রশীদের সবচেয়ে ভালো লাগে যখন ‘ওয়া বিহি কলা হাদ্দাসানা’ বলে হাদীস পড়া শুরু হয়। অন্যান্য তালিবে ইলমরা সনদ পড়ার সময় তেমন খেয়াল করে না। কিন্তু রশীদ এর ব্যাতিক্রম। যখন সনদ পড়া হয় তখন সে খুব খেয়াল করে শুনে। অনেক নাম তার পরিচিত। বিশেষ করে সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের সনদের রাবীদের নাম। তবে নাম জানলেও অমুক অমুকের ছাত্র এটা তার জানা ছিল না। সনদ দেখে এখন সে বুঝতে পারছে কে কার উস্তাদ, কে কার শাগরিদ। কে আগের, আর কে পরের।
সুনানে তিরমিযির قال أبو عيسى, সুনানে আবু দাউদের قال أبو داود আর সুনানে নাসায়ীর قال أبو عبد الرحمن যখন আসে রশীদের তখন কান খাড়া হয়ে যায়। মস্তিষ্ক পুরো সজাগ হয়ে ওঠে। এই জায়গাগুলো ভালোভাবে বোঝার চেষ্টা করে। সময় সুযোগ করে এই হাদীসগুলোর রাবীদের জীবনী জরাহ তা’দীলের কিতাব থেকে দেখে নেয়। এই হাদীসগুলো তাখরীজ ও ইলালের কিতাব থেকেও পড়ার চেষ্টা করে। তখন তার কাছে মনে হয়, শুরুহাতে এই জায়গাগুলোর ব্যাখ্যা খুব কম এসেছে। সুনানে নাসায়ীর তো ভালো কোনো শরাহও নেই। শুধু قال أبو داود গুলোর ব্যাখ্যা করে স্বতন্ত্র কিছু রিসালা লেখা হয়েছে। কিন্তু সেই রিসালাগুলোর আলোচনায় খুবই সুস্পষ্ট যে, আবু দাউদ রহ. এর কথাই যথাযথ বোঝা হয়নি। অবশ্য কিছু قال أبو داود এর ব্যাখ্যা নিয়ে আরবের কতিপয় গবেষক লেখালেখি করেছেন। তাদের আলোচনা তুলনামূলক ভালো হওয়ার কথা।
নাযেম সাহেব বলেছেন, দাওরা হাদীসের বছরটি হাদীস পড়ার এক সুবর্ণ সুযোগ। এত হাদীস এক সাথে হয়ত আর কখনোই পড়া হবে না। তাই সকল দরসে উপস্থিত তো থাকবেই। সাথে প্রত্যেকটা হাদীসের সনদ ও মতন খেয়াল করে শুনবে। সনদ ও উলূমুল হাদীস সংক্রান্ত গুরুত্বপূর্ণ কথা নোট করবে। নিজের ইলমী ও আমলী যিন্দেগীতে কাজে লাগবে, এমন হাদীসগুলোও নোট করে নেবে।
তাই রশীদ সকল দরস মনোযোগ সহকারে শোনার চেষ্টা করে। দরস না হলে فتح الباري আর عمدة القاري মিলিয়ে মিলিয়ে পড়ে। নাযেম সাহেব فتح الملهم، تكملة فتح الملهم، معارف السنن، بذل المجهود এই শরাহগুলোও পড়ার কথা বলেছেন। شرح معاني الآثار আর موطأ محمد যেহেতু দরসে সম্পূর্ণ পড়া হবে না তাই অবসর সময়ে এই দুই কিতাবও নোট করে করে পড়ে নিতে বলেছেন। রশীদ শুধু সময় খোঁজে, কখন সে এই কিতাবগুলো নিয়ে বসবে।
বছরের শুরুতে যেহেতু حجية حديث তথা হাদীসের প্রামাণিকতা ও অনুসরণের আবশ্যকীয়তা এবং تدوين حديث তথা হাদীস সংকলনের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হয়, তাই নাযেম সাহেব তাকে আরও কয়েকটা কিতাব পড়তে বলেছেন। যথা:
حجيت حديث از مفتي تقي العثماني
السنة ومكانتها في التشريع الإسلامي للشيخ مصطفى السباعي
دفاع عن السنة للشيخ محمد أبي شهبة
مكانة الصحيحين لملا خاطر
نصرة الحديث في الرد على منكري الحديث للشيخ حبيب الرحمن الأعظمي
دراسات في الحديث النبوي وتاريخ تدوينه للشيخ مصطفى الأعظمي
এছাড়াও মাওলানা আব্দুল মালেক সাহেব ‘তালিবে ইলমের পথ ও পাথেয়’ কিতাবে দাওরা হাদীসের ছাত্রদের জন্য যে সকল দিক নির্দেশনা দিয়েছেন তা পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে মেনে চলতে বলেছেন।
* * *
ঈদের দিন বিকেলে রাস্তা ঘাট খালি থাকে। তাই বাড়িতে যাওয়া সহজ। অনেক দীর্ঘ পথও ছোট মনে হয়। চারদিকে কুরবানীর পশুর রক্ত জমাট বেঁধে আছে। রশীদের নতুন জামায় যেন রক্ত না লাগে তাই খুব সর্তক হয়ে হাঁটতে লাগল। একটা রিক্সা পেয়ে তাতে চেপে বসল এবং অল্প সময়ের মধ্যেই বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে গেল। রিক্সাওয়ালাকে ভাড়া দ্বিগুন বাড়িয়ে দিল। দাঁড়িয়ে থাকতে হলো না। খুব সহজেই বাস পেয়ে গেল। দ্বিতীয় লাইনের জানালার পাশের ছিটটায় গিয়ে বসল। পাশের ছিটটা খালি ছিল। রশীদ ভেবেছিল, ছিটটা হয়ত খালিই থাকবে। একটু আরামেই যাওয়া যাবে। বাস চলা শুরু করলে دراسات في الحديث النبوي কিতাবটি খুলে বসল এবং অল্পতেই কিতাবের মধ্যে ডুবে গেল।
কিছুক্ষণ পর আধাপাকা চুলের একজন বয়স্ক লোক বাসে উঠল। আশে পাশে খালি ছিট থাকা সত্ত্বেও ভদ্র লোক তার পাসের ছিটেই বসল। লোকটাকে দেখে মনে হয় শিক্ষিত ব্যক্তি হবেন। লোকটি আড়চোখে কয়েকবার তার দিকে তাকাল। হয়ত কিছু বলবে। রশীদ এড়িয়ে যাবার চেষ্টা করল। অবশেষে লোকটা মুখ খুলেই ফেলল…
: হুযুর কি মাদরাসায় পড়েন?
: জ্বী।
: কী পড়েন?
: এ বছর দাওরা হাদীস পড়ছি।
: মানে বুখারী মুসলিম পড়েন?
: জ্বী সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিমসহ হাদীসের আরও কয়েকটা কিতাব পড়ছি।
: ও..। একটা কথা বলব?
: জ্বী বলুন।
: হাদীস পড়ার কী খুব দরকার? কুরআন পড়লেই তো চলে!
রশীদ ভ্রু কুঁচকালো…
: হাদীস মানতে হলে পড়তে হবে না?
: কুরআন থাকেত হাদীস কেন মানতে হবে?
: অনেক কারণেই মানতে হবে।
: কিছু কারন বলুন।
: আমি বলব। তবে শর্ত হলো আমার কথা শেষ না হওয়া পর্যন্ত আপনি কোনো কথা বলবেন না। আমার কথা শেষে হলে আপনার যা ইচ্ছা বলুন। আমিও তখন কথা বলব না। হ্যাঁ, এক আলোচনা শেষ হওয়ার আগে আরেক আলোচনায় যাওয়া যাবে না।
লোকটি একটু নড়েচড়ে বসল। গলায় একটা কৃত্রিম কাশি দিয়ে বলল,
: ঠিক আছে।
: আপনি জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কুরআন থাকতে হাদীস মানব কেন? এর জবাব হলো, স্বয়ং কুরআন বলেছে হাদীস মানতে। তাই হাদীস মানব।
: কোরআন কোথায় বলেছে?!
: অনেক জায়গায় বলেছে। উদাহরণস্বরূপ কয়েকটা আয়াত পাঠ করি:
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّ اللَّهَ لَا يُحِبُّ الْكَافِرِينَ(سورة آل عمران: 32)
অর্থ: আপনি বলুন, তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর। তারপরও যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আল্লাহ কাফিরদেরকে পছন্দ করেন না।
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَالرَّسُولَ لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ(سورة آل عمران: 132)
অর্থ: তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর, যাতে তোমাদের প্রতি রহমতের আচরণ করা হয়।
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَأُولِي الْأَمْرِ مِنْكُمْ ۖ فَإِنْ تَنَازَعْتُمْ فِي شَيْءٍ فَرُدُّوهُ إِلَى اللَّهِ وَالرَّسُولِ إِنْ كُنْتُمْ تُؤْمِنُونَ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۚ ذَٰلِكَ خَيْرٌ وَأَحْسَنُ تَأْوِيلًا(سورة النساء: 59)
অর্থ: হে মুমিনগণ! তোমরা আনুগত্য কর আল্লাহর, তাঁর রাসূলের এবং তোমাদের মধ্যে যারা এখতিয়ারধারী তাদেরও। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যদি কোনও বিষয়ে বিরোধ দেখা দেয়, তবে তোমরা আল্লাহ ও পরকালে সত্যিকারের বিশ্বাসী হয়ে থাকলে সে বিষয়কে আল্লাহ ও রাসূলের ওপর ন্যস্ত কর। এটাই উৎকৃষ্টতর এবং এর পরিণামও সর্বাপেক্ষা শুভ।
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ وَاحْذَرُوا فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَاعْلَمُوا أَنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ(سورة المائدة: 92)
অর্থ: তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো এবং(অবাধ্যতা) পরিহার করে চলো। তোমরা যদি(এ আদেশ থেকে) বিমুখ হও, তবে জেনে রেখ, আমার রাসূলের দায়িত্ব কেবল সুস্পষ্টরূপে(আল্লাহর হুকুম) প্রচার করা।
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَ(سورة الأنفال: 1)
অর্থ: তোমরা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য কর যদি মুমিন হয়ে থাক।
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَوَلَّوْا عَنْهُ وَأَنْتُمْ تَسْمَعُونَ(سورة الأنفال: 20)
অর্থ: হে মুমিনগণ! আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর এবং এর থেকে(অর্থাৎ আনুগত্য থেকে) মুখ ফিরিয়ে নিয়ো না, যখন তোমরা(আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশাবলী) শুনছ।
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَلَا تَنَازَعُوا فَتَفْشَلُوا وَتَذْهَبَ رِيحُكُمْ(سورة الأنفال: 46)
অর্থ: এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে এবং পরস্পরে কলহ করবে না, অন্যথায় তোমরা দুর্বল হয়ে পড়বে এবং তোমাদের হাওয়া(প্রভাব) বিলুপ্ত হবে।
قُلْ أَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّوْا فَإِنَّمَا عَلَيْهِ مَا حُمِّلَ وَعَلَيْكُمْ مَا حُمِّلْتُمْ وَإِنْ تُطِيعُوهُ تَهْتَدُوا وَمَا عَلَى الرَّسُولِ إِلَّا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ(سورة النور: 54)
অর্থ:(তাদেরকে) বলে দাও, আল্লাহর আনুগত্য কর এবং আনুগত্য কর রাসূলের। তথাপি যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে রাখ, তবে রাসূলের দায় ততটুকুই, যতটুকুর দায়িত্ব তার ওপর অর্পণ করা হয়েছে। আর তোমাদের ওপর যে ভার অর্পিত হয়েছে, তার দায় তোমাদেরই ওপর। তোমরা তাঁর আনুগত্য করলে হেদায়াত পেয়ে যাবে। রাসূলের দায়িত্ব তো কেবল পরিষ্কারভাবে পৌঁছে দেওয়া।
أَأَشْفَقْتُمْ أَنْ تُقَدِّمُوا بَيْنَ يَدَيْ نَجْوَاكُمْ صَدَقَاتٍ ۚ فَإِذْ لَمْ تَفْعَلُوا وَتَابَ اللَّهُ عَلَيْكُمْ فَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ وَآتُوا الزَّكَاةَ وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ ۚ وَاللَّهُ خَبِيرٌ بِمَا تَعْمَلُونَ(سورة المجادلة: 13)
অর্থ: তোমরা নিভৃতে কথা বলার আগে সদকা করতে কি ভয় পাচ্ছ? তোমরা যখন তা করতে পারনি এবং আল্লাহ তাআলাও তোমাদেরকে ক্ষমা করে দিয়েছেন, তখন নামায কায়েম করতে থাক, যাকাত দিতে থাক এবং আল্লাহ ও তার রাসূলের আনুগত্য করে যাও। তোমরা যা-কিছু কর আল্লাহ সে সম্বন্ধে পরিপূর্ণ অবগত।
وَأَطِيعُوا اللَّهَ وَأَطِيعُوا الرَّسُولَ فَإِنْ تَوَلَّيْتُمْ فَإِنَّمَا عَلَى رَسُولِنَا الْبَلَاغُ الْمُبِينُ(سورة التغابن: 1
অর্থ: তোমরা আল্লাহর আনুগত্য করো ও রাসূলের আনুগত্য করো। তোমরা যদি(এ আদেশ থেকে) বিমুখ হও, তবে জেনে রেখ, আমার রাসূলের দায়িত্ব কেবল সুস্পষ্টরূপে(আল্লাহর হুকুম) প্রচার করা।
এই আয়াতগুলোতে সুস্পষ্টভাবে আল্লাহর সাথে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। এছাড়াও আরও কিছু আয়াতে আল্লাহ এবং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে যারা অনুসরণ করে তাদের প্রশংসা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন পুরস্কারের ওয়াদা করা হয়েছে।
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ خَالِدِينَ فِيهَا وَذَلِكَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ(سورة النساء: 13)
অর্থ: যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, তিনি তাকে এমন উদ্যানসমূহে দাখিল করবেন, যার তলদেশে নহর প্রবাহিত হবে। তারা সর্বদা তাতে থাকবে। আর এটা মহা সাফল্য।
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَالرَّسُولَ فَأُولَئِكَ مَعَ الَّذِينَ أَنْعَمَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ مِنَ النَّبِيِّينَ وَالصِّدِّيقِينَ وَالشُّهَدَاءِ وَالصَّالِحِينَ وَحَسُنَ أُولَئِكَ رَفِيقًا(سورة النساء: 69)
অর্থ: যারা আল্লাহ ও রাসূলের আনুগত্য করবে, তারা সেই সকল লোকের সঙ্গে থাকবে, যাদের প্রতি আল্লাহ অনুগ্রহ করেছেন, অর্থাৎ নবীগণ, সিদ্দীকগণ, শহীদগণ ও সালিহগণের সঙ্গে। কতই না উত্তম সঙ্গী তারা!
وَالْمُؤْمِنُونَ وَالْمُؤْمِنَاتُ بَعْضُهُمْ أَوْلِيَاءُ بَعْضٍ يَأْمُرُونَ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَوْنَ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُقِيمُونَ الصَّلَاةَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَيُطِيعُونَ اللَّهَ وَرَسُولَهُ أُولَئِكَ سَيَرْحَمُهُمُ اللَّهُ إِنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ(سورة التوبة: 71)
অর্থ: মুমিন নর ও মুমিন নারী পরস্পরে একে অন্যের সহযোগী। তারা সৎকাজের আদেশ করে, অসৎ কাজে বাধা দেয়, নামায কায়েম করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে। তারা এমন লোক, যাদের প্রতি আল্লাহ নিজ রহমত বর্ষণ করবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ পরাক্রমশালী, প্রজ্ঞাময়।
وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ(سورة النور: 52)
অর্থ: যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে, আল্লাহকে ভয় করে ও তার অবাধ্যতা পরিহার করে চলে, তারাই কৃতকার্য হয়।
يَاأَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَقُولُوا قَوْلًا سَدِيدًا(70) يُصْلِحْ لَكُمْ أَعْمَالَكُمْ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ فَازَ فَوْزًا عَظِيمًا(سورة الأحزاب: 71)
অর্থ: হে মুমিনগন! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্য-সঠিক কথা বল। তাহলে আল্লাহ তোমাদের কার্যাবলী শুধরে দেবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করে সে মহা সাফল্য অর্জন করল।
لَيْسَ عَلَى الْأَعْمَىٰ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْأَعْرَجِ حَرَجٌ وَلَا عَلَى الْمَرِيضِ حَرَجٌ ۗ وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ يُدْخِلْهُ جَنَّاتٍ تَجْرِي مِنْ تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ وَمَنْ يَتَوَلَّ يُعَذِّبْهُ عَذَابًا أَلِيمًا
অর্থ:(যুদ্ধ না করাতে) অন্ধের জন্য কোনো গুনাহ নেই, খোঁড়া ব্যক্তির জন্য কোনো গুনাহ নেই এবং রুগ্ন ব্যক্তির জন্যও কোনো গুনাহ নেই। যে-কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য করবে, আল্লাহ তাকে দাখিল করবেন জান্নাতে, যার তলদেশে প্রবহমান থাকবে নহর। আর যে-কেউ মুখ ফিরিয়ে নেবে, তাকে যন্ত্রণাময় শাস্তি দেবেন।
قَالَتِ الْأَعْرَابُ آمَنَّا قُلْ لَمْ تُؤْمِنُوا وَلَكِنْ قُولُوا أَسْلَمْنَا وَلَمَّا يَدْخُلِ الْإِيمَانُ فِي قُلُوبِكُمْ وَإِنْ تُطِيعُوا اللَّهَ وَرَسُولَهُ لَا يَلِتْكُمْ مِنْ أَعْمَالِكُمْ شَيْئًا إِنَّ اللَّهَ غَفُورٌ رَحِيمٌ(سورة الحجرات: 14)
অর্থ: দেহাতীরা বলে আমরা ঈমান এনেছি। তাদেরকে বল, তোমরা ঈমান আননি। তবে এই বল যে, আমরা আত্মসমর্পণ করেছি।” ঈমান এখনও তোমাদের অন্তরে প্রবেশ করেনি। তোমরা যদি সত্যিই আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের আনুগত্য কর, তবে আল্লাহ তোমাদের কর্মের(সওয়াবের) ভেতর কিছুমাত্র কম করবেন না। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল পরম দয়ালু
لَقَدْ تَابَ اللَّهُ عَلَى النَّبِيِّ وَالْمُهَاجِرِينَ وَالْأَنْصَارِ الَّذِينَ اتَّبَعُوهُ فِي سَاعَةِ الْعُسْرَةِ مِنْ بَعْدِ مَا كَادَ يَزِيغُ قُلُوبُ فَرِيقٍ مِنْهُمْ ثُمَّ تَابَ عَلَيْهِمْ إِنَّهُ بِهِمْ رَءُوفٌ رَحِيمٌ(سورة التوبة: 117)
অর্থ: নিশ্চয়ই আল্লাহ সদয় দৃষ্টি দিয়েছেন নবীর প্রতি এবং মুহাজির ও আনসারদের প্রতি, যারা কঠিন মুহূর্তে নবীর সঙ্গে থেকেছিল, যখন তাদের একটি দলের অন্তর টলে যাওয়ার উপক্রম হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ তাদের প্রতি সদয় হলেন। নিশ্চয়ই তিনি তাদের প্রতি মেহেরবান, পরম দয়ালু।
*এবার আসুন এমন কিছু আয়াত শুনি যেখানে আল্লাহ ও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের যারা অবাধ্য হয় তাদের নিন্দা করা হয়েছে এবং বিভিন্ন শাস্তির ধমকি দেওয়া হয়েছে।
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَتَعَدَّ حُدُودَهُ يُدْخِلْهُ نَارًا خَالِدًا فِيهَا وَلَهُ عَذَابٌ مُهِينٌ(سورة النساء: 14)
অর্থ: পক্ষান্তরে যে ব্যক্তি আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করবে এবং তাঁর(স্থিরীকৃত) সীমা লংঘন করবে, তিনি তাকে দাখিল করবেন জাহান্নামে, যাতে সে সর্বদা থাকবে এবং তার জন্য আছে লাঞ্ছনাকর শাস্তি।
وَمَنْ يُشَاقِقِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ(سورة الأنفال: 13)
অর্থ: নিশ্চয়ই কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতায় লিপ্ত হলে, আল্লাহর আযাব তো সুকঠিন।
أَلَمْ يَعْلَمُوا أَنَّهُ مَنْ يُحَادِدِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَأَنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدًا فِيهَا ذَلِكَ الْخِزْيُ الْعَظِيمُ(سورة التوبة: 63)
অর্থ: তারা কি জানে না, কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের বিরোধিতা করলে তার জন্য রয়েছে জাহান্নামের আগুন, যাতে সে সর্বদা থাকবে? এটা তো চরম লাঞ্ছনা!
وَمَا كَانَ لِمُؤْمِنٍ وَلَا مُؤْمِنَةٍ إِذَا قَضَى اللَّهُ وَرَسُولُهُ أَمْرًا أَنْ يَكُونَ لَهُمُ الْخِيَرَةُ مِنْ أَمْرِهِمْ وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَقَدْ ضَلَّ ضَلَالًا مُبِينًا(سورة الأحزاب: 36)
অর্থ: আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যখন কোনো বিষয়ে চূড়ান্ত ফায়সালা দান করেন, তখন কোনো মুমিন পুরুষ ও মুমিন নারীর নিজেদের বিষয়ে কোনো এখতিয়ার বাকি থাকে না। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করলে সে তো সুস্পষ্ট গোমরাহীতে পতিত হলো।
وَمَنْ يَعْصِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ فَإِنَّ لَهُ نَارَ جَهَنَّمَ خَالِدِينَ فِيهَا أَبَدًا(سورة الجن: 23)
অর্থ: অবশ্য (আমাকে যে জিনিসের এখতিয়ার দেওয়া হয়েছে, তা হল) আল্লাহর পক্ষ হতে বার্তা পৌঁছানো ও তাঁর বাণী প্রচার। কেউ আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের অবাধ্যতা করলে তার জন্য আছে জাহান্নামের আগুন, যার ভেতর তারা স্থায়ীভাবে থাকবে।
*কিছু আয়াতে বলা হয়েছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুসরণ করার দ্বারাই আল্লাহ তাআলার অনুসরণ হবে।
قُلْ إِنْ كُنْتُمْ تُحِبُّونَ اللَّهَ فَاتَّبِعُونِي يُحْبِبْكُمُ اللَّهُ وَيَغْفِرْ لَكُمْ ذُنُوبَكُمْ وَاللَّهُ غَفُورٌ رَحِيمٌ(سورة آل عمران: 31)
অর্থ:(হে নবী! মানুষকে) বলে দাও, তোমরা যদি আল্লাহকে ভালোবেসে থাক, তবে আমার অনুসরণ কর, তাহলে আল্লাহ তোমাদের ভালোবাসবেন এবং তোমাদের পাপরাশি ক্ষমা করবেন। আল্লাহ অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।
مَنْ يُطِعِ الرَّسُولَ فَقَدْ أَطَاعَ اللَّهَ وَمَنْ تَوَلَّى فَمَا أَرْسَلْنَاكَ عَلَيْهِمْ حَفِيظًا(سورة النساء: 80)
অর্থ: যে ব্যক্তি রাসূলের আনুগত্য করে সে আল্লাহরই আনুগত্য করল, আর যারা(তাঁর আনুগত্য হতে) মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি(হে নবী!) তোমাকে তাদের তত্ত্বাবধায়ক বানিয়ে পাঠাইনি(যে, তাদের কাজের দায়-দায়িত্ব তোমার ওপর বর্তাবে)।
* আপনি যদি ভালোভাবে কুরআন অধ্যায়ন করে থাকেন তাহলে দেখবেন, কুরআনে যেখানেই আল্লাহকে অনুসরণের কথা বলা হয়েছে সেখানেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকেও অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। কোথাও শুধু আল্লাহকে অনুসরণের কথা বলা হয়নি। কিন্তু কিছু আয়াত এমন আছে যেখানে শুধু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণের কথা বলা হয়েছে।
قُلْ يَاأَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ لَا إِلَهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ(سورة الأعراف: 15
অর্থ: (হে রাসূল! তাদেরকে) বল, হে মানুষ! আমি তোমাদের সকলের প্রতি সেই আল্লাহর প্রেরিত রাসূল, যার আয়ত্তে আকাশমণ্ডল ও পৃথিবীর রাজত্ব। তিনি ছাড়া কোনো মাবুদ নেই। তিনি জীবন ও মৃত্যু দান করেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহ ও তাঁর সেই রাসূলের প্রতি ঈমান আন, যিনি উম্মী নবী এবং যিনি আল্লাহ ও তার বাণীসমূহে বিশ্বাস রাখেন এবং তোমরা তার অনুসরণ কর, যাতে তোমরা হিদায়াত লাভ কর।
وَمَا آتَاكُمُ الرَّسُولُ فَخُذُوهُ وَمَا نَهَاكُمْ عَنْهُ فَانْتَهُوا وَاتَّقُوا اللَّهَ إِنَّ اللَّهَ شَدِيدُ الْعِقَابِ(سورة الحشر: 7)
অর্থ: রাসূল তোমাদেরকে যা দেয়, তা গ্রহণ কর আর তোমাদেরকে যা থেকে নিষেধ করে তা হতে বিরত থাক এবং আল্লাহকে ভয় করে চল। নিশ্চয়ই আল্লাহ কঠোর শাস্তিদাতা।
وَمَنْ يُشَاقِقِ الرَّسُولَ مِنْ بَعْدِ مَا تَبَيَّنَ لَهُ الْهُدَى وَيَتَّبِعْ غَيْرَ سَبِيلِ الْمُؤْمِنِينَ نُوَلِّهِ مَا تَوَلَّى وَنُصْلِهِ جَهَنَّمَ وَسَاءَتْ مَصِيرًا(سورة النساء: 115)
অর্থ: আর যে ব্যক্তি তার সামনে হিদায়াত স্পষ্ট হয়ে যাওয়ার পরও রাসূলের বিরুদ্ধাচরণ করবে ও মুমিনদের পথ ছাড়া অন্য কোনও পথ অনুসরণ করবে, আমি তাকে সেই পথেই ছেড়ে দেব, যা সে অবলম্বন করেছে। আর তাকে জাহান্নামে নিক্ষেপ করব, যা অতি মন্দ ঠিকানা।
لَا تَجْعَلُوا دُعَاءَ الرَّسُولِ بَيْنَكُمْ كَدُعَاءِ بَعْضِكُمْ بَعْضًا ۚ قَدْ يَعْلَمُ اللَّهُ الَّذِينَ يَتَسَلَّلُونَ مِنْكُمْ لِوَاذًا ۚ فَلْيَحْذَرِ الَّذِينَ يُخَالِفُونَ عَنْ أَمْرِهِ أَنْ تُصِيبَهُمْ فِتْنَةٌ أَوْ يُصِيبَهُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ(سورة النور: 63)
অর্থ: (হে মানুষ!) তোমরা নিজেদের মধ্যে রাসূলের ডাককে তোমাদের পারস্পরিক ডাকের মত(মামুলি) মনে করো না; তোমাদের মধ্যে যারা একে অন্যের আড়াল নিয়ে চুপিসারে সরে পড়ে আল্লাহ তাদেরকে ভালো করে জানেন। সুতরাং যারা তাঁর আদেশের বিরুদ্ধাচরণ করে, তাদের ভয় করা উচিত না জানি তাদের ওপর কোনো বিপদ আপতিত হয় অথবা যন্ত্রণাদায়ক কোনো শাস্তি তাদেরকে আক্রান্ত করে।
যারা আল্লাহ অনুসরণ আর নবী রাসূলদের অনুসরণে পার্থক্য করে তাদের শাস্তি হিসেবে বলা হয়েছে
إِنَّ الَّذِينَ يَكْفُرُونَ بِاللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيُرِيدُونَ أَنْ يُفَرِّقُوا بَيْنَ اللَّهِ وَرُسُلِهِ وَيَقُولُونَ نُؤْمِنُ بِبَعْضٍ وَنَكْفُرُ بِبَعْضٍ وَيُرِيدُونَ أَنْ يَتَّخِذُوا بَيْنَ ذَلِكَ سَبِيلًا *أُولَٰئِكَ هُمُ الْكَافِرُونَ حَقًّا ۚ وَأَعْتَدْنَا لِلْكَافِرِينَ عَذَابًا مُهِينًا(سورة النساء: 150)
অর্থ: যারা আল্লাহ ও তার রাসূলগণকে অস্বীকার করে এবং আল্লাহ ও তাঁর রাসূলগণের মধ্যে পার্থক্য করতে চায় ও বলে, আমরা কতক(রাসূল)-এর প্রতি তো ঈমান রাখি এবং কতককে অস্বীকার করি, আর(এভাবে) তারা(কুফর ও ঈমানের মাঝখানে) মাঝামাঝি একটি পথ অবলম্বন করতে চায়। এরূপ লোকই সত্যিকারের কাফির। আর আমি কাফিরদের জন্য লাঞ্ছনাকর শাস্তি প্রস্তুত করে রেখেছি।
রশীদ তার কথা শেষ করল। লোকটি বলল,
: হুযুর! আমি আয়াতগুলো শুনলাম। কিন্তু এই আয়াতগুলোর কোথায় হাদীস অনুসরণের কথা বলা হয়েছে? এখানে তো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণের কথা বলা হয়েছে। আর কুরআনের অনুসরণের মাধ্যমেই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ হবে।
এই অজ্ঞতাপূর্ণ কথা শুনে রশীদের রাগ উঠে যাচ্ছিল। নিজেকে সংবরণ করল। নিজেকে বুঝাতে লাগল, রাগ করা যাবে না। উত্তেজিত হওয়া যাবে না। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে হবে…
: হাদীস হলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা ও কাজ। ব্যক্তি অনুসরণের অর্থই হলো ব্যক্তির কথা ও কাজের অনুসরণ করা। সুতরাং হাদীস অনুসরণের অর্থ হলো নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করা। কুরআন অনুসরণ করলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে অনুসরণ করা হবে নিশ্চয়। কিন্তু তার নিজের কথা ও কাজ অনুসরণ করলে নবীজীর অনুসরণ হবে না একথা কি এই আয়াতগুলো তে আছে? বা অন্য কোনো আয়াতে?
:…!!
: তাহলে কীভাবে বললেন, কুরআনের অনুসরণের মাধ্যমেই শুধু নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ হবে। কীভাবে আপনি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহ ওয়া সাল্লামের কথা ও কাজের অনুসরণকে তার অনুসরণ থেকে বের করে দিলেন? কুরআনের অনুসরণের মাধ্যমেও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ হবে। হাদীসের অনুসরণের মাধ্যমেও নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের অনুসরণ হবে।
লোকটা একটু রেগে গেল…
: তাহলে এর মানে দাঁড়াচ্ছে কুরআন অপূর্ণাঙ্গ। যার কারণে তার সাথে হাদীস অনুসরণ করতে বলা হচ্ছে! অথচ কুরআনে বলা হয়েছে
مَا فَرَّطْنَا فِي الْكِتَابِ مِنْ شَيْءٍ(سورة الأنعام: 3
অর্থ: আমি কুরআনে কিছুমাত্র ত্রুটি রাখিনি
وَنَزَّلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ تِبْيَانًا لِكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً وَبُشْرَى لِلْمُسْلِمِينَ(سورة النحل: 89)
অর্থ: আমি তোমার প্রতি এ কিতাব নাযিল করেছি, যাতে এটা প্রতিটি বিষয় সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দেয় এবং মুসলিমদের জন্য হয় হিদায়াত, রহমত ও সুসংবাদ।
রশীদ জানত, লোকটি এই আয়াতগুলো পেশ করবে। পূর্বের হাদীস অস্বীকারকারীও এই আয়াতগুলো দিয়ে সংশয় তৈরি করত। আসলে নতুন ফেতনাগুলোতে আগের কথাই চর্বিতে চর্বণ করা হয়। হায় যদি তারা পড়াশোনা করত, বিজ্ঞ আলেমদের সাথে আলোচনা করত, তাহলে কত ফিতনা অঙ্কুরেই শেষ হয়ে যেত…
: হ্যাঁ। কুরআনে কোনো ত্রুটি নেই। কুরআন পূর্ণাঙ্গ। এই জন্যই কুরআনে হাদীস অনুসরণের কথাও বলতে ছাড়েনি। হাদীস অনুসরণের কথা সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করেছে। যদি কুরআনে হাদীস অনুসরণের কথা না থাকত তাহলে আপিন বলতে পারতেন, কুরআন র্পূণাঙ্গ। তাতে সুস্পষ্টরূপে সবকিছু বর্ণনা করে দেওয়া আছে। অথচ হাদীস অনুসরণের কথা নেই। তাহলে আপনারা কেন এমন বিষয় অনুসরণ করতে বলছেন কুরআনে কারীম যার অনুসরণ করতে বলেনি? এমন কিছু অনুসরণের কথা বলা কি কুরআনকে ত্রুটিযুক্ত মনে করার নামান্তর নয়?
: আহা! আপনি বুঝতে পারছেন না। কুরআনে যদি সব কিছুই সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা করে দেওয়া থাকে, তাহলে আর হাদীসের প্রয়োজন কেন?
: আপনি আসলে আয়াত দুটির মর্মই বুঝেননি। কুরআনে সব কিছু বলে দেওয়ার অর্থ কি এই যে, আমার আপনার আজকের কথাও কুরআনে বলে দেওয়া হয়েছে! এর অর্থ হলো কুরআনে দ্বীনের সব বিষয় বলে দেওয়া হয়েছে। কিছু সুস্পষ্টভাবে বলা হয়েছে। আর কিছু হাদীস, ইজমা ও কিয়াস অনুসরণ করার আদেশ দেওয়ার মাধ্যমে বলা হয়েছে।
প্রথম আয়াতের ব্যাখ্যায় অনেক কুরআনের ব্যাখ্যাকার এই কথাটি সুস্পষ্ট বলেছেন। আমার কাছে কুরতুবী রহ. কথাটি লেখা আছে। তিনি কত সুন্দর বলেছেন,
قوله تعالى {ما فرطنا في الكتاب من شيء} أي في اللوح المحفوظ، فإنه أثبت فيه ما يقع من الحوادث. وقيل: أي في القرآن، أي ما تركنا شيئا من أمر الدين إلا وقد دللنا عليه في القرآن؛ إما دلالة مبينة مشروحة، وإما مجملة يتلقى بيانها من الرسول عليه الصلاة والسلام، أو من الإجماع، أو من القياس الذي ثبت بنص الكتاب. قال الله تعالى {ونزلنا عليك الكتاب تبيانا لكل شيء }وقال {وأنزلنا إليك الذكر لتبين للناس ما نزل إليهم} وقال {وما آتاكم الرسول فخذوه وما نهاكم عنه فانتهوا} فأجمل في هذه الآية وآية النحل ما لم ينص عليه مما لم يذكره، فصدق خبر الله بأنه ما فرط في الكتاب من شيء إلا ذكره، إما تفصيلا وإما تأصيلا، وقال {اليوم أكملت لكم دينكم}.
: আমি কুরআনের ব্যাখ্যা মানি না। আমি সরাসরি কুরআন মানি।
: আপনি ব্যাখ্যা না মানলে আপনার ব্যাখ্যা করারও অধিকার নেই। অথচ আপনি ব্যাখ্যা করেই বলছেন হাদীস অনুসরণ করা যাবে না। কারণ হাদীস অনুসরণ না করার কথা কুরআনের কোথাও নেই। যদিও আপনার এটা ব্যাখ্যা নয়, অপব্যাখ্যা। কারণ তা কুরআনের অনেক আয়াতের বিপরীত।
: আল্লাহ তাআলা আরেক জায়গায় বলেছেন
أَفَغَيْرَ اللَّهِ أَبْتَغِي حَكَمًا وَهُوَ الَّذِي أَنْزَلَ إِلَيْكُمُ الْكِتَابَ مُفَصَّلًا(سورة الأنعام: 114)
এই আয়াত কি জানা আছে আপনার? বলুন, হাদীস মানা কি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক হিসেবে মানার নামান্তর নয়?
: উত্তেজিত হবেন না। হাদীস মানা আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক হিসেবে মানার নামান্তর নয়। কারণ হাদীস নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের পক্ষ থেকে নয়। হাদীস মূলত আল্লাহ তাআলারই আদেশ নিষেধ। আল্লাহ তাআলা বলেছেন
وَالنَّجْمِ إِذَا هَوَى() مَا ضَلَّ صَاحِبُكُمْ وَمَا غَوَى() وَمَا يَنْطِقُ عَنِ الْهَوَى() إِنْ هُوَ إِلَّا وَحْيٌ يُوحَى(سورة النجم: 1-3)
অর্থ: কসম নক্ষত্রের, যখন তা পতিত হয়।(হে মক্কাবাসীগণ!) তোমাদের সঙ্গী পথ ভুলে যায়নি এবং বিপথগামীও হয়নি। সে তার নিজ খেয়াল-খুশী থেকে কিছু বলে না। এটা তো খালেস ওহী, যা তাঁর কাছে পাঠানো হয়।
আপনার উল্লেখ করা আয়তে যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে বিচারক হিসেবে মানতে নিষেধ করা হতোই তাহলে আল্লাহ তাআলা অন্য আয়াতে কেন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক হিসেবে মানতে বললেন। এর দ্বারা বোঝা যায়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক হিসেবে মানা আল্লাহ তাআলাকেই বিচারক হিসেবে মানা। উভয়টা সমান।
: কোন আয়াতে আল্লাহ তাআলা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বিচারক হিসেবে মানতে বলেছেন?
: শুনুন
فَلَا وَرَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ حَتَّى يُحَكِّمُوكَ فِيمَا شَجَرَ بَيْنَهُمْ ثُمَّ لَا يَجِدُوا فِي أَنْفُسِهِمْ حَرَجًا مِمَّا قَضَيْتَ وَيُسَلِّمُوا تَسْلِيمًا(سورة النساء: 65)
অর্থ: না, (হে নবী!) তোমার প্রতিপালকের শপথ! তারা ততক্ষণ পর্যন্ত মুমিন হতে পারবে না, যতক্ষণ না নিজেদের পারস্পরিক ঝগড়া-বিবাদের ক্ষেত্রে তোমাকে বিচারক মানবে, তারপর তুমি যে রায় দাও, সে ব্যাপারে নিজেদের অন্তরে কোনো রূপ কুণ্ঠাবোধ না করবে এবং অবনত মস্তকে তা গ্রহণ করে নেবে।
وَيَقُولُونَ آمَنَّا بِاللَّهِ وَبِالرَّسُولِ وَأَطَعْنَا ثُمَّ يَتَوَلَّى فَرِيقٌ مِنْهُمْ مِنْ بَعْدِ ذَلِكَ وَمَا أُولَئِكَ بِالْمُؤْمِنِينَ() وَإِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ إِذَا فَرِيقٌ مِنْهُمْ مُعْرِضُونَ() وَإِنْ يَكُنْ لَهُمُ الْحَقُّ يَأْتُوا إِلَيْهِ مُذْعِنِينَ() أَفِي قُلُوبِهِمْ مَرَضٌ أَمِ ارْتَابُوا أَمْ يَخَافُونَ أَنْ يَحِيفَ اللَّهُ عَلَيْهِمْ وَرَسُولُهُ بَلْ أُولَئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ() إِنَّمَا كَانَ قَوْلَ الْمُؤْمِنِينَ إِذَا دُعُوا إِلَى اللَّهِ وَرَسُولِهِ لِيَحْكُمَ بَيْنَهُمْ أَنْ يَقُولُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا وَأُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ() وَمَنْ يُطِعِ اللَّهَ وَرَسُولَهُ وَيَخْشَ اللَّهَ وَيَتَّقْهِ فَأُولَئِكَ هُمُ الْفَائِزُونَ(سورة النور: 47-52)
অর্থ: তারা (অর্থাৎ মুনাফিকগণ) বলে, আমরা আল্লাহর প্রতি ও রাসূলের প্রতি ঈমান এনেছি এবং আমরা অনুগত হয়েছি। অতঃপর তাদের একটি দল এরপরও মুখ ফিরিয়ে নেয়।(প্রকৃতপক্ষে) তারা মুমিন নয়। তাদেরকে যখন আল্লাহ ও তার রাসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রাসূল তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন, তখন সহসা তাদের একটি দল মুখ ফিরিয়ে নেয়। আর যদি তাদের হক উসুল করার থাকে, তবে অত্যন্ত বাধ্যগত হয়ে রাসূলের কাছে চলে আসে। তবে কি তাদের অন্তরে কোনো ব্যাধি আছে, নাকি তারা সন্দেহে নিপতিত, না তারা আশঙ্কাবোধ করে যে, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল তাদের প্রতি জুলুম করবেন? না, বরং তারা নিজেরাই জুলুমকারী। মুমিনদেরকে যখন আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের দিকে ডাকা হয়, যাতে রাসূল তাদের মধ্যে মীমাংসা করে দেন, তখন তাদের কথা কেবল এটাই হয় যে, তারা বলে আমরা(হুকুম) শুনলাম এবং মেনে নিলাম। আর তারাই সফলকাম।
: আচ্ছা এত কথা রাখেন। আপনি আমাকে এমন কোনো আয়াত দেখাতে পারবেন যেখানে কুরআন অনুসরণের সাথে সাথে হাদীসকেও অনুসরণ করতে বলা হয়েছে?
: পূর্বে সকল আয়াতেই কুরআন অনুসরণের সাথে হাদীসকেও অনুসরণ করতে বলা হয়েছে। আপনি না মেনে নিলে আমি আপনাকে মানতে বাধ্য করতে পারব না। তারপরও আরও কিছু আয়াত শুনুন:
وَإِذَا طَلَّقْتُمُ النِّسَاءَ فَبَلَغْنَ أَجَلَهُنَّ فَأَمْسِكُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ أَوْ سَرِّحُوهُنَّ بِمَعْرُوفٍ ۚ وَلَا تُمْسِكُوهُنَّ ضِرَارًا لِتَعْتَدُوا ۚ وَمَنْ يَفْعَلْ ذَٰلِكَ فَقَدْ ظَلَمَ نَفْسَهُ ۚ وَلَا تَتَّخِذُوا آيَاتِ اللَّهِ هُزُوًا ۚ وَاذْكُرُوا نِعْمَتَ اللَّهِ عَلَيْكُمْ وَمَا أَنْزَلَ عَلَيْكُمْ مِنَ الْكِتَابِ وَالْحِكْمَةِ يَعِظُكُمْ بِهِ ۚ وَاتَّقُوا اللَّهَ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ(سورة البقرة: 230)
অর্থ: যখন তোমরা নারীদেরকে তালাক দিয়ে দাও, তারপর তারা তাদের ইদ্দতের কাছাকাছি পৌঁছে যায়, তখন হয় তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে(নিজ স্ত্রীত্বে) রেখে দেবে, নয়ত তাদেরকে ন্যায়সঙ্গতভাবে ছেড়ে দেবে। তাদেরকে কষ্ট দেওয়ার লক্ষ্যে এজন্য আটকে রেখ না যে, তাদের প্রতি জুলুম করতে পারবে। যে ব্যক্তি এরূপ করবে, সে স্বয়ং নিজ সত্তার প্রতিই জুলুম করবে। তোমরা আল্লাহর আয়াতসমূহকে তামাশারূপে গ্রহণ করো না। আল্লাহ তোমাদের প্রতি যে অনুগ্রহ করেছেন এবং তোমাদেরকে উপদেশদানের লক্ষ্যে তোমাদের প্রতি যে কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন তা স্মরণ রেখ। আর আল্লাহকে ভয় করে চলো এবং জেনে রেখ, আল্লাহ সর্ববিষয়ে অবগত।
لَقَدْ مَنَّ اللَّهُ عَلَى الْمُؤْمِنِينَ إِذْ بَعَثَ فِيهِمْ رَسُولًا مِنْ أَنْفُسِهِمْ يَتْلُو عَلَيْهِمْ آيَاتِهِ وَيُزَكِّيهِمْ وَيُعَلِّمُهُمُ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَإِنْ كَانُوا مِنْ قَبْلُ لَفِي ضَلَالٍ مُبِينٍ(سورة آل عمران: 164)
অর্থ: প্রকৃতপক্ষে আল্লাহ মুমিনদের প্রতি(অতি বড়) অনুগ্রহ করেছেন, যখন তিনি তাদের কাছে তাদেরই মধ্য হতে একজন রাসূল পাঠিয়েছেন, যে তাদের সামনে আল্লাহর আয়াতসমূহ তিলাওয়াত করে, তাদেরকে পরিশুদ্ধ করে এবং তাদেরকে কিতাব ও হিকমত শিক্ষা দেয়, আর নিশ্চয় এর আগে তারা সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে ছিল।
এই ধরনের আয়াত কুরআনে কারীমের আরও একাধিক জায়গায় আছে।
وَلَوْلَا فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ وَرَحْمَتُهُ لَهَمَّتْ طَائِفَةٌ مِنْهُمْ أَنْ يُضِلُّوكَ وَمَا يُضِلُّونَ إِلَّا أَنْفُسَهُمْ ۖ وَمَا يَضُرُّونَكَ مِنْ شَيْءٍ ۚ وَأَنْزَلَ اللَّهُ عَلَيْكَ الْكِتَابَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَكَ مَا لَمْ تَكُنْ تَعْلَمُ ۚ وَكَانَ فَضْلُ اللَّهِ عَلَيْكَ عَظِيمًا(سورة النساء: 105)
অর্থ: এবং(হে নবী!) তোমার প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহ ও রহমত না থাকলে তাদের একটি দল তো তোমাকে সরল পথ হতে বিচ্যুত করার ইচ্ছা করেই ফেলত(প্রকৃতপক্ষে ) তারা নিজেদের ছাড়া অন্য কাউকে পথভ্রষ্ট করছে না। তারা তোমার কিছুমাত্র ক্ষতি করতে পারবে না। আল্লাহ তোমার প্রতি কিতাব ও হিকমত নাযিল করেছেন এবং তোমাকে এমন সব বিষয়ে জ্ঞান দিয়েছেন, যা তুমি জানতে না। বস্তুত তোমার প্রতি সর্বদাই আল্লাহর মহা অনুগ্রহ রয়েছে।
وَاذْكُرْنَ مَا يُتْلَىٰ فِي بُيُوتِكُنَّ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ وَالْحِكْمَةِ ۚ إِنَّ اللَّهَ كَانَ لَطِيفًا خَبِيرًا(سورة الأحزاب: 34)
অর্থ: এবং তোমাদের গৃহে আল্লাহর যে আয়াতসমূহ ও হেকমতের কথা পাঠ করা হয়, তা স্মরণ রাখ। নিশ্চয়ই আল্লাহ অতি সূক্ষ্মদর্শী এবং সর্ববিষয়ে অবহিত।
খেয়াল করুন, এই আয়াতগুলোতে কুরআনের সাথে, কুরআনের আয়াতের الحكمة এর কথা বলা হচ্ছে। যদি الحكمة স্বয়ং কুরআনই হতো তাহলে পুনরায় উল্লেখের প্রয়োজন হতো না এবং এতবার বলা হতো না। বোঝা গেল الحكمة কুরআন থেকে ভিন্ন কিছু। এই الحكمة এর অপর নামই হলো হাদীস।
লোকটি চুপ হয়ে গেল। রশীদ বলেই চলল…
وَأَنْزَلْنَا إِلَيْكَ الذِّكْرَ لِتُبَيِّنَ لِلنَّاسِ مَا نُزِّلَ إِلَيْهِمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ(سورة النحل: 44)
অর্থ:(হে নবী!) আমি তোমার প্রতিও এই কিতাব নাযিল করেছি, যাতে তুমি মানুষের সামনে সেই সব বিষয়ের ব্যাখ্যা করে দাও, যা তাদের প্রতি নাযিল করা হয়েছে এবং যাতে তারা চিন্তা করে।
وَمَا أَنْزَلْنَا عَلَيْكَ الْكِتَابَ إِلَّا لِتُبَيِّنَ لَهُمُ الَّذِي اخْتَلَفُوا فِيهِ وَهُدًى وَرَحْمَةً لِقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ(سورة النحل: 64)
অর্থ: আমি তোমার ওপর এ কিতাব এজন্যই নাযিল করেছি, যাতে তারা যে সব বিষয়ে বিভিন্ন পথ গ্রহণ করেছে, তাদের সামনে তা সুস্পষ্টরূপে বর্ণনা কর এবং যাতে এটা ঈমান আনয়নকারীদের জন্য হিদায়াত ও রহমতের অবলম্বন হয়।
এই যে কুরআনের البيان(ব্যাখ্যা) এর দায়িত্ব নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা দিয়েছেন এই البيان(ব্যাখ্যা) এর অপর নাম হলো হাদীস।
আরেকটি আয়াতে এসেছে,
وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُمْ بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ(156) الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِنْدَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنْجِيلِ يَأْمُرُهُمْ بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنْكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنْزِلَ مَعَهُ أُولَئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ(سورة الأعراف: 157)
অর্থ: আর আমার দয়া সে তো প্রত্যেক বস্তুতে ব্যাপ্ত। সুতরাং আমি এ রহমত(পরিপূর্ণভাবে) সেই সব লোকের জন্য লিখব, যারা তাকওয়া অবলম্বন করে, যাকাত দেয় এবং যারা আমার আয়াতসমূহে ঈমান রাখে। যারা এই রাসূলের অর্থাৎ উম্মী নবীর অনুসরণ করে, যার কথা তারা তাওরাত ও ইনজীলে, যা তাদের নিকট আছে, লিপিবদ্ধ পাবে, যে তাদেরকে সৎকাজের আদেশ করবে ও মন্দ কাজে নিষেধ করবে এবং তাদের জন্য উৎকৃষ্ট বস্তু হালাল করবে ও নিকৃষ্ট বস্তু হারাম করবে এবং তাদের থেকে ভার ও গলার বেড়ি নামাবে, যা তাদের ওপর চাপানো ছিল। সুতরাং যারা তার(অর্থাৎ নবীর) প্রতি ঈমান আনবে, তাকে সম্মান করবে, তার সাহায্য করবে এবং তার সঙ্গে যে নূর অবতীর্ণ করা হয়েছে তার অনুসরণ করবে, তারাই হবে সফলকাম।
এই আয়াতে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে আল্লাহ তাআলা কোনো জিনিসকে হালাল কোন জিনিসকে হারাম সাব্যস্ত করার অধিকার দিয়েছেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনে আসেনি এমন অনেক জিনিসকে হারাম ও অনেক জিনিসকে হালাল করেছেন। এই হারাম ও হালাল করণের কাজের অপর নাম হাদীস।
আল্লাহ তাআলা আরেক আয়াতে বলেছেন,
لَقَدْ كَانَ لَكُمْ فِي رَسُولِ اللَّهِ أُسْوَةٌ حَسَنَةٌ لِمَنْ كَانَ يَرْجُو اللَّهَ وَالْيَوْمَ الْآخِرَ وَذَكَرَ اللَّهَ كَثِيرًا(سورة الأحزاب: 21)
অর্থ: বস্তুত রাসূলের মধ্যে তোমাদের জন্য রয়েছে উত্তম আদর্শ এমন ব্যক্তির জন্য, যে আল্লাহ ও আখেরাত দিবসের আশা রাখে এবং আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ করে।
দেখুন এখানে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনকেই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ হিসেবে নির্ধারণ করা হয়েছে। অথচ কুরআন নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের পুরো জীবন নয়। জীবনের বড় একটা অংশ। আর বাকি জীবনটাই হলো হাদীস। তাহলে বোঝা গেল কুরআন ও হাদীস উভয়টা মিলেই আমাদের জন্য উত্তম আদর্শ।
: এতসব কথার পরেও আপনার এই কথা মানতে হবে, আমরা আহলুল কুরআনরাই কুরআনে কারীমকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি।
: আপনারা আপনাদের বুঝ অনুযায়ী কুরআনকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। আর আমরা -সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলিমরা- নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বুঝ অনুযায়ী কুরআনকে গুরুত্ব দিচ্ছি। আর নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বুঝ যেহেতু প্রকারান্তে আল্লাহ তাআলার পক্ষ থেকেই দেওয়া, তাই বলা যায়- আমরা কুরআনকে ঐভাবে গুরুত্ব দিচ্ছি যেভাবে আল্লাহ চান।
: আচ্ছা এই যে হাদীস অনুসরণের কথা বলছেন। তা অনুসরণ তো হবে তখন যখন তা সংরক্ষিত থাকবে। যেই বুখারীকে আপনারা সর্বোচ্চ মর্যাদা দিয়ে থাকেন, তা লেখা হয়েছে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের মৃত্যুর দুইশত বছর পর। আপনিই বলুন একটা কথা যদি দুইশত বছর পর লেখা হয় তাহলে কি যথাযথভাবে লেখা হতে পারে? অবশ্যই তাতে অনেক গড়বড় হবে!
: আপনি অন্য প্রসঙ্গে চলে গেলেন। কথা চলছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস মানা আবশ্যক কি না? যদি আবশ্যক মেনে নেওয়া হয় তখন প্রশ্ন আসবে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস যথাযথ সংরক্ষণ হয়েছে কি না। আপনি কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস মানা আবশ্যক তা মেনে নিয়েছেন?
: ধরুন মেনে নিয়েছি।
: খুব সহজেই মেনে নিলেন। আসলে পিছনে যে দলিল উল্লেখ করা হয়েছে তা থেকে প্রতিটা বিবেকবান মানুষই মেনে নেবে যে, হাদীস অনুসরণ করা আবশ্যক। কিন্তু হাদীস অনুসরণের আবশ্যকিয়তার আরও অনেক দলিল আছে।
: আচ্ছা আরেকটা বলুন।
: কোনটা রেখে কোনটা বলব। আচ্ছা একটা শুনুন। আল্লাহ তাআলা বলেছেন,
وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا(سورة الأنعام: 21، 93، 144، سورة الأعراف: 37، سورة يونس: 17، سورة هود: 18، سورة الكهف: 15، العنكبوت: 68، الصف: 7)
অর্থ: তার থেকে বড় জালেম আরকে হতে পারে, যে আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনা করে।
أَمْ يَقُولُونَ افْتَرَى عَلَى اللَّهِ كَذِبًا فَإِنْ يَشَاِ اللَّهُ يَخْتِمْ عَلَى قَلْبِكَ وَيَمْحُ اللَّهُ الْبَاطِلَ وَيُحِقُّ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ إِنَّهُ عَلِيمٌ بِذَاتِ الصُّدُورِ.(سورة الشورى: 24)
অর্থ: তবে কি তারা বলে, সে আল্লাহ সম্পর্কে মিথ্যা রচনা করেছে? অথচ আল্লাহ চাইলে তোমার অন্তরে মোহর করে দিতে পারেন। আল্লাহ তো মিথ্যাকে মিটিয়ে দেন ও সত্যকে নিজ বাণীর দ্বারা প্রতিষ্ঠিত করেন। নিশ্চয়ই তিনি অন্তরে লুকায়িত বিষয়াবলীও জানেন।
وَلَوْ تَقَوَّلَ عَلَيْنَا بَعْضَ الْأَقَاوِيلِ(44) لَأَخَذْنَا مِنْهُ بِالْيَمِينِ(45) ثُمَّ لَقَطَعْنَا مِنْهُ الْوَتِينَ(46) فَمَا مِنْكُمْ مِنْ أَحَدٍ عَنْهُ حَاجِزِينَ.(سورة الحاقة: 44)
অর্থ: আর যদি সে (অর্থাৎ রাসূল কথার কথা) কোন(মিথ্যা) বাণী রচনা করে আমার প্রতি আরোপ করত। তবে আমি তার ডান হাত ধরে ফেলতাম। তারপর তার জীবন-ধমনি কেটে দিতাম। তখন তোমাদের কেউ তাকে রক্ষা করার জন্য বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারত না।
এই আয়াতগুলো থেকে বোঝা যায়, সবচেয়ে বড় জালেম হলো ঐ ব্যক্তি যে আল্লাহর নামে মিথ্যা বলে। সুতরাং নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নামে মিথ্যা বলবেন এটা হতেই পারে না। শেষ আয়াত থেকে তো একেবারে সুস্পষ্ট যে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো আল্লাহর নামে কখনো মিথ্যা বলেননি। তাহলে নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আল্লাহর নামে যা বলবেন তা অবশ্যই আল্লাহর কথাই হবে। আর না হয় আল্লাহর নামে মিথ্যা বলা হবে। এখন আপনিই বলুন, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম দ্বীনের নামে শুধু কুরআনের কথাই কি বলেছেন, না কুরআনের বাইরের কথাও (হাদীস) বলেছেন! শুধু কি বলেছেন! বরং তা অনুসরণ করতেও জোরদার তাকিদ দিয়েছেন।
عن أبي هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم، قال: «دعوني ما تركتكم، إنما هلك من كان قبلكم بسؤالهم واختلافهم على أنبيائهم، فإذا نهيتكم عن شيء فاجتنبوه، وإذا أمرتكم بأمر فأتوا منه ما استطعتم». رواه البخاري في صحيحه(7288) ومسلم في صحيحه(1337)
হযরত আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, তোমরা আমাকে প্রশ্ন করা থেকে বিরত থাক, যে পর্যন্ত না আমি তোমাদের কিছু না বলি। কেননা, তোমাদের আগে যারা ছিল, তারা তাদের নবীদেরকে অধিক প্রশ্ন করা ও নবীদের সঙ্গে মতভেদ করার জন্যই ধ্বংস হয়েছে। তাই আমি যখন তোমাদেরকে কোনো ব্যাপারে নিষেধ করি, তখন তা থেকে বেঁচে থাক। আর যদি কোনো বিষয়ে আদেশ করি, তাহলে সাধ্য অনুসারে তা মেনে চল।
عن أبي هريرة، عن النبي صلى الله عليه وسلم قال: «من أطاعني فقد أطاع الله، ومن عصاني فقد عصى الله». رواه البخاري(7137) ومسلم(1835)
হযরত আবূ হুরাইরাহ রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, যে আমার অনুসরণ করল সে যেন আল্লাহ তাআলারই অনুসরণ করল। আর যে আমার অবাধ্য হলো সে যেন আল্লাহ তাআলার অবাধ্য হলো।
أخرج الإمام ابن ماجه في سننه(12) وأبو داود في سننه(4604) والترمذي في سننه(2664) وابن حبان في صحيحه(12) والحاكم في المستدرك(371) وغيرهم من طريقين عن المقدام بن معدي كرب عن رسول الله صلى الله عليه وسلم أنه قال: «ألا إني أوتيت الكتاب، ومثله معه ألا يوشك رجل شبعان على أريكته يقول عليكم بهذا القرآن فما وجدتم فيه من حلال فأحلوه، وما وجدتم فيه من حرام فحرموه
(قال الترمذي: هذا حديث حسن غريب من هذا الوجه)
হযরত মিকদাম বিন মা’দী কারিব রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, জেনে রাখো! আমাকে কিতাব এবং তার সঙ্গে অনুরূপ কিছু দেয়া হয়েছে। জেনে রাখো! এমন এক সময় আসবে যখন কোনো পরিতৃপ্ত আয়েশী লোক তার আসনে বসে বলবে, তোমরা শুধু এ কুরআনকেই গ্রহণ করো, তাতে যা হালাল পাবে তা হালাল এবং যা হারাম পাবে তা হারাম মেনে নেবে।
أخرج الإمام أحمد في مسنده(17142، 17144، 17145) والدارمي في سننه(96) وابن ماجه في سننه(42، 43) وأبو داود في سننه(4607) والترمذي في سننه(2676) والحاكم في المستدرك(329-333) وغيرهم من طرق عن العرباض: صلى بنا رسول الله صلى الله عليه وسلم ذات يوم، ثم أقبل علينا فوعظنا موعظة بليغة ذرفت منها العيون ووجلت منها القلوب، فقال قائل: يا رسول الله كأن هذه موعظة مودع، فماذا تعهد إلينا؟ فقال «أوصيكم بتقوى الله والسمع والطاعة، وإن عبدا حبشيا، فإنه من يعش منكم بعدي فسيرى اختلافا كثيرا، فعليكم بسنتي وسنة الخلفاء المهديين الراشدين، تمسكوا بها وعضوا عليها بالنواجذ، وإياكم ومحدثات الأمور، فإن كل محدثة بدعة، وكل بدعة ضلالة
(قال الترمذي: حديث حسن صحيح. وقال الحاكم: حديث صحيح ليس له علة. ولم يتعقبه الذهبي بشيء)
হযরত ইরবায বিন সারিয়া রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেছেন, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে সঙ্গে নিয়ে সালাত আদায় করলেন, অতঃপর আমাদের দিকে ফিরে আমাদের উদ্দেশ্যে জ্বালাময়ী ভাষণ দিলেন, তাতে চোখগুলো অশ্রুসিক্ত হলো এবং অন্তরগুলো বিগলিত হলো। তখন এক ব্যক্তি বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! এ যেন কারো বিদায়ী ভাষণ! অতএব আপনি আমাদেরকে কি নির্দেশ দেন? তিনি বলেন, আমি তোমাদেরকে আল্লাহভীতির, শ্রবণ ও আনুগত্যের উপদেশ দিচ্ছি, যদিও সে(আমীর) একজন হাবশী গোলাম হয়। কারণ তোমাদের মধ্যে যারা আমার পরে জীবিত থাকবে তারা অচিরেই প্রচুর মতবিরোধ দেখবে। তখন তোমরা অবশ্যই আমার সুন্নাত এবং আমার হিদায়াতপ্রাপ্ত খলীফাহগণের সুন্নাত অনুসরণ করবে, তা দাঁত দিয়ে আঁকড়ে ধরবে। সাবধান!(ধর্মে) প্রতিটি নব আবিষ্কার সম্পর্কে! কারণ প্রতিটি নব আবিষ্কার হলো বিদ‘আত এবং প্রতিটি বিদ‘আত হলো ভ্রষ্টতা।
عن أبي هريرة أن رسول الله صلى الله عليه وسلم، قال: «كل أمتي يدخلون الجنة إلا من أبى»، قالوا: يا رسول الله، ومن يأبى؟ قال: «من أطاعني دخل الجنة، ومن عصاني فقد أبى». رواه البخاري في صحيحه(7280)
হযরত আবূ হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আমার সকল উম্মাতই জান্নাতে প্রবেশ করবে, কিন্তু যে অস্বীকার করবে। তারা বললেন, কে অস্বীকার করবে? তিনি বললেন, যারা আমার অনুসরণ করবে তারা জান্নাতে প্রবেশ করবে, আর যে আমার অবাধ্য হবে সে-ই অস্বীকার করবে।
এই হাদীসগুলো দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যায়, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তার হাদীস অনুসরণ করাকে আবশ্যক করেছেন। এই সকল হাদীস এবং পিছনের যে আয়াতে আল্লাহর নামে মিথ্যা রচনাকারীকে সবচেয়ে বড় জালেম বলা হয়েছে, সেগুলো একত্র করলে খুব সহজেই আপনার বুঝে আসার কথা, কুরআনের মতো হাদীসও আল্লাহর পক্ষ থেকে আগত এবং তার অনুসরণও আবশ্যক।
: আচ্ছা, আর লাগবে না। এখন আমাকে এটা বলুন, দুইশত বছর পর হাদীস সংরক্ষণ হলে হাদীস কীভাবে আপন অবস্থায় সংরক্ষিত থাকে?
: আপনি যখন মেনে নিলেন আল্লাহ তাআলা আপনার ওপর হাদীস অনুসরণ করাকে আবশ্যক করেছেন তখন আল্লাহ হাদীস সংরক্ষিত করেছেন এটাও মানতে আপনি বাধ্য। অন্যথায় বলতে হবে, আল্লাহ আপনাকে এমন জিনিস মানতে বাধ্য করছেন, যা তিনি সংরক্ষণ করেননি। মানে সামর্থ্যের উর্ধ্বের কোনো বিষয়কে মানতে বলেছেন। অথচ আল্লাহ বলেছেন لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا । আল্লাহ তাআলা কাউকে তার সাধ্যাতীত বিষয়কে চাপিয়ে দেন না।
: হ্যাঁ, ঠিক। কিন্তু তার পরও বুঝে আসে না, দুইশত বছর পর যা লেখা হয় তা কীভাবে সংরক্ষিত থাকে!
: আপনি আরবী ভাষা জানেন?
: না।
: যদি আপনি আরবী ভাষা জানতেন, ইসলামী ইতিহাস ও উলূম ফুনূনের ইতিহাস পড়তেন তাহলে হাদীস দুইশত বছর পর লেখা হয়েছে তা কখনোই বলতেন না। আমার হাতে যে কিতাবটি দেখছেন এই কিতাবে নির্ভরযোগ্য ইতিহাসের মাধ্যমে প্রমাণ করা হয়েছে, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবদ্দশায় ও সাহাবাদের যুগেই অধিকাংশ হাদীস লেখা হয়ে গিয়েছিল। তারপর তাবেয়ীনের যুগে বিভিন্ন আকারে হাদীস সংকলন তৈরি হয়েছে। তাবে তাবেয়ীনের যুগে হাদীস সংকলন প্রায় শেষ হয়ে গিয়েছে। এই দুই যুগের কিছু সংকলন এখনও আছে। যেমন
نسخة همام عن أبي هريرة، نسخة سهيل بن أبي سهيل عن أبي صالح، كتاب الآثار لأبي حنيفة، مغازي موسى بن عقبة، جامع معمر بن راشد، الموطأ للإمام مالك، الزهد لابن المبارك، الجهاد له، المسند له، السير لأبي إسحاق الفزاري، الحجة على أهل المدينة
আর বুখারী মুসলিমের যুগ হলো হাদীস সংকলন শেষ হয়ে যাওয়ার পরের যুগ। তাদের পূর্বেই হাদীসের বড় বড় সংকলনগুলো তৈরি হয়ে গিয়েছিল। তারা এসে মূলত সংক্ষেপিত সংকলনে মনোযোগী হয়েছেন।
তাছাড়া লেখা হলো সংরক্ষণের একটা পদ্ধতি মাত্র। একমাত্র পদ্ধতি না। হাদীস নিজ জীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমেও সাহাবা, তাবেয়ীন ও তাবে তাবেয়ীন অনেক হাদীস সংরক্ষণ করেছেন। ওয়কি’ রহ. বলতেন, হাদীস মুখস্থ রাখতে চাইলে সে অনুযায়ী আমল কর। তাহলে মনে রাখতে পারবে।
আরেকটা মাধ্যম হলো, মুখস্থ রাখা। তারা মুখস্থ রাখার মাধ্যমেও হাদীস সংরক্ষণ করেছেন।
: এত এত হাদীস কীভাবে মুখস্থ রাখল? এটা কি সম্ভব?
: দেখুন তারা মনে প্রাণে বিশ্বাস করতেন, এই কুরআন আর হাদীস হলো তাদের নাজাতের একমাত্র উপায়। তাই তারা হাদীস মুখস্থ রাখার প্রতি সবিশেষ গুরুত্ব দিয়েছেন। আর যে বিষয়টিকে অনেক গুরুত্ব দেওয়া হয় তা মুখস্থও রাখা অনেক সহজ হয়। এটা হলো প্রথম কথা। দ্বিতীয় কথা হলো, আপনি তাদের জীবনী খতিয়ে দেখলে বুঝবেন, তৎকালীন আরবদের মুখস্থ শক্তি ছিল অনেক প্রখর। তারা শত লাইনের একটি কবিতা একবার শুনেই মুখস্থ করে ফেলত। তৃতীয় বিষয় হলো, হাদীস কিছু ছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য। আর কিছু ছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কর্ম। বক্তব্য মুখস্থ রাখা কঠিন হলেও কর্ম মুখস্থ রাখা কিন্তু কঠিন নয়। চতুর্থ কথা হলো, হাদীসের যে বিশাল ভাণ্ডার তা তাদের একজনের মুখস্থের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়নি। তা তাদের সম্মিলিত মুখস্থের মাধ্যমে সংরক্ষিত হয়েছে। কোনো সাহাবী দশটা, কোনো সাহাবী একশটা, কোনো সাহাবী আরও বেশি। কোনো সাহাবী আরও কম হাদীস বর্ণনা করেছেন। আপনি চিন্তা করুন, আপনি আপনার অতীতের কত কথা মনে রেখেছেন। তাহলে তারা কি নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কয়েকটি হাদীসও মুখস্থ রাখতে পারবেন না!
: আচ্ছা! এইভাবে বিষয়টা আমার জানা ছিল না। কিন্তু হাদীসের নামে কত জালিয়াতি হয়েছে তা তো আপনার জানার কথা! আপনি কীভাবে বুঝবেন কোনটা জাল হাদীস আর কোনটা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের হাদীস?
: ইতিহাস অনেক বিকৃত হয়েছে। তাই বলে কি ইতিহাসকে ফেলে দেওয়া হয়েছে? নাকি সঠিক ইতিহাসকে জাল ইতিহাস থেকে পৃথক করার চেষ্টা করা হয়েছে? দেখুন হাদীস জাল হয়েছে ঠিক। কিন্তু কোনটা প্রমাণিত হাদীস আর কোনটা জাল হাদীস তা আমাদের পূর্বসুরী মুহাদ্দিসগণ নির্ণয় করে দিয়েছেন। নির্ণয় করার যৌক্তিক ও শক্তিশালী অনেক নীতি নির্ধারণ করে দিয়েছেন। হাজার হাজার কিতাব লিখেছেন। আপনিই একটা হাদীস জাল করে দেখুন। এত সুন্দর ও সূক্ষ্ম নীতি তারা রেখে গেছেন যে, আগামীকালই আপনি ধরা খেয়ে যাবেন। তো এই যুগেই কেউ হাদীস জাল করে লুকিয়ে রাখতে পারছে না ঐ সময় তাহলে কীভাবে পারবে! সুতরাং এমন কোনো সম্ভাবনা নেই যে, জাল কোনো হাদীস নবীজীর হাদীস হিসেবে প্রসিদ্ধি পেয়েছে আর কোনো মুহাদ্দিস তা নির্ণয় করে যাননি এবং এ যুগওে তা নির্ণয় করা সম্ভব না।
: তারাও তো মানুষ ছিলেন। তাদেরও তো ভুল হতে পারে?
: ডাক্তারদের ভুল হতে পারে না? তারপরও তো আপনি আমি ডাক্তার দেখাই। কারণ তাদের ভুল হওয়ার সম্ভাবনা অনেক কম। আর বাস্তব কথা হলো, তাদের মধ্যে যাদের কিছু ভুলত্রুটি হয়ে গেছে তা তাদের পরবর্তীরা চিহ্নিত করে দিয়েছেন।
: আচ্ছা আপনি আমাকে সংক্ষেপে একটু বলুন তো, কীভাবে তারা নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে প্রমাণিত হাদীসকে জাল হাদীস থেকে আলাদা করেছেন? আমার বোঝা দরকার, তাদের যাচাই নীতি আসলেই বিজ্ঞানসম্মত ছিল কি না?
রশীদ সংক্ষেপে গুছিয়ে হাদীস প্রমাণিত হওয়ার মৌলিক নীতিগুলো একে একে বলল। সনদ মুত্তাসিল হওয়া, রাবী সত্যবাদী ও ভালো স্মৃতিশক্তির অধিকারী হওয়া, নির্দিষ্ট রেওয়ায়াতটিতে তাদের কোনো ভুল নেই তা প্রমাণিত হওয়া। তারপর খুলে খুলে বলল, কীভাবে একজন রাবী সত্যবাদী ও ভালো স্মৃতিশক্তির অধিকারী হিসেবে বিবেচিত হয়, সনদ কীভাবে মুত্তাসিল হয় এবং সত্যবাদী ও ভালো স্মৃতিশক্তির অধিকারী রাবীর নির্দিষ্ট কোনো রেওয়াতে ভুল হলে তা কীভাবে নির্ধারণ হয়।
লোকটি এগুলো শুনে বলল, আপনি ঠিক বলেছেন, বাস্তবেই তাদের যাচাই নীতি অনেক যৌক্তিক ও বিজ্ঞানসম্মত ছিল।
রশীদ বলল, আমি তো আপনাকে একেবারে সংক্ষেপে বললাম। আপনি উনাদের যাচাই নীতি সম্পর্কে যত বিস্তারিত জানতে থাকবেন ততই আপনার কাছে মনে হতে থাকবে, অতীতের কোনো বিষয় যাচাইয়ের জন্য এর থেকে উত্তম আর কোনো নীতি হতে পারে না। এবং এই নীতি অনুসারে যে হাদীসটিকে তারা প্রমাণিত বলেছেন তা যদি প্রমাণিত হিসেবে মেনে না নেই, তাহলে অতীতের কোন বিষয় মেনে নেওয়ার অধিকার আমাদের নেই। যারা মুহাদ্দিসীনে কেরামের যাচাই নীতি নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করে তারা হয়ত, মুহাদ্দিসীনে কেরামের যাচাই নীতি সম্পর্কে পরিপূর্ণ অবগত না, অথবা তারা গোড়ামির শিকার।
: আলহামদুলিল্লাহ, আমার অনেক বিষয় স্পষ্ট হয়েছে। কিন্তু দুটি বিষয় আমি এখনও নির্দ্বিধায় বলব!
: কী?
: এক. কিছু হাদীস ছিল নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার নিজ যুগের জন্য বলেছেন। সেগুলো এই যুগে মানা জরুরী না।
: আপনার দ্বিতীয় কথাটি একটু পরে শুনি। আমি প্রথম কথার ব্যাপারে কিছু বলি।
: বলুন।
: নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হলেন আখেরী নবী। তার পরে আর কোনো নবী আসবেন না। তাই নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সকল হাদীস কেয়ামত পর্যন্ত আমাদের জন্য আবশ্যক। হ্যাঁ, কিছু হাদীস আছে যা নবী যুগেই রহিত হয়ে গেছে। কিছু হাদীস আছে যা ঐ যুগের লোকদের জন্য বা ব্যক্তি বিশেষের জন্য নির্দিষ্ট। কিছু আছে যা, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিজের সাথে একান্তভাবে সম্পৃক্ত। উম্মতের জন্য ব্যাপকভাবে আমলযোগ্য নয়। এই কথাগুলো ঠিক আছে।
কিন্তু এর মানে এই না যে, আমি আপনি যে কোনো হাদীসকে এমনটা বলে দেব। যে হাদীসগুলো এই পর্যায়ের তার কিছুতো এমন, স্বয়ং হাদীস থেকেই তা এই পর্যায়ের হওয়া বুঝে আসে। আর যেগুলো স্বয়ং হাদীস থেকে বুঝে আসে না সেগুলো এই পর্যায়ের কি না তা বোঝার একমাত্র অধিকার হলো সাহাবায়ে কেরামের। কারণ তারাই ছিলেন সরাসরি শ্রোতা ও দর্শক। এই ধরনের হাদীসগুলো সাহাবায়ে কেরাম ও তাদের ছাত্র তাবেয়ীনরা নির্ধারণ করে গেছেন। আপনার ও আমার জন্য ছেড়ে যাননি।
: হ্যাঁ, কথা যৌক্তিক।
: এবার আপনার দ্বিতীয় বিষয়টি বলুন।
: শুনেছি, মুহাদ্দিসীনে কেরাম শুধু সনদ যাচাই করেছে। হাদীসের টেক্সট যাচাই করেনি। তাই তারা যদি এমন কোনো হাদীসকে প্রমাণিত বলে যা বিবেক ও বিজ্ঞান-বিরুদ্ধ তা আমি গ্রহণ করব না।
: প্রথম কথা হলো, মুহাদ্দিসীনে কেরাম শুধু সনদ যাচাই করেছেন, হাদীসের টেক্সট তথা মতন যাচাই করেননি- এই কথাটা তাদের ওপর সম্পূর্ণ অপবাদ। এই জন্যেই বলা হয়, কারো ব্যাপারে মন্তব্য করতে হলে তার ব্যাপারে আগে ভালোভাবে জানা দরকার। আপনারা প্রাচ্যবিদদের কথা ওহির মতো বিশ্বাস করে নেন। তারা এই কথাটি বলেছে। আর আপনারাও বিশ্বাস করে নিয়েছেন।
মুহাদ্দিসীনে কেরাম সনদ সহীহ হওয়ার পরও অনেক হাদীস বা হাদীসের অংশকে অপ্রমাণিত বলেছেন শুধু মতনের সমস্যার কারণে। কোনো হাদীস বা হাদীসের অংশ যদি কুরআন, প্রমাণিত একাধিক হাদীস, নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের জীবনের প্রমাণিত ঘটনা-প্রবাহ, ঐতিহাসিক কোনো ঘটনা, বা সুস্থ বিবেকের বিরোধী হয় আর তার মাঝে সামঞ্জস্য না করা যায়, তখন তারা ঐ হাদীস বা হাদীসের কোন অংশকে অপ্রমাণিত বলেছেন। চৌদ্দশ বছরের লাখ লাখ হাদীস বিশারদ এই কাজগুলো করে দিয়েছেন। এর জন্য অনেক কিতাব লিখেছেন। আমার আপনার ওপর ছেড়ে দেননি। তাই আমার আপনার কাছে বিবেক বিরোধী মনে হলেই একটা হাদীস অপ্রমাণিত হয়ে যাবে না। দেখতে হবে, বাস্তবেই তা বিবেক বিরোধী কি না? আমার আপনার থেকে যারা বেশি বিবেকবান তাদের বিবেকের বিরোধী কি না?
আপনি বললেন, বিজ্ঞান বিরোধী হলে আপনি হাদীস মানবেন না। কথা ঠিক নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো বিজ্ঞান বিরোধী কথা বলবেন না। কিন্তু প্রশ্ন হলো কোন বিজ্ঞান? যে বিজ্ঞান আজকে এক কথা বলে আগামীকাল আরেক কথা বলছে? যে বিজ্ঞান এক সময় ইসলামের অনেক বিষয়কে বিজ্ঞান বিরোধী বলেছিল, পরে প্রমাণ পেয়ে নিজেই স্বীকার করেছে, বিজ্ঞান বিরোধী বলাটা ভুল ছিল? যে বিজ্ঞান পুঁজিবাদ আর বস্তুবাদের সহায়তায় ব্যয় হচ্ছে? যে বিজ্ঞান পুঁজিবাদ আর বস্তুবাদ বিরোধী বিজ্ঞান গবেষণাগুলোর টুটি চেপে ধরছে? এজন্য সাবধান! বিজ্ঞানকে গুরুত্ব দিতে গিয়ে যেন বিজ্ঞানের পূজা না করে বসি। মনে রাখতে হবে, আমার ধর্ম ইসলাম। বিজ্ঞান নয়।
উভয়ে অনেকক্ষণ চুপ থাকল। ভদ্রলোক বলল, হুযুর আপনার সাথে কথা বলে আমার অনেক উপকার হয়েছে। আমি আপনার কথাগুলো আরও ভেবে দেখব।
কথা বলতে বলতে কীভাবে যে চার ঘণ্টার পথ ফুরিয়ে গেল টেরই পাওয়া গেল না।