أَخْبَرَنَا أَبُو عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، حَدَّثَنِي أَبُو نَصْرٍ رَشِيقُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الرُّومِيُّ إِمْلَاءً مِنْ كِتَابِهِ بالطَّابِرانِ، أَخْبَرَنَا الْحُسَيْنُ بْنُ إِدْرِيسَ الْأَنْصَارِيُّ، حَدَّثَنَا خَالِدُ بْنُ الْهَيَّاجِ، عَنْ أَبِيهِ، عَنْ سُلَيْمَانَ التَّيْمِيِّ، عَنْ أَبِي عُثْمَانَ، عَنْ سَلْمَانَ الْفَارِسِيِّ، قَالَ: قَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: فِي رَجَبٍ يَوْمٌ وَلَيْلَةٌ مَنْ صَامَ ذَلِكَ الْيَوْمَ، وَقَامَ تِلْكَ اللَّيْلَةَ كَانَ كَمَنْ صَامَ مِنَ الدَّهْرِ مِائَةَ سَنَةٍ، وَقَامَ مِائَةَ سَنَةٍ وَهُوَ ثَلَاثٌ بَقَيْنَ مِنْ رَجَبٍ،
-“হযরত সালমান ফারছি (رضي الله عنه) বলেন, রাসূলে পাক ( ﷺ) বলেছেন: রজব মাসে একটি দিন ও একটি রাত রয়েছে। যে ব্যক্তি ঐ দিনে রোজা রাখবে ও ঐ রাতে নফল নামাজ পড়বে, সে যেন একশত বৎসর রোজা রাখল এবং একশত বৎসর নফল নামাজ পড়ল (সুবহানাল্লাহ!)। সেই রাত হলো ২৭ তারিখ।” ৫১৫১, ইমাম বায়হাক্বী: ফাদ্বাইলে আওকাত, ১ম খন্ড, ৯৫ পৃ: হাদিস নং ১১; ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১৩৯৭ পৃ: হাদিস নং ৩৫৩০; ইমাম ছিয়তী: তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৮৬ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৫১৬৯
ফাদ্বাইলুল আওকাত কিতাবে এই হাদিস সম্পর্কে ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه) উক্ত হাদিসের পরের হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন,
الْإِسْنَادُ الَّذِي قَبْلَهُ فِي هَذَا الْحَدِيثِ أَمْثَلُ مِنْ هَذَا، وَقَدْ رُوِيَ فِي اسْتِجَابَةِ الدُّعَاءِ فِي الْأَشْهُرِ الْحُرُمِ وَرَجَبٌ مِنْهُنَّ حَدِيثٌ حَسَنُ الْإِسْنَادِ فِي مِثْلِ هَذَا
-“এই হাদিসের সনদ পূর্বের হাদিসের হাদিসের মতই। আর নিষিদ্ধ মাস সমূহে দোয়া কবুলের বিষয়ে হাদিস বর্ণিত হয়েছে, রজব ইহার মধ্যে একটি। এই হাদিসটির মতই ফজিলতের হাদিসটি হাছান।” ৫২৫২, ফাদ্বাইলে আওকাত লিল বায়হাক্বী, ১ম খন্ড, ৯৫ পৃ: হাদিস নং ১২;
লক্ষ্য করুন, হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) এর বর্ণিত হাদিসটি ফাদ্বাইলুল আওকাত কিতাবের হাদিস নং ১১। ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه) বলেছেন, ১১ নং হাদিসটির ১২ নং হাদিসের মত। অপর দিকে রজব মাসে দোয়া কবুলের হাদিসটি ১২ নং হাদিসের মতই হাছান। তাহলে বিষয়টি স্পষ্ট যে, ১১ নং হাদিস = ১২ নং হাদিস = রজবে দোয়া কবুলের হাদিস হাছান। অতএব, সব গুলোই হাছান সনদের হাদিস। শুয়াবুল ঈমান কিতাবে ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه) এই হাদিস সম্পর্কে বলেন,
وَرُوِيَ ذَلِكَ بِإِسْنَادٍ آخَرَ أَضْعَفُ مِنْ هَذَا كَمَا -“অনুরূপ বিষয় অন্য আরেকটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, সেটা এই সনদের চেয়েও দুর্বল।” ৫৩৫৩, ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১৩৯৭ পৃ: হাদিস নং ৩৫৩০;
সুতরাং বুঝা গেল, হযরত সালমান ফারছী (رضي الله عنه) এর হাদিসের সমর্থনে আরেকটি দুর্বল সনদের হাদিস রয়েছে। আর একই বিষয়ে একাধিক হাদিস বর্ণিত থাকলে ইহা হাছান লি’গাইরিহী এর স্তরে পৌছে যায়। এই হাদিস দ্বারা সরাসরি প্রমাণিত হয় যে, ২৭ রজব তথা শবে মেরাজে রোজা রাখা এবং ২৬ তারিখ দিবাগত রাতে অর্থাৎ ২৭শে রজব রাতে নফল নামাজ পড়া আল্লাহর নবী ( ﷺ) এর ভাষায় একশত বৎসরের নফল নামাজ ও একশত বৎসরের রোজার সমান সওয়াব। আফছুছ! ওহাবীরা এই হাদিস গুলো চোখ থাকতেও দেখেনা! এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত উল্লেখ করা যায়,
أَخْبَرَنَا مُحَمَّدُ بْنُ عَبْدِ اللهِ الْحَافِظُ، أَخْبَرَنَا أَبُو صَالِحٍ خَلَفُ بْنُ مُحَمَّدٍ بِبُخَارَى، أَخْبَرَنَا مَكِّيُّ بْنُ خَلَفٍ، وَإِسْحَاقُ بْنُ أَحْمَدَ، قَالَا: حَدَّثَنَا نَصْرُ بْنُ الْحُسَيْنِ، أَخْبَرَنَا عِيسَى وَهُوَ الْغُنْجَارُ، عَنْ مُحَمَّدِ بْنِ الْفَضْلِ، عَنْ أَبَانَ، عَنْ أَنَسٍ، عَنْ النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ، أَنَّهُ قَالَ: فِي رَجَبٍ لَيْلَةٌ يُكْتَبُ لِلْعَامِلِ فِيهَا حَسَنَاتُ مِائَةِ سَنَةٍ، وَذَلِكَ لِثَلَاثٍ بَقَيْنَ مِنْ رَجَبٍ، فَمَنْ صَلَّى فِيهَا اثْنَتَيْ عَشْرَةَ رَكْعَةً يَقْرَأُ فِي كُلِّ رَكْعَةٍ فَاتِحَةَ الْكِتَابِ وَسُورَةٌ مِنَ الْقُرْآنِ يَتَشَهَّدُ فِي كُلِّ رَكْعَتَيْنِ، وَيُسَلِّمُ فِي آخِرِهِنَّ، ثُمَّ يَقُولُ: سُبْحَانَ اللهِ، وَالْحَمْدُ لِلَّهِ، وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللهُ، وَاللهُ أَكْبَرُ مِائَةَ مَرَّةٍ، وَيَسْتَغْفِرُ اللهَ مِائَةَ مَرَّةٍ، وَيُصَلِّي عَلَى النَّبِيِّ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ مِائَةَ مَرَّةٍ، وَيَدْعُو لِنَفْسِهِ مَا شَاءَ مِنْ أَمْرِ دُنْيَاهُ وَآخِرَتِهِ، وَيُصْبِحُ صَائِمًا فَإِنَّ اللهَ يَسْتَجِيبُ دُعَاءَهُ كُلَّهُ إِلَّا أَنْ يَدْعُو فِي مَعْصِيَةٍ
-“হযরত আনাস (رضي الله عنه) নবী পাক ( ﷺ) থেকে বর্ণনা করেন যে, নিশ্চয় নবী করিম ( ﷺ) বলেছেন: এই রজব মাসে একটি রাত রয়েছে যাতে আমল কারীর জন্যে একশত বৎসরের সওয়াব লিখা হয়, আর এ রাতটি হলো ২৭শে রজব। যে ব্যক্তি এ রাতে ১২ রাকাত নফল নামাজ পড়বে, পত্যেক রাকাতে সূরা ফাতেহা ও অন্য সূরা সহ। প্রত্যেক দু’রাকাতে তাশাহুদ বা আত্তাহিয়্যাতু পাঠ করতে এবং শেষে সালাম দিবে। অত:পর “সুবহানাল্লাহি ওয়াল হামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু আল্লাহু আকবার” একশত বার, ইস্তেগফার একশত বার এবং নবী পাক ( ﷺ) এর উপর একশত বার দূরুদ পাঠ করবে। অত:পর সে নিজের জন্যে দুনিয়া ও আখেরাতের যেকোন বিষয়ে দোয়া করবে আল্লাহ পাক তার সকল দোয়া করবেন তবে কোন অন্যায় কাজের জন্যে দোয়া কবুল করবেন না।” ৫৪৫৪, ইমাম বায়হাক্বী: শুয়াইবুল ঈমান, ৩য় খন্ড, ১৩৯৮ পৃ: হাদিস নং ৩৫৩১; ইমাম বায়হাক্বী: ফাদ্বাইলে আওকাত, হাদিস নং ১২; ইমাম ছিয়তী: তাফছিরে দূর্রে মানছুর, ৪র্থ খন্ড, ১৮৬ পৃ:; ইমাম হিন্দী: কানজুল উম্মাল, হাদিস নং ৩৫১৭০
পূর্বেই উল্লেখ করেছি, ফাদ্বাইলুল আওকাত কিতাবে এই হাদিসকে ইমাম বায়হাক্বী ( رَحْمَةُ الله عليه) রজব মাসে দোয়া কবুলের হাছান হাদিসের মতই বলেছেন। অতএব, এই হাদিস হাছান সনদের।
সুবহানাল্লাহ! কি মহান এই রাত। একটি প্রশ্ন হলো, আল্লাহর হাবীব রাসূলে আকরাম ( ﷺ) বলেছেন রজবের ২৭ তারিখ রাতে নফল নামাজ পড়ার জন্যে আর ওহাবীরা বলে বিদয়াত, এখন সাধারণ মানুষ কোন পথে যাবে? কিছু আলেম রূপী জালেমরা কথায় কথায় বিদয়াত বিদয়াত বলে ভয় দেখিয়ে সাধারণ মুসলমানদের বিভিন্ন নফল আমল থেকে অনেক দূরে সড়িয়ে নিয়ে গেছে। তাই অবশ্যই রাসূল ( ﷺ) যা যা বলেছেন তাই আমল করা আমাদের জন্যে আবশ্যক, কারণ শবে মেরাজের নফল রোজা ও নফল আমল করা স্বয়ং রাসূলে পাক ( ﷺ) এর কউলী হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। এ বিষয়ে আরেকটি রেওয়ায়েত ইমাম খতিবে বাগদাদী ( رَحْمَةُ الله عليه) ওফাত ৪৬৩ হিজরী তদীয় তারিখে এবং ইমাম ইবনু আসাকির ( رَحْمَةُ الله عليه) তদীয় তারিখে বর্ণনা করেছেন,
أخبرنا عَبْدُ اللَّهِ بْنُ عَلِيِّ بْنِ مُحَمَّدِ بْنِ بِشْرَانَ، قَالَ: أخبرنا عَلِيُّ بْنُ عُمَرَ الْحَافِظُ، قَالَ: حَدَّثَنَا أَبُو نَصْرٍ حَبْشُونُ بْنُ مُوسَى بْنِ أَيُّوبَ الْخَلالُ، قَالَ: حَدَّثَنَا عَلِيُّ بْنُ سَعِيدٍ الرَّمْلِيُّ، قَالَ: حَدَّثَنَا ضَمْرَةُ بْنُ رَبِيعَةَ الْقُرَشِيُّ، عَنِ ابْنِ شَوْذَبٍ، عَنْ مَطَرٍ الْوَرَّاقِ، عَنْ شَهْرِ بْنِ حَوْشَبٍ، عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، قَالَ:ৃ وَمَنْ صَامَ يَوْمَ سَبْعَةٍ وَعِشْرِينَ مِنْ رَجَبٍ كُتِبَ لَهُ صِيَامُ سِتِّينَ شَهْرًا، وَهُوَ أَوَّلُ يَوْمٍ نَزَلَ جِبْرِيلُ عَلَيْهِ السَّلامُ عَلَى مُحَمَّدٍ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ بِالرِّسَالَةِ،
-“হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) মাওকুফরুপে বর্ণনা করেন, যে ব্যক্তি রজব মাসের ২৭ তারিখ রোজা রাখবে আল্লাহ পাক তার জন্যে ৬০ মাস রোজা রাখার সমান সওয়াব দান করবে। ইহা সেই দিন যেদিন জিব্রাইল (عليه السلام) আল্লাহর রাসূল ( ﷺ) এর উপর রিসালাত অর্পন করেছেন।” ৫৫৫৫, খতিবে বাগদাদী: আত তারিখ, ৪৩৪৫ নং রাবীর ব্যাখ্যায়, ২৭৭৭ নং হাদিস; ইমাম ইবনু আসাকির: তারিখু ইবনু আসাকির, ৪২তম খন্ড, ২৩৩ পৃ:; আল্লামা নূরুদ্দিন কেনানী: তানজিহুশ শারিয়াহ, ২য় খন্ড, ১৬১ পৃ:; সিরাতে হালবিয়া, ১ম খন্ড, ৩৪০ পৃ:; ইমাম গাজ্জালী: এহইয়ায়ে উলুমুদ্দিন; হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিছিল এহইয়া, ১ম খন্ড, ৪৩০ পৃ:;
হাফিজুল হাদিস ইমাম ইরাকী ( رَحْمَةُ الله عليه) হাদিসটি উল্লেখ করে বলেন,
رَوَاهُ أَبُو مُوسَى الْمَدِينِيّ فِي كتاب فَضَائِل اللَّيَالِي وَالْأَيَّام من رِوَايَة شهر بن حَوْشَب عَنهُ.
-“ইমাম আবু মূসা মাদিনী তার ‘ফাদ্বাইলুল লাইয়ালি ওয়াল আইয়াম গ্রন্থে বর্ণনাকারী শাহর ইনু হাওশাব হতে বর্ণনা করেছেন।” ৫৬৫৬, হাফিজ ইরাকী: তাখরিজু আহাদিছিল এহইয়া, ১ম খন্ড, ৪৩০ পৃ:;
এই হাদিসটি মুনকার যা আমলের বেলায় উৎসাহ প্রদানে অন্যান্য রেওয়াতের সাথে সাদৃশ্য রেখে বয়ান করা যেতে পারে। তবে নাছিরুদ্দিন আলবানী তার ছিলছিলার মধ্যে বলেছেন,
أخرجه الخطيب في “التاريخ” (৮/ ২৯০)، وابن عساكر (১২/ ১১৮/ ১-২) . وهذا إسناد ضعيف أيضاً؛ لضعف شهر ومطر.
-“খতিব তার তারিখ গ্রন্থে ও ইবনু আসাকির বর্ণনা করেছেন। আর বর্ণনাকারী ‘শাহর’ ও ‘মাতর’ এর দুর্বলতার কারণে এমনিভাবে এই সনদও দুর্বল।” ৫৭৫৭, আলবানী: ছিলছিলাতু আহাদিছিদ দ্বাফিয়া, হাদিস নং ৪৯২৩;
এই হাদিস থেকেও ২৭ রজব রোজা রাখার বিশেষ ফজিলত প্রমাণিত হয়। যা আমল করার জন্য যথেষ্ঠ। কারণ ইহার বিপরীতে কোন ছহীহ্ রেওয়ায়েত নেই। মূলনীতি মোতাবেক ফাজাইলের ক্ষেত্রে দুর্বল সনদের উপর আমল করা সর্ব সম্মতিক্রমে জায়েয।