রুকুন ও হাজরকে চুমো দেওয়া প্রসঙ্গে

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

১২- بَابُ مَا جَاءَ فِيْ اِسْتِلَامِ الرُّكُنِ وَالْـحَجَرِ

٢٤١- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ نَافِعٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، قَالَ: مَا تَرَكْتُ اسْتِلَامَ الْـحَجَرِ مُنْذُ رَأَيْتُ رَسُوْلَ اللهِ  يَسْتَلِمُهُ.

বাব নং ১১০. ১২.  রুকুন ও হাজরকে চুমো দেওয়া প্রসঙ্গে

২৪১. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা নাফে থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, আমি হাজরে আসওয়াদকে চুমো দেওয়া পরিত্যাগ করিনি, যখন থেকে আমি রাসূল (ﷺ) কে চুমো দিতে দেখেছি। 

(নাসাঈ কুবরা, ২/৪০০/৩৯১৭)

ব্যাখ্যা: হাজরে আসওয়াদকে চুমো দেওয়া চার ইমামের মতে সুন্নত। এতে কারো মতবিরোধ নেই।

٢٤٢- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنِ ابْنِ مَسْعُوْدٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  قَالَ: «مَا انْتَهَيْتُ إِلَى الرُّكْنِ الْيَمَانِيِّ إِلَّا لَقِيْتُ عِنْدَهُ جِبْرِيْلَ».

وَعَنْ عَطَاءِ بْنِ أَبِيْ رَبَاحٍ، قَالَ: قِيْلَ: يَا رَسُوْلَ اللهِ! تُكْثِرُ مِنَ اسْتِلَامِ الرُّكْنِ الْيَمَانِيِّ؟ قَالَ: «مَا أَتَيْتُ عَلَيْهِ قَطُّ، إِلَّا وَجِبْرِيْلُ قَائِمٌ عِنْدَهُ، يَسْتَغْفِرُ لِـمَنْ يَسْتَلِمُهُ».

২৪২ অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আমি যখনই রুকনে ইয়ামানীর নিকট গিয়েছি, তখন আমি সেখানে হযরত জিব্রাঈল (আ.) কে পেয়েছি।

আতা ইবনে আবি রাবাহ থেকে (মুরসাল) বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ) ’র কাছে আরয করা হল যে, আপনি কি রুকুনে ইয়ামানী স্পর্শ করেন, না চুমো দিয়ে থাকেন? উত্তরে তিনি বলেন- আমি যখনই এর নিকটে গিয়েছি, তখনই এর কাছে হযরত জিব্রাঈল (আ.) কে দাঁড়িয়ে থাকতে এবং ইহাকে চুমো দানকারীদের জন্য মাগফিরাত করতে দেখেছি।

ব্যাখ্যা: আবুস শায়খ কর্তৃক ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস এই হাদিসকে আরো সুদৃঢ় করে। ঐ হাদিসে বর্ণিত আছে যে, রাসূল (ﷺ)  এরশাদ করেন, আমি যখনই রুকনে ইয়ামানীর নিকট গমন করেছি, তখনই এর নিকট একজন ফেরেস্তাকে দেখতে পেয়েছি, যিনি উচ্চস্বরে ‘আমীন’ বলে থাকেন। অতএব তোমরা যখন এর নিকট দিয়ে গমণ কর তখন এই দোয়া পাঠ কর

-ربنا اتنا فى الدنيا حسنة وفى الاخرة حسنة وقنا عذاب النار

٢٤٣- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَبْدِ اللهِ بْنِ دِيْنَارٍ، عَنِ ابْنِ عُمَرَ ، أَنَّ النَّبِيَّ ، كَانَ يَقُوْلُ بَيْنَ الرُّكْنِ وَالْـحَجَرِ الْأَسْوَدِ: «اَللّٰهُمَّ إِنِّيْ أَعُوْذُ بِكَ مِنَ الْكُفْرِ، وَالْفَقْرِ، وَالذُّلِّ، وَمَوَاقِفَ الْـخِزْيِ فِي الدُّنْيَا وَالْآخِرَةِ».

২৪৩. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আব্দুল্লাহ ইবনে দীনার থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ)  রুকনে ইয়ামানী এবং হাজরে আসওয়াদের মধ্যবর্তীস্থানে (দাঁড়িয়ে) বলতেন- হে আল্লাহ! আমি তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি কুফুরী, দরিদ্রতা, লাঞ্ছনা এবং ইহকাল ও পরকালের অপমানজনক স্থান থেকে। 

(জামেউল আহাদীস, ৩০/১০০/৩২৯০২)

ব্যাখ্যা: এ জাতীয় দোয়া সম্পর্কে যেসব হাদিস বর্ণিত হয়েছে, এগুলোর মধ্যে কিছু হাদিস সনদের দিক দিয়ে দুর্বল কিন্তু পরস্পর মিলে শক্তিশালী হয়ে যায়। এছাড়া কিছু সহীহ এবং হাসান পর্যায়ের হাদিসও রয়েছে। তাছাড়াও ফযায়েলে আমল এর ক্ষেত্রে দুর্বল হাদিসও আমলের যোগ্য।

٢٤٤- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ سَعِيْدِ بْنِ جُبَيْرٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، قَالَ: طَافَ النَّبِيُّ  بِالْبَيْتِ، وَهُوَ شَاكٍّ عَلَىٰ رَاحِلَتِهِ يَسْتَلِمُ الْأَرْكَانَ. وَفِيْ رِوَايَةٍ، قَالَ: طَافَ النَّبِيُّ  بَيْنَ الصَّفَا وَالْـمَرْوَةَ، وَهُوَ شَاكٍّ عَلَىٰ رَاحِلَتِهِ.

২৪৪. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি সাঈদ ইবনে জুবাইর থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নবী করিম (ﷺ)  অসুস্থ অবস্থায় তাঁর সওয়ারীর উপর আরোহণ করে বায়তুল্লাহ শরীফের তাওয়াফ করেছেন। তিনি স্বীয় বাঁকা লাঠি দিয়ে রুকুনে ইয়ামানী ও হাজরে আসওয়াদকে চুমো দিতেন।

অন্য এক রেওয়ায়েতে বর্ণিত আছে, তিনি (ইবনে আব্বাস রা.) বলেন, নবী করিম (ﷺ)  অসুস্থ অবস্থায় স্বীয় সওয়ারীর উপর আরোহণ করে সাফা-মারওয়া সাঈ করেছেন। 

(সহীহ ইবনে খুযাইমা, ৪/২৪১/২৭৮৩)

٢٤٥- أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنِ ابْنِ عَبَّاسٍ ، أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ  رَمَلَ مِنَ الْـحَجَرِ إِلَى الْـحَجَرِ.

২৪৫. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ)  হাজরে আসওয়াদ থেকে হাজরে আসওয়াদ পর্যন্ত রমল করেছেন। 

(জামেউল আহাদীস, ৩৪/২৪/৩৬৭৬৭)
ব্যাখ্যা: রমল বলা হয় বুক ফুলিয়ে কাঁধ হেলিয়ে দুলিয়ে দ্রুতগতিতে পদচারণ করা। যেভাবে সেনাবাহিনীর জওয়ানগণ চলে থাকে। রাসূল (ﷺ)  প্রথম তিন চক্করে রমল করেছেন এবং চতুর্থবারে স্বাভাবিক ভাবে চলেছেন। হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে এই পদ্ধতির কথা বর্ণিত আছে। বুখারী ও মুসলিমে ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে প্রত্যেক দু’রুকনের মধ্যে শুধু চলার যে হাদিস বর্ণিত আছে, তা হযরত জাবির (رضي الله عنه)’র বর্ণিত হাদিস দ্বারা রহিত করা হয়েছে। ইমাম নববী ও ইমাম কাসতাল্লানী (رحمة الله) এর বিস্তারিত ব্যাখ্যা করেছেন। কেননা ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه)’র হাদিসে উমরাতুল কাযার ঘটনার দিকে ইঙ্গিত করা হয়েছে যা ৭ম হিজরীতে মক্কা বিজয়ের পূর্বে আদায় করা হয়। অতঃপর যখন তিনি বিদায় হজ্জ আদায় করেন, তখন রমল করেন। অতএব হযরত জাবির (رضي الله عنه)’র হাদিসে যেহেতু পরবর্তী ঘটনা বর্ণনা করা হয়েছে সেহেতু এই হাদিসই আমল যোগ্য।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment