কাসরূল আমাল
তুমি যেন মুসাফির
[১] হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার রাসূলুল্লাহ (সা) একপাশ থেকে আমাকে ধরে বললেন- হে আব্দুল্লাহ ইবনে উমর!
كُنْ فِي الدُّنْيَا كَأَنَّكَ غَرِيبٌ، وَكَأَنَّكَ عَابِرُ سَبِيلٍ، وَعُدَّ نَفْسَكَ مِنْ أَهْلِ الْقُبُورِ
তুমি দুনিয়াতে এমনভাবে থাক যেন তুমি একজন অপরিচিত এবং পথচারী মুসাফির। আর তুমি নিজেকে কবরবাসী মনে করবে।
হযরত মুজাহিদ (রহ) বলেন- এরপর হযরত ইবনে উমর (রা) আমাকে বলেন, হে মুজাহিদ!
إِذَا أَصْبَحْتَ فَلَا تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالْمَسَاءِ، وَإِذَا أَمْسَيْتَ فَلَا تُحَدِّثْ نَفْسَكَ بِالصَّبَاحِ، وَخُذْ مِنْ حَيَاتِكَ لِمَوْتِكَ، وَمِنْ صِحَّتِكَ لِسَقَمِكَ، فَإِنَّكَ يَا عَبْدَ اللَّهِ لَا تَدْرِي مَا اسْمُكَ غَدًا
তুমি যখন সকালে উপনীত হও তখন সন্ধ্যার চিন্তা করো না। আর যখন সন্ধ্যায় উপনীত হও তখন সকালের চিন্তা করো না। মৃত্যুর জন্য নিজের জীবন থেকে পুঁজি সংগ্রহ কর। অসুস্থতার পূর্বে সুস্থতাকে মূল্যবান মনে কর। কেননা হে আল্লাহর বান্দা! তুমি জাননা আগামীকাল তোমার কি নাম হবে (জীবিত না মৃত)।-[রিওয়ায়াত:১]
দুটি বিষয়ের ভয়
[২] হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِنَّ أَشَدَّ مَا أَتَخَوَّفُ عَلَيْكُمْ خَصْلَتَيْنِ: اتِّبَاعَ الْهَوَى، وَطُولَ الْأَمَلِ. فَأَمَّا اتِّبَاعُ الْهَوَى فَإِنَّهُ يَعْدِلُ عَنِ الْحَقِّ. وَأَمَّا طُولُ الْأَمَلِ فَالْحُبُّ لِلدُّنْيَا
আমি তোমাদের ব্যাপারে যে দুটি বিষয়ের সবচেয়ে বেশী ভয় করি, তা হলো খাহিশাত বা প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং দীর্ঘ আশা। প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে হক পথ থেকে সরিয়ে দেয় আর দীর্ঘ আশা জন্ম নেয় দুনিয়ার মহব্বত থেকে।
অতঃপর তিনি বলেন-
إِنَّ اللَّهَ يُعْطِي الدُّنْيَا مَنْ يُحِبُّ وَيُبْغِضُ. وَإِذَا أَحَبَّ اللَّهُ عَبْدًا أَعْطَاهُ الْإِيمَانَ
দুনিয়াতো আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তিকেও দান করেন যাকে পছন্দ করেন এবং তাকেও দান করেন যাকে পছন্দ করেন না। কিন্তু যখন আল্লাহ তাআলা কোন বান্দাকে মহব্বত করেন, তখন তাকে ইমান দান করেন।
أَلَا إِنَّ لِلدِّينِ أَبْنَاءً، وَلِلدُّنْيَا أَبْنَاءً. فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدِّينِ، وَلَا تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا
শোন! কিছু লোক হয় দীনের জন্য আর কিছু লোক হয় দুনিয়ার জন্য। অতএব তোমরা তাদের মত হও, যারা দীনের জন্য হয়। আর তাদের মত হয়ো না, যারা দুনিয়ার জন্য হয়ে থাকে।
أَلَا إِنَّ الدُّنْيَا قَدِ ارْتَحَلَتْ مُولِّيَةً، وَالْآخِرَةَ قَدِ ارْتَحَلَتْ مُقْبِلَةً أَلَا وَإِنَّكُمْ فِي يَوْمِ عَمَلٍ لَيْسَ فِيهِ حِسَابٌ، أَلَا وَإِنَّكُمْ تُوشِكُونَ فِي يَومِ حِسَابٍ وَلَيْسَ فِيهِ عَمَلٌ
শোন দুনিয়া তোমাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে আর আখিরাত (ক্রমে) সামনে আসছে। জেনে রাখ! তোমরা এমন দিনে আছ যেখানে আমল করতে হয়, হিসাব দিতে হয় না। অচীরেই এমন দিন আসবে যেখানে হিসাব দিতে হবে, আমল করা যাবে না।- [রিওয়ায়াত:৩]
দুনিয়া চলে যাচ্ছে আর আথিরাত সামনে আসছে
[৩] হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَى أُمَّتِي: الْهَوَى وَطُولَ الْأَمَلِ فَأَمَّا الْهَوَى فَيَصُدُّ عَنِ الْحَقِّ. وَأَمَّا طُولُ الْأَمَلِ فَيَصُدُّ عَنِ الْآخِرَةِ
আমি অমার উম্মতের ব্যাপারে যে বিষয়ের সবচেয়ে বেশী ভয় করি, তা হলো খাহিশাত বা প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং দীর্ঘ আশা। প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে হক পথ থেকে সরিয়ে দেয় আর দীর্ঘ আশা আখিরাত থেকে গাফিল করে দেয়।
وَهَذِهِ الدُّنْيَا مُرْتَحِلَةٌ. وَهَذِهِ الْآخِرَةُ قَادِمَةٌ، وَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا بَنِي الْآخِرَةِ وَلَا تَكُونُوا مِنْ بَنِي الدُّنْيَا، فَإِنَّكُمُ الْيَوْمَ فِي دَارِ الْعَمَلِ، وَأَنْتُمْ غَدًا فِي دَارِ جَزَاءٍ وَلَا عَمَلَ
দুনিয়া তো মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে আর আখিরাত (ক্রমে) সামনে আসছে। আর উভয়েরই সন্তান হয়। অতএব তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা আজ তো তোমরা এমন স্থানে আছ, যেখানে আমল করতে হয়। আর কাল এমন স্থানে যেতে হবে, যেখানে আমলের বদলা বা প্রতিদান মিলবে কিন্তু আমল করা যাবে না।- [রিওয়ায়াত:৪]
যে আল্লাহকে লজ্জা করে
[৪] হযরত উম্মুল মুনযির থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, এক রাতে রাসূলুল্লাহ (সা) লোকদের দিকে দৃষ্টি নিবদ্ধ করে বলেন-
أَيُّهَا النَّاسُ، أَمَا تَسْتَحْيُونَ مِنَ اللَّهِ؟ قَالُوا: وَمَا ذَاكَ يَا رَسُولَ اللَّهِ؟ قَالَ: «تَجْمَعُونَ مَا لَا تَأْكُلُونَ، وَتَأْمُلُونَ مَا لَا تُدْرِكُونَ، وَتَبْنُونَ مَا لَا تَعْمُرُونَ
হে লোকসকল! তোমরা কি আল্লাহকে লজ্জা কর? লোকেরা বলল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! আল্লাহকে লজ্জা করার অর্থ কি? তিনি বললেন, তোমরা এমন জিনিস জমা কর যা ভোগ করতে পার না। এমন জিনিসের আকাঙ্ক্ষা কর যা লাভ করতে পার না। এমন বাড়ি নির্মাণ কর যেখানে চিরদিন থাকতে পার না।-[রিওয়ায়াতঃ৫]
উসামা ইবনে যায়দ (রা) এর বাসনায় রাসূলেরবিস্ময়
[৫] হযরত আবু সাঈদ আল খুদরী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- হযরত উসামা ইবনে যায়দ (রা) একবার এক মাসের জন্য ১০০ দীনার দিয়ে একজন দাসী খরিদ করেন। তখন (এই সংবাদ শুনে) রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন- তোমরা কি উসামার বাপারে আশ্চর্যান্বিত হও না যে, সে এক মাসের জন্য ক্রয়-বিক্রয়ের লেনদেন করে? উসামা তো অনেক লম্বা আশাধারী।
কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! যখনই আমি চোখের পলক ফেলি, তখনই মনে হয় হয়তো দ্বিতীয় পলক ফেলার পূর্বেই আমার রূহ কবয করে নেওয়া হবে। যখনই আমি চোখ উঠিয়ে দৃষ্টিপাত করি তখনই ভাবি যে, দ্বিতীয়বার দৃষ্টিপাত করার পূর্বেই আমার রূহ কবয করে নেওয়া হবে। আর যখনই কোন খাবারের লোকমা মুখে দেই তখনই মনে হয়, হয়তো লোকমা গিলে ফেলার পূর্বেই আমার রূহ কবয করে নেওয়া হবে।
অতঃপর বলেন, হে আদমের সন্তানগণ! যদি তোমাদের মধ্যে বুঝ-বিচেনা থাকে তবে নিজেকে মৃতদের মধ্যে গণ্য কর। কসম সেই সত্তার, যার হাতে আমার প্রাণ! তোমাদের সাথে যার অঙ্গীকার করা হয়েছে অর্থাৎ মৃত্যু তা অবশ্যই আসবে। আর তোমরা কোনভাবেই তা থেকে বাঁচতে পারবে না।-[রিওয়ায়াতঃ৬]
ওযুর পূর্বে তায়াম্মুম
[৬] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” كَانَ يُهْرِيقُ الْمَاءَ، فَيَتَمَسَّحُ بِالتُّرَابِ، فَأَقُولُ: يَا رَسُولَ اللَّهِ، إِنَّ الْمَاءَ مِنْكَ قَرِيبٌ؟، فَيَقُولُ «وَمَا يُدْرِينِي لَعَلِّي لَا أَبْلُغُهُ»
কখনো এমন হত যে, রাসূলুল্লাহ (সা) এর (ওযুর) জন্য পানির ব্যবস্থা করা হত। আর তিনি (আগেই) তায়াম্মুম করে নিতেন। আমি আরয করলাম, ইয়া রাসূলাল্লাহ! পানি তো নিকটে। তখন রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন- আমি জানি না, পানি পর্যন্ত পৌছতে পারব কি না।-[রিওয়ায়াতঃ৭]
টেকসই জিনিস ও নষ্ট হওয়া জিনিস
[৭] হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নবী (সা) এক ব্যক্তিকে দেখলেন যে, সে তার জুতার ফিতা লোহা দ্বারা বানিয়ে নিয়েছেন (যাতে দীর্ঘদিন ব্যবহার করা যায়)। এটা দেখে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আরে তুমি তো অনেক লম্বা আশাধারী এবং সওয়াব ও প্রতিদান প্রাপ্তির ব্যাপারে বেপরোয়া ভাব প্রদর্শনকারী আর নেককাজকে অপছন্দকারী। (জেনে রাখ!)
إِنَّ أَحَدَكُمْ إِذَا انْقَطَعَ شِسْعُهُ فَقَالَ: إِنَّا لِلَّهِ وَإِنَّا إِلَيْهِ رَاجِعُونَ، كَانَ عَلَيْهِ مِنْ رَبِّهِ الصَّلَاةُ وَالْهُدَى وَالرَّحْمَةُ، فَذَاكَ خَيْرٌ لَهُ مِنَ الدُّنْيَا
যদি তোমাদের কারো জুতার ফিতা ছিঁড়ে যায় আর সে ‘ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন’ পাঠ করে, তবে এর বিনিময়ে তার জন্য আল্লাহর পক্ষ থেকে শান্তি ও নিরাপত্তা, হিদায়াত ও রহমত লাভ হয়ে থাকে- যা পুরো দুনিয়ার থেকে উত্তম।-[রিওয়ায়াতঃ৮]
মানুষ ও আশার দৃষ্টান্ত
[৮] হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- নবী (সা) তার মুবারক আঙ্গুলগলো যমীনের উপর রেখে বললেন-
هَذَا ابْنُ آدَمَ، وَهَذَا أَجَلُهُ مِنْ خَلْفِهِ، وَثَمَّ أَمَلُهُ، وَأَشَارَ بِيَدَيْهِ
এটা আদম সন্তান, আর তার পিছনে তার নির্ধারিত মৃত্যু । আর ঐ দিকে তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। এটা বলতে বলতে রাসূলুল্লাহ (সা) তার হাত দিয়ে ইশারা করে যাচ্ছিলেন।-[রিওয়ায়াতঃ৯]
[৯] হযরত আবুল মুতাওয়াককিল থেকে বর্ণিত। (তিনি বলেন, একবার) নবী (সা) তিনটি লাকড়ি নিলেন। একটি লাকড়ি সামনে রাখলেন। দ্বিতীয়টি একপাশে রাখলেন। আর অপরটি একটু দূরে রাখলেন। অতঃপর বললেন, তোমরা কি জান এটা কি? সাহাবীগণ বললেন, আল্লাহ ও তার রাসূলই ভাল জানেন।
রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন-
هَذَا الْإِنْسَانُ، وَهَذَا الْأَجَلُ، وَذَاكَ الْأَمَلُ، يَتَعَاطَاهُ ابْنُ آدَمَ وَيَخْتَلِجُهُ دُونَ الْأَمَلِ
এটা মানুষ। আর তার পাশে তার নির্ধারিত সময় (মৃত্যু)। আর ওটা তার আশা- আদম সন্তান এর তালাশে লেগে থাকে কিন্তু মাঝখানে তার নির্ধারিত সময় (মৃত্যু) এসে পড়ে।-[রিওয়ায়াতঃ১০]
[১০] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে বুরায়দা তার দাদা থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, নবী (সা) দুটি পাথর নিলেন আর তা আস্তে করে ছুঁড়ে মারলেন। অতঃপর বললেন-
هَذَا الْأَجَلُ، وَهَذَاكَ الْأَمَلُ
এটি মৃত্যু আর অপরটি হলো আশা-আকাঙ্ক্ষা।-[রিওয়ায়াতঃ১২]
মানুষ ও তার আশার মাঝে যা থাকে
[১১] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে শিখখীর (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَثَلُ ابْنِ آدَمَ وَإِلَى جَنْبِهِ تِسْعٌ وَتِسْعُونَ مَنِيَّةً، إِنْ أَخْطَأَتْهُ الْمَنَايَا وَقَعَ فِي الْهَرَمِ
আদম সন্তানের দৃষ্টান্ত এমন যে, তার পাশে ৯৯টি মৃত্যু (বিপদ) ঘিরে রয়েছে। সে এসব মৃত্যু থেকে বেঁচে গেলেও অবশেষে বার্ধক্যে আক্রান্ত হয়ে যায়।-[রিওয়ায়াতঃ১৩]
[১২] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- এটা আদম সন্তান। আর তার চারপাশে বিভিন্ন ধরণের বিপদ-মুসিবত ও মৃত্যু তাকে ঘিরে রয়েছে এবং তার দিকে ফণা তুলে ধরে আছে।
এসবের পিছনে রয়েছে বার্ধক্য আর তার পিছনে আশা আকাঙ্ক্ষা। মানুষ আশা আকাঙ্ক্ষার পিছনে পড়ে থাকে আর এসব বিপদাপদ তার পিছনে। যার প্রতি হুকুম হয় সে-ই মানুষকে ধরে বসে। যদি মানুষ এসব থেকে বেঁচেও যায় তথাপি বার্ধক্য এসে তার জীবনাবসান ঘটায়। আর তারপরও সে আশা-আকাঙ্ক্ষার জালে আটকে থাকে।-[রিওয়ায়াতঃ১৪]
[১৩] হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন –
أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ «مَثَّلَ الْإِنْسَانَ وَالْأَجَلَ وَالْأَمَلَ، فَمَثَّلَ الْأَجَلَ إِلَى جَانِبِهِ، وَالْأَمَلَ أَمَامَهُ، فَبَيْنَمَا هُوَ يَأْمُلُ، إِذْ أَتَاهُ أَجَلُهُ فَاخْتَلَجَهُ»
রাসূলুল্লাহ (সা) মানুষ, মৃত্যু ও আশা আকাঙ্ক্ষার দৃষ্টান্ত বর্ণনা করে বলেন– মানুষের একপাশে তার মৃত্যু আর তার সামনে আশা আকাঙ্ক্ষা। মানুষ আশা আকাঙ্ক্ষার জালে আটকে থাকে আর মৃত্যু তাকে গ্রাস করে নেয়।-[রিওয়ায়াতঃ১৭]
বয়সের সাথে আশা আকাঙ্ক্ষা বাড়তেই থাকে
[১৪] হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
يَهْرَمُ ابْنُ آدَمَ وَيَبْقَى مِنْهُ اثْنَتَانِ: الْحِرْصُ وَالْأَمَلُ
মানুষ বৃদ্ধ হয়ে যায়, কিন্তু তার দুটি জিনিস বাকী থেকে যায়- লোভ-লালসা ও আশা আকাঙ্ক্ষা।-[রিওয়ায়াতঃ১৮]
[১৫] হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
يَهْرَمُ ابْنُ آدَمَ، وَتَشِبُّ مِنْهُ اثْنَتَانِ: الْحِرْصُ عَلَى الْمَالِ، وَالْحِرْصُ عَلَى الْعُمْرِ
আদম সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যায়, আর তার দুটি জিনিস জোয়ান থেকে যায়- সম্পদের লোভ এবং দীর্ঘ জীবনের আশা।-[রিওয়ায়াতঃ১৯]
নাজাত ও ধ্বংসের কারণ
[১৬] হযরত আমর ইবনে শুআইব থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
نَجَا أَوَّلُ هَذِهِ الْأُمَّةِ بِالْيَقِينِ وَالزُّهْدِ، وَيَهْلِكُ آخِرُ هَذِهِ الْأُمَّةِ بِالْبُخْلِ وَالْأَمَلِ
এই উম্মতের প্রথমদিকের লোকেরা (আল্লাহর প্রতি) ইয়াকীন এবং যুহুদ বা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তির কারণে নাজাত লাভ করেছে। আর শেষ দিকের লোকেরা কৃপণতা এবং খাহিশাত বা আশা আকাঙক্ষার কারণে ধ্বংসপ্রাপ্ত হবে।-[রিওয়ায়াতঃ২০]
একশ ত্রিশ বছর বয়সেও আশা–আকাঙ্ক্ষা প্রবলথাকে
[১৭] হযরত আবু উসমান নাহদী (রহ) বলেন-
قَدْ بَلَغْتُ ثَلَاثِينَ وَمِائَةَ سَنَةٍ، فَمَا مِنِّي شَيْءٌ إِلَّا قَدْ عَرَفْتُ فِيهِ النُّقْصَانَ إِلَّا أَمَلِي، فَإِنَّهُ كَمَا هُوَ
আমার বয়স একশত ত্রিশ বৎসর হয়েছে। আর আমার ভেতরে এমন কিছু নাই যা দুর্বল হয় নাই। একমাত্র আমার আশা-আকাঙ্ক্ষা ব্যতীত- তা পূর্বের মতই রয়ে গেছে।-[রিওয়ায়াতঃ২১]
হযরত ইসা (আ) এর ঘটনা
[১৮] হযরত দাউদ ইবনে আবী হিন্দ এবং হুমায়দ বর্ণনা করেন। একবার হযরত ইসা (আ) পথ চলছিলেন। তখন দেখলেন, এক বৃদ্ধ লাঙ্গল দিয়ে জমি চাষ করছে। তিনি তখন দুআ করলেন, হে আল্লাহ! আকাঙ্ক্ষা দূর করে দিন। তার মন থেকে আশা অতএব তখনই বৃদ্ধ ব্যক্তি হাত থেকে লাঙ্গল রেখে দিয়ে একপাশে শুয়ে পড়লেন। এর কিছুক্ষণ পর ইসা (আ) আবার দুআ করলেন- হে আল্লাহ! তার আশা আকাঙ্ক্ষা ফিরিয়ে দিন। অতএব তৎক্ষণাৎ বৃদ্ধ ব্যক্তি উঠে আবার জমি চাষ করতে লাগলেন।
হযরত ইসা (আ) ঐ বৃদ্ধকে জিজ্ঞাসা করলেন, কি ব্যাপার! আপনি কাজ করতে ছিলেন, মাঝখানে কাজ কেন বন্ধ করে দিলেন? বৃদ্ধ বলল, কাজ করতে করতে আমার মনে খেয়াল আসল যে, আর কত কাজ করব? কাজ করতে করতে বৃদ্ধ হয়ে গেলাম। অতএব এটা চিন্তা করে কাজ ছেড়ে দিয়ে শুয়ে পড়লাম। এরপর আবার মনে হলো, যে পর্যন্ত মৃত্যু না হবে, সে পর্যন্ত জীবন তো চালাতে হবে। আর জীবন চালানোর জন্য কাজ তো করতে হবে। অতএব এটা চিন্তা করে আমি পূণরায় কাজ করা শুরু করে দিলাম।-[রিওয়ায়াতঃ২২]
যদি গাফলত ও উদাসীনতা না হত
[১৯] হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
لَوْلَا السَّهْوُ وَالْأَمَلُ مَا مَشَى الْمُسْلِمُونَ فِي الطَّرِيقِ
যদি ভুল (উদাসীনতা) এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা না হত তবে মানুষ পথে চলতে পারত না।-[রিওয়ায়াতঃ২৩]
[২০] হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
السَّهْوُ وَالْأَمَلُ نِعْمَتَانِ عَظِيمَتَانِ عَلَى ابْنِ آدَمَ
ভুল (উদাসীনতা) এবং আশা-আকাঙ্ক্ষা মানুষের জন্য বড় দুটি নিআমত।-[রিওয়ায়াতঃ২৪]
যদি মানুষ জানত তার মৃত্যু কবে হবে
[২১] হযরত মুতাররিফ ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ) বলেন-
لَوْ عَلِمْتُ مَتَى أَجَلِي لَخَشِيتُ عَلَى ذَهَابِ عَقْلِي، وَلَكِنَّ اللَّهَ مَنَّ عَلَى عِبَادِهِ بِالْغَفْلَةِ عَنِ الْمَوْتِ. وَلَوْلَا الْغَفْلَةُ مَا تَهَنَّئُوا بِعَيْشٍ، وَلَا قَامَتْ بَيْنَهُمُ الْأَسْوَاقُ
যদি আমি জানতে পারতাম যে, আমার মৃত্যু কবে হবে, তবে আমার আকল নষ্ট হয়ে যেত। কিন্তু আল্লাহ তাআলা মানুষকে তাদের মৃত্যু থেকে গাফিল করে তাদের উপর অনেকে দয়া ও ইহসান করেছেন। যদি গাফলত ও উদাসীনতা না হত, তবে না মানুষ জীবন অতিবাহিত করতে পারত, আর না বাজার ইত্যাদি জমত।-[রিওয়ায়াতঃ২৫]
মানুষকে আহমক বানিয়ে সৃষ্টি করা হয়েছে
[২২] হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ) বলেন- আমি জানতে পেরেছি যে-
أَنَّ الْإِنْسَانَ خُلِقَ أَحْمَقَ لَوْلَا ذَلِكَ لَمْ يَهِنْهُ الْعَيْشُ
মানুষকে আহমক ও নির্বোধ করে সৃষ্টি করা হয়েছে। যদি এমন না হত, তবে জীবন অতিবাহিত করা নিদারুন কষ্টকর হয়ে যেত।-[রিওয়ায়াতঃ২৬]
[২৩] হযরত সাঈদ ইবনে আব্দুর রহমান জুমহী (রহ) বলেন-
إِنَّمَا عُمِّرَتِ الدُّنْيَا بِقِلَّةِ عَقْلِ أَهْلِهَا
দুনিয়ার বয়স স্বল্পবোধসম্পন্ন লোকদের ভিত্তিতে নির্ধারন করা হয়েছে।-[রিওয়ায়াতঃ২৭]
সালমান (রা) এর বিস্ময়
[২৪] হযরত সালমান ফারসী (রা) বলেন-
ثَلَاثٌ أَعْجَبَتْنِي، ثُمَّ أَضْحَكَتْنِي، مُؤَمِّلُ الدُّنْيَا وَالْمَوْتُ يَطْلُبُهُ. وَغَافِلٌ وَلَيْسَ بِمَغْفُولٍ عَنْهُ. وَضَاحِكٌ مِلْءَ فِيهِ وَلَا يَدْرِي أَسَاخِطٌ رَبُّ الْعَالَمِينَ عَلَيْهِ أَمْ رَاضٍ عَنْهُ
তিনটি ব্যাপারে আমি বিস্ময়বোধ করি এবং আমার হাসি পায়। দুনিয়ার অন্বেষী- মৃত্যু যার পিছনে ঘুরছে। ঐ গাফিল যে তার গাফলত থেকে বের হয় না। আর মুখ ভরে হাসিতে লিপ্ত ব্যক্তি। যে এটা জানে না যে, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট না অসন্তুষ্ট।-[রিওয়ায়াতঃ২৯]
মৃত্যুর পর যে আমলটি কাজে আসে
[২৫] হযরত সালিহ আল বাররাদ থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি যাররাহ বিন আউফাকে তার মৃত্যুর পর স্বপ্নে দেখ জিজ্ঞাসা করলাম, (মৃত্যুর পর) আপনাদের ওখানে কোন আমলটি উত্তম পেয়েছেন? তিনি বললেন-
التَّوَكُّلُ، وَقِصَرُ الْأَمَلِ
আল্লাহর উপর ভরসা করা এবং আশা কম করা।-[রিওয়ায়াতঃ৩০]
[২৬] হযরত হাসান থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) সাহাবীদেরকে উদ্দেশ্য করে বললেন-
أَكُلُّكُمْ يُحِبُّ أَنْ يَدْخُلَ الْجَنَّةَ؟ قَالُوا: نَعَمْ يَا رَسُولَ اللَّهِ، قَالَ: «قَصِّرُوا الْأَمَلَ، وَأَثْبِتُوا آجَالَكُمْ بَيْنَ أَبْصَارِكُمْ، وَاسْتَحْيُوا مِنَ اللَّهِ حَقَّ حَيَائِهِ
তোমরা কি সবাই জান্নাতে প্রবেশ করতে চাও? সাহাবীগণ বললেন, হ্যাঁ ইয়া রাসূলুল্লাহ! তখন নবী (সা) বললেন- তাহলে তোমরা আশা কম কর। নিজের শেষ সময়কে চোখের সামনে রাখ এবং আল্লাহকে লজ্জা কর যেভাবে তাকে লজ্জা করা দরকার।-[রিওয়ায়াতঃ৩১]
প্রকৃত যুহুদ
[২৭] হযরত সুফিয়ান (রহ) বলেন-
الزُّهْدُ فِي الدُّنْيَا قِصَرُ الْأَمَلِ، لَيْسَ بِأَكْلِ الْغَلِيظِ، وَلَا لُبْسِ الْعَبَاءِ
দুনিয়াতে (প্রকৃত) যুহুদ বা দুনিয়ার প্রতি অনাসক্তি হলো আশা কম করা। অতএব না খাবার সাধারণ হওয়া যুহুদ। আর না পোশাক নিম্নমানের হওয়া যুহুদ।-[রিওয়ায়াতঃ৩২]
কিছু আশা আকাঙ্ক্ষা থাকা বাঞ্ছনীয়
[২৮] হযরত মুহাম্মদ ইবনে মুয়াম্মার (রহ) বলেন-
سَأَلَ الْمُفَضَّلُ بْنُ فَضَالَةَ رَبَّهُ أَنْ يَرْفَعَ عَنْهُ الْأَمَلَ، فَذَهَبَ عَنْهُ الطَّعَامُ وَالشَّرَابُ. ثُمَّ دَعَا رَبَّهُ، فَرَدَّ عَلَيْهِ الْأَمَلَ، فَرَجَعَ إِلَى الطَّعَامِ وَالشَّرَابِ
হযরত মুফাযযল ইবনে ফাযালা (রহ) একবার আল্লাহর নিকট দুআ করেন যে, তার আশা-আকাঙ্ক্ষা যেন উঠিয়ে নেয়া হয়। তখন এই হলো যে, তার খাবার-দাবারের ইচ্ছা ও রুচি নষ্ট হয়ে গেল। এরপর তিনি আবার দুআ করলেন যে, তার আশা-আকাঙ্ক্ষা যেন ফিরিয়ে দেওয়া হয়। তখন তার পূণরায় খাওয়া-দাওয়ার ইচ্ছা ও রুচি ফিরে এলো।-[রিওয়ায়াতঃ৩৩]
পূর্বসূরীদের আশা সংক্ষেপ করার চিন্তা
[২৯] হযরত দাউদ তাঈ (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- আমি আতওয়ান ইবনে আমর আত তাইমী (রহ) কে জিজ্ঞাসা করলাম, আশা কিভাবে সংক্ষেপ করা যায়? তিনি বললেন, এভাবে- যেভাবে শ্বাস-প্রশ্বাসের মাঝে বিরতী হয়ে থাকে।
রুস্তম বলেন, এই কথাটি আমি হযরত ফুযায়ল ইবনে আয়ায (রহ) কে বললাম। তিনি এটা শুনে কাঁদতে লাগলেন এবং বললেন, সে শ্বাস-প্রশ্বাসের চিন্তা করে আর এই ভয় রাখে যে, তার নিঃশ্বাস না বন্ধ হয়ে যায়। আতওয়ান তো মৃত্যুকে অধিক ভয়কারী ছিল।-[রিওয়ায়াতঃ৩৪]
[৩০] হযরত মুহাম্মদ ইবনে সিমাক (রহ) বলেন-
مَا رَأَيْتُ أَحَدًا أَشَدَّ حَذَرًا لِلْمَوْتِ مِنْ عَطْوَانَ بْنِ عَمْرٍو
আমি আতওয়ান ইবনে আমর থেকে মৃত্যুকে অধিক ভয়কারী আর কাউকে দেখিনি।-[রিওয়ায়াতঃ৩৫]
তিনজন আলিমের ঘটনা
[৩১] হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন- একবার তিনজন আলিম একত্রিত হয়ে একে অপরকে বললেন, বল তোমাদের আশা-আকাঙ্ক্ষার কি অবস্থা?
প্রথমজন বলল, যখনই নতুন মাস আগমন করে, তখন ভাবি যে এটা আমার জীবনের শেষ মাস। তখন বাকী দুইজন সাথি বলল, সত্যি অনেক বড় লম্বা আশা।
দ্বিতীয়জনকে জিজ্ঞাসা করলে বলল, যখনই একটি সপ্তাহ অতিবাহিত হয়, তখন ভাবি যে হয়তো সামনের সপ্তাহেই আমার মৃত্যু হয়ে যাবে। তখন বাকী দুইজন সাথি বলল, সত্যি তোমার আশাও অনেক লম্বা।
তৃতীয় সাথিকে জিজ্ঞাসা করা হলো, বল তোমার আশার কি অবস্থা। তিনি বললেন, ঐ ব্যক্তির কি আশাই থাকতে পারে, যার প্রাণটাও তার নিয়ন্ত্রণে নেই।-[রিওয়ায়াতঃ৩৬]
জীবন যার সহজ
[৩২] হযরত মালিক ইবনে মিগওয়াল (রহ) বলেন-
مَنْ قَصَرَ أَمَلُهُ هَانَ عَلَيْهِ عَيْشُهُ
যে ব্যক্তি নিজের আশাকে সংক্ষেপ করবে, তার জীবন সহজ হয়ে যাবে।
হযরত সুফিয়ান (রহ) বলেন- উদ্দেশ্য খাওয়া-পড়ার চাহিদাকে কম করা।-[রিওয়ায়াতঃ৩৭]
পূর্বসূরীদের সংক্ষেপ আশা
[৩৩] হযরত হিশাম ইবনে ইয়াহইয়া গাসসানী (রহ) তার পিতার থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন-
مَا نِمْتُ يَوْمًا قَطُّ فَحَدَّثْتُ نَفْسِي، أَنِّي أَسْتَيْقِظُ مِنْهُ
যখনই আমি শয়ন করি, তখন আমার মনে এই খেয়াল আসে যে, আবার জাগ্রত হতে পারব কি না? -[রিওয়ায়াতঃ৩৮]
[৩৪] হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণিত। তাকে একজন জিজ্ঞাসা করল, হে সাঈদের পিতা! আপনি আপনার জামা ধৌত করেন নি? তিনি বললেন-
الْأَمْرُ أَعْجَلُ مِنْ ذَلِكَ
মৃত্যু এর থেকেও দ্রুত ধাবমান।-[রিওয়ায়াতঃ৩৯]
[৩৫] হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণিত। তাকে তার ছেলে বলল, আব্বাজান! এই তীরটা ভেঙ্গে গেছে। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, কোনটা? ছেলে বলল, এই যে এটা। হযরত হাসান বসরী (রহ) তার উপর এক নযর দিলেন এবং বললেন-
الْأَمْرُ أَسْرَعُ مِنْ ذَلِكَ
মৃত্যু এর থেকেও দ্রুত ধাবমান।-[রিওয়ায়াতঃ ৪০]
[৩৬] হযরত হাসান বসরী (রহ) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
الْمَوْتُ مَعْقُودٌ بِنَوَاصِيكُمْ، وَالدُّنْيَا تُطْوَى مِنْ وَرَائِكُمْ
মৃত্যু তোমার কপালের সাথে বাঁধা আছে। আর দুনিয়া তোমার পিছনে লেপটে যাচ্ছে।-[রিওয়ায়াতঃ৪১]
[৩৭] হযরত হুমায়দুত তাউয়িল থেকে বর্ণিত। একবার হযরত বকর বিন আব্দুল্লাহ মুযানী (রহ) এর সাথে আবু জামিলা (রহ) এর সাক্ষাত হলে তিনি তাকে জিজ্ঞাসা করেন, হে আবু জামিলা! কি খবর? তিনি বললেন-
أَنَا وَاللَّهِ هَكَذَا، كَرَجُلٍ مَادٍّ عُنُقَهُ وَالسَّيْفُ عَلَيْهَا، يَنْتَظِرُ مَتَى تُضْرَبُ عُنُقُهُ
আল্লাহর কসম! আমার অবস্থা ঐ ব্যক্তির মত যার গর্দান জল্লাদের তলোয়ারের নিচে রয়েছে। আর এর প্রহর গুণছে যে, কখন যেন তলোয়ার দিয়ে গর্দান উড়িয়ে দেওয়া হয়।-[রিওয়ায়াতঃ৪২]
গুনাহ ও নাফরমানীর কারণে দীর্ঘ আশা সৃষ্টি হয়
[৩৮] হযরত সুওয়াইদ বিন আমর (রহ) বলেন- আমি হযরত দাউদ তাঈকে বলতে শুনেছি-
لَوْ أَمَّلْتُ أَنْ أَعِيشَ شَهْرًا لَرَأَيتُنِي قَدْ أَتَيْتُ عَظِيمًا. وَكَيْفَ أُؤَمِّلُ ذَلِكَ وَأَرَى الْفَجَائِعَ تَغْشَى الْخَلْقَ فِي سَاعَاتِ اللَّيْلِ وَالنَّهَارِ
যখন আমার মনে এই আশা দেখা দেয় যে, আমি পুরা মাস জীবিত থাকব, তখন আমি ভাবি যে, হয়তো আমার দ্বারা বড় কোন গুনাহ হয়েছে (আর এই আশা সেই গুনাহর ফল)। আর আমি সেই আশা করতে পারিই বা কিভাবে, যখন আমি দেখি যে, দিবা-রাত্র মুসিবত ও কাঠিন্য এবং চিন্তা ও দুঃখ লোকদেরকে ঘিরে রয়েছে।-[রিওয়ায়াতঃ৪৩]
দীর্ঘ আশা থেকে বাঁচা কঠিন
[৩৯] মুহাম্মদ বিন নযর আল হারিসী বলেন-
إِلَى اللَّهِ أَشْكُو طُولَ أَمَلِي، وَعِنْدَ اللَّهِ أَحْتَسِبُ عَظِيمَ غَفْلَتِي
আমি আমার দীর্ঘ আশার ব্যাপারে (যা থেকে আমি বাঁচতে পারি না) আল্লাহর নিকটই অভিযোগ করি এবং আমার সীমাহীন গাফলত ও উদাসীনতার হিসাবও আল্লাহর নিকট পেশ করি। -[রিওয়ায়াতঃ৪৪]
পূর্বসূরীরা যেভাবে জীবন যাপন করতেন
[৪০] হযরত হাসান বসরী (রহ) বলেন- পূর্বসূরী কতক মনীষীদের অবস্থা এমন ছিল যে, তারা নিজের সাথে পানির একটি ঘটি রাখতেন। যদি কোথাউ ইস্তিনজার প্রয়োজন হয়, তবে সাথে সাথেই যেন ওযু করে নেওয়া যায়। কারণ এমন যেন না হয় যে, ইস্তিনজার পর পানি সন্ধান করতে করতে মৃত্যুর ডাক এসে পড়ে।-[রিওয়ায়াতঃ৪৫]
এমন দুনিয়া থেকে আশ্রয় চাওয়া যা আখিরাতেরপ্রতিবন্ধক হয়
[৪১] হযরত হাউশাব থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) এই দুআ করতেন-
اللَّهُمَّ إِنِّي أَعُوذُ بِكَ مِنْ دُنْيَا تَمْنَعُ خَيْرَ الْآخِرَةِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ حَيَاةٍ تَمْنَعُ خَيْرَ الْمَمَاتِ، وَأَعُوذُ بِكَ مِنْ أَمَلٍ يَمْنَعُ خَيْرَ الْعَمَلِ
হে আল্লাহ! আমি আপনার নিকট এমন দুনিয়া থেকে পানাহ চাই, যা আখিরাতের কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধক হয়। আর এমন জীবন থেকে পানাহ চাই যা মৃত্যুর কল্যাণের পথে প্রতিবন্ধক হয়। আর এমন আশা-আক্ঙ্ক্ষা থেকে পানাহ চাই যা নেক আমলের পথে প্রতিবন্ধক হয়।-[রিওয়ায়াতঃ৪৬]
বৃদ্ধের মন যে ব্যাপারে যুবক থাকে
[৪২] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَا يَزَالُ قَلْبُ الْكَبِيرِ شَابًّا فِي اثْنَتَيْنِ: فِي حُبِّ الْمَالِ، وَطُولِ الْأَمَلِ
বৃদ্ধের মন দুটি বিষয়ের ব্যাপারে যুবক থাকে। সম্পদের মহব্বত এবং দীর্ঘ আশা।-[রিওয়ায়াতঃ৪৭]
[৪৩] হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ ” خَطَّ خُطُوطًا، وَخَطَّ مِنْهَا خَطًّا نَاحِيَةً فَأَبْعَدَهُ، وَقَالَ: «أَتَدْرُونَ مَا مَثَلُ هَذَا؟ هَذَا مَثَلُ الْمُتَمَنِّي، وَذَلِكَ الْخَطُّ الْبَعِيدُ الْأَمَلِ، بَيْنَمَا هُوَ يَتَمَنَّى، إِذْ جَاءَهُ الْمَوْتُ
একবার রাসূলুল্লাহ (সা) কয়েকটি রেখা টানেন। আর এগুলো থেকে একটু দূরে আরেকটি রেখা টানেন। এরপর বললেন, তোমরা কি জান, এটা কিসের দৃষ্টান্ত? এই রেখার দৃষ্টান্ত ঐ ব্যক্তির মত যে দীর্ঘ আশার জালে আটকে আছে। আর দূরবর্তী ঐ রেখাটি হলো তার আশা-আকাঙ্ক্ষা। অতএব যখন সে তার আশা-আকাঙ্ক্ষার পিছনে ছোটে, তখন তার মৃত্যু এসে পড়ে।-[রিওয়ায়াতঃ৪৮]
[৪৪] হযরত আলী (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-
إِنَّ أَخْوَفَ مَا أَخَافُ عَلَيْكُمُ اثْنَتَانِ: اتِّبَاعُ الْهَوَى، وَطُولُ الْأَمَلِ، فَأَمَّا اتِّبَاعُ الْهَوَى: فَيَصُدُّ عَنِ الْحَقِّ، وَأَمَّا طُولُ الْأَمَلِ: فَيُنْسِي الْآخِرَةَ،
আমি তোমাদের ব্যাপারে দুটি বিষয়ের সবচেয়ে বেশী ভয় করি, তা হলো প্রবৃত্তির অনুসরণ এবং দীর্ঘ আশা। প্রবৃত্তির অনুসরণ মানুষকে হক পথ থেকে সরিয়ে দেয় আর দীর্ঘ আশা আখিরাতকে ভুলিয়ে দেয়।
أَلَا وَإِنَّ الْآخِرَةَ قَدِ ارْتَحَلَتْ مُقْبِلَةً، أَلَا وَإِنَّ الدُّنْيَا قَدِ ارْتَحَلَتْ مُدْبِرَةً، وَلِكُلِّ وَاحِدٍ مِنْهُمَا بَنُونَ، فَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الْآخِرَةِ، وَلَا تَكُونُوا مِنْ أَبْنَاءِ الدُّنْيَا، فَإِنَّ الْيَوْمَ عَمَلٌ وَلَا حِسَابَ، وَغَدًا حِسَابٌ وَلَا عَمَلٌ
জেনে রাখ! আখিরাত ক্রমে তোমাদের সামনে আসছে। জেনে রাখ! দুনিয়াও তোমাদের থেকে মুখ ঘুরিয়ে চলে যাচ্ছে। আর উভয়েরই সন্তান হয়। অতএব তোমরা আখিরাতের সন্তান হও, দুনিয়ার সন্তান হয়ো না। কেননা এখন আমলের সময়- হিসাবের সময় নয়। আর কাল হিসাবের সময় হবে- আমলের নয়।-[রিওয়ায়াতঃ৪৯]
নবীরাও যার জন্য ভীত থাকতেন
[৪৫] মুহাম্মদ ইবনে ইউসুফ তার কোন সাথিকে লিখেন-
أَقْرِئْ مَنْ أَقْرَأْتَنَا مِنْهُ السَّلَامَ السَّلَامَ، وَتَزَوَّدْ لِأُخْرَاكَ، وَتَجَافَ عَنْ دُنْيَاكَ، وَاسْتَعِدَّ لِلْمَوْتِ، وَبَادِرِ الْفَوْتَ، وَاعْلَمْ أَنَّ أَمَامَكَ أَهْوَالًا وَأَفْزَاعًا قَدْ أَرْعَبَتِ الْأَنْبِيَاءَ وَالرُّسُلَ، وَالسَّلَامُ
যে যে দিক থেকে তুমি আমাকে সালাম প্রেরণ করেছ, আমার পক্ষ থেকে তাদের সবাইকে সালাম বলে দিও। আর শোন! নিজের আখিরাতের জন্য সাজ-সরঞ্জাম প্রস্ত্তত রাখ। নিজের দুনিয়া থেকে একপাশে সরে যাও। মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ কর এবং দুনিয়া ছেড়ে দেওয়ার নিকটবর্তী হও। আর জেনে রাখ! মৃত্যুর পর এমন এমন কঠিন ও পেরেশানীর অবস্থা আগমন করবে যে, তার জন্য নবীরাও ভীত থাকতেন। ওয়াসসালাম।-[রিওয়ায়াতঃ৫১]
দুনিয়া ও আখিরাতের দৃষ্টান্ত
[৪৬] হুসায়ন ইবনে আব্দুর রহমান কুরায়শের এক ব্যক্তি থেকে বর্ণনা করেন। এক ব্যক্তি তার ভাইকে লিখেন-
أَمَّا بَعْدُ، فَإِنَّ الدُّنْيَا حُلْمٌ وَالْآخِرَةُ يَقَظَةٌ، وَالْمُتَوَسَّطُ بَيْنَهُمَا الْمَوْتُ، وَنَحْنُ فِي أَضْغَاثٍ، وَالسَّلَامُ
অতঃপর জেনে রাখ! দুনিয়া হলো স্বপ্ন ও কল্পনা আর আখিরাত হলো বাস্তব। আর এই দুইয়ের মধ্যবর্তী বিষয় হলো মৃত্যু। আমরা স্বপ্ন ও কল্পনার জগতে বিভোড় হয়ে আছি। ওয়াসসালাম।-[রিওয়ায়াতঃ৫২]
[৪৭] ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) বর্ণনা করেন। আমার নিকট আমার কতক সাথি বর্ণনা করেছেন। এক ব্যক্তি তার ভাইকে লিখেন-
إِنَّ الْحُزْنَ عَلَى الدُّنْيَا طَوِيلٌ، وَالْمَوْتَ مِنَ الْإِنْسَانِ قَرِيبٌ، وَلِلنَّقْصِ فِي كُلِّ وَقْتٍ مِنْهُ نَصِيبٌ، وَلِلْبَلَاءِ فِي جِسْمِهِ دَبِيبٌ، فَبَادِرْ قَبْلَ أَنْ تُنَادَى بِالرَّحِيلِ، وَالسَّلَامُ
দুনিয়ার দুঃখ-চিন্তা অনেক দীর্ঘ আর মানুষের মৃত্যু অধিক নিকটবর্তী। সব সময় কোন না কোন কিছুর হ্রাস ও ক্ষতি হতে থাকে এবং বিপদ ও পরীক্ষা মানুষের দেহের দিকে ধাবিত হতে থাকে। পরপারে যাত্রার ঘন্টা বাজার পূর্বেই তোমার মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করা উচিত। ওয়াস সালাম।-[রিওয়ায়াতঃ৫৩]
আগামীকাল যে কিসসা কাহিনীর বিষয়ে পরিণতহবে
[৪৮] ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) বর্ণনা করেন। আবু বকর ইবনে আলী এই কবিতা শুনিয়েছেনে-
قُلْ لِلْمُؤَمِّلِ إِنَّ الْمَوْتَ فِي أَثَرِكْ … وَلَيْسَ يَخْفَى عَلَيْكَ الْأَمْرُ مِنْ نَظَرِكْ
فِيمَنْ مَضَى لَكَ إِنْ فَكَّرْتَ مُفْتَكِرْ … وَمَنْ يَمُتْ كُلَّ يَوْمٍ فَهُوَ مِنْ نُذُرِكْ
دَارٌ تُسَافِرُ فِيهَا مِنْ غَدٍ سَفَرًا … فَلَا تَئُوبُ إِذَا سَافَرْتَ مِنْ سَفَرِكْ
تَضْحَى غَدًا سَمَرًا لِلذَّاكِرِينَ كَمَا … صَارَ الَّذِينَ مَضَوْا بِالْأَمْسِ مِنْ سَمَرِكْ»
আশা ও আসক্তির পূজারীকে বলে দাও যে, মৃত্যু তার পিছে পিছে আসছে। আর এটা তো তুমি নিজেও জান যে,
তুমি কি করছ, যদি তুমি ভাব। আর প্রতিদিন কত লোক মৃত্যুবরণ করছে- এটা তোমাকে ভীত করার জন্য যথেষ্ট।
এটা এমন ঘর যে, কাল তোমাকেও রওয়ানা হতে হবে। অতএব তুমি কাউকে কখনো ভাল-মন্দ বলো না।
আগামী ভোর পর্যন্ত তুমিও স্মরণকারীদের জন্য কিসসা কাহিনীর বিষয়ে পরিণত হবে, যেভাবে তোমার পূর্বে যারা অতীত হয়েছে তারা তোমার কিসসা কাহিনীর বিষয়বস্তু।-[রিওয়ায়াতঃ৫৪]
মৃত ব্যক্তির জন্য ক্রন্দনকারী যখন মৃত হয়ে যায়
[৪৯] ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) বর্ণনা করেন। আমাকে এই কবিতা শোনানো হয়েছে-
نُودِيَ بِصَوْتٍ أَيَّمَا صَوْتِ … مَا أَقْرَبَ الْحَيَّ مِنَ الْمَوْتِ
كَأَنَّ أَهْلَ الْغَيِّ فِي غَيِّهِمْ … قَدْ أَخَذُوا أَمْنًا مِنَ الْمَوْتِ
كَمْ مُصْبِحٍ يَعْمُرُ بَيْتًا لَهُ … لَمْ يُمْسِ إِلَّا خَارِبَ الْبَيْتِ
هَذَا وَكَمْ حَيٍّ بَكَى مَيْتًا … فَأَصْبَحَ الْحَيُّ مَعَ الْمَيْتِ
এমন আওয়ায দ্বারা ডাকা হলো যা মৃত্যু থেকে জীবনের অধিক নিবটবর্তী।
যেমন ঔদ্ধত্য প্রদর্শনকারী যেভাবে ঔদ্ধত্যের মাঝে লিপ্ত থাকে। আর সে যেন মৃত্যু থেকে নিরাপত্তা কিনে নেয়।
কত প্রভাতকারী এমন হয়- যে সকালে তার ঘর আবাদ করে আর সন্ধ্যা হতে হতে তার ঘর বিরান হয়ে যায়।
এটা আর এটাও শোন যে, কত জীবিত লোক এমন হয়- যে কোন মৃতের জন্য রোদন করছে অথচ কিছু সময়ের ব্যবধানে সেও মৃতের সঙ্গীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যায়।-[রিওয়ায়াতঃ৫৫]
দুনিয়ার হিসাব–নিকাশ পরিস্কার রাখা এবং মৃত্যুরজন্য প্রস্তুত থাকা
[৫০] হযরত সুফিয়ান সাওরী (রহ) বলেন- আমি কুফার মসজিদে একজন বুযুর্গ ব্যক্তিকে দেখলাম। তিনি বলছিলেন- আমি ত্রিশ বৎসর যাবত এই মসজিদে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করছি। যদি আমার মৃত্যু এসে যায়, তবে না আমি কাউকে কিছু করার আদেশ করব, আর না কিছু করতে নিষেধ করব। আর না আমি কারও থেকে কিছু নেব, আর না কাউতে কিছু দিব।-[রিওয়ায়াতঃ৭৯]
[৫১] আব্দুল্লাহ ইবনে মারযুক অধিকাংশ সময় এই কবিতা পাঠ করতেন-
وَمُؤَمِّلٍ وَالْمَوْتُ دُونَ رَجَائِهِ … وَمُحَاذِرٍ أَكْفَانُهُ لَمْ تُغْزَلِ
মানুষ রং-বেরঙের আশা-আকাঙক্ষার জালে আটকে রয়েছে যদিও মৃত্যু তার সামনে দাড়িয়ে আছে আর তার কাফনের কাপড় তৈরি হয়ে গেছে।-[রিওয়ায়াতঃ৮৪]
[৫২] আব্দুল্লাহ ইবনে সালাবা (রহ) বলেন-
تَضْحَكُ وَلَعَلَّ أَكْفَانَكَ قَدْ خَرَجَتْ مِنْ عِنْدَ الْقَصَّارِ
তুমি হাসছ? হয়তো তোমার জানা নাই যে, তোমার কাফনের কাপড় কাফন নির্মাতার হাতে এসে পড়েছে।-[রিওয়ায়াতঃ৮৫]
মুমিনের উত্তম দিন
[৫৩] কিছু লোক হযরত আউন ইবনে আব্দুল্লাহ (রহ) কে জিজ্ঞাসা করলেন- مَا أَنْفَعُ أَيَّامِ الْمُؤْمِنِ لَهُ؟ মুমিনের উত্তম দিন কোনটি? তিনি বললেন-
يَوْمَ يَلْقَى رَبَّهُ فَيُعْلِمُهُ أَنَّهُ رَاضٍ
মুমিনের উত্তম দিন হলো সেদিন, যেদিন সে আল্লাহর সাথে সাক্ষাত করবে এবং আল্লাহ তাকে বলবেন- আল্লাহ তোমার প্রতি সন্তুষ্ট।
লোকেরা বলল, আমরা এই দুনিয়ার ব্যাপারে জিজজ্ঞাসা করছি যে, এই দুনিয়াতে মুমিনের উত্তম দিন কোনটি? তিনি বললেন- যেদিন মুমিনের এই ইয়াকীন হয়ে যাবে যে, দিনের শেষ পর্যন্ত সে (হয়তো) জীবিত থাকবে না, সেদিন তার উত্তম দিন।-[রিওয়ায়াতঃ৮৭]
দুর্ভাগ্যের আলামত
[৫৪] হযরত মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসে’ (রহ) বলেন-
أَرْبَعَةٌ مِنَ الشَّقَاءِ: طُولُ الْأَمَلِ، وَقَسْوَةُ الْقَلْبِ، وَجُمُودُ الْعَيْنِ، وَالْبُخْلُ
চারটি বিষয় দুর্ভাগ্যের আলামত-
১.আশা দীর্ঘ হওয়া। ২.অন্তর কঠোর হওয়া। ৩.আল্লাহর ভয়ে চোখ দিয়ে অশ্রু প্রবাহিত না হওয়া এবং ৪.কৃপণ হওয়া।-[রিওয়ায়াতঃ৮৯]
[৫৫] হযরত ফুযায়ল ইবনে আয়ায (রহ) বলেন-
إِنَّ مِنَ الشَّقَاءِ طُولَ الْأَمَلِ، وَإِنَّ مِنَ النَّعِيمِ قِصَرَ الْأَمَلِ
দীর্ঘ আশা দুর্ভোগ্যের আলামত। আর আশা-আকাঙ্ক্ষা কম হওয়া আল্লাহর নিআমত।-[রিওয়ায়াতঃ৯০]
আশা–আকাঙক্ষার প্রতিবন্ধক
[৫৬] এক ব্যক্তি হযরত ইবনে উমর (রা) এর সাথে সফরসঙ্গী হন। কিন্তু পথে তার মৃত্যু হয়ে যায়। এটা তার নিকট অনেক কষ্টদায়ক হলো। অতঃপর তিনি তার জানাযা আদায় করে তাকে দাফন করেন। আর এরপর থেকে অধিকাংশ সময় তিনি এই কবিতা আবৃত্তি করতেন-
وَبَالِغِ أَمْرٍ كَانَ يَأْمُلُ دُونَهُ … وَمُخْتَلِجٍ مِنْ دُونِ مَا كَانَ يَأْمُلُ
নিজের নির্ধারিত সময় পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া ব্যক্তি, যে ইতিপূর্বে বিভিন্ন ধরণের আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে নিপতিত ছিল। অথচ তার আশা-আকাঙ্ক্ষার মধ্যে (মৃত্যু) প্রতিবন্ধক হয়ে গেল।-[রিওয়ায়াতঃ৯৫]
দীর্ঘ আশা নেক আমলের প্রতিবন্ধক
[৫৭] মুহাম্মদ বিন আবু তোবাহ বলেন। একবার মারুফ [কারখী (রহ)] নামাযের ইকামত দিয়ে আমাকে ইমামতির জন্য বললেন। তখন আমি বললাম, আমি তোমাদের এই নামাযের ইমামতি করে পরে তোমাদেরকে কোন নামায পড়াব না। এটা শুনে মারুফ [কারখী (রহ)] বললেন, তবে তুমি কি মনে কর যে, এই নামাযের পর আরো নামায পড়তে পারবে। আমি এত লম্বা আশার জন্য আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই। কেননা এটা (দীর্ঘ আশা) নেক আমলের প্রতিবন্ধক।-[রিওয়ায়াতঃ১০২]
শয়তানের রাজত্ব
[৫৮] হুসায়ন ইবনে আব্দুর রহমান বর্ণনা করেন। এক জ্ঞানী ব্যক্তি বলেছে-
الْأَمَلُ سُلْطَانُ الشَّيْطَانِ عَلَى قُلُوبِ الْغَافِلِينَ
আশা-আকাঙ্ক্ষা মূলত গাফিল লোকদের অন্তরে শয়তানের রাজত্বের নাম।-[রিওয়ায়াতঃ১০৩]
নামায দ্বারা উপকৃত হতে চাইলে
[৫৯] হযরত বকর বিন আব্দুল্লাহ মুযানী (রহ) বলেন-
إِذَا أَرَدْتَ أَنْ تَنْفَعَكَ صَلَاتُكَ فَقُلْ: لَعَلِّي لَا أُصَلِّي غَيْرَهَا
যদি তুমি চাও যে, তোমার নামায দ্বারা তোমার উপকার হবে, তখন এই খেয়াল রাখ যে, হয়তো এটাই তোমার শেষ নামায।-[রিওয়ায়াতঃ১০৪]
যে বদ আমলের শিকার হয়
[৬০] হযরত হাসান বসরী (রহ) বলেন-
مَا أَطَالَ عَبْدٌ الْأَمَلَ إِلَّا أَسَاءَ الْعَمَلَ
যে ব্যক্তিই দীর্ঘ আশার মধ্যে পতিত হয়, সে বদ আমল বা মন্দ আমলের শিকার হয়।-[রিওয়ায়াতঃ১০৫]
সাতটি বিষয় আসার আগে আমলে ধাবিত হওয়া
[৬১] আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলু্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
بَادِرُوا بِالْأَعْمَالِ سَبْعًا: مَا تَنْتَظِرُونَ إِلَّا فَقْرًا مُنْسِيًا، أَوْ غِنًى مُطْغِيًا ، أَوْ مَرَضًا مُفْسِدًا، أَوْ هَرَمًا مُفَنِّدًا، أَوْ مَوْتًا مُجْهِزًا، أَوِ الْمَسِيحَ فَشَرٌّ مُنْتَظَرٌ، أَوِ السَّاعَةَ، فَالسَّاعَةُ أَدْهَى وَأَمَرُّ
সাতটি বিষয়ের পূর্বে নেক আমলে নিয়োজিত হও। তোমরা কি অপেক্ষায় আছ-
১. এমন দারিদ্রের- যা ভুলিয়ে দেয়।
২. এমন ধনাঢ্যতার- যা উদ্ধত করে দেয়।
৩. এমন রোগের- যা স্বাস্থ্য বিনষ্ট করে দেয়।
৪. এমন বার্ধক্যের- যা জ্ঞান ও আকলকে নষ্ট করে দেয়।
৫. এমন মৃত্যুর- যা প্রস্ত্তত হয়ে আছে।
৬. না কি তোমরা দাজ্জালের অপেক্ষা করছ? দাজ্জাল তো ঐ সবকিছুর মধ্যে সবচেয়ে মন্দ যা কিছুর জন্য অপেক্ষা করা হয়।
৭. নাকি কিয়ামতের? কিয়ামত তো হলো সবচেয়ে ভয়ানক ও তিক্ত বিষয়।-[রিওয়ায়াতঃ১০৯]
পাঁচটি সুবর্ণ সুযোগ
[৬২] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
اغْتَنِمْ خَمْسًا قَبْلَ خَمْسٍ: شَبَابَكَ قَبْلَ هَرَمِكَ، وَصِحَّتَكَ قَبْلَ سَقَمِكَ، وَغِنَاكَ قَبْلَ فَقْرِكَ، وَفَرَاغَكَ قَبْلَ شُغْلِكَ، وَحَيَاتَكَ قَبْلَ مَوْتِكَ
পাঁচটি অবস্থাকে অপর পাঁচটি অবস্থা আগমনের পূর্বে সুবর্ণ সুযোগ মনে কর।
১.যৌবনকে সুবর্ণ সুযোগ মনে কর বার্ধক্য আসার পূর্বে।
২.সুস্থতাকে সুবর্ণ সুযোগ মনে কর অসুস্থতার পূর্বে।
৩.স্বাচ্ছন্দ্য ও ঐশ্বর্যকে সুবর্ণ সুযোগ মনে কর, নিঃস্বতা ও দারিদ্রতার পূর্বে।
৪.অবসরকে সুবর্ণ সুযোগ মনে কর ব্যস্ততার পূর্বে।
৫.জীবনকে সুবর্ণ সুযোগ মনে কর মুত্যর পূর্বে।-[রিওয়ায়াতঃ১১২]
সুস্থতা ও অবসর নিয়ে মানুষ ধোকাগ্রস্ত
[৬৩] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
نِعْمَتَانِ مَغْبُونٌ فِيهِمَا كَثِيرٌ مِنَ النَّاسِ الصِّحَّةُ وَالفَرَاغُ
দুটি নিআমত আছে যার বিষয়ে বহু লোক ধোঁকায় নিপতিত। তা হলো- সুস্থতা ও অবসর।-[রিওয়ায়াতঃ১১৩]
যে ভয় করে সে পূর্বেই সতর্ক হয়
[৬৪] আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَنْ خَافَ أَدْلَجَ، وَمَنْ أَدْلَجَ بَلَغَ الْمَنْزِلَ، أَلَا إِنَّ سِلْعَةَ اللَّهِ غَالِيَةٌ، أَلَا إِنَّ سِلْعَةَ اللَّهِ الْجَنَّةُ
যে ব্যক্তি ভয় করে, সে রাতের পূর্বেই সফর করে। আর যে রাতের পূর্বেই সফর করে সে তার মানযিলে পৌছে যায়। জেনে রাখ, আল্লাহর পণ্য খুবই দামী। শোন, আল্লাহর পণ্য সামগ্রী হল জান্নাত।-[রিওয়ায়াতঃ১১৫]
[৬৫] হযরত যায়দ আসলামী থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) যখন বুঝতেন যে, সাহাবীদের মন দুনিয়ার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছে, তখন উচ্চ আওয়াযে বলতেন-
أَتَتْكُمُ الْمَنِيَّةُ رَاتِبَةً لَازِمَةً، إِمَّا بِشَقَاوَةٍ وَإِمَّا بِسَعَادَةٍ
মৃত্যু তোমাদের দিকে অবশ্যই ধাবিত হবে চাই তোমরা সৎকর্মপরায়ন হও অথবা অসৎকর্মপরায়ণ।-[রিওয়ায়াতঃ১১৭]
দুনিয়ার সময়
[৬৬] হযরত ইবনে উমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) আমাদের মাঝে তাশরীফ নিয়ে আসলেন। ঐ সময় সূর্য প্রায় খেজুর গাছের পাতার নিচে এসে পড়েছে। তখন তিনি বললেন-
مَا بَقِيَ مِنَ الدُّنْيَا إِلَّا مِثْلُ مَا بَقِيَ مِنْ يَوْمِنَا هَذَا. . مَضَى مِنْهُ
দুনিয়া এতটুকুই অবশিষ্ট আছে, যতটুকু আমাদের আজকের দিনের বাকী সময়টুক রয়ে গেছে।-[রিওয়ায়াতঃ১২০]
[৬৭] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
بُعِثْتُ أَنَا وَالسَّاعَةُ كَهَاتَيْنِ
আমাকে এবং কিয়ামতকে এই দুই এর (দুই আঙ্গুলের) মধ্যবর্তী করে পাঠানো হয়েছে।-[রিওয়ায়াতঃ১২৫]
দুনিয়ায় অবস্থানের দৃষ্টান্ত
[৬৮] হযরত ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَا لِي وَلِلدُّنْيَا؟ إِنَّمَا مَثَلِي وَمَثَلُ الدُّنْيَا كَمَثَلِ رَاكِبٍ قَالَ فِي ظِلِّ شَجَرَةٍ فِي يَوْمٍ صَائِفٍ فَرَاحَ وَتَرَكَهَا
দুনিয়ার সাথে আমার কি সম্পর্ক। দুনিয়ার সাথে আমার সম্পর্কের দৃষ্টান্ত হলো এমন, যেমন এক ভ্রমণকারী দ্বিপ্রহরের প্রচন্ড গরমে একটি গাছের ছায়ায় কিছুক্ষণ আরাম করল, অতঃপর তা ছেড়ে চলে গেল।-[রিওয়ায়াতঃ১২৭]
নিদ্রা ও অবসর
[৬৯] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) আল্লাহর বাণীর তাফসীরে বলেন-
{إِنَّ لَكَ فِي النَّهَارِ سَبْحًا طَوِيلًا} [المزمل: 7] ، قَالَ: النَّوْمُ وَالْفَرَاغُ “
নিশ্চয়ই দিনের বেলা তোমার দীর্ঘ কর্মব্যস্ততা রয়েছে।–সূরা মুযযাম্মিল:৭
এর অর্থ হলো নিদ্রা ও অবসর।-[রিওয়ায়াতঃ১২৯]
যে অবসর সময় কাজে লাগায়নি তার শাস্তি
[৭০] হযরত মুয়াবিয়া বিন কুররাহ বলেন-
أَشَدُّ الْحِسَابِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ عَلَى الصَّحِيحِ الْفَارِغِ
কিয়ামতের দিন ঐ লোকের সবচেয়ে কঠিন হিসাব হবে, যে সুস্থ ও অবসর ছিল (অথচ আমল করে নাই)।-[রিওয়ায়াতঃ১৩০]
যখন অন্তরে নূর প্রবেশ করে
[৭১] হযরত আব্দুল্রাহ ইবনে মাসউদ (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) এই আয়াত তিলাওয়াত করলেন-
فَمَنْ يُرِدِ اللَّهُ أَنْ يَهْدِيَهُ يَشْرَحْ صَدْرَهُ لِلْإِسْلَامِ
আল্লাহ তাআলা যার জন্য হিদায়াত কামনা করেন, ইসলামের জন্য তার অন্তরকে খুলে দেন। সূরা আনআম:১২৫
রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন-
إِنَّ النُّورَ إِذَا دَخَلَ الصَّدْرَ انْفَسَحَ
একটা নূর অন্তরে প্রবেশ করানো হয় অতঃপর অন্তর খুলে যায় ও প্রশস্ত হয়ে যায়।
সাহাবীগণ জিজ্ঞাসা করলেন, এর কোন আলামত আছে কি, যার দ্বারা তা বুঝা যায়? তিনি বললেন, এর পরিচয় এভাবে পাওয়া যায় যে- এই ব্যক্তি ধোঁকার জগত (দুনিয়া) থেকে দূরে থাকে, স্থায়ী জগত (পরকালের) প্রতি আকৃষ্ট হয় এবং মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহণ করে।-[রিওয়ায়াতঃ১৩০]
আহসান আমল এর একটি তাফসীর
[৭২] হযরত সুদ্দী (রহ) আল্লাহ তাআলার বাণী-
الَّذِي خَلَقَ الْمَوْتَ وَالْحَيَاةَ لِيَبْلُوَكُمْ أَيُّكُمْ أَحْسَنُ عَمَلًا
তিনি জীবন ও মৃত্যু সৃষ্টি করেছেন তোমাদেরকে পরীক্ষার জন্য, যাতে তিনি দেখে নেন, কে তোমাদের মধ্যে উত্তম আমলকারী।– সূরা মুলক:২
প্রসঙ্গে বলেন-
أَيْ: أَيُّكُمْ لِلْمَوْتِ ذِكْرًا، وَأَحْسَنُ لَهُ اسْتِعْدَادًا، وَأَشَدُّ مِنْهُ خَوْفًا، فَاحْذَرُو
এই আয়াতের দ্বারা ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য, যে মৃত্যুকে খুব স্মরণ করে, এর জন্য খুব উত্তম পাথেয় প্রস্তুত করে এবং একে ভয় করে। অতএব তোমরাও একে ভয় কর।-[রিওয়ায়াতঃ১৩২]
দাউদ তাঈ (রহ) এর অবস্থা
[৭৩] একবার হযরত দাউদ তাঈ (রহ) পথ দিয়ে চলছিলেন। তখন কোন এক ব্যক্তি তাকে কোন হাদীসের ব্যাপারে জিজ্ঞাসা করলেন। তখন তিনি বললেন, অমাকে ছেড়ে দাও। আমি এর জন্য ভীত যে, না জানি আমার মৃত্যুর সময় এসে যায়।-[রিওয়ায়াতঃ১৩৭]
সব কাজে ধীরতা– আখিরাতের আমল ব্যতীত
[৭৪] হযরত উমর (রা) বলেন-
التُّؤَدَةُ فِي كُلِّ شَيْءٍ خَيْرٌ، إِلَّا فِي أَمْرِ الْآخِرَةِ
প্রত্যেক কাজে ধীরতা ও নম্রতা অবলম্বন করা উত্তম- আখিরাতের আমল ব্যতীত।-[রিওয়ায়াতঃ১৩৯]
প্রতিটি দিন মুমিনের সুবর্ণ সুযোগ
[৭৫] হযরত সাঈদ ইবনে জুবায়র (রহ) বলেন –
كُلُّ يَوْمٍ يَعِيشُهُ الْمُؤْمِنُ غَنِيمَةٌ
মুমিন যেই দিনটিই জীবিত থাকে, সেই দিনটিকে গনীমত মনে করে।-[রিওয়ায়াতঃ১৪৫]
অত্যাচারী হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফের কান্না
[৭৬] একবার হাজ্জাজ ইবনে ইউসুফ মিম্বরে আরোহণ করে তার ভাষণে বলেন-
رَحِمَ اللَّهُ امْرَأً نَظَرَ لِنَفْسِهِ بَادِرًا فَوْتَهَا قَبْلَ أَنْ يَنْزِلَ الْمَوْتُ بِهَا، قَالَ: ثُمَّ يَنْزِلُ الْمَوْتُ بِهَا
আল্লাহ ঐ ব্যক্তির প্রতি রহম করুন, যে তার নিজের অবস্থা পর্যালোচনা করে আর মৃত্যু আসার পূর্বেই মৃত্যুর প্রস্তুতি গ্রহন করে। অতঃপর তার মৃত্যু হয়।
এটা বলে সে কান্নারত অবস্থায় মিম্বর থেকে নেমে এলো।-[রিওয়ায়াতঃ১৫৮]
আমলনামা বন্ধ হওয়ার পূর্বেই আমল করা
[৭৭] হযরত বিশর ইবনে আব্দুল্লাহ নাহশালী বলেন, আমি আবু বকর নাহশালী এর নিকট গেলাম ঐ সময়, যখন সে মুমূর্ষ অবস্থায় ছিল। তিনি তার মাথা দিয়ে ইশারা করছিলেন। কখনো উপরের দিকে আবার কখনো নিচের দিকে- যেভাবে নামায পড়া হয়। সাথিদের মধ্যে কেউ জিজ্ঞাসা করল, আল্লাহ আপনার প্রতি রহম করুন। এই অবস্থায়ও নামায পড়ছেন? তখন তিনি বললেন-
إِنَّنِي أُبَادِرُ طَيَّ الصَّحِيفَةِ
আমি চাইছি যে, আমলনামা বন্ধ হবার পূর্বে দ্রুত কিছু নেক আমল করে নেই।-[রিওয়ায়াতঃ১৫৮]
দুনিয়ার কষ্ট থেকে নিরাপদ থাকার স্থান
[৭৮] হযরত আবু দারদা (রা) বলেন-
النَّاسُ بَيْنَ مُنْذَرٍ وَمُضْمَرٍ بِخُرُوجِ الْعَاهَاتِ. . . عِنْدَ الْقَبْرِ
মানুষ ভয় প্রদর্শনকারী আর আত্মগোপনকারীর মাঝে অবস্থান করছে। যখন কবরে যাবে তখন এদের কষ্ট থেকে নিরাপদ হয়ে যাবে।-[রিওয়ায়াতঃ১৬৩]
শয়তানের কাজ
[৭৯] হযরত হাসান বসরী (রহ) আল্লাহর বাণী-
الشَّيْطَانُ سَوَّلَ لَهُمْ وَأَمْلَى لَهُمْ
শয়তান তাদের কাজকে শোভন করে দেখায় এবং মিথ্যা আশা প্রদান করে।-সূরা মুহাম্মদ:২৫
প্রসঙ্গে বলেন-এর অর্থ হলো শয়তান তার সামনে গুনাহ ও পাপ কাজকে সুসজ্জিত করে তুলবে এবং কামনা-বাসনায় লিপ্ত করে দেবে।-[রিওয়ায়াত: ১৬৫]
মানুষ মেহমান এর মত
[৮০] হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা) বলেন-
مَا مِنْكُمْ أَحَدٌ أَصْبَحَ إِلَّا وَهُوَ ضَيْفٌ، وَمَالُهُ عَارِيَةٌ وَالضَّيْفُ مُرْتَحِلٌ لِيَنْطَلِقَ، وَالْعَارِيَةُ مُؤَدَّاةٌ
তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তিই সকালে উঠে, সে যেন মেহমান এর মত। আর তার মাল সম্পদ এমন, যেমন কোন বস্তু ব্যবহারের জন্য ধার নেয়া হয়। মেহমানকে তো ফিরে যাবার জন্য তৈরী হতেই হয়, আর ব্যবহারের জিনিস ফিরিয়ে দিতে হয়।-[রিওয়ায়াত: ১৭৩]
পূর্ব থেকেই আমল করা
[৮১] হযরত আবু উমামা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
بَادِرُوا بِالْعَمَلِ هِرَمًا نَاغِصًا، أَوْ مَوْتًا خَالِسًا، أَوْ مَرَضًا حَابِسًا، أَوْ تَسْوِيفًا مُؤْيِسًا
অক্ষম করে দেওয়া বার্ধক্য, ঝাপটা মেরে দেওয়া মৃত্যু, বেকার করে দেওয়া রোগ এবং নিরাশ করে দেওয়া তড়িঘড়ি (আমল) করার পূর্বে নেক আমলে নিয়োজিত হও।-[রিওয়ায়াতঃ২০৩]
[৮২] হযরত আবী জাওযা থেকে বর্ণিত। তিনি নিম্নের আয়াত প্রসঙ্গে বলেন-
وَكَانَ أَمْرُهُ فُرُطًا} [الكهف: 28]
যার কার্যকলাপ সীমা অতিক্রম করে, তুমি তার অনুসরণ করো না।– সূরা কাহাফ:২৮
এর দ্বারা উদ্দেশ্য تَسْرِيفٌ তড়িঘড়ি করা।-[রিওয়ায়াতঃ২০৪]
মানুষ তওবার দিকে মন্থর
[৮৩] হযরত ইবনে আব্বাস (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি নিম্নের আয়াত-
{بَلْ يُرِيدُ الْإِنْسَانُ لِيَفْجُرَ أَمَامَهُ} [القيامة: 5] قَالَ: «يُقَدِّمُ الذَّنْبَ، وَيُؤَخِّرُ التَّوْبَةَ»
তবুও মানুষ ভবিষ্যতে অপকর্ম করতে চায়।- সূরা কিয়ামাহ:৫
প্রসঙ্গে বলেন- মানুষ গুনাহ করতে অগ্রগামী এবং তওবা করতে পশ্চাদগামী।-[রিওয়ায়াতঃ২০৫]
ভবিষ্যতের সংকল্প ও ইচ্ছা
[৮৪] হযরত আবু ইসহাক (রহ) কে বনী আব্দুল কায়স গোত্রের এক ব্যক্তি বলল, আমাকে কিছু ওসীয়ত করুন। তিনি বললেন-
احْذَرُوا سَوْفَ
এই ধরণের বিষয় থেকে বাঁচ যার মধ্যে ভবিষ্যতের কোন জিনিসের ইচ্ছার প্রকাশ পায়।-[রিওয়ায়াতঃ২০৬]
[৮৫] হযরত কাতাদাহ (রহ) আবুল জালদ থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন- আমি কোন কিতাবে পড়েছি-
أَنَّ سَوْفَ جُنْدٌ مِنْ جُنُودِ إِبْلِيسَ
ভবিষ্যতের ইচ্ছা ও সংকল্প শয়তানের সৈন্য বাহিনীর এক সৈন্য।-[রিওয়ায়াতঃ২০৭]
[৮৬] হযরত আনাস (রা) বলেন-
التَّسْوِيفُ جُنْدٌ مِنْ جُنُودِ إِبْلِيسَ عَظِيمٌ، طَالَمَا خَدَعَ بِهِ
ভবিষ্যতের চিন্তা ও খেয়ালে লেগে থাকা শয়তানের সৈন্য বাহিনীর এক সৈন্য। অধিকাংশ সময় সে এর দ্বারা ধোঁকা প্রদান করে।-[রিওয়ায়াতঃ২০৮]
[৮৭] হযরত ইকরিমা (রহ) আল্লাহর বাণী প্রসঙ্গে বলেন-
وَيَقْذِفُونَ بِالْغَيْبِ مِنْ مَكَانٍ بَعِيدٍ} [سبأ: 53] ، قَالَ: ” إِذَا قِيلَ لَهُمْ: تُوبُوا، قَالُوا: سَوْفَ
তারা দূরবর্তী স্থান হতে অদৃশ্য বিষয়ে বাক্য ছুড়ে মারত।– সূরা সাবা:৫৩
এর অর্থ হলো যখন তাদেরকে বলা হয় তওবা কর, তখন তারা বলে পরে করে নেব।-[রিওয়ায়াতঃ২০৯]
[৮৮] হযরত হাসান বসরী (রহ) বলেন-
يَا مَعْشَرَ الشَّبَابِ إِيَّاكُمْ وَالتَّسْوِيفَ: سَوْفَ أَفْعَلُ، سَوْفَ أَفْعَلُ
হে নওজোয়ানের দল! ভবিষ্যতের চিন্তা ও খেয়ালে লেগে থাকা থেকে বাঁচ যে, তুমিও এটো বলতে থাক- আমি আগামীতে এটা করব আগামীতে ওটা করব।-[রিওয়ায়াতঃ২১২]
বিজ্ঞদের কথা
[৮৯] হযরত উতবা বিন হারুন রিওয়ায়াত করেন। কতক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন-
رَحِمَ اللَّهُ أَمْرَأً أَنْبَهَتْهُ الْمَوَاعِظُ، وَأَحْكَمَتْهُ التَّجَارِبُ، وَأَدَّبَتْهُ الْحِكَمُ، وَلَمْ يُغْرِرْهُ بِسَلَامَةٍ يُشْفِي بِهِ عَلَى هَلَكَةٍ، وَأَرْحَلَ عَنْهُ التَّسْوِيفَ بِعِلْمِهِ بِمَا فِيهِ مِمَّا قَطَعَ بِهِ النَّاسُ مَسَافَةَ آجَالِهِمْ، فَهَجَمَ عَلَيْهِمْ مِنَ الْمَوْتِ وَهُمْ غَافِلُونَ
আল্লাহ তাআলা ঐ ব্যক্তির প্রতি রহম করুন, যে ওয়ায নসীহত দ্বারা সতর্ক হয়ে যায়। যে অভিজ্ঞতার দ্বারা শিক্ষা গ্রহণ করে। যে আকল দ্বারা আদব শিখে নেয়। যে এমন সুস্থতা ও নিরাপত্তা দ্বারা ধোঁকায় না পড়ে, যা তাকে ধ্বংসের কিনারায় নিয়ে যায়। যে নিজের ইলম দ্বারা ভবিষ্যতের স্বপ্ন ও খেয়ালে পতিত হওয়া থেকে রক্ষা পায়, যার মধ্যে লোকেরা সময় নষ্ট করতে করতে মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়ে যায় এবং এমন গাফিল থাকে যে, মৃত্যু হঠাৎ এসে আক্রমণ করে।-[রিওয়ায়াতঃ২১৩]
[৯০] হযরত আবু হুরায়রা (রা) বলেন-
تَعَوَّدُوا الْخَيْرَ، فَإِنَّ الْخَيْرَ عَادَةٌ، وَإِيَّاكُمْ وَعَادَةَ السُّوَّافِ مِنْ سَوْفٍ، أَوْ مِنْ سَوْفَ
নেক ও কল্যাণকর কাজের অভ্যাস বানিয়ে নাও, যেন এটাই উত্তম স্বভাবে পরিণত হয়। আর স্বপ্ন ও কল্পনা এবং কামনা বাসনার দুনিয়ায় পড়ে থাকা থেকে বাঁচ।-[রিওয়ায়াতঃ২১৫]
[৯১] হযরত হুসায়ন ইবনে আব্দুর রহমান বলেন। কতক বিজ্ঞ ব্যক্তি বলেছেন-
إِيَّاكَ وَالتَّسْوِيفَ لِمَا تَهُمُّ بِهِ مِنْ فِعْلِ الْخَيْرِ، فَإِنَّ وَقْتَهُ إِذَا زَالَ لَمْ يَعُدْ إِلَيْكَ
তোমরা স্বপ্ন ও কল্পনার জগতে পড়ে থাকা থেকে বাঁচ, কেননা তা নেক ও কল্যাণকর কাজ থেকে বিরত রাখে। আর এর একটা সময় আছে, যখন তা অতিবাহিত হয়ে যায়, তা আর ফিরে আসে না।-[রিওয়ায়াতঃ২১৮]
উপদেশ গ্রহণে যথেষ্ট একটি কবিতা
[৯২] ইমাম ইবনে আবিদ দুনইয়া (রহ) বলেন- আমাকে আবু আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে আইয়ুব এই কবিতা শুনিয়েছেন-
اغْتَنِمْ فِي الْفَرَاغِ فَضْلَ رُكُوعٍ … فَعَسَى أَنْ يَكُونَ مَوْتُكَ بَغْتَةْ
كَمْ صَحِيحٍ رَأَيْتَ مِنْ غَيْرِ سَقَمٍ … ذَهَبَتْ نَفْسُهُ الصَّحِيحَةُ فَلْتَةْ
অবসর পেলেই কিছু নামায পড়ে নাও- এটা তোমার জন্য মহা সম্পদ। অসম্ভব নয় অকস্মাৎ তোমার মৃত্যু এসে যাবে। বহুবার তুমি দেখে থাকবে দিব্যি সুস্থ লোক যার কোন রোগ নেই- হঠাৎ তার মৃত্যু হয়ে গেছে।– [রিওয়ায়াত:২২৩]
শয়নকালে একজন মনীষীর আমল
[৯৩] হযরত হাম্মাদ বিন ইয়াহইয়া বর্ণনা করেন। মুহাম্মদ ইবনে ওয়াসে (রহ) যখন ঘুমাতে যেতেন, তখন শয়নের পূর্বে পরিবারবর্গকে বলতেন-
أَسْتَوْدِعُكُمُ اللَّهَ، فَلَعَلَّهَا أَنْ تَكُونَ مَنِيَّتِي الَّتِي لَا أَقُومُ فِيهَا
আমি তোমাদেরকে আল্লাহর সোপর্দ করছি। হতে পারে আজ রাতেই আমি মৃত্যুবরণ করব, আর ঘুম থেকে উঠতে পারব না।
এটা তার শয়নকালের অভ্যাস ছিল।-[রিওয়ায়াত:২২৭]
আল্লাহ যাকে অপমানিত করেন
[৯৪] মুহাম্মদ ইবনে বশীর আল আনসারী তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
إِذَا أَرَادَ اللَّهُ بَعَبْدٍ هَوَانًا أَنْفَقَ مَالَهَ فِي الْبُنْيَانِ، أَوْ فِي الْمَاءِ وَالطِّينِ
আল্লহ তাআলা যাকে অপমানিত করতে চান তার মাল-সম্পদ দালান-কোঠার মধ্যে ব্যয় করিয়ে দেন অথবা পানি বা মাটিতে মিশিয়ে দেন।-[রিওয়ায়াত:২৩৩]
[৯৫] ইবরাহিম তাইমী (রহ) বলেন-
إِنَّ الرَّجُلَ إِذَا كَانَ لَهُ مَالٌ، فَمَنَعَ حَقَّهُ، سُلِّطَ عَلَى أَنْ يُنْفِقَهُ فِي الْمَاءِ وَالطِّينِ، وَإِنَّ الْعَبْدَ لَيُؤْجَرُ فِي نَفَقَتِهِ كُلِّهَا إِلَّا فِيمَا يَجْعَلُهُ فِي الْبِنَاءِ وَالطِّينِ
যদি কোন ব্যক্তি সম্পদশালী হয় আর সে তার সম্পদের হক আদায় না করে, তবে আল্লাহ তাআলা তার সম্পদ পানি ও মাটিতে মিশিয়ে দেয়ার জন্য তাকে প্রবল করে দেন। আর সব খরচের প্রতিদান দেয়া হয়, শুধু ঐ খরচ ব্যতীত যা সে ইমারত নির্মাণ ও মাটির জন্য করেছে। -[রিওয়ায়াত:২৩৪]
দালান–কোঠার প্রতি রাসূলের অনিহা
[৯৬] হযরত আনাস (রা) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, একবার আমি মদীনার রাস্তায় রাসূলুল্লাহ (সা) এর সাথে পথ চলছিলাম। তখন তিনি ইটের তৈরী গম্বুজের মত একটি বাড়ি দেখলেন। তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, এই প্রাসাদের মত বাড়ি কার? কেউ বলল, অমুক ব্যক্তির। এটা শুনে রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন-
أَمَا إِنَّ كُلَّ بِنَاءٍ كَلٌّ عَلَى صَاحِبِهِ يَوْمَ الْقِيَامَةِ، إِلَّا مَا كَانَ فِي مَسْجِدٍ، أَوْ فِي بِنَاءِ مَسْجِدٍ، أَوْ أَوْ
শোন! কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ইমারত ও অট্রালিকা তার মালিকের জন্য বোঝা হবে, ঐ ইমারত ব্যতীত যা মসজিদে আছে অথবা যা মসজিদ নির্মাণে জন্য হয় অথবা অমুক অমুক কাজের জন্য।
এরপর আরেকদিন যখন রাসূলুল্লাহ (সা) সেখান দিয়ে যাচ্ছিলেন, তখন তিনি সেটা দেখতে পেলেন না। তখন জিজ্ঞাসা করলেন ঐ ঘরের কি হলো। হযরত আনাস (রা) বললেন, ঐ ঘরের মালিক আপনার উক্তি সম্পর্কে জানতে পেরে তা ভেঙ্গে ফেলেছে। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, আল্লাহ তার প্রত রহম করুন।-[রিওয়ায়াতঃ২৩৫]
দুটি আমনতদার
[৯৭] হযরত কাতাদাহ (রহ) বর্ণনা করেন। তিনি বলেন, উমর (রা) বলেছেন-
لِي مَعَ كُلِّ خَائِنٍ أَمِينَانِ: الْمَاءُ وَالطِّينُ
প্রত্যেক খিয়ানতকারীর সাথে দুজন আমনতদারও থাকে, তাহলো মাটি আর পানি।-[রিওয়ায়াত২৩৬]
যে খরচে বরকত নাই
[৯৮] হযরত সুলায়মান বিন উতবা বলেন-
كُلُّ نَفَقَةٍ تُخْلَفُ إِلَّا الْبُنْيَانَ
প্রত্যেক (হালাল) খরচের মধ্যে বরকত প্রদান করা হয়, শুধুমাত্র ইমারত নির্মাণের খরচ ব্যতীত।-[রিওয়ায়াতঃ২৩৭]
[৯৯] হযরত খাব্বাব বিন আরত (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَا أَنْفَقَ الْمُؤْمِنُ مِنْ نَفَقَةٍ إِلَّا أُجِرَ فِيهَا، إِلَّا نَفَقَةً فِي التُّرَابِ
মুমিন ব্যক্তি তার যে প্রয়োজনেই ব্যয় করুক না কেন তার প্রতিদান দেয়া হয়, শুধু ঐ খরচ ব্যতীত যা সে মাটির (ইমারতের) জন্য করেছে।-[রিওয়ায়াতঃ২৩৮]
কিয়ামতের আলামত
[১০০] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
لَا تَقُومُ السَّاعَةُ حَتَّى يَتَطَاوَلَ النَّاسُ فِي الْبُنْيَانِ
ঐ সময় পর্যন্ত কিয়ামত হবে না, যে পর্যন্ত না মানুষ বিরাট বিরাট অট্টালিকা নির্মাণ করে গর্ব অহংকার প্রকাশ না করবে।-[রিওয়ায়াতঃ২৩৯]
সাহাবীদের ঘর–বাড়ির প্রতি নিমগ্নতায় রাসূলেরউপদেশ
[১০১] আবদুল্লাহ ইবন আমর (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার আমি বাশ ও গাছ দিয়ে ঘর ঠিক করছিলাম, তখন রাসূলুল্লাহ (সা) আমার পাশ দিয়ে যাচ্ছিলেন। তিনি বললেন এ কি করছ? মৃত্যু তো এর চেয়েও দ্রুত আগমনকারী।-[রিওয়ায়াতঃ২৪২]
উম্মুল মুমিনীনদের ঘর
[১০২] হযরত হাসান বসরী (রহ) বলেন-
كُنْتُ أَدْخُلُ بُيُوتَ أَزْوَاجِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي خِلَافَةِ عُثْمَانَ، فَأَتَنَاوَلُ سُقُفَهَا بِيَدِي
আমি হযরত উসমান (রা) এর খিলাফতের যুগে নবী (সা) এর স্ত্রীদের ঘরে যাতায়াত করতাম। আমার হাত তাদের ঘরের ছাদ স্পর্শ করত।-[রিওয়ায়াতঃ২৪৫]
প্রয়োজনের অতিরিক্ত ঘর–বাড়ি
[১০৩] হযরত আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত। রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَنْ بَنَى مِنَ الْبُنْيَانِ فَوْقَ مَا يَكْفِيهُ، كُلِّفَ أَنْ يَحْمِلَهُ مِنْ سَبْعِ أَرَضِينَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ
যে ব্যক্তি প্রয়োজনের অতিরিক্ত ইমারত নির্মাণ করল, কিয়ামতের দিন সাত তবক যমীন উঠানোর জন্য তাকে বাধ্য করা হবে।-[রিওয়ায়াতঃ২৪৬]
হযরত খাব্বাব বিন আরত (রা) এর অবস্থা
[১০৪] হযরত কায়স বিন হাযিম বলেন, আমি হযরত খাব্বাব বিন আরত (রা) এর খিদমতে হাযির হয়ে দেখলাম যে, তিনি ঘরের দেয়াল নির্মাণ করছেন। তখন তিনি বললেন-
إِنَّ الْمُسْلِمَ يُؤْجَرُ فِي كُلِّ شَيْءٍ إِلَّا شَيْئًا يُنْفِقُهُ فِي التُّرَابِ، وَلَوْلَا أَنَّ النَّبِيَّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ نَهَانَا أَنْ نَدْعُوَ بِالْمَوْتِ لَدَعَوْتُ بِهِ
মুসলমানের প্রত্যেক কাজের প্রতিদান দেয়া হয়, শুধু ঐ সব খরচ ব্যতীত যা সে মাটির জন্য করেছে। যদি নবী (সা) আমাদেরকে মৃত্যুর দুআ করার জন্য নিষেধ না করতেন, তবে আমি অবশ্যই মৃত্যুর জন্য দুআ করতাম।-[রিওয়ায়াতঃ২৪৭]
সম্পদের যাকাত আটকে দিলে
[১০৫] হযরত কাতাদাহ (রহ) বলেন, এটা বলা হয় যে-
مَنْ مَنَعَ زَكَاةَ مَالِهِ سُلِّطَ عَلَى الطِّينِ
যে ব্যক্তি তার সম্পদের যাকাত আটকে দেয় আল্লাহ তার সম্পদকে মাটির উপর প্রবল করে দেন।-[রিওয়ায়াতঃ২৪৮]
প্রয়োজনীয় দালান–কোঠা নির্মাণের হুকুম
[১০৬] হযরত ইবরাহিম নাখয়ী (রহ) কে জিজ্ঞাসা করা হলো যে, প্রয়োজনের জন্য যে ইমারত নির্মাণ করা হয় তার কি হুকুম? তিনি বললেন-
لَا أَجْرَ وَلَا وِزْرَ
না এর সওয়াব আছে আর না গুনাহ।-[রিওয়ায়াতঃ২৪৯]
[১০৭] হযরত আম্মার ইবনে আম্মার বলেন-
إِذَا رَفَعَ الرَّجُلُ بِنَاءَهُ فَوْقَ سَبْعِ أَذْرُعٍ، نُودِيَ: يَا فَاسِقَ الْفَاسِقِينَ إِلَى أَيْنَ؟
যখন কোন ব্যক্তি তার ইমারত সাত হাতের বেশী উঁচু করে, তখন এক ঘোষণাকারী ঘোষণা প্রদান করে যে, হে ফাসিকদের ফাসিক! শেষ পর্যন্ত এই ইমারত কতদূর পর্যন্ত উঁচু করবে? -[রিওয়ায়াতঃ২৫০]
হযরত নূহ (আ) এর ঘর
[১০৮] আবুল মুহাজির আর-রাক্কী (রহ) বর্ণনা করেন। হযরত নূহ (আ) সাড়ে নয়শত বৎসর বালু নির্মিত ঘরে (টীলায়) অতিবাহিত করেছেন। কেউ বলল, হে আল্লাহর নবী! আপনি ঘরই বানিয়ে নিন। তিনি বললেন, আমি হয়তো আজ বা কালই মরে যাব (ঘর বানিয়ে কি লাভ)।-[রিওয়ায়াতঃ২৫১]
[১০৯] হযরত ইসমাইল বিন সালিহ আল হাশিমী বলেন- হযরত নূহ (আ) এর ছেলে তার পিতাকে তাঁবু বানাতে দেখলেন। তখন সে তার পিতাকে বলল, আপনি দুনিয়া থেকে দূরে সরে গেছেন ভাল কথা। কিন্তু আপনি আপনার নিজের ও নিজের সন্তানের জন্য একটি ঘর তো তৈরী করবেন। নূহ (আ) বললেন-
إِنَّ الَّذِي يَتَوَقَّعُ مِنَ الْمَوْتِ مَا يَتَوَقَّعُ، فَالْخَيْمَةُ لَهُ كَثِيرٌ
যে ব্যক্তি মৃত্যু থেকে বেঁচে থাকবে বলে আশা করে, সে তা করুক। তার জন্য এই তাঁবুই যথেষ্ট।-[রিওয়ায়াতঃ২৫২]
হযরত ইসা (আ) এর ঘর
[১১০] হযরত আশআস বিন ইসহাক বলেন। হযরত ইসা (আ) কে কেউ বলল, কি ভাল হত যদি আপনি থাকার জন্য একটি ঘর বানিয়ে নিতেন। তিনি বললেন-
يَكْفِينَا خَلَقَانُ مَنْ كَانَ قَبْلَنَا
আমাদের জন্য আমাদের পূর্ববর্তীদের দৃষ্টান্তই যথেষ্ট।-[রিওয়ায়াতঃ২৫৫]
অর্থাৎ পূর্ববর্তীদের বিলীন হয়ে যাওয়ার দৃষ্টান্ত। তাদের ঘর-বাড়ি ও তারা কোথায় রয়েছ।
[১১১] হযরত মায়সারা (রহ) বলেন, হযরত ইসা (আ) কখনো নিজের ঘর বানাননি। কেউ জিজ্ঞাসা করল, আপনি আপনার ঘর-বাড়ি কেন বানান না? তিনি বললেন-
لَا أَتْرُكُ بَعْدِي شَيْئًا مِنَ الدُّنْيَا أُذْكَرُ بِهِ
আমি আমার পর দুনিয়াতে এমন কিছু ছেড়ে যেতে চাই না, যার দ্বারা লোকেরা আমাকে স্মরণ করবে।-[রিওয়ায়াতঃ২৫৬]
যারা অহংকার থেকে মুক্ত
[১১২] একবার হযরত আলী (রা) এক মহল্লায় লোকদেরকে নামায পড়ালেন। সেই সময় মহল্লার ঘরগুলো বাঁশ ও ঝোঁপ-ঝাড় দ্বারা বানানো হত। তিনি বললেন-
إِنَّ هَذِهِ الْأَبْيَاتَ قَوْمٌ لَا يُعَذَّبُونَ عَلَى الْكِبْرِ
এই ঘরের অধিবাসীদেরকে অহংকারের জন্য আযাব দেয়া হবে না।-[রিওয়ায়াতঃ২৬২]
অর্থাৎ এমন সাদামাটা ঘরের অধিবাসীরা অহংকার থেকে মুক্ত থাকে।
ফিরআউনের মত লোক – হযরত উমর (রা) এরবিস্ময়
[১১৩] হযরত সুফিয়ান বিন উয়াইনাহ (রহ) বলেন, একবার হযরত উমর (রা) জানতে পারলেন যে, এক ব্যক্তি পাকা ইটের ঘর তৈরী করেছে। তিনি এটা শুনে বললেন-
مَا كُنْتُ أَحْسَبُ أَنَّ فِي هَذِهِ الْأُمَّةِ مِثْلَ فِرْعَوْنَ
আমি কল্পনাও করিনি যে এই উম্মতের মধ্যে ফিরআউনের মত লোক থাকতে পারে।
বর্ণনাকারী বলেন, হযরত উমর (রা) এই আয়াতের দিকে ইঙ্গিত করেন-
(لَعَلِّي)ابْنِ لِي صَرْحًا (وَقَالَ فِرْعَوْنُ يَا هَامَانُ)
(ফিরআউন বলল, হে হামান!) আমার জন্য (সুউচ্চ) প্রসাদ নির্মাণ কর।-[রিওয়ায়াতঃ২৬৩]
দাজ্জালের প্রশ্ন
[১১৪] হযরত সুফিয়ান (রহ) বলেন, আমি জানতে পেরেছি যে, [যে দ্বীপে সাহাবী তামীম দারী (রা) এর সাথে দাজ্জালের দেখা হয়েছিল, তখন] দাজ্জাল এটাও জিজ্ঞাসা করেছিল যে, তোমাদের ওখানে ইটের তৈরী দালান নির্মাণ শুরু হয়ে গেছে।-[রিওয়ায়াতঃ২৬৫]
কয়েকটি ব্যাপারে রাসূলের আশংকা
[১১৫] হযরত অবু হুরায়রা (রা) বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সা) আমার কাঁধে অথবা রানে হাত মেরে বললেন, হে আবু হুরায়রা! ঐ সময় তোমার কি অবস্থা হবে, যখন তুমি তিন ধরণের অবস্থার সম্মুখিন হয়ে পড়বে, আর আমি তোমাকে ঐ অবস্থায় পতিত হওয়া থেকে আল্লাহর আশ্রয়ে সমর্পণ করছি। আমি আরয করলাম ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার বাবা মা আপনার জন্য কুরবান হোক, ঐ অবস্থাগুলো কি? তিনি (সা) বললেন-
طُولُ الْبُنْيَانِ، وَإِمَارَةُ الصِّبْيَانِ، وَشِدَّةُ الزَّمَانِ
১.বড় বড় ইমারত নির্মাণ। ২.কম বয়সীদের ইমারত নির্মাণ এবং ৩.যামানার কঠোরতা।-[রিওয়ায়াতঃ২৭৬]
[১১৬] উম্মুল মুমিনীন হযরত মায়মুনা (রা) বলেন, একদিন রাসূলুল্লাহ (সা) ইরশাদ করেন-
مَا أَنْتُمْ إِذَا مَرِجَ الدِّينُ، وَسُفِكَ الدَّمُ، وَظَهَرَتِ الزِّينَةُ، وَشَرُفَ الْبُنْيَانُ، وَاخْتَلَفَتِ الْإِخْوَانُ، وُحُرِّقَ الْبَيْتُ؟
ঐ সময় তোমাদের কি অবস্থা হবে, যখন দীন নষ্ট হতে থাকবে, রক্তপাত ঘটতে থাকবে, যিনা ব্যভিচারের প্রসার ঘটবে, ইমারত উঁচু হতে থাকবে, ভাইয়ে ভাইয়ে বিবাদ ও মতভেদ হতে থাকবে এবং বায়তুল্লাহ জ্বালিয়ে দেয়া হবে।-[রিওয়ায়াতঃ২৭৭]