মূল: হুজ্জাতুল ইসলাম ইমাম গাজ্জালী (রহ.)
অনুবাদ: কাজী সাইফুদ্দীন হোসেন
[ইংরেজি অনুবাদক মুহাম্মদ আবূল ক্বা’সেম কর্তৃক লিখিত ভূমিকা ও টীকা-টিপ্পনীসহ]
*সূরাহ যুমার হতে সাতটি আয়াত (ومن سورة الزُّمَر سبعُ آيات):
আল্লাহতায়ালা ঘোষণা করেন:
أَمَّنْ هُوَ قَانِتٌ آنَآءَ ٱلَّيلِ سَاجِداً وَقَآئِماً يَحْذَرُ ٱلآخِرَةَ وَيَرْجُواْ رَحْمَةَ رَبِّهِ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي ٱلَّذِينَ يَعْلَمُونَ وَٱلَّذِينَ لاَ يَعْلَمُونَ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُوْلُواْ ٱلأَلْبَابِ، قُلْ يٰعِبَادِ ٱلَّذِينَ آمَنُواْ ٱتَّقُواْ رَبَّكُمْ لِلَّذِينَ أَحْسَنُواْ فِي هَـٰذِهِ ٱلدُّنْيَا حَسَنَةٌ وَأَرْضُ ٱللَّهِ وَاسِعَةٌ إِنَّمَا يُوَفَّى ٱلصَّابِرُونَ أَجْرَهُمْ بِغَيْرِ حِسَابٍ، قُلْ إِنِّيۤ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ ٱللَّهَ مُخْلِصاً لَّهُ ٱلدِّينَ، قُلْ إِنِّيۤ أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ ٱللَّهَ مُخْلِصاً لَّهُ ٱلدِّينَ وَأُمِرْتُ لأَنْ أَكُونَ أَوَّلَ ٱلْمُسْلِمِينَ.
অর্থ: ওই ব্যক্তি, যে আনুগত্যের মধ্যে রাতের মুহূর্তগুলো অতিবাহিত করে – সাজদায় ও দণ্ডায়মান অবস্থায়, আখিরাতকে ভয় করে এবং আপন রবের দয়ার আশা রাখে, সেও কি ওই অবাধ্য লোকদের মতো হয়ে যাবে? আপনি বলুন, ‘জ্ঞানীরা ও অজ্ঞলোকেরা কি এক সমান?’ উপদেশ তো তারাই মান্য করে যারা বোধশক্তিসম্পন্ন। আপনি বলুন, ‘হে আমার বান্দা সকল, যারা ঈমান এনেছো, আপন রবকে ভয় করো। যারা কল্যাণকর কাজ করেছে তাদের জন্যে এই দুনিয়ার মধ্যে কল্যাণ রয়েছে। এবং আল্লাহর জমিন প্রশস্ত। ধৈর্যশীলদেরকেই তাদের অপরিমিত প্রতিদান পরিপূর্ণভাবে দেয়া হবে।’ আপনি বলুন, ‘আমার প্রতি নির্দেশ রয়েছে যেনো আল্লাহরই ইবাদত করি নিরেট তাঁরই বান্দা হয়ে। এবং আমি আদিষ্ট হয়েছি যেনো আমি সর্বপ্রথম আত্মসমর্পণ করি।’ [কুর’আন, ৩৯/৯-১২; নূরুল ইরফান] {বঙ্গানুবাদকের নোট: ৩৯/১০ আয়াতটি ঘোষণা করেছে – قُلْ يٰعِبَادِ ٱلَّذِينَ آمَنُواْ – (হে রাসূল) আপনি বলুন, ‘হে আমার বান্দা (আবদ্-عبد) সকল, যারা ঈমান এনেছো।’ হাকিমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রহমতুল্লাহি আলাইহির তাফসীরগ্রন্থের পাশাপাশি তাফসীরে ইবনে কাসীর, ইমাম সৈয়ূতী রহমতুল্লাহি আলাইহির তাফসীরে জালালাইন শরীফ, তানভীরুল মিকবাস্ মিন তাফসীরে ইবনে আব্বাস (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) ইত্যাদি গ্রন্থে একই শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে। বস্তুতঃ ঈমানদার মুসলমান মাত্রই প্রিয়নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বান্দা। হাকীকী বা প্রকৃত অর্থে আমরা আল্লাহর আবদ্/বান্দা, আর মাজাযী তথা রূপকার্থে রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)-এর বান্দা/গোলাম। এতে বিশ্বাস স্থাপন শির্ক নয়। আল্লাহতায়ালা বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন আলোচ্য আয়াতটিতে।}
আল্লাহ পাক ফরমান:
ٱللَّهُ نَزَّلَ أَحْسَنَ ٱلْحَدِيثِ كِتَاباً مُّتَشَابِهاً مَّثَانِيَ تَقْشَعِرُّ مِنْهُ جُلُودُ ٱلَّذِينَ يَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ ثُمَّ تَلِينُ جُلُودُهُمْ وَقُلُوبُهُمْ إِلَىٰ ذِكْرِ ٱللَّهِ ذَلِكَ هُدَى ٱللَّهِ يَهْدِي بِهِ مَن يَشَآءُ وَمَن يُضْلِلِ ٱللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ.
অর্থ: আল্লাহ অবতীর্ণ করেছেন সর্বাপেক্ষা উত্তম কিতাব, যা প্রথম থেকে শেষ পর্যন্ত এক ধরনের, পুনঃপুনঃ বর্ণনাসম্পন্ন, সেটার কারণে (ভয়ে) লোম খাড়া হয়ে যায় তাদেরই শরীরের উপর, যারা আপন রবকে ভয় করে, অতঃপর তাদের চামড়া ও হৃদয়/অন্তর নম্র হয়ে পড়ে আল্লাহর স্মরণের প্রতি আগ্রহে। এটা আল্লাহর হিদায়ত, পথপ্রদর্শন করেন তাকেই, যাকে চান এবং যাকে আল্লাহ পথভ্রষ্ট করেন তাকে পথ প্রদর্শনকারী কেউ নেই। [কুর’আন, ৩৯/২৩; নূরুল ইরফান]
আল্লাহতায়ালার বাণী:
قُلْ يٰعِبَادِيَ ٱلَّذِينَ أَسْرَفُواْ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ لاَ تَقْنَطُواْ مِن رَّحْمَةِ ٱللَّهِ إِنَّ ٱللَّهَ يَغْفِرُ ٱلذُّنُوبَ جَمِيعاً إِنَّهُ هُوَ ٱلْغَفُورُ ٱلرَّحِيمُ، وَأَنِـيبُوۤاْ إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَأَسْلِمُواْ لَهُ مِن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُمُ ٱلْعَذَابُ ثُمَّ لاَ تُنصَرُونَ، وَٱتَّبِعُـوۤاْ أَحْسَنَ مَآ أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُـمْ مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَكُـمُ ٱلْعَذَابُ بَغْتَةً وَأَنتُمْ لاَ تَشْعُرُونَ.
অর্থ: আপনি বলুন, ‘হে আমার ওই বান্দা সকল, যারা নিজেদের আত্মার প্রতি অবিচার করেছো, আল্লাহর অনুগ্রহ থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেন। নিশ্চয় তিনিই ক্ষমাশীল, দয়ালু। এবং আপন রবের প্রতি প্রত্যাবর্তন করো এবং তাঁর নিকট আত্মসমর্পণ করো এর পূর্বে যে, তোমাদের উপর শাস্তি এসে পড়বে অতঃপর তোমাদের সাহায্য করা হবে না। এবং সেটারই অনুসরণ করো যা উত্তম থেকে অধিকতর উত্তম, তোমাদের রবের নিকট থেকে তোমাদের প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে, এর পূর্বে যে, শাস্তি তোমাদের উপর হঠাৎ এসে পড়বে, তখন তোমরা টেরও পাবে না। [কুর’আন, ৩৯/৫৩-৫৫; হাকিমুল উম্মত মুফতী আহমদ ইয়ার খাঁন রহমতুল্লাহি আলাইহ কৃত নূরুল ইরফান তাফসীরগ্রন্থে – قُلْ يٰعِبَادِيَ (হে আমার বান্দা সকল; ৩৯/৫৩) – আয়াতটির ব্যাখ্যায় লেখেন, ”এ থেকে দুটো মাস’আলা বোঝা গেলো: (১) সমস্ত মুসলমান হুজূরের (দ.) বান্দা তথা গোলাম। (২) আবদ (عبد)-এর সম্বন্ধ আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো সাথে রচনা করা যায়; কিন্তু তখন ‘আবদ্’ মানে হবে ‘গোলাম।’ মহান রাব্বুল আলামীন বলেন – مِنْ عِبَادِكُمْ وَإِمائِكُمْ – (মানে ‘তোমাদের দাস ও দাসীদের থেকে – কুর’আন, ২৪/৩২)। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে উমর রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু বলেন – كُنْتُ عَبْدَهُ وَخَادِمَهُ – মানে ’আমি ছিলাম প্রিয়নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আবদ্/বান্দা ও খাদিম/সেবক।’ বিস্তারিত রয়েছে হাকিমুল উম্মত মুফতী সাহেব রহমতুল্লাহি আলাইহির প্রণীত ‘জায়াল হক্ক’ গ্রন্থে]





Users Today : 310
Users Yesterday : 767
This Month : 14732
This Year : 186603
Total Users : 302466
Views Today : 32319
Total views : 3609062