কোরআন স্পর্শ করার বিধান :

পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।

ভুল ফতোয়া প্রদান ও ফিত্নাবাজদের প্রশ্নের জবাবে “”আল-কোরআন স্পর্শ করার বিধান & law of menustration””

লেখক ও সংকলক : Masum Billah Sunny

★ ড জাকির নায়েক ফতোয়া দিয়েছে, ওযু সালাত আদায়ের জন্য অত্যাবশ্যক। কুরআন স্পর্শ করার জন্য ওযু অত্যাবশ্যক নয় বরং এটা মুস্তাহাব। নাউযুবিল্লাহ

তার আরো অনেক ভুলের সঠিক উত্তর উলামায়ে কেরামগন এতিমধ্যে অনেক দিয়েছেন। কিন্তু ওয়াজিব ফরজের কাছাকাছি তাই একে মুস্তাহাব বলা এটা নিতান্তই গোমরাহী ছাড়া কিছু নয়। youtube এ search দিলেই পেয়ে যাবেন।

★ নব্য মুসলিম বিল্লাল ফিলিপস (ড জাকির নায়েকের মতই আহলে হাদিস আকিদার) সে তার বই “”low of menustration”” এ লিখেছে ঋতুস্রাব চলাকালীন সময়েও মহিলারা কুরআন পড়তে পারবে। (নাউযুবিল্লাহ)

৭ মিনিটের ভিডিওটি এখানে জবাবসহ দেখুন :

★★★ (১)

হায়েজা মহিলা এবং যার উপর গোসল ফরজ উক্ত ব্যক্তির জন্য তাসবীহ ও দুআ জিকির
পড়তে কোন সমস্যা নেই। তবে কুরআন তিলাওয়াত ও নামায পড়া নিষিদ্ধ। সেই সাথে রোযা রাখাও নিষিদ্ধ।

عن إبراهيم قال : الحائض والجنب يذكران الله ويسميان (مصنف عبد الرزاق، كتاب الطهارة، باب الحائض تذكر الله ولا تقرأ القرآن، رقم الحديث-989)

অনুবাদ-হযরত ইবরাহীম থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন-হায়েজ এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করতে পারবে, এবং তার নাম নিতে পারবে।

★ মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১৩০৫,
★ সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৮৯

★★★ (২)

কুরআন স্পর্শ করার জন্য পবিত্র হওয়া আবশ্যক। কিন্তু তিলাওয়াত করার জন্য অজু থাকা আবশ্যক নয়। তবে যাদের জন্য গোসল ফরজ তাদের সে অবস্থায় কুরআন তিলাওয়াত জায়েজ নয়।

عَنِ ابْنِ عُمَرَ عَنْ رَسُولِ اللَّهِ -صلى الله عليه وسلم- قَالَ :« لاَ تَقْرَأُ الْحَائِضُ وَلاَ الْجُنُبُ شَيْئًا مِنَ الْقُرْآنِ »

অনুবাদ-হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ থেকে বর্ণিত। রাসূল সাঃ ইরশাদ করেছেন-ঋতুবতী মহিলা এবং গোসল ফরজ হওয়া ব্যক্তি কোরআন তেলাওয়াত করবে না।

সুত্র :-

★ সুনানে কুবরা লিলবায়হাকী, হাদীস নং-১৫৩৫,
★ সুনানে তিরমিজী, হাদীস নং-১৩১,
★ সুনানে দারা কুতনী, হাদীস নং-১৯০০,
★ মুসনান্না ইবনে আবী শাইবা, হাদীস নং-১০৯০/১০৯৮
★ সুনানে দারেমী, হাদীস নং-৯৯১,
★ মুসনাদুর রাবী, হাদীস নং-১১,
★ মুসন্নাফে আব্দুর রাজ্জাক, হাদীস নং-৩৮২৩

যা থাকছে :

১) কুরআন ও হাদিসে রাসুল থেকে দলিল
২) হাদিসের ব্যাখ্যা এবং কিছু আপত্তি ও তার জবাব
৩) সাহাবা তাবেঈনদের মতামত
৪) পূর্ববর্তি ও সমসাময়িক আলেমদের ফতোয়া

                               আল-কোরআনের হুকুম :-

এ বিষয়ে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে ইরশাদ করেন-

لَّا يَمَسُّهُ إِلَّا الْمُطَهَّرُونَ[٥٦:٧٩]

যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। {সূরা ওয়াকিয়া-৭৯}

অর্থ উক্ত আয়াতের শব্দেই স্পষ্ট। আরো স্পষ্ট হতে এ আয়াতের পূর্বের আয়াতের দিকে দৃষ্টি দেই-

إِنَّهُ لَقُرْآنٌ كَرِيمٌ [٥٦:٧٧] فِي كِتَابٍ مَّكْنُونٍ [٥٦:٧٨]

নিশ্চয় এটা সম্মাণিত কুরআন। যা আছে এক গোপন কিতাবে {সূরা ওয়াকিয়া-৭৭-৭৮}

                                     হাদিসের আলোকে : –

★ ইয়েমানবাসির উদ্দেশে আমর বিন হাযম (রা) এর কাছে রাসুল (স)
এ চিঠি পাঠান। চিঠিটিতে ইসলামী শরিয়তের বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক
দিক নির্দেশনা দেয়া ছিল। মুহাদ্দিসিনে কেরাম তাঁদের গ্রন্থের বিভিন্ন অধ্যায়ে এর
সংশ্লিষ্ট অংশটুকু বর্ণনা করেছেন। পুরো চিঠিটি সাহিহ ইবনে হিব্বানের ১৪ নং খণ্ডে উল্লেখিত হয়েছে। সাহাবায়ে কেরামের যুগে চিঠিটিকে রাসুলের সুন্নাতের এক মানদণ্ড হিসেবে বিবেচনা করা হত। কোন বিষয়ে জানা না থাকলে তারা এ চিঠির শরানাপন্ন হতেন। কোন বিষয়ে তাদের মতের বিপরীত এ চিঠিতে কিছু পাওয়া গেলে, তারা তাদের পূর্বের মত থেকে ফিরে আসতেন।

★★★ (১)

عَنْ عَبْدِ اللَّهِ بْنِ أَبِي بَكْرِ بْنِ حَزْمٍأَنَّ فِي الْكِتَابِ الَّذِي كَتَبَهُ رَسُولُ اللَّهِ صَلَّى اللَّهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ لِعَمْرِو بْنِ حَزْمٍ أَنْ لَا يَمَسَّ الْقُرْآنَ إِلَّا طَاهِرٌ

হযরত আব্দুল্লাহ বিন আবু বকর বিন হাযম বলেনঃ রাসূল সাঃ আমর বিন হাযম এর কাছে এই মর্মে চিঠি লিখেছিলেন যে, পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন কেউ স্পর্শ করবে না”।

সুত্র :

★ মুয়াত্তা মালিক, হাদীস নং-৬৮০,
★ কানযুল উম্মাল, হাদীস নং-২৮৩০,
★ মারেফাতুস সুনান ওয়াল আসার, হাদীস নং-২০৯,
★ আল মুজামুল কাবীর, হাদীস নং-১৩২১৭,
★ আল মুজামুস সাগীর, হাদীস নং-১১৬২,
★ মিশকাতুল মাসাবীহ, হাদীস নং-৪৬৫,
★ সুনানে দারেমী, হাদীস নং-২২৬৬
★ মুসান্নাফে আব্দির রাযযাক ১/৩৪১,
★ মুসতাদরকে হাকিম ১/৩৯৭,
★ সুনানে বাইহাকি ১/৮৭
★ সহিহ ইবনে হিব্বান ৪ র্থ খন্ড

————————

মুয়াত্তা মালিকে বর্ণিত এ সহীহ হাদীসকেও গবেষক সাহেব আলবানী রহঃ এর একটি ভুল গবেষণার উপর ভিত্তি করে বাদ দিয়ে দিতে চাচ্ছেন। অথচ সমস্ত মুহাদ্দিসীনে কেরাম এ ব্যপারে একমত যে, মুয়াত্তা মালিকের সকল হাদীসই সহীহ।

এবার আসুন দেখি মুহাদ্দিসীনে কেরাম উক্ত হাদীসের ব্যাপারে কী মন্তব্য করেছেন?-

হযরত ইমাম আহমাদ রহঃ বলেন, আমার ধারণা মতে উক্ত হাদীসটি সহীহ। {তানকীহ তাহকীকুল তালীক-১/১৩১}

ইমাম আহমদ (র) আরো বলেন – كتبه لا أشك أن رسول الله চিঠিটি যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছিলেন এ ব্যপারে আমার কোন সন্দেহ নেই। (আত-তিবয়ান লিবনিল কায়্যিম ১/৪০৯)

ইমাম দারেমী রহঃ বলেন, সনদটি হাসান। {সুনানে কুবরা, লিলবায়হাকী-৪/৮৯}

আবু যুরআ রাজী রহঃ বলেন, সনদটি হাসান। {সুনানে কুবরা, লিলবায়হাকী-৪/৮৯}

আবূ হাতেম রাজী রহঃ বলেন, সনদটি হাসান।{সুনানে কুবরা, লিলবায়হাকী-৪/৮৯}

আল্লামা ইবনে আসাকীর রহঃ বলেন, আমার জানা মতে উক্ত হাদীসটি সহীহ। {তারীখে দামেস্ক-২২/৩০৫}

ইবনে দাকীকুল ঈদ রহঃ বলেন, উক্ত হাদীসটি কতিপয় আহলে হাদীসদের রীতি অনুযায়ী সহীহ। {আললমাম বিআহাদীসিল আহকাম-২/৭২২}

ইবনুল মুলাক্কিন রহঃ বলেন, এটি সহীহ কিংবা হাসান। {তুহফাতুল মুহতাজ-২/৪৪৯}

আবনে আব্দিল বার রহঃ বলেন, এটি সহীহ হওয়ার দলীল হল, জমহুর উলামাগণ এটাকে গ্রহণ করেছেন। {তামহীদ-১৭/৩৯৬}

ইবনে আব্দিল বার (র) আরো বলেন, وهو معروف عند أهل العلم معرفة يستغني بها عن الإسناد হাদিসটি উলামাদের নিকট এতটাই প্রসিদ্ধ যে এর কোন সূত্র বর্ণনা করার প্রয়োজন নেই (আত-তামহিদ ১/৩৩৮)

ইমাম জুরকানী রহঃ বলেন, মশহুর ও হাসান। {আলআবাতীল ওয়াল মানাকীর-১/৫৫৩}

১০

আব্দুল হক আলইশবিলীর মতে হাদীসটির সনদ সহীহ। {আলআহকামুস সুগরা- নং-১৩৫}

১১

মুয়াফফিকুদ্দীন ইবনে কুদামা রহঃ বলেন, এটি মাশহুর চিঠি। {আলমুগনী-১/২০৩}

১২

আল্লামা হায়সামী রহঃ বলেন, এর রিজালবৃন্দ সিকা। {মাযমউজ যাওয়ায়েদ-১/২৮১}

১৩

আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী রহঃ বলেন, এ হাদীসের সনদ সহীহ। {উমদাতুল কারী-৩/৩৮৭}

১৪

আব্দুল্লাহ বিন বিন বাজ বলেন, হাদীসটি সহীহ। {মাজমুআ ফাতাওয়া বিন বায-৪/৩৮৩, ১০/১৪৯, ১০/১৫৩} আরো দেখতে- {http://www.binbaz.org.sa/mat/130}

১৫

নাসীরুদ্দীন আলবানী বলেন, হাদীসটি সহীহ। {ইরওয়াউল গালীল, নং-১২২, সহীহুল জামে-৭৭৮০, তাখরীজু মিশকাতুল মাসাবীহ-নং-৪৪৩}

১৬

এ প্রসঙ্গে ইমাম ইয়াকুব বিন সুফিয়ান (র) বলেন,

لا أعلم في جميع الكتب المنقولة كتابا أصح من كتاب عمرو بن حزم فإن الصحابة والتابعين يرجعون إليه ويدعون رأيهم

আমর বিন হাযম (রা) এর এ চিঠির চেয়ে বিশুদ্ধ কোন চিঠির কথা আমার জানা নেই। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সাহাবা ও তাবেয়িগণ এ চিঠির শরনাপন্ন হতেন এবং এর বিপরীতে তাদের কোন মত থাকলে তা পরিহার করতেন। (আত-তালখিসুল হাবীর ২/৪১৮)

১৭

ইবনে তাইমিয়া বলেন –

وهو كتاب مشهور عند أهل العلم

 আহলে ইলমের নিকট এটি একটি প্রসিদ্ধ চিঠি (শরহুল উমদাহ ১/৩৪২)

১৮

ইমাম হাকেম নিশাপুরি (র) বলেন –

 قد شهد عمر بن عبد العزيز ، والزهري لهذا الكتاب بالصحة

উমর বিন আব্দুল আযিয ও ইমাম যুহরি (র) এ চিঠিটির যথার্থতার সাক্ষ্য দিয়েছেন। (আল মুসতাদরাক ১/৩৯৭, নাইলুল আওতার ১/২৫৯)

★★★ (২)

عن عبد الله بن عمر رضي الله عنه قال : قال النبي صلي الله عليه وسلم لا يمس القرآن إلا طاهر

আব্দুল্লাহ ইবনে উমর (রা) বলেন, নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, পবিত্র ব্যক্তি ব্যতিত কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে।

সূত্র-

★ সুনানে দারাকুতনি ১/১২১,
★ আলমুজামুস সাগির লিত তাবরানী ১/২৭৬
★ মাযমাউজ যাওয়ায়েদ, হাদীস নং-১৫১২

হাদিসটি সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য –

আবু বকর আল আসরাম (র) বলেন, واحتج أبو عبد الله يعني أحمد بحديث ابن عمر আবু আব্দিল্লাহ অর্থাৎ ইমাম আহমদ (র) ইবনে উমর (রা) এর এই হাদিস দিয়ে দলিল দিতেন। (আল-মুনতাকা ১/৯২)

হাফেজ ইবনে হাজার আসকালানি (র) বলেন, وإسناده لا بأس به হাদিসটির সুত্রে কোন সমস্যা নেই (আত তালখিসুল হাবির ১/১৩১)

আল্লামা নূরুদ্দীন বিন আবু বকর হায়সামী (র)বলেনঃ رواه الطبراني في الكبير والصغير ورجاله موثقون ইমাম তাবারানী কাবীর ও সাগীর উভয় গ্রন্থে তা বর্ণনা করেছেন। আর এর সকল বর্ণনাকারী সিক্বা তথা গ্রহণযোগ্য। (মাযমাউজ যাওয়ায়েদ ১/২৭৬)

ইমাম নববী (রহ) বলেন,

“إنه قول علي وسعد بن أبي وقاص وابن عمر رضي الله عنهم، ولم يعرف لهم مخالف من الصحابة”،

পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা নিষেধ বক্তব্যটি হযরত আলী রাঃ এবং সাদ বিন আবী ওয়াক্কাস রাঃ এবং হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ ওনাদের এ মতের উল্টো কোন মত সাহাবাগণ থেকে বর্ণিত নয়। {শরহুল মুহাজ্জাব-২/৮০}

 ইবনে তাইমিয়্যা বলেন,

وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في مجموع الفتاوى (21/266): “وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف

পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই। {মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬}

★★★ (৩)

عن عبد الرحمن بن يزيد ، قال : كنا مع سلمان ، فخرج فقضى حاجته ، ثم جاء فقلت : يا أبا عبد الله ، لو توضأت لعلنا نسألك عن آيات ، قال : إني لست أمسه ، إنه لا يمسه إلا المطهرون ، فقرأ علينا ما شئنا

আব্দুর রহমান বিন ইয়াযিদ বলেন, আমরা সালমান (রা) এর সাথে ছিলাম। (কিছুক্ষন পর) তিনি বের হয়ে ইস্তেঞ্জা করতে গেলেন। (ফিরে আসার পর) আমি তাকে বললাম, হে আবু আব্দিল্লাহ ! আপনি যদি একটু অযু করে আসতেন, আমরা কোরআনের একটি আয়াতের ব্যাপারে আপনাকে প্রশ্ন করতে চেয়েছিলাম। তিনি জবাব দিলেন – আমি তো এখন কোরআন স্পর্শ করছি না। পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করা যায় না। (কিন্তু, স্পর্শ না করে শুধু পড়তে তো কোন সমস্যা নেই)। এরপর আমরা যা শুনতে চেয়েছিলাম, তিনি তা আমাদের পড়ে শোনালেন।

সূত্র-

★ মুসতাদরকে হাকেম ২/ ৪৭৭,
★ সুনানে দারাকুতনি ১/১২৪,
★ মুসান্নেফে ইবনে আবি শাইবা ১/১২৬

হাদিসটি সম্পর্কে ইমামগণের মন্তব্য –

ক) আবু আব্দিল্লাহ আল-হাকিম আন নাইসাবুরি (র) বলেন, هذا حديث صحيح على شرط الشيخين হাদিসটি বুখারি ও মুসলিমের শর্ত অনুযায়ী সাহিহ (মুসতাদরকে হাকেম ২/ ৪৭৭)

খ) আল্লামা জামালুদ্দিন আয-যাইলায়ি (র) বলেন, وصحح الدَّارَقُطْنِيُّ ইমাম দারাকুতনি (র) হাদিসটিকে সাহিহ বলেছেন। (নাসবুর রায়াহ ১/১৯৯)

গ)  ইবনে তাইমিয়্যা বলেন,

وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في مجموع الفتاوى (21/266): “وهو قول سلمان الفارسي، وعبد الله بن عمر، وغيرهما، ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف

পবিত্র হওয়া ছাড়া কুরআন স্পর্শ নিষেধ বক্তব্যটির পক্ষে মত দিয়েছেন হযরত সালমান ফারসী রাঃ, হযরত আব্দুল্লাহ বিন ওমর রাঃ এবং অন্যান্যরা। কোন সাহাবী থেকে এর বিপরীত বক্তব্য বর্ণিত নেই। {মাজমূউল ফাতাওয়া-২১/২৬৬}

★★★ (৪) হযরত ওমর রাঃ যখন কাফের থাকা অবস্থায় বোনকে কুরআন দেখাতে বলেছিলেন,
 তখন তার বোন বলেছিলেন যে, তুমি নাপাক! আর এ গ্রন্থ পবিত্র ছাড়া কেউ ধরতে পারে না।

সুত্র :

★ মুসনাদুল বাজ্জার-১/৪০১,
★ মুস্তাদরাকে হাকেম-৪/৬৬,
★ সুনানে দারা কুতনী-১/১২১,
★ তাবাকাতুল কুবরা লিইবনে সাদ-৩/২৬৭,
★ সুনানুল কুবরা লিলবায়হাকী-১/৮৭}

তখন ওমর (রা) ওযু করে আসলেন এবং উক্ত সুরাটি পড়লেন। পড়ে দু চোখ জলে ভিজে গেল রাসুলুল্লাহ (সা) এর কাছে নিয়ে যেতে বললেন আর তখনই রাসুল (সা) এর নিকট গিয়ে ইমান এনেছিলেন।

★★★ এ কোরআন কি লাওহে মাহফুজের কুরআন? হ্যা অবশ্যই।

★ শাইখুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া বলেনঃ

وقال شيخ الإسـلام ابن تيمية في شرح العمدة (ص384): “الوجه في هذا، والله أعلم أن الذي في اللوح المحـفوظ هو القرآن الذي في المصحف كما أن الذي في هذا المصحف هو الذي في هذا المصحف بعينه سواء كان المحل ورقاً أو أديماً أو حجراً أو لحافاً، فإذا كان مِنْ حكم الكتاب الذي في السماء أن لا يمسه إلا المطهرون وجب أن يكون الكتاب الذي في الأرض كذلك؛ لأن حرمته كحرمته، أو يكون الكتاب اسم جنس يعم كل ما فيه القرآن سواء كان في السـماء أو الأرض، وقد أوحـــى إلى ذلك قوله تعالى: {رَسُولٌ مِنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفاً مُطَهَّرَةً} [البينة:2]، وكذلك قوله تعالى: {فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ} [عبس:13-14]. فوصفها أنها مطهرة فلا يصلح للمحدث مسها

আমাদের কাছে যে কুরআন রয়েছে এটি সেই কুরআনই যা লৌহে মাহফুজে রয়েছে। যেমন কুরআন তাই, যা কুরআনের মাঝে রয়েছে, চাই তার স্থান পাতা হোক, বা চামড়া হোক, বা পাথর হোক বা মোড়ক হোক। সুতরাং আসমানে অবস্থিত লিখিত কিতাবের হুকুম যেহেতু তা পবিত্র ছাড়া কেউ স্পর্শ করে না, জমিনে থাকা কুরআনের ক্ষেত্রে একই বিধানকে আবশ্যক করে। কেননা, এ [জমিনে থাকা কুরআন] কুরআনের সম্মান সে [আসমানে থাকা কুরআন] কুরআনের মতই। অথবা আয়াতে কিতাব দ্বারা উদ্দেশ্য হল ইসমে জিনস। যা কুরআনকে বুঝাচ্ছে, চাই তা আসমানে থাকুক বা জমিনে থাকুক। {শরহুল উমদাহ-৩৮৪}

★ এদিকেই ইংগিত বহন করছে আল্লাহ তাআলার বাণী

 رَسُولٌ مِنَ اللَّهِ يَتْلُو صُحُفاً مُطَهَّرَةً

তথা আল্লাহর পক্ষ থেকে রাসূল; যিনি পবিত্র সহীফা তিলাওয়াত করেন। {সূরা বায়্যিনাহ-২}

★ অন্যত্র এসেছে

 فِي صُحُفٍ مُكَرَّمَةٍ مَرْفُوعَةٍ مُطَهَّرَةٍ

অর্থাৎ সমুচ্চ এবং পবিত্র যা রয়েছে সম্মানিত সহীফায়। {আবাসা-১৩-১৪}

             ★★★ উল্লেখিত হাদিসগুলোর উপর কিছু আপত্তি ও তার জবাব ★★★

★ ১ম আপত্তিঃ কোরআনে কারিম স্পর্শ করতে ওযুর প্রয়োজনীয়তা সম্পর্কে উল্লেখিত সব হাদিসেই কিছু যু’ফ (দুর্বলতা) রয়েছে। যার কারনে উক্ত আহাদিস আমলযোগ্য নয়।

জবাব- এটি একটি অজ্ঞতাপ্রসূত মত। প্রথমত এ বক্তব্যটিই সঠিক নয়। “পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করা যায় না” এ প্রসঙ্গে নির্ভরযোগ্য অনেক গুলো হাদিস রয়েছে। যার মধ্যে থেকে তিনটি হাদিস মুহাদ্দিসিনদের মতামত সহ ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে।
আর তাছাড়া যদি সবগুলো হাদিসকে যদি যায়িফ মেনেও নেয়া হয়, তাহলেও উক্ত আহাদিসের উপর আমল করা ওয়াজিব। কেননা

১) কিছু যায়িফ হাদিস, একাধিক সূত্রে বর্ণিত হওয়ার দ্বারা তার যু’ফ (ত্রুটি) দূর হয়ে যায়।

২) নির্ভরযোগ্য ও অধিকাংশ আলেমগণ যখন কোন একটি হাদিস যায়িফ জানার পরও তা গ্রহন করে নেন, উম্মতের জন্য সে যাইফ হাদিসের উপর আমল করা ওয়াজিব হয়ে যায়।

হাফেয ইবনে হাজার আসকালানি (র) বলেন,

لأن اتفاقهم على تلقي خبر غير ما في الصحيحين بالقبول ولو كان سنده ضعيفا يوجب العمل بمدلوله

সাহিহাইন ছাড়া অন্য কোথাও উল্লেখিত কোন হাদিস গ্রহন করার ব্যাপারে যদি উলামাগন একমত হয়ে যান, তাহলে সে হাদিসটি যায়িফ হলেও তার উপর আমল করা ওয়াজিব। (আননুকাত লিইবনিল হাজার ১/৩৭২)

এ কারনেই “কোরআন স্পর্শে অযুর আবশ্যকতা” সংক্রান্ত একটি হাদিস আলোচনা করতে গিয়ে নাসিরুদ্দিন আলবানি (র) বলেন,

أن الحديث طرقه كلها لا تخلو من ضعف , ولكنه ضعف يسير إذ ليس فى شىء منها من اتهم بكذب , وإنما العلة الإرسال أو سوء الحفظ , ومن المقرر فى ” علم المصطلح ” أن الطرق يقوى بعضها بعضا إذا لم يكن فيها متهم كما قرره النووى فى تقريبه ثم السيوطى فى شرحه , وعليه فالنفس تطمئن لصحة هذا الحديث لا سيما وقد احتج به إمام السنة أحمد بن حنبل كما سبق

হাদিসটির কোন সূত্রই দুর্বলতামুক্ত নয়। তবে যে দুর্বলতা রয়েছে তা খুবই সামান্য। কেননা সূত্রগুলোতে এমন কোন রাবি(বর্ণনাকারী) নেই যাকে মিথ্যাবাদী সাব্যস্ত করা হয়েছে। এখানে দুর্বলতার মুল কারন (বর্ণনাকারী থেকে) ইরসাল পাওয়া যাওয়া অথবা রাবির মেধাশক্তির দুর্বলতা । আর “ ইলমুল মুস্তালাহ” এর মধ্যে এটা স্বীকৃত যে, হাদিসের সূত্রসমুহের মধ্যে যদি এমন কোন রাবি না থাকেন, যাকে মিথ্যা বলার অভিযোগে অভিযুক্ত করা হয়েছে, তাহলে সে ক্ষেত্রে হাদিসটির একাধিক সূত্র – একটি অপরটিকে শক্তিশালি করবে। ইমাম নববি (র) তার “তাকরিব” গ্রন্থে ও আল্লামা সুয়ুতি (র) তার শরাহতে এ মতই ব্যক্ত করেছেন। যার মাধ্যমে এ হাদিসের সিহহাত (নির্ভরযোগ্যতা) এর ব্যাপারে মনে আর কোন সন্দেহ থাকে না। তাছাড়া, পূর্বেই বলা হয়েছে ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (র)ও এ হাদিসকে প্রমান হিসেবে উল্লেখ করেছেন। (ইরওয়াউল গা’লিল লিল আলবানি ১/১৬০)

আল্লামা ইবনে তাইমিয়া বলেন,

مذهب الأئمة الأربعة أنه لا يمس المصحف إلا طاهر كما قال في الكتاب الذي كتبه رسول الله صلى الله عليه وسلم لعمرو بن حزم : أن لا يمس القرآن إلا طاهر . قال الإمام أحمد : لا شك أن النبي صلى الله عليه وسلم كتبه له وهو أيضا قول سلمان الفارسي وعبد الله بن عمر وغيرهما . ولا يعلم لهما من الصحابة مخالف .

চার মাযহাবের ইমামদের মত হল, পবিত্র ব্যক্তিগণ ছাড়া আর কারো কোরআনে কারিম স্পর্শ করার অনুমতি নেই। যেমন আমর বিন হাযম (রা)কে পাঠানো চিঠিতে রাসুল (স) বলেছিলেন – পবিত্রতা অর্জন না করে কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে। ইমাম আহমদ (র) বলেন, চিঠিটি যে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম লিখেছেন এ ব্যাপারে কোনই সন্দেহ নেই। সালমান ফারসি (রা), আব্দুল্লাহ বিন উমর(রা) ও অন্যান্য সাহাবাদেরও মত। এবং সাহাবাগনের মধ্যে থেকে তাদের মতের বিরোধিতা করেছেন, এরকম কারো কথাও জানা যায় না। (মাজমুআতুল ফতোয়া, ২১/১৫৬)

অন্যত্র বলেন,

وَأَمَّا مَسُّ الْمُصْحَفِ: فَالصَّحِيحُ أَنَّهُ يَجِبُ لَهُ الْوُضُوءُ كَقَوْلِ الْجُمْهُورِ

কোরআনে কারিম স্পর্শ করার ব্যাপারে সহিহ রায় হল, অধিকাংশ আলেমদের মত অনুযায়ী এ ক্ষেত্রে অযু করা ওয়াজিব। (মাজমুআতুল ফতোয়া,২১/১৬৪)

———————
তাই, কোরআন স্পর্শ করার জন্য অযুর বাধ্যবাধকতা সংশ্লিষ্ট সবগুলো হাদিসকে যদি যায়িফ মেনেও নেয়া হয়, হাদিসগুলোর একাধিক সুত্র থাকার কারনে এবং সাহাবা তাবেয়িন সহ প্রায় শতভাগ উলামাগন তা গ্রহন করে নেয়ার কারনে, উক্ত আহাদিসের উপর আমল করা ওয়াজিব।

★ ২য় আপত্তিঃ উপরোল্লিখিত হাদিস গুলোতে বলা হয়েছে لا يمس القرآن إلا طاهر পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে – এখানে পবিত্র ব্যক্তি দ্বারা মুমিন ব্যক্তি বোঝানো হয়েছে। কেননা সহিহ মুসলিমের এক হাদিসে আছে, রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন المؤمن لا ينجس মুমিন কখনও নাপাক হয় না। (অর্থাৎ মুমিন সবসময় পবিত্র)
সুতরাং, পবিত্র ব্যক্তি ছাড়া কোরআন স্পর্শ করবে না – এর অর্থ হল মুমিন ছাড়া কেউ কোরআন স্পর্শ করবে না। কাফির, মুশরিক কোরআন স্পর্শ করতে পারবে না। মুমিন করতে পারবে, সর্বাবস্থায় পারবে, অযু থাকুক বা না থাকুক।

জবাব- প্রথম কথা হল, উপরোল্লিখিত হাদিস সমুহে পবিত্র ব্যক্তি দ্বারা যদি মুমিন ব্যক্তিই বোঝানো উদ্দেশ্য হত, তাহলে রাসুল (স) সরাসরি “মুমিন ব্যক্তি” বললেই পারতেন। “পবিত্র ব্যক্তি” বলে “মুমিন ব্যক্তি” বোঝানোর কি দরকার? এভাবে বললেই হত “মুমিন ব্যক্তি ছাড়া কেউ যেন কোরআন স্পর্শ না করে।”

দ্বিতীয়ত, সুরা মায়েদার ৬নং আয়াতে অযু গোসল ও তায়াম্মুমের বিধানাবলি বর্ণনা করার পর আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন
مَا يُرِيدُ اللّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُم مِّنْ حَرَجٍ وَلَـكِن يُرِيدُ لِيُطَهَّرَكُمْ

“(এ সমস্ত বিধানের দ্বারা) তিনি তোমাদের অসুবিধায় ফেলতে চান না, বরং তোমাদেরকে পবিত্র করতে চান।” লক্ষণীয় বিষয় হল, একজন মুমিন যদি সব সময় পবিত্রই থাকেন, নাপাক না হন, তাহলে আল্লাহ তাকে পবিত্র করতে কেন চাইলেন? পবিত্র তো তাকেই করা যায়, যিনি পূর্বে নাপাক ছিলেন। তাই নয় কি?

বাকি থাকলো, সহিহ মুসলিমের সেই হাদিস যেখানে রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) বলেছিলেন, المؤمن لا ينجس মুমিন কখনও নাপাক হয় না। পুরো হাদিসটি হল –

عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّهُ لَقِيَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي طَرِيقٍ مِنْ طُرُقِ الْمَدِينَةِ، وَهُوَ جُنُبٌ فَانْسَلَّ فَذَهَبَ فَاغْتَسَلَ، فَتَفَقَّدَهُ النَّبِيُّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فَلَمَّا جَاءَهُ قَالَ: «أَيْنَ كُنْتَ يَا أَبَا هُرَيْرَةَ» قَالَ: يَا رَسُولَ اللهِ، لَقِيتَنِي وَأَنَا جُنُبٌ فَكَرِهْتُ أَنْ أُجَالِسَكَ حَتَّى أَغْتَسِلَ، فَقَالَ رَسُولُ اللهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ: «سُبْحَانَ اللهِ إِنَّ الْمُؤْمِنَ لَا يَنْجُسُ

আবূ হুরাইরা (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে, নাবী সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাঁর সাথে মদিনার কোন এক রাস্তাতে সাক্ষাত করলেন। আবূ হুরাইরা (রা) তখন নাপাক অবস্থায় ছিলেন। তাই তিনি চুপচাপ সরে গেলেন এবং গোসল করে আবার ফিরে আসলেন। এদিকে রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর খোঁজ করছিলেন। তিনি ফেরত এলে রাসুল সাল্লাললাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, এতক্ষণ কোথায় ছিলে? আবু হুরাইরা (রা) বললেন, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আপনি যখন আমার সাথে সাক্ষাৎ করলেন, তখন আমি জুনুবি ছিলাম (এমন ব্যক্তিকে বলে যার উপর গোসল করা ওয়াজিব)। তাই গোসল না করে আপনার সাথে বসতে আমার খারাপ লাগছিল। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তখন জবাব দিলেন, সুবহানাল্লাহ ! মুমিন ব্যাক্তি তো কখনও নাপাক হয় না।

ঠাণ্ডা মাথায় এ হাদিসটি কেউ পড়লে, সহজেই বুঝতে পারবে, “ মুমিন ব্যাক্তি কখনও নাপাক হয় না ” – এ কথা বলে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মুমিন ব্যাক্তির অন্তর বা আত্মার পরিশুদ্ধি বা পবিত্রতার দিকে ইংগিত দিয়েছেন বলে মনে হয়।

★ ৩য় আপত্তিঃ অনেকে বলেন, হাদিসে তহির বা পবিত্র ব্যক্তি বলতে ঐ ব্যক্তিকে বোঝানো হয়েছে, যিনি বড় নাপাকি থেকে পবিত্র। অর্থাৎ বড় নাপাকি থেকে পবিত্র থাকলে, জুনুবি (গোসল ফরয) না হলে, তাকে পবিত্র বলা হবে। তাই, সেই ক্ষেত্রে ওযু না থাকলেও কোরআন স্পর্শ করা যাবে।

জবাব- এটি একটি সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন অভিমত। যার কোন দলিল নেই।

আরবি “ত্বহির” শব্দের আভিধানিক অর্থ পবিত্র। কোরআন ও সুন্নাহর বিভিন্ন বর্ণনা থেকে বোঝা যায়, এ শব্দ দ্বারা ঐ ব্যক্তি উদ্দেশ্য, যিনি বড় ও ছোট- উভয় নাপাকি থেকে পবিত্র। যার প্রমান-

ক) আল্লাহ তাআলা সুরা মায়েদার যে আয়াতে ওযু গোসলের বিধান দিয়েছেন, সেখানে তিনি এ বিধান প্রদানের উদ্দেশ্যও ব্যক্ত করেছেন। আয়াতের শেষ অংশে আল্লাহ বলেন,

مَا يُرِيدُ اللَّهُ لِيَجْعَلَ عَلَيْكُمْ مِنْ حَرَجٍ وَلَكِنْ يُرِيدُ لِيُطَهِّرَكُمْ

তিনি তোমাদেরকে কষ্টে ফেলতে চান না, বরং তিনি তোমাদের “তহির”(পবিত্র) বানাতে চান। এর দ্বারা বোঝা যায়, এই ওযু গোসল দ্বারা উদ্দেশ্য হল, পবিত্র হওয়া। যদি কেবল বড় নাপাকি থেকে পবিত্র থাকলেই কাউকে পবিত্র ধরা হত, ছোট নাপাকি থেকে (ওযুর মাধ্যমে) পবিত্র না হলেও তাকে অপবিত্র বলা না হত, তাহলে ওযুর বিধান আল্লাহ তাআলা কেন দিলেন? কোরাআনের এই বর্ণনাভঙ্গিই প্রমাণ করে, তহির বা পবিত্র বলতে ঐ ব্যক্তিকেই বোঝানো হয়েছে, যিনি বড় ও ছোট – উভয় নাপাকি থেকে পবিত্র।

দ্বিতীয়ত, সহিহ মুসলিমের বিখ্যাত হাদিস,

لَا تُقْبَلُ صَلَاةٌ بِغَيْرِ طُهُورٍ

পবিত্রতা ব্যতিত সালাতকে কবুল করা হয় না।

যদি জুনুব বা বড় নাপাকি থেকে গোসলের দ্বারা পাক হলেই তাকে পবিত্র বা তাহির বলা যায়, তাহলে এই হাদিস অনুযায়ী তার ওযু ছাড়া নামায আদায় করলেও আদায় হয়ে যাবে। কেননা, হাদিসে নামায কবুলের জন্য তাহির হওয়াকে শর্ত করা হয়েছে। আর উপরোল্লিখিত আপত্তি অনুযায়ী, বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হলেই সে তাহির।

কিন্তু বিষয়টি আসলেই কি তাই? নাকি সব আলেমগণই বলবেন, আলোচ্য হাদিসে “পবিত্র হওয়া” বলতে ছোট ও বড়- উভয় নাপাকি থেকে পাক হতে বলা হয়েছে। তাহলে এবার বলুন, কোরআন স্পর্শের ব্যাপারে যে হাদিসে “পবিত্র না হয়ে কোরআন স্পর্শ করো না” বলা হয়েছে – সেখানে পবিত্র বলতে কেবল বড় নাপাকি থেকে পবিত্র হওয়া বোঝানো হয়েছে, এ অদ্ভুত দাবী কিভাবে গ্রহণযোগ্য হতে পারে?

পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!

Leave a Comment