৩৬ – بَابُ مَا جَاءَ فِي التَّشَهُّدِ
১১৭ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ أَبِيْ إِسْحَاقَ، عَنِ الْبَرَاءِ ، عَنِ النَّبِيِّ كَانَ يُعَلِّمُنَا التَّشَهُّدَ كَمَا يُعَلِّمُ السُّوْرَةَ مِنَ الْقُرْآنِ.
বাব নং ৫১. ৩৬. তাশাহহুদের বর্ণনা
১১৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আবু ইসহাক থেকে, তিনি হযরত বারা (رضي الله عنه) থেকে, তিনি নবী করিম (ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন, বারা (رضي الله عنه) বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে এমনভাবে তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন, যেভাবে পবিত্র কুরআনের সূরা শিক্ষা দিতেন।
১১৮ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ: عَلَّمَنَا رَسُوْلُ اللهِ خُطْبَةَ الصَّلَاةِ، يَعْنِيْ: التَّشَهُّدَ.
১১৮. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা কাসেম থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) আমাদেরকে খুৎবাতুস সালাত তথা তাশাহহুদ শিক্ষা দিতেন।
119 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ أَبِيْ وَائِلٍ شَقِيْقِ بْنِ سَلَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا خَلْفَ النَّبِيِّ ، نَقُوْلُ: السَّلَامُ عَلَى اللهِ.
وَفِيْ رِوَايَةٍ زِيَادَةٌ مِنْ عِبَادَةٍ: السَّلَامُ عَلَىٰ جِبرِيْلَ وَمِيْكَائِيْلَ، فَأَقْبَلَ عَلَيْنَا النَّبِيُّ ، فَقَالَ: «إِنَّ اللهَ هُوَ السَّلَامُ، فَإِذَا تَشَهَّدَ أَحَدُكُمْ، فَلْيَقُلْ: التَّحِيَّاتُ لِلهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ، السَّلَامُ عَلَيْكَ أَيُّهَا النَّبِيُّ وَرَحْمَةُ اللهِ وَبَرَكَاتُهُ، السَّلَامُ عَلَيْنَا وَعَلَىٰ عِبَادِ اللهِ الصَّالِحِيْنَ، أَشْهَدُ أَنَّ لَا إِلٰهَ إِلَّا اللهُ، وَأَشْهَدُ أَنَّ مُحَمَّدًا عَبْدُهُ وَرَسُوْلُهُ».
وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّهُمْ كَانُوْا يَقُوْلُوْنَ: السَّلَامُ عَلَى اللهِ، السَّلَامُ عَلَىٰ جِبْرِيْلَ، السَّلَامُ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ: «لَا تَقُوْلُوْا: السَّلَامُ عَلَى اللهِ السَّلَامِ، وَلَكِنْ قُوْلُوْا: التَّحِيَّاتُ لِلهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ..» إِلَىٰ آخِرِ التَّشَهُّدِ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: عَلَّمَنَا. وَفِيْ رِوَايَةٍ: أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ عَلَّمَهُمُ التَّحِيَّاتِ إِلَىٰ آخِرِ التَّشَهُّدِ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: قَالَ: كُنَّا إِذَا صَلَّيْنَا مَعَ النَّبِيِّ ، نَقُوْلُ إِذَا جَلَسْنَا فِيْ آخِرِ الصَّلَاةِ: السَّلَامُ عَلَى اللهِ، السَّلَامُ عَلَىٰ رَسُوْلِ اللهِ، وَعَلَىٰ مَلَائِكَةٍ نُسَمِّيْهِمْ مِنَ الْـمَلَائِكَةِ، فَقَالَ رَسُوْلُ اللهِ : «لَا تَقُوْلُوْا كَذَا، وَقُوْلُوْا: التَّحِيَّاتُ لِلهِ وَالصَّلَوَاتُ وَالطَّيِّبَاتُ ..».
১১৯. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি আবু ওয়ায়েল শকীক ইবনে সালমা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, যখন আমরা নবী করিম (ﷺ) ’র পিছনে নামায আদায় করতাম তখন (তাশাহহুদে) আমরা বলতাম السَّلَامُ عَلَى اللهِ। অন্য এক রেওয়ায়েতে এতটুকু অধিক আছে من عباده السلام على جبريل وميكائيل “আল্লাহর বান্দাদের পক্ষ থেকে জিব্রাইল ও মিকাঈল (عليه السلام)’র উপর সালাম।” তখন রাসূল (ﷺ) আমাদের দিকে লক্ষ্য করে বলেন, আল্লাহ স্বয়ং সালাম, সুতরাং- যখন তোমাদের কেউ তাশাহহুদ পাঠ করবে তখন বলবে-
التحيات لله والصلوة والطيبات السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدًا عبده ورسوله
অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, তিনি তাশাহহুদে বলতেন-السلام على الله السلام على جبريل السلام على رسول الله তখন রাসূল (ﷺ) বলেন, السلام على الله বলো না, বরং বল- التحيات لله والصلوة والطيبات অর্থাৎ সম্পূর্ণ তাশাহহুদ পাঠ কর।
অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ) লোকদেরকে –
التحيات لله والصلوة والطيبات السلام عليك ايها النبى ورحمة الله وبركاته السلام علينا وعلى عباد الله الصالحين اشهد ان لا اله الا الله واشهد ان محمدًا عبده ورسوله
পর্যন্ত তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন।
অন্য এক বর্ণনায় علمنا শব্দ রয়েছে, অর্থাৎ আমাদেরকে শিক্ষা দিয়েছেন।
অপর এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, যখন আমরা নবী করিম (ﷺ) ’র সাথে নামায আদায় করতাম এবং শেষ বৈঠকে বসতাম তখন আমরা বলতাম,
-السلام على الله السلام على رسول الله وعلى ملائكته
এর সাথে ফেরেশতাদের নাম উল্লেখ করতাম। তখন রাসূল (ﷺ) বলেন, এরূপ বলোনা। বরং বল,
– التحيات لله والصلوة والطيبات (বুখারী, ৬/২৬৮৮/৬৯৪৬)
ব্যাখ্যা: বিশজনের অধিক সাহাবায়ে কিরাম থেকে তাশাহহুদের বাক্যসমূহ বর্ণিত আছে। তাশাহহু সর্ম্পকে ইমামদের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) তাশাহহুদ সম্পর্কে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিস গ্রহণ করেছেন। ইমাম শাফেঈ (رحمة الله) হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র এবং ইমাম মালিক (رحمة الله) হযরত ওমর (رضي الله عنه)’র হাদিস গ্রহণ করেছেন। কিন্তু ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিস কয়েকটি কারণে অধিক গ্রহণযোগ্য। আয়িম্মায়ে হাদিস এর বিশুদ্ধতার উপর একমত। ইমাম তিরমিযী (رحمة الله) বলেছেন, তাশাহহুদ সম্পর্কে এটা সবচেয়ে বিশুদ্ধ হাদিস এবং অধিকাংশ আলিম, সাহাবা ও তাবেঈন এর উপর আমল করেছেন। বাযযায (رحمة الله) বলেছেন, তাশাহহুদ সম্পর্কে আমার নিকট হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র হাদিস সর্বাধিক বিশুদ্ধ। ইমাম মুসলিম (رحمة الله) বলেছেন, তাশাহহুদ সম্পর্কে লোকজন হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র হাদিসের উপর ঐকমত্য প্রকাশ করেছেন। তিবরানী বলেছেন, তাশাহহুদ সম্পর্কে এরচেয়ে উত্তম হাদিস আমি শুনিনি।
এছাড়া কয়েকজন সাহাবা তাশাহহুদ সম্পর্কে হযরত ইবনে মাসউদের সমর্থন করেছেন। যেমন:- হযরত আবু বকর (رضي الله عنه) হযরত মুয়াবিয়া (رضي الله عنه) প্রমুখ। অধিকন্তু তাশাহহুদের তালীমের প্রতি অধিক গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। ইমাম হাম্মাদ (رحمة الله) ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র হাত ধরে তাশাহহুদ শিক্ষা দিয়েছেন। ইমাম হাম্মাদের হাত ধরে ইব্রাহীম নখঈ, ইব্রাহীম নখঈর হাত ধরে হযরত আলকামা, হযরত আলকামার হাত ধরে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه), হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র হাত ধরে রাসূল (ﷺ) তাশাহহুদের তালীম দিয়েছেন।
মোটকথা, উপরোক্ত দলীল ও প্রমাণের ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয় যে, তাশাহহুদ সম্পর্কে হযরত ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)’র হাদিস অধিক গ্রহণযোগ্য।
120 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِيْنِهِ: «السَّلَامُ عَلَيْكُمْ وَرَحْمَةُ اللهِ» حَتَّىٰ يُرَىٰ شِقُّ وَجْهِهِ، وَعَنْ يَسَارِهِ مِثْلُ ذَلِكَ. وَفِيْ رِوَايَةٍ: حَتَّىٰ يُرَىٰ بَيَاضُ خَدِّهِ الْأَيْمَنِ، وَعَنْ شِمَالِهِ مِثْلُ ذَلِكَ.
১২০. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) ‘আসসালামু আলাইকুম ওয়া রাহমাতুল্লাহ’ বলে ডান দিকে সালাম ফিরাতেন। ফলে তাঁর পবিত্র গাল দৃষ্টিগোচর হতো। একইভাবে বাম দিকেও সালাম ফিরাতেন।
অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, (সালাম ফিরানোর সময়) তিনি এমনভাবে গর্দান ফিরাতেন যে, এতে তাঁর পবিত্র গালের শুভ্র“তা লক্ষ্য করা যেতো। বাম দিকে সালাম ফিরানোর সময়ও একই অবস্থা হতো। (জামেউল আহাদীস, ৩৭/২১৯/৪০৪৬১)
১২১ – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنِ الْقَاسِمِ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ: كَانَ رَسُوْلُ اللهِ يُسَلِّمُ عَنْ يَمِيْنِهِ، وَعَنْ يَسَارِهِ تَسْلِيْمَتَيْنِ.
১২১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা কাসেম থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ডান ও বাম দিকে দু’সালাম ফিরাতেন।
ব্যাখ্যা: নামায শেষে দু’সালামের ব্যাপারে প্রায় ইমাম ঐকমত্য রয়েছে। কেবল ইমাম মালিক (رحمة الله) এক সালামের পক্ষে মত পোষণ করেন এবং দলীল হিসেবে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه)’র হাদিস পেশ করেছেন- كان يسلم فى الصلوة بتسليمة “রাসূল (ﷺ) নামাযে এক সালাম ফিরাতেন।” এর জবাবে হানাফীগণ বলেন, নবী (ﷺ)’র নামাযের সঠিক অবস্থা পুরুষরা যতটুকু অবগত আছেন। মহিলারা ততটুকু নেই এবং পুরুষদের সবগুলো রেওয়ায়েতে দু’সালামের কথা উল্লেখ রয়েছে।