প্রশ্নোত্তর (আকি্বদা ও আমল)
মাওলানা মুফতী মুহাম্মদ বখতিয়ার উদ্দীন
প্রশ্নঃ মোরাকাবা ইসলামের দৃষ্টিতে কতটুক জায়েজ? কেউ কেউ বলে মোরাকাবা করা বিদয়াত। যারা মোরাকাবা করে তাদেরকে মসজিদ থেকে বের করে দেয়া উচিত। এ সম্পর্কে জানতে চাই।
মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম,
মীরপুর, মাদনা, লাখাই, হবিগঞ্জ।
উত্তরঃ মোরাকাবা ইলমে তাসাউফের একটি পরিভাষা মোরাকাবা বলা হয় সাধারণত: নির্জন এলাকায় কিংবা একাকীত্ব গ্রহণ গরে গভীর ধ্যানে বসে মহান আল্লাহর স্মরণ করা। আরো সহজে বলা যায় দুনিয়াবী ঝামেলামুক্ত পরিবেশে গভীর ধ্যানের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য হাসিলের প্রচেষ্টার নামই হল মোরাকাবা। পবিত্র কুরআন নাযিলের পূর্বে রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হেরা গুহায় দীর্ঘ চলি্লশদিন গভীর ধ্যানে ছিলেন উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা সিদ্দিকা (রাঃ) এর বর্ণিত হাদীস শরীফে দেখা যায়-
নবীজী হেরা গুহায় একাকীত্ব বরণ করতেন এবং গভীর ধ্যানে রাত্রিকালীন ইবাদত করতেন। সহীহ বুখারী ১ম খন্ড ২য় পৃষ্ঠা।
হযরত আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত হাদীসে রয়েছে- একদা জিব্রাঈল (আঃ) মানুষের আকৃতিতে এসে নবীজীর কাছে কয়েকটি বিষয়ে কথোপকথন করার এক পর্যায়ে জিজ্ঞাসা করলেন-
ইহসান কি? নবীজী জবাবে বললেন, তুমি এমনভাবে ইবাদত করো যেন তুমি আল্লাহকে দেখতে পাচ্ছ। আর যদি দেখতে নাও পাও তাহলে এই বিশ্বাস রেখো যে, অবশ্যই তিনি তোমাকে দেখছেন। (সহীহ বুখারী ১ম খন্ড ১২ পৃষ্ঠা)
উপরোক্ত হাদীসের বাস্তবায়নই মূলতঃ মোরাকাবায় ফুটে ওঠে।
তাছাড়া আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের অন্যতম পন্থা হলো মোরাকাবা। মোরাকাবা কেবল আল্লাহ পাকের স্মরণের মাধ্যমে ধ্যানের নাম। আর পবিত্র কুরআনে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- তোমরা আমাকে স্মরণ করো আমি তোমাদেরকে স্মরণ করবো। অন্য হাদীসে
কুদসীতে আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন- বান্দাহ যতক্ষণ আমার স্মরণ করে ততক্ষণ আমি তার সাথেই থাকি। বর্তমান বিশ্বের উন্নত রাষ্ট্রসমূহের চিন্তাশীল ব্যক্তিরা আত্মার প্রশান্তির জন্য এক অভিনব কৌশল বের করে নতুন প্রজন্মের ছেলে মেয়েদেরকে তা চর্চা করার প্রতি উৎসাহ দিচ্ছে তার নাম হলো গধফরঃধঃরড়হ. এর কৌশল অবলম্বন করে আজকের বিশ্বের নতুন প্রজন্ম আত্মিক প্রশান্তি লাভ করেছে বলে তাদের দাবী। এমনকি এ কৌশলচর্চাটা দিন দিন সারাবিশ্বে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। এদের বক্তব্য হলো আত্মাকে দেহের সাথে মিলন ঘটানোই এর মূল উদ্দেশ্য এবং তা অর্জিত হয় একমাত্র নির্জন এলাকায় কিংবা কোলাহমুক্ত নিরব পরিবেশে গভীর ধ্যানের মাধ্যমে।
মহান আল্লাহ তায়ালা ঘোষণা দিয়েছেন- একমাত্র আ্ল্লাহর জিকিরের মাধ্যমে আত্মার শান্তি অর্জিত হয়। সুতরাং মোরাকাবা হলো গভীর ধ্যানের মাধ্যমে মহান আল্লাহর স্মরণ যার মাধ্যমে মানুষের কালবে নূর সৃষ্টি হয়; অন্তর জগত আলোকিত হয় আউলিয়ায়ে কেরাম বুযুর্গানে দ্বীন তাই মোরাকাবার তালকীন দিয়ে থাকেন্।
প্রশ্নঃ ওহাবী ও মওদূদীদের সাথে আত্মীয়তা করা যাবে কিনা? তাদের পিছনে নামাজ পড়া যাবে কিনা? তাদেরকে সালাম দেওয়া যাবে কিনা? এ ব্যাপারে সঠিক ফায়সালা দিলে উপকৃত হব।
মোহাম্মদ মোয়াজ্জেম হোসেন
নারই, নবীগনর, বি- বাড়িয়া।
উত্তরঃ ওহাবীবাদ ও মওদুদীবাদ দু’টি ইসলামের নামে ভ্রান্ত মতবাদ। প্রথমটার প্রবর্তক মুহাম্মদ বিন আবদুল ওহাব নজদী আর দ্বিতীয়বার প্রবর্তক আবুল আ’লা মওদুদী এদের বিভিন্ন লিখনী ও বক্তব্যে কুফুরী পাওয়া যায় বিধায় আহলে সুন্নাত ওয়াল জামাতের ওলামায়ে কেরাম তাদেরকে কাফির ফতোয়া দিয়েছেন এবং তাদের
প্রতিষ্ঠিত মতবাদ কুফুরী মতবাদ বলে ঘোষনা দিয়েছেন। কেননা তারা তারা এখন উদ্ভট কথাবার্তা বলে, যার সাথে পবিত্র কুরআন-হাদীসের সাথে মিল নেই। এরা আল্লাহকে মিথ্যাবাদী বলে আকীদা পোষণ করে, নবজীর শান-মান নিয়ে অনেকক্ষেত্রে এরা কটাক্ষ করে। এরা সাহাবায়ে কেরামকে সত্যের মাপকাঠি মানতে চায়না। আরো কত কি? এদের ব্যাপারে স্বয়ং নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আজ থেকে চৌদ্দশত বছর পূর্বে হুশিয়ার করেছেন- যেমন
হযরত আবু হুরায়র (রাঃ) হতে বর্ণিত রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, শেষ যামানায় কিছু মিথ্যাবাদী দাজ্জাল বের হবে, তারা এমন কিছু কথা বার্তা বলবে যা তোমরা শুননি এবং তোমাদের বাপ-দাদারাও শুনেনি। তোমরা তাদের কাছ থেকে দূরে থাক এবং তাদেরকে তোমাদের কাছ থেকে দূরে রাখ যেন তারা তোমাদেরকে পথভ্রষ্ট করতে না পারে এবং ফেতনায় ফেলতে না পারে।
হযরত আনাস বিন মালিক (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবীপাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, আল্লাহ পাক আমাকে নির্বাচন করেছেন এবং আমার সাহাবায়ে কেরাম এবং শশুড়দেরকে নির্বাচন করেছেন একটা দল বের হবে যারা এদেরকে (সাহাবীদের) গালিগালাজ করবে এবং তাদের মর্যাদা কমাবার চেষ্টা করবে তোমরা তাদের সাথে বসিও না। তাদের সাথে পানাহার করিওনা। তাদের সাথে আাত্মীয়তা করিওনা, তাদের জানাযা পড়িওনা এবং তাদের সাথে নামাজ পড়িওনা্।
সুত্রঃ আল মুসতাদরাক লিল হাকেম ৩য় খন্ড ৬৩২ পৃষ্ঠা, হিলিয়াতুল আউলিয়া ২য় খন্ড ১১ পৃষ্ঠা।
তাফসীরে কুরতবী ১৫৬ পৃষ্ঠা। কানযুল উম্মাল, তাবরানী (আল মুযামুল কবীর) জ্যামউল
জাওয়ামে কৃত: ইমাম জালালুদ্দীন সুয়ূতী (রহঃ)।
জা্েমউল আহাদীস ১ম খন্ড, ইমাম আহমদ রেযা (রাঃ), ফাতাওয়ায়ে হারামাঈনঃ আলা হযরত ইমাম আহমদ রেযা ব্রেলভী (রাঃ)।
অন্যান্য বর্ণনায় মোসাফাহা, কোলাকোলি করা এবং সালাম প্রদান ও নিষিদ্ধতার প্রমাণ পাওয়া যায়।
উপরোক্ত হাদীসের আলোকে বলা যায়, বর্তমানে ওহাবী ও মওদূদী পন্থীদের চরিত্রে ও আকীদায় ঈমান বিধ্বংসী কুফুরী আকীদা ও মতবাদ পাওয়া যাওয়ার কারণে উল্লেখিত হাদীস তাদের জন্য প্রযোজ্য। তাই এদের সাথে আত্মীয়তা করা তাদের পেছনে নামাজ পড়া তাদেরকে সালাম প্রদান করা জায়েজ হবে না।
এদের কুফুরী আকীদা সম্পর্কে বিস্তারিত জানতে পড়ুন
১. হুসামুল হারামাঈন কৃত ইমাম আহমদ রেযা খান ব্রেলভী (রাঃ)
বর্তমানে বাংলা অনুবাদ পাওয়া যায়।
২. কুরআন সুন্নাহর আলোকে ইসলামের মুলধারা ও বাতিল ফিরকা কৃত: মাওলানা কাজী মুঈনুদ্দীন আশরাফী।
৩. সুন্নীবার্তা বুলেটিন নং- ১, ২, ১০, ১১, ১২, ১৩ এবং ৯৪সহ সুন্নীবার্তার বিভিন্ন সংখ্যা।
৪. ওহাবী মাযহাবের হাকীকত।
৫. দেলোয়ার হোসাইন সাঈদীর ভ্রান্ত তাফসীরের স্বরূপ উম্মোচন ইত্যাদি।
প্রশ্নঃ আহলে হাদীস বলতে কাদেরকে বুঝায়? আমাদের দেশে কিছু লোক মাযহাব অনুসরণ করেনা। এরা নিজেদেরকে ‘আহলে হাদীস’ দাবী করে। তাদের দাবী কতটুকু যুক্তিযুক্ত জানতে আগ্রহী।
মোহাম্মদ বোরহান উদ্দীন
কিশোরগঞ্জ, অষ্ট্রগ্রাম।
উত্তরঃ যারা মাযহাব মানেনা তারা লা-মাযহাবী। ইসলামে চার মাযহাব তথা হানাফী শাফেঈ, মালেকী, হাম্বলী মাযহাবের যে কোন একটি অনুসরণ করাকে বলা হয় তাকলিদ। বিশ্বের প্রসিদ্ধ ওলামায়ে কেরাম এই মাযহাব চতুষ্ঠয়ের যে কোন একটির অনুসরণ ওয়াজিব হওয়ার ব্যাপারে ইজমা তথা ঐক্যমত্য পোষণ করেছেন। অথচ, আহলে হাদীস দাবীদাররা ওলামায়ে কেরামের সেই ইজমাকে মানেনা এবং কোন মাযহাবও মানে না। মূলতঃ এরা হল গায়রে মুকালি্লদ তথা মাযহাব বিরুধী। বস্তুতঃ মাযহাবের প্রতিটি মাসআলার মূল উৎস হলো কুরআন-হাদীস। সুতরাং, যারা মাযহাব মানেনা তারা নিজেদেরকে ‘আহলে হাদীস’ নামে আখ্যায়িত করা মোটেই যুক্তিযুক্ত নয়, বরং হাস্যকর। এরা বিপথগামী; ভ্রান্ত। সহী হাদীসের দোহায় দিয়ে এরা পবিত্র কুরআনের অনেক আয়াতে করীমা এবং অনেক সহী হাদীসের বিরুদ্ধে অবস্থান নিতেও দ্বিধাবোধ করেনা। আমাদের দেশে এদেরকে চেনার কতিপয় নমুনা হলো-
১। নামাজে বুকের উপর হাত বাঁধা।
২। রুকু-সিজদায় যাওয়ার সময় উভয় হাত উত্তোলন করা।
৩। জামাত সহকারে নামাজ পড়ার সময় ইমাম সাহেবের সাথে কিরআত পড়া এবং সূরা ফাতিহা তিলাওয়াত শেষে উচ্চস্বরে ‘আমিন’ বলা।
৪। বড় আওয়াজ ‘বিসমিল্লাহ’ পড়া।
৫। তারাবীর নামাজ আট রাকাত পড়া।
৬। বিতির নামাজ ‘এক রাকাত’ পড়া।
অবশ্য এখানে কিছু কিছু মাযহাবের সাথে মিল রয়েছে। তারা একটি মাযহাবের ভিত্তিতে এসব আমল করছেন বলে তাদের ব্যাপারে কোন অভিযোগ নেই। বরং অভিযোগ তাদের ব্যাপারে যারা কোন মাযহাবই মানেনা। এরা কথায় কথায় বুখারী শরীফের দোহাই দিয়ে সাধারন
মুসলমানদেরকে বিভ্রান্ত করার সুযোগ খোঁজে আর হানাফী মাযহাবের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালায়। অথচ, হানাফী মাযহাবের প্রতিটি মাসআলা কুরআন-সুন্নাহ সমর্থিত।
প্রশ্নঃ ইদানিং কিছু কিছু টিভি চ্যানেলে শোনা যায় ইসলামের দৃষ্টিতে কদমবুচি জায়েজ নেই। বরং শেরেকের পর্যায়ভূক্ত। অথচ, আমরা যুগ যুগ ধরে দেখে আসছি ছেলে মেয়েরা মা-বাবাকে দাদা-দাদী, নানা-নানী তথা মুরব্বীদেরকে কদমবুচি করে আর ছাত্র-ছাত্রীরা শিক্ষক মন্ডলীকে কদমবুচি করে। আসলে কোনটি সঠিক? জানালে উপকৃত হব।
মোহাম্মদ আরিফ বিল্লাহ
সোনারগাঁও, নারায়নগঞ্জ, ঢাকা।
উত্তরঃ সালাম বিনিময়ের পর মা-বাবা, ওস্তাদ তথা মুরব্বীদেরকে পায়ে ধরে কদমবুচি করাকে নাজায়েয, অবৈধ কিংবা শেরকের শামিল মনে করা নিঃসন্দেহে অজ্ঞতার নামান্তর। কারণ, কোন একটা কাজ নাজায়েয কিংবা অবৈধ ঘোষণার পূর্বে শরীয়তের দলিল উপস্থাপন করতে হবে। মুরুব্বীদের কদমবুচি অবৈধ হওয়ার ব্যাপারে কোন দলিল তো না-ই; বরং কদমবুচির পক্ষে অনেক দলিল রয়েছে। যেমন-
হযরত ওয়াজে ইবনে আমের (রাঃ) বলেন, আমরা আবদুল কায়েস গোত্রের প্রতিনিধি দল (মদিনায়) পৌঁছলে বলা হয়, ইনিই আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। আমরা তাঁর হস্তদ্বয় এবং পদদ্বয় ধরে তাতে চুমা দিলাম।
সুত্রঃ আল আদাবুল মুফরাদ মূলঃ ইমাম বুখারী (রাঃ)-অনুবাদ- মৌ মুহাম্মদ মুসা পৃষ্ঠা- ৩৪৫
উল্লেখ্য যে, উক্ত বইয়ের শুরুতে ওহাবী মৌলভী বাইতুল মোকাররমের সাবেক খতিব মৌং ওবাইদুল হক সাহেবের অভিমতও রয়েছে।
হযরত সুহাইব (রাঃ) বলেন, আমি আলী (রাঃ) কে আব্বাস (রাঃ) এর হাত ও উভয় পায়ে চুমা দিতে দেখেছি (প্রাগুপ্ত)।
জনৈক বেদুঈন রাসূলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’র দরবারে এসে নবীজীর কাছে একটি মুজিযা প্রকাশের আবেদন করলে নবীজি উক্ত বেদুঈনকে বললেন- ওই বৃক্ষটিকে বলো আল্লাহর রাসূল তোমাকে ডাকছেন। বেদুঈন নির্দেশ মতে বৃক্ষের কাছে গিয়ে তাই বললেন- সাথে সাথে বৃক্ষটি ডানে-বামে, সামনে-পিছনে নাড়া দিয়ে শিকড়গুলো ছিড়ে ধুলি উড়িয়ে উড়িয়ে নবীজির সামনে এসে হাজিরা দিয়ে বলে উঠল ‘আস্সালামু আলাইকুম ইয়া রাসূলাল্লাহ’। এবার বেদুঈন বললেন ‘হে আল্লাহর রাসূল! এবার বৃক্ষকে নির্দেশ দেন, সে যেন আপন জায়গায় ফিরে যায়, নবীজির নির্দেশ হল অমনি বৃক্ষ আপন জায়গায় ফিরে গিয়ে শিকড়গুলোর সাথে আবারো জোড়া লেগে শক্তভাবে দাঁড়িয়ে গেল। এ ঘটনা দেখে বেদুঈন বলে উঠল, হে আল্লাহর রাসূল, আমাকে অনুমতি দিন, আমি আপনাকে সিজদা করব। উত্তরে নবীজি ইরশাদ করলেন আমি যদি আল্লাহ ছাড়া অন্য কাউকে সিজদা করার হুকুম দিতাম তাহলে প্রত্যেক নারীকে হুকুম দিতাম- সে যেন তার স্বামীকে সিজদা করে। এবার বেদুঈন আবেদন করলো-
তাহলে আমাকে আপনার হাত মোবারক ও পা মোবারক চুম্বন দেয়ার অনুমতি দিন। নবীজি তাকে অনুমতি দিলেন।
সূত্রঃ শিফা শরীফ, দালায়েলুন নবুয়ত পৃঃ ৩৩২।
সুতরাং বুঝা গেল পিতা-মাতা, পীর-মুরশিদ, ওস্তাদ ও মুরব্বীদেরকে কদমবুচি করা নিঃসন্দেহে বৈধ এবং এটা একটা উত্তম শিষ্ঠাচারের অ্ন্তর্ভূক্ত।
প্রশ্নঃ আযান ও ইকামতের মধ্যে আশাদু আন্না মুহাম্মাদার রাসূলুল্লাহ বলার সময় আমরা উভয়
হাতের বৃৃদ্ধাঙ্গলী চুম্বন দিয়ে চোখে লাগিয়ে থাকি। কিন্তু বাতিল পন্থিরা বলে এ আমলের কোন প্রমাণ নেই। তাই প্রমাণ সহকারে জানালে খুশী হব।
উত্তরঃ আযান ও ইকামতের মধ্যে প্রিয়নবীজির নাম মোবারক শুনে উভয় হাতের বৃদ্দাঙ্গলী চুম্বন দিয়ে চোখে লাগানো মুস্তাহাব ও বরকতময় আমল। বিশ্ববিখ্যাত ফতোয়ার কিতাব ফতোয়ায়ে শামীতে রয়েছে-
আযানের প্রথম শাহাদত শুনার সময় সাল্লালাহু আলাইকা ইয়া রাসূলাল্লাহ আর দ্বিতীয় শাহাদত শুনার সময় কুররাত আইনী বিকা ইয়া রাসূলাল্লাহ অতঃপর আল্লাহুম্মা মাততী’নি বিসমসয়ী ওয়াল বাসরি বলবে এবং নিজের দুই বৃদ্ধাঙ্গুলীর নখ দুচোখের উপর লাগাবে-এটা করা মুস্তাহাব। যে ব্যক্তি এভাবে করবে, নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার ব্যাপারে ইরশাদ করেন- আমি জান্নাতে তাকে সাথে করে নিয়ে যাব। সূত্রঃ রাদ্দুল মোহতার ১ম খন্ড ২৯৩ পৃষ্ঠা, সালাত পর্ব আযান অধ্যায়।
তাছাড়া আল্লামা সৈয়দ আহমদ তাহতভী স্বীয় কিতাব তাহতাভী আলা মারাকীইল ফালাহ- এ ইমাম শামীর উপরোক্ত বক্তব্য উপস্থাপন করে আরো লিখেন-ইমাম দাইলমী মসনদে ফেরদাউস এ হযরত আবুবকর সিদ্দিক রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু থেকে মরফু সূত্রে হাদিস বর্ণনা করেন- নবীজি ইরশাদ করেন- যে ব্যক্তি মুয়াযযিন আশহাদু আন্না মুহাম্মদুর রাসূলাল্লাহ বলার সময় শাহদাত আঙ্গুলের পেট চুম্বন করার পর চোখের উপর মাসেহ করবে এবং বলবে আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়ারাসূলুহু রাদি’তু বিল্লাহি রাব্বান ওয়াবিল ইসলামে দ্বীনান ওয়াবি-মুহাম্মাদিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নবীয়ান- তার জন্য আমার শাফায়াত আবশ্যক হয়ে গেল।
এ প্রসঙ্গে মোল্লা আলী ক্বারী (রাঃ) মাউযুয়াতে কবির কিতাবে লিখেন-
এ হাদীস হযরত আবুবকর সিদ্দিক (রাঃ) থেকে যেহেতু মরফু হিসেবে বর্ণিত, সেহেতু আমল করার জন্য এতটুকুই যথেষ্ট। কেননা নবী পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন- তোমাদের উপর আমার সুন্নত এবং আমার খোলাফায়ে রাশেদীনের সুন্নতের অনুসরণ করা অপরিহার্য।
উল্লেখিত দলীলাদির আলোকে বুঝা গেল আযানে নবীজির নাম মোবারক শুনে বৃদ্ধঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে লাগানো মুস্তাহাব। মূল উদ্দেশ্য হল নবীজির প্রতি মুহব্বত। সুতরাং সেই মুহব্বতের কারণে আযান ছাড়া অন্য সময়েও কেউ যদি নবীজির নাম শুনে বৃদ্ধঙ্গুলী চুম্বন করে চোখে লাগায় এটা অবৈধ হবেনা। বরং বরকতময় আমল হিসেবে গণ্য হবে। অতএব নবীপ্রেমের বহিঃপ্রকাশ ঘটে এমন আমলের বিরুধীতা করা এবং ঠাট্রা বিদ্রুপ করা নিঃসন্দেহে নবীর শানে বেআদবী।






Users Today : 341
Users Yesterday : 767
This Month : 14763
This Year : 186634
Total Users : 302497
Views Today : 36181
Total views : 3612924