ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী
তওবা ও ইস্তেগফার শব্দদুটি প্রায় সমার্থক। তওবা অর্থ ফিরে আসা, পাপের পথ ছেড়ে পুণ্যের পথে ফিরে আসা, আল্লাহর অবাধ্যতা থেকে আনুগত্যের দিকে ফিরে আসা, ভুল পথ ছেড়ে মহান প্রতিপালকের দিকে ফিরে আসা। আর ইস্তেগফার অর্থ কৃত গোনাহের জন্যে আল্লাহর কাছে অনুতাপ ও অনুশোচনার সঙ্গে ক্ষমা প্রার্থনা করা। আর এ তওবা-ইস্তেগফার গোনাহের অভিশাপ থেকে নিজেকে পবিত্র করার একটি বড় হাতিয়ার। মানবীয় দুর্বলতার কারণেই আমরা শিকার হই শয়তানের কুমন্ত্রণার। আর তখন বিভিন্ন গোনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ি। সে গোনাহ থেকে মুক্তির পথই হচ্ছে তওবা ও ইস্তেগফার। তাওবা ও ইস্তিগফার একজন মুমিনকে নিষ্পাপ ও নিষ্কলুষ জীবন দান করে। মুমিনকে সর্বদা গুনাহমুক্ত জীবনের প্রতি অনুপ্রাণিত করে। মুমিনকে ঈমান ও আমলের ক্ষেত্রে উন্নতি ও মর্যাদার সুউচ্চ শিখরে নিয়ে যায়।
আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেন-
یٰۤاَیُّهَا الَّذِیْنَ اٰمَنُوْا تُوْبُوْۤا اِلَی اللّٰهِ تَوْبَةً نَّصُوْحًا، عَسٰی رَبُّكُمْ اَنْ یُّكَفِّرَ عَنْكُمْ سَیِّاٰتِكُمْ وَ یُدْخِلَكُمْ جَنّٰتٍ تَجْرِیْ مِنْ تَحْتِهَا الْاَنْهٰرُ.
হে মুমিনগণ! তোমরা আল্লাহর নিকট তওবা করো-বিশুদ্ধ তওবা। আশা করা যায়, তোমাদের প্রভু তোমাদের পাপগুলো মুছে দেবেন এবং তোমাদেরকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন, যার পাদদেশে নদীসমূহ বয়ে যায়। [সূরা তাহরীম (৬৬) : ৮]
وَ یٰقَوۡمِ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ثُمَّ تُوۡبُوۡۤا اِلَیۡهِ یُرۡسِلِ السَّمَآءَ عَلَیۡکُمۡ مِّدۡرَارًا وَّ یَزِدۡکُمۡ قُوَّۃً اِلٰی قُوَّتِکُمۡ وَ لَا تَتَوَلَّوۡا مُجۡرِمِیۡنَ
‘হে আমার কওম, তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও এরপর তার কাছে তওবা কর, তাহলে তিনি তোমাদের উপর মুষলধারে বৃষ্টি পাঠাবেন এবং তোমাদের শক্তির সঙ্গে আরো শক্তি বৃদ্ধি করবেন। আর তোমরা অপরাধী হয়ে বিমুখ হয়ো না।’ (সুরা হুদ : আয়াত ৫২)
وَ مَنۡ یَّعۡمَلۡ سُوۡٓءًا اَوۡ یَظۡلِمۡ نَفۡسَهٗ ثُمَّ یَسۡتَغۡفِرِ اللّٰهَ یَجِدِ اللّٰهَ غَفُوۡرًا رَّحِیۡمًا
‘আর যে ব্যক্তি মন্দ কাজ করবে কিংবা নিজের প্রতি জুলুম করবে তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইবে; সে আল্লাহকে পাবে ক্ষমাশীল ও পরম দয়ালু।’ (সুরা নিসা : আয়াত ১১০)
وَّ اَنِ اسۡتَغۡفِرُوۡا رَبَّکُمۡ ثُمَّ تُوۡبُوۡۤا اِلَیۡهِ یُمَتِّعۡکُمۡ مَّتَاعًا حَسَنًا اِلٰۤی اَجَلٍ مُّسَمًّی وَّ یُؤۡتِ کُلَّ ذِیۡ فَضۡلٍ فَضۡلَهٗ ؕ وَ اِنۡ تَوَلَّوۡا فَاِنِّیۡۤ اَخَافُ عَلَیۡکُمۡ عَذَابَ یَوۡمٍ کَبِیۡرٍ
‘আর তোমরা তোমাদের রবের কাছে ক্ষমা চাও। তারপর তার কাছে ফিরে যাও, (তাহলে) তিনি তোমাদেরকে নির্ধারিত সময় পর্যন্ত উত্তম ভোগ-উপকরণ দেবেন এবং প্রর্তেক আনুগত্যশীলকে তাঁর আনুগত্য মুতাবিক দান করবেন। আর যদি তারা ফিরে যায়, তবে আমি নিশ্চয়ই তোমাদের উপর বড় এক দিনের আজাবের ভয় করছি।’ (সুরা হুদ : আয়াত, ৩)
তাওবা ও ইস্তিগফারের উপকারিতায় রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের বক্তব্য প্রণিধানযোগ্য। তিনি বলেন—
عن ابن عباس، رضي الله عنهما قال: قال رسولُ الله صلَّى الله عليه وسلم: مَنْ لَزِمَ الاستغفارَ جَعَلَ الله له من كل ضيق مَخرَجاً، ومن كل هم فرَجاً، ورزقَه من حيث لا يحتسب.
যে ব্যক্তি বেশি বেশি ইস্তিগফার করবে আল্লাহ তাআলা তার সকল সংকট থেকে উত্তরণের ব্যবস্থা করে দেন, তার সকল পেরেশানী দূর করে দেন এবং তাকে এমন জায়গা থেকে রিযিক দান করেন, যা সে কল্পনাও করতে পারে না। [সুনানে আবু দাউদ, হাদীস ১৫১৮]
عَنْ أَنَس بْن مَالِكٍ، قَالَ سَمِعْتُ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم يَقُولُ : “ قَالَ اللَّهُ يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ مَا دَعَوْتَنِي وَرَجَوْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ عَلَى مَا كَانَ فِيكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ لَوْ بَلَغَتْ ذُنُوبُكَ عَنَانَ السَّمَاءِ ثُمَّ اسْتَغْفَرْتَنِي غَفَرْتُ لَكَ وَلاَ أُبَالِي، يَا ابْنَ آدَمَ إِنَّكَ لَوْ أَتَيْتَنِي بِقُرَابِ الأَرْضِ خَطَايَا ثُمَّ لَقِيتَنِي لاَ تُشْرِكُ بِي شَيْئًا لأَتَيْتُكَ بِقُرَابِهَا مَغْفِرَةً ”.
আনাস ইবনু মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন-
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে আমি বলতে শুনেছি : আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ হে আদম সন্তান! যতক্ষণ আমাকে তুমি ডাকতে থাকবে এবং আমার হতে (ক্ষমা পাওয়ার) আশায় থাকবে, তোমার গুনাহ যত অধিক হোক, তোমাকে আমি ক্ষমা করব, এতে কোন পরওয়া করব না।
হে আদম সন্তান! তোমার গুনাহ্র পরিমাণ যদি আসমানের কিনারা বা মেঘমালা পর্যন্তও পৌছে যায়, তারপর তুমি আমার নিকট ক্ষমা প্রার্থনা কর, আমি তোমাকে ক্ষমা করে দেব, এতে আমি পরওয়া করব না।
হে আদম সন্তান! তুমি যদি সম্পূর্ণ পৃথিবী পরিমাণ গুনাহ নিয়েও আমার নিকট আস এবং আমার সঙ্গে কাউকে অংশীদার না করে থাক, তাহলে তোমার কাছে আমিও পৃথিবী পূর্ণ ক্ষমা নিয়ে হাযির হব। [সূত্র: জামে আত-তিরমিজি, হাদিস : ৩৫৪০]
তওবার দো‘আ :
(১) নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে ক্ষমাপ্রার্থনার একটি দুআ শিখিয়েছেন এভাবে-
…فَاغْفِرْ لِيْ مَا قَدَّمْتُ وَمَا أَخَّرْتُ وَأَسْرَرْتُ وَأَعْلَنْتُ وَمَا أَنْتَ أَعْلَمُ بِهِ مِنِّيْ
… আপনি আমাকে ক্ষমা করে দিন (আমার সকল গোনাহ), যা আমি আগে করেছি, যা পরে করেছি, যা গোপনে করেছি, যা প্রকাশ্যে করেছি এবং যে গোনাহ সম্পর্কে আপনি আমার চেয়ে বেশি অবহিত। -সহীহ বুখারী, হাদীস ৭৪৪২
(২) أَسْتَغْفِرُ اللهَ الَّذِيْ لآ إِلَهَ إِلاَّ هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّوْمُ وَأَتُوْبُ إِلَيْهِ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা ইলা-হা ইল্লা হুওয়াল হাইয়ুল ক্বাইয়ূমু ওয়া আতূবু ইলাইহে’ (আমি আল্লাহর নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি। যিনি ব্যতীত কোন উপাস্য নেই। যিনি চিরঞ্জীব ও বিশ্বচরাচরের ধারক এবং আমি তাঁর দিকেই ফিরে যাচ্ছি (বা তওবা করছি)।[ মিশকাত হা/২৩৫৩]
(৩) رَبِّ اغْفِرْ لِيْ وَتُبْ عَلَيَّ إِنَّكَ أَنْتَ التَّوَّابُ الرَّحِيْمُ রব্বিগফিরলী ওয়া তুব ‘আলাইয়া, ইন্নাকা আনতাত তাউওয়া-বুর রহীম’ (হে আমার প্রতিপালক! আমাকে ক্ষমা কর ও আমার তওবা কবুল কর। নিশ্চয়ই তুমি তওবা কবুলকারী ও দয়াবান) ১০০ বার।[মিশকাত, হা-২৩৫২ ]
আসুন রোযার মাসে নিজেকে পরিশুদ্ধ করার উদ্দেশ্যে তাওবা করি।
ড. এ. এস. এম. ইউসুফ জিলানী, চট্টগ্রাম।
রমযান ০১, ১৪৪৫ হি. /মার্চ ১২, ২০২৪ ইং।






Users Today : 552
Users Yesterday : 677
This Month : 7127
This Year : 178998
Total Users : 294861
Views Today : 9320
Total views : 3515449