ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন
মুহাম্মদ ফাইজুল আমিন
বিশ্ব জগতের মুক্তির দিশারী রাহমাতুল্লিল আলামীন হযরত আহমদ মুজতবা মুহাম্মদ মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে ১২ই রবিউল আওয়াল, সোমবার সোবহে সাদিকের সময় এ পৃথিবিতে শুভ আগমন করেন। তাঁর এ শুভ আগমন সম্পর্কে সত্যের মাপকাঠি সাহাবায়ে কেরাম থেকে বিশুদ্ধরূপে বর্ণিত হয়েছে যে, ১২ই রবিউল আওয়াল শরীফ প্রিয় নবী হুযূর আকরাম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর পবিত্র শুভ আগমনের দিন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের দিন সম্পর্কে অনেক বর্ণনা রয়েছে। যেমন হযরত আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন-عن ابى قتادة الانصارى رضى الله تعالى عنه ان رسول الله صلى الله عليه وسلم سئل عن صوم الاثنين فقال : ذاك يوم ولدت فيه ويوم بعثت او انزل على فيه- অর্থাৎ হযরত আবু কাতাদা আল-আনসারী রাদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন: রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার দিন রোজা রাখা সস্পর্কে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন: এই দিন (সোমবারে) আমি জন্মগ্রহন করেছি এবং এই দিনেই আমি নবুয়াত পেয়েছি।
হাফেজ আবূ বকর ইবনে আবী শায়বাহ্ (ওফাত ২৩৫ হিজরী) সহীহ সনদে বর্ণনা করেছেন,عن جابر وابن عباس انهما قالا ولد رسول الله عليه وسلم عام الفيل يوم الاثنين الثانى عشر من شهر ربيع الاول- অর্থঃ হযরত জাবের ও হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বীয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর বেলাদত শরীফ ঐতিহাসিক ‘হস্তি বাহিনী বর্ষের’ (যে বছর আবরাহা তার হস্তিবাহিনী নিয়ে কা’বা শরীফ ধ্বংস করতে এসে নিজে ধ্বংস প্রাপ্ত হয়েছিল) ১২ই রবিউল আওয়াল সোমবার হয়েছিল।
অতএব উপরের বর্ণনা থেকে বুঝা যায় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র মিলাদ (জন্ম) ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে ১২ রবিউল আওয়াল সোমবার হয়েছিল।
রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর আগমনের দিন কেবল ঈমানদারদের জন্য নয় বরং সৃষ্টি জগতের সকলের জন্য আনন্দের ও রহমতের দিন। এ জন্য সারা বিশ্বের ঈমানদার মুসলমানগণ শরীয়ত সম্মত উপায়ে অত্যন্ত ভক্তি ও মর্যাদার সাথে রবিউল আওয়াল মাসে জশ্নে জুলূস ঈদÑএ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করে থাকেন। এটি একটি শরীয়ত সম্মত পূন্যময় আমল। নি¤েœ শরীয়তের আলোকে এর দলিল ও ফজিলত আলোচনা পেশ করা হলোÑ
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অর্থ
প্রচলিত অর্থে ঈদ (عيد) মানে খুশি, আনন্দ, উৎসব, (চষবধংঁৎব)। মিলাদ (ميلاد) অর্থ: জন্মকাল বা জন্মের সময়, ইরৎঃয (চৎড়পবংং ড়ভ) নবরহম নড়ৎহ, পড়সরহম রহঃড় ঃযব ড়িৎষফ; অর্থাৎ পৃথিবীতে আগমনের সময়। (الميلاد) وقت الولادة (المعجم الوسيط)- المولود وقت الولادة : كالمولد والميلاد (القاموس المحيط) অর্থাৎ মিলাদ মানে জন্মের সময়। কুরআনুল কারীমে এর ব্যবহার রয়েছে: আল্লাহ তায়ালা বলেন- والسلام على يوم ولدت অর্থ: আর শান্তি বর্ষিত হোক আমার উপরে যে দিন আমার জন্ম হয়েছিল………………..।
মাওলিদ ও মাওলূদ (مولد ,مولود) শব্দটিও অভিন্ন অর্থ বুঝায়। আর নবী (النبى) শব্দ দ্বরা হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-কে বুঝায়। সে হিসেবে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী অর্থ নবীর জন্মকালের খুশি, পৃথিবীতে তাঁর শুভাগমনকে উপলক্ষ করে বৈধ আনুষ্ঠানিকতার মাধ্যমে আনন্দ উদ্যাপন করা।
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র পরিচয়
‘ঈদ-এ মিলাদুন্নবী’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলতে এ ধরাতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র শুভ আগমনে আনন্দিত হওয়া এবং এ অদ্বিতীয় নিয়ামত পাবার কারণে সৎকাজ ও ইবাদত বন্দেগীর মাধ্যমে আল্লাহর শোকরিয়া আদায় করা।
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন পদ্ধতি
প্রিয় পাঠক, বর্তমান যুগে কেহ কেহ বলে থাকেন, আমাদের দেশে প্রচলিত মিলাদ আর পূর্বযুগের মিলাদ এক নয়। এ’দুয়ের পার্থক্যের একটা মেরুদন্ড নির্মাণ করে উনারা প্রচলিত মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে অবৈধ, হারাম ইত্যাদি ফতোয়া দিয়ে থাকেন। বিষয়টি খোলাসা করা প্রয়োজন। আমাদের দেশের মিলাদ-মাহফিল বলতে কি বুঝায়? বলবেন, মানুষদের একত্রিত হওয়া, সম্মেলন করা, জুলুস তথা শোভাযাত্রা বের করা, আনন্দ প্রকাশে না’তে রাসুল পরিবেশন করা, নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর শান-মান আলোচনা করা, কুরআন-খানি ও দরূদ শরীফ তেলাওয়াত করা, দান-সদকা ও তাবাররুকাতের ব্যবস্থা করা, লাইটিং ও ডেকোরেশন করে মাহফিলটাকে মনোগ্রাহী সাজে সাজানো সর্বোপরী প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর প্রতি প্রেম ভালবাসা প্রদর্শন করা ইত্যাদি। এ-ই আমাদের দেশের বর্তমানকার মিলাদ মাহফিলের পদ্ধতি ও কর্মসূচী।
এবার পূর্ববর্তী কয়েকজন ওলামায়ে কেরামের প্রদত্ত পদ্ধতি তুলে ধরা হলোÑ যাদের গ্রহণযোগ্যতা সর্বকালে, সর্বযুগে এবং প্রশ্নাতীত।
জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ মোল্লা আলী ক্বারী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর কর্মসূচীগুলোকে পর্যায়ক্রমে সাজিয়েছেন এভাবে, “বিভিন্ন খতম পড়া, অবিরাম কুরআন তেলাওয়াত করা, উচ্চ আওয়াজে না’ত বা গজল আবৃত্তি করা, বিভিন্ন প্রকারের বৈধ আনন্দ ও খুশি উদ্যাপন করা এবং উন্নত ভোজন সামগ্রী তথা তাবাররুকাতের এন্তেজাম করা”।
বিশ্ববিখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনে হাজর আসকালানী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বর্ণনা করেন, “মিলাদুন্নবী” সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপনের করণীয়তার ক্ষেত্রে আমাদের উচিত হবে পূর্বে উল্লেখিত কার্যাদির উপর সীমাবদ্ধতা থাকা, যেগুলোর মাধ্যমে আল্লাহর শুকরিয়া জ্ঞাপনের বিষয়টি বুঝা যায়। যেমন- কুরআন তেলাওয়াত, দান-সদকা করা, পানাহার করানো, নবীর শান-মান সম্বলিত কবিতা তথা না’তে রাসুল আবৃত্তি করা এবং এমন সব আধ্যাতিক গজল পরিবেশন করা যেগুলো অন্তরাত্মাকে পারলৌকিক কল্যাণকর নেক আমল করতে তাড়িত করে, জাগিয়ে তোলে”।
হাফিজুল হাদিস আল্লামা শামসুদ্দীন মুহাম্মদ সাখাভী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি থেকেও মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের অনুরূপ পদ্ধতি পাওয়া যায়। তিনি মিশর এবং সিরিয়ার মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলের পদ্ধতি বর্ণনা করার সময় উপরুক্ত কর্মসূচীগুলোর সাথে উত্তম পোশাক পরিধান করা, পানীয় ব্যবস্থা করা, সুগন্ধি ব্যবহার করা, আলোকসজ্জা করা ইত্যাদির কথা উল্লেখ করেন।
হাদীস শাস্ত্রে আবু জুরআ রাজী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি এর নাম জানেনা এরকম মুহাদ্দিস পৃথিবীতে এসেছে কিনা সন্দেহ। তিনি হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ ছিলেন। ৩৭৫ হিজরীতে তিনি দুনিয়া থেকে বিদায় নিয়েছিলেন। সমসাময়িক এবং পরবর্তী যুগের সমস্ত মুহাদ্দিস উনার নাম শুনলেই শ্রদ্ধায় মাথা নত করতে বাধ্য হন।
মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আনুষ্ঠানিকতার শরয়ী পদ্ধতি সম্পর্কে উনাকে একবার জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল। উত্তরে তিনি যে কথা বলেছিলেন তা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণÑ ‘ওলীমার আয়োজন করা এবং মানুষদেরকে আহার করানো সর্বাবস্থায়ই যখন মোস্তাহাব, তখন মর্যাদাপূর্ণ এই রবিউল আওয়াল মাসে নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর নবুয়্যতের নূর প্রকাশিত হওয়ার আনন্দের সাথে উপরোক্ত বিষয়গুলো সংযোজিত হলেতো আর এর বৈধতা ও বরকতময়তার ব্যাপারে প্রশ্নই থাকেনা। সলফে সালেহীন থেকে এ মতামতের বিপরীত কোন কিছুই আমার জানা নেই।
প্রিয় পাঠক! মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে যারা এ যুগের আবিস্কার বলে অপপ্রচার চালায় ইমাম আবু জুরআ রাজী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি এর কাছ থেকে তাদের নতুন করে সবক নেওয়া উচিত। তিনি দু’এক শতাব্দী আগের ইমাম নন বরং সেই হিজরী তৃতীয় শতাব্দীর জগদ্বিখ্যাত হাদীস বিশারদ। তিনি বিশেষ পদ্ধতিতে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অনুষ্ঠানকে বৈধ বলে ফতোয়া দিয়ে গেছেন।
সুতরাং মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপনের পদ্ধতিগুলো হল,
১. নবীয়ে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আগমনের ঘটনাবলী ও শান-মান আলোচনা করা। ২. সম্মেলন তথা জশ্নে জুলূছে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আয়োজন করা। ৩. কুরআন তেলাওয়াত, না’তে রাসুল ও গজল আবৃত্তি করা। ৪. বেশী বেশী নেক আমল করা। ৫. মানুষদেরকে পানাহার করানো তথা তাবাররুক পরিবেশন ও দান-সদকা করা। ৬. দরূদ শরীফ পাঠ করা। ৭. আলোকসজ্জা করা। ৮. সুগন্ধি ব্যবহার করা। ৯. আনন্দ উদ্যাপন করা। ১০. উন্নত বস্ত্র পরিধান করা ইত্যাদি।
প্রিয় পাঠক, নিম্নের কথাগুলো অত্যন্ত মনোযোগ সহকারে লক্ষ্য করুন। তাহলে দেখতে পাবেন, শুধু বর্তমান যুগেই নয় প্রত্যেক যুগেই ভিন্ন ভিন্ন পদ্ধতিতে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপিত হয়ে আসছে। যা কোরআন হাদিস দ্বারা প্রমানিত।
পবিত্র কোরআনের আলোকে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন সম্পর্কে পবিত্র কোরআনুল কারীমের নিম্নোক্ত আয়াতগুলোতে ইরশাদ করা হয়েছেÑ
০১. রোজে আজলে সমস্ত নবী ও রাসুলদেরকে নিয়ে আল্লাহ্ পাকই মিলাদের আয়োজন করেছিলেন। ঐ মাহফিলের উদ্দেশ্য ছিল মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর শান-মান অন্যান্য নবী-রাসূলগণের সামনে তুলে ধরা এবং তাঁদের থেকে তাঁর উপর ঈমান আনয়ন ও সাহায্য সমর্থনের প্রতিশ্রুতি আদায় করা। সুতরাং আয়াতের মধ্যেই মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বা প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আগমনের মজলিশের কথা উল্লেখ রয়েছে এবং এটাই ছিল নবী-রাসুলদের দ্বারা আলমে আরওয়াহÑএর প্রথম মিলাদ। আল্লাহ পাক বলেন,وَإِذْ أَخَذَ اللَّهُ مِيثَاقَ النَّبِيِّينَ لَمَا آتَيْتُكُمْ مِنْ كِتَابٍ وَحِكْمَةٍ ثُمَّ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مُصَدِّقٌ لِمَا مَعَكُمْ لَتُؤْمِنُنَّ بِهِ وَلَتَنْصُرُنَّهُ قَالَ أَأَقْرَرْتُمْ وَأَخَذْتُمْ عَلَى ذَلِكُمْ إِصْرِي قَالُوا أَقْرَرْنَا قَالَ فَاشْهَدُوا وَأَنَا مَعَكُمْ مِنَ الشَّاهِدِينَ অর্থঃ (হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনি স্মরণ করুন সে সময়ের কথা) যখন আল্লাহ তায়ালা সকল নবীদের থেকে অঙ্গিকার নিয়েছিলেন যে, আমি যখন তোমাদেরকে কিতাব ও হিকমত প্রদান করব, অতঃপর তোমাদের নিকট এমন রাসূল আসবেন, যিনি তোমাদের কিতাবগুলো সত্যায়ন করবেন, তখন অবশ্যই উক্ত রাসূলের প্রতি ঈমান আনবে এবং বাধ্যতামূলকভাবে তাঁকে সাহায্য করবে। তোমাদের সকলে (নবীগণ) কি তা স্বীকার করে নিয়েছ এবং আমার (অঙ্গিকার কবুল করে) এতদসংক্রান্ত গুরু দায়িত্ব গ্রহণ করেছ? সকল নবী বললেন, আমরা উক্ত অঙ্গীকারে সুদৃঢ় থাকার নিমিত্তে স্বীকৃতি প্রদান করলাম। আল্লাহ বললেন, তোমরা পরস্পর সাক্ষী হয়ে যাও, আর আমি স্বয়ং তোমাদের সাথে স্বাক্ষদানকারীদের অর্ন্তভূক্ত হয়ে গেলাম।
০২. হযরত ঈসা আলাইহিস সালাম তাঁর উম্মতের কাছে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর দুনিয়ায় আগমনের বিষয়টিকে সু-সংবাদ হিসেবে উল্লেখ করে আল্লাহ রাব্বুল আলামীন কোরআনুল কারীমে এরশাদ করেছেন, وَمُبَشِّرًا بِرَسُولٍ يَأْتِي مِنْ بَعْدِي اسْمُهُ أَحْمَدُ- অর্থঃ আমি তোমাদেরকে আমার পরে একজন রাসুল আগমনের শুভ-সংবাদ দিয়ে যাচ্ছি। তাঁর নাম হবে ‘আহমদ’।
সুতরাং মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর ৫৭০ বৎসর পূর্বে হযরত ঈসা আলাইহিমুস্ সালাম তাঁর উম্মত বণী ইসরাইলকে নিয়ে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর মিলাদ শরীফ (নবীর আগমন বার্তা) কিয়াম (দাঁড়ানো) অবস্থায় পাঠ করার মাধ্যমে আমাদের প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর নাম ও ছানা সিফাত এবং তাঁর আগমন বার্তা জানিয়ে ছিলেন।
০৩. আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِمَّا يَجْمَعُونَ- অর্থঃ (হে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম!) আপনি বলুন, ‘আল্লাহর দয়া ও রহমত প্রাপ্তিতে তারা যেন আনন্দ উদ্যাপন করে। এটা তাদের সমুদয় সঞ্চয় হতে উত্তম।
এ আয়াতে فضل الله(আল্লাহর অনুগ্রহ) ও رَحْمَة الله (আল্লাহর দয়া-করুণা) বলতে কী বুঝানো হয়েছে, তা নিয়ে বিভিন্ন অভিমত পরিলক্ষিত হয়। তবে ইমাম আল্লামা জালাল উদ্দীন সুয়ূতী রহমাতুল্লাহি আলাইহিÑএর বিশ্ববিখ্যাত তাফসীর ‘র্দুরে মানসুর’ এর মধ্যে হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু‘র উদ্ধৃতি দিয়ে বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু এ আয়াতের তাফ্সীরে বলেনÑ এখানে আল্লাহর অনুগ্রহ الفضل বলতে علم আর رحمة বলতে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বুঝানো হয়েছে। আল্লাহ পাক বলেন, ‘আমি আপনাকে বিশ্বজগতের জন্য রহমত করে প্রেরণ করেছি।’ আবার, আসাকীর ও খতীবে বাগদাদী হযরত ইবনে আব্বাস রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে অন্য বর্ণনায় উল্লেখ করেছেন যে, فضل হল ‘মুহাম্মদ’ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম, আর رَحْمَة হল ‘ইলম’। এ দু’টিসহ আরো কতিপয় অভিমত একত্রিত করে হাকীমুল উম্মত আল্লামা মুফতী আহমদ ইয়ার খান নঈমী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি একটি সিদ্ধান্ত দিয়েছেন যে, “আল্লাহর অনুগ্রহ বলতে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং রহমত বলতে কোরআন মাজীদকে বুঝানো হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনÑ وكان فضل الله عليك عظيما (আর আপনার উপর আল্লাহর মহান অনুগ্রহ রয়েছে) অথবা এর বিপরীতও হতে পারে যে, আল্লাহর অনুগ্রহ কোরআন মাজীদ আর রহমত হুজুরÑই আনওয়ার সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। মহান আল্লাহ পাক ইরশাদ করেন, وما ارسلناك الا رحمة للعالمين (আমি আপনাকে সমগ্র জগতের রহমত স্বরূপ প্রেরণ করেছি)। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আগমনকে মহান আল্লাহ তা’য়ালা মানবজাতির জন্য বড় অনুগ্রহ হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, “নিশ্চয়ই আল্লাহর মহান অনুগ্রহ হয়েছে মুসলমানদের উপর যে, তাদের কাছে তাদেরই মধ্য থেকে একজন রসূল প্রেরণ করেছেন”।
৪. সৃষ্টির ইতিহাসে আল্লাহ প্রদত্ত সর্বোত্তম নেয়ামত হলেন তাঁর হাবিব সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আগমন দিবসে তাঁরই শান ও মান তুলে ধরা যে এ আয়াতের উপর যথার্থ আমল, তাতে কোন সন্দেহ নেই। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম যে আল্লাহর নেয়ামত, কোরআনে কারীমের اَلَّذِيْنَ بَدَّلُوْا نِعْمَةَ اللهِ كُفْرًا ‘যারা আল্লাহর নেয়ামতকে কুফুরীতে পরিণত করতে চায়’ আয়াতের তাফসীর করতে গিয়ে হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদ্বিয়াল্লাহু আনহুমা একথা বলিষ্ট ভাষায় ঘোষণা করেন, খোদার শপথ এ আয়াতে ‘যারা’ বলতে মক্কার কুরাইশ কাফেরদের আর نعمة الله দ্বারা ‘মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম’কে বুঝানো হয়েছে।
৫. মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে তাঁর দেয়া নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করার নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন তিনি এরশাদ করেছেনÑفاذكروني اذكركم واشكروالي ولاتكفرون অর্থাৎ সুতরাং তোমরা আমাকে স্মরণ কর, আমি তোমাদেরকে স্মরণ করব। তোমরা আমার প্রতি কৃতজ্ঞ হও, অকৃতজ্ঞ হয়ো না। তাই আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা প্রত্যেক মানুষের উপর কর্তব্য। শুকরিয়া জ্ঞাপনের বিভিন্ন ধরণ রয়েছে। যা মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেন। নেয়ামতের স্মরণ করাও শুকরিয়া জ্ঞাপনের একটি মাধ্যম। নেয়ামতের স্মরণ করার মাধ্যমে আল্লাহর নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপন করা যায়। তাই মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে এরশাদ করেছেনÑ يا بني اسرائيل اذكروا نعمتي التي انعمت عليكم অর্থ হে বনী ইসরাঈল! আমার সেই অনুগ্রহকে স্মরণ করো যদ্বারা আমি তোমাদেরকে অনুগৃহীত করেছিলাম।
তিনি অন্যত্র এরশাদ করেছেনÑ واذكروا نعمة الله عليكم অর্থ্যাৎ তোমাদের প্রতি আল্লাহর অনুগ্রহকে স্মরণ করো। নেয়ামতের শুকরিয়া জ্ঞাপনের আরেকটি মাধ্যম হলো নেয়ামতের বর্ণনা দেয়া, অপরকে জানানো ইত্যাদি। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ তা’য়ালা বলেনÑ وأما بنعمة ربك فحدث অর্থাৎ তুমি তোমার প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা জানিয়ে দাও। অত্র আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন মানুষদেরকে নিদের্শ দিয়েছেন যেন তারা তাদের প্রতিপালকের অনুগ্রহের কথা বর্ণনা করে। আর আল্লাহর নেয়ামতকে নেয়ামত হিসেবে চেনা এর বর্ণনা করা ও শুকরিয়া জ্ঞাপনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হলো ঈদে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু তা’য়ালা আলাইহি ওয়া সাল্লাম।
হাদীস শরীফের আলোকে ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম
মিলদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করা হাদিস দ্বারা প্রমানিত। মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পালন করা সুন্নতে মোস্তফা। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম নিজে ও সাহাবায়ে কেরাম রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু মিলাদুন্নবী পালন করেছেন এ মর্মে অনেক হাদিস পাওয়া যায়। এ সর্ম্পকে কয়েকটি হাদিস নি¤েœ উল্লেখ করা হল।
০১. হযরত আবু ক¦াতাদাহ আনসারী রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু র্বণনা করেন-
ان رسول الله صلى الله عليه وسلم عن صوم يوم الاثنين قال: ذلك يوم ولدت فيه ويوم بعثت او انزل على فيه-
প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম পৃথিবীতে শুভাগমন করেছেন সোমবার। তিনি প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন। রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সোমবার রোজা রাখা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করলে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন- এই দিনে আমি শুভাগমন করেছি, আমি নবী হিসেবে প্রেরিত হয়েছি এবং এ দিনই আমার প্রতি প্রথম ওহী (কুরআন) অবতীর্ণ করা হয়েছে।
০২. একবার সাহাবায়ে কেরাম হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর দরবারে এমন ভীড় করে বসেছিলেন, যেমন চাঁদের চারপাশে আলোর বৃত্ত সৃষ্টি হয়। সাহাবায়ে কেরাম আরজ করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম! আপনার শুভ জন্ম সম্বন্ধে আমাদেরকে কিছু এরশাদ করুন। জবাবে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন, “আমি হলাম আমার পিতা ইবরাহীম আলাইহিস সালামÑএর দোয়ার ফসল এবং ঈসা আলাইহিস সালামÑএর শুভ-সংবাদ। আর আমার মা (আমার জন্মের সময়) তাঁর হতে নূর বের হতে দেখেছেন, যে নূর শাম দেশের প্রাসাদ সমূহকেও আলোকিত করেছিল”।
০৩. প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর শুভ বেলাদতের বর্ণনা দিতে গিয়ে আরো বলেনÑ নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা ইব্রাহীম আলাইহিস সালামÑএর আওলাদ হতে ইসমাঈল আলাইহিস সালামকে নির্বাচন করেছেন এবং ইসমাঈল আলাইহিস সালাম হতে কেনানাহকে নির্বাচন করেছেন এবং কেনানার বংশ হতে কুরাইশ, কুরাইশের বংশ হতে হাশেমকে নির্বাচন করেছেন আর আমাকে হাশেমের আওলাদ হতে নির্বাচন করেছেন।
এছাড়াও মিশকাত শরীফ ১৭৯ পৃ: হযরত আবু কাতাদাহ (রাঃ) (মুসলিম), মিশকাত শরীফ ৫১৩ পৃ: হযরত ইবরাজ ইবনে সারিয়া (রাঃ) (শরহে স্ন্নুাহ ও আহমদ) মুসলিমশরীফ ১ম-৩৬৮ পৃ: বুখারী শরীফ-২য় খন্ড ১১ও ৬৬২ পৃ: হযরত ওমর (রাঃ), বুখারী শরীফ-২য় খন্ড ৭৬৪ পৃ: উরওয়া (রাঃ), ৮নং পৃ: হাশিয়া ইবনে যোবাইর (রাঃ), বুখারী শরীফ-২য় খন্ড কিতাবুন নিকাহ হযরত আব্দুল্লাহ (রাঃ), বুখারী শরীফ-১ম খন্ড ৫৫৪ পৃ:, বুখারী শরীফ বুখারী শরীফ-২য় খন্ড ৫৬৬ পৃ:, বুখারী শরীফ-১ম খন্ড ৫৫৫ পৃ:, আরওয়াহ ইবনে যোবইর (রাঃ)। মিশকাত শরীফ ৩৬৮ ও ৪১৯ পৃষ্ঠা (বায়হাকী শরীফ ১ম খন্ড ৭২-৭৩ ও ২য় ১৩৩ পৃ:), মুসলিম শরীফ ১ম খন্ড ৩১০ ও ৩৬৮ পৃ: মুসনাদে আহমদ ৫ম খন্ড ২৮৭ পৃ:) অনেক হাদিস রয়েছে। এমন কি হযরত ইমাম তিরমিযি রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি তাঁর বিশ্ববিখ্যাত জামে তিরমিযি শরীফের ২য় খন্ড, ২০৩ পৃষ্ঠায় একটি শিরোনাম দিয়েছেন : بَابُ مَا جَاءَ فى مْيلَادُ النَّبِى َصَّلى اللهُ عَلَيْهِ وَسَلَّمَ উপরিউক্ত হাদিস সমূহ দ্বারা প্রমানিত হয় যে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র জন্ম উপলক্ষে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপন করা শুধু বৈধ নয়; বরং অত্যন্ত সওয়াবের কাজ। এটি স্বয়ং রাসুলুল্লাহর সুন্নাত। কারণ তিনি নিজেও আল্লাহর শোকরিয়া জ্ঞাপনার্থে ছাগল জবাই করে ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদ্যাপন করেছেন এবং প্রতি সোমবার রোজা রাখতেন।
ঈদ-এ মিলাদুন্নাবী উদ্যাপন
মহান আল্লাহ কর্তৃক মিলাদুন্নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন
পুর্বেই বলা হয়েছে যে মিলাদুন্নবী উদযাপন বলতে নবীর জন্মকে স্মরণ করা এবং তাঁর জীবন বৃত্তান্ত বর্ণনা করা। মহান রাব্বুল আলামীন পবিত্র কুরআনে পঁচিশ জন নবী রাসূলের মধ্যে হযরত আদম আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত মূসা আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিমুস্ সালাম, হযরত ঈসা আলাইহিমুস্ সালাম ও হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন। যেমন হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিমুস্ সালাম সম্পর্কে আল্লাহ তা’য়ালা এরশাদ করেছেনÑ وسلام عليه يوم ولد অর্থাৎ তাঁর প্রতি শান্তি, যেদিন তিনি (হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিমুস্ সালাম) জন্ম লাভ করেন। এ আয়াতে আল্লাহ তা’য়ালা হযরত ইয়াহ্ইয়া আলাইহিমুস্ সালাম জন্মকালের কথা উল্লেখ করেছেন। আর এটার নাম মিলাদুন্নবী বা নবী র জন্মকাল। তিনি পবিত্র কুরআনে হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সম্পর্কে এরশাদ করেনÑ لقد جاء كم رسول من انفسكم عزيز عليه ما عنتم حريص عليكم بالمؤمنين رؤف رحيم অর্থাৎ অবশ্যই তোমাদের মধ্য থেকেই তোমাদের নিকট এসেছেন একজন মহান রাসূল, তোমাদেরকে যা বিপন্ন করে তা তাঁর জন্য কষ্টদায়ক, তিনি তোমাদের মঙ্গলকামী , মুমিনদের প্রতি ¯েœহশীল পরম দয়ালু। এ আয়াতে মহান রাব্বুল আলামীন আরবদেরকে স্মরণ করে দিলেন যে তাদের নিকট তাদের বংশ থেকেই এক মহান রাসুল এসেছেন। এখানে আসার অর্থ হলো জন্মগ্রহণ করা। এ আয়াতে আল্লাহ তায়ালা হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের জন্ম তথা মিলাদুন্নবীর কথা উল্লেখ করেছেন। এছাড়াও তিনি অসংখ্য আয়াতে হযরত মুহাম্মাদ মুস্তাফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আগমনের কথা উল্লেখ করেছেন। এভাবে তিনি তাঁর প্রেরিত নবী-রাসূলের জন্ম বৃত্তান্ত বর্ণনা করেছেন তথা মিলাদুন্নবী উদযাপন করেছেন। তাই মুমিনগণ তাদের প্রতি প্রেরণের কথা স্মরণ করেন।
সাহাবায়ে কেরামের মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন
নূর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র সাহাবায়ে কেরাম মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করেছেন। আল্লামা ইবনে দাহ্ইয়া রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু প্রণীত ‘তানভীর’ কিতাবে উল্লেখ আছে- عن ابن عباس رضى الله عنهما كان يحدث ذات يوم فى بيته وقائع ولادته صلى الله وسلم فيبشرون ويحمدون اذ جاء النبى صلى الله عليه وسلم وقال حلت لكم شفاعتى- অর্থ: একদিন হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তাঁর ঘরে জনগণকে সমবেত করে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাাইহি ওয়াসাল্লামের বেলাদতের কাহিনী বর্ণনা করেছিলেন, যা শ্রবণ করে উপস্থিত সকলেই আনন্দোৎফুল্ল হৃদয়ে আল্লাহর হামদ (প্রশংসা) করেছিলেন। এমন সময় নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তথায় উপস্থিত হলেন এবং তাদের উদ্দেশ্যে বললেন, তোমাদের জন্য আমার শাফায়াত অবধারিত হয়ে গেল।
‘র্দুরে মুনাজ্জাম’ গ্রন্থে হযরত আবূ আমের আনসারী রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু অভিন্ন প্রক্রিয়ায় মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আলোচনা অনুষ্ঠান করেছেন মর্মে আরো একখানা হাদীস শরীফ বর্ণিত হয়েছে-عن ابى الدرداء رضى الله تعالى عنه قال مررت مع النبى صلى الله عليه وسلم الى بيت عامر الا نصارى يعلم وقائع ولادته لابناءه وعشيرته ويقول هذ اليوم :فقال النبى صلى الله عليه وسلم ان الله فتح عليك ابواب الرحمة وملائكته يستغفرون- অর্থ:- হযরত আবূ দারদা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহু হতে বর্ণিত হয়েছে, একদিন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হযরত আবু আমের আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহুর ঘরে গমন করে দেখতে পেলেন যে, আবু আমের আনসারী রাদিয়াল্লাহু তা’য়ালা আনহু তাঁর নিজ সন্তানাদিসহ অন্যান্য আতœীয়-স্বজনকে একত্রিত করে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর বেলাদতের বিবরণ শুনাচ্ছেন। তাঁর এ কাজে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অত্যন্ত আনন্দ অনুভব করলেন এবং বললেন হে আমের! নিশ্চয় আল্লাহ তা’য়ালা তোমার জন্য রহমতের দ্বার উম্মুক্ত করে দিয়েছেন এবং ফেরেশতা তোমার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করছেন। যারা তোমাদের মতো এরূপ কর্ম করবে তারাও পরিত্রাণ পাবে।
ওলামায়ে কেরামের মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন
প্রিয় পাঠক, যুগে যুগে ওলামায়ে কেরামগণ পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সম্পর্কে এত দীর্ঘ আলোচনা করে গেছেন যে, তা এ ক্ষুদ্র পরিসরে বর্ণনা করা কোন মতেই সম্ভব নয়। এখানে অতি সামান্য উপস্থাপন করার প্রয়াস পাবো।
০১. হাদিস ভাষ্যকার ইমাম মোল্লা আলী ক্বারী আলাইহির রাহমাহ ‘ঈদে মিলাদুন্নবী’ উদযাপনের পক্ষে একটি গ্রন্থ রচনা করেছেন। নি¤েœ এর ক্রিয়দাংশ পেশ করা হল। তিনি বলেন- ان الزاهد القدوة المعمر ابااسحاق ابر اهيم بن الر حيم بن جماعة لما كان بالمدينة النبوية علي سا كنها افضل الصلوة واكمل التحية كان يعمل طعاما في المولد النبي صلي الله عليه وسلم ويطعم الناس……………………………………………. وسميته بالمورد الروي في مولد النبي صلي الله عليه وسلم- অর্থ- অনুসরণীয় সুফি আবু ইসহাক ইবরাহীম বিন আব্দুর রহীম বিন জামায়াহ্ আলাইহির রাহমাহ যখন মদিনা শরীফে ছিলেন, তখন তিনি মিলাদুন্নবী উদযাপন উপলক্ষে খাবার তৈরী করে মানুষদেরকে খাওয়াতেন আর বলতেন- আমার পক্ষে যদি সম্ভব হত, তাহলে পুরো মাস জুড়ে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদযাপন করতাম।
আমি মোল্লা আলী কা¡রী বলছি- আমি যেহেতু (ইবনে জামায়াহর মত সম্পদ ব্যয় করে) যিয়ফত করতে অক্ষম, সেহেতু (ঈদে মিলাদুন্নবী উদযাপনে) এ ক’টি পৃষ্ঠা লিখলাম, যাতে এগুলো এমন অপ্রকাশ্য যিয়াফত হয়ে যায়, যা শুধু মাস বা বছর নয়; বরং যুগ যুগ ধরে চলমান থাকবে। আর এ (পৃষ্ঠাগুলোর) নাম রাখলাম “আল-মাওরিদুর রবী ফি মাওলিদিন্ নবী।”
০২. ইমাম সুয়ূতী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-والعقيقة لاتعاد مرة تانية فيحمل ذالك على ان الذى فعله النبى صلى الله عليه وسلم اظهارا للشكر على ايجاء الله اياه رحمة للعالمين وتشريع لامة كما كان يصلى على نفسه لذالك فيسحب لنا ليضا اظهار الشكر بمولده- অর্থাৎ:- মৌলিকভাবে মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আনন্দ উদ্যাপনার্থে সম্মেলন তথা জুলূস করা মোস্তাহাব এবং ইবাদত।
০৩. শায়খ আব্দুল হক মোহাদ্দেসে দেহলভী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন-لايزال اهل الاسلام يحتفلون بشهر مولده صلى الله عليه وسلم ويعملون الولائم ويتصدقون فى لياليه بانواع الصدقات ويظهروى السرور ويزيدون فى المبرات ويعتنون يقرائة مولده الكريم- – হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর পবিত্র বেলাদতের মাসে মিলাদ-মাহফিলের আয়োজন সমগ্র মুসলিম বিশ্বে সর্বদাই পালিত হয়ে আসছে। ঐ মাসের রাত্রিতে দান-সদকা করে আনন্দ প্রকাশ করা এবং ঐ স্থানে বিশেষভাবে রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আগমনের উপর প্রকাশিত বিভিন্ন ঘটনাবলীর বর্ণনা করা মুসলমানদের বিশেষ আমল সমূহের অন্তর্ভূক্ত।
০৪. ইবনে হাজর আসকালানী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, বুখারী ও মুসলিম শরীফের মজবুত দলীলের উপর ভিত্তি করে পবিত্র ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর বৈধতার মাসআলা প্রমাণ করা আমার কাছে সুস্পষ্ট হয়ে গেছে।
০৫. ইমাম নববী রহ্মাতুল্লাহি আলাইহিÑএর ওস্তাদ আল্লামা আবু শামাহ্ রহ্মাতুল্লাহি আলাইহি الباعث على البدع والحوادث কিতাবে লিখেছেন, মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম মাহফিলে ভাল কাজ করা মোস্তাহাব।
০৬. মোল্লা আলী ক্বারী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি বলেন, সব দেশের ওলামা-মাশায়েখ মাহফিলে মিলাদে মোস্তফা সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও উহার সমাবেশকে এতই তা’জিম করেন যে, কেহই অংশগ্রহণ করতে অস্বীকার করেন না। এতে শরীক হওয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে, এই মোবারক মাহফিলের বরকত হাসিল করা।
০৭. শাহ ওয়ালী উল্লাহ মোহাদ্দেসে দেহলভী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি স্বীয় পিতা হযরত শাহ আব্দুর রহীম দেহলভী রাহ্মাতুল্লাহি আলাইহি এর সূত্র উল্লেখ করে বলেন, আমি প্রতি বছর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর মিলাদ- মাহফিলে খানার ব্যবস্থা করতাম। কিন্তু এক বছর আমি খাবার জোগাড় করতে পারিনি। তবে কিছু ভূনা করা চনাবুট পেয়েছিলাম। অতঃপর আমি তা মিলাদে আগত মানুষের মধ্যে বণ্টন করে দিলাম। পরে আমি স্বপ্নে হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বড়ই খোশ হালে তাশরিফ আনতে দেখলাম এবং তার সামনে মওজুদ রয়েছে উক্ত চনাবুট (যা আমি মাহফিলে বণ্টন করেছিলাম)।
নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আগমনের প্রাক্কালে আজিমুশ্শান মিলাদুন্নবী আয়োজন
আল বেদায়া ওয়ান নেহায়াতে উল্লেখ আছে, হযরত সাইয়্যেদা আমেনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত রেওয়ায়েত অতীব গুরুত্বের সাথে সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, তখন আল্লাহ তায়ালার নির্দেশে মীলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপন করতে পতাকা উড্ডয়ন করা হয়েছিল। তিনি বলেন, অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমার চোখের পর্দা তুলে দিলেন, ভূপৃষ্ঠের পূর্ব-পশ্চিমের সব কিছু আমার সম্মুখে এনে দেয়া হলো, ফলে আমি তা চর্ম চোখে দেখে নিলাম। আর আমি তিনটি পতাকা দেখলাম। একটি পতাকা পৃথিবীর পূর্ব প্রান্তে উড্ডীন করা হয়েছে, দ্বিতীয়টি পশ্চিম প্রান্তে এবং তৃতীয়টি কা’বা ঘরের ছাদে উড্ডীন করা হয়েছে।
আমর বিন কুতাইবা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আমার পিতা থেকে শুনেছি, যিনি ছিলেন একজন জ্ঞান সমুদ্র ব্যক্তিত্ব, ‘যখন হযরত আমিনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা এর খেদ্মতে হুজুরের বেলাদত শরীফের সময় নিকটবর্তী হল, তখন আল্লাহ তায়ালা ফেরেশতাদেরকে বললেনÑ তোমরা আকাশ সমূহের দরজা খুলে দাও জান্নাতের দরজা খুলে দাও। সেদিন সূর্য অনুপম সৌন্দর্যপূর্ণ নূর ধারণ করেছিল এবং আল্লাহ পৃথিবীর সকল মহিলাদের জন্য নির্ধারিত তাকদির করে দিলেন যে, হুজুরের বরকতে তারা পুত্র সন্তান জন্ম দিবে।
হযরত মা আমেনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা বলেন, “যখন হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামÑএর প্রকাশ লাভ হয়, তৎক্ষনাত এমন নূর বের হয়Ñ যা দ্বারা পূর্ব থেকে পশ্চিম পর্যন্ত দিগন্ত আলোকময় হয়ে যায়”।
মাওয়াহেবে লাদুন্নিয়া কিতাবে উল্লেখ আছে যে, হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর পবিত্র শুভ জন্মলগ্নে বেহেশতি হুরগণ হযরত আছিয়া রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা এবং হযতর মরিয়ম আলাইহিস্ সালাম এর নেতৃত্বে তাঁকে অভিবাদন জ্ঞাপন করেছেন। হযরত আমিনা রাদ্বীয়াল্লাহু আনহা থেকে নিম্ন বর্ণিত হাদিসে আশ্চর্যান্বিত ঘটনা এভাবে বিবৃত হয়েছেÑ ‘তিনি বলেন, মহিলাদের ন্যায় আমার যখন প্রসব বেদনা শুরু হল, তখন আমি একটি বিকট আওয়াজ শুনলাম। যদ্দরুণ আমার মধ্যে ভীতি সঞ্চারিত হল। অতঃপর আমি দেখলাম যে, একটি ধুসর বর্ণের পাখির পালক আমার হৃদয় ছুঁয়ে দিল, ফলে আমার সব রকম ভয়-ভীতি ও ব্যথা বিদূরিত হতে লাগল। অতঃপর আমার দৃষ্টি নিবদ্ধ হতেই হঠাৎ দেখলাম যে, আমার সামনে সাদা পানীয় (শরবত) পেশ করা হল এবং বৃত্ত আমাকে পরিবেষ্টন করল। আমি দেখলাম, এমন কতগুলো সুন্দরী রমনীদেরকে, যাদের গঠন প্রকৃতি লম্বায় খর্জ্জুর বৃক্ষ ও আবদে মানাফের কন্যাদের মত মনে হচ্ছিল। তারা আমাকে তাদের অঙ্গনে নিয়ে গেল। তখন আমি সেই ভেবে হয়রান হয়ে গেলাম যে, এঁরা কোথা থেকে এলো এবং তাঁরা এই বেলাদতের সংবাদটি কি করে অবগত হলো! তখন তাঁরাই বলল, আমি ফেরআউনের বিবি আছিয়া এবং আমি ইমরান তনয়া মরিয়ম আর আমাদের সাথে এরা হল জান্নাতের হুর (সুবহানাল্লাহ্)।
উপরোক্ত আলোচনার দ্বারা বুঝা গেল, রাসুলে পাক সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামা’র “মিলাদ” ১২ই রবিউল আওয়াল ৫৭০ খ্রিষ্টাব্দে সোমবার সোবহে সাদিকের সময় হয়েছে এবং এই সোমবারের বরকতে বৎসরের ৫২টি সোমবার ফজিলত ও বরকতময় হয়ে গিয়েছে, এবং হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম প্রতি সোমবার রোজা পালন করতেন, আর হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম “মিলাদুন্নবী” উপলক্ষে সোমবারে রোজা পালন করার অনুমতি ও উৎসাহ প্রদান করেছেন।
নবম শতকের মুজাদ্দিদ আল্লামা জালাল উদ্দিন সুয়ূতী রাহমাতুল্লাহি আলাই বলেন-يستحب لنا اظهار الشكر لمولده عليه السلام- অর্থাৎ: মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আলোচনা করে শোকর আদায় করা আমাদের জন্য মুস্তাহাব।
পরিশেষে, ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপনের সাথে জড়িত আছে মুসলিম ইতিহাস ও ঐতিহ্য। প্রতি বছর ঈদ-এ মিলাদুন্নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উদ্যাপনের মাধ্যমে মুসলিম জাতি প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর শিক্ষা ও জীবন ব্যবস্থাকে নিজেদের কর্মজীবনে বাস্তবায়নের মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে সুন্দর করে গড়ে তোলার উদ্দেশ্যে নতুন করে প্রতিশ্রুতিবদ্ব হয়। এ দিন বিশ্ব মুসলিমের জন্য নতুন করে আত্মিক পরিশুদ্বির দিন। প্রবিত্র এই দিনে পৃথিবীতে মানবজাতির প্রত্যেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে নিজেদের জীবনেও যদি তাঁর আদর্শকে বাস্তবায়নের চেষ্টা চালান তাহলে একটি আদর্শ পৃথিবী গড়ে উঠতে পারে। আমরা প্রত্যাশা করি প্রত্যেকে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর জীবন থেকে শিক্ষা নিয়ে ব্যক্তি জীবনেও তার প্রয়োগ ঘটাতে সচেষ্ট হবেন। এ দিনে আমরা এ শপথ নেব যে নামাজ পরিত্যাগ করবো না, হালাল-হারাম মেনে চলবো। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর আদর্শে নিজেদের জীবন গড়বো। প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর গোলামী করব। কেননা, প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর গোলামী ছাড়া মুক্তি মিলবে না।
দার্শনিক আল্লামা ইকবালের ভাষায়,
“مصطفے برسان خویش راکہ دین ہمہ اویست
اگربا ونر سیدی تمام بولھبی ست”
অর্থঃ তুমি মোস্তফার চরনে নিজেকে সম্পূর্ণভাবে বিলীন করে দাও। যদি তা না পার তবে তুমি আর আবু লাহাবের মধ্যে কোন পার্থক্য নাই।
সর্বোপরি, নবী করীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এর প্রেমে উজ্জীবিক হয়ে সত্যিকার মু’মিন মুসলমানে পরিণত হওয়ার দৃপ্ত শপথ নিয়ে প্রিয় নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামÑএর কাছে নিজের জীবনকে বিলীন করার মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার সন্তষ্টি লাভ করার একমাত্র দিন ১২ রবিউল আউয়াল। আল্লাহ পাক রাব্বুল আলামীন প্রিয় নবীর গোলামীর মাধ্যমে আল্লাহ তা’আলার সন্তষ্টি লাভ করার তাওফিক দান করুন। আমিন! বিহুরমাতি সায়্যিদিল মুরসালিন সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম।