আল্লাহ আপন ইলম দ্বারা সর্বত্র বিরাজমান 📖

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

❏ আমাদের আকিদা হল “”আল্লাহ সর্বত্র তাঁর ইলমের মাধ্যমে বিরাজমান।(তিনি স্থান, কাল, আকার, আকৃতি সব কিছুর উর্ব্ধে)

❏ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী (رحمة الله) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন,

بمعنی آن مشاهده پولم

-“তাঁর (আল্লাহর) ইলমের মাধ্যমে তাদেরকে প্রত্যক্ষ করেন।”

+ইমাম তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তা’ ভীলিল কুরআন, ২২/৪ ৬৮পৃ.  

আসুন একটু বিস্তারিত দেখে নেই। আল্লাহ বলেছেন :

❏ “জেনে রাখো, সবকিছুকেই আল্লাহতালা পরিবেষ্টন করে রয়েছেন।” [সুরা ৪১ সুরা হা-মীম আস্ সাজদাহ্: আয়াত ৫৪]

❏ তোমরা যেখানেই থাকো না কেন তিনি তোমাদের সঙ্গেই আছেন, তোমরা যা কিছু কর আল্লাহ তা দেখেন।” [সুরা ৫৭ হাদীদ: আয়াত ৪]।

❏  “আপনি কি অনুধাবন করেননি আকাশমন্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে আল্লাহ তা জানেন; তিন ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে চতুর্থজন হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেন না এবং পাঁচ ব্যক্তির মধ্যে এমন কোন গোপন পরামর্শ হয় না যাতে ষষ্ঠজন হিসাবে তিনি উপস্থিত থাকেন না; তারা এরচেয়ে কম বা বেশী হোক; তারা যেখানে থাকুক না কেন আল্লাহ তাদের সঙ্গেই আছেন। তারা যা করে; তিনি তাদেরকে কিয়ামতের দিন তা জানিয়ে দিবেন। আল্লাহ সর্ব বিষয়ে সম্যক অবগত।” [সুরা ৫৮ সুরা মুজাদালাহ্ : আয়াত ৭]।

❏ “আমি তোমাদের গলার শাহী ধমনী থেকেও অধিক নিকটবর্তী।” [সুরা ৫০ কাফ: আয়াত ১৬]।

❏ আল্লাহ কোথায় আছেন এ সম্পর্কে বিভিন্ন আয়াতে বিভিন্ন ভাবে বলা হয়েছে। বিস্তারিত দেখুন :

 আত-ত্বায়াহা: 5

 আল-আ’রাফ: 54

 আন’নূর: 16

 আল-মু’মিনুন: ৯১

 আল-ইখলাস: 4

 ইউনূস;  3

 আর-রা’দ;  2

 আল-ফুরকান: ৫৯

 আস-সাজদাঃ ৪

আর যদি কেউ মনে করে তিনি কোন স্থানে উপস্থিত সেটাও ভূল হবে। তিনি স্থান থেকে পবিত্র। যেমনঃ

————————————————————-

❏ ইমাম জুরজানী (رضي الله عنه) বলেন- “মহান আল্লাহ কোনো দিকে বা স্থানে নন।” 

[ইমাম জুরজানী, শরহুল মাওয়াকিফ, ২/৫১-৫২পৃ., সাফর বিন আবদুর রাহমান আল-হাওলী, মিনহাজুল আশাইরাহ, ৭৯পৃ. (শামিলা)]

❏ ইমামে আহলে সুন্নাহ আবু মানসূর মাতুরিদী {ওফাত.৩৩৩হি.} বলেন,

الله تعالى في گل مگانوقالت القدرية والمعتزلة أن

-“মুতাযিলা ও কাদারিয়াগণ বলেন, আল্লাহ সব স্থানে উপস্থিত।”

(ইমাম মাতুরিদী, শরহুল ফিকহুল আকবার, ১৯পৃ.,)

❏ ইমাম ইবনে জারীর আত্-তবারী (رحمة الله) বলেন

لا يمكن في كل مكان

-“তিনি কোনো স্থানে নন।” 

(ইমাম ইবনে জারীর আত্-তবারীঃ তফসীরে তাবারী : ৬/২১০ পৃ)

❏ ইমাম কুরতুবী আন্দুলুসী (رحمة الله) বলেন

وأنه في كل مكان بويه

-“নিশ্চই মহান রবের জ্ঞান সকল স্থানে উপস্থিত।” ৭৪

(ইমাম কুরতবী, হিদায়া ইলা বলল নিহায়া, ১/১২)

❏ শায়খ আহমাদ বিন উমর মাসআদ হাযামী তার ৫৩/৮পৃষ্ঠায় (শামিলা) উল্লেখ করেন, এ কিতাবে,

الله تعالى في كل مكان ها گفز أكبر

إعتقد أن

-“কেউ যদি আক্বিদা রাখে আল্লাহ সবখানে (হাযির-নাযির) এই ধারণা কুফুরে আকবার।”

❏ ইমামে আহলে সুন্নাহ আবুল হাসান আশ’আরী (রঃ ) { ওফাত, ৩২৪হি.} তার গ্রন্থের ১০৯ পৃষ্ঠায় (যা দারুল আনসার, কায়রো মিশর হতে ১৩৯৭ হিজরীতে প্রকাশিত) লিখেন,

وزعمت المعتزلة والحرورية والمجهمية أن الله تعالى في كل مكان

-“মুতাযিলা, হারুরিয়াহ এবং জাহমিয়্যাহ বাতিল ফিরকার লোকেরা বিশ্বাস করে আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন।”

❏ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এর ছেলে ইমাম আবু আব্দুল্লাহ আহমদ ইবনে মুহাম্মদ হাম্বল (ওফাত, ২৪১হি.) তিনি তার কিতাবের ১১৪পৃষ্ঠায় এ আক্বিদা পোষণ কারীদের খণ্ডনে একটি শিরোনাম করেন এ নাম দিয়ে,

الرد على الجهمية في زعمهم أن الله في كل مكان

-“আল্লাহ সকল স্থানে (হাযির-নাযির) আছেন জাহমিয়্যাহ ফিরকার বাতিল আকিদার খণ্ডন। জাহমিয়্যাহ ফিরকার মতে, ইবাদত করা হয় এমন কোন ইলাহ আসমানে নেই। আল্লাহ তা’য়ালা সত্তাগতভাবে জগতের সর্বত্র বিদ্যমান রয়েছেন। 

(ইবনু বাত্তাহ, আল-ইবানাহ, ৩/১৯৪পৃ., ইবনু কুদামাহ, ইছবাতু সিফাতিল উলুয়ি, ১১৮পৃ.)

❏ একদা ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বলের উস্তায ইমাম সা’ঈদ ইবনু ‘আমির আদ-দুবাঈ (ওফাত.২০৮হি.)-এর নিকট একবার জাহমিয়্যাদের কথা উঠলো। তখন তিনি বললেন,

الجهييه أشقود من اليهود والقاری

-“তারা তো ইয়াহুদী-খৃস্টানদের চাইতেও নিকৃষ্ট কথা বলে।” [ইমাম বুখারী, খালকু আফ’আলিল ইবাদ, ৩০, যাহাবী, আল-উলুয়, ১৫৮পৃ.]

❏ ইমাম যাহাবী (رحمة الله) তার এক কিতাবে লিখেন,

من قال بأن الله بذاته في كل مكان فهو مخالف للكتاب والسنة وإجماع سلف الأمة

-“যে ব্যক্তি বলবে মহান রব সত্ত্বাগতভাবে সর্বত্র তাহলে তা হবে কিতাবুল্লাহ, সুন্নাহ এবং পূর্ববর্তী উম্মতের আকিদার বিপরীত। 

[যাহাবী, কিতাবুল ‘আরশ, ১৮২পৃ.]

তিনি তার আরেক গ্রন্থে লিখেন,

وأما قول العامة وكثير من الخاصة الله موجود في كل مكان أو في كل الوجود ويعنون بذاتهفهوضلال بل هو مأخوذ من القول بوحدة الوجود الذي يقول په غلاة الصوفية الذين لا يفرقون بين الخالق والمخلوق

– ‘আল্লাহ সত্তাগতভাবে সর্বত্র বিদ্যমান’- সর্বসাধারণ ও বহু বিশিষ্টজনের এরূপ কথা ভ্রান্ত। বস্তুতপক্ষে তা চরমপন্থী অদ্বৈতবাদী সূফীদের ‘ওয়াহদাতুল ওয়াজুদ’- এর বক্তব্য থেকেই গৃহীত।”

[যাহাবী, আল-“উউ, পৃ. ১৭৪]

❏ হাকিমুল উম্মত আল্লামা মুফতি আহমাদ ইয়ার খান নাঈমী (رحمة الله) লিখেন,

ھےخدا کو ہر جگہ ماننا ہے دینی

-“আল্লাহ তা’য়ালাকে প্রত্যেক যায়গায় আছে মনে করা অধার্মিকতারই নামান্তর।” 

[মুফতি আহমদ ইয়ার খান, জ্বা’আল হক, ১/১৫৩পৃ. (উর্দু)]

অনেকে বলতে পারেন মহান আল্লাহ তা’য়ালা তো বলেছেন যে,

وهو معكم أين ما كنم

-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সাথেই আছেন।” (সূরা হাদীদ, ৪)

প্রকৃতপক্ষে এখানে মহান রব তার জ্ঞান সকলের সাথে আছে তাই বুঝিয়েছেন।

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) উল্লেখ করেন,

وأخرج البيهقي في الأسماء والبنات عن شقيان الثوري رضي الله عنه أنه سئل عن قوله: { وهو

“ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) তাঁর ‘আসমাউ ওয়াল সিফাত’ গ্রন্থে উল্লেখ করেন, ইমাম সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) কে এই আয়াতের ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বলেন, আল্লাহর জ্ঞান তোমাদের সাথে আছে তা মহান রব বুঝিয়েছেন। 

(ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৯পৃ. আলুসী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ২০/৩০৫পৃ., ইমাম বায়হাকী, আসমাউ ওয়াল সিফাত, ২/৪৪৮পৃ. ক্রমিক, ৮৭০)

❏ ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) বলেন -“আল্লাহর কুদরত (ক্ষমতা) এবং জ্ঞান সর্বত্র উপস্থিত।” (ইমাম লালকায়ী, ই’তিকাদে আহলে সুন্নাহ, ৩/৪ ০১পৃ.)

এই আয়াতের ব্যাখ্যায় ইমাম সুয়ুতি (رحمة الله) উল্লেখ করেন,

قال: عالم بكم أينمامأين ماگأخرج ابن أبي حاتم

عن ابن عباس في قوله: { وهو مع

❏“ইমাম আবু হাতেম (رحمة الله) সাহাবী হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তিনি তোমাদের ব্যাপারে সম্যক অবগত।”

(ইমাম সুয়ূতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৯পৃ, আলুসী, তাফসিরে রুহুল মাআনী, ২০/৩০৫)

❏বিশিষ্ট মুফাসসির মুকাতিল ইবনু হাইয়ান (১৫০হি.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন

يعني قدرته وسلطانه وعلمه معگ اینماگر

-“তোমরা যেখানেই থাক না কেন, তোমরা তাঁর (আল্লাহর) কুদরাত, প্রতিপত্তি ও জ্ঞানের ব্যাপ্তির মধ্যেই রয়েছে। 

(ইমাম বায়হাকী, আসমাউ ওয়াল সিফাত, ২/৪৪৬, ক্রমিক, ৮৬৮, আবু হাইয়্যান, আল-বাহরুল মুহীত, ৮/২১৭পৃ. ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৪৮পৃ.)

❏ আবার অনেকে বলতে পারেন মহান রব পবিত্র কোরআনে ইরশাদ করেছেন

ایگور من تجوی ثقتی اهورابعه

-“তোমার কোন স্থানে যদি তিনজন থাক চতুর্থজন হিসেবে তিনি (মহান আল্লাহ) থাকেন।” (সূরা মুজাদালাহ, ৭) তাই অনেকে বলে থাকেন মহান রব সকলের সাথেই আছেন।

❏ইমাম ইবনু জারীর আত-তাবারী (رحمة الله) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় লিখেন

بمعنی آن مشاهده پولم

-“তাঁর (আল্লাহর) ইলমের মাধ্যমে তাদেরকে প্রত্যক্ষ করেন।” 

(ইমাম তাবারী, জামিউল বায়ান ফী তা’ ভীলিল কুরআন, ২২/৪ ৬৮পৃ.)

ইমাম সুয়ূতি (رحمة الله) তাবেয়ী যাহহাক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেছেন-“তার জ্ঞান তোমাদের (চতুর্থজন হিসেবে) সকলের সাথে আছে।”

(ইমাম সুয়ুতি, আদ-দুররুল মানছুর, ৮/৭৯পৃ.)

❏ইমাম বায়হাকী (رحمة الله) এই আয়াতের ব্যাখ্যায় সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করেন,

الله سبحانه وتعالى بدايه في گلوفيمابنا من الآيتي دلالة على إبطال قول من ز من الحقيقة أن} [الحديد: 3] ، إنما أراد بدبيلمه د بامگان ، وقوله ع وجل { وهو مته أين ما

-“আমরা যে সব আয়াত লিপিবদ্ধ করেছি তা দ্বারা এ কথা প্রমাণিত হয় যে, জাহমিয়াদের মধ্যে যারা মনে করে যে, আল্লাহ তা’য়ালা সত্তাগতভাবে প্রত্যেক স্থানে বিদ্যমান রয়েছেন-তা অমূলক। তিনি তোমাদের সাথেই থাকেন, তোমরা  যেখানেই থাকনা কেন’ (সূরা হাদিদ, ৪)

আল্লাহ তা’য়ালার এ কথাটিতে তার জ্ঞানকেই বোঝানো হয়েছে; তার সত্তাকে নয়।”

(ইমাম বায়হাকী, আল-ই’তিকাদ, ১১৪ পৃ.)

❏বিশিষ্ট মুফাসসির আবু হাইয়ান আল-আন্দালুসী (رحمة الله) (ওফাত.৭৪৫হি.) এবং আল্লামা মাহমুদ আলুসী (رحمة الله) এই আয়াতের তাফসিরে লিখেন,

وهي آي أجمعت الأمة على هذا التأويل فيها، وأنها لا تحمل على ظاهرها من القوية بالا

-“এ আয়াতের উক্ত ব্যাখ্যায় ব্যাপারে উম্মতের সকলেই ঐকমত্য পোষণ করেছেন। এ আয়াতের বাহ্যিক অর্থ (অর্থাৎ প্রত্যেক কিছুর সাথে সত্তাগতভাবে আল্লাহর বিদ্যমান থাকা) উদ্দেশ্য নয়।”

(ইমাম আবু হাইয়ান, আল-বাহরুল মুহীত, ১০/১০১, আলুসী, হুল মাআনী, ১৪/১৬৮পৃ.)

❏এজন্যই বড়পীর শায়খ আবদুল কাদের জিলানী (رحمة الله) তার কিতাবে বলেন,

ولا يجوز وصفة بأنه في كل مكان

-“আল্লাহ তা’য়ালা সবজায়গায় বিদ্যমান-এরূপ কথা বলা জায়েয নয়।” (আল গুনিয়াতুত তালিবীন, পৃ. ৫৪-৫৭, ইমাম যাহাবী, কিতাবুল আৱশ, ১৫৪পৃ.)

আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলা প্রসঙ্গ

যারা আল্লাহকে আরশে সমাসীন বলেন তারাও পথভ্রষ্ট। তার কারণ আল্লাহর কোন সৃষ্টি তাকে ধারণ করতে সক্ষম নয়।

❏ইমাম ত্বাহাবী (رحمة الله) বলেন

مچظ بگل شي وفوقه وقد أعجز عن الإحاطة خلقه

-“প্রত্যেক বস্তুই তাঁর পরিবেষ্টনে রয়েছে এবং তিনি সব কিছুর উর্ধ্বে। আর সৃষ্টিকুল তাঁকে পরিবেষ্টনে অক্ষম।”

(ইমাম তাহাভী, আকিদাতুল তাহাভী, ৫৬, ক্রমিক, ৫১, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি)

আরশ আল্লাহর সৃষ্টি তাই তাকে পরিবেষ্টনে সে অক্ষম। আর এজন্যই আল্লাহ তায়ালার একটি নামই হল মুহিত বা পরিবেষ্টনকারী।

❏ইমাম ত্বাহাভী (رحمة الله) তার এ কিতাবের অন্যত্র বলেন,

والأسماء والأدوات لاليس في متاه أحد من البرية وتعالى عن الحدود والايت والأرگا تحويه الجهات الست كسائر المبتدعات

-“আল্লাহ তায়ালার গুণে সৃষ্টি জগতের কেহ নেই। তিনি সীমা, পরিধি, অঙ্গপ্রতঙ্গ এবং উপাদান উপকরণের উর্ধ্বে। সৃষ্টি জগতের ন্যায় ছয় দিকের কোন দিক তাকে বেষ্টন করতে পারে না। 

(ইমাম তাহাভী, আকিদাতুত তাহাভী, ৪৪পৃ. ক্রমিক, ৩৮, মাকতুবাতুল ইসলামী, বয়রুত, লেবানন, প্রকাশ, ১৪১৪হি)

📖 “আল্লাহ আরশে অধিষ্ঠ আছেন” এর ব্যাখ্যা 📖

উপরোক্ত কথাটির প্রকৃত অর্থ ও ব্যাখ্যা নির্ভরযোগ্য দলিল দিয়ে দিতে চাই :-

❏ Imam ‘Ali ibn Abi Taalib (’alayhis salaam) is recorded to have said,

كان- الله- ولا مكان، وهو الان على ما- عليه- كان

“Allah was without place, and He is now as He was [then]. ”

❏ Imam Zaynul-’Aabidin ’Ali ibn Al-Husayn ibn ‘Ali ibn Abi Taalib (radhiya Allahu ‘Anhu) stated ,

أنت الله الذي لا يحويك مكان

“You are Allah , who does not occupy place!”

[It-haaf As-Saadat Al-Muttaqin 2/24 ]

❏ ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে বর্ণিত,

আমি বললাম: আপনাকে যদি প্রশ্ন করা হয়, আল্লাহ কোথায়?

ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) উত্তর দিলেন: প্রশ্নকারীকে বলা হবে, সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে যখন কোন স্থান ছিল না, তখন আল্লাহ তায়ালা বিদ্যমান ছিলেন। আল্লাহ তায়ালা তখনও ছিলেন যখন ‘কোথায়’ কথাটির অস্তিত্ব ছিল না, যখন কোন সৃষ্টি ছিল না, এমনকি যখন কিছুই ছিল না তখনও আল্লাহ ছিলেন। আর তিনিই সব কিছু সৃষ্টি করেছেন।

[আল-ফিকহুল আবসাত, পৃ.২৫]

❏ ইমাম আবু হানিফা (رحمة الله) থেকে বর্ণিত,

“আমরা বিশ্বাস করি, আরশের প্রতি মুখাপেক্ষিতা, স্থিতি ও অবস্থান ব্যতীত আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর ইস্তাওয়া করেছেন। তিনি আরশ ও আরশ ছাড়া অন্য সকল কিছুর সংরক্ষক। এগুলোর প্রতি তিনি বিন্দুমাত্র মুখাপেক্ষী নন। তিনি যদি আরশ বা অন্য কিছুর প্রতি মুখাপেক্ষী হতেন, অন্যান্য মাখলুকের মতো তিনি মহাবিশ্ব সৃষ্টি ও এগুলোর রক্ষণাবেক্ষণ করতে সক্ষম হতেন না। আল্লাহ তায়ালা যদি বসা ও অবস্থানের মুখাপেক্ষী হতেন, তাহলে আরশে সৃষ্টির পূর্বে আল্লাহ কোথায় ছিলেন? নিশ্চয় আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর অবস্থান ও বসার ধারণা থেকে বহু উর্ধ্বে।

[আল-ওসিয়্যা, পৃ. ২]

❏ al-Hafidh Imam Abu Bakr al-Bayhaqi said: “

Some of our companions used as evidence to deny a place for Allah, the saying of the Prophet:”O Allah You are adh-Dhahir so there is nothing above You, O Allah, You are al-Batin so there is nothing beneath You”. So if there is nothing above Him and nothing below him is that He is not in aplace.”

❏ The Maliki Qadhi Ibn Rushd the Elder (d. 520), said:

ليس- الله- في مكان، فقد كان قبل أن يخلق المكان

Allah ta’alaa is not in a space, for He was before ’space’was created.” [Quoted by Ibn Al-Haaj in Al-Madkhal]

❏ He also stated,

فلا يقال أين ولا كيف ولا متى لأنه خالق الزمان والمكان

, It is not to be asked ‘Where’, ‘How’, or ‘When’ for He created The time as well as space.” [Ibid 3/181]

❏ He also stated ,

وإضافته- أي العرش- إلى الله تعالى إنما هو بمعنى التشريف له كما يقال: بيت الله وحرمه، لا أنه محل له وموضع لاستقراره

And the ascription of the ‘Arsh (throne) to Allah ta’alaais with the meaning of honouring Him, just as it is said ‘The House of Allah and Its Sanctity”. It is not because it is His place or the abode for which he sits (istiqraar).”

[Al-Madkhal 2:149, Also Ibn Hajr in his Fat-hul Baari]

❏ Imam An-Nasafi (701 or 710 AH) states in his Tafsir,

إنه تعالى كان ولا مكان فهو على ما كان قبل خلق المكان، لم يتغير عما كان.

“Verily He, the exalted, was without place , and He is as He was before creating (the entity of) ‘place’, not changing as He was [Tafsīr An-Nisfi Surah Taha Volume 2]

❏ The Shaykh Abul abbas shihad ud din Ahmad ibn Muhammad Al-Qastalānī Al-Masrī (d. 933 AH) said in his Sharh (gloss) of Sahīh Al-Bukhārī,

ذات الله منزه عن المكان والجهة

“Allah ’s essence is free from space (makān) and direction (jihah [Irshād As-Sārī 15/451]

❏ Imam Ibn Hajr al Asqalani (rah) says:

When we say: “Allah is above the Throne” (Allah `ala al-`arsh), it does not mean that He is touching it or that He is located on it or bounded by a certain side of the Throne”Its meaning is He elevatedHimself (irtafa`a)” [b/] and others of them said: “Its meaning is sovereignty (al-mulk) and power (al-qudra).”

[ Ibn Hajar, Fath al-Bari (1959 ed. 13:409)]

❏ Abi Mansur Al-Baghdadi also quotes Imam ‘Ali (radhiyaAllahu ‘anhu) as saying,

إن الله تعالى خلق العرش إظهارًا لقدرته لا مكانا لذاته

,“Verily Allah , the exalted, created the throne to manifest His power, not as a place for his essence.”

                     📖’ ইস্তাওয়া’ শব্দের অর্থঃ📖

❏ বিখ্যাত মুফাসসির, ভাষাবিদ ও আরবী ব্যাকরণবিদ আবু আব্দুর রহমান আব্দুল্লাহ ইবনে ইয়াহইয়া ইবনুল মুবারক [মৃত: ২৩৭ হি:] তার ” গারিবুল কুরআন ও তাফসীরুহু” -তে লিখেছেন,

” সূরা ত্ব-হা এর পাঁচ নং আয়াত: দয়াময় আল্লাহ তায়ালা আরশের উপর কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করেছেন। “ইস্তেওয়া শব্দের অর্থ হলো, ইস্তাওলা তথা কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করা”

[গারিবুল কুরআন ও তাফসীরুহু, পৃষ্ঠা.২৪৩, আলামুল কুতুব]

*** এখন বলুন আপনে কি বলতে পারবেন যে আল্লাহ এখানে হাজির হয়েছেন? যদি বলেন হাজির হয়েছেন তাহলে কি প্রশ্ন হবে না যে তিনি কি এই মাত্র হাজির হয়েছেন? আগে এখানে ছিলেন না? নাউযুবিল্লাহ

📖 রাসুলুল্লাহ (ﷺ) হাজির নাজির 📖

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) হাজির (উপস্থিত) নাজির (দেখেন)। মানে হল আল্লাহর ইচ্ছায় যেকোন জায়গায় উপস্থিতও হতে পারেন এবং আমাদের কাজ সমুহের সাক্ষীও হয়ে থাকেন। এর কিছু শর্ত জেনে নেই। যেমন :

১) একই সময়ে সমস্ত দুনিয়া একই সংগে পরিভ্রমন করার ক্ষমতা।

২) এক স্থানে থেকে সমস্ত পৃথিবী দেখার ক্ষমতা।

আসুন উপরোক্ত শর্ত হাদিস থেকে বুঝে নেই :

❏ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর থেকে বর্ণিত আছেঃ-

اِنَّ اللهَ رَفَعَ لِىْ الدُّنْيَا فَاَنَا اَنْظُرُ اِلَيْهَا وَاِلى مَهُوَ كَائِنٌ فِيْهَا اِلى يَوْمِ الْقِيَمَةِ كَاَنَّمَا اَنْظُرُ اِلَى كَفِّىْ هذَا

অর্থাৎঃ আল্লাহ তা’আলা আমার সামনে সারা দুনিয়াকে তুলে ধরেছেন। তখন আমি এ দুনিয়াকে এবং এতে কিয়ামত পর্যন্ত যা’কিছু হবে এমন ভাবে দেখতে পেয়েছি, যেভাবে আমি আমার নিজ হাতকে দেখতে পাচ্ছি।

সুত্র : শহরে মাওয়াহেবে লদুনিয়ায়’: আল্লামা যুরকানী (রহতুল্লাহে আলাইহে) প্রনীত

❏ আল-কোরআনে বলা হয়েছে : রাসুলুল্লাহ (ﷺ) কে সাক্ষীরুপে প্রেরণ করা হয়েছে।

সাক্ষী তো এই ব্যাক্তিকেই করা হয় যিনি কিনা উপস্থিত ছিলেন কিংবা ঘটনানলি পর্যবক্ষেন করেছেন তাই না? যে নাকি কিছুই দেখে নি উপস্থিতও ছিল না সে কোন দিন কোন সাক্ষী হতে পারে না। এই বাক্যটুকু উপরের ২টা শর্তের সাথে মিলিয়ে নিন।

প্রমাণ সাপেক্ষে আলোচনাঃ আল-কোরআন ও তফসীর থেকে :

❏ আল কুরআনে আল্লাহ বলেন,

‘‘ইন্না আরসালনাকা বিল হাক্‌কি বাশিরাও ওয়া ‘নাজিরাও’ ওয়াইমমিন উম্মুতিন ইলা খালা ফি’হা ‘নাযির’।”

আমি আপনাকে (রাসূল) সত্যসহ প্রেরণ করেছি সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারী রূপে, এমন কোন সম্প্রদায় নেই, যার নিকট সতর্ককারী প্রেরীত হয়নি- (সূরা: ফাতির, আয়াত- ২৫)

Note: নাযির অর্থ সতর্ককারীও হয়।

❏ সেদিন আমি প্রত্যেক উম্মত থেকে এক একজন সাক্ষী উত্থিত করব আর এদের সকলের বিষয়ে আপনাকে সাক্ষ্যীরুপে আনয়ন করব।

]সুরা নাহল ৮৯]

❏ “তবে কেমন হবে যখন আমি (আল্লাহ) প্রত্যেক উম্মত থেকে একজন সাক্ষী উপস্থিত করবো, এবং হে মাহবুব, আপনাকে তাদের সবার ব্যাপারে সাক্ষী ও পর্যবেক্ষণকারী স্বরূপ উপস্থিত করবো?” (৪:৪১)

*** মহানবী (ﷺ) যা জানেন না বা দেখেন নি সে সম্পর্কে তো তাঁকে সাক্ষ্য দেয়ার জন্যে বলা হবে না। তিনি এগুলো দেখবেন বলেই ওনাকে সাক্ষী স্বরুপ বলা হয়েছে।

❏ “এবং জেনে রেখো, তোমাদের মধ্যে আল্লাহর রাসূল (ﷺ) রয়েছেন” (৪৯:৭)।

❏ “অতঃপর তোমাদের কার্যকলাপ প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(ﷺ)।”[৯:৯৪]

❏ এবং “আপনি বলুন: আমল করে যাও; অতঃপর তোমাদের আমল প্রত্যক্ষ করবেন আল্লাহ ও তাঁর রাসূল (ﷺ) এবং মো’মেন মুসলমানবৃন্দ” (৯:১০৫)।

হাদিস এর আলোকে বুঝিঃ 

❏ রাসুলুল্লাহ (ﷺ) আমাদের সমস্ত কোটি কোটি মুমিন-মুসলমানের আমলের উপর দেখে দেখে সাক্ষী থাকবেন :

হযরত আবুযর গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছে,

عُر ضَتْ عَلَىَّ اَعْمَالُ اُمَّتِىْ حَسَنُهَا وَسَيِّئُهَا فَوَجَدْت فِىْ مَحَاسِنِ اَعْمَالِها الْاَذَى يُمَاطُ عَنِ الطَّرِيْقِ

(আমার সামনে আমার উম্মতের ভালমন্দ সমূহ পেশ করা হয়েছে। আমি তাদের নেক আমল সমূহের মধ্যে রাস্তা থেকে কষ্টদায়ক বস্তু সমূহ অপসারনের মত পূণ্য কাজও লক্ষ্য করেছি।

সুত্র : মিশকাত শরীফ : ‘মাসাজিদ’ অধ্যায়

❏ নবাব সিদ্দিক হাসান খাঁ ভূপালী বলেন,”

তাশাহুদে আসসালামু আলাইকা বলে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে এ জন্যই সম্বোধন করা হয় যে, তিনি জগতের কনায় কনায় বিদ্যমান। নামাযীর সত্বার মাঝে হাযির ও বিরাজমান।

[নওয়াব সিদ্দিক আলী ভূপালী তার রচিত : মিসকুল খেতাম (হাজির নাজির অত্র অধ্যায়ের ৩য় পরিচ্ছেদ)]

Note : সাক্ষী সেই যে নাকি উপস্থিত অথবা তার সম্মুখে সব আমল দেখানো হচ্ছে। তাহলে এর চেয়ে বড় প্রমান আর কি হতে পারে?

নিচে যা যা প্রমান করা হল এক নজরে সংক্ষেপে :

১) রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর দূরদৃষ্টি কেমন আর কত দূর?

২) তার কাছে দুরুদ, সালাম, সমস্ত আমল সমুহ পেশও করা হয়। এই ভাবে দেখে দেখে তিনি আমাদের সমস্ত কাজগুলোর সাক্ষী হয়ে থাকেন।

৩) পৃথিবী সৃষ্টির পুর্বে আদম (আ) সৃষ্টির পুর্বেও তার অস্তিত্ব ছিল। তিনি অতীতের সমস্ত নবী ও উম্মতকে দেখেছেন।

৪) তিনি এমন নবী যিনি আল্লাহর প্রদত্ত ক্ষমতায় অতীত, বর্তমান , ভবিষ্যৎ সম্পর্কে অঢেল সব হাদিস বর্ননা করে গেছেন। সুতরাং উম্মতের হালত সম্পর্কে আর আমল সম্পর্কে এখনো তিনি সাক্ষী আছেন, কিয়ামত পর্যন্ত যত কোটি কোটি উম্মত আসবেন তাদের আমল সম্পর্কেও সাক্ষী থাকবেন।

নিচের হাদিস গুলো পড়লে বুঝবেন :

হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) হতে বর্ণনা করেন,

ﻋَﻦْ ﻋَﺒْﺪِ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺑْﻦِ ﻣَﺴْﻌُﻮﺩٍ، ﻋَﻦِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ – ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ – ﻗَﺎﻝَ  ﺇِﻥَّ ﻟِﻠَّﻪِ ﻣَﻠَﺎﺋِﻜَﺔً ﺳَﻴَّﺎﺣِﻴﻦَ، ﻳُﺒَﻠِّﻐُﻮﻥَ ﻋَﻦْ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﺍﻟﺴَّﻠَﺎﻡَ .” ﻗَﺎﻝَ : ﻭَﻗَﺎﻝَ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ : ” ﺣَﻴَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻜَﻢْ ﺗُﺤْﺪِﺛُﻮﻥَ ﻭَﻳُﺤَﺪَﺙُ ﻟَﻜَﻢْ، ﻭَﻭَﻓَﺎﺗِﻲ ﺧَﻴْﺮٌ ﻟَﻜَﻢْ ﺗُﻌْﺮَﺽُ ﻋَﻠَﻲَّ ﺃَﻋْﻤَﺎﻟُﻜُﻢْ، ﻓَﻤَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻣِﻦْ ﺧَﻴْﺮٍ ﺣَﻤَﺪَﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻋَﻠَﻴْﻪِ، ﻭَﻣَﺎ ﺭَﺃَﻳْﺖُ ﻣِﻦْ ﺷَﺮٍّ ﺍﺳْﺘَﻐْﻔَﺮْﺕُ ﺍﻟﻠَّﻪَ ﻟَﻜَﻢ –

‘‘আমার হায়াত তোমাদের জন্য উত্তম। কেননা আমি তোমাদের সাথে কথা বলি তোমরাও আমার সাথে কথা বলতে পারছ। এমনকি আমার ওফাতও তোমাদের জন্য উত্তম নেয়ামত। কেননা তোমাদের আমল আমার নিকট পেশ করা হয় এবং আমি তা দেখি। যদি তোমাদের কোন ভাল আমল দেখি তাহলে আমি তোমাদের ভাল আমল দেখে আল্লাহর নিকট প্রশংসা করি, আর তোমাদের মন্দ কাজ দেখলে আল্লাহর কাছে তোমাদের জন্য গুনাহ মাফের জন্য (তোমাদের পক্ষ হয়ে) ক্ষমা প্রার্থনা করি।’’

মুসনাদে বাযযারের সনদঃ

ইমাম বাযযার ➡ ইউসুফ বিন মূসা ➡ আবদুল মজিদ বিন আবদুল আজিজ বিন আবি রওয়াদ ➡ ইমাম সুফিয়ান সাওরি ➡ আবদুল্লাহ ইবনে সা’ইব➡ যাধান ➡ আবদুল্লাহ ইবনে মাস’উদ (رضي الله عنه)

তথ্যসূত্রঃ  

১. ইমাম হায়সামী (رحمة الله) মাজমাউয জাওয়াইদ, আলামাত আন নুবুউয়াঃ অধ্যায়: হায়াতিহি ওয়া ওয়াফতিহি, 2/884, হাদিস নম্বরঃ 953 ও 9/24, হাদিস: 91,পুস্তকে জানান যে, হাদীসটি আল-বাযযার তাঁর ’মুসনাদ’ গ্রন্থে বর্ণনা করেন এবং এর সকল ’রাবী’ (বর্ণনাকারী) সহীহ (মানে হাদীসটি সহীহ)।

২. ইবনুল ইরাকী, তারহ আল-তাথরিব ফী শারহ,(৩:২৯৭) তাঁর মতে হাদিসটি বিশুদ্ধতা। 

৩. ইবনে সা’আদঃ আত-তাবাক্কাত-উল-কুবরা (২:১৯৪), (৫/৫০০)

৪. ইমাম কাজী আয়ায (رحمة الله) ‘আশ-শিফা’ গ্রন্থে (১:১৯) 

৫. ইমাম সুয়ুতি, আল হাবি লিল ফাতাওয়া, 2

 পৃষ্ঠা: 3

৬. ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله), ‘আল-খাসাইস আল-কুবরা’ (২:২৮১) 

৭. ইমাম সৈয়ুতী (رحمة الله),‘মানাহিল-উস-শিফা ফী তাখরিজ-এ-আহাদীস আশ-শেফা’ 31 (# 8) তিনি বিবৃত করেন যে আবূ উসামাহ নিজ ‘মুসনাদ’ পুস্তকে বকর বিন আব্দিল্লাহ মুযানী  (رضي الله عنه)-এর সূত্রে এবং আল-বাযযার তাঁর ‘মুসনাদ’ বইয়ে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (رضي الله عنه)-এর সূত্রে সহীহ সনদে এই হাদীস লিপিবদ্ধ করেন।

৮. খাফাযী স্বরচিত ‘নাসিমুর রিয়াদ’ (১:১০২) ও 

৯.  মোল্লা আলী কারী তাঁর ‘শরহে শিফা’(১:৩৬) এ হাদিসটি সমর্থন করেন।

১০. মুহাদ্দীস ইবনুল জাওযী এটি বকর বিন আব্দিল্লাহ  (رضي الله عنه) ও হযরত আনাস বিন মালেক (رضي الله عنه)-এর সূত্রে “আল ওয়ফা দ্বি আহওয়ালিল মুস্তাফা (ﷺ), পৃষ্ঠা: 862, হাদিস নম্বরঃ 1564

১১. ইমাম তাকিউদ্দীন সুবকী (رحمة الله) নিজ ‘শেফাউস্ সেকাম ফী যেয়ারাতে খায়রিল আনাম’ (৩৪ পৃষ্ঠা) কিতাবে বকর ইবনে আব্দিল্লাহ মুযানী  (رضي الله عنه) হতে এ হাদীস নকল করেছেন।

১২. ইবনে আব্দিল হাদী তাঁর ‘আস্ সারিম-উল-মুনকি’ (২৬৬-৭ পৃষ্ঠায়) পুস্তকে হাদিসটির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন।

১৩. ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী (رحمة الله) নিজ ‘আল-মাতালিব-উল-আলিয়্যাহ’ (৪:২২-৩ #৩৮৫৩) গ্রন্থে  বকর ইবনে আব্দিল্লাহ মুযানী (رضي الله عنه)-এর সূত্রে। 

১৪.  ইবনে হাজার আসকালানী, তাকরিব ওয়াল তাহযিব, 1/478

১৫. ইমাম ইবনে হাজর আসকালানী, লিসান আল মিজান, 2/পৃষ্ঠা: 395, হাদিস 1620

১৬. আলাউদ্দীন আলী নিজস্ব ‘কানযুল উম্মাল’ পুস্তকে (১১:৪০৭ #৩১৯০৩) ইবনে সাআদের বর্ণিত হাদীসটি উদ্ধৃত করেন এবং হারিস হতেও একটি রওয়ায়াত উদ্ধৃত করেন (# ৩১৯০৪)।

১৭. হাকিম তিরমিযী, নওদীর আল উসুল, 4/পৃষ্ঠা: 176

১৮. ইমাম যাহাবি, মিজান আল ইতিদাল, 2, পৃষ্ঠা: 439

১৯. ইমাম ইবনে আদি, আল কামিল, 3/পৃষ্ঠা: 76

২০. ইমাম আজলুনি, কাশফ আল খিফা, 1/পৃষ্ঠা: 1178

২১. ইমাম সাখাভীঃ আল কাউলুল বদী ফী সালাত আলাল হাবিব আশ শাফী (ﷺ), পৃষ্ঠা: 160

২২. শাশীঃ আল মুসনাদস-শাশী, 2/253 পৃ, হাদিস নম্বর: 826

২৩. আবু হাতিম, আল-জারহ ওয়াত-তাদিল, 6/64 পৃ

২৪. শায়খ শু‘আয়েব আল-আরনা’উত, তাহরির আল-তাকরীব,2/379, হাদিস: 4160

২৫. আল-মুগনি, 1/571, হাদীস: 3793

২৬. ইবনে হিব্বান, কিতাব আল-মাজরুহিন, 2/160।

২৭. কিতাব আল-হজ্ব, পৃষ্ঠা: (# 179)

২৮. ইমাম দায়লামিঃ মুসনাদুল ফিরদুস, 1/183, হাদিস : 686

২৯. ইমাম যাহাবিঃ সিয়ার আল আ’লাম আন নুবালা, 17/পৃষ্ঠা: 106

৩০. ইমাম মিয্যিঃ তাহযিব আল কামাল, 14/পৃষ্ঠা: 558

৩১. ইমাম ইবনে কাসিরঃ তাফসীরে ইবনে কাসীর, 3/ পৃষ্ঠা: 516

৩২. ইমাম ইবনে কাসীরঃ ‘আল-বেদায়া ওয়ান-নেহায়া’ (৪:২৫৭)। 

৩৩. ইমাম জুরকানীঃ শরহে মাওহিব, 7/পৃষ্ঠা: 373

৩৪. শায়খ আবদুল্লাহ আল-তালিদি, মানাহিল আল-সাফা ফী তাখরিজ আহাদীছ আশ-শিফা’র তাহযিব, পৃষ্ঠা। 458-459 (# 694)

৩৫. আল-মুনাভি, ফয়জুল কাদির, 3/401

৩৬. তারিখ আল-দাওরি, 2/370

৩৭. আল-বুরকানী, পৃষ্ঠা 317

৩৮. আন হামল আল-আসফার, 4/148

৩৯. মাহমুদ মামদুহ, রাফউল-মিনারাহ’ আন তাখরিজ আহাদীস আল-জিয়ারা, 156-159 পৃ

৪০. জুহদামি, ফাদ্বালুস সালাহ ‘আলান ন্যাবি (ﷺ), ১/৩৮-৩৯, হাদিস নম্বর: 25-26

৪১. ইমাম মুত্তাকী আল হিন্দি, কানজুল উম্মাল, 11/পৃষ্ঠা: 407, হাদিস নম্বরঃ 31904

৪২. ফায়রোজ আবাদী, আস ছালাত ওয়াল বাশার ফিস সালাত আ’লা খায়েরুল বাশার, পৃষ্ঠা: 104-105

৪৩. আল-মুনযিরি, তারগীব ওয়াল-তারাহীব 3: 343

৪৪. ইমাম নাবহানীঃ হুজ্জাতুল্লাহি আলাল আলামিন ফি মু’জাজাতুল মুরসালীন (ﷺ), পৃষ্ঠা: 713

উক্ত হাদিস প্রসঙ্গে ইমাম ইবনে হাজার হাইসামী (رحمة الله) বলেন:

ﺭَﻭَﺍﻩُ ﺍﻟْﺒَﺰَّﺍﺭُ، ﻭَﺭِﺟَﺎﻟُﻪُ ﺭِﺟَﺎﻝُ ﺍﻟﺼَّﺤِﻴﺢِ  –

-‘‘উক্ত হাদীসের সমস্ত রাবী বুখারীর সহিহ গ্রন্থের ন্যায়।’’ তাই হাদিসটি সহিহ।

১.বাজ্জার,আল-মুসনাদ,৫/৩০৮পৃ.হাদিস,১৯২৫

২.সুয়ূতি,জামিউস সগীর,১/২৮২পৃ.হাদিস,৩৭৭০-৭১

৩.আল্লামা ইবনে কাছির ,বেদায়া ওয়ান নিহায়া,৪/২৫৭পৃ.

৪. আল্লামা মুত্তাকী হিন্দী,কানযুল উম্মাল,১১/৪০৭পৃ. হাদিস,৩১৯০৩

৫.ইমাম ইবনে জওজী,আল-ওফা বি আহওয়ালি মোস্তফা,২/৮০৯-৮১০পৃ.

৬. আল্লামা ইবনে কাছির,সিরাতে নববিয়্যাহ,৪/৪৫পৃ.

📖   রাসুলুল্লাহ (ﷺ) উম্মতের পাপ-পূণ্যের সাক্ষী 

❏ হযরত ছওবান (রাদিয়াআল্লাহু তাআলা আনহু) থেকে বর্ণনা করা হয়েছেঃ-

اِنَّ اللهَ زَوى لِىَ الْاَرْضَ فَرَءَيْتُ مَشَارِقَ الْاَرْضِ وَمَغَارِبَهَا

অর্থাৎ আল্লাহ তাআলা আমার সম্মুখে গোটা পৃথিবীকে এমনভাবে সঙ্কুচিত করেছেন, যে আমি পৃথিবীর পূর্বপ্রান্ত ও পশ্চিমপ্রান্ত সমূহ স্বচক্ষে অবলোকন করেছি।

সুত্র :  ১) মিশকাত শরীফের ‘ফযায়েলে সায়্যিদুল মুরসালীন’ শীর্ষক অধ্যায়

২) ‘মুসলিম শরীফ

Note : তাহলে কি তিনি আমাদেরকে দেখতে পাচ্ছেন না? এটা হাজির নাজিরের শর্ত হল না?

❏ হযরত আবদুর রহমান ইবন আয়েশা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছেঃ-

আমি আল্লাহ তা’আলাকে সুন্দরতম আকৃতিতে দেখেছি। তিনি স্বীয় কুদরতের হাতখানা আমার বুকের উপর রাখলেন, যার শীতলতা আমি স্বীয় অন্তঃস্থলে অনুভব করেছি। ফলে, আসমান যমীনের সমস্ত বস্তু সম্পর্কে অবগত হয়েছি।

সুত্র :  মিশকাত শরীফ : ‘মাসাজিদ’ অধ্যায়

***** তিনি অতীত দেখেছেন :-

❏ ইমাম বুখারী (رحمة الله) বর্ননা করেন,

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) অতীতের সমস্ত নবীগন (আ) কে এবং ওনাদের উম্মতগনকে দেখেছেন।

সুত্র : সহিহ বুখারী : অধ্যায় “মানাকিব”

***** তিনি বর্তমান,  ভবিষ্যৎ দেখে বর্ননা করেছেন :

❏ মিশকাত শরীফের মাসাজিদ অধ্যয়ে তিরমিযী শরীফের  বর্ণিত আছেঃ

فَتَجَلَّى لِىْ كُلُّ شَيْئٍ وَعَرَفْتُ

 প্রত্যেক কিছু আমার কাছে উন্মুক্ত হয়েছে এবং আমি এগুলো চিনতে পেরেছি।

সুত্র : ১) মিশকাত শরীফ : মাসাজিদ অধ্যয়

২)  তিরমিযী শরীফের

❏ হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্নিত হয়েছেঃ

مَاتَرَكَ شَيْأً يَكُوْنُ فِىْ مَقَامِه اِلَى يَوْمِ الْقِيمَةِ اِلَّا حَدَّثَ بِه حَفِظَهُ مَنْ حَفِطَهُ وَنَسِيَهُ مَنْ نَسِيْهُ

অর্থাৎ হুযুর আলাইহিস সালাম সে জায়গায় কিয়ামত পর্যন্ত যা কিছু ঘটবে, সব কিছুর খবর দিয়েছেন, কোন কিছুই বাদ দেননি। যাদের পক্ষে সম্ভব, তারা সব স্মরন রেখেছেন, আর অনেকে ভুলেও গেছেন।

সুত্র :  ১) মিশকাত শরীফের اَلْفِتنٌ  অধ্যায়

২) বুখারী ও

৩) মুসলিম

❏ হযরত হুযাইফা (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছেঃ-

হুযুর আলাইহিস সালাম পৃথিবীর মেয়াদ উত্তীর্ণ হয়ে যাওয়া পর্যন্ত অনুষ্ঠিতব্য কোন ফিতনা পরিচালনাকারীর কথা বাদ দেননি যাদের সংখ্যা তিনশত কিংবা ততোধিক হবে এমন কি তাদের নাম তাদের বাপের নাম ও গোত্রের নামসহ আমাদের নিকট বর্ণনা করেছেন।

সুত্র :  মিশকাত শরীফ : অধ্যায় ‘ফিতনা’ : ২য় পরিচ্ছদ

❏ হযরত আবুযর গিফারী (رضي الله عنه) থেকে বর্ণিত আছেঃ-

لَقدْ تَرَكْنَا رَسُوْلُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمْ وَما يُحَرِّكُ طَائِرٌ جَنَاحَيْهِ اِلَّا ذَكَرَلَنَا مِنْهُ عِلْمًا

হুযুর আলাইহিস সালাম আমাদেরকে এমনভাবে (বিস্তারিত) অবহিত করেছেন যে, একটা পাখীর পালক নড়ার কথা পর্যন্ত তার বর্ণনা থেকে বাদ পড়েনি।

সুত্র : মুসনাদে আহমদ।

❏ রাসুল (ﷺ) একই সংগে ২ স্থানে হাজির

হযরত আবু ইবনে উবাইয়া (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত।

একদিন হযরত বিলাল (رضي الله عنه) যোহর নামাজের আগে মসজিদ পরিষ্কার করছিলেন। পরিষ্কার করতে করতে একসময় তিনি নীচে লুটে পরে গড়াগড়ি শুরু করে দিলেন। সাহাবাগণ ( রাদ্বিয়াল্লাহু তায়ালা আনহুম) এমন অবস্থা দেখে রাসূল (ﷺ) এর কাছে এটা বলতে গেলেন। রসূল (ﷺ) বললেন, “তোমরা বিলালকে গিয়ে বল আমি ডাকছি।(১ম স্থান)

” হযরত বিলাল (رضي الله عنه) কে ডেকে আনা হলে রসূল (ﷺ) ওনার মাথায় হাত বুলিয়ে আযান দিতে যেতে বললেন। বিলাল (رضي الله عنه) বের হয়ে মসজিদের দিকে যাচ্ছেন। এমন সময় সাহাবাগণ বললেন, “রসূল (ﷺ) আপনাকে কিছু বললেন না কেন?” হযরত বিলাল (رضي الله عنه) বললেন, “তোমাদের যখন আমাকে ডেকে আনতে পাঠানো হল তার আগেই রাসূল (ﷺ) আমার সামনে উপস্থিত হয়েছিলেন।(২য় স্থান)

আমার কাছে তিনি জানতে চাইলেন, ‘বিলাল তুমি নীচে এমন গড়াগড়ি করছ কেন?’ আমি উত্তর দিলাম ‘ইয়া রসূলাল্লাহ’ আমি যখন মসজিদ পরিষ্কার করতে ঝাড়ু হাতে নিলাম তখন দেখলাম হাজার হাজার ফেরেশতা আপনার পেছনে নামাজ পড়তে দাঁড়িয়ে আছে।

তাদের গায়ে এই ঝাড়ু লাগুক তা আমি চাইনি। তাই ময়লাগুলো নিজ শরীরে গড়াগড়ি দিয়ে তুলছিলাম।’ অতঃপর তাই আমাকে রসূল (ﷺ) আর কিছু বলেননি।”

(ইবনে মাজা শরীফ, খন্ড ২, হাদিস নং ৪৩৫৬,

মসনদে আনাস বিন মালেক, খন্ড ৩, প্রিষ্ঠা ৪২১)

❏ একসাথে বহু জায়গায় হাজির-নাজির:-

ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, আমি আশুরার দিন দুপুরে শুয়ে ছিলাম। হঠাৎ দেখি রাসূল সা. অত্যন্ত শোকাহত, তার চুলগুলো উসকো খুসকো। এমতাবস্থায় একটি রক্তভরা শিশি নিয়ে তিনি উপস্থিত। আমি জিজ্ঞেস করলাম ইয়া রাসূল্লাল্লাহ! এই রক্ত কিসের? নবীজী সা. বললেন, এইমাত্র হুসাইন এবং তার সাথীদের রক্ত কারবালার মাটিতে পড়েছে, আমি উঠিয়ে নিয়ে এসেছি। ইবনে আব্বাস (رضي الله عنه) বলেন, এরপর আমার ঘুম ভেঙ্গে গেল। আমি তারিখটা স্মরণ রাখলাম। পরে জানতে পারলাম যে,

যেই সময় হযরত ইমাম হুসাইন (رضي الله عنه) কারবালায় শাহাদত বরণ করেছেন,

(১ম)

ঠিক সেই সময় রাসুলুল্লাহ (ﷺ) ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) এর রক্তের শিশি হাতে নিয়ে আমার সামনে এসেছিলেন।

(মুসনাদ আহমাদ বিন হাম্বাল, হাদিস নং ২১৬৫। হাদিটির সনদ সাহীহ)

(২য়) :

উম্মে সালামা (رضي الله عنه) থেকেও অনুরূপ একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে, (ওনাকেও সেই খবর দিয়েছিলেন)। ২৪ দিন পরে মদীনাতে কারবালার নৃশংস ঘটনার খবর এসে পৌঁছলে তাঁদের দুজনের স্বপ্ন সত্য প্রমানিত হয়।

❏ হযরত উম্মে সালমা রঃ স্বপ্ন যোগে রাসূলে পাক দঃ কে ধুলা মিশ্রিত অবস্হায় দেখতে পেলেন এবং জিজ্ঞাসা করলে প্রিয় নবী দঃ প্রতি উত্তরে বলেন ﺷﻬﺪﺕ ﻗﺒﻞ ﺍﻟﺤﺴﻴﻦ ﺍﻧﻔﺎ সবেমাত্র আমি আমার প্রাণপ্রিয় দৌহিত্র ইমাম হোসাইনের শাহাদাত প্রত্যক্ষ করেছি। তিরমীজি , বায়হাকী , মেশকাত শরীফ পৃঃ ৫৭০, ৫৭২

❏ হাদিসে এসেছে :-

ﻭ ﺍﻥ ﻣﻮﺍﻋﺪﻛﻢ ﺍﻟﻀﻮﺽ ﻭ ﺍﻧﻲ ﻻﻧﻈﺮ ﺍﻟﻴﻪ ﻭ ﺍﻧﺎ ﻓﻲ ﻣﻘﺎﻣﻲ

নিশ্চয়ই তোমাদের সাথে আমার পরবর্তী স্বাক্ষাত হবে হাওযে কাওসারে। নিশ্চয়ই আমি এ স্থান হতে হাওযে কাওসার প্রতিনিয়ত অবলোকন করছি। আলহাদিস, সহীহ বোখারী ২য় খন্ড , পৃঃ ২৭৯

Note: যিনি জায়গায় বসে দুনিয়াতে থেকে হাউজে কাওসার দেখতে পারেন সেই নবী (ﷺ) এর দুরদৃষ্টি কতটুকু হতে পারে এক বার ভেবে দেখুন। তিনি কি তাহলে উম্মতের হালত আর অবস্থার সাক্ষী নয়?

রাসুলুল্লাহ (ﷺ) এর ক্ষেত্রে সাক্ষী মানেই হাজির নাজির বুঝানো হয়। কারন সাক্ষী সেই হয় যে নাকি এক জায়গায় বসে সমস্ত ঘটনাবলি দেখে দেখে সাক্ষী হয় অথবা ঘটনাস্থলে স্বশরীরে হাজির হয়ে সাক্ষী হন।

📖 হাদিস শাস্ত্রের ইমামগনের (মুহাদ্দিসগনের) আকিদা :

❏ শাইখ আবদুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন-

উলামায়ে উম্মতের মধ্যে বিভিন্ন মতাদর্শ ও বিভিন্ন বিষয়ে মতানৈক্য থাকা সত্ত্বেও এ ব্যাপারে কারো দ্বিমত নেই যে, হুযুর আলাইহিস সালাম প্রকৃত জীবনেই (কোনরূপ রূপক ও ব্যবহারিক অর্থে যে জীবন, তা নয়) স্থায়ীভাবি বিরাজমান ও বহাল তবীয়তে আছেন। তিনি উম্মতের বিশিষ্ট কর্মকাণ্ড সম্পর্কে জ্ঞাত ও সেগুলোর প্রত্যক্ষদর্শী রূপে বিদ্যমান তথা হাযির-নাযির। তিনি হকীকত অন্বেষনকারী ও মহান দরবারে নবুয়াতির শরণাপন্নদের ফয়েযদাতা ও মুরুব্বীরূপে বিদ্যমান আছেন।

সুত্র : আবদুল হক মুহাদ্দিছ দেহলবী (رحمة الله) : কিতাব : سلوك اقرب السبل بالتوجه الى سيد الرسل

❏ প্রাচ্যের বুখারী খ্যাত শেখ আব্দুল হক মোহাদ্দেস দেহলবী (رحمة الله) বর্ণনা করেছেন :-

ﺍﮔﺮ ﺑﻌﺪ ﺍﺯﺍﻥ ﮔﻮﯾﻨﺪ ﮐﮧ ﺣﻖ ﭘﻌﺎﻟﯽ ﺟﺴﺪ ﺷﺮﯾﻒ ﺭﺍﺣﺎﻟﺘﮯ ﻭﻗﺪﺭ ﺗﮯ ﺑﺨﺸﯿﺪﮦ ﺍﺳﺖ ﮐﮧ ﺩﺭ ﮬﺮ ﻣﮑﺎﻧﮯ ﮐﮧ ﺧﻮﺍﮬﺪ ﺗﺸﺮﯾﻒ ﺑﺨﺸﺪ ﺧﻮﺍﮦ ﺑﺜﺎﻝ ﺑﻤﺜﺎﻟﮯ ﺧﻮﮦ ﺑﻌﯿﻨﯿﮧ ﺧﻮﺍﮦ ﺑﺮ ﺍﺳﻤﺎﻥ ﺧﻮﺍﮦ ﺑﺮ ﺯﻣﯿﻦ ﺧﻮﺍﮦ ﺩﺭ ﻗﺒﺮ ﯾﺎ ﻏﯿﺮﻭﻋﮯ ﺻﻮﺭﺗﮯ ﺩﺍﺭﺩﺑﺎ ﺟﻮ ﺩﺛﺒﻮﺕ ﻧﺴﺒﺖ ﺧﺎﺹ ﺑﻘﺒﺮ ﺩﺭﮬﻤﮧ ﺣﺎﻝ

যদি বলা হয় যে আল্লাহ তাআলা হুযুর দঃ এর পবিত্র শরীরে এমন এক অবস্হার সৃষ্টি করেছেন ও এমন এক শক্তি দান করেছেন যে তিনি কোন শরীর ধারণ করে অনায়াসে গমন করতে পারেন , কবরের মধ্যে হোক বা আসমানের উপর হোক , এ ধরণের কথা সঠিক ও বাস্তবসম্মত। তবে সর্বাবস্হায় কবরের সাথে সম্পর্ক বজায় থাকে। মাদারেজুন নবুয়ত খন্ড ২ পৃঃ ৪৫০

❏ ঈমাম জালাল উদ্দীন সুয়ুতী (رحمة الله) বলেন :

ﺍﻟﻨﻈﺮ ﻓﻲ ﺍﻋﻤﺎﻝ ﺍﻣﺘﻪ ﻭﺍﻻﺳﺘﻐﻔﺎﺭ ﻟﻬﻢ ﻣﻦ ﺍﺳﻴﺌﺎﺕ ﻭﻟﺪﻋﺎﺀ ﺑﻜﺸﻒ ﺍﻟﺒﻼﺀ ﻋﻨﻬﻢ ﻭﻟﺘﺮﺩﺩ ﻓﻲ ﺍﻗﻄﺎﺭ ﺍﻻﺭﺽ ﻭﺍﻟﺒﺮﻛﺔ ﻓﻴﻬﺎ ﻭ ﺣﻀﻮﺭ ﺟﻨﺎﺯﺓ ﻣﻦ ﺻﺎﻟﺤﻲ ﺍﻣﺘﻪ ﻓﺎﻥ ﻫﺬﻩ ﺍﻻﻣﻮﺭ ﻣﻦ ﺍﺷﻐﺎﻟﻪ ﻛﻤﺎﻭﺭﺩﺕ ﺑﺬﺍﻟﻚ ﺍﻟﺤﺪﻳﺚ ﻭﺍﻻﺛﺎﺭ

উম্মতের বিবিধ কর্ম , তাদের পাপরাশির ক্ষমা প্রার্থনা করা ,তাদেরকে বালা মুসিবত থেকে রক্ষা করার জন্য দোআ করা ,পৃথিবীর একপ্রান্ত হদে অন্য প্রান্তে আনাগোনা করা ও বরকত দান করা এবং নিজ উম্মতের কোন ধেক বান্দাহর ওফাত হলে তার জানাযাতে অংশগ্রহণ করা এগুলো হচ্ছে রাসূল দঃ এর সখের কাজ।কোন কোন হাদিস থেকেও এসব কথার সমর্থন পাওয়া যায়। ইনতেবাহুল আযকিয়া ফি হায়াতিল আউলিয়া ,পৃষ্ঠা ৭

❏ ইমাম ইবনুল হাজ্জ ও ইমাম কুসতালানী (رحمة الله) বর্ণনায় লিখেছেনঃ

وَقَدْ قَالَ عُلَمَاءُ نَالَا فَرْقَ بَيْنَ مَوْتِه وَحَيو تِه عَلَيْهِ السَّلَامُ فِىْ مُشَاهِدَ تِه لِاُمَّتِهِ وَمَعرِ فَتِه بِاَحْوَ الِهِمْ وَنِيَّا تِهِمْ وَعَزَائِمِهِمْ وَخَوَاطِرِ هِمْ وَذلِكَ جَلِىٌّ عِنْدَهُ لَاخَفَاءَبِه

আমাদের সু-বিখ্যাত উলামায়ে কিরাম বলেন যে, হুযুর আলাইহিস সালামের জীবন ও ওফাতের মধ্যে কোন পার্থক্য নেই। তিনি নিজ উম্মতকে দেখেন, তাদের অবস্থা, নিয়ত, ইচ্ছা ও মনের কথা ইত্যাদি জানেন। এগুলো তার কাছে সম্পূর্ণরূপে সুস্পষ্ট কোনরূপ অস্পষ্টতা ও দুর্বোধ্যতার অবকাশ নেই এখানে।

সুত্র :

* ইমাম ইবনুল হাজ্জ مدخل গ্রন্থে

* ইমাম কুসতালানী (رحمة الله) مواهب  (মাওয়াহিব) গ্রন্থের ২য় খণ্ডের ৩৮৭ পৃষ্ঠায় ২য় পরিচ্ছেদে زيارة قبره شريف শীর্ষক বর্ণনা

❏ মোল্লা আলী কারী (رحمة الله) বলেনঃ-

وَقَالَ الْغَزَ الِىْ سَلِّمْ عَلَيْهِ اِذَا دَخَلْتَ فِى الْمَسْجِدِ

فَاِنَّهُ عَلَيْهِ السَّلَامُ يَحْضُرُ فِى الْمَسَجِدِ

ইমাম গাযযালী (رحمة الله) বলেছেন, আপনি যখন মসজিদে প্রবেশ করবেন, তখন হুযুর আলাইহিস সালামকে সশ্রদ্ধ সালাম দিবেন। কারণ তিনি মসজিদসমূহে বিদ্যমান আছেন।

সুত্র : মিশকাত শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ মিরকাতে মোল্লা আলী কারী (رحمة الله)

❏ ইয়াম কাযী আরায (رحمة الله) উল্লেখ করেন :-

আম্বিয়ায়ে কিরাম (আলাইহিস সালাম) শারীরিক ও বাহ্যিক দিক থেকে মানবীয় বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন তবে, আভ্যন্তরীণ ও রূহানী শক্তির দিক থেকে ফিরিশতাদের বৈশিষ্ট্যমন্ডিত। এ কারণেই তাঁরা পৃথিবীর পূর্ব ও পশ্চিম প্রান্তসমূহ দেখতে পান, আসমানের চিড়চিড় আওয়াজ শোনেন এবং হযরত জিব্রাইল (আলাইহিস সালাম) তাদের নিকট অবতরণের ইচ্ছা পোষণ করতেই তার সুঘ্রাণ পেয়ে যান।

সুত্র : ইয়াম কাযী আরায (رحمة الله) : শিফা শরীফের ব্যাখ্যা গ্রন্থ নসীমুর রিয়ায এর ৩য় খণ্ড

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment