২৪: ইমাম তাবরানী রহঃ তাঁর মু‘জামুল আওসাত নামক হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, প্রিয়নবী (সাঃ)ইরশাদ করেন,

اكْفُلُوا لِي بِسِتِّ خِصَالٍ وَأَكْفُلُ لَكُمُ الْجَنَّةَ . قُلْتُ: مَا هِيَ يَا رَسُولَ اللهِ؟ قَالَ: الصَّلَاةُ، وَالزَّكَاةُ، وَالْأَمَانَةُ، وَالْفَرْجُ، وَالْبَطْنُ، وَاللِّسَانُ

-‘‘যে আমার জন্য ছয়টি জিনিসের জিম্মাদার হবে, আমি তার জন্য জান্নাতের জিম্মাদার হব। আমি জিজ্ঞেস করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ ﷺ! সেগুলো কি? তিনি ইরশাদ করলেন, সালাত, যাকাত, আমানত, লজ্জাস্থানের পবিত্রতা রক্ষা, পেটের পবিত্রতা, জিহবাকে সংযত করা।’’[25]25

হাদিস-২৫: ইমাম বায্যার (রহঃ) সংকলন করেন-

عَنْ عَلْقَمَةَ – ؓ- أَنَّهُمْ أَتَوْا رَسُولَ اللهِ ﷺ قَالَ: فَقَالَ لَنَا النَّبِيُّ ﷺ: إِنَّ تَمَامَ إِسْلَامِكُمْ أَنْ تُؤَدُّوا زَكَاةَ أَمْوَالِكُمْ

-‘‘হযরত আলকামা (রাঃ) থেকে বর্ণিত। প্রিয়নবী ইরশাদ করেন, তোমাদের ইসলামের পূর্ণতা হলো এটা যে, তোমরা স্বীয় সম্পদের যাকাত আদায় করো।’’[26]26

হাদিস-২৬: ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু‘জামুল কাবীর নামক কিতাবে বর্ণনা করেন-

عَن مُجَاهِدًا، يَقُولُ: سَمِعْتُ ابْنَ عُمَرَ، يَقُولُ: سَمِعْتُ رَسُولَ اللهِ ﷺ يَقُولُ: مَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَرَسُولِهِ فَلْيُؤَدِّ زَكَاةَ مَالِهِ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَرَسُولِهِ فَلْيَقُلْ خَيْرًا أَوْ لِيَسْكُتْ، وَمَنْ كَانَ يُؤْمِنُ بِاللهِ وَرَسُولِهِ فَلْيُكْرِمْ ضَيْفَهُ

-‘‘হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি প্রিয়নবী (সাঃ)কে ইরশাদ করতে শুনেছি, তিনি বলেছেন, যে আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান রাখে, সে যেন তার মালের যাকাত আদায় করে, যে আল্লাহ ও রাসূলের উপর ঈমান রাখে, সে যেন ভালো কথা বলে অথবা চুপ থাকে, অর্থাৎ মন্দ কথা মুখে বের করবে না। আর যে আল্লাহ ও রাসূলের প্রতি ঈমান রাখে সে যেন মেহমানের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করে অর্থাৎ মেহমানদারী করে।’’[27]27

হাদিস নং-২৭: ইমাম আবু দাউদ (রহঃ) সংকলন করেন-

عَنِ الْحَسَنِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَصِّنُوا أَمْوَالَكُمْ بِالزَّكَاةِ، وَدَاوُوا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةَ، وَاسْتَقْبِلُوا أَمْوَاجَ الْبَلَاءِ بِالدُّعَاءِ وَالتَّضَرُّعِ

-‘‘হযরত হাসান বসরী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী (সাঃ)ইরশাদ করেন, যাকাত আদায় করে স্বীয় সম্পদকে সুদৃঢ় দূর্গে সংরক্ষিত করো, সাদকা দানের মাধ্যমে স্বীয় রোগীদের সেবা করো, অবতীর্ণ বিপদপদ দূরীকরণার্থে দোয়া ও বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করো।’’[28]28

হাদিস নং-২৮: ইমাম ইবনে খুজায়মা (রহঃ) তাঁর ‘আস-সহীহ’, ইমাম তাবরানী রহঃ তার মু‘জামুল আওসাত নামক কিতাবে এবং ইমাম হাকেম রহঃ তাঁর আল-মুসত্মাদরাক নামক কিতাবে হযরত জাবের (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করীম (সাঃ)ইরশাদ করেন,

مَنْ أَدَّى زَكَاةَ مَالِهِ، فَقَدْ ذَهَبَ عَنْهُ شَرُّهُ

-‘‘যে নিজের সম্পদের যাকাত আদায় করলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা তার নিকট থেকে সব অনিষ্ঠতা দূর করে নিলো।’’[29]29

ফিক্হী মাসায়েল

শরীয়াতে যাকাত হল, আল্লাহর উদ্দেশ্যে শরীয়াতের নির্ধারিত বিধানানুযায়ী নিজের মালের একাংশের স্বত্বাধিকার কোন অভাবী গরীবের প্রতি অর্পন করা। অভাবী গরীব হাশেমী বংশের লোক হতে পারবে না। হাশেমী বংশের আযাদ ক্রীতদাসও হতে পারবে না এবং এর লাভ হতে নিজকে সম্পূর্ণরূপে মুক্ত রাখবে।[30] 30(দুররূল মুখতার)

মাস‘আলা নং-১:  যাকাত ফরজ। অস্বীকারকারী কাফির। অনাদায়কারী ফাসিক, হত্যার যোগ্য। আদায়ে বিলম্বকারী স্বাক্ষ্যদানের অনুপযোগী।31 [31] (আলমগীরি)

মাস‘আলা নং-২: মুবাহ হিসেবে দিলে যাকাত আদায় হবে না। যেমন: অভাবী গরীব লোককে যাকাতের নিয়তে খাবার খাওয়ানো হলে যাকাত আদায় হবে না। যেহেতু স্বত্বধিকার অর্পণ করা পাওয়া যায়নি। আর যদি খাবার তাকে অর্পন করা হয় সে খেয়ে থাকে বা নিয়ে যায়, তাহলে আদায় হবে। অনুরূপভাবে যাকাতের নিয়তে অভাবী লোককে কাপড় দিলে বা পরিধান করিয়ে দিলে, আদায় হবে। [32] 32(দুররূল মুখতার)

মাস‘আলা নং-৩:  ফকীরকে যাকাতের নিয়তে বসবাসের জন্য বাসস্থান দিলে, যাকাত আদায় হবে না। যেহেতু মালের কোন অংশ তাকে দেয়া হয়নি বরং  উপকার ভোগের মালিক করা হয়েছে মাত্র। 33[33] (দুররূল মুখতার)।

মাস‘আলা নং-৪: স্বত্বাধিকার অর্পনে এটাও আবশ্যক যে, এমন লোককে দিবে যে গ্রহণ করতে জানবে, এমন যেন না হয় যে নিক্ষেপ করবে, বা প্রতারিত হবে, অন্যথায় আদায় হবে না। যেমন একেবারে ছোট ছেলে বা পাগলকে দেয়া হলে, আর ছেলের যদি এতটুকু জ্ঞান না থাকে তাহলে তার পক্ষ থেকে তার অভাবী গরীব পিতা বা যার তত্ত্বাবধানে রয়েছে সে গ্রহণ করবে।[34]34 (দুররূল মুখতার, রদ্দুল মুহতার)


[1] . ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/১০৬ পৃ. হা/১৪০৩, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ১৪/২৯৮ পৃ. হা/৮৬৬১, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/১৩৬ পৃ. হা/৭২২৩, সুনানে নাসাঈ, ৫/৩৯ পৃ. হা/২৪৮২, বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৪৭৮ পৃ. হা/১৫৬০, তিবরিযি, মিশকাত, ৫/৪৭৮ পৃ. হা/১৫৬০, মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব. ১/৩০৭ পৃ. হা/১১৩৮

[2]. ইমাম ইবনে মাযাহ (রহঃ) সহ অন্যান্য ইমামগণ সংকলন করেন-

عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، عَنْ رَسُولِ اللهِ – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: مَا مِنْ أَحَدٍ لَا يُؤَدِّي زَكَاةَ مَالِهِ، إِلَّا مُثِّلَ لَهُ يَوْمَ الْقِيَامَةِ شُجَاعًا أَقْرَعَ، حَتَّى يُطَوِّقَ عُنُقَه ثُمَّ قَرَأَ عَلَيْنَا رَسُولُ اللهِ – صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ – مِصْدَاقَهُ مِنْ كِتَابِ اللهِ تَعَالَى: {وَلَا يَحْسَبَنَّ الَّذِينَ يَبْخَلُونَ بِمَا آتَاهُمْ اللهُ مِنْ فَضْلِهِ} الْآيَةَ [آل عمران: 180]

-‘‘সাহাবায়ে কিরাম (রাঃ)-এর মধ্যে সবচেয়ে বড় মুফতি, হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, যে ব্যক্তি তার মালের যাকাত আদায় করে না, তার মালকে কিয়ামতের দিন বিষধর সাপে পরিণত করা হবে, এমনকি তা তার গলায় পেচিয়ে দেয়া হবে। এরপর রাসূল (সাঃ)-এর সমর্থনে আল্লাহর কিতাবের নিন্মোক্ত আয়াত আমাদের তিলাওয়াত করে শুনান- ‘‘এবং যারা কার্পণ্য করে ঐ জিনিসের মধ্যে, যা আল্লাহ তাদেরকে আপন করূণায় দান করেছেন, তারা কখনো যেন সেটাকে নিজের জন্য মঙ্গলজনক মনে না করে’’ (সূরা আলে-ইমরান, আয়াত নং-১৮০)।’’ (সুনানে ইবনে মাযাহ, ৩/৬ পৃ. হা/১৭৮৪, ইমাম হুমাইদী, আল-মুসনাদ, ১/২০৫ পৃ. হা/৯৩, সুনানে ইবনে মাযাহ, ৫/৮২ পৃ. হা/৩০১২, তিনি বলেন- هَذَا حَدِيثٌ حَسَنٌ صَحِيحٌ -‘‘এ হাদিসটি হাসান, সহীহ।’’)

[3] . ইমাম বায্যার, আল-মুসনাদ, ১৩/১৫৪ পৃ. হা/৭৭২০

[4] . ক. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ২/৬৮০ পৃ. হা/৯৮৭

     খ. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৮/৩৮৩ পৃ. হা/৮৯৪৫

     গ. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/২০০ পৃ. হা/৭৪১৮

     ঘ. ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৪৮০ পৃ. হা/১৫৬২

     ঙ. ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৪ পৃ. হা/১১২৬

     চ. মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/৩০২ পৃ. হা/১৫৭৯৫

     ছ. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৫৫ পৃ. হা/১৭৭৩, পরিচ্ছেদ: كتاب الزَّكَاة

[5] . ইমাম বুখারী (রহঃ) হাদিসটি এভাবে সংকলন করেন-

عَنْ أَبِي ذَرٍّ ؓ، قَالَ: انْتَهَيْتُ إِلَى النَّبِيِّ ﷺ قَالَ: وَالَّذِي نَفْسِي بِيَدِهِ – أَوْ: وَالَّذِي لاَ إِلَهَ غَيْرُهُ، أَوْ كَمَا حَلَفَ – مَا مِنْ رَجُلٍ تَكُونُ لَهُ إِبِلٌ، أَوْ بَقَرٌ، أَوْ غَنَمٌ، لاَ يُؤَدِّي حَقَّهَا، إِلَّا أُتِيَ بِهَا يَوْمَ القِيَامَةِ، أَعْظَمَ مَا تَكُونُ وَأَسْمَنَهُ تَطَؤُهُ بِأَخْفَافِهَا، وَتَنْطَحُهُ بِقُرُونِهَا، كُلَّمَا جَازَتْ أُخْرَاهَا رُدَّتْ عَلَيْهِ أُولاَهَا، حَتَّى يُقْضَى بَيْنَ النَّاسِ

-‘‘হযরত আবূ যার (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর কাছে গেলাম। তিনি বললেন, কসম সেই সত্তার যাঁর হাতে আমার প্রাণ (বা তিনি বললেন) কসম সেই সত্তার, যিনি ছাড়া কোন ইলাহ নেই, অথবা অন্য কোন শব্দে শপথ করলেন, উট, গরূ বা বকরী থাকা সত্বেও যে ব্যক্তি এদের হক আদায় করেনি সেগুলো যেমন ছিল তার চেয়ে বৃহদাকার ও মোটা তাজা করে কিয়ামতের দিন উপস্থিত করা হবে এবং তাকে পদপিষ্ট করবে এবং শিং দিয়ে গুঁতো দিবে। যখনই দলের শেষটি চলে যাবে তখন পালাক্রমে আবার প্রথমটি ফিরিয়ে আনা হবে। মানুষের বিচার শেষ না হওয়া পর্যন্ত তার সাথে এরূপ চলতে থাকবে।’’ (ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/১১৯ পৃ. হা/১৪৬০, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৪৭৭ পৃ. হা/১৫৫৯)

[6] . ক. ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৯/৯৩ পৃ. হা/৭২৮৪

     খ. ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ১/৫১ পৃ. হা/২০

     গ. ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ১/২৮৮ পৃ. হা/৯৪১

     ঘ. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/১৯১ পৃ. হা/৭৩৭৭

     ঙ. তিরমিযি, আস-সুনান, ৪/২৯৯ পৃ. হা/২৬০৭

     চ. ইমাম ইবনে হিববান, আস-সহীহ, ১/৪৫০ পৃ. হা/২১৭

     ছ. ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৫/১৪ পৃ. হা/২৪৪৩

     জ. ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ২/৯৩ পৃ. হা/১৫৫৬

[7] . ক. ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ২/১২৬ পৃ. হা/১৬৬৪

     খ. ইমাম হাকেম, আল-মুসত্মাদরাক, ১/৫৬৭ পৃ. হা/১৪৮৭

     গ. ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/১৪০ পৃ. হা/৭২৩৫

     ঘ. ইমাম আবি ইয়ালা, আল-মুসনাদ, ৪/৩৭৮ পৃ. হা/২৪৯৯

     ঙ. ইমাম আহমদ, ফাযায়েলস সাহাবা, ১/৩৭৪ পৃ. হা/৫৬০

     চ. ইবনে আছির, জামেউল উসূল, ৬/৩০২ পৃ. হা/৬৫৩

     ছ. খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৫৯ পৃ. হা/১৭৮১, পরিচ্ছেদ: كتاب الزَّكَاة

[8] . ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/২৬৮ পৃ. হা/৭৬৬৬, শুয়াবুল ঈমান, ৫/১৬৬ পৃ. হা/৩২৪৬, আল-মা‘রিফাতুল সুনানি ওয়াল আছার, ৬/১৮৩ পৃ. হা/৮৪২৪, আস-সুনানুস সুগড়া, ২/৮২ পৃ. হা/১২৮৯, মুসনাদে শাফেয়ী, হা/৬০৭, ইমাম ক্বাদাঈ, মুসনাদিশ শিহাব, ২/১০ পৃ. হা/৭৮১, ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ৫/৪৮২ পৃ. হা/১৫৬৩, ইমাম ইবনে আদি, আল-কামিল, ৭/৪৩২ পৃ. ক্রমিক. ১৬৮২, ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/৩০৬ পৃ. হা/১৫৮১০, আল্লামা মানাভী লিখেন-  باسناد ضَعِيف-‘‘হাদিসটির সনদ দুর্বল।’’ (আল্লামা মানাভী, তাইসির বিশারহে জামেউস সাগীর, ২/৩৪৮ পৃ.) তিনি এ হাদিসটিকে ‘মুহাম্মদ বিন উসমান বিন ছাফওয়ান’ নামক রাবী সনদে থাকার কারণে যঈফ বলেছেন। (মানাভী, ফয়যুল ক্বাদীর, ৫/৪৪৩ পৃ.) কিন্তু আসলে বিষয়টি তা নয়, শুধু একজন মুহাদ্দিস তাকে যঈফ বলেছেন। (যাহাবী, তারিখুল ইসলাম, ৪/৯৬৩ পৃ. ক্রমিক. ৩২৩) কিন্তু ইমাম ইবনে হিববান (রহঃ) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন। (ইমাম ইবনে হিববান, কিতাবুস সিকাত, ৭/৪২৪ পৃ. ক্রমিক.১০৭২৮) তাই হাদিসটি কমপক্ষে হাদিসটি ‘হাসান’।

[9] . ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৯ পৃ. হা/১১৪৩

[10] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/২৬ পৃ. হা/৪৫৭৭ এবং ৭/৪০ পৃ. হা/৬৭৮৮, ইমাম মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/৩০৬ পৃ. হা/১৫৮১১, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৯ পৃ. হা/১১৪৫, তিনি বলেন- رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ فِي الْأَوْسَط وَرُوَاته ثِقَات-‘‘হাদিসটি তাবরানী তার মু‘জামুল আওসাত নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন, আর বর্ণনাকারীগণ সকলেই বিশ্বসত্ম।’’

[11] . ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৮ পৃ. হা/১১৪১ এবং হা/১১৪৩, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১/৩১ পৃ. হা/৩৪, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, ফতহুল কাবীর, হা/১০৫৯০, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/৩০৬ পৃ. হা/১৫৮০৭

[12] . ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ২/৬৯০ পৃ. হা/৯৯২,

[13] . ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, ২/৬৯০ পৃ. (৩৫) হা/৯৯২

[14] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৪/৪৮ পৃ. হা/৩৫৭৯ এবং মু‘জামুস সগীর, ১/২৭৫ পৃ. হা/৪৫৩, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬২ পৃ. হা/৪৩২৪, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৬ পৃ. হা/১১৩০, তিনি বলেন-

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيّ فِي الْأَوْسَط وَالصَّغِير وَقَالَ تفرد بِهِ ثَابت بن مُحَمَّد الزَّاهِد

قَالَ الْحَافِظ وثابت ثِقَة صَدُوق روى عَنهُ البُخَارِيّ وَغَيره وَبَقِيَّة رُوَاته لَا بَأْس بهم

-‘‘ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু’জামুল আওসাত নামক কিতাবে বর্ণনা করেন, এবং তিনি বলেন, এটি একক সাবিত ইবনে মুহাম্মদ জাহেদ বর্ণনা করেছেন, ইমাম হাফেয (রহঃ) বলেন, রাবী সাবেত নির্ভরযোগ্য, সত্যবাদী, তার থেকে ইমাম বুখারী (রহঃ)সহ আরও অনেকে বর্ণনা করেছেন, অন্যান্য বর্ণনাকারীদের মধ্যে কোন অসুবিধা নেই।’’ (ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৬ পৃ. হা/১১৩০) তাই আহলে হাদিস আলবানীর তামামুল মিন্নাহ নামক কিতাবে একে যঈফ বলার কোন ভিত্তি নেই।

[15] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/১০৭ পৃ. হা/৪৮১৩ এবং মু‘জামুস সগীর, ২/১৩ পৃ. হা/৬৯৩, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬২ পৃ. হা/৪৩২৫, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৬ পৃ. হা/১১৩৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/৩১০ পৃ. হা/১৫৮২২, ইমাম হাইসামী (রহঃ) বলেন-

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الصَّغِيرِ وَالْأَوْسَطِ، وَفِيهِ الْحَارِثُ بْنُ النُّعْمَانِ، وَهُوَ ضَعِيفٌ.

-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু’জামুস সাগীর নামক কিতাবে এবং মু’জামুল আসাত নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন। সনদে হারেস ইবনে নু’মান নামক রাবী রয়েছেন, তিনি দুর্বল রাবী।’’ তবে আল্লামা মুগলতাঈ (রহঃ) লিখেন- وأبو حاتم بن حبان في جملة الثقات. -‘‘ইমাম আবু হাতেম ইবনে হিববান (রহঃ) তাকে নির্ভরযোগ্য বলে গন্য করেছেন। (আল্লামা মুগলতাঈ, ইশমালু তাহযিবুল কামাল, ৩/৩২২ পৃ. ক্রমিক. ১১১৩) এছাড়াও ইমাম ইবনে হিববান (রহঃ) তাকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন বিষয়টি মশহুর। (ইমাম ইবনে হিববান, কিতাবুস সিকাত, ৪/৩৫ পৃ. ক্রমিক. ২১৫৮)

[16] . সহীহ ইবনে খুজায়মা, ২/১০৭৩ পৃ. হা/২২৪৯, ইমাম ইবনে আবি শায়বাহ, আল-মুসান্নাফ, ৭/২৬৮ পৃ. হা/৩৫৯৬৯

[17] .ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০৮ পৃ. হা/১১৩৯, ইমাম আহমদ (রহঃ) এভাবেও আরেকটি সূত্র সংকলন করেন-

عَنْ زِيَادِ بْنِ نُعَيْمٍ الْحَضْرَمِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ ﷺ : أَرْبَعٌ فَرَضَهُنَّ اللهُ فِي الْإِسْلَامِ، فَمَنْ جَاءَ بِثَلَاثٍ، لَمْ يُغْنِينَ عَنْهُ شَيْئًا، حَتَّى يَأْتِيَ بِهِنَّ جَمِيعًا الصَّلَاةُ، وَالزَّكَاةُ، وَصِيَامُ رَمَضَانَ، وَحَجُّ الْبَيْتِ

-‘‘হযরত যিয়াদ ইবনে নুয়াইম হাদ্বরামী (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (সাঃ) ইরশাদ করেন, আল্লাহপাক ইসলামে চারটি জিনিস ফরজ করেছেন, যে ব্যক্তি এর মধ্যে তিনটি আদায় করবে, তা তার কোন কাজেই আসবে না, যতক্ষণ না চারটি যথাযথভাবে আদায় কারা হয়, সালাত, যাকাত, রমজানের রোজা, বায়তুল্লাহ শরীফের হজ্জ।’’ (ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/২১৬ পৃ. হা/৮২২, ইমাম আহমদ, আল-মুসনাদ, ২৯/৩২৮ পৃ. হা/১৭৭৮৯, ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ, ৩/৫১ পৃ. হা/৩১৮৪, হাদিসটি মুরসাল এবং ‘হাসান’ পর্যায়ের।)

[18] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১০/১০৩ পৃ., হা/১০০৯৫, ইমাম আজরী, আশ-শারি‘আ, ২/৫৯২ পৃ. হা/২২৫, ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬২ পৃ. হা/৪৩২৯, তিনি বলেন-

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَلَهُ إِسْنَادٌ صَحِيحٌ.

-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু’জামুল কাবীর নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন, সনদটি সহীহ।’’

[19] . ইমাম মুসলিম, আস-সহীহ, হা/২৫৮৮, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/২৪৩৮, ৫/২০৫ পৃ. হা/৫০৯২

[20] . ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ৫/৬ পৃ. হা/৩৬৬৬, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/২৪৮০, মুয়াত্তায়ে মালেক, ৩/৬৬৭ পৃ. হা/১৭০০ (আজমী সম্পাদিত), সুনানে নাসাঈ, ৪/১৬৮ পৃ. হা/২২৩৮, সুনানে তিরমিযি, ৬/৫৫ পৃ. হা/৩৬৭৪, সহীহ মুসলিম, ২/৭১১ পৃ. পরিচ্ছেদ: (২৭): بَابُ مَنْ جَمَعَ الصَّدَقَةَ، وَأَعْمَالَ الْبِرِّ , ইমাম বাগভী, শরহে সুন্নাহ, হা/১৬৩৫, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ১১/৫৪৭ পৃ. হা/৩২৫৬৬, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৯২ পৃ. হা/১৮৯০, পরিচ্ছেদ: بَاب فضل الصَّدَقَة ,

[21] . ইমাম বুখারী, আস-সহীহ, ২/১০৮ পৃ. হা/১৪১০ এবং হা/৭৪৩০, মুসনাদে আহমদ, ১৪/১১৫ পৃ. হা/৮৩৮১, বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/২৯৫ পৃ. হা/৭৭৪৬, সহীহ ইবনে হিববান, হা/৩৩১৯, খতিব তিবরিযি, মিশকাত, ১/৫৯২ পৃ. হা/১৮৮৮, পরিচ্ছেদ: بَاب فضل الصَّدَقَة , ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ২/৩ পৃ. হা/১২৬৩, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/৩৫২ পৃ. হা/১৬০২০

[22] . সুনানে নাসাঈ, ৫/৮ পৃ. হা/২৪৩৮, পরিচ্ছেদ: بَابُ وُجُوبِ الزَّكَاةِ এবং আস-সুনানুল কোবরা, ৩/৬ পৃ. হা/২২৩০, সহীহ ইবনে খুজায়মা, হা/৩৩৫, সহীহ ইবনে হিববান, হা/১৭৪৮, ইবনে আছির, জামেউল উসূল, হা/৭২৮৪, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/১৪৬ পৃ. হা/৫৩৫

[23] . ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬৩ পৃ. হা/৪৩৩২, তিনি বলেন-

رَوَاهُ أَحْمَدُ، وَالطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَرِجَالُهُ رِجَالُ الصَّحِيحِ.

-‘‘ইমাম আহমদ (রহঃ) ও ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু‘জামুল আওসাত নামক কিতাবে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, সনদের সমসত্ম রাবী সহীহ বুখারীর ন্যায়।’’ ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/২৯৯ পৃ. হা/১১০৪, পরিচ্ছেদ: كتاب الصَّدقَات التَّرْغِيب فِي أَدَاء الزَّكَاة وتأكيد وُجُوبهَا , তিনি বলেন- رَوَاهُ أَحْمد وَرِجَاله رجال الصَّحِيح -‘‘ইমাম আহমদ (রহঃ) হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আর সনদের সমসত্ম রাবী সহীহ বুখারীর ন্যায়।’’ ইমাম হাকেম, আল-মুসত্মাদরাক, ২/৩৯২ পৃ. হা/৩৩৭৪, তিনি বলেন- هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ الشَّيْخَيْنِ وَلَمْ يُخْرِجَاهُ -‘এ হাদিসটির সনদ শাইখাইনের শর্তানুসারে সহীহ, যদিওবা তাঁরা সংকলন করেননি।’’ ইমাম যাহাবী (রহঃ)ও তাঁর সাথে একমত পোষণ করেছেন। মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/২৯৪ পৃ. হা/১৫৭৬৯

[24] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৮/৩৮০ পৃ. হা/৮৯৩৭, ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/২০ পৃ. হা/৩০৩৮, ইমাম ক্বাদাঈ, মুসনাদিশ শিহাব, ১/১৮৩ পৃ. হা/২৭০, ইমাম ইবনে কাসির, জামেউল মাসানীদ ওয়াল সুনান, ৯/২৯৪ পৃ. হা/১১৮৭৯, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/২৯৩ পৃ. হা/১৫৭৫৮, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬২ পৃ. হা/৪৩২৭, ইমাম হাইসামী (রহঃ) বলেন-

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ وَالْأَوْسَطِ، وَرِجَالُهُ مُوَثَّقُونَ ; إِلَّا أَنَّ بَقِيَّةَ مُدَلِّسٌ، وَهُوَ ثِقَةٌ.

-‘‘হাদিসটি ইমাম তাবরানী (রহঃ) তাঁর মু’জামুল কাবীর এবং আওসাত নামক কিতাবে বর্ণনা করেন, সনদের সকল রাবী নির্ভরযোগ্য, কেবল রাবী বাকিয়্যাহ নামক ব্যক্তি ছাড়া, তিনি মুদালিস্নস (তাদলীসকারী), তবে তিনি নির্ভরযোগ্য।’’ আহলে হাদিস আলবানী সনদে থাকা ‘দাহ্হাক ইবনে হামরাহ’ নামক রাবীকে দুর্বল আখ্যা দিয়ে এই হাদিসকে যঈফ বলেছেন। (আলবানী, সিলসিলাতুল দ্বঈফাহ, ১১/১১৩ পৃ. হা/৫০৬৮) আল্লামা মুগলতাঈ (রহঃ) এ সনদের ধারাবাহিতকা সম্পর্কে বলেন-

قال ابن زنجويه في كتاب الترغيب ….: وكان الضحاك ثقة في الحديث،

-‘‘ইমাম ইবনে যানযুওয়াই (রহঃ) তাঁর কিতাবুল তারগীব নামক কিতাবে বলেন, রাবী যাহ্হাক হাদিস বর্ণনার ক্ষেত্রে নির্বরযোগ্য।’’ (আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৭/১৩ পৃ. ক্রমিক. ২৫৩৮) তিনি আরও উলেস্নখ করেন-

ولما ذكره ابن شاهين في  الثقات قال: وثقه إسحاق بن راهويه.

-‘‘ইমাম ইবনে শাহীন (রহঃ) তাকে নির্ভরযোগ্য রাবীদের মধ্যে গণ্য করেছেন। এবং ইমাম ইসহাক ইবনে রাহুওয়াই (রহঃ)ও তাকে নির্ভরযোগ্য বলেছেন।’’ (আল্লামা মুগলতাঈ, ইকমালু তাহযিবুল কামাল, ৭/১৫ পৃ. ক্রমিক. ২৫৩৮) ইমাম হাইসামী (রহঃ) উক্ত রাবী সম্পর্কে এক হাদিসের তাহকীকে লিখেন-

وَذَكَرُهُ ابْنُ حِبَّانَ فِي الثِّقَاتِ.

-‘‘ইমাম ইবনে হিববান (রহঃ) তাঁকে সিকাহ রাবীর তালিকায় স্থান দিয়েছেন।’’ (ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ২/১৭৪ পৃ. হা/৩০৬১) এ হাদিসটির সনদের মান কমপক্ষে ‘হাসান’।

[25] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ৫/১৫৪ পৃ. হা/৪৯২৫

[26] . ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬২ পৃ. হা/৪৩২৬, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০১ পৃ. হা/১১১৩

[27] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১২/৪২৩ পৃ. হা/১৩৫৬১, ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬৫ পৃ. হা/৪৩৪৫, তিনি বলেন-

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْكَبِيرِ، وَفِيهِ يَحْيَى بْنُ عَبْدِ اللهِ الْبَابُلُتِّيُّ، وَهُوَ ضَعِيفٌ.

-‘‘হাদিসটির সনদে ইয়াহইয়া ইবনে আব্দুল্লাহ নামক একজন রাবী রয়েছেন, তিনি দুর্বল।’’ তবে ইমাম যাহাবী (রহঃ) তাঁর এক কিতাবে উক্ত রাবী সম্পর্কে উলেস্নখ করেন-

وقال ابن عدي: له أحاديث صالحة

-‘‘ইমাম ইবনে আদী (রহঃ) বলেন, উক্ত রাবীর অনেক হাদিস রয়েছেন সঠিক।’’ (ইমাম যাহাবী, মিযানুল ইতিদাল, ৪/৩৯০ পৃ. ক্রমিক. ৯৫৬৩) আসল কথা হলো তার হাদিস সহীহ বুখারীতে তালীক সূত্রে বর্ণিত আছে। (ইমাম যাহাবী, দিওয়ানুল দ্বুআফা, ১/৪৩৫ পৃ. ক্রমিক.৪৬৫৪) সব মিলিয়ে হাদিসটি কমপক্ষে ‘হাসান’ বলে বুঝা যায়।

[28] . ইমাম আবু দাউদ, কিতাবুল মারাসীল, ১/১২৭ পৃ. হা/১০৫, ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ২/২৭৪ পৃ. হা/১৯৬৩, শাজারী, তারতিবুল আমালী, হা/১০৩২, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/২৯৩ পৃ. হা/১৫৭৬০, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০১ পৃ. হা/১১১২, পরিচ্ছেদ: كتاب الصَّدقَات التَّرْغِيب فِي أَدَاء الزَّكَاة وتأكيد وُجُوبهَا, ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাহানী (রহঃ) হাদিসটির মারফু আরেকটি সূত্র এভাবে উলেস্নখ করেন-

عَنِ الْأَسْوَدِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُودٍ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَصِّنُوا أَمْوَالَكُمْ بِالزَّكَاةِ وَدَاوُوا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ وَأَعِدُّوا لِلْبَلَاءِ الدُّعَاءَ

-‘‘তাবেয়ী হযরত আসওয়াদ (রহঃ) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, প্রিয়নবী ﷺ ইরশাদ করেন, যাকাত আদায় করে স্বীয় সম্পদকে সুদৃঢ় দূর্গে সংরক্ষিত করো, সাদকা দানের মাধ্যমে স্বীয় রোগীদের সেবা করো, অবতীর্ণ বিপদপদ দূরীকরণার্থে দোয়া ও বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করো।’’ (ইমাম আবু নুয়াইম ইস্পাজানী, হিলইয়াতুল আউলিয়া, ২/১০৪ পৃ. এবং ৪/২৩৭ পৃ., ইমাম তাবরানী, কিতাবুদ দোয়া, ১/৩৫ পৃ. হা/৪৮ এবং ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১০/১২৮ পৃ. হা/১০১৯৬, ইমাম ক্বদাঈ, মুসনাদিশ শিহাব, ১/৪০১ পৃ. হা/৬৯১, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/২৯৩ পৃ. হা/১৫৭৫৯, ইমাম হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬৩ পৃ. হা/৪৩৩৬, ইমাম বায়হাকী (রহঃ) হাদিসটির মারফু আরেকটি যঈফ সনদ এভাবে উলেস্নখ করেন-

عَنْ أَبِي أُمَامَةَ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَصِّنُوا أَمْوَالَكُمْ بالزَّكاةِ، وَدَاوُوا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ، وَاسْتَقْبِلُوا أَمْوَاجَ الْبَلَاءِ بِالدُّعَاءِ

-‘‘হযরত আবূ উমামাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, প্রিয়নবী ﷺ ইরশাদ করেন, যাকাত আদায় করে স্বীয় সম্পদকে সুদৃঢ় দূর্গে সংরক্ষিত করো, সাদকা দানের মাধ্যমে স্বীয় রোগীদের সেবা করো, অবতীর্ণ বিপদপদ দূরীকরণার্থে দোয়া ও বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করো।’’ (ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/১৮৪ পৃ. হা/৩২৭৯) তিনি হাদিসটির মারফু আরেকটি যঈফ সনদ এভাবে উলেস্নখ করেন-

مُطَرِّفُ بْنُ سَمُرَةَ بْنِ جُنْدُبٍ، عَنْ أَبِيهِ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: حَصِّنُوا أَمْوَالَكُمْ بالزَّكاةِ، وَدَاوُوا مَرْضَاكُمْ بِالصَّدَقَةِ، وَرُدُّوا نائبَةَ الْبَلَاءِ بِالدُّعَاءِ

-‘‘তাবেয়ী হযরত মুতাররিফ ইবনে সামুরা ইবনে জুনদুব (রহঃ) হতে বর্ণিত। তিনি তাঁর পিতা হযরত সামুরা ইবনে জুনদুব (রাঃ) হতে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, প্রিয়নবী ﷺ ইরশাদ করেন, যাকাত আদায় করে স্বীয় সম্পদকে সুদৃঢ় দূর্গে সংরক্ষিত করো, সাদকা দানের মাধ্যমে স্বীয় রোগীদের সেবা করো, অবতীর্ণ বিপদপদ দূরীকরণার্থে দোয়া ও বিনয়ের সাথে আল্লাহর নিকটে সাহায্য প্রার্থনা করো।’’ (ইমাম বায়হাকী, শুয়াবুল ঈমান, ৫/১৮৪ পৃ. হা/৩২৮০)

[29] . ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ২/১৬১ পৃ. হা/১৫১৭৯, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/২৯৭ পৃ. হা/১৫৭৭৮, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০১ পৃ. হা/১১১১, হাইসামী, মাযমাউয-যাওয়াইদ, ৩/৬৩ পৃ. হা/৪৩৩৪, তিনি বলেন-

رَوَاهُ الطَّبَرَانِيُّ فِي الْأَوْسَطِ، وَإِسْنَادُهُ حَسَنٌ،

-‘‘ইমাম তাবরানী (রহঃ) তার মু‘জামুল আওসাতে হাদিসটি বর্ণনা করেছেন, আর সনদটি ‘হাসান’।’’ ইমাম ইমাম খুজায়মা (রহঃ), হাকেম নিশাপুরী (রহঃ)সহ আরও অনেকে এ শব্দে হাদিসটি সংকলন করেছেন-

عَنْ جَابِرِ بْنِ عَبْدِ اللهِ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: إِذَا أَدَّيْتَ زَكَاةَ مَالِكَ فَقَدْ أَذَهَبْتَ عَنْكَ شَرَّهُ.

-‘‘হযরত জাবের ইবনে আব্দুল্লাহ (রাঃ) হতে বর্ণিত। তিনি প্রিয় নবী রাসূলে আরাবী (সাঃ) হতে বর্ণনা করেন, তিনি ইরশাদ করেন, যে নিজের সম্পদের যাকাত আদায় করলো, নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা তার নিকট থেকে সব অনিষ্ঠতা দূর করে নিলো।’’ (ইমাম খুজায়মা, আস-সহীহ, হা/২২৫৮, ইমাম হাকেম, আল-মুসত্মাদরাক, ১/৫৪৭ পৃ. হা/১৪৩৯, ইমাম বায়হাকী, আস-সুনানুল কোবরা, ৪/১৪১ পৃ. হা/৭২৩৮, মুত্তাকী হিন্দী, কানযুল উম্মাল, ৬/২৯৩ পৃ. হা/১৫৭৬২, ইমাম মুনযিরী, তারগীব ওয়াত তারহীব, ১/৩০১ পৃ. হা/১১১১) ইমাম হাকেম (রহঃ) বলেন-

هَذَا حَدِيثٌ صَحِيحٌ عَلَى شَرْطِ مُسْلِمٍ

-‘‘এ হাদিসটি সহীহ মুসলিমের শর্তানুসারে সহীহ।’’

[30] . ইমাম তামরতাশী, তানভিরূল আবসার (দুররূল মুখতারসহ), কিতাবুয যাকাত, ৩/২০৩-২০৬

[31] . আল্লামা মোল্লা নিযামুদ্দীন বলখী, ফাতওয়ায়ে হিন্দিয়া, কিতাবুয যাকাত, ১/১৭০ পৃ. প্রথম পরিচ্ছেদ

[32] . আল্লামা হাসকাফী, দুররূল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ), কিতাবুয যাকাত, ৩/২০৪ পৃ.

[33] . আল্লামা হাসকাফী, দুররূল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ), কিতাবুয যাকাত, ৩/২০৫ পৃ.

[34] . আল্লামা হাসকাফী, দুররূল মুখতার (রদ্দুল মুহতারসহ), কিতাবুয যাকাত, ৩/২০৪ পৃ.

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment