আজ হযরতে গাউছে পাক বড়পীর সাহেব কেবলা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর বেসাল বার্ষিকী পালন উপলক্ষে এক মীলাদ মাহফিলে যোগ দিয়েছিলাম। এটা আসলে (চন্দ্র) মাসিক ফাতিহা। যাহোক, যিকর-আযকারের সময় আমার মনে একটা চিন্তার উদয় হয়। এখানে তা নিয়ে সংক্ষেপে আলোকপাত করছি।
আমার মনে হয়েছে, দ্বীন-ইসলামে বিশ্বাস পুরোপুরি আধ্যাত্মিকতার উপর নির্ভরশীল। বাহ্যিক শরঈ দলিলপত্র যা কিতাবসমূহে লেখা হয়েছে, তা ওই আধ্যাত্মিকতাকে সমর্থন দেয়ার খাতিরেই লিপিবদ্ধ। কেননা, এ ধর্মপ্রচার প্রথম আরম্ভ করেন প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)। তাঁকে দেখেই মানুষ ধর্মান্তরিত হতে থাকেন। মানে তাঁর মধ্যে বিরাজমান আধ্যাত্মিকতা ও ঐশী ক্ষমতা দেখতে পেয়ে তাঁরা ইসলাম গ্রহণ করেন। তাঁদের প্রত্যক্ষকৃত ঘটনার অভিজ্ঞতা এরপর বইপত্রে লিপিবদ্ধ বা রেকর্ড হয়। অতএব, ধর্মপ্রচারকের সত্তা মুবারকে নিহিত ঐশী/আধ্যাত্মিক প্রভাব এক্ষেত্রে মুখ্য ভূমিকা পালন করে। এ প্রভাব আল্লাহতায়ালার নৈকট্যজনিত, এতে বিন্দুমাত্র সন্দেহের অবকাশ নেই।
একইভাবে, গাউছে পাক বড়পীর সাহেব কেবলা (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-ও বিশাল আধ্যাত্মিক ক্ষমতাধর সূফী-শাইখ হিসেবে সাধারণ মানুষের মাঝে সুগভীর প্রভাব বিস্তার করেন। তাঁকে দেখেই তাঁরা বুঝতে পারেন যে তিনি আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ওলী/বন্ধু। সুতরাং তাঁরা দলে দলে তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন (মানে মুরীদ হন)। আজমীর শরীফের গরীবে নওয়াজ হযরতে খাজায়ে মুঈনউদ্দীন চিশ্তী (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-ও তাঁর এলাকার মানুষের মনে একই রকম প্রভাব ফেলেন। আউলিয়া কেরাম (রহ.) যুগে যুগে এভাবেই সর্বসাধারণকে পথের দিশা দিয়েছেন, যা তাঁদের জীবনী রচয়িতাবৃন্দ বইপত্রে লিপিবদ্ধ করেছেন।
এক্ষণে জ্বলন্ত প্রশ্নটি হলো, পুণ্যাত্মা ধর্মপ্রচারকদের সত্তা মুবারকের প্রতি বিশ্বাস আগে, না বইপত্রের দলিলাদি আগে? আমার মনে হয়েছে, কলেমা-আকায়েদ, ফেক্বাহ, হাদীস, তাসাউফ ইত্যাদি শাস্ত্রের অধ্যয়ন জারি রেখেই স্বীকার করতে হবে যে আল্লাহর নৈকট্যপ্রাপ্ত ধর্মপ্রচারকদের সত্তা মুবারকের সোহবত/সান্নিধ্য এক্ষত্রে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত বিষয়। দলিলগুলো শুধু মানুষকে সহজভাবে বোঝাবার খাতিরেই। নতুবা বিশ্বাস বিনা দলিলে প্রতিষ্ঠিত হওয়া চাই। ব্যক্তিগত জীবনে সংঘটিত ঘটনার অভিজ্ঞতা থেকেই তা উৎসারিত। বস্তুতঃ আউলিয়া (রহ.)-এর উপস্থিতি ছাড়া ধর্মের প্রচার-প্রসার অবান্তর, বিশেষ করে বর্তমান যুগে বাতিলপন্থীদের দৌরাত্ম্য যেখানে সাধারণ মানুষকে দিশেহারা করে দিচ্ছে! কেননা তাদের কিতাবী ধর্মচর্চা তো মানুষকে ঐশী আলোর/নূরের দিশা দিচ্ছে না।
আমি সংক্ষেপে আমার উপলব্ধি এখানে ব্যক্ত করলাম। ইসলামী শরীয়তের দলিলাদিকে গৌণ করা আমার উদ্দেশ্য নয়। তা চর্চা বাধ্যতামূলক। তবে আমি মনে করি, এসব দলিল বুঝতে প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম), তাঁর সাহাবা কেরাম (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুম) ও আউলিয়া এজাম (রহমতুল্লাহি আলাইহিম)-বৃন্দের আধ্যাত্মিক সুনজর একান্ত জরুরি। নইলে বিভ্রান্তি গ্রাস করবে।
আল্লাহ আমাদেরকে উপলব্ধি করার তৌফীক দিন, আমীন।
*সমাপ্ত*





Users Today : 375
Users Yesterday : 767
This Month : 14797
This Year : 186668
Total Users : 302531
Views Today : 39522
Total views : 3616265