বিষয় নং-০১. বর্তমান আহলে হাদিসদের দৃষ্টিতে দ্বঈফ হাদিস বলতে কী বুঝায়?
বর্তমান আহলে হাদিস তথা সালাফিদের নিকট দ্বঈফ হাদিস হলো এক প্রকার জাল হাদিস হিসেবে গণ্য, যেমনটি আলবানীর অনেক পুস্তকে দৃষ্টি দিলে তা অনুধাবন করা যায়।
এ ব্যাপারে আপনাদের হাতের নাগালে একটি পুস্তুক পাবেন, বইটির মূল হলো লিখক শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী যার অনুবাদ ও সম্পাদনা করেছেন বাংলাদেশের তথাকথিত আহলে হাদিস আবুল কালাম আযাদ।
পুস্তকটির বাংলা নামকরণ করা হয়েছে ‘‘ছহীহ হাদীছের পরিচয় ও হাদীছ বর্ণনার মূলনীতি’’ যা আযাদ বুক ডিপু, ১৯, শাহী জামে মসজিদ মার্কেট, আন্দরকিল্লা, চট্টগ্রাম হতে প্রকাশিত। এ বিষয়ে বইটির ২৩ পৃ.২৫ পৃ ২৭ পৃ. দেখতে পারেন।
আহলে হাদিস শায়খ কামাল আহমদ তার লিখিত ‘যঈফ হাদীস কেন বর্জনীয়?’(যা ওয়াহীদিয়া ইসলামিয়া লাইব্রেরী, রাণীবাজার, রাজশাহী, বাংলাদেশ হতে প্রকাশিত) গ্রন্থের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত এটি নিয়েই আলোকপাত করেছেন।
আরেক আহলে হাদিস মুযাফফর বিন মুহসিন তার লিখিত ‘যঈফ ও জাল হাদীছ বর্জনের মূলনীতি’ গ্রন্থে সকল মুহাদ্দিসীনে কিরামের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে ৩৩ পৃষ্ঠায় লিখেছেন-‘ ‘যার প্রতি (যঈফ হাদিসের উপর) আমল করা ঐকমত্যের ভিত্তিতে নাজায়েয।’’ তিনি যঈফ আর জাল হাদিসের হুকুমকে এক সাথে মিলিয়ে ৩৫ পৃষ্ঠায় লিখেন-‘‘অতএব শারঈ মানদণ্ডে জাল হাদীছ তো নয়ই, যঈফ হাদীছও গ্রহণযোগ্য নয়।’’
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! সকল মুহাদ্দেসীেেন কেরাম একমত যে, দ্বঈফ সনদের হাদিসও হাদিসের এক প্রকারের অর্ন্তভুক্ত; সনদের রাবির আদালতের ক্ষেত্রে সহীহ, হাসান, দ্বঈফ হয়ে থাকে। কিন্তু আলবানী ও তার উত্তরসূরীরা সকল ইমাম ও মুহাদ্দীসিনে কেরামের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে, তারাই এক উসূলে হাদিসের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে।
অথচ আজ এ আহলে হাদিসগণ পৃথিবীর সমস্ত মুহাদ্দিসদের ইজমার বিপরীতে কথা বলছেন।
❏ এ বিষয়ে বিখ্যাত হাফেযুল হাদিস, ফকীহ, ইমাম নববী আশ-শাফেয়ী (رحمة الله) বলেন- قد اتفق العلماء على جواز العمل بالحديث الضعيف فى فضائل الاعمال:مقدمة المؤلف -‘‘উলামায়ে কিরাম এই বিষয়ে সবাই ঐকমত্য পোষণ করেছেন দুর্বল হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য।’’ ইমাম নববী : আরবাঈন : ১/২০ পৃ. এবং ইমাম ইবনে দাকিকুল ঈদ, শরহে আরবাঈনুন নববিয়্যাহ, ১/২০ পৃ.
❏ বিশ্ববিখ্যাত মুফাস্সির, মুহাদ্দিস, ফকিহ, আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী হানাফী (رحمة الله) ‘তাফসীরে রুহুল বায়ানে’ লিখেন-
لكن المحدثين اتفقوا على ان الحديث الضعيف يجوز العمل به فى الترغيب والترهيب -‘‘তবে মুহাদ্দিসীনে কিরাম এ ব্যাপারে ঐকমত্য পোষণ করেছেন যে,
আকর্ষণ সৃষ্টি ও ভীতি সঞ্চারের বেলায় দ্বঈফ হাদিস অনুযায়ী আমল করা যায়েয।’’ আল্লামা ইসমাঈল হাক্কী : তাফসিরে রুহুল বায়ান, ২/৪১০ পৃ.
❏ এ বিষয়ে বিখ্যাত মুহাদ্দিস, ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী হানাফী (رحمة الله) লিখেন, وَالضَّعِيفُ يُعْمَلُ بِهِ فِي فَضَائِلِ الْأَعْمَالِ اتِّفَاقًا
-‘‘দ্বঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের মধ্যে আমল করার ব্যাপারে ইমামগণের ঐকমত্য হইয়াছে।’’ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মওজু আতুল কাবীর : ১/৩১৫ পৃ. হা/৪৩৩
সম্মানিত পাঠকবৃন্দ! উপরের তিনজন নির্ভরযোগ্য আলেমের অভিমত থেকে জানতে পারলাম যঈফ হাদিস ফাযায়েলে আমলের জন্য গ্রহণযোগ্য সে বিষয়ে হাদিস বিজ্ঞানীদের ইজমা হয়েছে, তাহলে এ নীতি অমান্য করে আহলে হাদিসরা কি তাদের অর্ন্তভুক্ত হবেন?
কিন্তু আহলে হাদিস আলবানী সকল মুহাদ্দিসের ইজমার বিরোদ্ধে অবস্থান নিয়ে লিখেন
-‘‘অনেকে এরূপ ধারণা পোষণ করেন যে, ফাযায়েলের ক্ষেত্রে দুর্বল হাদীসের উপর আমল করা যাবে এ মর্মে কোনো মতভেদ নেই। বাস্তবিক পক্ষে তা সঠিক নয়।’’ (আলবানী, য‘ঈফ ও জাল হাদীছ সিরিজ, ১ম খণ্ড, ৫০ পৃ. তাওহীদ পাবলিকেশন্স, বংশাল, ঢাকা-১১০০)
পাঠকদের কাছেই বিচারের সিদ্ধান্ত অর্পন করা হলো,
আপনারা কাকে মানবেন, আলবানীকে না ইমাম নববী (رحمة الله) সহ পৃথিবী বিখ্যাত ইমামদের !
অপরদিকে দ্বঈফ হাদিস যখন একাধিক সনদে বর্ণিত হবে তা আর দ্বঈফ থাকে না। মুহাদ্দিসীনে কিরামের এ নীতিমালাটি আহলে হাদিস সম্প্রদায় নিজেদের মতের পক্ষে যখন একটি দ্বঈফ সনদের হাদিসও আসবে তখন এটিকে ‘হাসান’ বলতে একটুও চিন্তা করে না, আর নিজেদের মত ও পথের বিরোদ্ধে যখন একাধিক সনদ নয় বরং ১৭ জন সাহাবি বর্ণনা করলেও তা তাদের নিকট দ্বঈফ সনদই থেকে যায়!
এ বিষয়ে আ‘লা হযরত ইমাম আহমদ রেযা খাঁন বেরলবী (رحمة الله) এর সংকলিত ‘ফতোওয়ায়ে আফ্রিকায়’ রাসূল (ﷺ) আবূ বকর, উমর একই মাটির সৃষ্টির হাদিসের আলোচনায় দেখতে পাবেন যে একটি জাল হাদিসকে ও ড. আবদুল্লাহ জাহাঙ্গীর তার ‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ বইয়ের ৩৪৮ পৃষ্ঠায় আলবানীর দলিলের ভিত্তিতে ‘হাসান’ বলতে একটুও চিন্তা বা দ্বিধাবোধ করেননি। আবার আহলে হাদিস শায়খ নাসিরুদ্দীন আলবানী আলেমের কলমের কালি শহীদের রক্তের চেয়ে পবিত্র ও যে সূরা ইখলাস তিনবার পড়বে সে যেন সর্ম্পন্ন কুরআন পড়লো এবং ‘তোমরা মু‘মিনের অন্তর দৃষ্টিকে ভয় কর, কেননা তারা আল্লাহর নূর দ্বারা দেখে’
এ হাদিসটি দ্বারা ওলীদের কাশ্ফ প্রমাণিত হয় বিধায় মোট দশজনেরও বেশী সাহাবি হতে বর্ণিত হওয়ার পরেও হাদিসটিকে সে দ্বঈফ বলে উড়িয়ে দিতে চেয়েছিল। অনূরুপ বহু উদাহারণ আমার পুস্তুকে পাবেন এবং আলবানীর এ সমস্ত বাতিল মতবাদ এবং ভুয়া তাহকীকের জবাব জানতে শহিদুল্লাহ বাহাদুর লিখিত ‘আলবানীর স্বরূপ উন্মোচন’ পড়ুন।
অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে, আলবানী ও তার উত্তরসূরীদের নিকট কোনো সনদের একজন রাবী মাজহুল (অপরিচিত) থাকলে তখন সেটিকে মাওদ্বু বা জাল হাদিস বলতে দ্বিধাবোধ করেন না। শহিদুল্লাহ বাহাদুর এর বিভিন্ন পুস্তুকের অনেক স্থানে আলবানী ও তার অনুসারীদের এ মনগড়া নীতির খণ্ডন করেছি, এ কিতাবের বিভিন্ন স্থানেও আলবানীর এ ভুল নীতিমালার জবাব পাবেন, ইন শা আল্লাহ!
বিষয় নং-০২. কোনো মুহাদ্দিসের উক্তি হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলতে কী বুঝায়?
‘হাদীসের নামে জালিয়াতি’ গ্রন্থের ১৮৯ পৃষ্ঠায় লেখক ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর কোন প্রমাণ ছাড়াই মুহাদ্দিসদের উক্তি ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বলতে জাল হাদিস বুঝায় বলে উল্লেখ করেছে। তার কাছে আমার প্রশ্ন যে, হাদিস শাস্ত্রের ভূয়া এই নীতিমালা কোন মুহাদ্দীসের? অবশ্যই কোন মুহাদ্দিসের নয়। তা না হলে তিনি কেন উসূল বয়ান করলেন কিন্তু নির্ভরযোগ্য উসূলে হাদিসবিদ মুহাদ্দিসদের অভিমত উল্লেখ করলেন না কেন?
এটা দ্বারাই প্রমাণিত হয় যে, এটা কোন হক্কানী মুহাদ্দীসের মন্তব্য নয়; বরং তার নিজের মনগড়া বক্তব্য।
অপরদিকে মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী সম্পাদিত আরেকটি বিভ্রান্তিকর বই ‘প্রচলিত জাল হাদিস’’ এর ৪৯ পৃষ্ঠায় প্রমাণহীনভাবে কোন মুহাদ্দিসদের উক্তি ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বলতে জাল হাদিস বুঝায় বলে বুঝানোর অপচেষ্টা চালিয়েছেন। তাই আমি উক্ত হাদিসের নীতিমালার জন্য অনেক কষ্ট করে তথ্য সংগ্রহ করলাম এবং নিম্নে উপস্থাপন করলাম।
হাদিস তিন প্রকার। ১. সহীহ, ২. হাসান, ও ৩. দ্বঈফ।
এগুলো হাদিসেরই অন্তর্ভূক্ত। বর্ণনার সূত্রানুসারে এভাবে হাদিস-বিশারদগণ হাদিসের প্রকারভেদ করেছেন।
আমাদের দেশে বা বিভিন্ন অঞ্চলে এক শ্রেণীর নামধারী আলিম মনগড়াভাবে হাদিস শাস্ত্রের মূলনীতিকে সম্পূর্ণরুপে উপেক্ষা করে হাদিস-ই-দ্বঈফকে হাদিস বলেই স্বীকার করতে রাজি নয়। অথবা দলীল হিসেবে এ পর্যায়ের হাদিসকে অগ্রহণযোগ্য বলার অপপ্রয়াস চালায়। অথচ হাদিস বিশারদদের মতে দ্বঈফ সনদও হাদিস হিসেবে গণ্য। সনদের দিক দিয়ে দুর্বল হবার কারণে, এ পর্যায়ের হাদিস দিয়ে কোন আমল ওয়াজিব বা সুন্নাত প্রমাণ করা না গেলেও, এমন হাদিস দ্বারা প্রমাণিত বাক্য সাওয়াবদায়ক হওয়াতে সন্দেহের কোন অবকাশ নেই।
যা সামনে বিস্তারিত আলোকপাত করা হবে। অনুরূপ কোন হাদিসের ব্যাপারে যদি কোন মুহাদ্দিস এ ‘হাদিস সহীহ নয়’ বলে মন্তব্য করেন, তবে এতদভিত্তিতে ওই হাদিসকে অসত্য ও বানোয়াট হাদিস হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ নেই। কারণ সহীহ না হলে হাসান বা দ্বঈফ পর্যায়েরও হতে পারে হাদিস-ই-সহীহ হল হাদিসের বচন ও সূত্রের মধ্যে কোনরূপ ত্র“টিবিচ্যুতির উর্ধ্বে, এমন হাদিস। সুতরাং কোন হাদিস সহীহ নয় বলে মন্তব্যকে পুঁজি করে, ওই হাদিসকে মিথ্যা হাদিস (মাওদ্বু) বলার সুযোগ নেই।
এ নীতিমালাটির নির্ভরযোগ্যতার প্রমাণের জন্য এবং এ নীতিমালা অপব্যাখ্যাকারীদের জবাবে আমি গ্রহণযোগ্য মুহাদ্দিসদের ভাষ্য নিম্নে তুলে ধরলাম, পাঠকবৃন্দ! পড়ে আপনারাই বিবেচনা করবেন কাদের বক্তব্য সঠিক।
✦ অভিমত নং- ১.
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমাম, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানীর (رحمة الله) রচিত
“আল ক্বওলুল মুসাদ্দাদ ফিয যুব্বি আন মুসনাদি আহমদ” নামক কিতাবে উল্লেখ করেছেন যে, وَلا يَلْزَمُ مِنْ كَوْنِ الْحَدِيثِ لَمْ يَصِحَّ أَنْ يَكُونَ مَوْضُوعًا -الحديث السابع
-‘‘হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বললে সেটা মাওদ্বু বা বানোয়াট হাদিস হওয়া অপরিহার্য নয়।’’ (আল ক্বওলুল মুসাদ্দাদ ফিয যুব্বি আন মুসনাদি আহমদ, ১/৩৭ পৃষ্ঠা, মাকতাবায়ে ইবনে তাইমিয়া, কায়রু, মিশর।)
✦ অভিমত নং-২:
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইমাম আবদুর রহমান জালালুদ্দীন সূয়ূতী (رحمة الله) তার লিখিত “তা‘কিবাত আলাল মাওদ্বুআত’’ গ্রন্থে বলেন-
اكثر ما حكم الذهبى على هذا الحديث انه قال متن ليس بصحيح وهذا صادق بضعفه-التعقبات على الموضوعات باب: بدء الخلق والانبياء. -‘‘এ হাদিস সম্পর্কে ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী (رحمة الله) সর্বোপরি এ মন্তব্য করেছেন যে,
হাদিসের বচনগুলো বা (মতন) সহীহ নয়। এ কথা দ্বারা বুঝা যায়, হাদিসটি দ্বঈফ বা দুর্বল পর্যায়ের (সূত্রের বা বচনের দিক দিয়ে)।’’
ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতি : তা‘কিবাত আলাল মাওদ্বূআত, পৃ-২৪৫
✦ অভিমত নং-৩:
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস ও ফকীহ, আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) এ প্রসঙ্গে লিখেন- لَا يَلْزَمُ مِنْ عَدَمِ صِحَّتِهِ نَفْيُ وُجُودِ حُسْنِهِ وَضَعْفِهِ
-‘‘এতে কোন সন্দেহের অবকাশ নেই কোনো মুহাদ্দিস ‘হাদিসটি সহীহ নয়’ বললে সেটার দ্বারা হাদিসটি বানোওয়াট হওয়া অপরিহার্য হবে।’’ মোল্লা আলী ক্বারী, আসরারুল মারফূআত, পৃ-১/১০৮ পৃ. হাদিস:৮৫, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।
✦ অভিমত নং-৪:
উক্ত কিতাবে আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) তিনি আশুরার দিন সুরমা লাগানোর বিষয়ে একটি বর্ণিত হাদিস সম্পর্কে হযরত ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল (رحمة الله) এর উক্তি لَا يُصِحٌ هَذَا الْحَدِيث (এ হাদিস সহীহ নয়) বলে মন্তব্য করার পর লিখেছেন- لَا يَلْزَمُ مِنْ عَدَمِ صِحَّتِهِ ثُبُوتُ وَضْعِهِ وَغَايَتُهُ أَنَّهُ ضَعِيفٌ -‘‘আমার (মোল্লা আলী ক্বারী ) কথা হল, এ হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ মানে বানোয়াট বা মাওদ্বু নয়। সর্বশেষ দ্বঈফ বলা যায় মাত্র।’’ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূআত, ১/৪৭৪ পৃ. মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।
✦ অভিমত নং-৫:
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস, ইমাম, হাফেযুল হাদিস, আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) লিখেন,
ان لفظ لا يثبت لا يلزم منه ان يكون موضوعات فإن الثابت يشمل الصحيح فقط والضعيف دونه كذا فى تذكرة الموضوعات –المبحث: الثانى فى اقسام الواضعين. -‘‘কোন হাদিসের ব্যাপারে মুহাদ্দিসদের বক্তব্য (এ হাদিসটি সুদৃঢ় নয়) বললে, হাদিসটি মাওদ্বু বা বানোওয়াট বলে প্রমাণিত হয় না। কারণ সাবিত বা প্রমাণিত শব্দ দ্বারা শুধু সহীহ হাদিসই বুঝায় এর নিম্ন পর্যায়ের হাদিসের মধ্যে দ্বঈফও রয়েছে।’’ আল্লামা তাহের পাটনী : তাযকিরাতুল মওদ্বুআত, ৭৫ পৃষ্ঠা
✦ অভিমত নং-৬:
দেওবন্দীদের শ্রদ্ধাভাজন ব্যক্তি মাওলানা আব্দুল হাই লাখনৌভি লিখেন- لَا يلْزم من قَول أَحْمد فِي حَدِيث التَّوسعَة أَنه لَا يَصح أَن يكون بَاطِلا
-‘‘ইমাম আহমদ (رحمة الله)‘র উক্তি হাদিসটি ‘সহীহ নয়’ বলার দ্বারা হাদিসটি বাতিল বা জাল হওয়া অপরিহার্য নয়।’’ আব্দুল হাই লাখনৌভি : আসারুল মারফু‘আ, ১০১ পৃ.
✦ অভিমত নং-৭:
শুধু তাই নয় দেওবন্দী আলেম মাওলানা সরফরায খাঁন সফদর ‘নূর আওর বাশার’ গ্রন্থের ৫৪ পৃষ্ঠায়ও তাঁর এ ইবারতটি সংকলন করেছেন।
✦ অভিমত নং-৮:
একটি হাদিস শরীফ এও রয়েছে যে, الْبِطِّيخُ قَبْلَ الطَّعَامِ يَغْسِلُ الْبَطْنَ غَسْلًا وَيَذْهَبُ بِالدَّاءِ أَصْلًا– -‘‘খাওয়ার পূর্বে তরমুজ খেলে তা পেটকে একেবারেই পরিষ্কার করে দেয় এবং রোগ ব্যাধিকে সমূলে দূরীভূত করে দেয়।’’
এ হাদিসের ব্যাপারে ইমাম ইবনে আসাকীর (رحمة الله) বলেছেন, شَاذٌّ لَا يَصِحُّ (এটি শায, বিরল পর্যায়ের সহীহ নয়) আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) আলোচ্য হাদিস সম্পর্কে উপরোক্ত মন্তব্য সম্পর্কে লিখেছেন, وَهُوَ يُفِيدُ أَنَّهُ غَيْرُ مَوْضُوعٍ كَمَا لَا يَخْفَى– -‘‘এ কথা স্পষ্ট যে, ইমাম ইবনে আসাকিরের উলিখিত মন্তব্য দ্বারা হাদিসটি মাওদ্বু বা বানোওয়াট নয় বলে বুঝা যায়।’’ আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : আসরারুল মারফূআহ, : ১/৪৮৬ পৃষ্ঠা, আলামা আজলূনী : কাশফুল খাফা : ১/২৫৬ পৃ. হা/৯০৮
✦ অভিমত নং-০৯:
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী (رحمة الله) উল্লেখ করেন- وَقَالَ ابْنُ الْهُمَّامِ: وَقَوْلُ مَنْ يَقُولُ فِي حَدِيثٍ أَنَّهُ لَمْ يَصِحَّ إِنْ سَلِمَ لَمْ يُقْدَحْ ; لِأَنَّ الْحُجَّةَ لَا تَتَوَقَّفُ عَلَى الصِّحَّةِ، بَلِ الْحَسَنُ كَافٍ– فصل الثانى من باب: ما يجوز من العمل فى الصلاة. -‘‘ইমাম কামালুদ্দীন মুহাম্মদ বিন হুমাম (رحمة الله) বলেন, কোন হাদিস সম্পর্কে কোন মুহাদ্দিস বলেছেন যে এ ‘হাদিসটি সহীহ (বিশুদ্ধ) নয়’, তাদের কথা সত্য বলে মান্য করা হলেও কোন অসুবিধা নেই, যেহেতু (শরীয়তের) দলীল বা প্রমাণ হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য শুধু (হাদিস) সহীহ বা বিশুদ্ধ হওয়া নির্ভরশীল নয়। সনদ বা সূত্রের দিক দিয়ে ‘হাসান’ হলেও (হাদিসটি শরীয়তের দলীল হিসেবে সাব্যস্ত হওয়ার জন্য) যথেষ্ট।’’
আল্লামা মোল্লা আলী ক্বারী : মিরকাত: ৩/৭৭ পৃ. হা/১০৮
✦ অভিমত নং-১০:
আল্লামা ইবনে হাজার মক্কী (رحمة الله) বলেন-
وَقَول أَحْمد إِنَّه حَدِيث لَا يَصح أَي لذاته فَلَا يَنْفِي كَونه حسنا لغيره وَالْحسن لغيره يحْتَج بِهِ كَمَا بَين فِي علم الحَدِيث- (اَلصواعق المحرقه : خاتمة الفصل الاول من الباب: الحادى عشر:২২৮)
-‘‘ইমাম আহমদ বিন হাম্বল (رحمة الله)‘র বক্তব্য হাদিসটি لَايَصِحٌবিশুদ্ধ নয় এর অর্থ হবে সহীহ লিজাতিহী তথা জাতি বা প্রকৃত অর্থে সহীহ নয় উক্ত হাদিসটি (সনদের দিক দিয়ে) ‘হাসান লিজাতিহী’ বা অন্য সনদে ‘হাসান লিগায়রিহী’ (জাতিগত সহীহ না হওয়া; সংশ্লিষ্ট বিষয়ের সহীহ’র কারণে নিজে সহীহ হওয়া।) হওয়াকে মানা (নিষেধ) করে না। আর হাসান লিগায়রিহীও (শরিয়তের) প্রমাণ হিসেবে গ্রহণ করা যায়। যা ইলমে হাদিস তথা হাদিস শাস্ত্র হতে জানা যায়।’’ ইবনে হাজার মক্কী : আস-সাওয়ায়েকুল মুহরিকা, ২য় খণ্ড, পৃ-৫৩৬, মুয়াস্সাতুর রিসালা, বয়রুত, লেবানন।
এটাও মনে রাখতে হবে হাসান হাদিসও সহীহ হাদিসেরই প্রকারের অর্ন্তভুক্ত।
❏ ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী (رحمة الله) তার বিখ্যাত উসূলে হাদিসের কিাতবে লিখেন- وهذا القِسمُ مِنَ الْحَسَنِ مشاركٌ للصحيح في الاحتجاج به، وإِنْ كان دُونَهُ،
-‘‘হাদিসে ‘হাসান’ শরিয়তের দলিল রূপে গ্রহণযোগ্য হওয়ার ক্ষেত্রে সহীহ হাদিসের সাদৃশ্য, যদিও মরতবায় (কিছুটা) কম। ইবনে হাজার আসকালানী : নুযহাতুল নযর ফি তাওদিহে নুখবাতিল ফিকির, প্রথম খণ্ড, পৃ ৭৮, মাতবাআতে সাফির বিল রিয়াদ, সৌদি আরব।
━━━━━━━━━━━━━━━━ তথ্যসূত্রঃ শহিদুল্লাহ বাহাদুর গ্রন্থসমগ্র