মুহাম্মদ ফারুকুল ইসলাম বুলবুল, বানছারামপুর, ব্রাহ্মণবাড়ীয়া,
প্রশ্ন: মহিলাদের কবর যিয়ারতের বিধান কি? কবর যিয়ারতের উত্তম সময় কখন, কবর যিয়ারতের নিয়মাবলী ও দোয়া কালাম কি? হক্কানী পীর-মাশায়েখ ও আউলিয়া কেরামগণের মাজার শরীফ যিয়ারতের আদব ও করণীয় বিস্তারিত জানিয়ে ধন্য করবেন।
উত্তর: শরিয়ত বিশেষজ্ঞ ইমামগণের মতে পুরুষ লোকের জন্য কবর যিয়ারত করা বিনা শর্তে সুন্নাত। তবে মেয়ে লোকদের ব্যাপারে ফোকহায়ে এযামের ভিন্ন মত রয়েছে। যেমন সাহেবে দুররুল মুখতার ইমাম আলাউদ্দিন খাচকপি হানাফী আলায়হির রহমত সাধারণভাবে মহিলাদের জন্য কবর যিয়ারতকে বৈধ বলেছেন তবে আপনজনদের কবরে গেলে মহিলারা বুক ফাটা আর্তনাদ করে এবং ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে এ কারণে তাদের জন্য আপন জনের কবর যিয়ারত নিষিদ্ধ।
বুজর্গানে দ্বীনের কবরে বরকত হাসিলের উদ্দেশ্য বৃদ্ধ মহিলাগণ গমন করলে ক্ষতি নেই। যুবতী মহিলাদের জন্য নিষিদ্ধ। তবে বর্তমানে ফিতনার জামানায় নির্ভরযোগ্য অভিমত অনুযায়ী মহিলাদের কবর যিয়ারতের উদ্দেশ্যে ঘর হতে বের হওয়া নিষেধ। যেহেতু তারা আপনজনদের কবর যিয়ারতে ধৈর্যহীন ও অস্থির হয়ে যায় আর বুজর্গাণে দ্বীনের কবর যিয়ারতে সীমা লঙ্গণ করে বসে যা বেআদবীর নামান্তর। তদুপরি মহিলাদের ইজ্জত-আবরু ও পর্দা রক্ষা করা ফরয সুতরাং ফরযকে প্রাধান্য দিতে হবে। তাই ইমাম আলা হযরত আহমদ রেযা রাহমাতুল্লাহি আলায়হি বলেছেন, ফিত্না-ফ্যাসাদ থেকে মহিলাদের রক্ষার জন্য তাদের জন্য কবর জিয়ারত নিষিদ্ধ।
কবর যিয়ারত প্রতি সপ্তাহে একদিন মুস্তাহাব। শুক্রবার, বৃহস্পতিবার, শনিবার ও সোমবার দিবস সমূহে যিয়ারত করা ভাল। সব চেয়ে উত্তম হলো জুমার দিন সকাল বেলা যিয়ারত করা । কবর যিয়ারতের নিয়ম হলো কবরে শায়িত মৃত ব্যক্তির পায়ের দিক থেকে গিয়ে সম্ভব ও সুযোগ হলে মৃতব্যক্তির মুখের সামনে দাঁড়াবে, মাথার দিক থেকে আসবে না। এটা মৃত ব্যক্তির জন্য কষ্টের কারণ হয় অর্থাৎ তখন মৃত ব্যক্তি আগমনকারীকে গর্দানে ফিরায়ে দেখতে হয়। তারপর আস্সালামু আলায়কুম ইয়া আহলাল দারে কওমিন মুমেনিন দোয়াটি শেষ পর্যন্ত পড়বে। বসার ইচ্ছা হলে এতটুকু দূরত্বে বসবে যতটুকু দূরত্বে উনার জীবদ্দশায় উনার পাশে বাসা হতো তারপর সুরা ফাতেহা, আলিফ লাম মিম থেকে মুফলেহুন পর্যন্ত, আয়াতুল কুরসী, আমানার রসুলু শেষ পর্যন্ত, সুরা ইয়াসীন, সুরা মুলুক, সুরা তাকাছুর সম্ভব হলে একবার করে পাঠ করবে, সুরা এখলাস একবার, বা এগারবার বা সাতবার, বা তিনবার পাঠ করবে এবং দোয়া মুনাজাতে এসবের সওয়াব কবরবাসী মৃতদের রূহে পৌঁছাবে। এবং সকলের জন্য দোয়া করবে। যদি এসব সূরা কেরাত জানা না থাকে তখন কবরবাসীকে সালাম জানিয়ে পবিত্র কুরআন হতে সূরা কেরাত যা জানে তা পড়ে মুনাজাত করবে।
আউলিয়ায়ে কেরামের পবিত্র মাজার সমূহে যিয়ারতে যাওয়া অনেক উত্তম কাজ। তারা যিয়ারতকারীদের উপকার করে থাকেন। যিয়ারত কালে পায়ের দিক থেকে গিয়ে আল্লাহ্র অলির মুখের সামনে দাঁড়াবে তারপর উক্ত অলির দরবারে সালাম আরয করবে। দরবারে আসা যাওয়া, ওঠা বাসা ইত্যাদিতে আদবের প্রতি সজাগ দৃষ্টি রাখবে। যিয়ারতকালে গভীর ভাবে একাগ্রচিত্তে আল্লাহর অলির প্রতি ভক্তি সম্মান প্রদর্শন করবে। সাধ্য অনুসারে সুরা কেরাত দোয়া দরূদে পাঠরত থাকবে। এবং উক্ত অলিকে উসিলা করত মহান আল্লাহর দরবারে ফরিয়াদ করবে।
[কৃত: ইমাম আলাউদ্দিন- দুররুল মুখতার, কৃত. ইমাম খাচকাপি হানাফী – রদ্দুল মোহতার কৃত: ইমাম আমিন ইবনে আবেদীন শামী ও ফতোয়ায়ে রজভীয়া কৃত: ইমাম আহমদ রেযা আলায়হির রহমা ইত্যাদি]