মৃত ব্যক্তিকে জীবন দান
একদিন দুইজন লােক ধর্ম ও নবী সম্বন্ধে তর্ক-বিতর্ক করিতেছিল, তাহাদের মধ্যে একজন ছিল মুসলমান ও অপরজন খ্রিস্টান। মুসলমান লােকটি বলিল- আমাদের ধর্মই সত্য এবং আমাদের নবীই শ্রেষ্ঠ । কারণ, আমাদের নবী এমন একজন ব্যক্তি, যিনি যাবতীয় নবীর সরদার যাঁহাকে সৃষ্টি না করিলে আল্লাহ তাআলা আসমান-জমিন, চন্দ্র-সূর্য, গ্রহ-নক্ষত্র, গাছ-পালা, পাহাড়-পর্বত প্রভৃতি কোন কিছুই সৃষ্টি করিতেন না।
যাঁহার উপাধি রাহমাতুললিল আলামীন আমরা সেই মহান নবীর উম্মত, যিনি মে’রাজের রাত্রিতে আল্লাহর আরশ পর্যন্ত গমন করেন এবং সাক্ষভাবে আল্লাহর সহিত কথােপকথন করেন। আমাদের মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ)-এর সহিত অন্য কোন নবীরই তুলনা হয় না এবং তাঁহার প্রচারিত ইসলাম ধর্মের সহিত অন্য কোন ধর্মেরও তুলনা হয় না।
মুসলমান ব্যক্তির কথার উত্তরে লােকটি বলিল বিনা পিতায় শুধু আল্লাহর কুদরতী ইচ্ছায় যাঁহার জন্য তিনি মাত্র দুদিন বয়সের সময় স্বীয় মাতার সতীত্ব ও নিজের নবুয়ত সম্বন্ধে সাক্ষ্য প্রদান করিয়াছেন, যিনি হাজার হাজার অস্ত্র, আঙ্গুর, কানা-খােড়া, ল্যাংড়া-লুলা ও দুরারােগ্য কুষ্ঠ রােগীকে শুধু মুখের কথায় আরােগ্যকরিয়াছেন, যিনি শত শত মৃত লােককে জীবিত করিয়াছেন, তাঁহার তুলনা অন্য কোন নবীর সঙ্গে চলিতেই পারে না।
কেবল মুখের জোরে একজনকে শ্রেষ্ঠ বলিলেই তো আর তাহাকে শ্রেষ্ঠ বলিয়া মানিয়া লওয়া যায় না। উপযুক্ত প্রমাণের আবশ্যক। তােমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) কবে কয়জন মৃত মানুষকে জীবিত করিয়াছেন, তাহার প্রমাণ দিতে পারিবে কি? মুসলমান লােকটি খ্রিস্টান ব্যক্তির সহিত তর্কে খুব সুবিধা করিয়া উঠিতে পারিতেছিল না, কারণ, মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) সম্বন্ধে তাহার বেশী কিছু জানা ছিল না। বিশেষতঃ সে খ্রিষ্টান লােকটির মত তর্কে তেমন পটুও ছিল না, পক্ষান্তরে খ্রিষ্টান লােকটি ছিল খুব বিদ্বান ও ভাকীক। অনেকক্ষণ পর্যন্ত উভয়ে তক করিবার পর মুসলমান ব্যক্তি তর্কে প্রায় পরাজিত হইবার উপক্রম হইল। ঠিক এমন সময় হযরত বড় পীর সাহেব সেই রাস্তায় গমন করিতেছিলেন।
হযরত বড় পীর
তিনি তাহাদের উভয়ের তর্ক শুনিয়া এবং মুসলমান পরাজিত হওয়ার উপক্রম দেখিয়া সেখানে দাঁড়াইয়া খ্রিস্টানকে সম্বােধন করিয়া বলিলেন- ওহে। আমাদের শেষ নবীর এত অধিক পরিমাণে মাে’জ্যে আছে যে, দুনিয়ার যাবতীয় নবীর মাে’জে একত্রিত করিলেও তাহার সমান হইবে না। তিনিও অনেক মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করিয়াছেন, বহু মৃত ব্যক্তি কবর হইতে তাহার সহিত কথােপকথন করিয়াছে তাহার প্রশ্নের উত্তর দিয়াছে।
তিনি তাে দূরের কথা, তাঁহার উম্মতের মধ্যে আজ পর্যন্ত এমন অনেক লােক বিদ্যমান আছেন, যাহারা মৃত লােকদিগকে জীবিত করিতে পারেন। হযরত ঈসা (আঃ) যে সত্য নবী ছিলেন তাহাও আমি স্বীকার করি। কিন্তু তিনি যে, সর্বশ্রেষ্ঠ নবী ছিলেন, তাহা আমি কিছুতেই স্বীকার করি না। কারণ হযরত ঈসা (আঃ) নিজেই শেষ নবীর শ্রেষ্ঠত্ব সম্বন্ধে সাক্ষ্য প্রদান করিয়া গিয়াছেন। শুন, তােমাদের খ্রিষ্টানদের মধ্যে এমন
কোন ব্যক্তি এখন বিদ্যমান আছে কি, যে মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করিতে পারে? আমি ততা শেষ নবীর একজন উম্মত, আমিও মৃত ব্যক্তিকে কিছুক্ষণের জন্য জীবিত করিয়া তাহার সহিত বাক্যালাপ করিতে পারি। তােমার সেইরূপ কোন সামর্থ আছে কি?
হযরত বড় পীর সাহেব তাহাকে বলিলেন- তুমি আমার সঙ্গে আস, আমরা একটা কবরস্তানে গমন করি। উহার মধ্যে তােমার নির্দেশ মত যে কোন একটি মানুষকে জীবিত করিয়া তাহার কথা তােমাকে শুনাইব। খ্রিস্টান ধর্মযাজক বিনা বাক্যব্যয়ে হযরত বড় পীর সাহেবের সঙ্গে একটি গােরস্তানে উপস্থিত হইল। খ্রিস্টান ব্যক্তিটির নির্দেশ মত হযরত বড় পীর সাহেব একটা বহুদিনের পুরাতন কবরের নিকটে দাঁড়াইয়া বলিলেন-“কুম বিইজনিল্লাহ,” অর্থাৎ কবরবাসী! তুমি আল্লাহর আদেশে জীবিত হইয়া উঠো।
হযরত বড় পীর সাহেবের
তৎক্ষণাৎ কবরটির একদিকে ফাটিয়া গেল এবং উহার ভিতর হইতে একজন লােক বাহির হইয়া আসিয়া হযরত বড় পীর সাহেবকে সালাম করিয়া জিজ্ঞাসা করিল।
-হুজুর! কি জন্য আমাকে আহবান করিয়াছেন? তিনি জিজ্ঞাসা করিলেন তুমি কতদিন পূর্বে দুনিয়া হইতে চলিয়া গিয়াছ? সে উত্তর করিল– একশত বৎসর। হযরত বড় পীর সাহেব বলিলেন বেশ, তুমি এখন চলিয়া যাইতে পার। লােকটি আবার
কবরের ভিতরে চলিয়া গেল। হযরত বড় পীর খ্রিস্টান পাদরীটিকে বলিলেন— আমি মহানবী হযরত মুহাম্মদ(সাঃ)-এর একজন সামান্য উম্মত, আমাকে যদি আল্লাহ তাআলা মৃত মানুষকেজীবিত করার ক্ষমতা প্রদান করিয়া থাকেন, তবে কিরূপে তুমি বলিতে পার যে, আমাদের মহানবীর সেইরূপ ক্ষমতা ছিল না? খ্রিষ্টান লােকটি বুঝিতে পারিল যে, মৃত ব্যক্তিকে জীবন দান
সত্যই ইসলামই একমাত্র সত্যধর্ম। সে আর কোন দ্বিরুক্তি না করিয়া তখনই হযরত বড় পীর সাহেবের নিকট ইসলাম ধর্মে দীক্ষিত হইল।