*জান্নাতী দল তথা সুন্নী জামা’আত কারা?* [পোষ্ট-২৭]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

লেখক: অধ্যক্ষ মওলানা মুহাম্মদ আবদুল করীম নঈমী

সম্পাদনা: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

সুতরাং মুসলমানবৃন্দ উক্ত ওয়াসেল ও তার অনুগামীদের সাথে সম্পর্কচ্ছেদ করলেন এবং তাদেরকে আপন জামা’আত থেকে এমনভাবে বের করে দিলেন, যেমনটি দুধ হতে মাছি দূর করে দেয়া হয়। এ কারণে তারা মু‘তাযেলা ফের্কা নামে পরিচিত হয়। একইভাবে, খারেজী ও রাফেযী গোষ্ঠী দুটোও নিজ নিজ বদ-আকীদা পোষণের ভিত্তিতে আলাদা হয়ে যায়। ওই সময়ই ফের্কাবন্দী ও দলাদলি সৃষ্টির সূচনা হয়। এভাবে ক্রমাগত আলাদা হতে হতে এবং নানা দল-উপদলের উৎপত্তি হতে হতে গোমরাহ/পথভ্রষ্ট লোকেরা ৭২ ফের্কায় উপনীত হয়। সওয়াদে আজম শীর্ষক মুসলমানদের বৃহত্তম ঐতিহ্যবাহী দলটি সিরাতুল মুস্তাকীম-এর উপর বহাল থাকেন, যে সরল-সোজা পথের উপর কায়েম ছিলেন আমাদের প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ও তাঁর সাহাবায়ে কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম)। এঁরাই আহলে সুন্নাত ওয়াল জামা’আত। এঁদের ক্ষেত্রেই – ما انا عليه واصحابي – (আমি ও আমার সাহাবা যে আকীদা-বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত) হাদীসটির মর্মবাণী প্রযোজ্য।

উপরোক্ত হাদীসের দ্বিতীয় আরেকটি (সংস্করণের) বর্ণনা এসেছে সর্ব-ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও আবূ দাউদ (রহমতুল্লাহি আলাইহিমা) হতে:

أبو داود:٤٥٩٧ – حَدَّثَنَا أَحْمَدُ بْنُ حَنْبَلٍ وَمُحَمَّدُ بْنُ يَحْيَى قَالاَ حَدَّثَنَا أَبُو الْمُغِيرَةِ حَدَّثَنَا صَفْوَانُ، وَحَدَّثَنَا عَمْرُو بْنُ عُثْمَانَ حَدَّثَنَا بَقِيَّةُ قَالَ حَدَّثَنِي صَفْوَانُ نَحْوَهُ قَالَ حَدَّثَنِي أَزْهَرُ بْنُ عَبْدِ اللَّهِ الْحَرَازِيُّ عَنْ أَبِي عَامِرٍ الْهَوْزَنِيِّ عَنْ مُعَاوِيَةَ بْنِ أَبِي سُفْيَانَ أَنَّهُ قَامَ فِينَا فَقَالَ: أَلاَ إِنَّ رَسُولَ اللَّهِ ﷺ قَامَ فِينَا فَقَالَ أَلاَ إِنَّ مَنْ قَبْلَكُمْ مِنْ أَهْلِ الْكِتَابِ افْتَرَقُوا عَلَى ثِنْتَيْنِ وَسَبْعِينَ مِلَّةً وَإِنَّ هَذِهِ الْمِلَّةَ سَتَفْتَرِقُ عَلَى ثَلاَثٍ وَسَبْعِينَ ثِنْتَانِ وَسَبْعُونَ فِي النَّارِ وَوَاحِدَةٌ فِي الْجَنَّةِ وَهِيَ الْجَمَاعَةُ زَادَ ابْنُ يَحْيَى وَعَمْرٌو فِي حَدِيثَيْهِمَا وَإِنَّهُ سَيَخْرُجُ مِنْ أُمَّتِي أَقْوَامٌ تَجَارَى بِهِمْ تِلْكَ الأَهْوَاءُ كَمَا يَتَجَارَى الْكَلْبُ لِصَاحِبِهِ وَقَالَ عَمْرٌو الْكَلْبُ بِصَاحِبِهِ لاَ يَبْقَى مِنْهُ عِرْقٌ وَلاَ مَفْصِلٌ إِلاَّ دَخَلَهُ.

অর্থ: ইমাম আবূ দাউদ, হাদীস নং ৪৫৯৭ (আন্তর্জাতিক) – [ইসনাদ-১] সর্ব-ইমাম আহমদ বিন হাম্বল ও মুহাম্মদ বিন ইয়াহইয়া > আবূল-মুগীরাহ > সাফওয়ান; [ইসনাদ-২] সর্ব-ইমাম আমর বিন উসমান > বাকিয়্যাহ > সাফওয়ান > আজহার বিন আবদিল্লাহ আল-হারাযী > আবূ আমির আল-হাওযানী > মু‘আবিয়াহ ইবনে আবী সুফিয়ান (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু); তিনি (আমীরে মু’য়াবিয়া রা.) একবার আমাদের মাঝে দাঁড়িয়েছিলেন এবং বলেন, সতর্ক হও, প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাদের মাঝে দণ্ডায়মান ছিলেন এবং তিনি ফরমান, “সতর্ক হও, আহলে কিতাব (ইহুদী সম্প্রদায়) ৭২ দলবিভক্ত হয়েছে; আর এই মিল্লাত (মানে আমার উম্মত) বিভক্ত হবে ৭৩ দলে। তার মধ্যে ৭২টি দলই জাহান্নামী এবং একটি বেহেশতী। এই বেহেশ্তী দলটির নাম জামা’আত (বৃহত্তম দল)।“ ইবনে ইয়াহইয়া ও ’আমর তাঁদের বর্ণনায় যোগ করেন: ”নিশ্চয় আমার উম্মতের মধ্যে এমন দলসমূহ বের হবে যে, তাদের অন্তঃস্থ বদ-আকীদা/বিশ্বাস ও নফসানী খায়েশ/কুপ্রবৃত্তি এমনভাবে সংক্রমিত হবে যেমনটি পাগলা কুকুরের বিষ সংক্রমিত হয় দংশিত ব্যক্তির মধ্যে। মন্দ আকীদা ও কুরিপু-সমূহ ওই গোমরাহ লোকদের প্রতিটি নাড়ি-নক্ষত্রে ও প্রত্যেক জোড়ায় জোড়ায় সংক্রমিত হবে।”

হাদীসটিতে বদ-আকীদা ও গোমরাহীকে কুকুরের সাথে তুলনা করা হয়েছে। – الْكَلْبُ (জবরবিশিষ্ট) বলা হয় সেই রোগব্যাধিকে যা পাগলা কুকুর কামড় দিলে মানুষের মাঝে দেখা দেয় এবং এ ব্যাধিগ্রস্ত ব্যক্তির গোটা শরীরের অভ্যন্তরে সংক্রমিত হয়। তখন অবস্থা এমন খারাপ আকার ধারণ করে যে, এ রোগী অপর কাউকে দংশন করলে সেও এ রোগাক্রান্ত হয়। এর লক্ষণ অধিক পিপাসা। কিন্তু পানির দিকে সে দৃষ্টিপাতও করতে পারে না। যদি পানির দিকে চোখ পড়ে, তাহলে তার আর্তনাদ আরম্ভ হয়। নিজেকে নিয়ন্ত্রণের শক্তি সে হারিয়ে ফেলে। অনেক সময় প্রচণ্ড পিপাসার তাড়নায় সে মৃত্যুমুখে পতিত হয়। তবুও সে পানি সহ্য করতে পারে না। [সম্পাদকের নোট: পাগলা কুকুর কামড়ালে তৎক্ষণাৎ এন্টি-রেইবিস্ ভ্যাকসিন দিতে হবে। নতুবা মৃত্যু নিশ্চিত।]

প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ওই পথভ্রষ্ট দলগুলোকে পাগলা কুকুর কর্তৃক দংশিত রোগীর সাথে তুলনা করেছেন এ জন্যে যে, কুকুরের কামড়ের বিষক্রিয়া এমন প্রবল হয়, যার দরুন তা শরীরের প্রত্যেক শিরা-উপশিরায় এবং জোড়ায় জোড়ায় অনুপ্রবেশ করে থাকে। এ রোগাক্রান্ত ব্যক্তি অন্যকে কামড়ালে সেও একই ব্যাধিগ্রস্ত হয়। ঠিক তেমনি (পাগলা কুকুরের মতো) বদ-মাযহাবী গোমরাহদের (মন্দ আকীদাগত) বিষক্রিয়াও (দংশনে) আক্রান্ত অন্যান্য বিভ্রান্তদের মাঝে কুপ্রভাব সৃষ্টি করে, যা তাদের মনমানসিকতার রন্ধ্রে রন্ধ্রে সংক্রমিত হয় এবং তারাও ওই গোমরাহদের মতোই বদ-আকীদাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। কুকুরের কামড়ে আক্রান্ত ব্যক্তি যেমন তৃষ্ণার্ত হওয়া সত্ত্বেও পানি পান করতে অক্ষম হয় এবং তৃষ্ণার্ত অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে, ঠিক তেমনি বদ-আকীদাসম্পন্ন লোকেরাও হক্ব/সত্য-সঠিক রাস্তা গ্রহণ করে না। তারা মাহরূম (বঞ্চিত), আর মাহরূম-ই থেকে যায়। এই উপমার উদ্দেশ্য হলো, বদ-দ্বীন/মাযহাবী লোকের প্রতি ঘৃণা সঞ্চার করা। কেননা পাগলা কুকুর ও তার দংশিত ব্যক্তির প্রতি প্রত্যেক সুস্থ ইন্দ্রিয়াবলী-বিশিষ্ট মানুষের মনের মধ্যে ঘৃণা সৃষ্টি হয়। এটা বলার উদ্দেশ্য এই যে, যদি মুসলমান সুস্থ প্রকৃতি ও স্বভাব-সম্পন্ন কামেল/পূর্ণতাপ্রাপ্ত মু’মিন তথা ঈমানদার হন, তবে বদ-মাযহাবীদের প্রতি ঘৃণা বোধ করা তাঁর পক্ষে অপরিহার্য ও অবশ্যকর্তব্য। এতেই নিহিত ঈমানের হেফাজত। হাদীস শরীফের মাধ্যমে এটা জানা গেলো যে, বদ-মাযহাবী ও বদ-আকীদা খুব ধ্বংসাত্মক ও রূহানী/আত্মিক ব্যাধি ও সংক্রামক রোগ। এ রোগাক্রান্ত ব্যক্তি নিজের মতো অন্যদেরকেও ব্যাধিগ্রস্ত করে। এই জন্যে মুসলমানদের অবশ্যকর্তব্য হচ্ছে বদ-আকীদাসম্পন্ন লোকদের থেকে আত্মরক্ষা করা এবং তাদের থেকে পৃথক থাকাকে অপরিহার্য বিবেচনা করা; তাদের সংসর্গ ও বন্ধুত্বকে ঈমানের বিনাশ বলে জ্ঞান করা। তাই সবাই তাদের থেকে সদাসর্বদা দূরে থাকবেন এবং তাদেরকেও নিজেদের থেকে দূরে রাখবেন, ঠিক যেমন আরেকটি হাদীস শরীফে নির্দেশ এসেছে:

فَإِيَّاكُمْ وَإِيَّاهُمْ لاَ يُضِلُّونَكُمْ وَلاَ يَفْتِنُونَكُمْ.

অর্থ: তোমরা তাদের থেকে দূরে থাকো এবং তাদেরকেও নিজেদের থেকে দূরে রাখো, যাতে তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে ও ফিতনায় নিক্ষেপ করতে না পারে। [সহীহ মুসলিম, হাদীস নং ১৬ (আন্তর্জাতিক)]

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment