যমযম কূপের ইতিহাস
যমযম কূপের ইতিহাস পর্ব ১ কথিত আছে, যখন হযরত সায়্যিদা হাজেরার গর্ভে হযরত ইরাহীম (আ) এর পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ) জন্মগ্রহণ করলেন, তখন তাঁর ললাটে নূরে মুহাম্মদী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম দীপ্ত দেখা যাচ্ছিল । তখন হযরত ইবরাহীম (আ এর অন্য স্ত্রী হযরত সারা তাতে খুবই বিদ্বেষ পােষণ করতে লাগলেন । হযরত হাজেরা ও তার পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ) কে মােটেই সহ্য করতে পারতেন । কারণ, তাঁর কোন সন্তান ছিল না। কাজেই সতিনের গর্ভে নূরে মুহাম্মদী সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বহনকারী কোন সন্তান তিনি পসন্দ করতেন অবশেষে তিনি হযরত ইবরাহীমের নিকট হযরত হাজেরা ও পুত্র হযরত সমাঈল (আ) কে জনমানবশূন্য কোন মরুভূমিতে বনবাসে পাঠাতে আবদার করলেন।
হযরত ইবরাহীম (আ) কে স্ত্রীর মনস্তুষ্টি অর্জনের নির্দেশ দেওয়া হল । অতঃপর তিনি হযরত হাজেরা ও পুত্র ইসমাঈলকে ফেলে এমনই স্থানে আসলেন, পরবর্তীকালে যা হারামে মক্কা হিসাবে খ্যাতি লাভ করেছে । একটি টিলার উপর তাদের বসবাসের স্থান নির্বাচন করলেন । পরবর্তীকালে সেখানে কাবাগৃহ নির্মিত হয়েছে!
তাদের পানাহারের জন্য সামান্য খেজুর ও এক মশক পানি রেখে হযরত ইবরাহীম (আ) তাদিগকে আল্লাহর হাতে সােপর্দ করে চলে গেলেন। এখানে হযরত হাজেরা উক্ত খেজুর ও পানি দ্বারা পানাহার করতেছিলেন এবং হযরত ইসমাঈলকে তার বুকের দুধ দ্বারা প্রতিপালন করতেছিলেন । অবেশেষে একদিন খেজুর ও পানি নিঃশেষ হয়ে গেল পানির অভাবে মাতা পুত্র উভয়ই কাতর হয়ে পড়লেন ।
হযরত ইসমাঈল পিপাসায় ছটফট
অধিকন্তু হযরত ইসমাঈল পিপাসায় ছটফট করতেছিলেন। তখন হযরত হাজেরা অস্থির হয়ে এদিক সেদিক দৌড়িয়ে পানির অনুসন্ধান করতে করতে সাফা পাহাড়ের উপরে আসলেন । এখানে কোন সাহায্যকারীর আশায়
কিছুক্ষণ অপেক্ষার করার পর আবার নীচে নেমে আসলেন এবং মারওয়া পাহাড়ে আরােহণ করে পানির অনুসন্ধান করতে লাগলেন এরূপে সাতবার তিনি সাফা পাহাড়ে এবং সাতবার মারওয়া পাহাড়ে আরােহণ করেছিলেন।
প্রত্যেক বারই তিনি পাহাড় হতে অবতরণ করে হযরত ইসমাঈলের নিকট এসে তাকে দেখে আবার দৌড়াতেন। অবশেষে তিনি দেখেন যে, পানির পিপাসায় হযরত ইসমাঈলের প্রাণ ওষ্ঠাগত, তবু তিনি পানির আশায় মারওয়া পাহাড়ে উঠলেন। এবার যখন তিনি মারওয়া পাহাড়ে আরােহণ করলেন, তখন শুনলেন, কে যে
বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের শুভাগমন। বলতেছে, আমি তােমার ফরিয়াদ শুনেছি। তুমি ফিরে আস। তিনি ফিরে এসে। দেখলেন, একটি লােক হযরত ইসমাঈলের সামনে দণ্ডায়মান । তিনি ছিলেন।
হযরত জিবরাঈল (আ) । তারপর হযরত জিবরাঈল (আ) স্বীয়, বাহু দ্বারা মাটিতে।
আঘাত করলেন। মাটি হতে পানি স্রোত প্রবাহিত হতে লাগল। হযরত হাজেরা। পানি নিঃশেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা করে সে পানির চতুর্দিকে মাটির বাঁধ নির্মাণ করে দিলেন। তা একটি হাউযের ন্যায় হয়ে গেল ।
বাঁধ নির্মাণ করে পানি রােধ
হযরত সায়্যিদা হাজেরা যে স্থানে বাঁধ নির্মাণ করে পানি রােধ করেছিলেন, তা ই মূল যমযম কূল্প । রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, আল্লাহ তা’আলা হযরত ইসমাঈল (আ) এর মাতা হযরত হাজেরার প্রতি রহম করুন। যদি তিনি যমযম কুপের পানি রােধ করার উদ্দেশ্যে বাঁধ নির্মাণ না করতেন, তবে যমযমের পানিতে সারা বিশ্ব সয়লাব হয়ে যেত !
তার পর হযরত হাজেরা ও ইসমাঈল (আ) যমযমের পানি পান করতে থাকলেন। এ পানির বৈশিষ্ট্য ছিল, তার একাধারে পিপাসাও দূর করে, ক্ষুধা নিবারণ করে । দুধের নায় তা পান ও আহার উভয় ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়। তার স্বাদ উষ্ট্রের দুধের ন্যায় । হযরত হাজেরা ও ইসমাঈল দীর্ঘদিন পর্যন্ত এ অবস্থায় দিন অতিবাহিত করেন। অতঃপর জুরহুম গােত্রের লােকেরা পানির সন্ধানে এখানে এসে পৌছিল এবং পানি দেখে এখানেই তারা
বসতি স্থাপন করল ।
হযরত ইসমাঈল (আ) জুরহুম গােত্রেই প্রতিপালিত হতে লাগলেন । তিনি বয়ঃপ্রাপ্ত হলে জুহুম গােত্রেই বিবাহ করেন। এ স্ত্রীর গর্ভে তার কয়েকটি সন্তান জন্মগ্রহণ করে। হযরত ইবরাহীম (আ) হযরত সারার অনুমতি নিয়ে মাঝে মাঝে তাদের খোজ খবর নেওয়ার জন্য বুরাকে চড়ে সিরিয়া হতে মক্কায় আগমন করতেন।
তিনি চাশতের সময় হযরত সারার নিকট হতে মক্কা শরীফে চলে যেতেন এবং দ্বিপ্রহরের বিশ্রামের পর আবার সারার নিকট প্রত্যাবর্তন করতেন।
কাবাগৃহ নির্মাণের নির্দেশ
দীর্ঘ এক যুগ পর আল্লাহ তা’আলা হযরত ইবরাহীমকে কাবাগৃহ নির্মাণের নির্দেশ দিলেন । তিনি পুত্র ইসমাঈলের সহযােগিতায় যে টিলার উপর যে স্থানে প্রথমে হযরত হাজেরা ও ইসমাঈলকে রেখে গিয়েছিলেন, সেখানে কা’বাঘরের ভিত্তি স্থাপন করলেন ।
ইতিপূর্বে আল্লাহ তা’আলা বেহেশতের ইয়াকুত নির্মিত একটি ঘরে হযরত আদম (আ) এর জন্য অবতরণ করেছিলেন। সে ঘরের পূর্ব ও পশ্চিম দিকে যমরদের দুই দ্বার ছিল । হযরত আদমকে এ ঘরের তাওয়াফ করতে নির্দেশ দিলেন,
আসমানের ফেরেশতাগনকে যেভাবে তাওয়াফ করতে দেখেছ, তুমি ও পৃথিবীতে বায়তুল হারাম নির্মাণ করে অনুরূপভাবে তার তাওয়াফ কর । তার পর হযরত আদম (আ) প্রত্যেক বৎসরই ভারত হতে বায়তুল্লাহর তাওয়াফ করার উদ্দেশ্যে এখানে আগমন করতন ।
যমযম কূপের ইতিহাস পর্ব ৩
নিকটবর্তী বধ্যভূমিতে নিয়ে চললেন। সে এক মর্মান্তিক দৃশ্য । আব্দুল মুত্তালিবের। এক হস্তে সুতী খঞ্জর, অপর হস্তে ধরে চলেছেন প্রাণপ্রিয় পুত্র । আব্দুল্লাহকে। কুরাইশ গােত্রের লােকেরা এ সংবাদ শুনল আব্দুল্লাহকে কোরবানি দেয়া হচ্ছে ।
তারা এসে আব্দুল মুত্তালিবকে তার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়িত করতে বাধা দিল । বিশেষত আত্মীয় স্বজনগণ তার তীব্র বিরােধিতা করতে লাগল। অতঃপর তারা তাকে হিজাযের সব চাইতে প্রসিদ্ধ জ্যোতিষী রমণীর নিকট নিয়ে গেল । সে সময় পর্যন্ত জিন জাতির আকাশে যাতায়াত অবারিত ছিল।
তারা আকাশে গিয়েউর্ধ্বকাশের গােপন তথ্য চুরি করে শুনিয়ে আসত এবং সে প্রেক্ষিতে কাজ করার
জন্য জ্যোতিষিগণকে পরামর্শ দিত। আব্দুল মুত্তালিব জ্যোতিষী মহিলার নিকট আদ্যোপান্ত ঘটনা বিবৃত করলেন। মহিলা বলল, আজ চলে যাও, আমি আমার জিনের সঙ্গে এ ব্যাপারে পরামর্শ করে কি করতে হবে ঠিক করে লই । তােমরা আগামীকাল আসও ।
দ্বিতীয় দিন
দ্বিতীয় দিন যখন তারা জ্যোতিষীর নিকট উপস্থিত হল, তখন সে বলল, তােমাদের নিকট একটি লােকের মৃত্যুপণ কয়টি উট দ্বারা পরিশােধ করতে হয়? তারা বলল, দশটি উট দ্বারা । তখন সে বলল, দশটি উটের
মুকাবিলায় বালককে রেখে লটারী কর। যদি উটের নাম উঠে, তবে উট কুরবানী কর। আর যদি বালকের নাম উঠে, তবে উটের পূর্ব সংখ্যার সঙ্গে সমসংখ্যক আরও উট যােগ করে পুনরায় লটারী কর । যদি এবারও উটের পরিবর্তে বালকের নাম উঠে, তবে পূর্ব সংখ্যার সাথে আরও দশটি উট যােগ কর।
এরূপে প্রত্যেকবার উটের সংখ্যা বৃদ্ধি করে যাও, যতক্ষণ না বালকের নামের পরিবর্তে উটের নাম উঠে। যখন উটের নাম লটারীতে উঠবে, তখন সে উটগুলি কুরবানী করে দাও। এ পরিমাণ উটই হবে তার মুক্তিপণ । অতঃপর আব্দুল মুত্তালিব কুরাইশ গােত্রের লােকজন নিয়ে ফিরে আসলেন এবং কা’বাঘরের নিকট
আসআফ ও নাইলার পার্শ্বে বধভূমিতে এসে আব্দুল্লাহর উটের মধ্যে লটারীর ব্যবস্থা করলেন। একাদিক্রমে উটের সংখ্যা যখন একশত পৌছিল তখন লটারীতে আব্দুল্লাহর নামের পরিবর্তে উটের নাম উঠল । কিন্তু তাতে আব্দুল
মুত্তালিবের অন্তরে প্রশান্তি আসল না ।
কাজেই পুনরায় লটারী দেওয়া হল । এবারও লটারীতে উটের নাম উঠল। এখন আব্দুল মুত্তালিব প্রশান্তি লাভ করলেন এবং তিনি আল্লাহর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করলেন। এরূপে আব্দুল্লাহ মৃত্যুর ধার্য হল
একশত উট । অথচ ইতিপূর্বে মুক্তিপণ ছিল দশটি উট । ইসলামের যুগে ইসলামী শরীআয়ারও এ বিধি ব্যবস্থাই বহাল রয়েছে। এ হিসাবেই রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলতেন, আমি দুই যবেহের সন্তান। অর্থাৎ হযরত ইসমাঈল (আ) ও আব্দুল্লাহ ।
মাওয়াহিব গ্রন্থকার বলেন, আল্লামা যামাখশারী তাঁর প্রখ্যাত তাফসীরে কাশশাফে হাকিম মুস্তাদরিকের বরাত দিয়ে হযরত মুআবিয়া রা. হতে একটি ভাষ্য বর্ণনা