কথিত আছে যে, এক ইরাকী লোক প্রায় প্রতি বছরই হজ্জ্বের মৌসুমে ব্যবসা-বাণিজ্য ও হজ্জ্ব করার জন্য মক্কা যেত। পথিমধ্যে প্রতিবারই মালপত্রসহ এক হিজাযী লোকের বাড়িতে যাত্রা বিরতি করতো। হিজাযী লোকটি ছিল মেহমানদারিতে খুবই আন্তরিক। সে ইরাকী লোকটির খুব মেহমানদারি করতো। ইরাকী লোকটি হিজাযী বন্ধুর মেহমানদারিতে খুবই সন্তুষ্ট ছিল। সে প্রতিবারই হিজাযীকে বলতো, আপনার মেহমানদারিতে আমি খুবই সন্তুষ্ট।
এই অনুগ্রহের বিনিময় কখনো দিতে পারবো না। আপনি আমার বাড়িতে না গেলে এই অনুগ্রহের প্রতিদান দেয়া আমার পক্ষে কখনো সম্ভব নয়। যদি কোন দিন ইরাকে যান এবং আমার বাড়িতে উঠেন তাহলে অবশ্যই আমি খুশী হবো এবং আপনাকে যথাসাধ্য প্রতিদান দেয়ার চেষ্টা করবো। ইরাকী লোকটি যতবারই হিজাযী বন্ধুর কাছে যেত, ততবারই এই ধরণের কথা বলতো এবং অত্যন্ত পরিস্কার ভাষায় তার বাড়ির ঠিকানা বলে দিতো।
একদা কোনো প্রয়োজনে হিজাযী বন্ধু ইরাকে যাওয়ার ইচ্ছা করলো। তখন সে ইরাকী বন্ধুর কথা মনে করলে, যে তাকে বহুবার তার ইরাকের বাড়িতে যাওয়ার অনুরোধ করেছে এবং মেহমানদারি করার আশ্বাস দিয়েছে। অতঃপর সে একদা সফরের পোষাক টুপি, জুব্বা, মুখোশ ও পাগড়ি পরিধান করে ইরাকের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলো। পথিমধ্যে পরিচিত ঘনিষ্ট বন্ধুর বাড়িতে যাত্রা বিরতি করলো এবং বাহন থেকে মালপত্র নামিয়ে বন্ধুর দিকে দ্রুত এগিয়ে গেলো। সে ভাবলো, ইরাকী বন্ধু তাকে স্বাগত জানানোর জন্য অপেক্ষা করছে। ইরাকী বন্ধু তখন সঙ্গী-সাথীর সাথে বসে কথা বলছিল। হিজাযী লোকটি এগিয়ে গিয়ে বন্ধুকে সালাম দিলো, মুসাফাহা করলো এবং অত্যন্ত আন্তরিকতার সাথে মুআনাকাও করল।
কিন্তু ইরাকী লোকটি তাকে না চেনার ভান করলো। তার সাথে একটি কথাও বলল না। এতে হিজাযী লোকটি মনে করলো, সম্ভবত সফরের পোষাকের কারণে চিনতে পারছে না। তাই সে প্রথমে মুখোশ উন্মুক্ত করলো। এতেও সে না চেনার ভান করলো। হিজায়ী অবাক হয়ে ইরাকীকে জিজ্ঞাসা করলো, বন্ধু! তুমি কি আমাকে চিনতে পারোনি? আমি তোমার সেই হিজাযী বন্ধু, যার বাড়িতে তুমি বহুবার গিয়েছো, রাত কাটিয়েছো এবং খাওয়া-দাওয়া করেছো। তুমি তো বহুবার আমাকে তোমার বাড়িতে আসার দাওয়াত দিয়েছো এবং বলেছো, ইরাকে আসলে মেহমানদারির বদলা দিয়ে আমাকে খুশী করবে। এই তো আজ আমি তোমার বাড়িতে এসেছি। তুমি কি এখনো আমাকে চিনতে পারো নি? ইরাকী এবারও না সূচক জবাব দিলো।
এবার হিজাযী ভাবলো সম্ভবত মাথায় পাগড়ি থাকার কারণে চিনতে পারছে না। তাই সে পাগড়ি খুলে রেখে দিল এবং নিজেকে পরিচিত করে তুলার চেষ্টা করলো। কিন্তু ইরাকী এবার আরো বেশি না চেনার ভারন করলো। হিজাযী বন্ধু মনে করলো, মাথায় টুপি থাকায় সম্ভবত আমাকে চিনতে পারছে না। তাই সে মাথার টুপি খুলে মাথা ও চেহারা পরিস্কার করলো এবং সেই লেবাস ধারণ করলো, যা পরিধান করে বন্ধুর সাথে বহুবার উঠা-বসা ও খাওয়া-দাওয়া করেছে। এক কথায় নিজেকে পরিচিত বন্ধু হিসেবে প্রমাণ করতে সব চেষ্টাই করলো। কিন্তু কোনো চেষ্টাতেই কাজ হলো না। পরিশেষে ইরাকী লোকটি পরিস্কার ভাষায় বলে দিলো, শরীরের চামড়া পাল্টালেও আমি তোমাকে চিনতে পারবো না।