পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।
আখলাক শব্দটি ‘খুলুকুন’ এর বহুবচন । খুলুকুন এর ‘খ’ বর্ন পেশ যোগে পড়লে হবে অভ্যন্তরিন চরিত্র । আর খালকুন এর ‘খ’ বর্নে যবর দিলে অর্থ হবে বাহ্যিক আকৃতি । অভিধান গ্রন্থে কুলুকুন এর ‘খ’ বর্নে পেশ, লাম বর্নে পেশ বা ছাকিন – এর অর্থ করা হয়েছে । যেমন সুন্দর আচরন, বীরত্ব, আনন্দদায়ক ব্যবহার, ভালো ব্যবহার ইত্যাদি । তবে হুজুর আকরম (সঃ) এর শানে যে আখলাক শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে তার অর্থ এর চেয়েও অধিক ব্যাপক ও প্রশস্ত । তার আখলাকে শরীফা উপরোক্ত অর্থ সমূহের মিলিত অবস্থারও উর্ধে ছিলো । তিনি যেখানে মুসলমানদের প্রতি ছিলেন দয়াময়, স্নেহময়, ঠিক সেখানে হক প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে, প্রমান স্থাপনের ক্ষেত্রে কাফেরদের প্রতি ছিলেন কঠোর ।
জ্ঞানীগনের নিকট ‘খুলুক’ এর অর্থে এমন যোগ্যতা যার মধ্যে সহজ ও অবলীলাক্রমে কর্মের বহিঃপ্রকাশ ঘটে । ‘খুলুক’ শব্দের সংজ্ঞা ও ব্যাখ্যা সম্পর্কে বিভিন্ন গ্রহনযোগ্য কিতাবসমূহে স্বতন্ত্রভাবে আলোচনা করা হয়েছে । অবশ্য এতে মতানৈক্য আছে যে, ‘খুলুক’ বা চারিত্রিকগুন মানুষের স্বভাবজাত, প্রকৃতিগত, জন্মগত, তার প্রমান হচ্ছে হযরত ইবন আব্বাস (রাঃ) এর এই হাদিছ, নবী করিম (সঃ) এরশাদ ফরমান, আল্লাহ্ তা’আলা তোমাদের আখলাককে তোমাদের মধ্যে এরকম নির্ধারন করে দিয়েছেন, যে রকম নির্ধারন করে দিয়েছেন তোমাদের রিযিক (বুখারী) । তিনি আরো এরশাদ ফরমান, ‘তোমাদের কাছে যদি এ সংবাদ আসে যে পাহাড় তার স্বস্থান থেকে বিচ্যুত হতে গিয়েছে, তাহলে তা তোমরা বিশ্বাস করতে পারো । কিন্তু যদি এ সংবাদ পাও যে অমুক ব্যক্তি তার স্বভাব পরিবর্তন করে ফেলেছে- তাহলে এ সংবাদ গ্রহন করোনা ।’ হাঁ, এর পরও আল্লাহ্ তায়ালার এখতিয়ারে সবকিছুই ।
এটা স্থিরিকৃত যে, বিভিন্ন মানুষের অবস্থা বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে । কিছু লোক তো এমন আছে, যাদের কতিপয় আখলাক এত সুদৃঢ় ও মযবুত যে, তাতে কোনরুপ পরিবর্তন সাধিত হওয়াটা কষ্টসাধ্য । সেগুলো বর্জন করা তাঁদের পক্ষে অসম্ভব । কঠিন রিয়াযত ও মুজাহাদার মাধ্যমে যদি ঐ সমস্ত অবস্থাকে দূরীভূত করার চেষ্টা করা হয় এবং তাকে প্রশংসনীয় অবস্থায় নিয়ে আসতে ইচ্ছা করে, তবে হয়তো পরিবর্তন করা সম্ভব হতেও পারে । কতিপয় আখলাক তুলনামূলকভাবে দূর্বল ও কমজোর হয়ে থাকে, যা চেষ্টাসাধনার মাধ্যমে সুদৃঢ় হয়ে যায় । আবার কতিপয় থাকে শক্তিশালী যা চেষ্টাসাধনার মাধ্যমে দুর্বল হয় না । আখলাক সুন্দর করার জন্য শরীয়তে তাগিদ করা হয়েছে । আম্বিয়ায়ে কেরামগণকে মানুষের আখলাক সুসজ্জিত করার জন্য এবং তাদেরকে হেদায়েত দেয়ার জন্য পৃথিবীতে প্রেরন করা হয়েছে । আখলাক পরিবর্তন করা যদি সম্ভব না হতো তাহলে মানুষকে উত্তম রুপে গঠন করা এবং নবী প্রেরনের সার্থকতা কোথায় ? দোয়া মাছুরায় বর্নিত হয়েছে, হে আল্লাহ্ ! তুমি যেরকম আমার গঠনকে সুন্দর করেছো সেরকম আমার আখলাক বা চরিত্রকেও সুন্দর করে দাও । অন্য এক হাদীসে এসেছে, হে আল্লাহ্ ! তুমি আমাকে উত্তম আখলাকের সন্ধান দাও । তুমি ছাড়া আর কেউ তো উত্তম আখলাকের সন্ধান দিতে পারে না । আর বদ আখলাক আমা থেকে ফিরিয়ে নাও । বস্তুত, তুমি ভিন্ন আর কেউ তো বদ আখলাক অপসারিত করতে পারে না । – এ সমস্ত হাদিস উম্মতের তালীম ও তালকীনের উদ্দেশ্যেই বলা হয়েছে ।
শায়েখ আব্দুল কায়সের বর্নিত হাদীছে আছে, হুজুর আকরম (সঃ) এরশাদ করলেন, হে আব্দুল কায়স । তোমার দু’টি স্বভাব আল্লাহ্তায়ালার নিকট বড়ই প্রিয় । একটি হচ্ছে সহিষ্ণুতা আর অপরটি আত্মমর্যাদা । একথা শুনে তিনি আরয করলেন, ইয়া রাসূলুল্লাহ, এ স্বভাব দুটি আমার মধ্যে আগে থেকেই আছে ? নাকি নতুন সৃষ্টি হলো ? হুজুর (সঃ) বললেন, আগে থেকেই আছে । একথা শুনে তিনি বললেন, আমি আল্লাহ্তায়ালার শুকরিয়া আদায় করি, তিনি আমার মধ্যে প্রকৃতিগত ও জন্মগতভাবে এমন স্বভাবদ্বয় সৃষ্টি করে দিয়েছেন, যা তিনি নিজেই পছন্দ করেছেন ।
উপরোক্ত বর্ননা সমূহের দ্বারা এটাই প্রতীয়মান হয় যে মানুষের কতিপয় আখলাক প্রাকৃতিক ও জন্মগত । আবার এমন কতিপয় আখলাকও আছে যা মানুষের সঙ্কল্প সাপেক্ষ ও অর্জনযোগ্য ।
আখলাক সম্পর্কিত এরকম বৈপরীত্যের সমাধান এভাবে করা যায় যে, যে সমস্ত আখলাক, সাহচর্য ও অভ্যাসের কারনে অর্জিত হয় সেগুলির পরিবর্তন ও রুপান্তর সহজসাধ্য । কিন্তু যে সকল আখলাক প্রাকৃতিক, স্বভাবগত এবং স্থায়ী, সেগুলির পরিবর্তন সাধন করা দুরুহ ব্যাপার । তবে সম্ভাব্যতার সীমানার বাইরে- এমনটি বলা যায় না । আল্লাহ্পাক ভাল জানেন ।
এরুপ আক্বিদাবিশ্বাস রাখা অপরিহার্য যে, সমস্ত আম্বিয়া মুরসালিন আলাইহিমুস্ সালাতু ওয়াসসালাম এর আকৃতি ও প্রকৃতিতে সুন্দর চরিত্র, প্রশংসনীয় গুনাবলী, যাবতীয় পূর্নতা ও মর্যাদা এবং সার্বিক সৌন্দর্য বিদ্যমান ছিল । এ কারনে তারা সমগ্র মানবজাতি তথা প্রতিটি মানবসন্তানের উপর অগ্রগন্য ও বিশেষত্ব লাভ করেছিলেন । সম্মানের দিক দিয়ে তারা ছিলেন সকলের উর্ধে । মর্যাদায়ও তারা ছিলেন সবচেয়ে উচ্চ মর্যাদার অধিকারি । ঐ মহান হযরতগনের মর্যাদা ও মাকাম কতোই না উর্ধে হতে পারে যাদেরকে হক সুবহানাহুতায়ালা স্বয়ং পছন্দ করে, বাছাই করে, মনোনীত করে তার কিতাব কুরআনে পাকে তাঁদের ফযীলত ও প্রশংসার কথা উল্লেখ করেছেন । সালাতুল্লাহে ওয়া সালামুহু আলাইহিম আজমাঈন
পোষ্টটি ভালো লেগে থাকলে আপনার মূল্যবান মতামত জানান প্লিজ!