সালাতুল জানাযা তথা জানাযার নামাজ ফরজে কিফায়াহ। জানাযা নামাজের পূর্বে, পরে ও দাফনের পরে মাইয়্যিতের জন্য হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নাত।
জানাযা নামাজের পর কাতার ভঙ্গ করে মাইয়্যিতের জন্য ইজতিমায়ী ভাবে হাত তুলে দোয়া করা জায়িয ও সুন্নাত।
এটাই আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াত এর ফতওয়া গ্রাহ্য মত। যারা এ মতের বীপরিত মত পোষন করে, তাদের কথা পরিত্যজ্য এবং কুরআন, হাদীস, ইজমা, ও কিয়াসের খিলাফ।
মহান আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন বলেন-
واذا سألك عبادي عني فاني قريب اجيب دعوة الدعي اذا دعان
হে আমার রাসূল ﷺ ! আমার বান্দাগণ যখন আপনার কাছে জিজ্ঞাসা করে, আমার ব্যাপারে মূলত আমি রয়েছি সন্নিকটে। যারা দোয়া করে তাদের দোয়া কবুল করে নেই।যখন আমার কাছে দোয়া করে।
(সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৬)
অত্র আয়াতে কারীমায় اذا دعان যখনই দোয়া করবে এর দ্বারা অন্যান্য সময়ের মত জানাযা নামাজের পরের সময়টিও অন্তর্ভুক্ত। যা এই আয়াতের হুকুম থেকে খালি নয়।
তাই, জানাযা নামাজের পরও দোয়া কবুল হওয়ার বিষয়টি এই আয়াতে দৃষ্টিগোচর হয়। তাই জানাযা নামাজের পর দোয়া করা জায়িয।
হযরত আনাস ইবনে মালিক (রা:) থেকে বর্ণিত,
النبي صلي الله عليه وسلم قال ما من عبد يبسط كفيه في دبر كل صلوة يقول اللهم الهي . . . . الا كان حقا علي الله ان الا يرد يديه خأئبتين
রাসূল ﷺ বলেন, যখন কোন বান্দা প্রত্যেক নামাজের পর উভয় হাত উঠিয়ে বলবে, আয় আল্লাহ পাক . . . . তখন আল্লাহ পাক উনার দায়িত্ব হয়ে যায়, তাকে খালি হাতে না ফিরানো। (আল আমালুল ইয়াওম ওয়াল লাইল লিইবনিস সিন্নী)।
এই হাদীস থেকে কি জানাযার নামাজ বাদ পরে যায়?
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত,
قال سمعت رسول الله صلي الله عليه وسلم يقول اذا صليتم علي الميت فاخلصوا له الدعاء
রাসূল ﷺ বলেছেন, যখন তোমরা মৃত ব্যক্তির জানাযা পড়ে ফেল, তখন তার জন্য খাছ করে দোয়া কর। (আবু দাউদ শরীফ; ২/৪৫৬ পৃষ্ঠা)
হযরত আবু হুরায়রা (রা:) থেকে বর্ণিত,
قال رسول الله صلي الله عليه وسلم علي جنازة فقال اللهم اغفر لحينا وميتنا وصغيرنا وكبيرنا وذكرنا وانثانا وشاهدنا وغائبنا اللهم من احييته منا فاحيه علي الايمان ومن توفيته منا فتوفه علي الاسلام اللهم لا تحرمنا اجره ولا تضلنا بعده
রাসূল ﷺ জনৈক ব্যক্তির জানাযার নামাজ আদায়ের পর এরূপ দোয়া করেন, ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের জীবিত ও মৃতদের ক্ষমা করুন।
আমাদের ছোট ও বড় , পুরুষ ও মহিলা, উপিস্থত ও অনুপস্থিত সকলকে ক্ষমা করুন।
ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদের মাঝে যাকে জীবিত রাখেন, তাকে ঈমানের উপর জীবিত রাখুন এবং যাকে মৃত্যু দেন তাকে ইসলামের উপর মৃত্যু দান করুন।
ইয়া আল্লাহ! আপনি আমাদেরকে বিনিময় হতে মাহরূম করবেন না এবং এরপর আমাদেরকে গোমরাহ করবেন না। (আবু দাউদ শরীফ; ২/১০০ পৃষ্ঠা )
এনায়া শহরে হেদায়া গ্রন্থে উল্লেখ আছে –
روي ان رسول الله صلي الله عليه وسلم وأي رجلا فعل هكذا بعد الفراغ من الصلاة فقال صلي الله عليه وسلم ادع استجيب لك
রাসূল ﷺ সালাতুল জানাযার পরে জনৈক ব্যক্তিকে এমত দোয়া করতে দেখে তাকে সম্বোধন করে বললেন দোয়া কর্।নিশ্চয়ই তোমার দোয়া কবুল করা হবে। (এনায়া শহরে হেদায়া)
অন্য হাদীসে আছে-
روي عن ابن عباس رضي الله تعالي عنهما وابن عمر رضي الله تعالي عنهما انهما فاتهما الصلاة علي الجنازة فلما حضرا مازادا علي الاستغفارله
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা:) ও হযরত ইবনে উমর (রা:) থেকে বর্ণিত। তাদের দু’জনের একদা জানাযা নামাজ ফউত হলো। যখন তারা (নামাজের পর মাইয়্যিতের কাছে) উপস্থিত হলেন, তখন মাইয়্যিতের জন্য অতিরিক্ত ইস্তিগফার করলেন।(আল মাবসূত লিস সারাখসী; ২য় জি: ৬৭ পৃষ্ঠা)
অন্য যায়গায় উল্লেখ আছে-
وعبد الله ابن سلام رضي الله عنه فاتته الصلاة علي جنازة عمر فلما حضر قال ان سبقتموني با الصلاة عليه فلا تسبقوني بالدعاء
হযরত আব্দুল্লাহ বিন সালাম (রা:) আমিরুল মুমিনীন হযরত উমর (রা:) এর জানাযার নামাজ পাননি। (জানাযার পর) তিনি যখন (সেখানে) উপস্থিত হলেন তখন বললেন, “তোমরা জানাযার নামাজ যদিও আমার পূর্বে পড়ে ফেলেছ, তবে দোয়ার ক্ষেত্রে আমার থেকে অগ্রগামী হয়ো না।
(আল মাবসূত লিস সারাখসী; ২য় জি: ৬৭ পৃষ্ঠা)
হযরত ইমাম আবু হানীফা (রহ:) বলেন যে, দাফনের পরে নয় বরং দাফনের আগে সমবেদনা জ্ঞাপন করা সুন্নাত।কেননা, দাফনের আগে বিরহ-বেদনা অনেক বেশি থাকে।তাই (দাফনের পূর্বে) শোক প্রকাশ করবেন এবং মাইয়্যিতের জন্য দোয়া করবেন।(মিযানুল কুবরা নিশ শা’রানী, জায়াল হক্ব ১ম হিচ্ছা ২৬৪ পৃষ্ঠা)
নাফিউল মুসলিমীন কিতারে উল্লেখ আছে যে, মাইয়্যিতের জন্য দাফনের পূর্বে (অর্থাৎ জানাযা নামাজের পর) উভয় হাত উঠিয়ে দোয়া করা জায়িয।(জাওয়াহিরুন নাফীস শরহে দুররুল ক্বাইস; ১৩২ পৃষ্ঠা)
(নাফিউল মুসলিমীন)
✅ দেওবন্দী উলামায়ে কেরামের অভিমত।
প্রশ্ন: জানাযা নামাজের পর ঈসালে সওয়ার প্রসঙ্গে: সওয়াল ৩১০৩): জানাযা নামাজের পর মৃতের ওলী উপস্থিত মুসল্লীদেরকে লক্ষ করে বলেন যে, আপনারা তিন বার সূরা ইখলাছ পড়ে মাইয়্যিতের উপর সওয়ার বখশিয়ে দিন। (এটা কিরূপ?)
জওয়াব: এরূপ করাতে কোন দোষ বা ক্ষতি নেই। সুতরাং জানাযা নামাজের পর যদি সকল লোক অথবা কিছু লোক সূরা ইখলাছ তিনবার পড়ে মাইয়্যিতের জন্য সওয়ার রিসানী করে তাতে কোনই ক্ষতি নেই। (অর্থাৎ জায়িয) (ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ ৫ম জি: ৪১৮ পৃষ্ঠা)
জানাযা নামাজের পর ঈসালে সওয়ার প্রসঙ্গে: সওয়াল ৩১৩৪) জানাযা নামাজের পর দাফনের পূর্বে কতক মুসল্লী (মৃতের প্রতি) সওয়ার রিসানী করার জন্য অল্প আওয়াজে একবার সূরা ফাতিহা, তিনবার সূরা ইখলাছ পড়া এবং জানাযা নামাজের ইমাম অথবা কোন নেক লোকের জন্যে (জানাযা নামাজের পরে) উভয় হাত উঠিয়ে সংক্ষিপ্ত দোয়া করা জায়িয কি না?
জওয়াব: এরূপ পদ্ধতিতে দোয়া করাতে কোন ক্ষতি নেই।
(ফতওয়ায়ে দারুল উলূম দেওবন্দ, ৫ম জি: ৪৩৪, ৪৩৫)
অতএব উপরোক্ত বর্ণনার পরে প্রতিয়মান হয় যে কেহ যদি জানাযার নামাজ পর মৌখিকভাবে মৃত ব্যক্তির জন্য দোয়া করে তবে তা সুন্নাত হিসেবে প্রমাণিত হবে।
আর সবাই মিলে দু’হাত তুলে মহান আল্লাহর কাছে মৃত ব্যক্তির ক্ষমা প্রার্থনা করে তবে তা আরো উত্তমতার দাবী রাখে।