বিষয়: ইখলাস কি ? কেন জরুরি ? ভাল কাজ করলেই কি জান্নাত ?
(ক)
মামার বাড়িতে আজ দ্বিতীয় দিন ৷ আয়না দেখে মাথা আঁচড়াচ্ছি আর নিজেকে একটু ভাল করে দেখে নিচ্ছি ৷ জাফলং যাব বলে কথা ৷ যেমন তেমনভাবে গেলে কি আর চলে ৷ স্মার্টনেস বলে একটা কথা আছে বৈ কি ৷
হঠাৎ ড্রইং রুম থেকে ভাইয়ার ডাঁক শোনা গেল, মেরাজ !
—এইতো আসছি ভাইয়া !
একটু তাড়াহুরো করে নিজেকে গুছিয়ে ভাইয়ার সামনে এলাম ৷ দেখলাম ভাইয়াও রেডি ৷
— কিরে তুই এখানে; রাকিব কোথায় ?
—বল কি, রাকিব এখনো আসেনি ? দাঁড়াও দেখছি ৷
হাঁটতে হাঁটতে রাকিবের বেড রুম বরাবর চলে এলাম ৷ ভিতরে প্রবেশ করতেই জিজ্ঞেস করলাম, কিরে ! তোর এখনও হয়নি ৷
— নারে ৷ কিছুক্ষণ হলো ঘুম থেকে উঠলাম ৷
— বলিস কি ! সেই কখন তোকে ডেকেছি ৷ আর তুই কিনা মাত্র ! ….
— আর একটু অপেক্ষা কর ৷ এই তো গোসল করতে ঢুকছি ৷
ওর কথা শুনে আমার গা জ্বালা দিয়ে উঠল ৷ ‘আমরা রেডি আর নবাবজাদা গোসল করতে ঢুকবেন ৷ মন চাচ্ছিল সামনে গিয়ে ওর কানের নিচে তিন চারটা লাগিয়ে দেই ৷’
(খ)
বাংলাদেশের অন্যতম একটি দর্শণীয় স্হান জাফলং ৷ মনকাঁড়া সৌন্দর্যের অনুপম নিদর্শন রয়েছে এর প্রতিটি পরতে ৷ কোথাও রয়েছে বিশাল বিস্তৃত পাহাড়, পাহাড় থেকে নেমে আসা ঝড়না, নদীর স্বচ্ছ পানির প্রবাহ ,পানির নিচে দৃশ্যমান পাথর, ওপারে রয়েছে ভারতের মেঘালয় সীমান্ত, ডাউকী ব্রিজ আরও কত কি ! চা বাগান ও সবুজের অরণ্যে ঘেরা পাহাড়ও এর সৌন্দর্যের অন্যতম নিদর্শন ৷ আদমশুমারি অনুযায়ী এখানে প্রায় ২০০০ এরও বেশী খাসিয়া উপজাতির বসবাস রয়েছে ৷ সিলেট থেকে জাফলংয়ের দুরত্ব প্রায় ৬৫ কিঃমিঃ ৷
জাফলং আসতেই চোখে পড়ল এখানকার মানুষের জীবন জীবিকা ৷ তাঁদের প্রধান পেশা পাথর উত্তোলন, কেউবা নৌকায় পাথর বহন করছে, কেউবা পরিশুদ্ধির কাজ করছে ইত্যাদি ৷
গাড়ি থেকে নেমে ভাইয়া, আমি ও রাকিব আঁকা-বাঁকা পথ দিয়ে হেঁটে চললাম ৷ সামনে যেতেই চোখে পড়ল পর্যটকদের আনাগোনা ৷ এরপর হাঁটতে হাঁটতে চলে এলাম ডাউকী নদীর তীরে ৷
আমরা একটি নৌকা ভাড়া করলাম ৷ বুট বুট শব্দে চালু হলো ইণ্জ্ঞিণ ৷ ছুটে চলল আমাদের নৌকা ৷ একটু পর পর দৃশ্যমান হলো উঁচু উঁচু পাহাড়, সবুজ গাছপালা আর মাঝে মাঝে এখানে সেখানে পাখির কিচির মিচির শব্দ ৷ আরও উপভোগ করলাম সুশীতল বাতাস ৷ এই মনকাঁড়া পরিবেশে সুশীতল বাতাস গায়ে লাগতেই সারাদিনের ক্লান্তি নিমিষেই দূর হতে শুরু করল ৷ আসলেই সব প্রশংসা কেবলই মহান আল্লাহর ৷
আমি ও রাকিব বসলাম নৌকার মাঝখানে আর ভাইয়া বসলো মাঝির বিপরীত চুড়ায় ৷ একটু হেলে দুলে বয়ে চলল আমাদের নৌকা আমার হৃদয় জগতেও তখন আনন্দ দোল খাঁচ্ছিল ৷ নৌকার কিনারা হতে এক আজলা পানি নিয়ে আমি রাকিবের মুখে ছিটিয়ে দিলাম ৷ রাকিবও তাই করল ৷
ভাইয়া বলল, আরে তোদের রসিকতা রাখ !
আচ্ছা ! তোদের কি সেই বিদ্বান বাবু মশাই আর মাঝির কথপোকথনটা খেয়াল আছে ?
রাকিব বলল, এমন করুণ দৃশ্য কি ভোলা যায় ! বেচারী বাবুমশাই এত শিক্ষিত হয়েও একুল ওকুল সবই হারালো শুধু সাঁতার না জানায় ৷ মানে এপাশ ওপাশ সবই ধপাশ ৷ কিন্তু হঠাৎ এমন কথা কেন ভাইয়া ৷
—কারণ ভাল কাজ করেও আমাদের অবস্হা ঐ বাবুমশাইয়ের মতই ৷ আমরা প্রায় ভূলেই গিয়েছি পাত্রের তলা না থাকলে তাতে মাছ টিকবে না ৷
আমি বললাম, সেটা কেমন ভাইয়া ৷ একটু বুঝিয়ে বল ৷
— বলছি শোন ! মহান আল্লাহ বলছেন,
وما خلقت الجن والانس الا ليعبدون ٥
অর্থাৎ জীন এবং মানুষকে কেবল আমার ইবাদতের জন্যই সৃষ্টি করেছি ৷”(সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬)
এখানে الا ليعبدون দ্বারা মহান আল্লাহ অত্যন্ত দ্ব্যার্থভাবে বলে দিচ্ছেন যে, ইবাদত কেবল তাকে কেন্দ্র করে এবং তার সন্তুষ্টিকে ঘিরে হতে হবে ৷ তা নামাজ, রোযা, হজ্জ্ব, যাকাত, সামাজিকতা, ব্যাবসা বানিজ্য ইত্যাদি যাই হোক না কেন ৷
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ আরও বলেন,
الا لله الدين الخالص –
“সাবধান ! একনিষ্ঠভাবে ইবাদত পাওয়ার অধিকার কেবল মহান আল্লাহর ৷”(সূরা যুমার ৩৯:৩)
আমরা সূরা ফাতিহা পড়ার সময়েও এমনটাই বলে থাকি,
اياك نعبد واياك نستعين ٥
“আমরা একমাত্র তোমারই ইবাদত করি আর তোমারই কাছে সাহায্য চাই ৷”(সূরা ফাতিহা ১:৪)
আর যে ইবাদত কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিকে কেন্দ্র করে করা হয় তাকে বলা হয় ইখলাস ৷
ইবাদত গ্রহণযোগ্য হওয়ার আরও একটি প্রধান শর্ত হলো ইত্তিবায়ে সুন্নাহ , অর্থাৎ কাজটি হতে হবে রাসূল (صلي الله عليه) এর দেখানো পদ্ধতিতে ৷ নতুবা তা বাতিল বলে গণ্য হবে ৷ মহান আল্লাহ বলছেন,
قل ان كنتم تحبون الله فاتبعوني يحببكم الله ويغفر لكم ذنوبكم- والله غفور رحيم ٥
“বল, যদি তোমরা আল্লাহকে ভালবাস তবে আমার ইত্তেবা’ তথা অনুসরণ কর তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালবাসবেন আর তোমাদের পাপসমূহ ক্ষমা করবেন ৷ আর আল্লাহ অত্যন্ত ক্ষমাশীল ,পরম দয়ালু ৷”(সূরা ইমরান ৩:৩১)
আয়েশা (رضي الله عنها) এর বর্ণনায় আরও এসেছে, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
من احدث في امرنا هذا ما ليس فيه فهو رد
“আমাদের শরীয়াহর মধ্যে নেই কেউ এমন কিছুর অনুপ্রবেশ ঘটালে তা প্রত্যাখ্যাত ৷”(১)
অন্য আরেকটি বর্ণনায় এসেছে,
من عمل عملا ليس عليه امرنا فهو رد—
“আমাদের শরীয়াহর মধ্যে নেই কেউ এমন কোন আমল করলে তা প্রত্যাখ্যাত ৷(২)
সুতরাং আমল কবুল হওয়ার জন্য শর্ত দুটি (৩) ৷ যথা-
১৷ কাজটি কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টিকে কেন্দ্র করে হতে হবে তথা ইখলাসের ভিত্তিতে
২৷ কাজটি রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) এর দেখানো পদ্ধতিতে হতে হবে ৷
কোন কাজে এই দুটি শর্তের একটিও মিসিং হলে তা ইবাদত বলে গণ্য হবে না বরং প্রবৃত্তির অনুসরণ বলে গণ্য হবে ৷(৪) আর এই দুশর্তের ভিত্তিতেই তাকে ভাল কাজ বলে গণ্য করা হবে ৷
বুঝলিতো এবার বাবু মশাইয়ের কথা কেন বললাম ?
হঠাৎ নৌকা একটু ঝাঁকুনি খেল ৷ কিছুটা ভয় পেলাম আমি ৷
রাকিব বলল, কিরে তুইও এখনই ধপাশ হবি নাকি ৷
আমরা হাসলাম, হা হা হা !
এভাবে কথায় কথায় শেষ হলো আমাদের নৌকা ভ্রমণ ৷ ভ্রমণ শেষে কিছুদূর সামনে আসতেই চোখে পড়ল পিআইন নদীর অববাহিকা এবং তার তলদেশে দৃশ্যমান মসৃণ পাথর ৷
আমি, ভাইয়া, ও রাকিব খালি পায়ে দৃশ্যমান পাথরের উপর দিয়ে কিছুক্ষণ হাঁটলাম ৷ হাঁটার সময় পানির কলকল প্রবাহের আলতো পরশ, এক কথায় খুবই মজা পেলাম ৷
কিছুদূর সামনে আসতেই দেখলাম পাহাড় থেকে ঝড়নার পানি বিশাল পাথরের উপর আছড়ে পরছে ৷ ঝড়নার পানির মতই তখন আমার অন্তরের মাঝেও এক সুখমাখা ও শীতল অনুভূতি আঁছড়ে পড়ছিল ৷ মন চাচ্ছিল ঝড়নার পানিতে গোসল করি ৷ কিন্তু এক্সট্রা কোন জামা নিয়ে আসিনি ৷ তাই ইচ্ছাটা আপাতত ইচ্ছাই রয়ে গেল ৷ ওদিকে পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ভাইয়া বড় করে একটি তৃপ্তির নিঃশ্বাস ফেললেন ৷
৷ রাকিবের কথা কি আর বলব ৷ হঠাৎ করে ওর মাথায় সেলফীর ভূত চেপে বসেছে ৷ কখনও পাথরের উপর, কখনও পানিতে দাঁড়িয়ে, কখনও বা ঝড়নার পানির দিকে পিঠ দিয়ে বেশ কতগুলো ছবি তুললো ৷ তারপর আমার কাছে এসে ছবিগুলো দেখিয়ে বলল, কিরে ! ছবিগুলো দারুণ না !
—হুম ! দারুণ না ছাই ৷ মুখটা পুরাই …
— পুরাই কি বল ?
—পুরাই ভোম্বল দাসের মত ৷
একথা বলেই পাথর থেকে এক লাফে নেমে দৌড় দিলাম ৷ কিন্তু ঝড়নার পানির উপর দিয়ে যাওয়ায় তেমন সুবিধা হলো না ৷ পেছন থেকে পাকড়াও হয়ে গেলাম রাকিবের হাতে ৷
—আরে ভীতু দৌড়াছ কেন ৷ এই দেখ ! দূর থেকে তোর একটা ছবি তুলেছিলাম ৷ দেখতো কেমন হয়েছে ৷
ছবিতে দেখলাম পাথরের উপর আমি চোখ বন্ধ করে দুহাত দুদিকে তুলে দাঁডিয়ে আছে ৷
—তবে রে ! …
আমার মত রাকিবও দৌড় দিল ৷ ভাইয়া তখন কাছাকাছি একটি বিরাট পাথরের উপর দাঁড়িয়ে ছিল ৷ ওকে ধরতেই ভাইয়া পিছন থেকে ডাঁক দিল, এই শোন ! তোরা এদিকে চলে আয় ৷ রসিকতা ভূলে আমি ও রাকিব ভাইয়ার দিকে এগিয়ে গেলাম ৷
ঝড়নার পানি নেমে আসা পথের কিছুটা মাঝে অবস্হান করছিল বিরাট বিরাট উঁচু পাথর ৷ আমরা তিনজন একটি পাথরের উপর গিয়ে বসলাম ৷ ভাইয়া বসল মাঝখানে ৷ ছোট বেলায় পাথর দিয়ে এক্কা দোক্কা খেলেছি অনেক, আগুনের স্ফুলিংগও তৈরি করেছি কিন্তু বিরাট পাথরের উপর বসার অনুভূতি, আবার সেই পাথরকে পাশ দিয়ে ঝড়নার পানির অবিরাম প্রবাহ উপভোগ করলাম এই প্রথম ৷
আমরা পা ঝুলিয়ে পাথরের উপর বসলাম ৷ ঝড়নার পানি কিছুটা শ্ব শ্ব শব্দে প্রবাহিত হচ্ছিল আর তার স্ফুলিংগ মাঝে মাঝে আমাদের পাদুকা ছুঁয়ে দিচ্ছিল ৷ তাতে আমি কিছুটা সুরসুর ভাব অনুভব করলাম ৷ ঐদিকে ভাইয়া ও রাকিবও খুব আনন্দ বোধ করছে ৷
ভাইয়া বললেন, سبحان الله (সুবহানাল্লাহ) ! মহান আল্লাহর নেয়ামত কতই না সুন্দর ৷ মহান আল্লাহ সত্যিই বলেছেন,
وان تعدوا نعمة الله لا تحصوها-ان الله لغفور رحيم ٥
“আর যদি তোমরা আল্লাহর নেয়ামত গণনা করো তবে গুনে শেষ করতে পারবে না ৷ নিশ্চয়ই আল্লাহ অত্যন্ত অত্যন্ত ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু ৷”(সূরা নাহল ১৬:১৮)
তাহলে জান্নাত কতটা সুন্দর হতে পারে !
রাকিব বলল, হুম ! ভাইয়া ঠিকই বলেছ ৷ মহান আল্লাহর অনুগ্রহের কোন তুলনা হয় না ৷ জানিনা তিনি জান্নাত কতটা সুন্দর করে বানিয়েছেন ৷
আমি বললাম, আমি একটি হাদীস পড়েছিলাম যেখানে বলা আছে জান্নাতে এমনসব জিনিস আছে যা মানুষ কখনও কল্পনাও করতে পারেনি ৷
ভাইয়া বললেন, কথাটা মূলত এভাবে এসেছে,
আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) বলেন,
قال رسول الله صلي الله عليه وسلم قال الله تعالي اعددت لعبادي الصالحين ما لا عبن رات ولا اذن سمعت ولا خطر علي قلب بشر واقرؤوا ان شئتم ‘فلا تعلم نفس ما اخفي لهم من قرة اعين جزاء بما كانوا يعملون’
রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,” ‘মহান আল্লাহ বলেন, আমার পূণ্যবান বান্দার জন্য (জান্নাতে) এমন জিনিস প্রস্তুত করে রেখেছি যা কোন চোখ দেখেনি, যা কোন কান শোনেনি, কোন মানব হৃদয় যা কখনও কল্পনাও করতে পারেনি ৷’ আর তোমাদের ইচ্ছা হলে এই আয়াতটি তিলাওয়াত করতে পার,
فلا تعلم نفس ما اخفي لهم من قرة اعين جزاء بما كانوا يعملون—
“কেউ জানেনা চক্ষু শীতলকারী কি বস্তু (জান্নাতে) প্রস্তুত রাখা হয়েছে আমলকারীদের প্রতিদান হিসেবে ৷'(সূরা সেজদাহ ৩২:১৭)’ ৷”(৫)
শুধু তাই নয় মহান আল্লাহ অনুগ্রহ করে জান্নাতের বিভিন্ন নেয়ামতের বর্ণনা আমাদেরকে জানিয়ে দিয়েছেন এবং বলেছেন,
وفي ذٰلك فاليتنافس المتنافسون –
“আর এটি অর্জনের ব্যাপারে প্রতিযোগীদের প্রতিযোগিতা করা উচিত ৷”(সূরা মুতাফ্ফিফীন ৮৩:২৬)
জান্নাতের কথা যখন এসেই পড়ল জান্নাতের বিবরণও না হয় কিছু শুনি ৷ কি বলিস তোরা !
—হুম ভাইয়া ! অবশ্যই ! এত সুন্দর পরিবেশে ভালই লাগবে শুনতে ৷, রাকিব বলল ৷
—শোন তাহলে ৷ প্রথমে আমরা পবিত্র কোরআন থেকে কিছু বর্ণনা উল্লেখ করব ৷ মহান আল্লাহ বলেন,
والسبقون السبقون ٥ اولئك المقربون ٥ في جنت النعيم ٥ ثلة من اولين ٥ وقليل من اخرين ٥ علي سرر موضونة ٥ متكئين عليها متقٰبلين ٥ يطوف عليهم ولد مخلدون ٥ باكوب واباريق-وكاس من معين ٥ لايصدعون عنها ولا ينزفون ٥ وفاكهة مما يتخيرون ٥ ولحم طير مما يشتهون ٥ وحور عين ٥ كامثال لؤلؤ المكنون ٥ جزاء بما كانوا يعملون ٥ لا يسمعون فيها لغوا ولا تاثيما ٥ الا قيلا سلما سلما ٥
“আর (ইমানে) অগ্রগামী লোকেরা তো (পরকালেও) অগ্রগামী ৷ তারাই (আল্লাহর) নিকটবর্তী ৷ তারা থাকবে নেয়ামতে ভরা জান্নাতে ৷ তাদের বহু সংখ্যক পূর্ববর্তীদের মধ্য হতে এবং অল্পসংখ্যক পরবর্তীদের মধ্য হতে ৷ তারা থাকবে মণিমুক্তা খচিত সিংহাসনে ৷ তাতে তারা হেলান দিয়ে বসবে পরস্পর মুখোমুখি হয়ে ৷ তাদের কাছে ঘোরাফেরা করবে (সেবায় নিয়োজিত) চির কিশোরেরা ৷ পানপাত্র, কেটলী এবং ঝর্ণার প্রবাহিত স্বচ্ছ সুরায় ভরা পেয়ালা নিয়ে ৷ তা পান করলে তাদের মাথা ঘুরবে না এবং জ্ঞানও লোপ পাবে না ৷
আরও থাকবে নানান ফলমূল, তারা যেটা ইচ্ছা বেঁছে নেবে ৷
আরও থাকবে পাখির গোশত, তাদের মন যা চাইবে ৷
আরও থাকবে ডাগর ডাগর উজ্জ্বল সুন্দর চোখওয়ালা সুন্দরীরা ৷ তারা হবে স্বযত্নে লুকিয়ে রাখা মুক্তার মত ৷ তাদের কৃতকর্মের প্রতিদান স্বরূপ ৷ সেখানে তারা শুনবে না কোন অবান্তর কথাবার্তা, পাপের বুলি ৷ বরং সেখানকার কথা হবে শান্তিময়, নিরাপদ ৷”(সূরা ওয়াক্বিয়াহ ৫৬:১০-২৬)
আবরার বান্দাদের ব্যাপারে আরও এসেছে,
ودانية عليهم ظللها وذللت قطوفها تذليلا ٥ ويطاف عليهم بانية من فضة واكواب كانت قواريرا ٥ قواريرا من فضة قدروها تقديرا ٥ ويسقون فيها كاسا كان مزاجها زنجبيلا ٥ عينا فيها تسمي سلسبيلا ٥
“জান্নাতের বৃক্ষছায়া তাদের উপর ঝুঁকে থাকবে ৷ এবং তার ফলসমূহ একেবারে তাদের নাগালের মধ্যে রাখা হবে ৷ তাদের সামনে ঘুরে ঘুরে পরিবেশন করা হবে রূপার পাত্র এবং সাদা পাথরের পানপাত্র ৷ সেই সাদা পাথরও হবে রূপার তৈরি ৷ তারা এগুলোকে যথাযথ পরিমাণে ভর্তি করবে ৷
তাদেরকে পান করানোর জন্য এমন পাত্র থাকবে যাতে থাকবে আদার মিশ্রণ ৷ সেখানে আছে একটি ঝর্ণা যার নাম সালসাবিল ৷”(সূরা ওয়াক্বিয়াহ ৭৬:১৪-১৮)
সত্যিই জান্নাত মহান আল্লাহর এক বিশাল অনুগ্রহ ৷ سبحان الله !
— হুম ! ভাইয়া ! মহান আল্লাহ সত্যিই অনেক বেশী দয়মায় যার কোন তুলনা হয় না ৷,আমি বললাম !
— সকল প্রশংসা কেবলই মহান আল্লাহর যিনি অত্যন্ত করুনা করে বান্দার জন্য জান্নাতের মত নিয়ানত তৈরি করেছেন ৷ এবার আমরা হাদীস থেকে কিছু বর্ণনা উল্লেখ করব ৷
আবূ সাইদ (رضي الله عنه) এর বর্ণনায় আরও এসেছে,
ان في الجنة لشجرة يسير الراكب الجواد المضمر السريع مائة عام ما يقطعها –
“নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ হবে যার ছায়ায় উৎকৃষ্ট, চটপটে ও দ্রুতগামী অশ্বের একজন আরোহী ১০০ বছর পর্যন্ত চলতে পারবে ৷ কিন্তু তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না ৷”(৬)
আবূ হুরায়রা (رضي الله عنه) এর বর্ণনায় আরও এসেছে, নবী (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
من يدجل الجنة بنعم لا يبأس لا تبلي ثيابه ولا يفني شبابه
“যে জান্নাতে প্রবেশ করবে সে স্বাচ্ছ্যন্দে থাকবে, কখনও দুর্দশাগ্রস্হ হবে না ৷ তার কাপড় কখনও পুরোনো হবে না এবং তার যৌবন কখনও ফুরাবে না ৷”(৭)
ভাইয়া হঠাৎ রাকিবের কাছ থেকে মাম পানির বোতলটা চেয়ে নিলো ৷
ভাইয়া বোতল কাঁত করে কয়েক ঢোক পানি পান করল ৷ ভাইয়ার দেখাদেখি আমি ও রাকিবও কয়েক ঢোক পান করলাম ৷ পানি পান শেষে রাকিবকে আমি বোতলটি ঢুকাতে বলব এমন সময রাকিব বলল, বোতলটা তোর কাছেই রাখ ৷ আবার দরকার হতে পারে ৷
ভাইয়া আবার বলা শুরু করল—
আবূ হুরায়রাহ (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
ان اول زمرة يدخلون الجنة علي صورة القمر ليلة البدر والذين يلونهم علي اشد كوكب ذري في السماء اضاءة لا يبولون ولا يتغوطون ولا يمتخطون ولا يتفلون امشاطهم الذهب ورشحهم المسك ومجامرهم الالوة وازواجهم الحور العين واخلاقهم علي خلق رجل واحد علي صورة ابيهم اٰدم ستون ذراعا في السماء-
“নিশ্চয়ই সর্বপ্রথম যে দলটি জান্নাতে প্রবেশ করবে তাদের মুখের উজ্জ্বলতা হবে পূর্ণিমার চাঁদের মত ৷ এরপর যারা প্রবেশ করবে তাদের মুখের উজ্জ্বলতা হবে আকাশে উদিত উজ্জ্বল নক্ষত্রের মত ৷ তারা সেখানে প্রস্রাব-পায়খানা করবে না, তারা নাক ঝাঁড়বে না, তারা থুথু ফেলবে না ৷ তাদের চিরুনী হবে স্বর্ণের ৷ তাদের ঘাম হতে মিশকের ঘ্রাণ আসবে ৷ তাদের ধূপদানী হবে ‘আলুয়্যাহ’ নামক সুগন্ধি কাঠের তৈরি ৷ তাদের স্ত্রীগণ হবে ডাগর চক্ষু বিশিষ্টা ৷ তাদের চরিত্র হবে একজন লোকের চরিত্রের মত ৷(৮) তাদের আকৃতি হবে তাদের পিতা আদম (عليه وسلم) এর আকৃতির মত ৷ যা হবে ষাট হাত দীর্ঘ আকৃতি বিশিষ্ট হবে ৷”(৯)
আনাস ইবনে মালিক (رضي الله عنه) এর বর্ণনায় আরও এসেছে, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
ان في الجنة لسوقا ياتونها كل جمعة فتهب ريح الشمال فتخثو في وجوههم وثيابهم فيزدادون حسنا وجمالا فيرجعون الي اهليهم وقد ازدادوا حسنا وجمالا فيقول لهم اهلوهم والله لقد ازددتم بعدنا حسنا وجمالا فيقولون وانتم والله لقد ازددتم بعدنا حسنا وجمالا—
“নিশ্চয়ই জান্নাতে একটি বাজার থাকবে ৷ প্রতি জুমুয়াহ জান্নাতিরা সেখানে একত্রিত হবে ৷ তখন উত্তরদিকের বায়ু প্রবাহিত হয়ে তাদের মুখমন্ডলে ও পোশাক পরিচ্ছদে গিয়ে লাগবে ৷ ফলে তাদের গায়ের রং ও সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে ৷ তখন তারা স্ব স্ব পরিবারের কাছে ফিরে যাবে ৷ গিয়ে দেখবে তাদের গায়ের রং ও সৌন্দর্য বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে ৷ তাদের পরিবারের লোকেরা বলবে, আল্লাহর শপথ ! আমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদের গায়ের রং এবং সৌন্দর্য বহুগুণে বেঁড়ে গেছে ৷ উত্তরে তারাও বলবে, আল্লাহর শপথ ! তোমাদের কাছ থেকে যাওয়ার পর তোমাদেরও গায়ের রং ও সৌন্দর্য বহুগুণে বেঁড়ে গেছে ৷”(১০)
আচ্ছা ! তোরা কি জানিস এমন একটি জঘন্য কাজ আছে যার জন্য চিরসুখের এই জান্নাত তাঁর জন্য হারাম হয়ে যায় ৷
— হুম! জানি ৷ সেটা হলো আল্লাহর সাথে শিরক করা ৷ ,বলল রাকিব ৷
—ঠিকই বলেছিস ৷ মহান আল্লাহ এ ব্যাপারে বলেন,
انه من يشرك بالله فقد حرم الله عليه الجنة وماويه النار-وما للظلمين من انصار—
“আর নিশ্চয়ই যে আল্লাহর সাথে শিরকে লিপ্ত হয় আল্লাহ তার জন্য জান্নাতকে হারাম করে দেন এবং জাহান্নামকে তার ঠিকানা বানিয়ে দেন ৷ আর জালেমদের কোন সাহায্যকারী নেই ৷”(সুরা মায়েদাহ ৫:৭২)
এই শিরকের মধ্যেই একটি বড় শিরক হলো ইবাদতে শিরক করা(১১) অর্থাৎ ইখলাসবিহীন আমল করা ৷(১২) মহা আল্লাহ বলেন,
فمن كان يرجوا لقاء ربه فليعمل عملا صالحا ولا يشرك بعبادة ربه احدا ٥
“অতএব যে তাঁর রবের সাথে সাক্ষাৎ কামনা করে সে যেন সৎ আমল করে এবং তার রবের ইবাদত কাউকে শরীক না করে ৷”(সূরা কাহফ ১৮:১১০)
এভাবে আমরা বেশ কিছুক্ষণ কথা চালিয়ে গেলাম ৷ সূর্যটা তখন মাথার উপর একেবারে মাঝ বরাবর কিরণ দিচ্ছিল ৷ মনে হচ্ছিল যেন যোহরের সময় হয়ে গেছে ৷ ঘড়িতে দেখলাম ১২:৩৫ ৷
—ভাইয়া কথা তো অনেক হলো ৷ ঘড়ির কাটা বলছে যোহর সালাতের সময় হয়েছে ৷
— তাহলে চল আমরা সালাতের প্রস্ততি গ্রহণ করি ৷
(গ)
জাফলং এর আরও একটি সৌন্দর্য হলো সবুজ অরণ্যে ঘেরা পাহাড় ৷ পেঁচানো রাস্তা বেয়ে এক পা দুপা করে কখনও বা সিঁড়ি বেয়ে আমারা উঠে এলাম পাহাড়ের উপরে ৷
খুব ইচ্ছে ছিল আকাশকে কাছ থেকে দেখার ৷ আজ পাহাড়ে উঠে সেই আকাঙ্খা কিছুটা হলেও পূরণ হলো ৷ জানেন ! ছোট থাকতে টয়লেটে প্রয়োজন সারতে বসে গান ধরতাম “নীল আকাশের নিচে আমি, রাস্তা চলেছি একা ৷” আবার বলতাম ‘ ধূর ছাই, এই চার দেয়ালে রাস্তা আবার কোথা থেকে এলো ৷’
হা হ হা !
আমারা পাহাড়ের এদিক ওদিক ঘুরতে লাগলাম ৷ চারদিকের সৌন্দর্যমাখা বিভিন্ন দৃশ্য তখন চোখে এসে পড়ছিল ৷ আমি পাহাড় থেকে একটু নিচ দিকে তাঁকাতেই আবার পিছনে সরে এলাম ৷ মনে হচ্ছিল যেন এখনই পড়ে যাব ৷ কিন্তু ভাইয়া ও রাকিবটা যে কিভাবে এত সাহস নিয়ে নিচে তাকায় ঠিক বুঝে আসে না আমার ৷
ভাইয়ার খানিকটা পিছন থেকে আমি বললাম, ভাইয়া ! কিনারায় দাঁড়িয়ে নদী দেখতে তোমার মাথা ঘুরাচ্ছে না ৷
ভাইয়া পিছনে ঘুরে ডান হাত দিয়ে আমার কান পাঁকড়াও করল ৷ ‘আহ !..’
— সবাই কি তোর মত ভীতুর ডিম ৷
ঐ পাশ থেকে রাকিব বলল, ভাইয়া ! একটু ভাল করে ৷
কান মলানী খেয়ে সাহস করে কোনরকমে ভাইয়ার সাথে এসে দাঁড়ালাম ৷ দেখলাম ডাউকী ব্রীজ ও তাঁর নিচে ডাউকী নদী ৷ ডাউকী নদীকে তখন সর্পিলাকার সাঁপের মত মনে হচ্ছিল ৷ পাহাড়ের একটু ওপাশ দিয়ে সামনে তাঁকাতেই ফুটে উঠল ভারতের মেঘালয় সীমান্ত ৷ পাশাপাশি আরও দেখলাম সাদা মেঘগুলো কেমন যেন পাহাড়ের সাথে লেগে আছে ৷
এদিকে আমার পেটে তখন ইঁদুর দৌড়াচ্ছে ৷ কিন্তু বলতে কেন যেন একটু ইতস্তত হলো ৷ কিন্তু তাতে কি ৷ ঐ যে রাকিব ! আস্তা একটা পেটুক ! ক্ষিদে পেলে আর কোন কথা নেই ৷ হুট করেই পেটের কথা মুখ দিয়ে বের হয় ৷ আজও তার ব্যতিক্রম নয় ৷ রাকিব বলল
—ভাইয়া দুপূর অনেক হয়েছে ৷ এসো খাবার খেয়ে নেই ৷
ওর অভ্যাস যাই হোক না কেন ৷ আজ কিন্তু আমার কথাটাই ওর মুখ দিয়ে বেরুলো ৷ আমিও বললাম,হুম ভাইয়া ! আমারও খুব ক্ষিদে পেয়েছে ৷
— ঠিকই বলেছিস রে ৷ আমার পেটেও ইঁদুর দৌড়াচ্ছে ৷
ভাইয়ার কথা শুনে আমরা হেসে উঠলাম,
হা হা হা !
আমরা দূর্বাঘাসের উপর সবুজ রঙের একটি কাঁপড় বিছিয়ে গোল হয়ে বসে পড়লাম ৷ মাথাটা তখন বেশ হালকা হালকা মনে হলো ৷ কাপড়ে বসেও দূর্বাঘাসের হালকা কোমল পরশ তখনও অনুভব হচ্ছিল ৷
সময় তখন দুপুর ২:৩০ টা ৷ সূর্যটা তখন পশ্চিম আকাশে বেশ কিছুটা হেলে পড়েছে ৷ হঠাৎ উর্ধ্ব দিগন্তের কোণ থেকে এক ঝাঁক কবুতরের মিছিল আমাদের মাথার উপর দিয়ে অতিক্রম করল ৷ খাওয়া দাওয়া শেষ করে আমরা পুনরায় গল্প করতে বসলাম ৷
রাকিব বলল, আচ্ছা ভাইয়া ! এমন অনেক অমুসলিম আছে যারা অনেক ভাল কাজ করে ৷ তারা কি আল্লাহর কাছে পুরস্কার পাবে না ৷
ভাইয়া বলল, আমার মনে হয় তোরা ইখলাসের ব্যাপারটি ভাল করে বুঝতে পারিস নি ৷ নয়তো এমন প্রশ্ন করার কথা নয় ৷ বিষয়টিকে সহজ করে বুঝার জন্য আমরা ইখলাসের দুটি সূরাকে সামনে নিয়ে আসবে ৷
ভাইয়ার কথা শুনে আমি ও রাকিব রীতিমত অবাক হলাম এবং একজন আরেকজনের দিকে তাঁকাতে লাগলাম ৷ বললাম, বল কি ভাইয়া ! সূরা ইখলাস তো একটিই আছে ৷
—হা হা হা ! আরে গর্দভ ! সূরা কাফিরুন ও সূরা ইখলাসকে একত্রে ইখলাসের সূরা বলা হয় ৷ আর এমনটি আমি বলছি না ৷ বরং জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ (رضي الله عنه) বলছেন ৷ তিনি বলেন,
ان رسول الله صلي الله عليه وسلم قرا في ركعتي الطواف بسورتي الاخلاص قل يا ايها الكافرون و قل هو الله احد—
“নিশ্চয়ই আল্লাহর রাসূল (صلي الله عليه وسلم) তাওয়াফের দু রাকাত সালাতে ইখলাসের দুটি সূরা পাঠ করেছেন ৷ যথা قل يا ايها الكافرون (সূরা কাফিরুন) এবং قل هو الله احد (সূরা ইখলাস) ৷”(১৩)
এবার বুঝেছিস ৷
রাকিব বলল, হুম ভাইয়া ! আসলে কখনও এমন কথা শুনিনি তো তাই একটু অবাক হয়েছিলাম !
আমি বললাম, যাইহোক ভাইয়া ! এবার তুমি বল ৷
— হুম শোন তাহলে ৷ ইখলাস হচ্ছে কিনা বা তুই সত্যিই আল্লাহর সন্তুষ্টির চাচ্ছিস কিনা তারও প্রধান কিছু গ্রহণ ও বর্জনীয় কাজ রয়েছে ৷ আমরা এ দুটি সূরা থেকে ইখলাসের বেশ কতগুলো শর্ত খুঁজে পাই ৷ যেমন—
১৷ আল্লাহকে সত্তা ও গুনে একক রাখতে হবে ৷ তথা ত্রুিত্ববাদ, বহুশ্বরবাদ, ফানা ফিল্লাহ , নবী (صلي الله عليه وسلم) আল্লাহর অংশ, তিনি গায়েব জানেন (نعوذ بالله) ইত্যাদি কনসেপ্টকে সম্পূর্ণ অস্বীকার করতে হবে ৷(১৪)
২৷ তাকে মুখাপেক্ষীহীন একক সত্ত্বা হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে ৷ এমনটি ভাবা যাবে না যে তিনি উমুককে তাঁর খাজানা দিয়েছেন ৷(১৫)
৩৷ তাঁর জন্য সন্তান সাব্যস্ত করা যাবে না ৷(১৬)
৪৷ তার সত্তাকে এমন একজন সত্ত্বা হিসেবে বিশ্বাস করতে হবে যার তুলনীয় বা সমপর্যায়ের কিছু নেই ৷(১৭)
৫৷ ইবাদতকে কেবল তাঁর জন্য সাব্যস্ত করতে হবে ৷(১৮)
৬৷ অন্যান্য সবার ইবাদতকে অস্বীকার করতে হবে ৷(১৯)
৭৷ তাঁর ইবাদতে বা তাঁর নৈকট্য প্রাপ্তির নাম করে কোন মাধ্যম সাব্যস্ত করা যাবে না ৷(২০)
ইত্যাদি আরও নানা রকম শর্ত উল্লেখ করা যেতে পারে ৷
তবে যেহেতু ইখলাসের প্রসঙ্গ সামনে এসেই গেল তখন একটি বিষয় নিয়ে কথা না বললেই নয় ৷ তা হল ইখলাসপূর্ণ নিয়্যত ৷ এটিও ইখলাসের সর্বোচ্চ পর্যায়ের প্রধান একটি শর্ত ৷ যার অভাবে মুসলিম হয়েও আমল বাতিল হয়ে চিরস্হায়ী জাহান্নামী হতে পারে ৷
নিয়্যত মূলত বলা হয় মনের দৃঢ় সংকল্পকে ৷ আর যখন মনের সেই দৃঢ় সংকল্প হয় ভাল কাজ বা ইবাদতের দ্বারা মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন কিংবা তাঁর নিকট থেকে পুরস্কার প্রাপ্তি এবং তাঁর নিকট থেকে পরকালীন শান্তি লাভের আশায় কিংবা জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভের ভয়ে তখন তাকে বলা হবে ইখলাসপূর্ণ নিয়্যত অর্থাৎ ইবাদতকে কেবল মহান আল্লাহর জন্য খাঁটি করার দৃঢ় সংকল্প করা ৷
আর এই ইখলাসের ব্যাপারে কোরআন ও হাদীসে অসংখ্যবার জোর নির্দেশ দেয়া হয়েছে ৷
যেমন একটি আয়াতে মহান আল্লাহ বলেন,
قل ان صلاتي ونسكي ومحياي ومماتي لله رب العلمين ٥ لا شريك له- وبذلك امرت وانا اول المسلمين ٥
“বল, নিশ্চয়ই আমার সালাত, আমার কোরবানী, আমার জীবন ও আমার মরণ কেবল সমগ্র সৃষ্টিজগতের রব মহান আল্লাহর জন্য ৷ (এ ব্যাপারে) তাঁর কোন শরীক নেই ৷ আর আমাকে এমনটিই আদেশ করা হয়েছে এবং যেন আমি সর্বপ্রথম মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হই ৷”(সূরা আন’আম ৬:১৬২-১৬৩)
অন্য আয়াতে মহান আল্লাহ জান্নাতিদের একটি গুন উল্লেখ করেছেন এই ভাবে,
انما تطعمكم لوجه الله لا نريد منكم جزاء ولا شكورا ٥ انا نخاف من ربنا يوما عبوسا قمطريرا ٥
“(তাদের উক্তি হয়) আমরা তোমাদেরকে কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য খাদ্য দিয়ে থাকি এবং তোমাদের কাছে কোন প্রতিদান ও কৃতজ্ঞতা কামনা করি না ৷(২২) আমরা আমাদের রবের তরফ থেকে এক ভীতিপ্রদ ভয়ংকর দিনের ভয় রাখি ৷”(সূরা ইনসান ৭৬:৯-১০)
আরও বলা হচ্ছে,
قل اني امرت ان اعبد الله مخلصا له الدين ٥
“বল, আমাকে আদেশ করা হয়েছে তাঁর ইবাদত করতে কেবল তাঁরই আনুগত্যে একনিষ্ঠ হয়েছে ৷”(সূরা যুমার ৩৯:১১)
এ ব্যাপারে একটি হাদীসও উল্লেখ করা যেতে পারে ৷
আবূ উমামাহ বাহেলী (رضي الله عنه) বলেন,
جاء رجل الي النبي صلي الله عليه وسلم فقال ارأيت رجلا غزا يلتمس الاجر والذكر ما له؟ فقال رسول الله صلي الله عليه وسلم: لا شيء له فاعادها ثلاث مرات يقول رسول الله صلي الله عليه وسلم: لا شيء له ثم قال: ان الله لا يقبل من العمل الا ما كان له خالصا وابتغي به وجهه—
” এক লোক নবী (صلي الله عليه) এর কাছে এসে বলল, এক ব্যাক্তি সওয়াব এবং সুনাম প্রাপ্তির আশায় যুদ্ধ করে, তার জন্য কি রয়েছে ৷ রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বললেন, তার জন্য কিছুই নেই ৷ লোকটি তিনবার তাঁর কথার পুনরাবৃত্তির করল ৷ রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) তাকে বললেন, তার জন্য কিছুই নেই ৷ অতঃপর বললেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহ সেসব আমলই কবুল করেন যা কেবল একনিষ্ঠভাবে তাঁর জন্য করা হয় আর কেবল তাঁর সন্তুষ্টির জন্যই করা হয় ৷”(২৩)
আর ইখলাসের বিপরীত হলো’ রিয়া ৷ অর্থাৎ ইবাদতে আল্লাহর সন্তুষ্টি ব্যাতিত অন্য কারও সন্তুষ্টির সংকল্প করলে বা আল্লাহর সন্তুষ্টির পাশাপাশি অন্য কারও সন্তুষ্টি থাকলে বা সুনাম-খ্যাতি অর্জন বা অন্য কোন উদ্দেশ্য থাকলে তাকে বলা হবে রিয়া ৷ এমতাবস্থায় তাঁর আমল কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য হবে না যেমন আমরা আগের হাদীসটি থেকে জানলাম ৷ এছাড়া আরও এসেছে, আবূ হুরায়রাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) কে একথা বলতে শুনেছি যে,
قال الله تعلي انا اغني الشركاء عن الشرك -من عمل عملا اشرك فيه معي غيري تركته وشركه –
“মহান আল্লাহ বলেন, আমি শরীকদের শিরক থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ৷ যে আমার সাথে অন্য কাউকে শরীক করার মাধ্যমে আমল করে আমি তাকে ও উক্ত শরীককে প্রত্যাখ্যান করি ৷”(২৪)
অন্য একজন সাহাবী যার নাম আবূ সাইদ ইবনু আবূ ফাযালাহ আনসারী (رضي الله عنه), তিনি বলেন, আমি রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) কে বলতে শুনেছি,
اذا جمع الله الناس ليوم القيامة ليوم لا ريب فيه نادي مناد من كان اشرك فيه عمل عمله لله احدا فاليطلب ثوابه من عند غير الله فان الله اغني الشركاء عن الشرك—
“যখন আল্লাহ মানুষকে কিয়ামতের ময়দানে একত্রিত করবেন যে দিনের ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই, একজন ঘোষক ঘোষণা করে বলবে, যে কাজ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য
করা হয় তাতে যে অন্য কাউকে শরীক করেছে সে যেন তার উক্ত কাজের সওয়াব বা প্রতিদান উক্ত গাইরুল্লাহ তথা অংশীদারের কাছে চেয়ে নেয় কেননা নিশ্চয়ই আল্লাহ অংশীদারের অংশীদারিত্ব থেকে সম্পূর্ণ মুক্ত ৷”(২৫)
—আচ্ছা ভাইয়া জ্ঞান অর্জনের ব্যাপারেও কি এমন শর্ত ?,রাকিব বলল
— অবশ্যই !
আবূ হুরায়রাহ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
من تعلم علما مما يبتغي به وجه الله عز وجل لا يتعلمه الا ليصيب به عرضا من الدنيا لم يجد عرف الجنة يوم القيامة يعني ريحها –
“যে জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ عز وجل এর সন্তুষ্টির জন্য শিক্ষা করা হয় তা যদি কেউ পার্থিব কোন উদ্দেশ্যে শিক্ষা করে তবে কিয়ামতের দিন জান্নাতের সুগণ্ধিও সে পাবে না ৷”(২৬)
রাকিব বলল, তার মানে এই হাদীস আরও বলছে যেকোন জ্ঞান দ্বারা আল্লাহর সন্তুষ্টি পাওয়া যায় না ৷
— মাশাআল্লাহ (ما شاء الله) ! রাকিব তুই একদম ঠিক বলেছিস ৷ কারণ আল্লাহ রাসূল (صلي الله عليه وسلم) অনর্থক জ্ঞান থেকে বাঁচতে মহান আল্লাহর কাছে দোয়া করতেন ৷ তিনি বলতেন,
اللهم اني اعوذبك من الاربع من علم لا بنفع ومن قلب لا يخشع ومن نفس لا تشبع ومن دعاء لا يسمع
“হে আল্লাহ ! আমি চারটি বিষয় থেকে তোমার নিকট আশ্রয় চাচ্ছি ৷ এমন জ্ঞান থেকে যা কোন উপকারে আসে না, এমন অন্তর থেকে যা ভীত হয় না, এমন আত্না থেকে যা তৃপ্ত হয় না, এমন দোয়া থেকে যা শোনা হয় না ৷”(২৭)
— আচ্ছা ভাইয়া ! সে কথা না হয় বুঝলাম ! কিন্তু কেউ যখন ইবাদত করছে আর মানুষের প্রসংশা বা সুনাম চাচ্ছে না বরং আল্লাহর সন্তুষ্টিই চাচ্ছে ৷ এমন অবস্হায় তার অনিচ্ছা সত্ত্বে কেউ তার প্রশংসা করলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়াবে ?, আমি বললাম !
— যদি ব্যাপারটা এমনই হয় এবং প্রশংসা করার পরও যদি প্রশংসা পাওয়ার কামনা মনে জাগ্রত না হয় তবে এটা মুমিনের জন্য আগাম সুসংবাদ ৷
আবূ যর (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) কে জিজ্ঞেস করা হলো,
ارءيت الرجل يعمل العمل من الخير ويحمده الناس عليه؟ قال تلك عاجل بشري المؤمن-
“এমন ব্যাক্তি আপনার কি অভিমত যে উত্তম আমল করে এবং মানুষ তাঁর গুনাগুণ বর্ণনা করে ৷ তিনি বললেন, এটা তো মুমিনের জন্য আগাম সুসংবাদ ৷”(২৮)
রাকিব বলল, আচ্ছা ভাইয়া ! কিভাবে এই ইখলাসকে ধরে রাখা যেতে পারে ?
— খুবই গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন করেছিস তুই ৷
*১ম উপায় হলো নিজ আমলের সাথে ভয় ও আশার সামন্জ্ঞস্য বিধান করা ৷ অর্থাৎ বান্দা আমল করার সময় ভয় রাখবে তাঁর আমলটি কবুল হচ্ছে কিনা , পাশাপাশি মহান আল্লাহর কাছে এই আমলকে ত্রুটিযুক্ত পেশ করে তাঁর কাছে ক্ষমা চাইবে ও ক্ষমা পাওয়ার আশা রাখবে , পাশাপাশি তাঁর জান্নাত ভিক্ষা চাইবে ৷
* সে ভাববে আমার আমল আমাকে জান্নাতে প্রবেশ করাতে এবং জাহান্নাম থেকে মুক্তিলাভ করাতে কখনই সক্ষম নয় ৷ মহান আল্লাহর দয়াতেই কেবল তা সম্ভব ৷
* সে কখনও আত্নপ্রশংসায় লিপ্ত হবে না ৷
* সে মনে করবে তাঁর চাইতেও উত্তম আমলকারী বা অগ্রগামী লোক রয়েছে এবং সে প্রতিনিয়ত তাঁদের মত হওয়ার চেষ্টা করবে, তাঁদের জন্য কল্যানের দোয়া করবে ইত্যাদি আরও অনেক বিষয় সামনে নিয়ে আসা যেতে পারে ৷(২৯)
হঠাৎ ভাইয়া উঠে দাঁড়ালেন এবং হাঁটতে হাঁটতে পাহাড়ের কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালেন ৷ বাতাসে ভাইয়ার জামার আচল তখন উড়ছিল ৷ আমি ও রাকিব একজন আরেকজনের দিকে তাঁকাতে লাগলাম ৷ উভয়ের চোখেই কৌতুহল ৷
কালবিলম্ব না করা আমি ও রাকিব ধীরে ধীরে ভাইয়ার দুপাশ বরাবর এগিয়ে চললাম ৷ অতঃপর সামনে এসে ভাইয়ার দুকাঁধে দুজন হাত রাখলাম ৷ বললাম, কি হলো ভাইয়া ? হঠাৎ উঠে এলে !
ভাইয়া আমার দিকে তাঁকিয়ে বলল,
— জানিস ! একদল যুবক আল্লাহকে রব হিসেবে পেয়ে সন্তুষ্ট হয়েছিল এবং তাঁর ইবাদতে অন্য সব অংশীদারকে অস্বীকার করেছিল ৷(৩০) মহান আল্লাহ তাদের কথা অত্যন্ত সম্মানজনক ভাষায় উল্লেখ করে বলেন
وربطنا علي قلوبهم اذ قاموا فقالوا ربنا رب السموت والارض لن ندعوا من دونه الها – لقد قلنا اذا شططا ٥
“আমি তাঁদের অন্তরকে দৃঢ় করেছিলাম যখন তাঁরা উঠে দাঁড়িয়েছিল ৷ তাঁরা বলেছিলো, আমাদের রব আসমান ও যমীনের রব, আমরা কখনও তাঁর পরিবর্তে অন্য কোন ইলাহকে(৩১) আহ্বান করব না ৷ যদি করি তবে তা হবে অত্যন্ত গর্হিত কাজ ৷”(সূরা কাহফ ১৮:১৪)
একথা বলেই ভাইয়া আবার সামনের দিকে তাঁকালেন ৷ ভাইয়ার চোখের কোণ দিয়ে কয়েক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়ল ৷ আমি ও রাকিব ভাইয়ার দিকে তাঁকিয়ে রইলাম ৷
সত্যিই আমাদোর জাফলং ভ্রমণ খুূবই মজাদার ছিল, তবে শেখার মতও ছিল অনেক কিছুই ৷
টীকাঃ
১৷ সহীহ বুখারী ২৬৯৭, সহীহ মুসলিম ১৭১৮
২৷ সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৩১: বিচার -ফয়সালা, অনুচ্ছেদ ৮, হাদীস ১৭১৮, ১৮/….. , হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী ৷
৩৷ আরও দেখুন, শরহে মাসাঈলুল জাহেলিয়্যাহ, শাইখ সালেহ আল ফাওযান, অনুবাদ মুযাফ্ফর বিন মুকসেদ, মাকতাবাতুুস সুন্নাহ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ৩২ ৷
অন্তরের আমল:ইখলাস, শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ, অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের, পৃষ্ঠা ১৬-১৭ ৷
৪৷ বিস্তারিত পড়ুন, শরহে মাসাঈলুল জাহেলিয়্যাহ, শাইখ সালেহ আল ফাওযান, অনুবাদ: মুযাফ্ফর বিন মুকসেদ, মাকবাতুস সুন্নাহ প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ১১-৩৯
৫৷ বুখারী ও মুসলিম,রিয়াদুস সালেহীন ১৮৯০
৬৷ দেখুন সহীহ বুখারী ৬৫৫৩, সহীহ মুসলিম ২৮২৮ ৷ তবে এখানে (ظل) ছায়া শব্দটি অন্য একটি সহীহ হাদীস থেকে নেয়া ৷ হাদীসটি হলো, সাহল ইবনে সা’দ (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ (صلي الله عليه وسلم) বলেছেন,
ان في الجنة لشجرة يسير الراكب في ظلها مائة عام لا يقطعها
“নিশ্চয়ই জান্নাতে এমন একটি বৃক্ষ হবে যার ছায়ায় একজন অশ্বারোহী একশ বছর পর্যন্ত চলবে কিন্তু তার ছায়া অতিক্রম করতে পারবে না ৷”(সহীহ বুখারী ৬৫৫২, সহীহ মুসলিম ২৮২৭)
৭৷ সহীহ মুসলিম, পর্ব ৫৩, অনুচ্ছেদ ৮, হাদীস ২৮৩৬, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী ৷
৮৷ অন্য বর্ণনায় আরও এসেছে,
لا اختلاف بينهم ولا تباغض فلوبهم قلب واحد
” তাদের মাঝে কোন মতভেদ থাকবে না, আর তাদের মাঝে কোন হিংসা বিদ্বেষ থাকবে না ৷ আর তাদের অন্তর হবে এক ব্যক্তির অন্তরের মত ৷” (সহীহ মুসলিম, পর্ব ৫৩, অনুচ্ছেদ ৭, হাদীস ২৮৩৪, ১৭/…., হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী)
৯৷ সহীহ মুসলিম, পর্ব ৫৩, অনুচ্ছেদ ৬, হাদীস ২৮৩৪, ১৫/…., হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী ৷
১০৷ সহীহ মুসলিম, পর্ব ৫৩, অনুচ্ছেদ ৫, হাদীস ২৮৩৩, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী ৷
১১৷ দেখুন সূরা মায়েদাহ ৫:৭২, সূরা হাজ্জ্ব ২২:৭৩-৭৪, সূরা নিসা ৪:৪৮,১১৬-১২১,সূরা আহক্বাফ ৪৬:৫-৬, সূরা ফুরক্বান ২৫:৩, সূরা ফাতিহা ১:৪, এছাড়াও এ ব্যাপারে বিভিন্ন হাদীস বিদ্যমান
১২৷ সূরা যুমার ৩৯:২-৩, ১১, সূরা নাহল ১৬:১২০, সূরা বাইয়্যিনাহ ৯৮:৫, সূরা আন’আম ৬:১৬২; সুনান নাসাঈ ৩১৪০, আলবানী বলেছেনঃ হাসান সহীহ ,এছাড়া আরও বিভিন্ন হাদীস ৷
১৩৷ সুনান তিরমিযী, অধ্যায় ৭:হাজ্জ্ব পর্ব, অনুচ্ছেদ ৪৩, হাদীস ৮৬৯, হাদীসের মান: সহীহ, তাহক্বীক: আলবানী ৷
১৪৷ আরও দেখুন সূরা মায়িদাহ ৫:৭২-৭৩, সূরা আন’আম ৬:৫০, সূরা হাজ্জ্ব ২২:৭৩-৭৪, সূরা জ্বীন ৭২:২০-২২, সূরা আহক্বাফ ৪৬:৫-৬ ৷
১৫৷ আরও দেখুন, সূরা মুহাম্মদ ৪৭:৩৮, সূরা আন’আম ৬:৫০ ৷
১৬৷ আরও দেখুন সূরা তওবা ৯:৩০, সূরা কাহফ ১৮:১-৪ ৷
১৭৷ দেখুন সূরা বাক্বারাহ ২:২৫৫, সূরা হাশর ৫৯:২২-২৪, সূরা শু’রা ৪২:১১ সহ আরও অনেক আয়াত
১৮৷ আরও দেখুন, সূরা যারিয়াত ৫১:৫৬
১৯৷ দেখুন সূরা ইমরান ৩:৬৪, সূরা বাক্বারা ২:২৫৬, সূরা নাহল ১৬:৩৬, সূরা নূহ ৭১:১-৪ সহ আরও অনেক আয়াত ৷
২০৷ আরও দেখুন সূরা যুমার ৩৯:৩, সূরা ফুরক্বান ২৫:১৭-১৯ ইত্যাদি সহ অন্যান্য ৷
২১৷ দেখুন, সূরা যুমার ৩৯:২-৩,১১ সূরা বায়্যিনাহ ৯৮:৫ ইত্যাদি ৷ আরও দেখুন, বই-অন্তরের আমল: ইখলাস, শাইখ সালেহ আল মুনাজ্জিদ, অনুবাদ: জাকের উল্লাহ আবুল খায়ের, পৃষ্ঠা ৫-৭ ৷
২২৷ এ কথা মূলত তারা প্রকাশ করে না বরং এটা তাঁদের মনের আকাঙ্খা ৷ (তাফসীর ইবনে কাসীর)
২৩৷ সুনান নাসাঈ, অধ্যায় ২৩: জিহাদ পর্ব, হাদীস ৩১৪০, হাদীসের মান: হাসান সহীহ, তাহক্বীক: আলবানী
২৪৷ সহীহ মুসলিম,রিয়াদুস সালেহীন, হাদীস ১৬২৪ ৷
২৫৷ সুনান তিরমিযী, অধ্যায় ৪৪: তাফসীরুল কোরআন পর্ব, অনুচ্ছেদ ১৯, হাদীস ৩১৫৪, হাদীসের মান: আবূ ঈসা তিরমিযী বলেছেন হাসান গারীব, আলবানী বলেছেন সহীহ ৷ আরও দেখুন , ইবনে মাজাহ ৪২০৩ ,বিশুদ্ধ সূত্রে ৷
২৬৷ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায় ২৬: জ্ঞান পর্ব, অনুচ্ছেদ ১২, হাদীস ৩৬৬৪, হাদীসের মান: সহীহ, তাহক্বীক: আলবানী ৷ আরও দেখুন, সুনান ইবনে মাজাহ, হাদীস ২৫২, বিশুদ্ধ সূত্রে ৷
২৭৷ সুনান আবূ দাউদ, অধ্যায় ৮: বিতর সালাত পর্ব, অনুচ্ছেদ ৩৬৭, হাদীস ১৫৪৮, মান: আলবানী বলেছেন সহীহ ৷ আরও দেখুন, সুনান নাসাঈ ৫৫৩৬-৫৫৩৭ , বিশুদ্ধ সূত্রে ৷
২৮৷ সহীহ মুসলিম, অধ্যায় ৪৬, অনুচ্ছেদ ৫১, হাদীস ২৬৪২, হাদীস ও পর্বসূচীর নম্বরবিন্যাস: ফুয়াদ আব্দুল বাক্বী ৷
২৯৷ দেখুন সূরা বনী ইসরাঈল ১৭:৫৭, সূরা আম্বিয়া ২১:৯০, সূরা মু’মিনূন ২৩:৬০, এছাড়াও দেখুন, সহীহ মুসলিম ২৮১৭, সুনান তিরমিযী ৩১৭৫, সুনান ইবনে মাজাহ ৪১৯৮, বিশুদ্ধ সূত্রে ৷ আরও দেখুন,বই: ইখলাস মুক্তির পথ, ফয়সাল বিন আলী আল বাদানী, অনুবাদ: আব্দুল্লাহ শহীদ আব্দুর রহমান, পৃষ্ঠা ৩২-৩৯ ৷
৩০৷ সূরা কাহফ ১৮:১৩-১৬ নং আয়াতের ব্যাখ্যা দেখুন তাফসীর ইবনে কাসীরে
৩১৷ ইবনে তাইমিয়্যাহ কুরআনের বিভিন্ন আয়াত ও সহীহ হাদীসকে সামনে রেখে ইলাহ (اله) শব্দের সংজ্ঞা করেছেন ৷ তিনি বলেন,
فالاله هو الذي يألهه القلب بكمال الحب والتعظيم والاجلال والاكرام والخوف الرجاء ونحو ذلك
“কোন সত্ত্বাকে ইলাহ মানার অর্থ হলো মানুষের হৃদয় মনের পূর্ণ একাগ্রতা, ঐকান্তিকতা, পূর্ণ সম্মানবোধ ও ভালবাসা, সবর, শোকর, তাওয়াক্কুল, ভয় ও আশার পূর্ণ আবেগানুভূতির সাথে ঝুঁকে পরা ৷”(দেখুন আল উবূদিয়্যাহ, পৃষ্ঠা ৩০-৩১ অথবা ইবাদতের মর্মকথা, আধুনিক প্রকাশনী, পৃষ্ঠা ২৯)