দেওবন্দীদের গুরুরা রাসূল (ﷺ) এর নূর মুবারককে অস্বীকার করে, কেবল বাশার বাশার করে চিৎকার করে। আহলে সুন্নাত ওয়াত জামাতের আক্বীদা হল রাসূলে পাক (ﷺ) এর পবিত্র স্বত্ত্বা নূরানী ও বাশারীও সরকারে দু’আলম (ﷺ) এর জাত মুবারক বাশারিয়াতের পূর্বেও ছিল,
কিন্তু দুনিয়ার মধ্যে বাশারী ছুরতে দৃপ্তি প্রকাশ করেছেন, পোশাক পরিবর্তনের কারণে হাকিক্বত পরিবর্তন হয় না। যেমন হযরত জিবরাইল (عليه السلام) নূরের তৈরী, কিন্তু তিনি যখন হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট তাশরীফ আনতেন তখন মানব আকৃতিতে আসতেন। এর বর্ণনা মহান আল্লাহ তা’য়ালা উক্ত শব্দগুলোর মাধ্যমে করেছেন। যেমন- فَتَمَثَّلَ لَهَا بَشَرًا سَوِيًّا -“সুতরাং তিনি তাঁর সামনে একজন সুস্থ মানুষ রূপে প্রকাশ হলেন।” (পারা ১৬, রুকু ৫ সূরা মারিয়াম, আয়াত নং ১৭)
মিশকাত শরীফের প্রথম হাদিস যেটির বর্ণনাকারী দ্বিতীয় খলিফা হযরত সায়্যিদুনা উমর (رضي الله عنه), তিনি বলেন- نَحْنُ عِنْدَ رَسُولِ اللَّهِ ﷺ ذَاتَ يَوْمٍ إِذْ طَلَعَ عَلَيْنَا رَجُلٌ -“একদা আমরা রাসূলে কারিম (ﷺ) এর নিকট ছিলাম, আমাদের কাছে একজন মানুষ আসলেন।” ইমামুল আম্বিয়া (ﷺ) হযরত ফারুকে আযম (رضي الله عنه) কে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, “এই লোকটি কে? ফারুকে আযম (رضي الله عنه) আরয করলেন, আল্লাহ তা‘য়ালা এবং তাঁর রাসূল (ﷺ) ই অধিক জানেন। সরওয়ারে (ﷺ) তখন ইরশাদ করেন,- فَإِنَّهُ جِبْرِيل -“তিনি হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)। ” খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবীহ, পৃষ্ঠা ১১, হা/২, মুসনাদে আহমদ, ১/৪৩৪ পৃ. হা/৩৬৭, ইমাম নাসাঈ, আস-সুনান, ৮/৮৭ পৃ. হা/৪৯৯০, ইমাম আবু দাউদ, আস-সুনান, ৪/২২৩ পৃ. হা/৪৬৯৫, সহীহ মুসলিম, হা/৮
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! ‘রজুল’ বলা হয় এমন পুরুষকে যার চুল কালো, পোশাক সাদা, তার দুটি চোখ, দু’হাত, দু’পা এবং দুইটি কান রয়েছে। সম্মানিত আলেমগণ অধিক অবগত যে, সম্মানিত মুহাদ্দিসীনে কেরাম হাদিস শরীফে এমন কোন হাদিস বর্ণনা করেছেন যেগুলোতে হযরত জিবরাঈল নবুওয়াতের দরবারে অনেকবার সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতিতে এসেছেন। ইমাম তাবরানী (رحمة الله) তার মু‘জামুল আওসাত গ্রন্থে সংকলন করেন- عَنْ أَنَسٍ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ كَانَ يَقُولُ: يَأْتِينِي جِبْرِيلُ عَلَى صُورَةِ دِحْيَةَ الْكَلْبِيِّ
-‘‘হযরত আনাস ইবনে মালেক (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূল (ﷺ) বলেছেন, নিশ্চয় জিবরাঈল (ﷺ) রাসূল (ﷺ) এর সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)-এর আকৃতিতে আগমন করতেন। ’’ (ইমাম তাবরানী, মু‘জামুল আওসাত, ১/৭ পৃ. হা/৭)
যেমন: দেওবন্দীদের নির্ভরযোগ্য ব্যক্তিত্ব শায়খুল ইসলাম ও ইবনে তাইমিয়া তার স্বীয় কিতাবে, ‘আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান’ এই বাস্তবতাটির সত্যতা নিন্মোক্ত শব্দের মধ্যে বলেছেন: وَقَدْ أَخْبَرَ أن المَلَائِكَةَ جَاءَتْ إِبْرَاهِيْم عَلَيْهِ السَّلَام فِي صُوْرَةِ الْبَشَرِ، وَاِنَّ المَلِكَ تَمْثِلُ لِمَرْيَمَ بَشَراً سَوِيّاً، وَكَانَ جِبْرَيْل عَلَيْه الصَّلَاةُ وَالسَّلَام يَأتِي النَّبِيَّ صَلَّى اَللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ فِي صُوْرَةِ دَحْيَةِ الْكَلْبِي وَفِي صُوْرَةِ أَعْرَابِي -مثل حديث تعليم الناس الإسلام والإيمان والإحسان- وَيَرَاهُمْ النَّاسُ كَذَلِكَ -“নিশ্চয়ই আল্লাহ তা‘য়ালা এ সংবাদ দিয়েছেন যে, হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) এর নিকট ফেরেশতা মানব আকৃতিতে আসতেন, হযরত মারিয়াম (عليه السلام)’র নিকট সুস্থ মানব আকৃতিতে এসেছেন।
আর জিবরাঈল (عليه السلام) রাসূল (ﷺ) এর কাছে সাহাবী হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه) এবং বেদুইনের আকৃতিতে এসেছেন মানুষগণ তাদেরকে এভাবে দেখেছেন।’’ ইবনে তাইমিয়া, আল-ফুরকান বায়না আউলিয়ার রহমান ও আউলিয়াশ শায়তান, ৫/১৫ পৃ. ইবনে তাইমিয়া কুরআন মাজীদে আল্লাহ তা‘য়ালা ফেরেশতাদের যেসব গুণাবলী বর্ণনা করেছেন, সেগুলো উল্লেখপূর্বক নিম্নোক্ত আয়াতগুলো লিখেছেন: وَقَالُوا اتَّخَذَ الرَّحْمَنُ وَلَدًا سُبْحَانَهُ بَلْ عِبَادٌ مُكْرَمُونَ -“তারা বললো, আল্লাহর সন্তান রয়েছে, আল্লাহ তা‘য়ালা এর থেকে পুত পবিত্র। যাদেরকে তারা সন্তান মনে করছে, তারা সন্তান নয়, বরং সম্মানিত বান্দা।” (সূরা আম্বিয়া, ২৬)
হযরত জিবরাঈল (عليه السلام) কে পবিত্র কুরআনে (بَشَرًا سَوِيًّا) সুস্থ মানুষ, (عبد) বান্দা বলা হয়েছে। হাদীসে পাকে (رَجُلٌ) বা পুরুষ বলা হয়েছে। হযরত দাহিয়াতুল কালবী (رضي الله عنه)’র আকৃতি ধারণ করার কথাও বলা হয়েছে, কিন্তু তিনি নূরেরই সৃষ্টি।
হযরত জিবরাঈল (عليه السلام)’র মানবীয় আকৃতি ধারণ এবং মানুষ রূপে প্রকাশ হওয়ার কারণে কী সাহাবায়ে কিরাম (رضي الله عنه) তাঁর নূরানীয়তকে অস্বীকার করেছেন? না, কোথাও এরূপ দেখা যায় নি। কোন আকৃতিই জিবরাঈল (عليه السلام)’র নূরের সৃষ্টি হওয়াকে অস্বীকার করেন নি।
রাসূল (ﷺ) এর খাদেম, গোলাম এবং উম্মত জিবরাঈল (عليه السلام) যখন নূরের সৃষ্টি হওয়া সত্ত্বেও মানবীয় রূপ ধারণ করার ফলে তাঁর নূরের মধ্যে কোন ব্যবধান থাকেনা এবং কেউই তাঁর নূরকে অস্বীকার করেনা। তাহলে সেই জিবরাঈল নয় বরং সমস্ত সৃষ্টি জগতের সর্দার হুযূর পুর নূর (ﷺ) যদি মানবীয় রূপে এই ধরায় তাশরীফ আনেন তবে তাঁর মহান নূরানীয়তের মধ্যে কেনো ব্যবধান থাকবে? এমন কোন মুসলমান আছে যে, রাসূল (ﷺ) এর নূর মোবারককে অস্বীকার করবে?
এখন আপনাদের সামনে রাসূল (ﷺ) এর নূরের ব্যাপারে সাহাবায়ে কেরাম (رضي الله عنه)’র আক্বীদা পেশ করা হবে। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, أَوَّلُ مَا خَلَقَ اَللهُ نُوْرِي -“আল্লাহ সর্বপ্রথম আমার নূর সৃষ্টি করেছেন।” ইমাম কাস্তাল্লানী, আল-মাওয়াহিবুল্লাদুনিয়্যাহ, ১/১৮ পৃ.,
তাফসীরে আরাইসুল বায়ান, প্রথম খন্ড, ২৩৮ পৃষ্ঠা, তাফসীরে রুহুল বায়ান, প্রথ খণ্ড ৫৪৮ পৃষ্ঠা, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড ৩৭ পৃষ্ঠা, শায়খ আব্দুল হক মুহাদ্দিসে দেহলভী, মাদারেজুন নবুয়ত, ফার্সী, দ্বিতীয় খণ্ড, ০২ পৃষ্ঠা, ইবনে জাওযী, বয়ানে মিলাদুন্নবী, ২৪ পৃষ্ঠা, মাহদী আল-ফার্সী, মাতালিউল মাসাররাত, ২৭ পৃষ্ঠা,
এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৬১-৫৮২ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
❏ এ বিষয়ে একটি হাদিস ইমাম বায়হাকী (رحمة الله)সহ আরও অনেকে সংকলন করেন- عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، عَنِ النَّبِيِّ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ قَالَ: لَمَّا خَلَقَ اللهُ عَزَّ وَجَلَّ آدَمَ خَيَّرَ لِآدَمَ بَنِيهِ، فَجَعَلَ يَرَى فَضَائِلَ بَعْضِهِمْ عَلَى بَعْضٍ، قَالَ: فَرَآنِي نُورًا سَاطِعًا فِي أَسْفَلِهِمْ، فَقَالَ: يَا رَبِّ مَنْ هَذَا؟ قَالَ: هَذَا ابْنُكَ أَحْمَدُ صَلَّى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ هُوَ الْأَوَّلُ وَالْآخَرُ وَهُوَ أَوَّلُ شَافِعٍ -‘‘হযরত আবু হুরায়রা (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত। রাসূল (ﷺ) ইরশাদ করেন, যখন আল্লাহ্ তা‘য়ালা হযরত আদম (عليه السلام) কে সৃষ্টি করলেন,
তখন তাকে তার সন্তান-সন্ততি দেখালেন। হযরত আদম (عليه السلام) তাদের পারস্পরিক শ্রেষ্ঠত্ব নিরীক্ষা করতে থাকেন। অবশেষে তিনি একটি চমকদার নূর দেখতে পেয়ে জিজ্ঞাসা করলেন : হে পরওয়ারদিগার! এ কার নূর? তিনি ইরশাদ করলেন, এ তোমার আওলাদ আহমদ (ﷺ)। তিনি (সৃষ্টিতে) প্রথম এবং প্রেরণের দিক থেকে (সকল নবীদের) শেষে, হাশরের ময়দানে তিনিই সর্বপ্রথম শাফায়াতকারী হবেন’’
(ইমাম বায়হাকী, দালায়েলুল নবুয়ত, ৫/৪৮৩ পৃ. দারুল কুতুব ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, ইমাম সুয়ূতী : খাসায়েসুল কোবরা : ১/৭০ পৃ. হা/১৭৩, আল্লামা ইমাম ইবনে আসাকির : তারিখে দামেস্ক : ৭/৩৯৪-৩৯৫ পৃ. দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, ইমাম জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, ১/৪৩ পৃ., দারুল ফিকর ইলমিয়্যাহ, বয়রুত, লেবানন, মুত্তাকী হিন্দী : কানযুল উম্মাল : ১১/৪৩৭ পৃ. হা/৩২০৫৬, আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মুস্তফা, ৪/২৮৫ পৃ.,
ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবে লাদুন্নীয়া, ১/৪৯ পৃ., ইমাম দিয়ার বকরী, তারীখুল খামীস, ১/৪৫ পৃ., সার্রাজ, হাদিসাহ, হাদিস নং.২৬২৮, ইবনে হাজার আসকালানী, আল-মুখালিসিয়্যাত, ৩/২০৭ পৃ.হা/২৩৪০, সালিম জার্রার, আল-ইমা ইলা যাওয়াইদ, ৬/৪৭৮ পৃ. হা/৬০৮৩, ইবনে সালেহ শামী, সবলুল হুদা ওয়ার রাশাদ, ১/৭১ পৃ., ইফরাকী, মুখতাসারে তারীখে দামেস্ক, ২/১১১ পৃ.)
এ হাদিস থেকে স্পষ্ট প্রমাণিত হল স্বয়ং সৃষ্টিকর্তা মহান রব্বুল আ‘লামীন রাসূল (ﷺ)-এর কে সকল সৃষ্টির প্রথম বলে ঘোষণা দিয়েছেন, তারপরও যারা এর বিপরীতমুখি আক্বিদা অন্তরে ধারণ করেন তাদের আক্বিদা-ঈমান কতটুকু গ্রহণযোগ্য তার চিন্তার বিষয়, পাঠকবর্গ! যারা আল্লাহর বিপরীত কথা বলে সহজেই বুঝা যায় সৃষ্টিকর্তাকেও তারা ভয় করে না, যে আলেম দাবীদার অথচ আল্লাহকে ভয় করে না সে কি নিজেকে আলেম দাবী করতে পারে! এ হাদিসটির সনদটি সহীহ তাতে কোনো সন্দেহ নেই।
❏ এমনকি আহলে হাদিসদের তথাকথিত ইমাম নাসিরুদ্দীন আলবানী (১৯৯৯ খৃ.) এ সনদটি প্রসঙ্গে লিখেন- قلت: وهذا إسناد حسن؛ رجاله كلهم ثقات رجال البخاري -‘‘আমি (আলবানী) বলছি, এই হাদিসের সনদ ‘হাসান’, এর সকল বর্ণনাকারীগণ সহীহ বুখারীর বর্ণনাকারী ন্যায়।’’ (আলবানী, সিলসিলাতুল আহাদিসুদ্ দ্বঈফাহ, হা/৬৪৮২)
❏ ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী (ওফাত. ৪০৭ হি.)সহ অনেক মুহাদ্দিস ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله)-এর কিতাব থেকে সংকলন করেন- وروى عبد الله بن المبارك، عن سفيان الثوري، عن جعفر بن محمد الصادق، عن أبيه، عن جده، عن علي بن أبي طالب أنه قال: إن الله تبارك وتعالى خلق نور محمد صلى الله عليه وسلم قبل أن يخلق السماوات والأرض والعرش والكرسي والقلم والجنة -‘‘
বিখ্যাত হাদিসের ইমাম আব্দুল্লাহ ইবনে মোবারক (رحمة الله) হতে বর্ণিত আছে, তিনি তাঁর শায়খ সুফিয়ান সাওড়ী (رحمة الله) হতে তিনি আলে রাসূল ইমাম জাফর বিন মুহাম্মদ সাদেক (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন, তিনি তাঁর পিতা ইমাম বাকের (رحمة الله) হতে বর্ণনা করেন,
তিনি তাঁর পিতামহ হযরত জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি আমিরুল মু‘মিনীন হযরত আলী (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, নিশ্চয় মহান রব তা‘য়ালা আসমান, যমীন, আরশ, কুরসী, কলম, জান্নাত সৃষ্টি করার পূর্বে রাসূল (ﷺ)-এর নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।’’ (ইমাম আবূ সা‘দ খরকুশী নিশাপুরী, শরফুল মোস্তফা, ১/৩০৮ পৃ., দারুল বাশায়েরুল ইসলামিয়্যাহ, মক্কা, সৌদি আরব, প্রথম প্রকাশ. ১৪২৪ হি.) এ হাদিসের আলোকে বুঝা যায় যে, মহান রব সব কিছু সৃষ্টির পূর্বে তাঁর হাবিবের নূর মোবারককে সৃষ্টি করেছেন।
❏ বিশ্বের অন্যতম মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, বিখ্যাত হানাফী ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তাঁর সুবিখ্যাত গ্রন্থ ‘মিরকাত’ এ উলেখ করেন, قَالَ ابْنُ حَجَرٍ: اخْتَلَفَتِ الرِّوَايَاتُ فِي أَوَّلِ الْمَخْلُوقَاتِ، وَحَاصِلُهَا كَمَا بَيَّنْتُهَا فِي شَرْحِ شَمَائِلِ التِّرْمِذِيِّ أَنَّ أَوَّلَهَا النُّورُ الَّذِي خُلِقَ مِنْهُ – عَلَيْهِ الصَّلَاةُ وَالسَّلَامُ- -، ثُمَّ الْمَاءُ، ثُمَّ الْعَرْشُ
-‘‘ইমাম ইবনে হাজার (رحمة الله) বলেন, আদি সৃষ্টি কোন বস্তু তা নিয়ে ভিন্ন ভিন্ন বর্ণনা রয়েছে, যার সার-সংক্ষেপ আমি শামায়েলে তিরমিযীর ব্যাখ্যা গ্রন্থে আলোচনা করেছি। সর্বপ্রথম সেই নূরকে মহান রব সৃষ্টি করেছেন যে নূর থেকে রাসূল (ﷺ) কে সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর পানি সৃষ্টি করা হয়েছে, তারপর আরশ সৃষ্টি করা হয়েছে (তারপর কলম)।’’ (আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাতুল মাফাতীহ : ১/১৪৮ পৃ. হা/৭৯)
━━━━━━━━━━━o━━━━━━━━━
রাসূলে কারিম (ﷺ) এর জালিলুল কদর সাহাবী হযরত জাবের (رضي الله عنه) রাসূল (ﷺ) এর নিকট আরজ করলেন, يَا رَسُولَ اللَّهِ بِأَبِي أَنْتَ وَأُمِّي أَخْبِرْنِي عَنْ أَوَلَّ شَيْءٍ خَلَقَهُ اللَّهُ قَبْلَ الأَشْيَاءِ -“হে রাসূল (ﷺ) ! আপনার কদমে আমার পিতা-মাতা উৎসর্গ হোক, আল্লাহ তা‘য়ালা সর্বপ্রথম কোন বস্তু সৃষ্টি করেন?” উত্তরে রাসূল (ﷺ) বললেন, يَا جَابِرُ! إِنَّ اللَّهَ خَلَقَ قَبْلَ الأَشْيَاءِ نُورُ نَبِيِّكَ مِنْ نُورِهِ -‘‘হে জাবের! আল্লাহ সর্বপ্রথম তাঁর নূর মোবারক থেকে তোমার নবীর নূর সৃষ্টি করেছেন।”
ইমাম আব্দুর রায্যাক, আল-মুসান্নাফ, (জুযউল মাফকুদ) ৬৩ পৃ. হা/১৮, মাওয়াহিবুল ল্লাদুনীয়া শরীফ, প্রথম খণ্ড, ০৯ পৃষ্ঠা, যুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড, ৪৬ পৃষ্ঠা, হালাবী, সিরাতে হালবীয়াহ, প্রথম খণ্ড, ৩৭ পৃষ্ঠা, আল্লামা মাহদী আল-ফার্সী, মাতালিউল মাসার্রাত শরহে দালাইলুল খায়রাত, ২১০ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, ২৮০ পৃষ্ঠা এবং আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়্যাহ, পৃষ্ঠা ০৯, আকীদাতুশ শোহদা, ১০০ পৃষ্ঠা, ফাতওয়ায়ে হাদিসিয়্যাহ, ৫১ পৃষ্ঠা,
এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৫৮৯-৬১০ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
বোখারী শরীফের ব্যাখ্যাকার ইমাম আহমদ কাস্তাল্লানী (কুদ্দাসা সিররুহুল বারী) তাঁর স্বীয় কিতাব “মাওয়াহিবুল ল্লাদুনীয়্যায়
একটি বর্ণনা নকল করেছেন যে, হযরত সায়্যিদুনা ইমাম জয়নুল আবেদীন (رضي الله عنه) হতে বর্ণিত, তিনি তাঁর সম্মানিত পিতা ইমামে শহীদে কারবালা হযরত ইমাম হোসাইন (رضي الله عنه) হতে
এবং তিনি তাঁর পিতা শেরে খোদা মুশকিল কোশা হযরত সায়্যিদুনা আলী মরতুযা (رضي الله عنه) হতে বর্ণনা করেন যে, রাসূল কারিম (ﷺ) ইরশাদ করেন,
عن علي بن الحسين عن أبيه عن جده أن النبي ﷺ قال كنت نورا بين يدي ربي قبل خلق آدم بأربعة عشر ألف عام -“হযরত আদম (عليه السلام) সৃষ্টি হবার ১৪ হাজার বছর পূর্বে আমি আমার রবের নিকট নূর ছিলাম।”
আল্লামা শাহ আব্দুল আজীজ মুহাদ্দিসে দেহলভী (رحمة الله) বলেন, ‘মাওয়াহিবুল্লা দুনিয়া’ স্বীয় যুগের অদ্বিতীয় কিতাব। (বুস্তানুল মুহাদ্দেসীন, ফার্সী ১১৯ পৃ.) (ফকীর আবুল হামেদ জিয়া উল্লাহ কাদেরী।)২৪. ইমাম কাস্তাল্লানী, মাওয়াহেবুল্লাদুনীয়া, প্রথম খণ্ড, ১০০ পৃষ্ঠা, জুরকানী, শারহুল মাওয়াহেব, প্রথম খণ্ড, ৪৯ পৃষ্ঠা, শায়খ ইউসুফ নাবহানী, জাওয়াহিল বিহার, ৩/৭৭৬ পৃষ্ঠা ও আনওয়ারুল মুহাম্মদীয়া, ০৯ পৃষ্ঠা, এবং হুজ্জাতুল্লাহ আলাল আলামীন, ২৫১ পৃষ্ঠা, ইসমাঈল হাক্কী, তাফসীরে রুহুল বায়ান, ৩৭০ পৃষ্ঠা, দ্বিতীয় খণ্ড,
এ হাদিসকে বর্তমানের বাতিলপন্থীগণ জাল বলে থাকেন, তাদের দাঁতভাঙা জবাব জানতে আমার লিখিত ‘প্রমাণিত হাদিসকে জাল বানানোর স্বরূপ উন্মোচন’ ১ম খণ্ডের ৬১১-৬১৬ পৃষ্ঠা দেখুন, আশাকরি সঠিক বিষয়টি আপনাদের বুঝে আসবে।
রাসূলে কারিম (ﷺ)’র এসব বাণী থেকে দিবালোকের ন্যায় স্পষ্ট যে, রাসূল (ﷺ) তাঁর উম্মতের কাছে তাঁর নূরানিয়্যতের ব্যাপারে ঘোষণা করেছেন। সুতরাং রাসূল (ﷺ)’র নূরানিয়তের ব্যাপারে যারা অস্বীকার করবে তাদের তরীকা মূলত রাসূল (ﷺ)’র পদ্ধতির বিপরীত। কবি বলেন:
خلاف پيبر كے را گز يہ ۞ ہر گز بمنزل نہ خواہد ريہ ‘‘প্রিয় নবীর (ﷺ) বিরোধীতা করবে যারা মনযিলে মকসুদে কখনো পৌঁছবে না তারা।’’ আপনাদের সম্মূখে এখন রাসূলে করিম (ﷺ) এর প্রাণপ্রিয় এমন সাহাবায়ে কেরামদের আক্বীদা বর্ণনা করবো, যারা আমাদের জন্য পথ প্রদর্শক। কেননা রাসূল (ﷺ) নাযাত প্রাপ্ত দলের জন্য যে মানদণ্ড এবং কষ্টিপাথর নির্ধারণ করেছেন তা হল,
مَا أَنَا عَلَيْهِ وأصحابي -“আমি এবং আমার সাহাবাগণ যার উপর আছে।” খতিব তিবরিযি, মিশকাতুল মাসাবিহ, ১/৬১পৃ. কিতাবুল ই‘তিসাম বিস্-সুন্নাহ, হাদিস নং.১৬১, তিরমিযি, আস্-সুনান, ৫/২৬ পৃ. হাদিস, ২৬৪১, আহলে হাদিস আলবানী সুনানে তিরমিযির তাহক্বীকে হাদিসটি ‘হাসান’ বলেছেন, তাবরানী, মু‘জামুল কাবীর, ১৩/৩০ পৃ. হাদিস, ৬২, ১৪/৫২ পৃ. হাদিস, ১৪৬৪৬, মাকতুবাতু ইবনে তাইমিয়া, কাহেরা, মিশর, প্রকাশ.১৪১৫ হি. বায়হাকি, ই‘তিক্বাদ, ১/২৩৩ পৃ. বাগভী, শরহে সুন্নাহ, ১/২১৩ পৃ. হাদিস, ১০৪ অর্থাৎ আমি এবং আমার সাহাবাগণের আক্বীদাই হল তোমাদের আক্বীদার মানদন্ড।
━━━━━━━━━━━━━━━━
তথ্যসূত্রঃ শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র