*জান্নাতী দল তথা সুন্নী জামা’আত কারা?* [পোষ্ট-৩১]

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

*জান্নাতী দল তথা সুন্নী জামা’আত কারা?* [পোষ্ট-৩১]

লেখক: অধ্যক্ষ মওলানা মুহাম্মদ আবদুল করীম নঈমী

সম্পাদনা: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন

অন্য একটি হাদীসের বর্ণনায় পাওয়া যায়: “যখন তোমরা বদ-মাযহাবী (বিদ’আতী)-দের দেখতে পাবে, তখন অত্যন্ত রাগান্বিত হয়েই দেখবে।”

হযরত আনাস্ বিন মালিক (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ঘোষণা করেছেন:

ربّ عابد جاهل، وعالم فاجر، فاحذروا.

অর্থ: “অনেক ইবাদতকারী জাহিল/অজ্ঞ-মূর্খ হয়ে যাবে এবং বহু আলেম ফাজির/দুষ্ট-বরবাদ হয়ে যাবে। অতএব, তোমরা তাদের থেকে সাবধান থেকো।”

হযরত ইবনু আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) হতে বর্ণিত আছে, “যে ব্যক্তি যে কাজের উপযুক্ত নয়, তাকে উক্ত কাজে নিযুক্ত করা যাবে না। যদি কোনো ব্যক্তি তা করে, তবে সে যেনো আল্লাহতায়ালা ও তাঁর রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এবং মুসলমানদের সাথে খেয়ানত তথা বিশ্বাস ভঙ্গ করলো।”

অন্য আরেকটি বর্ণনায় উল্লেখিত হয়েছে যে, এক ব্যক্তি হযরত আবদুল্লাহ বিন উমর (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু)-এর কাছে এসে বলে, ‘হে মহাত্মন, অমুক লোক আপনাকে সালাম জানিয়েছে।’ এর উত্তরে তিনি বলেন, ‘তোমার কি জানা আছে সে কোন্ বদ-মাযহাবী (বিদ’আতী)’র পথ আবিষ্কার করেছে? তা হয়ে থাকলে তাকে আমার (প্রত্যুত্তরসূচক) সালাম বোলো না।’ ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (রহমতুল্লাহি আলাইহ) বলেন, “বিদ’আতী ‘বদ-মাযহাবীকে সালাম বলা তাকে বন্ধুস্বরূপ গ্রহণ করারই নামান্তর।” পুরো বর্ণনাটির আরবী ইবারত নিচে:

من ابن عمر رضي الله عنهما أنه جاء رجل فقال إن فلانا يقرأ عليك السلام فقال بلغني أنه قد أحدث فإن كان قد أحدث فلا تقرأ عليه السلام ـ فا ما منا امام احمد بن حنبل قال من سلم على صاحب بدعة فقد حبه.

অপর এক বর্ণনায় এসেছে: একদিন এক বদ-মাযহাব অবলম্বনকারী (তার সাথে আবূ বকর নামে আরেকজনকে নিয়ে) ইমাম ইবনে সিরীন (রহমতুল্লাহি আলাইহি)-এর খেদমতে উপস্থিত হয়ে আরজ করলো, ‘আবূ বকর আপনার খেদমতে একখানা হাদীস বয়ান করতে ইচ্ছুক।’ হযরত ইমাম (রহ.) উত্তরে বল্লেন, “না!” সে ব্যক্তি আবার বল্লো, ‘তাহলে কুর’আন মজীদের একখানা আয়াত (বয়ান করতে ইচ্ছুক)।’ উত্তরে তিনি বল্লেন, “তুমি চলে যাও, নইলে আমি নিজেই চলে যাবো!” অবশেষে ওই দু জনই চলে গেলো। এরপর কেউ একজন হযরত ইমাম (রহ.)-কে জিজ্ঞেস করেন, ‘হে মহাত্মন, যদি সে ব্যক্তি আপনার কাছে কুর’আন মজীদের কোনো আয়াত পাঠ করতো, তাহলে কি অসুবিধা হতো?’ হযরত ইমাম (রহ.) উত্তরে বলেন, “আমি আশঙ্কা করেছিলাম, সে কোনো আয়াত পাঠ করে সেটার অর্থে কোনো রকম বিকৃতি না আবার করে বসে! আর তা আবার আমার মনে বদ্ধমূল না হয়ে যায়!” সর্ব-হযরত হাসান বসরী ও মুহাম্মদ বিন সিরীন (রহমতুল্লাহি আলাইহিমা) বলেন, “বদ-মাযহাব অবলম্বনকারীদের সাথে বোসো না।”

সালফে সালেহীন (রা.)-বৃন্দের নিয়ম ছিলো এই যে, কোনো বদ-মাযহাবধারীকে দেখতে পেলেই তাঁরা রাস্তার এক কিনারে সরে যেতেন। কেননা প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) ফরমান, “বদ-মাযহাব অবলম্বনকারী (বিদ’আতী) লোকদের সাথে বোসো না। বিপদ খুজলির মতোই উড়ে এসে সংক্রমিত হয়।”

হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) নিজ ‘এহইয়া উলূম’ পুস্তকের – باب منكرات مساجد – অংশে লিখেছেন:

الواعظ المبتدع يجب منعه ولا يجوز حضور مجلسه إلا على قصد إظهار الرد عليه.

অর্থ: “বিদ’আতী ওয়ায়েজ/ওয়াজকারীকে বারণ করা ওয়াজিব/অবশ্যকর্তব্য, এবং তার ওয়াজের মজলিশে যাওয়া জায়েয/বৈধ নয়। হ্যাঁ, তার মন্দকে খণ্ডন করার উদ্দেশ্যে হলে তা জায়েয।”

আল্লামা তাহতাবী (রহমতুল্লাহি আলাইহি) লেখেন:

أما الفاسق العالم فلا يقدم لان في تقديمه تعظيمه وقد وجب عليهم إهانته شرعا.

অর্থ: যদি ফাসিক আলেম সর্বাপেক্ষা বড় আলেম হয়, তবুও তাকে ইমাম বানানো জায়েয নয়। কেননা তাকে অগ্রগামী হতে দিলে তার তা’যীম/সম্মান করা অপরিহার্য হয়ে পড়ে। অথচ শরীয়তের দৃষ্টিতে তাকে অবজ্ঞা করা ওয়াজিব/অবশ্যকর্তব্য।

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment