কুরবানী ও আকীকা সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল
মাওলানা আব্দুস জাহেরআজহারী
জিলহাজ্জ আরবী মাসসমূহের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাস। জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ কুরবানীর দিন। কুরবানী শব্দটি আরবীকুরবান শব্দ থেকেহউদ্ভুত। ফিকহী পরিভাষায় একমাত্র আল্লাহর সন্তুষ্টি ও নৈকট্য লাভেরউদ্দেশ্যে নির্দিস্ট দিনে নির্দিষ্ট সময়ে নির্দিষ্ট ব্যক্তির পক্ষে হালালনির্দিষ্ট পশু যবেহকরাকে উযহিয়্যা বা কুরবানী বলা হয়। (হিদায়া ৪র্থ খন্ড, শামী ৫ম খন্ড, পৃঃ ২১৯)
কুরবানীর তাৎপর্য হল, ত্যাগ, তিতিক্ষা ও প্রিয়বস্তু আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উৎসর্গ করা। প্রচলিত কুরবানী মূলতঃ হযরত ইব্রাহিম খলিলুল্লাহর অপূর্ব আত্ম-ত্যাগের ঘটনারই স্মৃতিচারণ। যেই আবেগ, অনুভূতি, প্রেম-ভালবাসা ও ঐকান্তিকতা নিয়ে কুরবানী করেছিলেন ইব্রাহীম (আঃ), সেই আবেগ, অনুভূতি ও ঐকান্তিকতার অবিস্মরণীয় ঘটনাকে জীবন্ত রাখার জন্যইমহান আল্লাহ উম্মাতে মুহাম্মদীর উপর কুরবানী ওয়াজিব করে দিয়েছেন। তাই কুরবানী কুরবানী কেবল আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য। সূরামায়েদায় ২৭ নং আয়াতে বলা হয়েছে, “ইন্নামা ইয়াতাকাব্বালুল্লাহু মিনাল মুত্তাকীন।” (অবশ্যই আল্লাহ মুত্তাকীদের কুরবানী কবুলকরেন)। আল্লাহ পাক আরো বলেন, “লাইয়্যানালাল্লাহা লুহুমুহা ওয়ালা দিমাউহা ওয়ালা কিয়্যানালুহুত্ তাকওয়া মিনকুম।” (আল্লাহর নিকট (কুরবানীর পশুর) গোশত, রক্তপেঁৗছায় না; বরং পেঁৗছায় তোমাদের তাকওয়া)। সূরা হাজ্জ, আয়াত নং-২২।
কুরবানী মহান একটিইবাদাত। সেই ইবাদাতটি সহীহ তরিকাহ্ মোতাবেক করতে হলে যে সকল জরুরী বিষয়গুলো জানা অত্যাবশকীয়। আজকের লিখনীতে সেই সকল টিপসগুলোই রইলো সম্মানিত পাঠকপাঠিকাদের জন্য।
কুরবানীর প্রকারভেদ ঃ কুরবানী দুই প্রকার।
(এক) ওয়াজিব কুরবানী।
(দুই) নফল কুরবানী।
যার উপর কুরবানী ওয়াজিব ঃ
১। জ্ঞান সম্পন্ন, প্রাপ্ত বয়স্ক, মুসাফির নয় এমন কোন মুসলমান ব্যক্তি যদি ১০ই জিলহাজ্জ ফজর সময় (সুবহিসাদিক) হতে ১২ জিলহাজ্জ সূর্যঅস্ত যাওয়ার পূর্ব মুহূর্ত সময়েরমধ্যে নিবাস পরিমাণ সম্পদ বা অর্থের মালিক হন তবে তার উপর কুরবানী করা ওয়াজিব। (শামী, ৯ম খন্ড, পৃঃ ৪৫৭)
নিসাব হচ্ছে, যার নিকট প্রয়োজনীয় ব্যবহার্য আসবাবপত্রে, কাপড়-স্বর্ণ বা সাড়ে বায়ান্ন ভরি রূপা থাকবে অথবাসে পরিমাণ অর্থথাকবে তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। ২। কুরবানী ওয়াজিব হওয়ারজন্য এক বছর নিসাব পরিমাণ সম্পদঅতিবাহিত হওয়া জরুরীনয়; বরং কুরবানীর দিনগুলোর (জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখের) মধ্যেনিসাব পরিমাণ অর্থবা সম্পদের মালিকহলেই কুরবানী ওয়াজিব হবে। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড) ৩। কোন ব্যক্তি যদি সিাবের পরিমাণ স্মপদের মালিকহন তবে কেবলতার নিজের পক্ষহতে কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব। স্ত্রী বা সন্তানের পক্ষ থেকে কুরবানী করা তার উপর ওয়াজিব নয়। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৪৪) ৪। নিসাবপরিমাণ মালিকের উপর শুধু একটি কুরবানীই ওয়াজিব হবে, অবশ্যকেউ যদি একাধিক কুরবানী করে তা নফল হিসেবে সওয়াবের অধিকারী হবে। (ইমদাদুল ফতোয়া, ২য় খন্ড, পৃঃ ৯৬১) ৫। ঋণ গ্রস্থ ব্যক্তি যদি ঋণ পরিশোধ করে দিলে নিসাবপরিমাণ অর্থের মালিকথাকেন তবেই তার উপর কুরবানী ওয়াজিব। ৬। কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ধরনেরব্যক্তি কুরবানী করলেসওয়াব পাবে। তবে এরূপ গরীব ব্যক্তি কুরবানীর নিয়্যতে পশু ক্রয় করলে তার কোরবানী করা ওয়াজিব হয়ে যাবে। এমন ব্যক্তির পশুটি যদি হারিয়ে যায় বা মারা যায়, তাকেআরেকটি পশু কুরবানী করতে হবে। ৭। যদি কুরবানীর জন্তু হারিয়ে যায়, তৎপরিবর্তে আরেকটি জন্তু খরিদকরা হয়। পরে প্রথম জন্তুটিও পাওয়া যায়। এখন ক্রেতা যদি সাহিবে নিসাবহয়ে থাকেন তার উপর একটি জন্তুকুরবানী করা ওয়াজিব। আর ক্রেতা যদি সাহিবে নিসাবের মালিকনা হন (গরীবহন), তবে তার উপর দুইটি জন্তুই কুরবানী করা ওয়াজিব। (হিয়াদা-৪র্থ খন্ড/কিফায়াতুল মুফতী, ৮ম খন্ড, পৃঃ ১৭৬)
৮। কোন মহিলার মহরানার অর্থ বা টাকা পয়সা বা স্বর্ণালঙ্কার ইত্যাদি অথবামহিলা যদি সাহিবে নিসাবের মালিক হন তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব হবে।
৯। মৃত পিতা-মাতা, যে কোন মৃত ব্যক্তির পক্ষ থেকে অথবা রাসূল(সঃ) এর পক্ষথেকে কুরবানী করা জায়িয। তবে নিজেরপক্ষ থেকে কুরবানীর পর তাদের পক্ষথেকে কুরবানী নফল হিসেবে করা যাবে।
১০। যদি কোন ব্যক্তির একাধিক ছেলেথাকে এবং সকলেইএকান্নভূক্ত হয় তাহলেশুধু পিতার উপরইকুরবানী ওয়াজিব হবে। তবে যদি ছেলেদের কেউ পৃথকভাবে মালিক হয় তাহলে তার উপরও কুরবানী ওয়াজিব হবে। (রাদ্দুল মুহতার, ৫ম খন্ড)
কুরবানীর পশুর হুকুম ঃ
১। উট, মহিষ, গরু, দুম্বা, ভেড়াও ছাগল দ্বারা কুরবানী করতে হবে। এগুলো ছাড়া অন্যপশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নয়। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড) ২। দুম্বা, ভেড়াও ছাগল কুরবানীর জন্য এক বছর বয়স হওয়া জরুরী। যদি ছয় মাসেরদুম্বা বা ভেড়াএরূপ মোটা-তাজাহয় যে, দেখতেএক বছরের মত মনে হয় তাহলেএর দ্বারা কুরবানী জায়েয হবে। ৩। গরু, মহিষ ও উট এ ক্ষেত্রে বয়স কম পক্ষেযথাক্রমে গরু ২ বছর, মহিষ ২ বছর এবং উট ৫ বছর বয়স হতে হবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৪৯) ৪। গরু, মহিষ ও উট এই তিন প্রকার পশুর একটিতে সাত ব্যক্তি পর্যন্ত অংশীদার হয়ে কুরবানী করতেপারবে। তবে শর্তহল, কারো অংশ যে এক সপ্তমাংশ থেকে কম না হয়। (ফতোয়া আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ৩০৪) ৫। ছাগল, দুম্বা ও ভেড়াএকটি এক জনে কুরবানী করতে পারবে। একাধিক ব্যক্তি শরীকহয়ে এ সকল পশু কুরবানী করলেদুরস্ত হবে না। ৬। কয়েক ব্যক্তি কুরবানীর নিয়্যতে পশু খরিদ করে এবং তারপরে যদি অন্যলোক তাতে শরীকহতে চায় এমতাবস্থায় ক্রোতাগণ সর্বসম্মতভাবে সম্মতি দিলেতাতে সাত জন (সর্বোচ্চ) পর্যন্ত অংশ গ্রহণে কুরবানী করা জায়েয হবে। (আলমগীরী) ৭। কুরবানীর অংশীদার প্রত্যেকে যদি নাবালেগ হয় বা কোন অংশীদারের অংশ এক সপ্তমাংশ হতে কম হয় অথবা কোন অংশীদারের নিয়্যত সহীহ না থাকে বা কোন শরীক অমুসলিম হয় তবে কারো কুরবানীই জায়েয হবে না। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড) ৮। গর্ভবতী পশু জেনে শুনে কুরবানী করা মাকরূহ। তবে পশুটি গর্ভবতী বলে জানা ছিল না এমন অবস্থায় যবেহকরার পর পেট থেকে জীবিত বাছুরবের হয় উক্তবাছুর যবেহ করে খাওয়া জায়েজ। যদি কুরবানীর পশুর পেট হতে মৃত বাচ্চা বের হয় তাহলেউক্ত বাচ্চাটির গোশ্ত হারাম হবে। (শামী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২২৭) ৯। যে পশুর চোখ, কান, লেজ, দাঁত, পা ও অন্যান্য অঙ্গ এক তৃতীয়াংশের বেশী ত্রুটি যুক্ত এ ধরনের পশু দ্বারা কুরবানী দুরস্ত নয়। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৭)
১০। কুরবানী আল্লাহর নৈকট্য লাভের অন্যতম উপায়। তাই কুরবানী দাতার উচিত দোষমুক্ত, মোটাতাজা পশু কুরবানী করা। (কানযুল উম্মাল)
কুরবানীর সঙ্গে আকীকাআদায় প্রসঙ্গে ঃ
১। কুরবানী করা ওয়াজিব। আকীকা করা সুন্নাত। যে সকল পশু দ্বারা কুবানী করা জায়েয সে সকল পশু দ্বারা আকীকা করা ও জায়েয। আর যে সকল পশু দ্বারা আকীকা করা জায়েযনেই সে সকল পশু দ্বারা কুরবানী করা জায়েয নেই। (রাদ্দুল মুহতার, ৫ম খন্ড)
২। পুত্র সন্তানের জন্য দুইটি ছাগলআর কন্যা সন্তানের জন্য একটি ছাগলদ্বারা আকীকা করা মুস্তাহাব। ৩। উট, মহিষ ও গরুরমধ্যে একটিতে সাত জনের আকীকা করা যাবে। এ ধরনেরপশুর মধ্যে কুরবানীর সাথে আকীকা ও করা যায়। তবে শর্ত হল, কুরবানীর অংশ দেয়ার পর আকীকা দিতে হবে। একই গরুতে একজনকুরবানী ও আকীকাউভয়টিই দিতে পারবে। ধরুন, সাত অংশেরমধ্যে একজন দুই নামে কুরবানী, আরেকজন দুই নামে কুরবানী এবং অন্য একজনএকনামে কুরবানী ও দুই নামে আকীকাকরবে নিয়্যত করলো। তাহলে তা করা যাবে। তবে শর্তহল কারোর অংশ যেন এক -সপ্তমাংশের কম না হয়। (কিফায়াতুল মুফতী)
৪। কুরবানীর গোশত বন্টনের মতো আকীকার গোশত বন্টিত হবে। কুরবানীর গোশতের মত আকীকার গোশত নিজেখাওয়া, পিতা-মাতাখাওযা ও আত্মীয় স্বজন এবং গরীব-মিসকিনকে দেওয়া জায়েয। (আজিজুল ফতয়া, ১ম খন্ড)
৫। কেউ যদি মনে করে যে, তার বা তার পিতামাতার আকীকা ছোটকালে দেয়া হয়নি। তাহলেনিজের আকীকা ও পিতা-মাতা আকীকাও করতে পারবে। (ফতয়ায়ে রহমানিয়া, ৬ষ্ঠ খন্ড)
৬। কুরবানী ওয়াজিব এমন স্বচ্ছল ব্যক্তি কুরবানীর জন্য কোন পশু খরিদ করারপর তাতে যদি এমনএকান ত্রুটি দেখাদেয় যার কারণেতা কুরবানী করা দুরস্ত হবে না। তবে তিনি তার পরিবর্তে অন্য একটিপশু খরিদ করে কুরবানী করবেন। অবশ্যযার উপর কুরবানী ওয়াজিব নয় এমন ব্যক্তির ক্ষেত্রে যদি উপরোক্ত ঘটনাটি সংঘটিত হয় সে ব্যক্তি ঐ পশুটিই কুরবানী করতে হবে। (ফতোয়াশামী, ২য় খন্ড, ২২৯ পৃঃ)
কুরবানীর পশু যবেহকরার নিয়ম ঃ
১) জিলহাজ্জ মাসের ১০ তারিখ সূর্যোদয়ের পর থেকে ১২ জিলহজ্জ তারিখ সূর্যাস্তের পূর্ব পর্যন্ত কুরবানী করার নির্দিষ্ট সময়। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৬)
২) নিজের পশু নিজেই কুরবানী করা সর্বোত্তম। নিজে যবেহকরতে অপারগ হলে অন্যের দ্বারা কুরবানী দুরস্ত আছে। (আলমগীরী, ৫ম খন্ড, পৃঃ ২৯৬)।
৩) যবেহ করারসময় কুরবানী পশু কেবলামুখী করে শোয়াবে, যবেহকারী কেবলামুখী হয়ে দাঁড়াবেন এবং যবেহকারীর বাম দিকে পশুরমাথা থাকবে। যবেহকরার সময় বিসমিল্লাহি আল্লাহু আকবার বলতেহবে। ইচ্ছাকৃত ভাবে বিসমিল্লাহ না বললেউক্ত পশুর গোশতহালাল হবে না। তবে ভুলবশত বিসমিল্লাহ পরিত্যাগ করলে যবেহকৃত পশুর গোশত হালালহবে। (হিদায়া ৪র্থখন্ড, পৃঃ ৪৩৫)। ৪) কুরবানীর পশু যবেহ করারসময় আরবীতে নিয়্যত পাঠ করা এবং কুরবানী দাতাগণের নাম পাঠ করা জরুরীনয়, বরং মনে মনে নিয়্যত করবেযে, আমি আল্লাহর উদ্দেশ্যে কুরবানী করছি। (ফতোয়া শামী, ৫ম খন্ড পৃঃ ২৭২)। ৫) যবেহকরার সময় পশুরচারটি রগ কাটাজরুরী।
র) কণ্ঠনালী রর) খাদ্য নালী ররর ও রা) দুই পাশের দুটি মোটারগ। ৬) যবেহকারীকে পারিশ্রমিক হিসেবে টাকা পয়সা বা অন্য কিছু দেয়াযাবে তবে যবেহকৃত পশুর মাথা, রান, চামড়া পারিশ্রমিক বা যবেহ’র বিনিময়ে দেয়া যাবে না। ৭) যবেহকৃত জন্তুকে অযথা কষ্ট দেয়ামাকরূহ। যবেহর পূর্বে ছুরি ভালভাবে ধার দিয়ে নিতে হবে। যবেহকারীর সাথে কেউ যদি ছুরি চালানোর কাজে সহযোগিতা করে থাকে, তবে তাকেও’বিসমিল্লাহী আল্লাহু আকবার’ বলতে হবে (শামী, ৯ম খন্ড, পৃঃ ৪৭৩)
কুরবানীর গোশতের বিধানঃ
১) কুরবানীর গোশত বন্টনের উত্তম (মুস্তাহাব) নিয়ম হল, তিন ভাগ করে একভাগনিজের পরিবারবর্গের জন্য, একভাগ আত্মীয় স্বজনআর একভাগ গরীবমিসকিনদের জন্য বন্টনকরা। (শামী, ১ম খন্ড পৃঃ ৪৭৩)। ২) কয়েকজন এক সাথে কুরবানী করলে অবশ্যই পাল্লা দিয়ে মেপে সমান/সঠিক ওজন করে ভাগ করতে হবে। তবে অংশীদারগণ যদি একান্নভুক্ত পরিবারের সদস্য হন, তাহলে বন্টনের প্রয়োজন নেই। (শামী, ২য় খন্ড, ২৩২ পৃঃ)। ৩) কুরবানী দাতা কুরবানীর গোশত বিক্রি করা মাকরূহ তাহরিমি। যদি কেউ তা করে থাকে তাহলে বিক্রিত মূল্য সদকা করা ওয়াজিব হবে। ৪) কুরবানীর গোশত পারিশ্রমিক বাবদ বিনিময় হিসেবে কাউকে দেওয়া জায়েবহবে না। ৫) কয়েক ব্যক্তি শরীকহয়ে কুরবানী করে তারা নিজেদের মধ্যেগোশত বন্টন করে নেওয়ার পরিবর্তে যদি রান্না করে বা সমস্ত গোশত গরীবদের মধ্যে বিতরণ করে দেওয়ার ঐকমত্যে সিদ্ধান্ত নেয় তা জায়েজহবে। কিন্তু শরীকদের কোন একজন এতে ভিন্নমত প্রকাশ করলেতা জায়েজ হবেনা। (মাসাইল ঈদায়ন, পৃঃ ১৮৩)
কুরবানীর পশুর চামড়ার হুকুম ঃ
১) কুরবানীর পশুর চামড়া প্রক্রিয়াজাত করে নিজে ব্যবহার করতেপারবে।
অথবা, চামড়া দান করে দিবে বা বিক্রি করে অর্থগরীব অভাবীদের দান করবে। (হিদায়া, ৪র্থখন্ড, পৃঃ ৪৩৪)
২) লিল্লাহ বোর্ডিং, গরীব পরীক্ষার্থী, অভাবী, মিসকিন (যারা ফিতরাপাওয়ার উপযুক্ত) তাদেরকে কুরবানীর পশুর চামড়াঅথবা বিক্রিকৃত অর্থ দান করবে।
৩) পশুর চামড়াবিক্রির সময় অবশ্যই যথাযথ মূল্যে বিক্রি করতে হবে। কারণএর অর্থ গরীবের হক।
৪) কুরবানীর চামড়া বা মূল্য মসজিদ, মাদ্রাসা, স্কুল, কলেজবা কোন প্রতিষ্ঠানের উন্নয়নকল্পে অথবা শিক্ষক, কর্মকর্তা কর্মচারীদের বেতন ভাতাহিসেবে প্রদান করা জায়েয হবে না। (মাসাইল ইদাঈন, পৃঃ ১৯২)
কুরবানীর কাযা ঃ
কোন ব্যক্তির উপর কুরবানী ওয়াজিব ছিল কিন্তু কুরবানীর দিন সমূহ (জিলহাজ্জ মাসের ১০, ১১ ও ১২ তারিখ) শেষ হয়ে গেছে অথচ সে ব্যক্তি কুরবানী করে নাই। এমতাবস্থায় তাকে একটি বকরীবা এর মূল্যসাদকা দিতে হবে। (হিদায়া, ৪র্থ খন্ড, পৃঃ ৪৩০)।
তাকবীরে তাশরীক সম্পর্কে ঃ
আল্লাহু আকবার আল্লাহু আকবার লা ইলাহাইল্লাল্লাহু ওয়াল্লাহু আকবার, আল্লাহু আকবার ওয়ালিল্লাহিল হামদ’। ৯ই জিলহাজ্জ ফজর সালাত থেকে১৩ই জিলহাজ্ব আসর সালাত পর্যন্ত (২৩ ওয়াক্ত সালাত) প্রত্যেক ফরয সালাতের পর উপরোক্ত তাকবীরটি কমপক্ষে একবারপড়া ওয়াজিব। একাকীনামায বা জামাতে নামায যে কোন অবস্থায় তাকবীরে তাশরীকটি পড়তে হবে। মহানরাব্বুল আলামীন আমাদের কুরবানী কবুল করুন। আমাদেরকে তার প্রিয়বান্দাদের কাতারে শামিলকরুন। আমিন!
কুরবানী ও আকীকা সংক্রান্ত মাসআলা-মাসায়েল
পোষ্টটি অন্যকে পড়ার সুযোগ করে দিতে শেয়ার করুন প্লিজ।