সূর্য গ্রহণের নামায

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

عن المقداد بن الاسود قال ما رأيت رسول الله صلى الله عليه وسلم يصلى على عود ولا عمود ولا شجرة الاجعله الى حاجبه الايمن او الا يسر يعمدله عمدًا- 161

63 – بَابُ مَا جَاءَ فِيْ صَلَاةِ الْكُسُوْفِ

166 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ حَمَّادٍ، عَنْ إِبْرَاهِيْمَ، عَنْ عَلْقَمَةَ، عَنْ عَبْدِ اللهِ ، قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَامَ رَسُوْلُ اللهِ ، فَخَطَبَ، فَقَالَ: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ، لَا تَنْكَسِفَانِ لِـمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِـحَيَاتِهِ، فَإِذَا رَأَيْتُمْ ذَلِكَ فَصَلُّوْا، وَاحْمَدُوْا اللهِ وَكَبِّرُوْهُ، وَسَبِّحُوْهُ حَتَّىٰ يَنْجَلِيَ: أَيُّهُمَا انْكَسَفَ، ثُمَّ نَزَلَ رَسُوْلُ اللهُ ، وَصَلَّىٰ رَكْعَتَيْنِ».

বাব নং ৭৫. ৬৩. সূর্য গ্রহণের নামায

১৬৬. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা হাম্মাদ থেকে, তিনি ইব্রাহীম থেকে, তিনি আলকামা থেকে, তিনি আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, রাসূল (ﷺ) ’র পুত্র হযরত ইব্রাহীম (رضي الله عنه)’র মৃত্যুর দিন সূর্যগ্রহণ হয়। তখন তিনি দাঁড়িয়ে খুৎবা প্রদান করে বলেন, সূর্য ও চন্দ্র আল্লাহর নির্দশন সমূহের একটি নির্দশন। এতে কারো জন্ম-মৃত্যুর কারণে গ্রহণ লাগেনা। সুতরাং যখন তোমরা এতে গ্রহণ লাগতে দেখ, তখন নামায পড়, আল্লাহর হাম্দ বর্ণনা কর, তাকবীর বল, তাসবীহ পড়, ফলে গ্রহণ দূরীভূত হয়ে যাবে। অতঃপর তিনি মিম্বর থেকে নেমে দু’রাকাত (কুসুফের নামায) আদায় করেন। (বুখারী, ২/৩৯/১০৬০)

167 – أَبُوْ حَنِيْفَةَ: عَنْ عَطَاءٍ، عَنْ أَبِيْهِ، عَنِ ابْنِ عَمْرٍو ، قَالَ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ يَوْمَ مَاتَ إِبْرَاهِيْمُ بْنُ رَسُوْلِ اللهِ ، فَقَالَ النَّاسُ: انْكَسَفَتِ الشَّمْسُ لِـمَوْتِ إِبْرَاهِيْمَ، فَقَامَ النَّبِيُّ  قِيَامًا طَوِيْلًا حَتَّىٰ ظَنُّوْا أَنَّهُ لَا يَرْكَعُ، ثُمَّ رَكَعَ، فَكَانَ رُكُوْعُهُ قَدْرَ قِيَامِهِ، ثُمَّ رَفَعَ رَأْسَهُ، فَكَانَ قِيَامُهُ قَدْرَ رُكُوْعِهِ، ثُمَّ سَجَدَ قَدْرَ قِيَامِهِ، ثُمَّ جَلَسَ، فَكَانَ جُلُوْسُهُ بَيْنَ السَّجْدَتَيْنِ قَدْرَ سُجُوْدِهِ، ثُمَّ سَجَدَ قَدْرَ جُلُوْسِهِ، ثُمَّ صَلَّى الرَّكْعَةَ الثَّانِيَةَ، فَفَعَلَ مِثْلَ ذَلِكَ حَتَّىٰ إِذَا كَانَتِ السَّجْدَةُ مِنْهَا، بَكَىٰ، فَاشْتَدَّ بُكَاؤُهُ، فَسَمِعْنَا، وَهُوَ يَقُوْلُ: «أَلَـمْ تَعِدْنِيْ أَنْ لَا تُعَذِّبْهُمْ وَأَنَا فِيْهِمْ، ثُمَّ جَلَسَ، فَتَشَهَّدَ، ثُمَّ انْصَرَفَ وَأَقْبَلَ عَلَيْهِمْ بِوَجْهِهِ، ثُمَّ قَالَ: «إِنَّ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ آيَتَانِ مِنْ آيَاتِ اللهِ، يُخَوِّفُ اللهُ بِهِمَا عِبَادَهُ لَا يَكْسِفَانِ لِـمَوْتِ أَحَدٍ وَلَا لِـحَيَاتِهِ، فَإِذَا كَانَ كَذَلِكَ، فَعَلَيْكُمْ بِالصَّلَاةِ، وَلَقَدْ رَأَيْتُنِيْ أُدْنِيْتُ مِنَ الْـجَنَّةِ حَتَّىٰ لَوْ شِئْتُ أَنْ أَتَنَاوَلَ غُصْنًا مِنْ أَغْصَانِ شَجَرِهَا فَعَلْتُ، وَلَقَدْ رَأَيْتُنِيْ أُدْنِيْتُ مِنَ النَّارِ حَتَّىٰ جَعَلْتُ أَتَّقِيْ، وَلَقَدْ رَأَيْتُ سَارِقَ رَسُوْلِ اللهِ».

وَفِيْ رِوَايَةٍ: «سَارِقَ بَيْتِ رَسُوْلِ اللهِ  يُعَذَّبُ بِالنَّارِ، وَلَقَدْ رَأَيْتُ فِيْهَا عَبْدَ بْنِ دَعْدَعٍ سَارِقَ الْـحُجَّاجِ بِمِحْجَنِهِ، وَلَقَدْ رَأَيْتُ فِيْهَا امْرَأَةً أَدْمَاءَ حِمْيَرِيَّةً تُعَذَّبُ فِيْ هِرَّةٍ لَـهَا رَبَطَتْهَا، فَلَـمْ تُطْعِمْهَا، وَلَـمْ تَدَعْهَا تَأْكُلُ مِنْ خَشَاشِ الْأَرْضِ وَحَشَرَاتِهَا».

وَفِيْ رِوَايَةٍ: نَحْوُهُ، وَفِيْهِ: «لَقَدْ رَأَيْتُ عَبْدَ بْنِ دَعْدَعٍ سَارِقَ الْـحَاجَّ بِمِحْجَنِهِ، فَكَانَ إِذَا خَفَىٰ ذَهَبَ، وَإِذَا رَآهُ أَحَدٌ، قَالَ: إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِيْ».

وَفِيْ رِوَايَةٍ: «كَانَ إِذَا خَفِيَ لَهُ شَيْءٌ ذَهَبَ بِهِ، وَإِذَا ظَهَرَ عَلَيْهِ، قَالَ: إِنَّمَا تَعَلَّقَ بِمِحْجَنِيْ».

১৬৭. অনুবাদ: ইমাম আবু হানিফা আতা থেকে, তিনি তাঁর পিতা থেকে, তিনি ইবনে ওমর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণনা করেন, নবী করিম (ﷺ) ’র পুত্র ইব্রাহীম (رضي الله عنه)’র ইন্তেকালের দিন সূর্যগ্রহণ হয় (লোকজন বলতে লাগল যে, এ কারণেই সূর্য গ্রহণ লেগেছে)। তখন নবী করিম (ﷺ)  নামাযের জন্য দাঁড়িয়ে যান এবং এত দীর্ঘ সময় পর্যন্ত নামাযে দাঁড়িয়ে থাকেন যে, যার ফলে লোকজন মনে করেন তিনি রুকু করবেন না। তারপর রুকুতে গিয়ে কিয়ামের ন্যায় দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন। অতঃপর রুকু থেকে মাথা মোবারক উত্তোলন করেন এবং রুকুর ন্যায় দীর্ঘক্ষণ কিয়াম করেন। এরপর সিজদা করেন এবং এতেও কিয়ামের ন্যায় দীর্ঘসময় ব্যয় করেন। তারপর বসেন এবং দু’সিজদার মাঝখানে বৈঠকে সিজদার ন্যায় দীর্ঘ সময় ব্যয় করেন। অতঃপর বৈঠকের ন্যায় দ্বিতীয় সিজদায় দীর্ঘক্ষণ ছিলেন। এরপর প্রথম রাকাতের ন্যায় দ্বিতীয় রাকাত আদায় করেন এবং দ্বিতীয় রাকাতের সিজদায় গিয়ে তিনি খুব কাঁদতে থাকেন। আমরা তাঁকে এই বলতে শুনেছি যে, হে আল্লাহ! তুমি কি আমার নিকট এই ওয়াদা করনি যে, তুমি তাদেরকে আযাব দেবে না যতক্ষণ আমি তাদের মধ্যে অবস্থান করি? এরপর তিনি বসেন এবং তাশাহহুদ পাঠ করেন। তারপর নামায শেষ করেন এবং আমাদের দিকে মুখ করে এরশাদ করেন, সূর্য ও চন্দ্রগ্রহণ আল্লাহর নির্দশন ও প্রমাণ সমূহের মধ্যে একটি প্রমাণ। আল্লাহ এর দ্বারা তাঁর বান্দাদেরকে ভয় দেখিয়ে থাকেন। কারো মৃত্যু বা জন্মের কারণে হয় না। সুতরাং এরূপ অবস্থা হলে নামায আদায় কর। নিঃসন্দেহে আমি দেখেছি, বেহেশত আমার এমন নিকটবর্তী হয়েছিল যে, যদি আমি ইচ্ছে করতাম তাহলে এর বৃক্ষসমূহের কোন একটি বৃক্ষের ডাল আমার দিকে নিয়ে আসতে পারতাম। আবার আমি দেখেছি, দোযখ আমার এত নিকটবর্তী হয়েছিল যে, আমি এর প্রজ্জ্বলিত অগ্নি থেকে রক্ষা পাওয়ার চেষ্টা করেছি। এছাড়া আমি দেখেছি রাসূল (ﷺ) ’র চোর, অন্য রেওয়ায়েতে আছে আমি রাসূলের ঘরের চোরকে শাস্তি দিতে দেখেছি। আমি আরো দেখেছি আবদা ইবনে দা‘দা’ নামক এক ব্যক্তিকে, যে হাজীদের কাপড় ইত্যাদি বাঁকা লাকড়ির দ্বারা চুরি করেছে। আমি আরো দেখেছি যে, হিমায়ার গোত্রের একজন সুন্দরী মহিলাকে একটি বিড়ালের কারণে শাস্তি দেওয়া হচ্ছে। কারণ সে ঐ বিড়ালটি বেঁধে রেখেছিল, এটাকে কোন খাদ্যও দেয়নি আবার ছেড়েও দেয়নি যাতে বিড়ালটি মাটি থেকে পোকা-মাকড় খেতে পারে।

অন্য এক রেওয়ায়েতে একই ধরনের হাদিস বর্ণিত হয়েছে, এতে বর্ণিত আছে, আমি আবদা ইবনে দা’দা’কে দেখেছি যে,  সে তার বাঁকা লাঠি দ্বারা হাজীদের কাপড় চুরি করে থাকে, যদি কেউ না দেখে, তাহলে উড়িয়ে নিয়ে যায়। যদি কেউ দেখে ফেলে, তাহলে বলে, আমার বাঁকা লাঠির সাথে এটা আটকিয়ে গেছে।

অন্য এক রেওয়ায়েতে আছে, যদি কোন বস্তু কারো দৃষ্টি থেকে আড়াল হয়ে যেত, তখন সে তা নিয়ে যেত এবং যখন তা কেউ দেখে ফেলত, তখন বলত, এটা আমার লাঠির সাথে আটকে গেছে।

ব্যাখ্যা: কুসুফের নামায আদায়ের পদ্ধতি নিয়ে ইমামগণের মধ্যে মতপার্থক্য রয়েছে। ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক (رحمة الله)’র মতে প্রতি রাকাতে দু’টি রুকু আদায় করতে হবে। ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র মতে অন্যান্য নামাযের ন্যায় প্রতি রাকাতে এক রুকু দ্বারা আদায় করবে। 

❏ইমাম শাফেঈ ও ইমাম মালিক (رحمة الله) সিহাহ সিত্তাহ্ গ্রন্থে হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত হাদিস দ্বারা দলীল পেশ করেন। কিন্তু প্রকৃত রুকুর সংখ্যা সম্পর্কিত এই হাদিসে সংশয় রয়েছে। ফলে এই হাদিস দলীল হিসেবে গ্রহণযোগ্য নয়। যেমন হযরত আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে দুই এবং তিন রুকুর কথা উলে­খ আছে, হযরত জাবির (رضي الله عنه) থেকে দুই এবং তিন রুকুর কথা বর্ণিত আছে, হযরত ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) থেকে চার রুকুর রেওয়ায়েত বর্ণিত আছে এবং হযরত উবাই (رضي الله عنه) থেকে পাঁচ রুকুর কথা উলে­খ আছে। এর দ্বারা হাদিস মুদতারিব হয়ে গেল। ফলে দলীলের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলেছে। সুতরাং ইমাম আবু হানিফা (رضي الله عنه) বাধ্য হয়ে রাসূল (ﷺ)  ’র বর্ণনা ও আমলের সাথে সংযুক্ত ঐ সব রিওয়ায়েত গ্রহণ করেছেন, যা কিয়াসের সাথেও যার মিল রয়েছে। 

قولي হাদিস নাসাঈ শরীফে হযরত নু‘মান ইবনে বশীর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে, রাসূল (ﷺ)  বলেছেন-

اذا خسفت الشمس والقمر فصلوا كا حدث صلوه صليتموها من المكتوبة

“যখন সূর্য বা চন্দ্রগ্রহণ হয়, তখন তোমরা এরূপ নামায পড় যেরূপ তোমরা কিছুক্ষণ পূর্বে (ফজর) নামায আদায় করেছ।”   ১৬২

➥ নাসাঈ, খন্ড ২, পৃষ্ঠাঃ  ১৪৫, বৈরুত, হাদীস নং ১৪৮৮

❏কেননা হযরত সামুরা (رضي الله عنه) বর্ণিত হাদিস অনুযায়ী এমন সময় গ্রহণ লেগেছিল যখন সূর্য দুই বর্শা পরিমাণ উপরে উঠেছিল। فعلي হাদিস হিসেবেও এই হাদিস দলীল হিসেবে পেশ করা যেতে পারে। কেননা এতে এক রুকুর কথা প্রমাণিত আছে। এরপর সম্ভবত অত্যাধিক ভীড়ের কারণে জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে। রাসূল (ﷺ)  যেহেতু রুকুতে অস্বাভাবিক বিলম্ব করেছেন তখন সামনের কাতারের লোকজন ধোঁকায় পড়ে রুকু থেকে মাথা তুলে ফেলেন। অতঃপর সামনের কাতারের লোকজন যখন দেখতে পান যে, রাসূল (ﷺ)  এখনো রুকুতে আছেন। তখন তারা পুনরায় রুকুতে ফিরে যান। তখন পিছনের কাতারের লোকজনও একইভাবে পুনরায় রুকু করেন। তাই তারা দু’রুকু মনে করেছেন। অত্যাধিক ভীড়ের কারণে এরূপ হওয়া অস্বাভাবিক ব্যাপার নয়।

❏এছাড়া ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله)’র পক্ষে আবু দাউদ শরীফে আব্দুল্লাহ ইবনে আমর (رضي الله عنه) মুসনাদে আহমদ-এ নু’মান ইবনে বশীর (رضي الله عنه), নাসাঈ শরীফে হযরত আবু বুকরা (رضي الله عنه), মুসলিম শরীফে আব্দুর রহমান ইবনে সামুরা (رضي الله عنه), আবু দাউদ শরীফে হযরত কাবিসা (رضي الله عنه) থেকে হাদিস বর্ণিত আছে।

❏জমহুরের নিকট সালাতে কুসুফ সুন্নতে মুয়াক্কাদাহ। হানাফী মাযহাবের কেউ কেউ ওয়াজিবও বলেছেন। ইমাম মালেক (رحمة الله) জুমার নামাযের ন্যায় বলেছেন। আবার কেউ কেউ বলেছেন ফরযে কিফায়া।  ১৬৩

 ➥ আল্লামা আইনী (رحمة الله) উমদাতুল কারী খন্ড ৭, পৃষ্ঠাঃ  ৬১ 

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment