কিতাবঃ ইসলামের মূলধারাঃ (পর্ব ২০) দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা ও আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের তুলনামূলক আলোচনা
আমাদের দেশে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীর অনুসারীগণ খারেজী হিসাবেও পরিচিত। তাদের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো খারেজী মাদ্রাসা’ হিসেবে পরিচিত হয়ে আসছে। আল্লামা শামী রাহমাতুল্লাহি আলাইহিও ওহাবীদেরকে খারেজী ফিরকার দৃষ্টান্ত হিসাবে পেশ করেছেন। বিশুদ্ধ হাদিসে প্রত্যেক যুগে খারেজীদের অনুসারী বাতিল দল থাকবে বলেও উল্লেখ রয়েছে। এদের সর্বশেষ দলটি কানা দাজ্জালের সাথে মিলিত হবে। (হাদিসের আলোকে খারেজী ফিরকা অধ্যায় দেখুন)। শেখ নজদীর জঘন্যতম ভ্রান্ত আক্বীদা খন্ডনে মুসলীম বিশ্বের চল্লিশের অধিক আলেম কলম ধরেছেন। তাদের নাম ও রচিত কিতাবাদীর তালিকা পূর্বে আলোচনা করা হয়েছে। শেখ নজদীর, এসব ভ্রান্ত আক্বীদার সাথে পাক-ভারত উপমহাদেশের ওহাবীদের বেশ মিল রয়েছে। যদিও বা তারা নিজেদের জাতি লুকানোর উদ্দেশ্যে বলে থাকে, আমরা ওহাবী নই। এখানে কি ওহাবী আছে, ওহাবীতো সৌদি আরবে। ইদানিং আবার তারা এটা বলাও বাদ দিয়েছে। কারণ তাদের এ উক্তি যদি নির্ভরযোগ্য সূত্রে আরববিশ্বে পৌছে যায় তাহলে তাদের পেটে বড় ধরেণের আঘাত পড়বে, আর্থিক সাহায্য বন্ধ হয়ে যাবে। বস্তুতঃ তারা শেখ নজদীর আদর্শ প্রচারের নামেই সৌদি আরব সহ আরব বিশ্বের অপরাপর রাষ্ট্রের মোটা অংকের আর্থিক অনুদান লাভ করে আসছে। এতে আরো অধিক সফলতা লাভের উদ্দেশ্যে তারা প্রকাশনার মাধ্যমে শেখ নজদীকে ইসলামের মুজাদ্দিদ (সংস্কারক) ও শাইখুল ইসলাম (ইসলামের ইমাম) ইত্যাদি উপাধিতে ভূষিত করতেও কুষ্ঠিত হচ্ছেনা। চট্টগ্রামস্থ পটিয়া জমিরিয়া মাদ্রাসা থেকে প্রকাশিত মাসিক আততাওহীদ বর্ষ ২৭, সংখ্যা ৮, রবিউচ্ছানি ১৪১৮ হিজরী “ওহাবী কারা” শীর্ষক প্রবন্ধে মুহাম্মদ ইবনে আব্দুল ওহাব নজদীকে অসাধারণ মনিষী, সংস্কারক ও তার আন্দোলন, সংস্কার আন্দোলন হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে। অনুরূপভাবে মৌং মুহাম্মদ সোলতান জৌক সম্পাদিত, আল জামেয়াতুল ইসলামীয়া পটিয়া চট্টগ্রাম) থেকে প্রকাশিত আসসুবহুল জাদীদ (আরবী ত্রৈমাসিক পত্রিকা) ৪র্থ বর্ষ ২য় সংখ্যা রবিউসসানী-রজব ১৪০৪ হিজরী “আন শেখ মুহাম্মদ ইবনে আদুল ওহাব” প্রবন্ধে শেখ নজদীকে হিজরী দ্বাদশ শতাব্দীর মুজাদ্দিদ ও শাইখুল ইসলাম হিসেবে মূল্যায়ন করা হয়েছে । এতে নিশ্চিতভাবে বলা যায়, এরাও নজদীর ভ্রান্ত আক্বীদার অনুসারী বিধায় তারাও ওহাবী ।

শেখ নজদীর ভ্রান্ত আকীদার আলোচনায় তার স্বরপ ফুটে উঠেছে যে, তার সংস্থার আন্দোলনের মৌলিকত্ব ও রূপরেখা কি। তার আন্দোলন দরুদ শরীফ পাঠ, নবী অলীগণের উসিলা, যিয়ারত, শাফায়াতের মত কোরআন সুন্নাহর আলোকে বৈধ প্রমাণিত ও সাওয়াবের বিষয় সমূহের বিরুদ্ধে। পাক-ভারতে ওহাবী মতবাদ প্রচারের লক্ষ্যে প্রতিটি দেওবন্দ মাদ্রাসার সংশ্লিষ্ট আলেমদের লিখনী দ্বারা ওহাবী মতবাদের বেশ বিস্তৃতি ঘটেছে । শেখ নজদীর ভ্রান্ত আক্বীদার সাথে আরো অনেক ভ্রান্ত আকীদার সংযোজন ঘটেছে। দেওবন্দী ওহাবীদের আক্বীদাসমূহ তাদের লিখিত কিতাবাদির নির্ভরযোগ্য উদ্ধৃতির আলোকে উপস্থাপন করছি।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০১

নামাযে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেয়াল ধ্যান গরু-গাধার চেয়ে শতগুণে নিকৃষ্ট; বরং শিরক পর্যায়। (সিরাতে মুস্তাকিম, পৃষ্ঠা ১১৮ কৃত: মেীং ইসমাঈল দেহলভী)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত

নামাযে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং আল্লাহর নেকবান্দার প্রতি সালাম পাঠ করা ওয়াজিব। “তাশাহহুদে” প্রত্যেক মুসল্লিকে বলতে হয়- আসসালামু আলাইকুম আইয়ুহান্নাবীউ ওয়ারাহমাতুল্লাহে ওয়া বারাকাতুহ, আসসালামু আলাইনা ওয়া আলা ইবাদিল্লাহিস সোয়ালেহীন। অতঃপর নবী করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সম্মানিত বংশধরগণের উপর দরুদ পাঠ করা সুন্নাত বিধায় তাদের খেয়াল নিঃসন্দেহে
জায়েয।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০২

শয়তান ও মালাকুল মউতের জ্ঞান-হুযুর করিম সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞানের তুলনায় অধিক। (বারাহীনে কাতেয়া, পৃষ্ঠা ৫১ কৃতঃ মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা আত

সৃষ্টির যে কারো জ্ঞান হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের জ্ঞান থেকে বেশী বলে বিশ্বাস রাখা কুফর। (শেফা-এ কাযী আয়ায)।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৩

হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম উর্দু বলার ক্ষমতা দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে অর্জন করেছেন। (বারাহীনে কাতেয়া পৃষ্ঠা ২৬, মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

আল্লাহ তাআলা সকল ভাষাজ্ঞান হযরত আদম আলাইহিস সালামকে শিক্ষা দিয়েছেন। আর হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর ইলম হযরত আদম আলাইহিস সালামের চেয়ে বেশী। সুতরাং যে ব্যক্তি বলবে যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়া সাল্লামের উর্দু বলার ক্ষমতা দেওবন্দ মাদ্রাসা থেকে অর্জিত, নিঃসন্দেহে সে বেদ্বীন।

★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-০৪

হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দেয়ালের পেছনের ইলমও নেই। (বারাহীনে কাত্বেয়া পৃষ্ঠা ৫১, মৌ খলীল আহমদ আম্বিটভী)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবা কেরামকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আল্লাহর শপথ। নিশ্চয়ই আমি তোমাদের রুকু সিজদা ও তোমাদের অন্তরে আল্লাহর ভয় আছে কিনা তাও দেখি। (বোখারী শরীফ)। সুতরাং হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট দেয়ালের পেছনের ইলম বা জ্ঞান নেই বলা তার মহান মর্যাদার চরম অবমাননা। এটাকে ওহাবীগণ হাদিস হিসেবে উপস্থাপন করতে অপচেষ্টা চালিয়েছেন। এ সম্পর্কে হাদিস বিশারদগণের অভিমত হলো, (ওহাবীদের উক্তিটি) এটা জাল হাদিস। (ম’যুয়াতে কোবরাঃ মোরা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, মাদারেযনবুয়াতঃ শেখ আব্দুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।

★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-০৫

নামাযে “আত্তাহিয়াতু” পড়ার সময় “আসালামু আলাইকা আইয়্যুহান্নাবী” দ্বারা যদি এ সালাম সম্পর্কে নবী হাজের নাযের আছে বলে আক্বীদা পোষণ করে তাহলে শিরক হবে। (বারাহীনে কাতেয়া পৃষ্ঠা ২৪, মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের সালাত-সালাম শুনতে পান এবং তাঁর উত্তর প্রদান করেন। হাদিস শরীফে বর্ণিত আছে, হুযযুর করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, যখন তোমাদের কেউ আমাকে সালাম দাও আল্লাহ আমার মনযোগ ফিরিয়ে দেন। তখন আমি তার সালামের জবাব দিই। (মেশকাত শরীফ)। ইমাম গাযালী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, হে ঈমানদার! আসসালামু আলাইকা আইয়্যহান্নাবী বলার পূর্বে তোমার অন্তরে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপস্থিতি মনে কর। (মেরকাত শরহে মিশকাত, বাবুত তাশহহুদ, মোল্লা আলী ক্বারী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি)।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৬

মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহীর শিষ্য মৌং হসাইন আলী বলেন, আমি স্বপ্নে হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে দেখলাম তিনি আমাকে “পুলসিরাত এর উপর নিয়ে গেলেন। কিছু দূর অগ্রসর হওয়ার পর দেখলাম যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম পুলসিরাত থেকে পড়ে যাচ্ছেন। তখন আমি হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসারামকে নিপতিত হওয়া থেকে বাঁচিয়েছি । (বুলগাতুল জিরান কৃত মৌং হুসাইন আলী, জাআলহক উর্দু পৃষ্ঠা ৪২০)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত

হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনেক গোলাম পুলসেরাতের উপর দিয়ে বিদ্যুৎ গতিতে পার হয়ে যাবে। হুযুর পুলসেরাত থেকে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য দোয়া করবেন। রবে সাল্লিম (হে আল্লাহ,নিরাপদ রাখ)। যে ব্যক্তি বলবে, আমি হুযুরকে পুলসেরাত হতে নিপতিত হওয়া থেকে রক্ষা করছি সে বেঈমান।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৭

অধিকাংশ মানুষ মিথ্যা বলে, আর আল্লাহ যদি বলতে না পারেন তাহলে মানুষের ক্ষমতা খোদার ক্ষমতা থেকে বেড়ে যাবে । (রেসালা-এ-একরোযী কৃত:মৌং ইসমাঈল দেহলভী, দেওবন্দ কা নয়া দ্বীন কৃত: আল্লামা মোস্তাক আহমদ নিযামী পৃষ্ঠা ৬৪ )।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাআত

মিথ্যা নিঃসন্দেহে দোষ, আল্লাহ তা’আলার পবিত্র সত্বা সকল প্রকার দোষ ক্রটি থেকে পৃতঃ পবিত্র। মিথ্যা বলতে না পারা আল্লাহর দূর্বলতা নয় বরং পবিত্রতা। আল্লাহর কুদরাত সম্পর্কে সঠিক ধারণা না থাকাই এসব ভ্রান্ত আক্বীদার কারণ।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৮

হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের যে ইলমে গায়ব আছে এ ধরণের ইলমে গায়ব বা অদৃশ্য জ্ঞান যায়েদ, আমর এবং প্রত্যেক শিশু, পাগল, এমন কি সকল জীব-জন্তুরও আছে। হিফযূল ঈমান কৃতঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী, পৃষ্ঠা ১৬)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

হুযুর সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন গুণকে নিকৃষ্ট বস্তুর সাথে তুলনা করা বা তার সমান বলা তার শানে স্পষ্ট ও চরম অবমাননা; তাই এটা কুফর।
      
★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-০৯

মীলাদ শরীফে কেয়াম করা বেদআত, শিরক। (তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৫২,রেসালা-এ-হাতেফ, পৃষ্ঠা ১০ কৃত; ক্বারী আব্দু রশীদ, বাঁশখালী,চট্টগ্রাম)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

মীলাদ শরীফে নবী করিম সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সমম্মানে কেয়াম করা মুস্তাহাব ও মুস্তাহসান (তাফসীরে রুহুল বয়ান, জা’আল হক ; ইকামাতুল কিয়াম ইত্যাদি)।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১০
          
‎হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বড় ভাইয়ের মতো সম্মান করা উচিত। (তাকবিয়াতুল ঈমান পৃষ্ঠা ৭১, আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত পৃষ্ঠা ৪)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সম্মান করতে হবে মহান আল্লাহর পর সর্বশ্রেষ্ঠ হিসেবে। এ জগতে মানুষের জন্য মাতাপিতা হলেন অন্যান্য সকল আত্মীয় স্বজনের মধ্যে সবচেয়ে অধিক সমানের পাত্র। আর নবীর মর্যাদা মাতা পিতার মর্যাদার তুলনায় অনেক অনেক বেশী। সুতরাং তার সম্মানও করতে হবে অনুরূপ। যদিও আমাদের বুঝানোর জন্য হুযুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, আমি তোমাদের জন্য ঐরূপ, যেরূপ পিতা সন্তানের জন্য। অপরদিকে তার বাণী, “তোমরা তোমাদের প্রতিপাপকের ইবাদত
করো এবং তোমাদের ভাইয়ের সম্মান করো।” (আল হাদিস) । এর ব্যাখ্যায় হাদিস বিশারদগণ বলেছেন, এটা হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নম্রতার বহিঃপ্রকাশ।(আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাত, পৃষ্ঠা -৬১-৬৭)।

★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-১১

যে কোন ব্যক্তি যত বড়ই হোক বা নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেস্তাই হোক আল্লাহর কাছে তাঁর মর্যাদা চামার (জুতা প্রস্তুতকরক ও মেরামতকারী) এর চেয়েও নিকৃষ্ট।(তাকবিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ২৩ কৃতঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী; অনুরূপভাবে উক্ত কিতাবের ৬৬ পৃষ্ঠায় লিখেন, সকল নবী আলাইহিমুস সালাম ও অলীগণ আল্লাহর কাছে অতি ক্ষুদ্র বালি কণা থেকেও নিকৃষ্ট। (নাউযুবিল্লাহ)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

এ ধরনের আক্বীদা কোরআন হাদিসের পরিপন্থী; কারণ, সৃষ্টির মধ্যে শ্রেণী ভেদে অনেক সৃষ্টির আল্লাহর নিকট বিশাল মর্যাদা রয়েছে। নবী, রাসুল, সাহাবা কেরাম, তাবেয়ীন, তাবে তাবেয়ীন, শহীদান, আউলিয়া কেরাম ও ঈমানদারগণ আল্লাহর নিকট মর্যাদা সম্পন্ন। আল্লাহর মহত্ব বর্ণনার এ পদ্ধতি নিঃসন্দেহে বর্জনীয়। কারণ, নবী রাসুলগণের মৰ্যাদা আল্লাহর মহত্বের প্রমাণ। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত, “নিশ্চয়ই তোমাদের মধ্যে ঐ ব্যক্তি সবচেয়ে অধিক সম্মানিত যিনি তোমাদের মধ্যে সবচেয়ে অধিক পরহেযগার।”
অন্যত্র ইরশাদ হচ্ছে –

العزة لله و لرسوله و للمؤمنین

অর্থাৎ সম্মান আল্লাহর, তাঁর রাসুল ও ঈমানদারগণের জন্য। (অল কোরআন)।
বিস্তারিত দেখুন, মুহাম্মদুর রাসুলুল্লাহ কোরআন মে (উর্দু); খোদার ভাষায় নবীর মর্যাদা বাংলা; শানে হাবীবুর রহমান।

আলোচ্য আয়াতে মুত্তাকীর সম্মান বর্ণিত হয়েছে। সুতরাং যিনি যত বেশী মুত্তাকী বা খোদাভীরু হবেন। তিনি আল্লাহর নিকট ততো বেশী সম্মানী হবেন। এ হলো আল্লাহর ঘোষণা। আর ওহাবীদের নেতা মৌং ইসমাঈল দেহলভীর ঘোষনা হলো কোন ব্যক্তি যত বড়ই হোক (নবী অলীগণ) অথবা নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতা আল্লাহর সামনে জুতা প্রস্তুতকারীর চেয়েও নিকৃষ্ট এবং সবচেয়ে ক্ষুদ্র বস্তু থেকেও হীন। (নাউযুবিল্লাহ)।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১২

হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের কোন ক্ষমতা নেই। তিনি দূর থেকে শুনতে পান না। অনুরূপ এ ক্ষমতা কোন অলী বুযুর্গেরও নেই। আছে বলে বিশ্বাস করা শিরক। (তাকবিয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৩২-৩৩ কৃতঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

নবী রাসুলগণের ঈমাম হিসেবে হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের আল্লাহ প্রদত্ত ক্ষমতা রয়েছে। মোজেযা বা অলৌকিক ক্ষমতা। সাধারণ মানুষ কোন মাধ্যম ছাড়া দূর থেকে শুনতে পারেনা। নবীগণ দূর থেকে শুনতে পান। এটা তাদের মোজেযা। হযরত সোলাইমান আলাইহিস সালাম তিন মাইল দূর থেকে শুনতে পান এটা তাঁর কারামাত। হযরত সারিয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহ নেহাবন্দে (মদীনা শরীফ থেকে এক মাসের দূরত্বের জায়গা) যুদ্ধাবস্থায় হযরত ওমর রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মদীনা শরীফ থেকে কৃত হুশিয়ারী
শুনতে পেরেছেন। (শরহে আহাঈদ-এ-নাসাফী)।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৩

বিশুদ্ধ বর্ণনা দ্বারাও মীলাদ মাহফিল করা নাজায়েজ এবং সর্বাবস্থায় নাজায়েয। (ফতোয়া এ রশিদিয়া কৃত: মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী, দেওবন্দী আকাঈদ, পৃষ্ঠা ১৬; আততাহযীরু মিনাল বিদআ কৃত: আবদুল আযীয বিন বা য)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

মীলাদ শরীফ এর মাহফিল জায়েয বরং সাওয়াবের কাজ। হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম স্বয়ং মীলাদ বা তাঁর বেলাদাত শরীফের বর্ণনা করেছেন। তিরমিযী শরীফে মীলাদুন্নবী নামে পৃথক অধ্যায় রয়েছে। মৌং রশিদ আহমদ গাংগুহীর পীর হাজী এমদাদুল্লাহ মোহাজেরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি মীলাদ মাহফিল করতেন এবং এতে কেয়ামও করতেন। আরও বলেছেন যে, আমি এতে সাধ পাই। (ফয়সালাএ-হাফত মাছয়াল)।

★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-১৪

নামাযের পর ইমাম ও মুকতাদি সবাই মিলে হাত তুলে মোনাজাত করা বেদআত। (আহকামুদ্দাওয়াতিল মুরাওয়াজা, পৃষ্ঠা ১০ ও ১১ কৃত: মুফতী ফয়জুল্লাহ হাটহাজারী, চট্টগ্রাম)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

নামাযের পর ইমাম ও মুকতাদি সবাই মিলে হাত তুলে দোয়া করা এবং সম্ভাব্য মুহুর্তে দোয়ার বেলায় হাত তোলা মোস্তাহাব। ( আল মোনাজাত (বাংলা), আত তোহফাতুল মাতলুবা ইত্যাদি)

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৫

খাদ্য সামগ্ৰী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ভাত পূজা, গোমরাহদের কাজ । (রেসালা-এ-হাতেফ, পৃষ্ঠা ১১; তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ৯০ ও ৯৩)।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

খাদ্য সামগ্ৰী সামনে রেখে ফাতেহা পাঠ ও ইসালে সাওয়াব নিঃসন্দেহে জায়েয। খাদ্য সামগ্ৰী সামনে নিয়ে স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম ফাতেহা দিয়েছেন। (বোখারী শরীফ ২য় খণ্ড ও মেশকাত শরীফ)। বিস্তারিত দেখুন কানযুল ইরফান; সুবুতে ফাতেহা ও এসবাতে ফাতেহা উর্দু; দিওয়ানে আযীয ফার্সী; জা’আল হক।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৬

রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুষ্ঠান করা ও রবিউসসানী মাসে গিয়ারবী শরীফ করা বেদআত।

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

রবিউল আউয়াল মাসে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মাহফিল করা নিঃসন্দেহে জায়েয ও সাওয়াবের কাজ। স্বয়ং হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রত্যেক সোমবার দিনকে তাঁর বেলাদাত শরীফের দিন হিসেবে নফল রোযার মাধ্যমে শোকরিয়া আদায় করতেন। (মিশকাত শরীফ ও নাসায়ী শরীফ)। বিস্তারিত দেখুন আদদুররুসসামীন; জা’আল হক, মা ছাবাতা বিসসুন্নাহ; হুসনুল মাযহাদ ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম (বাংলা)। অনুরূপভাবে ‘গিয়ারযী শরীফ’ অর্থাৎ হযুর গাউসে আযম রাহমাতুল্লাহি আলাইহির বার্ষিক ফাতেহা শরীফও জায়েয এবং সাওয়াবের কাজ। (মাছাবাতা বিসসুন্নাহ, কৃত: শেখ আবদুল হক মুহাদ্দিস দেহলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি ।)

★দেওবন্দী ওহাবী আকীদা-১৭
               
হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ‘হাযির-নাযির” মনে করা শিরক। (তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ২৭)

★আক্বায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

হাযির শব্দের অর্থ উপস্থিত আর ‘নাযীর’ শব্দের অর্থ দ্রষ্টা তথা দেখা। পৃথিবীর যে কোন স্থানে হুযুর সাল্লাল্লাহ তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম এখনো উপস্থিত হতে পারেন। এবং সার্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করতে পারেন। অনুরূপভাবে রওজা শরীফে অবস্থান করে উম্মতের যাবতীয় অবস্থা অবলোকন করতে পারেন। এ হলো হাযির-নাযিরের ব্যাখ্যা। নামাযে প্ৰিয় নবী সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে উপস্থিত ব্যক্তির ন্যায়ই সম্বোধন পূৰ্বক সালাম দিতে হয়। এটাও তাঁর অন্যতম প্রমাণ। বিস্তারিত দেখুন কানযুল ইরফান, তাসকীনুল খাওয়াতীর (উর্দু); ফুৃয়ুযুল হারামাইন (উর্দু-আরবী)। কৃতঃ হযরত শাহ ওয়ালিউল্লাহ মুহাদ্দিস দেহলভী
রাহমাতুল্লাহি আলাইহি, জাআল হক (উর্দু ও বাংলা)।

★দেওবন্দী ওহাবী আক্বীদা-১৮

আবদুন্নবী,আলী বখ্শ, হুসাইন বখ্শ, পীর বখশ, মাদার বখশ, গোলাম মুহিউদ্দীন ও গোলাম মুঈন উদ্দীন নাম রাখা শিরক। (তাকবীয়াতুল ঈমান, পৃষ্ঠা ১২)।

★আকায়েদে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত

আবদুন্নবী,আবদুর রাসুল, গোলাম মোস্তফা, আবদুল আলী ইত্যাদি নাম রাখা জায়েয। পবিত্র কোরআনে আল্লাহ তা’আলা হুযুর সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামকে তাঁর উম্মতদের -یا عبادی হে আমার বান্দাগণ! বলে আহবান করতে নির্দেশ দিয়েছেন। বান্দা অর্থ অনুগত। পূর্ণ আয়াত-

قُلْ يَا عِبَادِيَ الَّذِينَ أَسْرَفُوا عَلَى أَنْفُسِهِمْ لا تَقْنَطُوا مِنْ رَحْمَةِ اللَّهِ إِنَّ اللَّهَ يَغْفِرُ الذُّنُوبَ جَمِيعًا إِنَّهُ هُوَ الْغَفُورُ الرَّحِيمُ (53)

অর্থাৎ হে প্রিয় রাসূল! আপনি বলুন, হে আমার ঐসব বান্দাগণ যারা নিজেদের আত্মার উপর সীমাতিক্রম করেছো, তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নৈরাশ হইওনা। (আল কোরআন)
হযরত সৈয়্যদুনা ওমর রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহু মিম্বরে উপবিষ্ট হয়ে খোতবায় বলেছিলেন-

قد کنت مع رسول الله صلی الله علیه وسلم فکنت عبده و خدمه-

অর্থাং আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাথে ছিলাম। আমি তাঁর আবদ অর্থাৎ বান্দা ও খাদেম ছিলাম। এ হাদিসটি হযরত শাহ ওলীউল্লাহ মুহাদ্দদিস দেহলভী রাদিয়াল্লাহু তাআলা আনহুও এযানায়াতুল খাফা নামক কিতাবে বর্ণনা করেছেন। নির্ভরযোগ্য ফিকাহর কিতাব দূররে মোখতারের ভূমিকায় সংকলক বলেন-

فانی ارویه عن شیخنا الشیخ عبد النبی الخلیلی-

অর্থাৎ আমি এটা আমার শেখ আবদুন্নবী খলীলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি থেকে বর্ণনা করেছি। দেওবন্দীদের শাইখুল হিন্দ মৌং মাহমুদুল হাসান দেওবন্দী তার পীর মৌং রশিদ আহমদ গাংগুহীর মৃত্যুতে রচিত ‘মারসীযা়এ রশিদ’ (কবিতা)
নামক কিতাবে লিখেন-
قبولیت اسے کهتے هیں مقبول ایسے هوتے هیں عبید سودکا ان کے لقب هے یوسف ثانی-
অর্থাৎ গ্রহণযোগ্যতা একেই বলে, মাকবুল (আল্লাহর নিকট গ্রহণযোগ্য)এমনিই হয়ে থাকে। যার কালো বান্দাদের উপাধিও ইউসুফে সানী বা দ্বিতীয় ইউসুফ আলাইহিস সালাম। এটাকে গদ্যাকারে লিখলে এভাবেই লিখতে হবে

انکے عبید سودا کا لقب یوسف ثانی هے-

অর্থাৎ মৌং রশিদ আহমদ গাংগুহী আল্লাহর নিকট এমন মকবুল বান্দা যে, তার কালো বান্দাদের উপাধিও দ্বিতীয় ইউসূফ, না জানি তার ফর্সা বান্দাদের উপাধি কি হবে; এখানে عبید শব্দটি এর বহু বচন। এতে প্রমাণিত হলো দেওবন্দীদের মতে আবদুন্নবী শিরক কিন্তু আবদুর রশিদ অর্থাৎ মৌং রশীদ আহমদ গাংওহীর বান্দা বলা শিরক নয়; বরং জায়েয। এটাই হলো তাদের স্বরূপ। (জা’আল হক, উর্দু, পৃষ্ঠা ৭৯ ও ৩৮ ওহাবী চিন্তাধারা (বাংলা)।

দেওবন্দী ওহাবীদের অন্যতম পেশোয়া মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহীর বংশ তালিকায় মৌং ইসমাঈল দেহলভীর ফতোয়ানুসারে কয়েকটি শিরকী নাম বিদ্যমান, তার বংশ তালিকা মৌং রশিদ আহমদ  ইবনে মৌং হেদায়াত আহমদ ইবনে কাযী পীর বখশ ইবনে কাযী গোলাম হাসান ইবনে কাযী গোলাম আলী। মাতার দিকেও অনুরূপ মৌং রশীদ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ করীমুন্নেসা বিনতে ফরীদ বখশ ইবনে গোলাম কাদের মুহাম্মদ সালেহ ইবনে ইবনে গোলাম মুহামদ। (উভয় তালিকায় ছয়টি নামই ইসমাঈল দেহলভীর মতে শিরক)। (তাযকেরাতুর রশীদ ১ম খণ্ড, পৃষ্ঠা১৩; আকাবেরে দেওবন্দ কা তাকফিরী আফসানা, পৃষ্ঠা ১০)।

পাক-ভারত উপ মহাদেশে ওহাবী মতবাদ প্রচারে যারা অগ্রণী ভূমিকা পালন করে, তারা হলেন মৌং কাসেম নানুতভী, প্রতিষ্ঠাতা দেওবন্দ মদ্রাসা, ইউ, পি; মৌং রশীদ আহমদ, মৌং খলীল আহমদ আম্বিটভী, মৌং আশরাফ আলী থানভী ও মৌং ঈসমাঈল দেহলভী।
➖➖➖
ওহাবী মতবাদ প্রচারে রচিত গ্রন্থ সমূহ
১. তাহযীরুন্নাসঃ মৌং কাশেম নানুতভী, প্রতিষ্ঠাতা, দেউবন্দ মাদ্রাসা, ইউ, পি, ভারত

২. ফতোয়া -এ-রশীদিয়াঃ মৌং রশীদ আহমদ গাংগুহী

৩. বারাহীনে কাতিয়াঃ মৌং খলীল আহমদ আম্বেটভী

৪. হিফযুল ঈমানঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী

৫. আল ইফাযাতুল ইয়াওমীয়াঃ মৌং আশরাফ আলী থানভী

৬. তাকবীয়াতুল ঈমানঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী

৭. তাযকীরুল ইখওয়ানঃ মৌং ইসমাঈল দেহলতী

৮. ইযাহুল হকঃ মৌং ইসমাঈল দেহলজী

৯. রেসালা-এ-একরোযীঃ মৌং ইসমাঈল দেহলভী

আকাঈদ পর্বে উপরোল্লেখিত কিতাবগুলোর উদ্ধৃতির আলোকে দেওবন্দী ওহাবীদের ভ্রান্ত আক্বীদাগুলোর উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, এসব কিতাব লিখার পেছনে আসল উদ্দেশ্য কি। তন্মধ্যে মৌং ইসমাঈল দেহলভীর লিখিত তাকবীয়াতুল ঈমান সম্পর্কে স্বয়ং লিখকের মন্তব্য প্রণিধানযোগ্য। মৌং ইসমাঈল দেহলভী তাকবীয়াতুল ঈমান লেখার পর বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের জমায়েত করলেন। তন্মধ্যে সৈয়দ সাহেব, মৌং আবদুল হাই, শাহ ইসহাক, মৌং মুহাম্মদ ইয়াকুব, মৌং ফরিদুদ্দীন মুরাদাবাদী, মোমেন খাঁ, আবদুল্লা খাঁ আলাভী উল্লেখযোগ্য। অতঃপর তাদের সম্মুখে তাকবীয়াতুল ঈমান উপস্থাপন করে বললেন, আমি এ কিতাব লিখেছি এবং আমি জানি যে, এতে কোন কোন স্থানে সামান্য কঠোর ভাষা আরোপিত হয়েছে। আর কোন কোন ক্ষেত্রে বেশ কঠোরতা অবলম্বন করা হয়েছে। যেমন, ঐ সব বিষয় যেগুলো শিরকে খাফী (অস্পষ্ট শিরক) এথলোকে শিরকে জ্বলী (স্পষ্ট শিরক) বলা হয়েছে। এ সব কারণে আমার ভয় হচ্ছে যে, এর প্রকাশনা দ্বারা অবশ্যই (মুসলমানদের মধ্যে) বিশৃংখলা দেখা দেবে। যদি আমি এখানে হিন্দুস্থানে) অবস্থান করতাম তাহলেও আলোচ্য বিষয়গুলো আট-দশ বছরে ধীরে ধীরে বর্ণনা করতাম। কিন্তু এখন আমার হজ্জে গমনের ইচ্ছা। এর প্রকাশনায় বিশৃংখলা দেখা দেবে, কিন্তু আমার বিশ্বাস ঝগড়া বিভেদ হয়ে আপনা আপনি ঠিক হয়ে যাবে। এ হলো আমার ধারণা। যদি আপনারা এটা প্রকাশ করার পক্ষে মত দেন তাহলে প্রকাশ করা হবে, অন্যথায় এটা ছিঁড়ে ফেলা হবে। এতে উপস্থিত একজন বললেন, প্রকাশ তো অবশ্যই হওয়া চাই, কিন্তু কিছু সংশোধন করা উচিত । তখন মৌং আবদুল হাই, শাহ ইসহাক, আবদুল্লাহ খাঁ ও মোমেন খাঁন এ প্রস্তাবের বিরোধীতা করে।বললেন, সংশোধনের প্রয়োজন নেই। অতঃপর পরস্পরের মধ্যে আলোচনার মাধ্যমে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলো যে, “সংশোধনের প্রয়োজন নেই, যেভাবে আছে, সেভাবেই প্রকাশ করা হোক।” অতএব সেভাবেই প্রকাশিত হলো। (হেকায়াতে আউলিয়া পৃষ্ঠা ৮০ ও ৮১ সংকলনে মৌং আশরাফ আলী থানভী ও মৌং কারী মুহাম্মাদ তৈয়ব মুহতামিম দেওবন্দী মাদ্রাসা।)

তাকবীয়াতুল ঈমান যে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির লক্ষ্যে লিখা হয়েছে তাতো উপরোক্ত উদ্ধৃতির আলোকেই প্রমাণিত। বাস্তবিকই তা হয়েছে। কারণ এ কিতাব দ্বারা মুসলমানদেরকে মুশরিক বানানোর পথ সুগম হয়েছে। এতে কোরআন, সুন্নাহ, ইজমা, কেয়াস ও উম্মতের ইমাম মুজতাহিদের মতামতের
আলোকে বৈধ ও সাওয়াব জনক অসংখ্য বিষয়কে স্পষ্ট শিরক ও বিদআত হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে। কোন বৈধ ও সাওয়াবের কাজকে অবৈধ, শিরক, ও বিদআত বললে মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা অবশ্যম্ভাবী। এটাই ভয় করছিলেন স্বয়ং লিখক মৌং ইসমাঈল দেহলভী। এ কারণে সে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তিদের সম্মতিক্রমে কোন প্রকার সংশোধন ছাড়াই উক্ত কিতাব প্রকাশ করেছে। যা মুসলমানদের মধ্যে বিশৃংখলা সৃষ্টির ক্ষেত্রে জঘন্য ভূমিকা পালন করে। তাকবীয়াতুল ঈমানের প্রায় প্রতিটি পৃষ্ঠায় কোরআন-সুন্নাহর আলোকে বিশুদ্ধ প্রমাণিত এমন সব আকীদাকে শিরক ফতোয়া দেয়া হয়েছে। ফলে উক্ত কিতাব প্রকাশিত হবার পর পাক-ভারতের মুসলমানদের মধ্যে বিশৃথলা দেখা দেয়। পক্ষে-বিপক্ষে তর্ক-বিতর্কের অবতারণা হয়। পাক-ভারতে সুন্নী ওলামা কেরাম তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে কলম ধরেন এবং কোরআন-সুন্নাহর সঠিক ব্যাখ্যার আলোকে ওহাবী নেতা মৌং ইসমাইল দেহলভীর দাঁতভাঙ্গা জবাব দেন। উল্লেখ্য যে, তাকবীয়াতৃল ঈমানকে ওহাবী মতবাদের প্রবক্তা মুহাম্মদ ইবনে আবদুল ওহাব নজদীর কিতাবুত তাওহীদ -এর অনুবাদ বললেও অত্যুক্তি হবে না।

★তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে লিখিত কিতাবসমূহের তালিকা

০১. মুঈদুল ঈমানঃ হযরত মাওলানা মাখমুসুল্লাহ, মৌং ইসমাঈল দেহলভীর আত্মীয়।

০২. তাহকীকুল ফতোয়া ফী এবতালিততাগওয়াঃ আল্লামা ফযলে হক খায়রাবাদী, ১৭৫৭ এর আযাদী আন্দোলনের অগ্রদূত (রহ) মৌং ইসমাঈল দেহলভীর সমসাময়িক উভয়ের মধ্যে সমুখ তর্কও হয়েছে

০৩. হুজ্জাতুল আমল ফী এবতালিল হিয়ালঃ হযরত মাওলানা মুহাম্মদ মুসা দেহলভী, মাওলানা মাখমুসুল্লাহর ভাই

০৪. সাইফুল জব্বারঃ হযরত আল্লামা ফযলুর রসুল ওসমানী বাদামুনী, মৌং ইসমাঈল দেহলভীর সমসাময়িক

০৫. তাকদীসুল ওয়াকীল আন তৌহিনির রশীদ ওয়াল খলীলঃ হযরত আল্লামা গোলাম দস্তগীর কসুরী। এতে হারামাঈন শরীফাইন (মকা ও মদীনা শরীফ) এর ওলামা কেরামের অভিমত ও স্বাক্ষর রয়েছে

০৬. আল কাউকাবুশ শাহাবীয়া ফী কুফতীয়াতে আনিল ওহাবীয়াঃ ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহ আলাইহি

০৭. সাললুস সুয়ুফীল হিন্দীয়াঃ ইমাম আহমদ রেযা ফাযেলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

০৮. হসামুল হারামাইন আলা মানহারিল কুফরে ওয়াল মায়নঃ ইমাম আহমদ রেযা খান ফায়েলে বেরলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

০৯. আসসুয়ুফুল বারেকা আলা রুউসিল ফাসেকাঃ হযরত আল্লামা আবদুল্লাহ খোরাসানী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

১০. তানযীহর রহমান আন শায়েবাতিল ফিকরে ওয়ান্নোকসানঃ হযরত আল্লামা আহমদ হাসান কানপুরী খলীফা হযরত খাজা এমদাদুল্লাহ মুহাজিরে মক্কী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

১১. আর রুমহুদায়্যানী আলা রাসুল ওয়াওয়াসিশ শায়তানীঃ হযরত আল্লামা মোস্তফা রেযা খাঁ ইবনে ইমাম আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

১২. শরহুচ্ছুদুর ফী দাফয়ীশশুরুরঃ হযরত আল্লামা মোখলেসুর রহমান ইসলামাবাদী, চট্টগ্রাম

১৩. মীযানে আদালাত ফী এসবাতে শাফায়াতঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ সোলতান কাটকী

১৪. হাদীল মুদিল্লীনঃ হযরত আল্লামা করিমুল্লাহ দেহলভী

১৫. এযালাতুশশাকুকঃ হযরত আল্লামা হাকিম ফখরুদ্দীন ইলাহবাদী

১৬. সহীহুল ঈমানঃ হযরত আল্লামা আহমদ হুসাইন

১৭. শরহে তোহফায়ে মুহাম্মদীয়া ফী রদে ফিরকা-এ মুরতাদ্দিয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ আশরাফ আলী গুলশানাবাদী

১৮. যুলফাকারে হায়দারীয়া আলা আনাকে ওহাবীয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ হায়দার শাহ

১৯. রেসালায়ে তাহকীকে তাওহীদ ও শিরকঃ হযরত আল্লামা হাফেয মুহাম্মদ হাসান পেশোয়ারী

২০. রেসালায়ে হায়াতুন্নবীঃ হযরত আল্লামা শেখ মুহাম্মদ আবেদ সিন্দি

২১. গুলযারে হেদায়াতঃ হযরত আল্লামা মুফতী সিবগাতুল্লাহ, মাদ্রাজ

২২. সালাহুল মোমেনীন ফী কাতয়ীল খারেজীনঃ হযরত আরামা সৈয়দ লুৎফুল হক বাতালতী

২৩. তোহফাতুল মোসলেমীন ফী জানাবে সাইয়্যেদিল মুরসালীনঃ হযরত  আল্লামা আবদুল্লাহ সাহারানপুরী

২৪. রসমূল খায়রাতঃ হযরত আল্লামা খলীলুর রহমান হানাফী মোস্তফাবাদী

২৫. সাবীবুন্নাজাহ ইলা তাহসীলিল ফালাহঃ হযরত আল্লামা তোরাব আলী

২৬. সাফিনাতুন্নাজাতঃ হযরত আল্লামা মৌং মুহাম্মদ আসলামী, মাদ্রাজ

২৭. নেযামুল ইসলামঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ  ওজীহ ছাহেব, মুদাররিস মাদ্রাসা-এ-কলকাতা

২৮. তাম্বিহুদোয়াল্লীন ওয়া হেদায়াতুস সালেহীনঃ দিল্লী ও হারামাইন শরীফাইনের ওলামাকেরামের ফতোয়ার সমষ্টি

২৯. এহকাকুল হকঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ বদরুদ্দীন হায়দরাবাদী

৩০. খায়রুয্যাদ লেইয়াওমিল মাআদঃ হযরত আল্লামা আবুল আলা মুহাম্মদ খায়রুদ্দীন মদ্রাজী

৩১. আল ইত্তেবাহ লে-দাফয়ীল এশতেবাহঃ হযরত আল্লামা মুয়াল্লিম ইব্রাহীম, খতিব বোম্বাই জামে মসজিদ

৩২. সুবহানুসসুবুহু আন আইবে কিবে মাকবুহঃ ইমাম আহমদ রেয়া বেরেলভী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

৩৩. দাফউল বোহতানঃ হযরত আল্লামা মুহাম্মদ ইউনুস

৩৪. হেদায়াতুল মোসলেমীন ইলা তারিকীল হক্বে ওয়াল ইয়াকীনঃ হযরত আল্লামা কাযী মূহাম্মদ হুসাইন কুফী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

৩৫. আফতাবে মুহাম্মদীঃ হযরত আল্লামা ফকীর মুহাম্মদ পাঞ্জাবী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

৩৬. গুফতাগু-এ-জুমাঃ হযরত আল্লামা কাজী ফযল আহমদ সুন্নী, হানাফী

৩৭. মীযানুল হকঃ হযরত আল্লামা কাযী ফজল আহমদ সুন্নী, হানাফী নকশবন্দী

৩৮. আনওয়ারে আফতাবে সাদাকাতঃ হযরত আল্লামা কাযী ফযল আহমদ, হানাফী নকশবন্দী

৩৯. কুওয়াতুল ঈমানঃ হযরত আল্লামা কারামত আলী রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

৪০. আদদুরাবসানীয়া ফীররফে আলাল ওহাবীয়াঃ হযরত আল্লামা সৈয়দ ইবনে যি’নী দাহলান রাহমাতুল্লাহি আলাইহি

পাক-ভারতসহ মুসলিম বিশ্বের অন্যান্য দেশের ওলামা কেরাম তাকবীয়াতুল ঈমানের খন্ডনে কলম ধরেছেন এবং চল্লিশটির মত কিতাব লিখেছেন। উক্ত কিতাব সরলপ্রাণ মুসলমানদের ঈমান-আকীদা ধ্বংসে কত বেশী কার্যকরী তা সহজে অনুমেয়। ঈমান বিধ্বংসী মৌং রশীদ আহমদ গাওগুহীর কিতাবটি সম্পর্কে মন্তব্য হলো “তাকবীয়াতুল ঈমান প্রত্যেকের নিকট রাখা, পড়া ও তার। আমল করাই হচ্ছে সত্যিকার ইসলাম এবং সাওয়াবের কাজ। (ফতোয়া রশিদীয়া ৩য় খণ্ড, পৃষ্ঠা ৫০)। এমনি করেই-ওহাবী আলেমগণ মুসলমানদের মধ্যে ফাটল সৃষ্টি করে আসছে। সহজ সরল মুসলমান ওহাবী-সুন্নী ভেদাভেদকে উড়িয়ে দেয়। তাদের সমীপে একান্ত অনুরোধ, ওহাবী আীদা ও সুন্নী আকীদাকে পাশাপাশি করে বুঝতে চেষ্টা করুন এবং উপস্থাপিত বিষয়গুলো প্রয়োজনে আরো যাচাই দেখুন। অতঃপর নিজ ঈমান-আকীদা রক্ষায় সচেতন হোন যদি কোন ওহাবী আলেম “ওহাবী আকীদা পর্বে” উপস্থাপিত আকীদাসমূহ মিথ্যা ও বলে উড়িয়ে দিতে চায়, তখন তার সাথে আমাদের পক্ষে চ্যালেঞ্জ গ্রহন করুন এবং উদ্ধৃতিতে উল্লেখিত কিতাবসমূহ নিয়ে “মোনাযারার” (সম্মুখ তর্ক) আহবান করুন। তখন যদি সম্মত হয় ভালো; অন্যথায় তাদের ভ্রান্তিতে নিশ্চিত হোন এবং তাদের বাহ্যিক আকর্ষণীয় চাল-চলনের ধোকা থেকে নিজে বাচুন, অপরকেও বাঁচাতে এগিয়ে আসুন । ইসলামের মূলধারা আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আতের। আকীদায় দৃঢ় বিশ্বাস স্থাপন পূর্বক ইসলামী আদর্শে জীবন গড়ায় সচেষ্ট হোন।
➖➖➖
ওহাবী চিহ্নিত করার সহজ উপায়
১. ওহাবীরা ঘন ঘন মাথা মুন্ডায়। উল্লেখ্য যে, ওহাবীদেরকে খারেজীদেরই অনুসারী হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। উপরোল্লেখিত হাদিস শরীফে এটা তাদের উল্লেখযোগ্য চিহ্ন হিসেবে বর্ণিত হয়েছে। শেখ নজদীও তার দলে যোগদান কারীকে মাথামুন্ডাতে নির্দেশ দিত। আরবের যুবাইদ এলাকার প্রখ্যাত মুফতি আল্লামা সৈয়দ আবদুর রহমান বলতেন, ওহাবীদের খন্ডনে কোন কিতাব লেখার প্রয়োজন নেই। তাদের খন্ডনে হাদিস শরীফে বর্ণিত “তাদের নিদর্শন ঘন ঘন মাথা মুন্ডানো ৷” এ উক্তিটিই যথেষ্ট; কারণ অপর কোন বিজাতীয় দলের এ ধরণের অভ্যাস নেই। শেখ নজদী এক মহিলাকে তার অনুসরণে বাধ্য করলে ঐ মহিলা বাধ্য হতে সম্মত হয়। অতঃপর শেখ নজদী তাকে মাথা মুন্ডাতে নির্দেশ দেয়। তখন ঐ মহিলা বলল, আপনি মহিলাকে পর্যন্ত মাথা মুন্ডাতে নির্দেশ দিচ্ছেন, সুতরাং আপনার উচিত পুরুষদেরকে দাড়ি মুন্ডাতে নির্দেশ দেয়া। কারণ, মহিলাদের বেলায় সৌন্দর্যের অন্যতম উপাদান হলো-চুল, আর পুরুষের সৌন্দর্য হলো দাড়ি। তখন শেখ নজদী হতভম্ব হয়ে গেলেন। (ফিতনাতুল ওহাবীয়া, পৃষ্ঠা ৭৭, আদদুরারুসসানীয়া, পৃষ্ঠা ৫০)

২. ওহাবীগণ উচ্চস্বরে, সম্মিলিতভাবে দরুদ সালাম পড়ে না। ওয়ায মাহফিলে শুধুমাত্র বা দু’একবার “দরুদে ইব্রাহিমী” অর্থাৎ নামাযে পঠিত দরুদ শরীফটি পড়ে থাকে। উক্ত দরুদে সালাম না থাকার কারণে নামাযের বাইরে ঐ দরূদ শরীফটি পড়া মাকরুহ। (নববী, শরহে মুসলিম এর ভূমিকা।)  সুন্নী মুসলমানদের তুলনায় ওহাবীরা দরুদ শরীফ পড়ে না বললেও অতুক্তি হবে না। অপরদিকে তারা মাহফিলে অধিক দরূদ শরীফ পড়াকে সময় নষ্ট হিসাবে মূল্যায়ন করে। অথচ অধিক দরূদ শরীফ পাঠ কিয়ামত দিবসে হুযুর পুরনুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের সবচেয়ে নিকটে অবস্থানের একমাত্র উসিলা হিসেবে বর্ণিত হয়েছে।”  (মিশকাত শরীফ)।

৩. ওহাবীগণ আযানের পর হাত তুলে মোনাজাত করে না। অথচ তাদেরই লিখিত “এমদাদুল ফতোয়া” কিতাবে এ মোনাজাত বিশুদ্ধ বলে উল্লেখ রয়েছে।

৪. খাবার পর শোকরানা মোনাজাত করে না।

৫. কোরআন শরীফ পাঠান্তে শুধুমাত্র “সাদাকাল্লাহুল আলিউল আযীম’ বলে থাকে। “ওয়াসাদাকা রাসুলুহুন্নাবীউল করিম” বলে না। অথচ ওহাবীদের প্রকাশিত কোরআন শরীফের শেষেও “ওয়াসাদাকা রাসুলুহুন্নাবীউল করিম” বর্ণিত আছে।

৬. হাটহাজারী পন্থী ওহাবীগণ-পাঁচ ওয়াক্ত ফরয নামাযের পরও মোনাজাত করে না। অবশ্য অন্যান্য ওহাবীগণ ফরয নামাযের পর সম্মিলিতভাবে মোনাজাত করে। হাটহাজারীর মুফতি ফয়জুল্লাহর ফতোয়া খণ্ডন করে কিতাবও লিখা হয়েছে।

৭. তাদের ওয়ায নসিহতে নবী-অলীর শান-মান ও মর্যাদার কোন আলোচনা স্থান পায় না।

৮. শ্লোগানের বেলায় কেবলমাত্র “আল্লাহু আকবর” ধ্বনি উচ্চারণ করে থাকে। নারায়ে রেসালাত-ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলে না। কারণ তাদের মতে “ইয়া রাসুলাল্লাহ” বলা শিরক। (তাকবিয়াতুল ঈমান )।

৯. দাফনের পর “কবরে তালকীন” করে না। অথচ হাদিস শরীফে মৃত বক্তিকে “তালকীন” করার নির্দেশ এসেছে। (ফতোয়া-এ-শামী)।

১০. হুযুর করিম সাল্লাল্লাহু তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের নাম মুবারক সম্মান সূচক শব্দ দ্বারা উল্লেখ করে না। প্রায় সময় এভাবেই বলে থাকে, পয়গম্বর ছাহেব বা আল্লাহর পয়গাম্বর।

নবী করিম সাল্লাল্লাহ তাআলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের মহান শানে ইতিহাসের জঘন্যতম বেয়াদবী
শেখ নজদীর উপস্থিতিতে মদীনা মুনাওয়ারার রওযা শরীফকে লক্ষ্য করে তার জনৈক অনুসারী বলল-

عصای هذا خیر من محمد لانتها ینتفع بها قتل الحیته و نحوها د محمد قد مات و لم یبق فیه انفع اصلا وانما هو طارش و قد مضی-

অর্থাৎ আমার এ লাঠি মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লামের) চেয়ে উত্তম। কেননা এটা সাপ মারতে বা আরও অনেক কাজে উপকারে আসে। আর মুহাম্মদ (সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলাইহি ওয়াসাল্লাম) নিশ্চয়ই মরে গেছেন। তার মধ্যে উপকার করার আদৌ কোন ক্ষমতা নেই। তিনি ছিলেন শুধুমাত্র বার্তাবাহক আর তিনি তো চলেও গেছেন। (আদদুরাসসমানীয়া, পৃষ্ঠা ৪২, আশশেহাবুসসাকিব, পৃষ্ঠা ৪৭; মৌং হোসাইন আহমদ মাদানী দেওবন্দী)

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment