ইসলামী আইন অনুযায়ী রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক সুস্থ ব্যক্তির জন্য ফরজ। তাই ফজরের আগে সেহরি খেয়ে রোজা শুরু করা উচিত এবং সন্ধ্যায় ইফতারের মাধ্যমে রোজা শেষ করা উচিত। তবে এই দুই সময়ে নিয়ত ও দুআ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। অন্য কথায়, সেহরির পর রোজা রাখার নিয়ত করতে হবে এবং ইফতারের আগে দোয়া পড়ে ইফতার শুরু করতে হবে।
রোজার নিয়ত
সম্মানিত পাঠক বন্ধুরা আস্সালামু আলাইকুম, আজ আপনাদের জন্য নিয়ে আসলাম ” রোজার নিয়ত” আশা করি এই পোস্টটা আপনাদের অনেক ভালো লাগবে।
- মুসলিম নর-নারীগণ সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ইবাদতের নিয়্যতে পানাহার এবং যৌন সম্ভোগ থেকে বিরত থাকাই রোযা। নারীদের বেলায় এ সময় হায়েজ-নেফাস থেকে পবিত্র থাকা পূর্বশর্ত। [আলমগীরী]
- রমযানের রোযা রাখা মুসলমান বালেগ, বিবেকবান ও সুস্থ পুরুষ এবং একই ধরনের হায়েজ ও নেফাস থেকে মুক্ত নারীদের উপর ফরযে আইন। অস্বীকার বা ঠাট্টা করলে কাফির হবে আর বিনা অজুহাতে অবহেলা বশত আদায় না করলে কবীরা গুনাহগার ও ফাসিন্ধু হয়ে যাবে। [রদ্দুল মুহতার ও আলমগীরী]
- রযমানের একমাস রোযা পালন করা ফরয। হাদীস শরীফে বর্ণিত যে, হুযুর সাল্লাল্লাহু তা’আলা আলায়হি ওয়াসাল্লাম এরশাদ করেছেন, ‘মাস ঊনত্রিশ দিনেও হয় বিধায় চাঁদ দেখে রোযা শুরু কর এবং চাঁদ দেখেই (রোযা) রাখা বন্ধ কর। যদি উনত্রিশে রমযান চাঁদ দেখা না যায় তবে ত্রিশ দিন পূর্ণ করবে।। খাযাই নুল ইরফান।
রোজার নিয়ত – রোজার নিয়ত আরবি
- রোযার জন্য নিয়্যত করাও অত্যাবশ্যক। প্রত্যেক রোযার জন্য অন্তরে ইচ্ছা থাকলে নিয়্যতের শর্ত পূরণ হবে। তবে তা মুখে উচ্চারণ করা মুস্তাহাব। এ নিয়্যত পূর্বদিনের সূর্যাস্তের পর হতে রোযার দিনের দুপুরের আগে পর্যন্ত করা যাবে। এর আগে বা পরে করলে রোযা হবে না।
- রোযার নিয়্যতে সাহরী খাওয়াও নিয়্যত হিসেবে গণ্য হবে।
রোজার নিয়ত
সুবহে সাদিকের পূর্বে নিয়্যত করলে বলবেন-
নাওয়াইতু আন্ আসুমা গাদাম মিন্ শাহরি রামাদ্বা- নাল্ মুবারাকি ফারদ্বাল্ লাকা ইয়া আল্লাহু ফাতাকুব্বাল মিন্নী ইন্নাকা আন্তাস্ সামীউল ‘আলীম।
অর্থাৎ- আমি আল্লাহর জন্য আগামী কাল রমযানের ফরয রোযার নিয়্যত করলাম। ইয়া আল্লাহ্ আমার রোযা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞাতা।
আর ফজরের পর নিয়্যত করলে বলবেন-
নাওয়াইতু আন্ আসুমা হাযাল ইয়াওমা লিল্লাহি তা’আলা মিন ফারদ্বির রামাদ্বানা।
অর্থাৎ- আল্লাহর জন্য আমি আজকের রমযানের ফরয রোযা রাখার নিয়্যত করলাম।
নফল রোজার নিয়ত – শবে বরাত রোজার নিয়ত
একতা কথা মাথায় রাখতে হবে , যে নিয়ত আরবি শব্দ , নিয়ত মানে ইরাধা করা বা ইচ্ছা করা, আমরা যখনই রোজা রাখার ইচ্ছা করি (মনে মনে ) তখনই নিয়ত হয়ে যায়, আল্লাহ মানুষের অন্তরের দিকে দৃষ্টি প্রদান করে । তাই আমাদের উচিত সকল ভাল কাজে ভাল ভাল নিয়ত করা ।
নফল রোজা এবং শবে বরাতের রোজার নিয়ত একই ।
- রোযার নিয়্যত রাতে বা ফজরের আগে করাই মুস্তাহাব। রোযার নিয়্যত কার্যকর হয় সুবহে সাদিক হতে। অতএব, কারো দিনের বেলার (মধ্যাহ্নের পূর্ব পর্যন্ত) নিয়্যত ঐ সময়ই শুদ্ধ হতে পারে যদি নিয়্যতকারী সুবহে সাদিক হতে রোযা ভঙ্গের কোন কাজ না করে। [রদ্দুল মুহতার]
- সাহরী খাওয়ার সময় বা সুবহে সাদিকের পূর্বে যদি মনস্থ করে যে, সকালে রোযা রাখবে না এবং এর উপর নতুন নিয়্যত না করলে রোযা হবে না। যদিও সে সারাদিন পানাহার ও যৌন সঙ্গম পরিহার করে।[দুররে মুখতার ও রদ্দুল মুহতার।
- সাহরী খাওয়া রোযার নিয়্যত রূপে গণ্য হয়। কিন্তু সে সময় যদি এই ইচ্ছা থাকে যে, সকালে রোযা রাখবে না তাহলে সাহরী খাওয়া নিয়্যত বলে গণ্য হবে না।
- মুসাফির ও পীড়িত লোক ব্যতীত অন্য কেউ রমযানের রোযার সময় নফল কিংবা ওয়াজিব কিংবা পূর্ববর্তী কোন কাযার নিয়্যত করে তবুও তার রমযানের রোযাই আদায় হবে। পক্ষান্তরে মুসাফির ও পীড়িত লোক যদি রমযান ব্যতীত অন্য কোন রোযার নিয়্যত করে তবে যা নিয়্যত করে তাই আদায় হবে- রমযানের নয়। [তানভীর আবসার]
- যদি কোন নারী হায়েয বা নেফাস অবস্থায় রাতে রোযার নিয়্যত করে থাকে এবং সুবহে সাদিকের পূর্বেই পবিত্র হয়ে যায়, তবে তার রোযা শুদ্ধ হবে। [জাওহারা]
রোজার আরবি নিয়ত:
نَوَيْتُ اَنْ اُصُوْمَ غَدًا مِّنْ شَهْرِ رَمْضَانَ الْمُبَارَكِ فَرْضَا لَكَ يَا اللهُ فَتَقَبَّل مِنِّى اِنَّكَ اَنْتَ السَّمِيْعُ الْعَلِيْم
রোজার নিয়তের বাংলা উচ্চারণ : নাওয়াইতু আন আছুমা গাদাম, মিন শাহরি রমাদানাল মুবারাক; ফারদাল্লাকা ইয়া আল্লাহু, ফাতাকাব্বাল মিন্নি ইন্নিকা আনতাস সামিউল আলিম।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি আগামীকাল পবিত্র রমজান মাসের ফরজ রোজা পালনের ইচ্ছা করছি। সুতরাং আমার কাছ থেকে (রোযা তথা পানাহার থেকে বিরত থাকা) কবুল করুন, নিশ্চয়ই আপনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।
ইফতারের দোয়া
بسم الله اَللَّهُمَّ لَكَ صُمْتُ وَ عَلَى رِزْقِكَ اَفْطَرْتُ
বাংলা উচ্চারণ : আল্লাহুম্মা লাকা ছুমতু ওয়া আলা রিযক্বিকা ওয়া আফতারতু বিরাহমাতিকা ইয়া আরহামার রাহিমিন।
অর্থ : হে আল্লাহ! আমি তোমারই সন্তুষ্টির জন্য রোজা রেখেছি এবং তোমারই দেয়া রিজিজের মাধ্যমে ইফতার করছি। (মুআজ ইবনে জাহরা থেকে বর্ণিত, আবু দাউদ, হাদিস : ২৩৫৮)