প্রশ্ন:- এযীদ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়া জামা’আত -এর মতামত কী?

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

প্রশ্ন:- এযীদ সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়া জামা’আত -এর মতামত কী?*

الجواب بعون الملک الوھاب الھم ھدایة الحق والصواب

*উত্তর:-* আহলে সুন্নাত ওয়া জামা’আত -এর ঐক্যমত অনুযায়ী এযীদ হল একজন পাপী, দুশ্চরিত্র এবং অসংখ্য বড় বড় গুনাহের সাথে জড়িত থাকা এক নিষ্ঠুর ব্যক্তি। এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, সে পৃথিবীতে বিবাদ সৃষ্টি করেছে। মক্কা ও মদীনার সম্মানহানি করেছে। মসজিদে নববীতে ঘোড়া বেঁধে রাখে, যার পেচ্ছাপ ও পায়খানা পবিত্র মেম্বার শরীফে পড়ে। তিন দিন পর্যন্ত মসজিদে নববীতে আযান ও জামায়াত হয়নি। তার বাহিনী হাজার হাজার সাহাবী ও তাবেয়ীগণকে শহীদ করে এবং বহু নারীকে অবৈধ ভাবে গর্ভবতী করে। এযীদের একটি মস্ত বড় ভুল এই যে, তার বাহিনী নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বংশধর কে তিন দিন ধরে পিপাসায় রেখে শহীদ করে। এ জন্য আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের দৃষ্টিতে এযীদ একজন মহা পাপী।

কিন্তু তাকে কাফির বলা যাবে কি না? এবং তার উপরে অভিশাপ দেয়া যাবে কি না? এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের মধ্যে মতভেদ রয়েছে।‌ এযীদের মুসলমান এবং কাফির হওয়া নিয়ে আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের মধ্যে তিনটি মত রয়েছে।

(১) এযীদ বড় পাপী হলেও সে একজন মুসলমান। এটা ইমাম গাজালী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহির মত ।

(২) এযীদ কাফীর।‌ এটা ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাদিআল্লাহু আনহু এবং তাঁর অনুসারীদের মত।

৩) তার ঈমান ও কুফরী নিয়ে নীরব থাকা। এটা হল ইমাম আযম আবু হানীফা রাদিআল্লাহু আনহুর মত। এমনটাই ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, খন্ড: 14, পৃষ্ঠা: 683 (প্রকাশিত: রেযা একাডেমী, মুম্বাই), -এর মধ্যে রয়েছে।

*আল্লামা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি ইমাম ইবনে হুমাম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর এ কথা নকল করেন যে,*

قال ابن ھمام واختلف فی اکفار یزید قیل نعم یعنی لھا روی عنه ما یدل علی کفرہ

অর্থাৎ:- হযরত ইবনে হুমাম রাদিআল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন যে, এযীদের কুফরী নিয়ে মতভেদ রয়েছে। একটি মত হল যে, সে কাফির। কারণ, তার থেকে এমন কিছু কথা বর্ণিত রয়েছে, যা তার কুফরী সাব্যস্ত করে। (শারহে ফিক্বহে আকবর, পৃষ্ঠা: 88)

*আল্লামা ইবনে হাজার মাক্বী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন:*

قالت طائفة لیس بکافر لان الاسباب المںجبة للکفر لم یثبت عندنا منھا شیئ اصلا بقاءہ علی اسلامه حتی یعلم ما یخرجه عنه

অর্থাৎ:- ওলামায়ে কেরামের এক দল বলেন যে, এযীদ কাফির নয়। কারণ, আমাদের দৃষ্টিতে কুফরী প্রমাণ কারী কারণ সমূহের মধ্যে কিছুই প্রমাণিত নেই। তাই আসলে সে নিজের ইসলামের উপরে প্রতিষ্ঠিত থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত এমন কোন বিষয় জানা না যায়, যা তাকে ইসলাম থেকে বের করে দেয়। (আস সাওয়ায়েক্বুল মহরিক্বাহ, পৃষ্ঠা: 131)

*ফাক্বীহে আযম হিন্দ, শারেহে বুখারী হযরত আল্লামা মুফতী শারীফুল হক আমজাদী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন:*

“এযীদকে ইমাম আহমদ প্রভৃতিরা কাফির বলেন।‌ আল্লামা সা’দুদ্দীন তাফতাযানী’র এটাই ফাতওয়া। কিন্তু আমাদের ইমাম আযম কুদ্দিসা সিররুহু এযীদের সম্পর্কে নীরবতা অবলম্বন করেছেন। কারণ, কাফির বলার জন্য যথেষ্ট মজবুত দলীলের প্রয়োজন, (আর) সেটা বিদ্যমান নেই। কারবালার ঘটনা সম্পর্কে বর্ণনা গুলোর মধ্যে এক অপরের সাথে সংঘর্ষশীল রয়েছে। এটা তো স্পষ্ট যে, সে (এযীদ) এ হুকুম দেয়নি যে, হযরত ইমাম হুসাইন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুকে শহীদ করবে। সে শুধু বাইয়াত নেয়ার হুকুম দিয়েছিল। সমস্ত দুষ্টমী হল ইবনে যিয়াদের। (ইমাম হুসাইন রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর) শহীদ হওয়ার খবর পাওয়ার সময় এ বর্ণনাও এসেছে যে, সে (অর্থাৎ এযীদ) ইবনে যিয়াদ প্রভৃতিদের উপরে খূবই অসন্তুষ্ট হয়। আর এ বর্ণনাও এসেছে যে, খুশি হয়। এর মধ্যে কোন একটি অপরের প্রতি প্রাধান্য রাখে না। এ জন্য নীরব থাকাই জরুরী।” (ফাতাওয়া শারেহে বুখারী, খন্ড: 2, পৃষ্ঠা:105)

ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের মধ্যে যেহেতু এযীদের মুসলমান এবং কাফির হওয়া নিয়ে মতভেদ রয়েছে , এ কারণে তার নাম নিয়ে তাকে অভিশাপ দেয়াতেও মতভেদ রয়েছে। কতিপয় ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতেই তার নাম নিয়ে অভিশাপ দেয়া জায়েয কিন্তু অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতে জায়েয নেই।

*শাইখুল ইসলাম আল্লামা ইবনে হাজার হায়তামী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন:*

و بعد اتفاقھم علی فسفه اختلفوا فی جواز لعنه بخصوص اسمه فاجزاہ قوم منھم ابن الجوزی

অর্থাৎ:- এযীদের পাপী এবং দুশ্চরিত্র হওয়া নিয়ে ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের ঐক্যমত রয়েছে। মতভেদ এতে রয়েছে যে, নির্দিষ্ট তার নাম নিয়ে তাকে অভিশাপ দেয়া জায়েয আছে কি না? এক সম্প্রদায় তার উপরে অভিশাপ দেয়াকে জায়েয বলেছেন। তাদের মধ্য‌ হলেন ইবনে জাওযী। (আস সাওয়ায়েক্বুল মহরিক্বাহ ফি বায়ানে ইতিক্বাদে আহলিস সুন্নাহ, খন্ড: 2, পৃষ্ঠা: 634)

*মুহাদ্দিস ও ফক্বীহ আল্লমা মুল্লা আলী ক্বারী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন:*

و اما لعنھم فلا یجوز اصلا بخلاف یزید و ابن زیاد و امثالھما فان بعض العلماء جوزوا لعنھما بل الامام احمد بن حنبل قال یکفر یزید لکن جمھور اھل السنة لا یجوزون لعنه حیث لم یثبت کفرہ عندھم

অর্থাৎ:- হযরত মুয়াবীয়া রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর প্রতি অভিশাপ দেয়া মোটেই জায়েয নেই। কিন্তু ইযীদ, ইবনে যিয়াদ ও এদের মত অন্যদের (প্রতি অভিশাপ দেয়া জায়েয)।‌ কারণ, কিছু ওলামায়ে কেরাম তাদের প্রতি অভিশাপ দেয়াকে জায়েয বলেছেন। বরং ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাদিআল্লাহু আনহুর দৃষ্টিতে এযীদ হল কাফির। কিন্তু অধিকাংশ ওলামায়ে আহলে সুন্নাত অভিশাপ দেয়াকে জায়েয বলেন নি। কারণ, তাদের নিকটে এযীদের কুফরী প্রমাণিত নেই। (শারহে শিফা, খন্ড: 2, পৃষ্ঠা: 552)

প্রকাশ থাকে যে, অধিকাংশ ওলামায়ে আহলে সুন্নাত যে এযীদেকে কাফির মনে করেন না, এবং নির্দিষ্ট ভাবে তার নাম নিয়ে তাকে অভিশাপ দেয়া জায়েয মনে করেন না‌ । এর মানে এ নয় যে, তাঁরা তার প্রতি রাজি আছেন (আল্লাহ এ থেকে বাঁচান) বরং এ জন্য যে, কিছু বর্ণনা দ্বারা প্রমাণিত হয় যে, সে নিজের কর্মের প্রতি লজ্জিত হয়েছিল এবং তাওবা করে নিয়েছিল। *যেমন- হযরত মুজাদ্দিদ আলফে সানী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন:*

“যে কাজ সেই দুর্ভাগা (এযীদ) করেছে, তা কোন কাফির করবে না। কিছু ওলামায়ে আহলে সুন্নাত যে তার প্রতি অভিশাপ দেয়া থেকে নীরব থাকেন তার মানে এই নয় যে, তাঁরা তার উপরে রাজি আছেন বরং এই জন্য যে, তার তাওবা করে নেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (কারণ, কিছু দলীল দ্বারা বুঝা যায় যে, সে তাওবা করে নিয়েছিল)। (মাকতুবাত শরীফ , খন্ড: 1, পৃষ্ঠা: 251)

*হানাফী হয়েও যদি কেউ এযীদকে কাফির বলে তাহলে তার প্রতি কোন আপত্তি করা যাবে?*

পাপিষ্ঠ এযীদের ঈমান ও কুফরী নিয়ে ইমাম আযম আবু হানীফা রাদিআল্লাহু আনহু নীরবতা অবলম্বন করেছেন। অর্থাৎ তিনি এযীদকে কাফিরও বলেননি না আর মুসলমানও বলেননি। এর পরেও যদি কোন হানাফী ইমাম আযম আবু হানীফা রাদিআল্লাহু তায়ালা আনহুর মত ত্যাগ করে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুর মত অনুযায়ী এযীদকে কাফির বলে, তাহলে তার উপর কোন আপত্তি করা যাবে না। কারণ, এটাও কিছু সংখ্যক ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের মত।‌ তবে এ মাসআলায় নিজের ইমামের অনুসরণ করাই উত্তম।

*আলা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু এযীদের সম্পর্কে বলেন:*

“তাকে কাফির ও মালঊন (অভিশপ্ত) বলাতে মতবিরোধ রয়েছে। আমাদের ইমামের মত হল নীরব থাকা। আর যে বলবে তার উপরেও অভিযোগ বা দোষারোপ বর্তাবে না। কারণ, এটাও হল ইমাম আহমদ প্রভৃতি কিছু ওলামায়ে আহলে সুন্নাতের মাযহাব।” (ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, খন্ড: 24, পৃষ্ঠা: 509, প্রকাশিত: রেযা একাডেমী, মুম্বাই)

*এযীদ সম্পর্কে আর এক জায়গায় বলেন:*

“যদি কেউ কাফির বলে, তাহলে নিষেধ করব না। আর নিজে বলব না।” (মালফুযাতে আলা হযরত, পৃষ্ঠা: 172, প্রকাশিত: দা’ওয়াতে ইসলামী)

*ফাক্বীহে আযম হিন্দ, শারেহে বুখারী হযরত আল্লামা মুফতী শারীফুল হক আমজাদী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন:*

“কিন্তু যদি কেউ এযীদকে কাফির বলে, তাহলে না সে কাফির, না পথভ্রষ্ট। কারণ, বহু ওলামায়ে কেরাম তাকে কাফির বলেছেন।” (ফাতাওয়া শারেহে বুখারী, খন্ড: 2, পৃষ্ঠা:105)

যে ব্যক্তি এযীদকে পাপিষ্ঠ মনে করে কিন্তু কাফির মনে করে না। সেই ব্যক্তিকে মুনাফিক, এযীদী ও আহলে বায়তের দুশমন বলা হল চরম মূর্খতা:

সোশ্যাল মিডিয়ায় কিছু লোককে বলতে দেখছি যে, “যে ব্যক্তি এযীযকে কাফির মনে করে না, সে মুনাফিক, এযীদী ও আহলে বায়তের দুশমন।”

যারা এসব কথা বলছে তাদের মূর্খ ছাড়া আর কিছুই বলা যেতে পারে না। কারণ, আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের অধিকাংশ ওলামায়ে কেরামের দৃষ্টিতেই এযীদ কাফির নয়। তাহলে কি লক্ষ লক্ষ ওলামায়ে কেরাম আহলে বায়তের দুশমন ছিলেন? ইমাম গাজালী রহমতুল্লাহি আলাইহি এযীদকে পাপিষ্ট মনে করেন, কঠিন গুনাহগার মনে করেন; কিন্তু পক্ষান্তরে তিনি মুসলমানও মনে করেন। তাহলে তিনিও কি আহলে বায়তের দুশমন ছিলেন? মাসআলা মাসায়েল নিয়ে কথা বলার পূর্বে আগে হাজার বার ভাবো তার পর কথা বলো। কোন ফক্বীহ, কোন মুহাদ্দিস, কোন মুফতী বলেছেন যে, যে ব্যক্তি এযীদকে কাফির বলবে না সে মুনাফিক, এযীদী ও আহলে বায়তের দুশমন? হযরত ইমাম যায়নুল আবেদীন রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেছেন? হযরত ইমাম জাফর সাদিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বলেছেন? হযরত ইমাম আলী বিন মুসা কাযিম বলেছেন? হুযূর গৌসে পাক বলেছেন? হুযূর খাজা গরীব নাওয়াজ বলেছেন? হুযূর মাখদুমে সিমনানী বলেছেন? আহলে বাইতের কোন সদস্য বলেছেন? কিংবা অন্য কোন আহলে সুন্নাত ওয়া জামাতের নির্ভরযোগ্য আলিম বলেছেন? যদি না বলে থাকেন, আর নিশ্চিত রূপে কেউ একথা বলেননি, তাহলে তুমি কে বলার? কি দলীল আছে তোমার কাছে?

‌‌ শোন! আন্দাজে, অনুমানে, অন্ধ ভক্ত হয়ে ফাতওয়া প্রদান করা হারাম।

*নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন:*

عن ابی ہریرۃ قال قال رسول الله صلی الله علیہ وسلم من افتی بغیر علم کان اثمه علی من افتاہ

অর্থাৎ:- হযরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি না জানা সত্ত্বেও ফাতওয়া দেয়, (যে সেই ভুল ফাতওয়ার উপর আমল করবে) তার গুনাহ ফাতওয়া প্রদান কারীর উপর বর্তায়। (মিশকাত শরীফ, পৃষ্ঠা: 35, প্রকাশিত: মাজলিসে বারকাত, জামেয়া আশরাফিয়া মুবারকপুর)

*উক্ত হাদিসের ব্যাখ্যায় মুফারসিরে ক্বোরআন, হাকীমুল উম্মত হযরত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন নাঈমী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন: *

“এর দুটি অর্থ হতে পারে।

এক. যে ব্যক্তি আলিমদের বাদ দিয়ে মূর্খদেরকে মাসআলা (সমাধান) জিজ্ঞেস করে এবং সে ভুল মাসআলা বলে, তাহলে জিজ্ঞেস কারী ও গুনাহগার হবে । কারণ, সে আলিমকে বাদ দিয়ে তার কাছে কেন গেল? সে তা জিজ্ঞেস না করলে ওই ব্যক্তিও ভুল বলতো না। তখন افتی অর্থ استفتی হবে। (অর্থাৎ যে ফাতওয়া প্রদান করে।)

দুই. যে ব্যক্তিকে ভুল ফাতওয়া দেওয়া হলো তার গুনাহ ফাতওয়া প্রদানকারীর উপর বর্তাবে। তখন প্রথম افتی শব্দটি مجھول শব্দরূপে হবে। সারকথা হল – ইলমশূন্য ব্যক্তির শরীয়তের মাসআলা বর্ণনা করা জঘন্য গুনাহ। (মিরআতুল মানাজীহ শারহে মিশকাতুল মাসাবীহ (বাংলা), খন্ড: 1, পৃষ্ঠা: 221)

*হুযূর আ’লা হযরত রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন:*

“ভুল মাসআলা বর্ণনা করা কঠিন বড় (গুনাহ)। যদি জেনে শুনে বলে, তাহলে শরীয়তের প্রতি মিথ্যা রচনা করা হবে। আর শরীয়তের প্রতি মিথ্যা রচনা করা আল্লাহ প্রতি মিথ্যা রচনা করা হবে। আল্লাহ তা’আলা বলেন:

اِنَّ الَّذِیْنَ یَفْتَرُوْنَ عَلَى اللّٰهِ الْكَذِبَ لَا یُفْلِحُوْنَؕ

অনুবাদ:- ‘ঐসব লোক, যারা আল্লাহ সম্বন্ধে মিথ্যা রচনা করে তাদের মঙ্গল হবে না। (পারা: 11, সূরা: য়ুনুস, আয়াত: 69)

(ফাতাওয়া রাযাবীয়াহ, খন্ড: 23, পৃষ্ঠা: 712-713, প্রকাশিত: রেযা একাডেমী, মুম্বাই)

*ফাক্বীহে আযম হিন্দ, শারেহে বুখারী হযরত আল্লামা মাওলানা মুফতী শারীফুল হক আমজাদী রহমতুল্লাহি তা’আলা আলাইহি বলেন:*

“যারা এযীদকে কাফির বলে না, তাদের গালাগাল করা হারাম ও গুনাহ।” (ফাতাওয়া শারেহে বুখারী, খন্ড: 2, পৃষ্ঠা: 106)

উপরিউক্ত আলোচনা থেকে দিবালোকের ন্যায় প্রমাণিত হল যে, যে ব্যক্তি ইমাম আযম রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর অনুসরণ করে এযীদের ঈমান ও কুফরী নিয়ে নীরব থাকে অথবা ইমাম গাজালী রাদিয়াল্লাহু তা’আলা আনহুর মত অনুযায়ী তাকে বড় পাপী মনে করার সাথে সাথে মুসলমানও মনে করে, তাকে মুনাফিক, এযীদী, আহলে বায়তের দুশমন বলা অথবা গালাগাল করা সম্পূর্ণরূপে হারাম এবং দোযখে যাওয়ার কাম।

প্রিয় পাঠক: এযীদ প্রসঙ্গে উপরে উল্লেখিত তিনটি মতের মধ্যে আপনি যে কোন একটি মত মানতে পারেন; কিন্তু যে ব্যক্তি আপনার গৃহীত মত বাদ দিয়ে সেই তিনটি মতের মধ্যে কোন একটি মত অনুসরণ করে, আপনি তাকে কোন মতেই কটাক্ষ করতে পারবেন না। নতুবা আপনার বিশাল বড় ভুল হবে। আল্লাহ পাক আমাদের সকলকে সঠিক ভাবে বুঝার এবং তার উপর আমল করার তৌফিক দান করেন, আমীন। والله اعلم بالصواب

ইতি:

*(মুফতী) গুলজার আলী মিসবাহী*

হেমতাবাদ, রায়গঞ্জ, উত্তর দিনাজপুর।

সিনিয়র শিক্ষক: এম. জি. এফ. মাদীনাতুল উলূম (সোসাইটি) খালতিপুর, কালিয়াচক, মালদা, পশ্চিম বঙ্গ, ভারত।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment